৩৯২৬

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান

৩৯২৬-[১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের দিকে আহবান জানিয়ে দিহ্ইয়াতুল কালবী (রাঃ)-এর মাধ্যমে এ নির্দেশ দিয়ে (রোম সম্রাট) কায়সারের নামে পত্র প্রেরণ করেন, তা যেন অবশ্যই বাসরার (বর্তমানে ইরাকের) রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে অর্পণ করেন। আর সে যেন তা কায়সারের নিকট পৌঁছে দেয়। পত্রে লিখেছিলেন,

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি,

আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ হতে রোমের রাষ্ট্রপ্রধান হিরাকল (হিরাক্লিয়াস)-এর প্রতি। যারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে, হিদায়াতের অনুসরণ করেছে তাদের ওপর শান্তি বর্ষণ হোক! আমি তোমার নিকট ইসলামের দা’ওয়াত পেশ করছি, ইসলামে প্রবেশ কর, শান্তিতে থাকবে। পুনরায় বলছি, ইসলাম কবুল কর, তবে আল্লাহ তোমাকে দ্বিগুণ পুরস্কার (সাওয়াব) দান করবেন। আর যদি ইসলাম হতে বিমুখ হও, তাহলে সমস্ত প্রজাবৃন্দের পাপের বোঝাও তোমার ওপর ন্যস্ত হবে।

হে কিতাবধারীগণ! তোমরা এমন এক মৌলিক বাক্যের দিকে এসো, যাতে আমরা ও তোমরা সমবিশ্বাসী। আর তাই আমাদের সকলের ওপর কর্তব্য হলো এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ’ইবাদাত করব না এবং তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক স্থাপন করব না এবং আমরা পরস্পর একে অন্যকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে রব্ হিসেবে মেনে নিবো না। অতঃপর যদি তারা এ কথাগুলো মেনে না নেয়, তবে বলে দাও তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

আর মুসলিম-এর এক বর্ণনার মধ্যে তিনটি বাক্যের পরিবর্তন হয়েছে। যেমন- আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষে হতে (অর্থাৎ- ’আবদুল্লাহ’ শব্দ নেই), ইয়ারীসাইয়িন (’হামযা’-এর স্থলে ’ইয়া’) এবং (’’দা-’ইয়াতিল ইসলা-ম’’-এর স্থলে) ’’দি’আ-ইয়াতিল ইসলা-ম’’ রয়েছে (এছাড়া তেমন একটা পার্থক্য নেই)।

بَابُ الْكِتَابِ إِلَى الْكُفَّارِ وَدُعَائِهِمْ إِلَى الْإِسْلَامِ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَبَ إِلَى قَيْصَرَ يَدْعُوهُ إِلَى الْإِسْلَامِ وَبَعَثَ بِكِتَابِهِ إِلَيْهِ دِحْيَةَ الْكَلْبِيَّ وَأَمَرَهُ أَنْ يَدْفَعَهُ إِلَى عَظِيمِ بُصْرَى لِيَدْفَعَهُ إِلَى قَيْصَرَ فَإِذَا فِيهِ: بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مِنْ مُحَمَّدٍ عَبْدِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى هِرَقْلَ عَظِيمِ الرُّومِ سَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّي أدْعوكَ بداعيَةِ الْإِسْلَامِ أَسْلِمْ تَسْلَمْ وَأَسْلِمْ يُؤْتِكَ اللَّهُ أَجَرَكَ مَرَّتَيْنِ وَإِنْ تَوَلَّيْتَ فَعَلَيْكَ إِثْمُ الْأَرِيسِيِّينَ وَ (يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَن لَا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا: اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ)
مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ:
مِنْ محمَّدٍ رسولِ اللَّهِ وَقَالَ: «إِثمُ اليريسيِّينَ» وَقَالَ: «بِدِعَايَةِ الْإِسْلَام»

عن ابن عباس: ان النبي صلى الله عليه وسلم كتب الى قيصر يدعوه الى الاسلام وبعث بكتابه اليه دحية الكلبي وامره ان يدفعه الى عظيم بصرى ليدفعه الى قيصر فاذا فيه: بسم الله الرحمن الرحيم من محمد عبد الله ورسوله الى هرقل عظيم الروم سلام على من اتبع الهدى اما بعد فاني ادعوك بداعية الاسلام اسلم تسلم واسلم يوتك الله اجرك مرتين وان توليت فعليك اثم الاريسيين و (يا اهل الكتاب تعالوا الى كلمة سواء بيننا وبينكم ان لا نعبد الا الله ولا نشرك به شيىا ولا يتخذ بعضنا بعضا اربابا من دون الله فان تولوا فقولوا: اشهدوا بانا مسلمون) متفق عليه. وفي رواية لمسلم قال: من محمد رسول الله وقال: «اثم اليريسيين» وقال: «بدعاية الاسلام»

ব্যাখ্যা: (وَإِنْ تَوَلَّيْتَ فَعَلَيْكَ إِثْمُ الْأَرِيسِيِّيْنَ) ‘‘যদি তুমি মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে আরীসিয়্যিনদের গুনাহ তোমার ওপর বর্তাবে।’’ অর্থাৎ তুমি ইসলাম গ্রহণ করতে বিমুখ হও তাহলে তুমি নিজে তো গুনাহগার হবেই। সেই সাথে তোমার যারা অনুসারী তাদের গুনাহসমূহও তোমার ওপর বর্তাবে। এ থেকে এটাও বুঝা যায় যে, তোমার ইসলাম গ্রহণ করার কারণে যদি তোমার অনুসারীগণ ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে এর সাওয়াবও তুমি অর্জন করবে। ‘আল্লামা নববী বলেনঃ (أَرِيسِيِّيْنَ) বলতে কাদের বুঝানো হয় এতে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ মত এই যে, তারা হলো রোমের কৃষক সম্প্রদায়। এদের উল্লেখ করার মাধ্যমে সকল অনুসারীদের বুঝানো হয়েছে। কেননা সংখ্যায় তারাই ছিল বেশী। আর আনুগত্যের বেলায়ও তারাই অগ্রগামী। বাদশাহ ইসলাম গ্রহণ করলে তারাও ইসলাম গ্রহণ করবে। আর বাদশাহ ইসলাম গ্রহণ করা হতে বিরত থাকলে তারাও তা থেকে বিরত থাকবে। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৭৩)

وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُوْنِ اللهِ ‘‘আমাদের মাঝে কেউই যেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে একে অপরকে রব্ বানিয়ে না নেয়।’’ অর্থাৎ- আমরা এটা বলব না যে, ‘উযায়র আল্লাহর পুত্র, মাসীহ (‘ঈসা (আঃ)) আল্লাহর পুত্র, ইয়াহূদী ‘আলিমগণ যে সমস্ত হালাল হারামের নতুন নতুন বিধান চালু করেছে আমরা তার আনুগত্য করব না। কেননা তারা সকলেই আমাদের মতই মানুষ। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১ম খন্ড, হাঃ ৭)

অত্র হাদীসের শিক্ষা:

(১) কুরআনের দু’ একটি আয়াত নাপাক ব্যক্তিও পাঠ করতে পারে।

(২) কুরআনের কিছু অংশ অমুসলিমদের নিকট প্রেরণ করা বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)