পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭২-[১২] ’উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা একটি তীরের বিনিময়ে তিন (শ্রেণীর) লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ১- তীর প্রস্তুতকারী, যে সাওয়াবের নিয়্যাতে তা প্রস্তুত করে। ২- তীর নিক্ষেপকারী ও ৩- তীর দানকারী। সুতরাং তোমরা তীর নিক্ষেপ ও সওয়ারীর (যুদ্ধযানের) প্রশিক্ষণ গ্রহণ কর। তবে তীর নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ আমার নিকট তোমাদের সওয়ারীতে আরোহণ অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয়। তিনটি খেলা ছাড়া সকল প্রকারের খেলা যা লোকেরা খেলে থাকে তা অন্যায় ও বাতিল। ১- ধনুকের সাহায্যে তীর নিক্ষেপ করা। ২- ঘোড়ার প্রশিক্ষণ ও ৩- স্ত্রীর সঙ্গে আমোদণ্ডপ্রমোদ করা। এগুলো শারী’আতে বৈধ ও স্বীকৃত। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
আর আবূ দাঊদ ও দারিমী অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি তীর নিক্ষেপের শিক্ষা গ্রহণ করার পর অবহেলা বা অনীহা প্রকাশ করে তা বর্জন করে, প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহর একটি নি’আমাত পরিহার করল। অথবা বলেছেন, সে আল্লাহর নি’আমাতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।
عَن عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يُدْخِلُ بِالسَّهْمِ الْوَاحِدِ ثَلَاثَةَ نَفَرٍ الْجَنَّةَ: صَانِعَهُ يَحْتَسِبُ فِي صَنْعَتِهِ الْخَيْرَ وَالرَّامِيَ بِهِ وَمُنَبِّلَهُ فَارْمُوا وَارْكَبُوا وَأَنْ تَرْمُوا أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ تَرْكَبُوا كُلُّ شَيْءٍ يَلْهُو بِهِ الرَّجُلُ بَاطِلٌ إِلَّا رَمْيَهُ بِقَوْسِهِ وَتَأْدِيبَهُ فَرَسَهُ وَمُلَاعَبَتَهُ امْرَأَتَهُ فَإِنَّهُنَّ مِنَ الْحَقِّ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَزَادَ أَبُو دَاوُد والدارمي: «ومَنْ تركَ الرَّميَ بعدَ مَا عَلِمَهُ رَغْبَةً عَنْهُ فَإِنَّهُ نِعْمَةٌ تَرَكَهَا» . أَوْ قَالَ: «كفرها»
ব্যাখ্যা: (صَانِعَه يَحْتَسِبُ فِىْ صَنْعَتِهِ الْخَيْرَ) তা প্রস্তুতকারী যে তা প্রস্তুত করার মাধ্যমে কল্যাণের আশা করে, অর্থাৎ যে তীরের কারণে তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে তার মধ্যে এক শ্রেণীর লোক তারা যারা তীর তৈরি করে এবং এর দ্বারা কল্যাণের তথা সাওয়াবের আশা করে।
(الرَّامِىَ بِه) তা নিক্ষেপকারী, অর্থাৎ তীর নিক্ষেপকারী যিনি তার তীর নিক্ষেপের দ্বারা সাওয়াবের আশা করে তিনিও জান্নাতে যাবেন।
(وَمُنَبِّلَه) তাকে তীর প্রদানকারী অর্থাৎ যিনি তীর নিক্ষেপকারীর হাতে তীর তুলে দেন সাওয়াবের প্রত্যাশায় তিনিও জান্নাতে প্রবেশ করবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৫)
(ارْمُوْا وَارْكَبُوْا) তোমরা তীর নিক্ষেপ কর এবং (বাহনে) আরোহণ কর, শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে তীর নিক্ষেপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং বাহনে আরোহণ করেও তীর নিক্ষেপ করবে। অর্থাৎ তোমরা যেমন তীর নিক্ষেপ করা শিখবে অনুরূপভাবে বাহনে আরোহণ করাও শিখবে যাতে বাহনে আরোহণ করে তীর নিক্ষেপ করতে পার।
ত্বীবী (রহ) বলেনঃ وَارْكَبُوْا দ্বারা উদ্দেশ্য বাহনে আরোহণ করে বর্শা নিক্ষেপ করা। অতএব হাদীসের পরবর্তী অংশ। (وَأَنْ تَرْمُوْا أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ تَرْكَبُوْا) বর্শা নিক্ষেপ করার চাইতে তীর নিক্ষেপ করা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। তবে হাদীসের প্রকাশমান অর্থ হলো তীর নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ, বাহনে আরোহণের প্রশিক্ষণের চাইতে উত্তম। কেননা বাহনে আরোহণের প্রশিক্ষণের মধ্যে অহংকারিতা রয়েছে বিপরীতে শুধুমাত্র তীর নিক্ষেপের মধ্যে এ অহংকার নেই অথচ এর উপকারিতা ব্যাপক।
(মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৬; তুহফাতুল আহ্ওযাযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৩৭)
(كُلُّ شَيْءٍ يَلْهُوْ بِهِ الرَّجُلُ بَاطِلٌ إِلَّا) হাদীসে উল্লেখিত তিন প্রকার খেল-তামাশা বৈধ। তাছাড়া যত প্রকার খেলা আছে তা সবই বাতিল। অর্থাৎ তাতে কোনো সাওয়াব নেই। পক্ষান্তরে তীর নিক্ষেপ করা, যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার উদ্দেশে ঘোড়দৌড় শিক্ষা এবং স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশা করার মধ্যে পূর্ণ সাওয়াব বিদ্যমান।
(مَنْ تَرَكَ الرَّمْىَ بَعْدَ مَا عَلِمَه رَغْبَةً عَنْهُ) যে ব্যক্তি তীর চালনা শিখার পর তা হতে বিমুখ হয়ে তা পরিত্যাগ করল, অর্থাৎ এ বিদ্যার প্রতি অমনোযোগী হয়ে তা ছেড়ে দিল।
(فَإِنَّه نِعْمَةٌ تَرَكَهَا) সে একটি নি‘আমাত ছেড়ে দিল অথবা সে এ নি‘আমাতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হলো। আল্লাহর দেয়া নি‘আমাতকে অবহেলা করল। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৬)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৩-[১৩] আবূ নাজীহ আস্ সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে (কোনো শত্রুর উপর) আঘাত হানলো, তার জন্য জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা নির্ধারিত রয়েছে। আর যে লোক আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করল (শত্রুর গায়ে বিদ্ধ হোক বা না হোক) তার জন্য একটি গোলাম মুক্তি করার সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে। আর যে লোক ইসলামের কাজে নিয়োজিত থেকে বার্ধক্যে পৌঁছেছে, কিয়ামতের দিন তার জন্য তা উজ্জ্বল নূরে পরিণত হবে। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
আবূ দাঊদ এ হাদীসটির শুধুমাত্র প্রথম অংশটি, নাসায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় অংশটি এবং তিরমিযী দ্বিতীয় ও তৃতীয় অংশটি বর্ণনা করেছেন। তবে বায়হাক্বী ও তিরমিযীর বর্ণনার মধ্যে ’’ইসলামে’’ এর স্থলে ’’আল্লাহর পথে’’ বর্ণিত হয়েছে।
وَعَن أبي نَجِيحٍ السُّلَميِّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ بَلَغَ بِسَهْمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ لَهُ دَرَجَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَمَنْ رَمَى بِسَهْمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَهُوَ لَهُ عِدْلُ مُحَرِّرٍ وَمَنْ شَابَ شَيْبَةً فِي الْإِسْلَامِ كَانَتْ لَهُ نُورًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ. وَرَوَى أَبُو دَاوُدَ الْفَصْلَ الْأَوَّلَ وَالنَّسَائِيُّ الْأَوَّلَ وَالثَّانِيَ وَالتِّرْمِذِيُّ الثَّانِيَ وَالثَّالِثَ وَفِي رِوَايَتِهِمَا: «مَنْ شَابَ شَيْبَةً فِي سَبِيلِ الله» بدَلَ «فِي الْإِسْلَام»
ব্যাখ্যা: (مَنْ بَلَغَ بِسَهْمٍ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ) যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি তীর পৌঁছালো, তা তার জন্য জান্নাতের মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে কাফিরের প্রতি তীর নিক্ষেপ করে এবং উক্ত তীর কাফিরের শরীরে আঘাত করে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে উক্ত তীর নিক্ষেপকারীর মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯৬০; শারহেন্ নাসায়ী ৩য় খন্ড, হাঃ ৩১৪৬)
(وَمَنْ رَمٰى بِسَهْمٍ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ فَهُوَ لَه عِدْلُ مُحَرِّرٍ) আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করল তা তার জন্য একটি দাসমুক্ত করার সাওয়াবের সমান বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ- আল্লাহর পথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তীর নিক্ষেপ করার পর তা যদি কাফিরের শরীরে আঘাত করতে ব্যর্থ হয় তাহলেও আল্লাহ তা‘আলা তাকে সাওয়াব থেকে বঞ্চিত করবেন না। বরং তাকে একটি গোলাম মুক্ত করার সমান সাওয়াব দিবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৩৮; শারহেন্ নাসায়ী ৩য় খন্ড, হাঃ ৩১৪৩)
(مَنْ شَابَ شَيْبَةً فِى الْإِسْلَامِ كَانَتْ لَه نُوْرًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ) যে ব্যক্তি ইসলামে অটলে থেকে (বৃদ্ধ হলো) চুল ও দাড়ি শুভ্র হলো কিয়ামতের দিবসে তার এই শুভ্রতা আলোকময় হবে, অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি ইসলামে অটল থেকে বার্ধক্য উপনীত হলে চাই সে জিহাদে অংশগ্রহণ করুক আর নাই করুক হাদীসৈ বর্ণিত মর্যাদা তার প্রাপ্য। এতে সাদা চুল বা দাড়ি উঠিয়ে ফেলতে নিষেধের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে এবং এ শুভ্রতাকে অপছন্দ না করে তাকে স্বাগত জানানোর প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৪-[১৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তীরন্দাজী অথবা উট কিংবা ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা ছাড়া অন্য কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা জায়িয নয়। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا سَبَقَ إِلَّا فِي نَصْلٍ أَوْ خُفٍّ أَوْ حَافِرٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (لَا سَبَقَ إِلَّا فِىْ نَصْلٍ) প্রতিযোগিতা করা বৈধ নয় তীরন্দাজী উট ও ঘোড়দৌড় ব্যতীত। অর্থাৎ- হাদীসে বর্ণিত তিন প্রকারের বস্তুর মধ্যে প্রতিযোগিতা বৈধ। ইবনু মালিক (রহঃ) বলেনঃ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে তাতে জিতে গিয়ে মাল গ্রহণ করা বৈধ নয় হাদীসে উল্লেখিত তিন প্রকার প্রতিযোগিতা ব্যতীত। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৫ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৮; শারহেন্ নাসায়ী ৩য় খন্ড, হাঃ ৩৫৮৭)
ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ হাদীসে উল্লেখিত প্রতিযোগিতা এজন্য বৈধ তাতে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্ততি এবং জিহাদের জন্য উৎসাহ প্রদান রয়েছে। কিন্তু যে প্রতিযোগিতায় যুদ্ধের প্রস্ততি নেই তাতে অংশগ্রহণ করে মাল গ্রহণ করা নিষিদ্ধ জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। তাই তা বৈধ নয়- (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৭১)। সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব -এর অভিমতও এটাই- (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭০০)।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৫-[১৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতায় দু’টি ঘোড়ার মধ্যে আরেকটি ঘোড়া সংযোজন করে। এমতাবস্থায় যদি এ বিশ্বাস থাকে যে, তার ঘোড়া আগে যেতে পারবেই, তখন তাতে কোনো কল্যাণ নেই। আর যদি এ বিশ্বাস না থাকে যে, তার ঘোড়া আগে যেতে পারবে, তখন তাতে কোনো অপরাধ নয়। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
আর আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে আছে, যে লোক প্রতিযোগিতায় দুই ঘোড়ার মধ্যে আরেকটি ঘোড়া প্রবেশ করায়, অথচ তা আগে যাবে কিনা কোনো আস্থা নেই, তখন তা জুয়া হবে না। আর যে লোক এ বিশ্বাসে তার ঘোড়া প্রবেশ করায় যে, তা নিশ্চিত আগে যাবেই, তখন তা জুয়া হবে তথা তা হারাম।
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَدْخَلَ فَرَسًا بَيْنَ فَرَسَيْنِ فَإِنْ كَانَ يُؤْمَنُ أَنْ يَسْبِقَ فَلَا خَيْرَ فِيهِ وَإِنْ كَانَ لَا يُؤْمَنُ أَنْ يَسْبِقَ فَلَا بَأْسَ بِهِ» . رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ: قَالَ: «مَنْ أَدْخَلَ فَرَسًا بَيْنَ فَرَسَيْنِ يَعْنِي وَهُوَ لَا يَأْمَنُ أَنْ يَسْبِقَ فَلَيْسَ بِقِمَارٍ وَمَنْ أَدْخَلَ فَرَسًا بَيْنَ فَرَسَيْنِ وَقَدْ أَمِنَ أَنْ يَسْبِقَ فَهُوَ قمار»
ব্যাখ্যা: (مَنْ أَدْخَلَ فَرَسًا بَيْنَ فَرَسَيْنِ) যে ব্যক্তি ঘোড়ার মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে প্রবেশ করালো। অর্থাৎ দুই ব্যক্তি পরস্পরের ঘোড়ার মাঝে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করল এভাবে যে, উভয়েই নির্দিষ্ট পরিমাণে মাল জমা করলো। অতঃপর উভয়ে শর্ত করলো যে, যদি আমার ঘোড়া প্রতিযোগিতায় বিজয় লাভ করে তাহলে সমুদয় মাল আমার তোমার কিছুই নেই। আর যদি তোমার ঘোড়া বিজয় লাভ করে তাহলে সমস্ত মাল তোমার আমার কিছুই নেই। এ শর্তে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করা বৈধ নয়। কেননা এটি জুয়া। এ অবস্থায় তৃতীয় কোনো ব্যক্তি যদি তার নিজস্ব ঘোড়া নিয়ে এসে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তাহলে হাদীসে বর্ণিত পরবর্তী শর্তসাপেক্ষে তা বৈধ এবং ঐ তৃতীয় ব্যক্তিকে বলা হয় মুহাল্লিল। কেননা তার অংশ গ্রহণ করার কারণে এ প্রতিযোগিতা বৈধ বলে গণ্য হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৯; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৭৬)
শর্তটি নিম্নরূপ- (إِنْ كَانَ يُؤْمِنُ أَنْ يُسْبِقَ فَلَا خَيْرَ فِيهِ) যদি যে নিশ্চিত হয় যে, তার ঘোড়া পরাজিত হবে না তাহলে এতে কোনো কল্যাণ নেই। অর্থাৎ সে জানে তার ঘোড়াটি অন্য দু’জনের ঘোড়ার চেয়ে অধিক দ্রুতগামী, ফলে সে নিশ্চিতভাবে জানে যে তার ঘোড়া অবশ্যই জয়লাভ করবে তাহলে তার জন্য এ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করা বৈধ নয়।
(وَإِنْ كَانَ لَا يُؤْمِنُ أَنْ يَسْبِقَ فَلَا بَأْسَ بِه) আর সে যদি তার ঘোড়া অপরাজিত হওয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চিত না হয় তাতে কোনো ক্ষতি নেই। অর্থাৎ সে নিশ্চিত নয় যে, তার ঘোড়াটি অন্য দু’জনের ঘোড়ার চাইতে অধিক দ্রুতগামী। বরং সে মনে করে যে, তাঁর ঘোড়া বিজয়ও লাভ করতে পারে অথবা পরাজয়ও হতে পারে এমনটি হলে তার জন্য প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করা বৈধ এবং তার অংশগ্রহণের ফলে এ প্রতিযোগিতাও বৈধ। সে যদি বিজয় লাভ করে তাহলে তার জন্য উভয়ের মাল নেয়া বৈধ। (প্রাগুক্ত)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৬-[১৬] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’জালাব’ (টানা বা হাঁকা) ও ’জানাব’ (পার্শ্ব বা পিছন থেকে হাঁকা-হাঁকি করে ঘোড়াটিকে তাড়াতে থাকা) বৈধ নয় (অর্থাৎ- কোনো লোকের দ্বারা ঘোড়াকে হাঁকিয়ে নেয়া ও ঘোড়া ক্লান্ত হয়ে পড়লে অতিরিক্ত ঘোড়া সাথে রাখা)। ইয়াহ্ইয়া অত্র হাদীসে বৃদ্ধি করে বলেছেন, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায়। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا جَلَبَ وَلَا جَنَبَ» . زَادَ يَحْيَى فِي حَدِيثِهِ: «فِي الرِّهَانِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَرَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ مَعَ زِيَادَة فِي بَاب «الْغَضَب»
ব্যাখ্যা: (لَا جَلَبَ وَلَا جَنَبَ فِى الرِّهَانِ) ঘোড়া প্রতিযোগিতার মধ্যে ঘোড়ার উপরে চিৎকার করা বৈধ নয়, ঘোড়ার পাশে অন্য ঘোড়া রাখাও বৈধ নয়। ইমাম মালিক বলেনঃ جَلَبَ এর অর্থ হলো ঘোড়ার উপরে চড়ে চিৎকার করা যাতে ঘোড়া দ্রুত দৌড়ায়।
নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেনঃ প্রতিযোগিতার মধ্যে جَلَبَ এর অর্থ হলো কোনো প্রতিযোগিতার ঘোড়ার পিছনে অন্য কোনো লোক রাখবে চিৎকার করার জন্য যাতে ঘোড়া দ্রুত দৌড়ায়। আর جَنَبَ এর অর্থ হলো প্রতিযোগিতার স্বীয় ঘোড়ার পাশে আরেকটি ঘোড়া রাখবে যখন তার স্বীয় ঘোড়াটি দুর্বল হয়ে যাবে তখন সে পাশের ঘোড়ার উপর আরোহণ করবে। ইসলামে প্রতিযোগিতার জন্য এরূপ করা বৈধ নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৯৯; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৭৮)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৭-[১৭] আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ঘোড়াই সর্বোত্তম, যে ঘোড়ার সারা দেহ কালো এবং কপালে ও নাকের দিকে কিছুটা সাদা চিহ্ন আছে। অতঃপর সেটাও উত্তম, যে ঘোড়ার কপালে সামান্য সাদা চিহ্নসহ পায়ের দিকেও সাদা থাকে, কিন্তু ডান পা যেন সাদা বর্ণের না হয়। অতঃপর যদি জমকালো কালো বর্ণের ঘোড়া না হয়, তবে উক্ত চিহ্নসহ খয়েরী রংয়ের ঘোড়াই উত্তম। (তিরমিযী, দারিমী)[1]
وَعَن أبي قَتَادَة عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «خَيْرُ الْخَيْلِ الْأَدْهَمُ الْأَقْرَحُ الْأَرْثَمُ ثُمَّ الْأَقْرَحُ الْمُحَجَّلُ طُلُقُ الْيَمِينِ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ أَدْهَمَ فَكُمَيْتٌ عَلَى هَذِهِ الشِّيَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ
ব্যাখ্যা: (خَيْرُ الْخَيْلِ الْأَدْهَمُ الْأَقْرَحُ الْأَرْثَمُ) কালো রং-এর ঘোড়া সর্বোত্তম যার কপাল ও উপরের ঠোট সাদা।
তূরিবিশ্তী বলেনঃ কালো কুচকুচে রং-কে বলা হয় أَدْهَمُ। আর যে ঘোড়ার চেহারা অল্প সাদা তাকে বলা হয় أَقْرَحُ। যে ঘোড়ার উপরের ঠোট সাদা তাকে বলা হয় الْأَرْثَمُ। আবার এও বলা হয় যে ঘোড়ার নাক সাদা তাকে বলা হয় الْأَرْثَمُ।
(الْأَقْرَحُ الْمُحَجَّلُ طُلُقُ الْيَمِينِ) ডান পা ব্যতীত অন্য পাগুলো সাদা বর্ণের ঘোড়া। كُمَيْتٌ লাল-কালো বর্ণের মিশ্রিত ঘোড়া। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৪০০)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৮-[১৮] আবূ ওয়াহব আল জুশামী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় তোমরা এমন ঘোড়া বাছাই করবে যা খয়েরী রংয়ের এবং কপাল ও হাত-পা কিছুটা সাদা অথবা লালবর্ণের, যার কপাল মিশকালো ও হাত-পা সাদা। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي وَهَبٍ الْجُشَمِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَلَيْكُمْ بِكُلِّ كُمَيْتٍ أَغَرَّ مُحَجَّلٍ أَوْ أَشْقَرَ أَغَرَّ مُحَجَّلٍ أَوْ أَدْهَمَ أَغَرَّ مُحَجَّلٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (أَغَرَّ) যে ঘোড়ার কপাল সাদা বর্ণের তাকে أَغَرَّ বলা হয়। مُحَجَّلٍ বলা হয় ঐ ঘোড়াকে যার পাগুলো সাদা বর্ণের। (عَلَيْكُمْ بِكُلِّ كُمَيْتٍ أَغَرَّ مُحَجَّلٍ) ঐ লাল-কালো বর্ণের মিশ্রিত ঘোড়া গ্রহণ করবে যার কপাল ও পাগুলো সাদা বর্ণের।
(أَشْقَرَ) ‘‘লাল বর্ণ’’। ত্বীবী বলেন, كُمَيْت ও أَشْقَرَ এ দুই এর মধ্যে পার্থক্য হলো, যে ঘোড়ার লাল বর্ণ কালো বর্ণের উপর প্রাধান্য পায় তাকে বলা হয় أَشْقَرَ। আর যে ঘোড়ার ঝুটি ও লেজ কালো বর্ণের তাকে বলা كُمَيْت (أَدْهَمَ) কালো বর্ণ। (أَدْهَمَ أَغَرَّ مُحَجَّلٍ) অর্থাৎ- যে ঘোড়া কালো বর্ণের কিন্তু তার কপাল ও পাগুলো সাদা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৪০; মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৪০১)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৭৯-[১৯] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লাল রংয়ের ঘোড়ার মধ্যেই কল্যাণ ও বরকত রয়েছে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُمْنُ الْخَيْلِ فِي الشُّقْرِ» . رَوَاهُ الترمذيُّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (يُمْنُ الْخَيْلِ فِى الشُّقْرِ) ‘‘লাল ঘোড়ার মধ্যেই বরকত আছে’’।
মুখতারুস্ সিহ্তাহ্-এর লেখক বলেন, الشُّقْرِ (আশকার) অর্থ রং। যে মানুষের চামড়া লাল-সাদা রং-এ মিশ্রিত ঐ মানুষকে বলা হয় الشُّقْرِ। আর ঘোড়া যদি ঝুটি ও তার লেজসহ সম্পূর্ণ লাল রং-এর হয় তাকে বলা হয় আশকার। আর ঝুটি ও লেজ যদি কালো হয় তাকে বলা হয় كُمَيْت (কুমায়ত)। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৯৫)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৮০-[২০] ’উতবাহ্ ইবনু ’আব্দুস সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ঘোড়ার কপালের ও ঘাড়ের চুল এবং লেজের চুল কেটো না। কেননা লেজ হলো তার পাখা এবং ঘাড়ের চুল হলো উষ্ণতা রক্ষার উপকরণ, আর তার কপালের চুলের মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن عُتبةَ بن عبدٍ السُّلميِّ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا تَقُصُّوا نَوَاصِيَ الْخَيْلِ وَلَا مَعَارِفَهَا وَلَا أَذْنَابَهَا فَإِنَّ أَذْنَابَهَا مَذَابُّهَا وَمَعَارِفَهَا دِفاءُها وَنَوَاصِيهَا مَعْقُودٌ فِيهَا الْخَيْرُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (نَوَاصِىَ الْخَيْلِ) ঘোড়ার কপালের লোমকে বলা হয় نَوَاصِى। আর ঘাড়ের লোমকে বলা হয় (أَذْنَابَهَا مَعَارِفَ مَذَابُّهَا) লেজ তার পাখা, যা দ্বারা সে পোকা মাকড়, মাশা-মাছি তাড়ায়। অর্থাৎ মানুষ যেমন পাখা দ্বারা বাতাস করে এবং তা দ্বারা কোনো কিছু তাড়ায়, অনুরূপ ঘোড়া তার লেজ দ্বারা তার ওপর পতিত পোকা-মাকড় মশা-মাছি তাড়ায়।
(وَمَعَارِفَهَا دِفَاءُهَا) ঘাড়ের ঝুটি তার কাপড় যা দ্বারা সে তাপ ও শীত নিবারণ করে। মানুষ যেমন রোদ্রের তাপ থেকে বাঁচার জন্য মাথার উপর ছাতা অথবা কাপড় ব্যবহার করে এবং শীত নিবারণের জন্য জামা কাপড় পরিধান করে ঘোড়ার কাঁধের ঝুটিও তেমন গরম ও শীত নিবারণের জন্য সহায়ক। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা কাটতে বারণ করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৪০১; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ২৫৩৯)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৮১-[২১] আবূ ওয়াহব আল জুশামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ঘোড়াগুলোকে (যুদ্ধাভিযানের জন্য) সযত্নে বেঁধে রাখ এবং সেগুলোর মাথা ও নিতম্বের উপর হাত বুলাও। অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তাদের গলায় মালা পরাও; কিন্তু গলায় ধনুকের তূণের মালা বেঁধো না। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي وَهَبٍ الْجُشَمِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ارْتَبِطُوا الْخَيْلَ وامسحُوا بنواصيها وأعجازِها أَو قَالَ: كفالِها وَقَلِّدُوهَا وَلَا تُقَلِّدُوهَا الْأَوْتَارَ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (وَامْسَحُوْا بِنَوَاصِيْهَا وَأَعْجَازِهَا) ‘‘তার কপালের ঝুটি এবং পশ্চাদেশ মুছে দাও।’’ ইবনু মালিক বলেনঃ মুছে দেয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য ধূলা-বালি থেকে ঘোড়া পরিষ্কার রাখা এবং তার সতেজতা নিরীক্ষণ করা।
(وَقَلِّدُوْهَا وَلَا تُقَلِّدُوْهَا الْأَوْتَارَ) ‘‘তার গলায় মালা পড়াও কিন্তু ধনুকের তূনের মালা পড়াবে না।’’ কেননা কোনো কোনো সময় ঘোড়া গাছের পাতা খেয়ে থাকে অথবা গাছের সাথে তার কাঁধ চুলকায়, ফলে ধনুকের শক্ত ছিলা তার গলায় পেঁচিয়ে ফাঁস লেগে যেতে পারে। অথবা জাহিলী যুগে লোকেরা ঘোড়ার গলায় ধনুকের ছিলা বেঁধে দিত যাতে চোখ লাগা থেকে রক্ষা পায়। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বাঁধতে নিষেধ করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড ৪০২ পৃঃ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৫০)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৮২-[২২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একজন নির্দেশপ্রাপ্ত বান্দা। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের (আহলে বায়তের) জন্য তিনটি কাজ ব্যতীত অন্য কোনো বিষয়ে বিশেষ কোনো নির্দেশ দেননি। আর তা হলো তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ করি, আমরা যেন সাদাকা না খাই এবং ঘোড়া-গাধার মিলনে প্রজনন না ঘটাই। (তিরমিযী, নাসায়ী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَبْدًا مَأْمُورًا مَا اخْتَصَّنَا دُونَ النَّاسِ بِشَيْءٍ إِلَّا بِثَلَاثٍ: أَمَرَنَا أَنْ نُسْبِغَ الْوُضُوءَ وَأَنْ لَا نَأْكُلَ الصَّدَقَةَ وَأَنْ لَا نَنْزِيَ حمارا على فرس. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (كَانَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ عَبْدًا مَأْمُوْرًا) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশপ্রাপ্ত বান্দা ছিলেন অর্থাৎ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিসালাতের দায়িত্ব প্রচারে আদিষ্ট ছিলেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘হে রসূল! তোমার প্রতি তোমার রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তা প্রচার কর’’- (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৬৭)।
(মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৪০২)
(مَا اخْتَصَّنَا دُوْنَ النَّاسِ بِشَيْءٍ) ‘‘তিনি আমাদের জন্য বিশেষ কোনো নির্দেশ দেননি’’ এর দ্বারা আহলুল বায়ত। অর্থাৎ- তিনি আহলে বায়তগণের জন্য বিশেষ কোনো নির্দেশ দেননি।
(إِلَّا بِثَلَاثٍ) তবে আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে উযূ করার তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন। কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ এ নির্দেশ দ্বারা ওয়াজিব উদ্দেশ্য। নতুবা এতে কোনো বিশেষ নির্দেশনা পাওয়া যাবে না। কেননা পূর্ণভাবে উযূ করা সকলের জন্যই মুস্তাহাব, অতএব আহলে বায়তগণের জন্য এ নির্দেশনা অন্যান্য লোকেদের চাইতে ভিন্ন নির্দেশ তা হলো পূর্ণভাবে উযূ করা তাদের জন্য ওয়াজিব।
(وَأَنْ لَا نَأْكُلَ الصَّدَقَةَ) ‘‘আমরা যেন সাদাকা ভক্ষণ না করি’’ আহলে বায়তগণের জন্য সাদাকা ভক্ষণ করা হারাম। যদিও উম্মাতের অন্যান্য লোকেদের মধ্যে যারা দরিদ্র তাদের জন্য সাদাকা ভক্ষণ করা হালাল। অতএব এক্ষেত্রেও আহলে বায়তগণের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।
(وَأَنْ لَا نَنْزِىَ حِمَارًا عَلٰى فَرَسٍ) আমরা যেন গাধা দ্বারা ঘোড়াকে পাল না দেই। ঘোড়াকে গাধা দিয়ে পাল দেয়া সাধারণ করা হয় উৎকৃষ্ট বস্তুর পরিবর্তে নিকৃষ্ট বস্তু গ্রহণ করা হয়। গাধা যুদ্ধ ক্ষেত্রে শত্রুর মোকাবিলার জন্য অনুপযোগী। কেননা এর দ্বারা পিছুটান করে পুনরায় আক্রমণ করা যায় না যা ঘোড়া দ্বারা করা সম্ভব। এজন্যই গাধাতে গনীমাতের কোনো অংশ নেই। যেমনটি ঘোড়ার জন্য রয়েছে। সাদাকা না খাওয়ার হুকুমের সাথে গাধা দ্বারা ঘোড়ার পাল না দেয়ার হুকুমকে সংযুক্ত করা হয়েছে। অতএব আহলে বায়তগণের জন্য যেরূপভাবে সাদাকা খাওয়া হারাম অনুরূপ গাধা দ্বারা ঘোড়ার পাল দেয়াও হারাম যদিও তা সর্বসাধারণের জন্য মাকরূহ।
অত্র হাদীসে শী‘আদের ঐ দাবীর কঠোর প্রতিবাদ রয়েছে যাতে দাবী করা হয়ে থাকে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহলে বায়তগণকে বিশেষ ‘ইলম শিক্ষা দান করেছেন যা অন্যদের দেননি। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৪০৩; তুহফাতুল আহওয়াজী ৫ম খন্ড, হাঃ ৮০৩)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৮৩-[২৩] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটি খচ্চর হাদিয়া (উপহার) দেয়া হলে তিনি তার উপর আরোহণ করলেন। তখন ’আলী(রাঃ) বললেন, (হে আল্লাহর রসূল!) আমরা যদি গাধাকে ঘোড়ীর সঙ্গে মিলন (প্রজনন) করাতাম, তবে এ ধরনের খচ্চর আমরাও লাভ করতাম। এতদশ্রবণে রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নির্বোধ লোকেরাই এ ধরনের কাজ করে থাকে। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: أُهْدِيَتْ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم بغلةٌ فركِبَهَا فَقَالَ عَلِيٌّ: لَوْ حَمَلْنَا الْحَمِيرَ عَلَى الْخَيْلِ فَكَانَتْ لَنَا مِثْلُ هَذِهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا يَفْعَلُ ذَلِكَ الَّذِينَ لَا يعلمُونَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (إِنَّمَا يَفْعَلُ ذٰلِكَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ) এটাতো শুধু তারাই করে যারা জানে না। অর্থাৎ- যারা জানে না যে, ঘোড়াকে ঘোড়া দ্বারা পাল দেয়া উত্তম তারাই এ কাজ করে থাকে তথা ঘোড়াকে গাধা দ্বারা পাল দেয়া অথবা যারা শারী‘আতের বিধাব জানে না তারাই এরূপ করে থাকে।
আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ যারা এর মাকরূহ হওয়া অবহিত নয় এবং এর কারণ অবহিত নয় তারাই এরূপ করে।
মুযহির মনে করেন যে, ঘোড়াকে গাধা দ্বারা পাল দেয়া মাকরূহ। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খচ্চরের উপর আরোহণ করেছেন এবং আল্লাহ তা‘আলা খচ্চরকে তার বান্দাদের জন্য নি‘আমাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ত্বীবী বলেনঃ হতে পারে যে, ঘোড়াকে গাধা দ্বারা পাল দেয়া হারাম কিন্তু এ পাল দেয়ার ফলে যে খচ্চবের জন্ম হয় তাতে আরোহণ করা বৈধ। যেমন ছবি অংকন করা হারাম কিন্তু অঙ্কিত ছবির উপর বসা বৈধ। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৪০৩)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৮৪-[২৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরবারির বাঁটের উপরিভাগে রৌপ্যখচিত ছিল। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও দারিমী)[1]
وَعَن أنسٍ قَالَ: كَانَتْ قَبِيعَةُ سَيْفِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ فِضَّةٍ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা: ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরবারির বাঁটে রূপা সংযুক্ত ছিল।’’ নিহায়াহ্-এর গ্রন্থকার বলেন, قَبِيعَةُ বলা হয় তরবারির বাঁটের অগ্রভাগকে। কামূস-এর লেখক বলেনঃ তরবারির হাতলের যে অংশে রূপা অথবা লোহা থাকে সে অংশকে قَبِيعَةُ বলা হয়। মোটকথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরবারির হাতলে রূপা ছিল।
অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, অল্প পরিমাণ রূপা দ্বারা তরবারি সজ্জিত করা বৈধ। তবে স্বর্ণ দ্বারা সজ্জিত করা বৈধ নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৮৫-[২৫] হূদ ইবনু ’আব্দুল্লাহ ইবনু সা’দ তার দাদা অথবা নানা মাযীদাহ্ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন যখন মক্কায় প্রবেশ করছেন তখন তাঁর তরবারির বাঁটের মধ্যে স্বর্ণ ও রৌপ্যখচিত ছিল। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ هُودِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَعْدٍ عَن جدِّهِ مِزيدةَ قَالَ: دَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْفَتْحِ وَعَلَى سَيْفِهِ ذَهَبٌ وَفِضَّةٌ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث غَرِيب
ব্যাখ্যা: (وَعَلٰى سَيْفِه ذَهَبٌ وَفِضَّةٌ) ‘‘তাঁর তরবারি স্বর্ণ ও রৌপ্য খচিত ছিল’’ এ হাদীসটি যদিও প্রমাণ করে যে, তরবারি স্বর্ণ খচিত করা বৈধ। তবে অত্র হাদীসটি দলীলযোগ্য নয়।
তূরিবিশতী বলেনঃ মাযীদাহ্ বর্ণিত এ হাদীসটি দ্বারা দলীল প্রতিষ্ঠিত হয় না, কেননা এ হাদীসের গ্রহণযোগ্য কোনো সানাদ নেই। ‘‘ইসতী‘আব’’ গ্রন্থের লেখক অত্র হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেনঃ এ হাদীসটির সানাদ শক্তিশালী নয়। অতএব তরবারি স্বর্ণখচিত করা বৈধ নয়। (তুহ্ফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৯০; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৮৬-[২৬] সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিন দু’টি বর্ম পরিধান করেছিলেন। অবশ্য একটির উপর আরেকটি পরিধান করেছিলেন। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَن السَّائِب بْنِ يَزِيدَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عَلَيْهِ يَوْمَ أُحُدٍ دِرْعَانِ قَدْ ظَاهَرَ بَيْنَهُمَا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: উহুদ যুদ্ধের দিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গায়ে দু’টি বর্ম ছিল, যা দ্বারা তিনি নিজেকে রক্ষা করার জন্য সহযোগিতা নিয়েছিলেন। অর্থাৎ- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের দিন একটি বর্মের উপর আরেক বর্ম পরিধান করেছিলেন। এতে প্রমাণ মিলে নিজেকে সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহার করা বৈধ। আর তা তাওয়াক্কুলের বিরোধী নয় এবং নিজেকে আল্লাহ নির্ধারিত তাকদীরের কাছে সমর্পণ করারও বিরোধী নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৮৭-[২৭] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বড় পতাকাটি ছিল কালো বর্ণের এবং ছোট পতাকাটি ছিল সাদা বর্ণের। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ
قَالَ: كَانَتْ رَايَةُ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَوْدَاءَ وَلِوَاؤُهُ أبيضَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছোট পতাকা ছিল কালো রং-এর আর বড় পতাকা ছিল সাদা বর্ণের। তূরিবিশতী বলেনঃ (رَايَةُ) ঐ পতাকাকে বলা হয় যা যুদ্ধের সর্বাধিনায়কের নিকট থাকে যাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আর (لِوَاء) বলা হয় আমীরের সেই পতাকাকে যা আমীরের সাথে থাকে।
সহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যকার বলেনঃ (رَايَةُ) বলা হয় ছোট পতাকাকে আর (لِوَاء) বলা হয় বড় পতাকাকে। এ ব্যাখ্যাকে ঐ হাদীস সমর্থন করে যাতে বলা হয়েছে, আমার হাতে থাকবে প্রশংসার পতাকা। আদম (আঃ) এবং অন্যরা কিয়ামতের দিন আমার পতাকা তলে থাকবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৭ম খন্ড, পৃঃ ৪০৫)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৮৮-[২৮] মূসা ইবনু ’উবায়দাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মুহাম্মাদ ইবনু কাসিম-এর মুক্তকৃত গোলাম আমাকে বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ)-এর নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পতাকার (বর্ণের) ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তা চতুষ্কোণ বিশিষ্ট কৃষ্ণ (কালো) বর্ণের যা নামিরাহ্ চাদর দ্বারা তৈরি ছিল। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ مُوسَى بْنِ عُبَيْدَةَ مَوْلَى مُحَمَّدِ بْنِ الْقَاسِمِ قَالَ: بَعَثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الْقَاسِمِ إِلَى الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ يَسْأَلُهُ عَنْ رَايَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: كَانَتْ سَوْدَاءَ مُرَبَّعَةً مِنْ نَمِرَةٍ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (كَانَتْ سَوْدَاءَ مُرَبَّعَةً مِنْ نَمِرَةٍ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পতাকা ছিল চার কোণ বিশিষ্ট কালো বর্ণের যা নামিরাহ্ চাদর দ্বারা তৈরি ছিল। কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ (سَوْدَاءَ) ‘‘কালো বর্ণের’’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য উক্ত পতাকাতে কালো রং এর অংশ বেশী ছিল, দূর থেকে তাকে কালো রং এর দেখাতো তবে তা একেবারে খাঁটি কালো রং-এর ছিল না। কেননা হাদীসের পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে, (مِنْ نَمِرَةٍ) নামিরাহ্ দ্বারা তৈরি। নামিরাহ্ বলা হয় ঐ পশমী চাদরকে যার মধ্যে সাদা কালো ডোরা থাকে। আর এজন্যই একে নামিরাহ্ বলা হয়। কারণ নামিরাহ্ অর্থ নেকড়ে বাঘ যার গায়ে কালো ও সাদা ডোরা বিদ্যমান। নেকড়ের সদৃশ বলেই এ চাদরের নামকরণ করা হয়েছে নামিরাহ্। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৮৮; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৮০)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৮৯-[২৯] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করেছেন যে, তার বড় পতাকাটি সাদা বর্ণের ছিল। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ جَابِرٌ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ مَكَّةَ وَلِوَاؤُهُ أَبْيَضُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: মক্কা প্রবেশের দিন তার পতাকা ছিল সাদা। পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, (لِوَاء) বলা হয় বড় পতাকাকে অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন তিনি যখন সেখানে প্রবেশ করেন তখন তার বড় পতাকাটি ছিল সাদা বর্ণের। তবে এ বর্ণনাটি সঠিক নয়। কেননা ইয়াহ্ইয়া ইবনু আদাম এককভাবে এটি বর্ণনা করেছেন। শরীক-এর অন্যান্য একাধিক ছাত্র বর্ণনা করেছেন যে, (أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ دَخَلَ مَكَّةَ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন যখন তিনি সেখানে প্রবেশ করেন তখন তার মাথায় কালো পাগড়ী ছিল। আর এ বর্ণনাটিই সঠিক ও সংরক্ষিত। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৭৯)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৯০-[৩০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নারীদের পরে (জিহাদরত) ঘোড়ার চেয়ে অন্য কোনো জিনিস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় ছিল না। (নাসায়ী)[1]
عَن أنسٍ قَالَ: لَمْ يَكُنْ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ النِّسَاءِ من الْخَيل. رَوَاهُ النَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (أَحَبَّ إِلٰى رَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ بَعْدَ النِّسَاءِ) নারীদের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অধিক প্রিয় বস্তু ছিল ঘোড়া।
‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ অত্র হাদীসে ঘোড়ার উল্লেখ দ্বারা উদ্দেশ্য শত্রুর মোকাবিলায় আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘোড়া পছন্দ করতেন। নারীর সাথে ঘোড়ার উল্লেখ দ্বারা তার চরিত্রের পূর্ণতা বুঝানো উদ্দেশ্য। যেহেতু অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুগন্ধি এবং নারীদেরকে আমার প্রিয় বস্তু বানানো হয়েছে। এতে এ সন্দেহ জাগ্রত হতে পারে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উন্নত চরিত্রে কাজ পরিত্যাগ করে শুধুমাত্র নারীদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। এ সন্দেহ দূর করার জন্য তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘোষণা দিলেন যে, নারীগণ তাঁর নিকট প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগামী এবং স্বয়ং যুদ্ধ করতে যত্নশীল। আর যুদ্ধে অংশ করার অর্থ নারীদের সাথে ব্যস্ত না থেকে তাদের পরিত্যাগ করার জন্য যে ধৈর্যের প্রয়োজন সে ধৈর্যের চরম পরাকাষ্ঠা তিনি দেখিয়েছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাস্ত্রের প্রস্তুতিকরণ
৩৮৯১-[৩১] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে ’আরবীয় একটি ধনুক ছিল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখতে পেলেন অপর লোকের হাতে একটি পারস্যের (ইরানের) প্রস্তুতকৃত ধনুক। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার হাতে এটা কি? তা ফেলে দাও (ব্যবহার করো না)। তোমাদের এ ধরনের ’আরবীয় ধনুক এবং উন্নতমানের বর্শা ব্যবহার করা উচিত। কেননা এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে (দীনের পথে) সাহায্য করবেন এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন দেশে-শহরে-নগরে প্রতিষ্ঠিত করবেন। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَن عَليّ قَالَ: كَانَتْ بِيَدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَوْسٌ عَرَبِيَّةٌ فَرَأَى رَجُلًا بِيَدِهِ قَوْسٌ فَارِسِيَّةٌ قَالَ: «مَا هَذِهِ؟ أَلْقِهَا وَعَلَيْكُمْ بِهَذِهِ وَأَشْبَاهِهَا وَرِمَاحِ الْقَنَا فَإِنَّهَا يُؤَيِّدُ اللَّهُ لَكُمْ بِهَا فِي الدِّينِ وَيُمَكِّنُ لَكُمْ فِي البلادِ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (وَعَلَيْكُمْ بِهٰذِه وَأَشْبَاهِهَا وَرِمَاحِ) তোমাদের কর্তব্য এই ‘আরবীয় ধনুক এবং অনুরূপ ধনুক ব্যবহার করা। আল্লাহ তোমাদেরকে এ ধনুক দ্বারা দীন প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করছেন এবং তোমাদের দেশে স্থায়ী করে দিবেন।
ত্বীবী (রহ) বলেনঃ হয়ত বা সাহাবী মনে করেছিলেন ‘আরবীয় ধনুকের চাইতে ফরামী ধনুক অধিক মজবুত এবং এর দ্বারা নিক্ষিপ্ত তীর অনেক দূর পর্যন্ত নিক্ষেপ করা যাবে তাই তিনি ‘আরবীয় ধনুকের উপর ফরামী ধনুককে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ ধারণাকে অমূলক বলে তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলাই তোমাদেরকে তোমাদের দীন রক্ষার জন্য সাহায্য করে থাকেন এবং তোমাদের দেশে তিনিই তোমাদেরকে বসবাস করার জন্য সুযোগ করে দেন। তোমাদের শক্তি অথবা প্রস্ত্ততির জন্য তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হও না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)