৩৯২৯

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান

৩৯২৯-[৪] সুলায়মান ইবনু বুরায়দাহ্ তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোনো বৃহৎ অথবা ক্ষুদ্র সৈন্যবাহিনীর ওপর কাউকে আমীর (নেতা) নিয়োজিত করতেন, তখন তাকে বিশেষভাবে উপদেশ দিতেন, সে যেন আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সফরসঙ্গী মুসলিম সৈন্যদের সাথে সদাচরণ করে। অতঃপর বলতেন, আল্লাহর নাম নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে রওয়ানা হও এবং যারা আল্লাহর প্রতি কুফরী (বিদ্রোহ) করে, তাদের সাথে লড়াই কর, জিহাদে যাও। সাবধান! গনীমাতের মালে খিয়ানাত করো না। যখন তুমি কোনো মুশরিক শত্রুর সম্মুখীন হবে, তখন তাদেরকে তিনটি বিষয়ের প্রতি আহবান করবে। যদি তারা কোনো একটি মেনে নেয়, তুমি তখন তার গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি নিবে এবং তাদের ওপর আক্রমণ করা হতে বিরত থাকবে।

ক) প্রথমে তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান করবে, যদি তারা তা গ্রহণ করে, তখন তুমি তার স্বীকৃতি নিবে এবং তাদের ওপর আক্রমণ করা হতে বিরত থাকবে। অতঃপর তাদের স্বদেশ (দারুল হার্ব) হতে মুহাজিরীনদের আবাসভূমিতে (দারুল ইসলামে) চলে আসতে বলবে এবং এটাও জানিয়ে দেবে যে, যদি তারা হিজরত করে, তখন তারাও মুহাজিরীনদের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা পাবে, আর মুহাজিরীনদের ন্যায় দায়-দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত হবে। কিন্তু তারা যদি স্বদেশ ত্যাগ করতে অস্বীকার করে, তখন তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, তাদের সাথে সেরূপ আচরণই করা হবে, যেরূপ আচরণ অন্যান্য গ্রাম্য মুসলিমদের সাথে করা হবে। অর্থাৎ আল্লাহর সেই বিধান তাদের ওপর কার্যকর করা হবে যা সকল মুসলিমের ওপর কার্যকর করা হয়ে থাকে। কিন্তু গনীমাতের মাল ও ফাই (বিনা যুদ্ধলব্ধ মাল) হতে তারা সাধারণত কোনো অংশ পাবে না। তবে এ ধন-সম্পদের অংশীদার তারা তখনই পাবে, যখন তারা মুসলিমদের সাথে সম্মিলিতভাবে জিহাদে শরীক হবে।

খ) আর যদি তারা তাতে (ইসলাম কবুল করতে) অস্বীকার করে, তখন তাদের ওপর জিয্ইয়াহ্ (কর) ধার্য কর। যদি তারা তা মেনে নেয়, তখন তুমিও তা গ্রহণ কর এবং তাদের ওপর আক্রমণ করা হতে বিরত থাক।

গ) তবে তারা যদি তাতেও অস্বীকার করে, তখন আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে তাদের সাথে যুদ্ধ কর। আর যদি তুমি কোনো দুর্গবাসীদের অবরোধ কর এবং তারা তোমার সাথে আল্লাহ ও তার রসূলের দায়িত্বের উপর কোনো চুক্তিবদ্ধ হতে চায়, তখন তুমি তাদের সাথে আল্লাহ ও তার রসূলের দায়িত্বে কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ো না; বরং তুমি ও তোমার সঙ্গীদের নিজ দায়িত্বে চুক্তিবদ্ধ হতে পারো। কেননা কোনো কারণে যদি উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করতে বাধ্য হও, তখন আল্লাহ ও তার রসূলের নামে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করার চেয়ে তোমার ও তোমার সঙ্গীদের কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা অনেক সহজসাধ্য। আর যদি তুমি কোনো দূর্গ অবরোধ কর এবং তারা তোমার নিকট আল্লাহর বিধানানুসারে ফায়সালার শর্তে অবরোধ তুলে নিতে আবেদন জানায়, তখন আল্লাহর বিধানের শর্তে তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ো না; বরং তোমার সঙ্গীদের দায়িত্বে অব্যাহতি দিবে। কেননা তুমি তো জানো না, আল্লাহর বিধান (ফায়সালা) সঠিকভাবে তাদের ব্যাপারে প্রয়োগ করতে পারবে কিনা। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْكِتَابِ إِلَى الْكُفَّارِ وَدُعَائِهِمْ إِلَى الْإِسْلَامِ

وَعَن سليمانَ بنِ بُريدةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَمَّرَ أَمِيرًا عَلَى جَيْشٍ أَوْ سَرِيَّةٍ أَوْصَاهُ فِي خَاصَّتِهِ بِتَقْوَى اللَّهِ وَمَنْ مَعَهُ مِنَ الْمُسْلِمِينَ خَيْرًا ثُمَّ قَالَ: اغْزُوَا بسمِ اللَّهِ قَاتَلُوا مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ اغْزُوَا فَلَا تَغُلُّوا وَلَا تَغْدِرُوا وَلَا تَمْثُلُوا وَلَا تَقْتُلُوا وَلِيدًا وَإِذَا لَقِيتَ عَدُوَّكَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَادْعُهُمْ إِلَى ثَلَاثِ خِصَالٍ أَوْ خِلَالٍ فَأَيَّتَهُنَّ مَا أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الْإِسْلَامِ فَإِنْ أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى التَّحَوُّلِ مِنْ دَارِهِمْ إِلَى دَارِ الْمُهَاجِرِينَ وَأَخْبِرْهُمْ أَنَّهُمْ إِنْ فَعَلُوا ذَلِكَ فَلَهُمْ مَا لِلْمُهَاجِرِينَ وَعَلَيْهِمْ مَا عَلَى الْمُهَاجِرِينَ فَإِنْ أَبَوْا أَنْ يَتَحَوَّلُوا مِنْهَا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّهُمْ يَكُونُونَ كَأَعْرَابِ الْمُسْلِمِينَ يُجْرَى عَلَيْهِمْ حُكْمُ الله الَّذِي يُجْرَى عَلَيْهِمْ حُكْمُ اللَّهِ الَّذِي يُجْرَى عَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَلَا يَكُونُ لَهُمْ فِي الْغَنِيمَةِ وَالْفَيْءِ شَيْءٌ إِلَّا أَنْ يُجَاهِدُوا مَعَ الْمُسْلِمِينَ فَإِنْ هم أَبَوا فعلهم الْجِزْيَةَ فَإِنْ هُمْ أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ فَإِنْ هُمْ أَبَوْا فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَقَاتِلْهُمْ وَإِذَا حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ فَأَرَادُوكَ أَنْ تَجْعَلَ لَهُمْ ذِمَّةَ اللَّهِ وَذِمَّةَ نَبِيِّهِ فَلَا تَجْعَلْ لَهُمْ ذِمَّةَ اللَّهِ وَلَا ذِمَّةَ نَبِيِّهِ وَلَكِنِ اجْعَلْ لَهُمْ ذِمَّتَكَ وَذِمَّةَ أَصْحَابِكَ فَإِنَّكُمْ أَنْ تُخْفِرُوا ذِمَمَكُمْ وَذِمَمَ أَصْحَابِكُمْ أَهْوَنُ مِنْ أَنْ تُخْفِرُوا ذِمَّةَ اللَّهِ وَذِمَّةَ رَسُولِهِ وَإِنْ حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ فَأَرَادُوكَ أَنْ تُنْزِلَهُمْ عَلَى حُكْمِ اللَّهِ فَلَا تُنْزِلْهُمْ عَلَى حُكْمِ اللَّهِ وَلَكِنْ أَنْزِلْهُمْ عَلَى حُكْمِكَ فَإِنَّكَ لَا تَدْرِي: أَتُصِيبُ حُكْمَ اللَّهِ فِيهِمْ أَمْ لَا؟ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن سليمان بن بريدة عن ابيه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا امر اميرا على جيش او سرية اوصاه في خاصته بتقوى الله ومن معه من المسلمين خيرا ثم قال: اغزوا بسم الله قاتلوا من كفر بالله اغزوا فلا تغلوا ولا تغدروا ولا تمثلوا ولا تقتلوا وليدا واذا لقيت عدوك من المشركين فادعهم الى ثلاث خصال او خلال فايتهن ما اجابوك فاقبل منهم وكف عنهم ثم ادعهم الى الاسلام فان اجابوك فاقبل منهم وكف عنهم ثم ادعهم الى التحول من دارهم الى دار المهاجرين واخبرهم انهم ان فعلوا ذلك فلهم ما للمهاجرين وعليهم ما على المهاجرين فان ابوا ان يتحولوا منها فاخبرهم انهم يكونون كاعراب المسلمين يجرى عليهم حكم الله الذي يجرى عليهم حكم الله الذي يجرى على المومنين ولا يكون لهم في الغنيمة والفيء شيء الا ان يجاهدوا مع المسلمين فان هم ابوا فعلهم الجزية فان هم اجابوك فاقبل منهم وكف عنهم فان هم ابوا فاستعن بالله وقاتلهم واذا حاصرت اهل حصن فارادوك ان تجعل لهم ذمة الله وذمة نبيه فلا تجعل لهم ذمة الله ولا ذمة نبيه ولكن اجعل لهم ذمتك وذمة اصحابك فانكم ان تخفروا ذممكم وذمم اصحابكم اهون من ان تخفروا ذمة الله وذمة رسوله وان حاصرت اهل حصن فارادوك ان تنزلهم على حكم الله فلا تنزلهم على حكم الله ولكن انزلهم على حكمك فانك لا تدري: اتصيب حكم الله فيهم ام لا؟ . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (اُغْزُوْا فَلَا تَغُلُّوْا) তোমরা যুদ্ধ কর তবে খিয়ানাত করো না। অর্থাৎ গনীমাতের মাল সংরক্ষণ করবে। আমীরের অনুমতি ব্যতীত তা থেকে গ্রহণ করবে না।

(وَلَا تَغْدِرُوْا) বিশ্বাসঘাতকতা করো না। অর্থাৎ- ওয়া‘দা দেয়ার পর তা ভঙ্গ করো না। এও বলা হয়ে থাকে যে, (لَا تَغْدِرُوْا) দ্বারা উদ্দেশ্য ইসলামের দিকে আহবান করার পূর্বে তাদের সাথে যুদ্ধ করবে না।

(وَلَا تَمْثُلُوْا) অঙ্গহানী করো না। ফায়িক গ্রন্থে (لَا تَمْثُلُوْا) এর অর্থ করা হয়েছে, তোমরা তাদের চেহারায় কালিমা লেপন করবে না এবং নাক কাটবে না।

(وَلَا تَقْتُلُوْا وَلِيْدًا) ছোট শিশু হত্যা করো না। ইবনুল হুমাম বলেনঃ পাগল এবং শিশু যদি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে তাহলে তাদের হত্যা করা যাবে। অনুরূপভাবে রাজপুত্র এবং নির্বোধ বাদশাহও হত্যা করা যাবে। কেননা এতে তাদের শক্তি নির্মূল হবে।

(إِنْ فَعَلُوْا ذٰلِكَ فَلَهُمْ مَا لِلْمُهَاجِرِيْنَ وَعَلَيْهِمْ مَا عَلَى الْمُهَاجِرِيْنَ) তারা যদি তা (হিজরত) করে তাহলে তাদের তাই প্রাপ্য যা মুহাজিরগণের প্রাপ্য এবং তাদের ওপর সে দায়িত্ব যে দায়িত্ব মুহাজিরদের। অর্থাৎ- মুশরিকরা যদি ইসলাম গ্রহণ করার পর কাফিরদের এলাকা ছেড়ে মুসলিম দেশে হিজরত করে চলে আসে তাহলে তারা মুহাজিরদের মতই সাওয়াব পাবে এবং ফাই তথা গনীমাতের মালে মুহাজিরদের মতই প্রাপ্য থাকবে। আর এ প্রাপ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় অব্যাহত ছিল। মুহাজিরগণ যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে জিহাদের জন্য বেড়িয়ে পড়ত তখন থেকেই তিনি তাদের যাবতীয় ব্যয় বহন করতেন। তাদের সংখ্যা শত্রুদের তুলনায় যথেষ্ট হোক বা না হোক। আমীরের নির্দেশ মাত্র তাদের জিহাদে যাওয়া ওয়াজিব ছিল। কিন্তু যারা মুহাজির ছিলেন না তাদের ক্ষেত্রে তখনই যুদ্ধে যাওয়া ওয়াজিব হত যখন শত্রুর মুকাবিলা করার মতো যথেষ্ট সংখ্যক লোক না থাকত। وَعَلَيْهِمْ দ্বারা উদ্দেশ্য এটাই।

(وَلٰكِنْ أَنْزِلْهُمْ عَلٰى حُكْمِكَ فَإِنَّكَ لَا تَدْرِىْ : أَتُصِيْبُ حُكْمَ اللّٰهِ فِيْهِمْ أَمْ لَا؟) তুমি তাদেরকে তোমার ফায়সালা অনুযায়ী আত্মসমর্পণ করার সুযোগ দিবে। কেননা তোমার জানা নেই যে, তাদের ব্যাপারে তোমার ফায়সালা আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ী হবে কিনা? ইমাম নববী বলেন, আল্লাহর ফায়াসালা অনুযায়ী আত্মসমর্পণের সুযোগ না দেয়ার নিষেধাজ্ঞা হারামের জন্য নয়। বরং এ নিষেধাজ্ঞা তানযীহের জন্য তথা এরূপ করা মাকরূহ। যারা বলেন যে, সকল মুজতাহিদের সিদ্ধান্ত সঠিক নয় বরং মতভেদের ক্ষেত্রে একজন মুজতাহিদদের সিদ্ধান্ত সঠিক অত্র হাদীস তাদের পক্ষে দলীল। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, ১৭৩১; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬০৯; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৬১৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)