পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকদের (সহকর্মীদের) বেতন ও হাদিয়া গ্রহণ করা

৩৭৪৮-[৪] বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো লোককে যদি আমরা কোনো কাজে নিযুক্ত করি এবং তাকে সে কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেই। অতঃপর যদি সে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করে, তবে তা হলো খিয়ানাত। (আবূ দাঊদ)[1]

عَن بُرَيْدَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ عَلَى عَمَلٍ فَرَزَقْنَاهُ رِزْقًا فَمَا أَخَذَ بَعْدَ ذَلِكَ فَهُوَ غُلُولٌ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

عن بريدة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «من استعملناه على عمل فرزقناه رزقا فما اخذ بعد ذلك فهو غلول» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকে আমার কোনো দায়িত্ব দিলাম আর এজন্য তাকে পারিশ্রমিকও দিলাম। সুতরাং এর অতিরিক্ত কিছু যদি সে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে গ্রহণ করে তাহলে এটাই غُلُوْلٌ (গুলূল) বা হারাম। এর জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

হাদীসটির বর্ণনাকারী সাহাবী বুরায়দাহ্ বিন হুসায়ব আল্ আসলামী (রাঃ) বদর যুদ্ধে অংশে নেননি, বায়যাতুর্ রিয্ওয়ানে অংশ নিয়েছেন। প্রথমে মদীনায় বসবাস করলেও পরে বাসরায় আসেন, পরবর্তীতে সেখান থেকে খুরাসানে আসেন। অতঃপর ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়াহ্-এর শাসনামলে ৬২ হিজরী সালে ‘‘মার্‌ও’’ শহরে মৃত্যুবরণ করেন। তার থেকে একদল সাহাবী, তাবি‘ঈ হাদীস বর্ণনা করেন। হাদীসটিতে উল্লেখিত غُلُوْلٌ শব্দের অর্থ হলো খিয়ানাত করা বিশ্বাসঘাতকতা করা। এক্ষেত্রে খিয়ানাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গনীমাত বা ফা‘ই এর মাল থেকে অন্যায়ভাবে গ্রহণ করা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৯৪১; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকদের (সহকর্মীদের) বেতন ও হাদিয়া গ্রহণ করা

৩৭৪৯-[৫] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে (রাষ্ট্রীয়) কাজে নিযুক্ত হয়েছিলাম। আর আমাকে তার পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: عَمِلْتُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فعملني. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن عمر رضي الله عنه قال: عملت على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم فعملني. رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: দ্বিতীয় খলীফা ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এ হাদীসে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্ব তিনি আমাকে দিয়েছেন, আমাকে পারিশ্রমিকও দিয়েছেন। অত্র হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে তার জন্য পারিশ্রমিক (ন্যায়সঙ্গতভাবে) গ্রহণ ইসলাম নিষেধ করেনি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকদের (সহকর্মীদের) বেতন ও হাদিয়া গ্রহণ করা

৩৭৫০-[৫] মু’আয (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (গভর্নর নিয়োগ করে) ইয়ামানে পাঠালেন। যখন আমি রওয়ানা হলাম, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার পিছনে একজন লোক পাঠালেন। অতঃপর যখন আমি ফিরে আসলাম, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি কি জানো, কেন আমি তোমার কাছে লোক পাঠালাম? আমার অনুমতি ব্যতীত তুমি কোনো মাল গ্রহণ করবে না। কেননা এভাবে গ্রহণ করা খিয়ানাত বা আত্মসাৎ। আর যে ব্যক্তি খিয়ানাত করবে, কিয়ামতের দিন সে তা বহন করেই (হাশরের ময়দানে উত্থিত হবে) আসবে। আমি তোমাকে এ কথাগুলো বলার জন্যই ডেকে পাঠিয়েছি। এখন তুমি তোমার কাজে রওয়ানা হয়ে যাও। (তিরমিযী)[1]

وَعَن مُعَاذٍ قَالَ: بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْيَمَنِ فَلَمَّا سِرْتُ أَرْسَلَ فِي أَثَرِي فَرُدِدْتُ فَقَالَ: «أَتَدْرِي لِمَ بَعَثْتُ إِلَيْكَ؟ لَا تُصِيبَنَّ شَيْئًا بِغَيْرِ إِذْنِي فَإِنَّهُ غُلُولٌ وَمَنْ يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لهَذَا دعوتك فَامْضِ لعملك» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن معاذ قال: بعثني رسول الله صلى الله عليه وسلم الى اليمن فلما سرت ارسل في اثري فرددت فقال: «اتدري لم بعثت اليك؟ لا تصيبن شيىا بغير اذني فانه غلول ومن يغلل يات بما غل يوم القيامة لهذا دعوتك فامض لعملك» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: মু‘আয (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত অত্র হাদীসটির মূল শিক্ষা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোনো দায়িত্ব পেয়ে সে ক্ষেত্রে খিয়ানাত করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ খিয়ানাত সেটা তো মস্তবড় পাপ, এর জন্য কিয়ামতের কঠিন ময়দানে নিদারুণ দুঃখ পেতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘কোন নাবী খিয়ানাত করতে পারে না, যে ব্যক্তি খিয়ানাত করবে, সে খিয়ানাতকৃত বিষয়বস্তুসহ কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে, অতঃপর প্রত্যেককে যা সে অর্জন করেছে তা পুরোপুরি দেয়া হবে, কারও প্রতি কোন প্রকার জুলুম করা হবে না।’’ (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৬১)

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِيءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلٰى رَقَبَتِه بَعِيرٌ لَه رُغَاءٌ

অর্থাৎ আমি যেন কিয়ামতের দিন তোমাদের কাউকে এমতাবস্থায় না পাই তার কাঁধে একটি উট থাকবে যেটি গরগর শব্দ করতে থাকবে। (বুখারী হাঃ ৩০৭৩; মুসলিম হাঃ ১৫৩১)

সুতরাং সর্বপ্রকার খিয়ানাত থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩৩৫; মিরকাতুল মাফাতীহ


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকদের (সহকর্মীদের) বেতন ও হাদিয়া গ্রহণ করা

৩৭৫১-[৭] মুসতাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের শাসনকার্যে নিযুক্ত হবে, তার যদি স্ত্রী না থাকে তবে সে একজন স্ত্রীর ব্যবস্থা করতে পারে। আর যদি তার খাদিম না থাকে, তাহলে একজন খাদিম রাখতে পারে। আর যদি তার কোনো ঘর না থাকে, তাহলে একটি ঘরেরও ব্যবস্থা করতে পারে। অপর এক বর্ণনাতে আছে, সে যদি তা ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করে, তবে তা খিয়ানাত হবে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن المستَوْرِدِ بنِ شدَّادٍ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ كَانَ لَنَا عَامِلًا فَلْيَكْتَسِبْ زَوْجَةً فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ خَادِمٌ فَلْيَكْتَسِبْ خَادِمًا فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ مَسْكَنٌ فَلْيَكْتَسِبْ مَسْكَنًا» . وَفِي رِوَايَةٍ: «مَنِ اتَّخَذَ غَيْرَ ذَلِكَ فَهُوَ غالٌّ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن المستورد بن شداد قال: سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: «من كان لنا عاملا فليكتسب زوجة فان لم يكن له خادم فليكتسب خادما فان لم يكن له مسكن فليكتسب مسكنا» . وفي رواية: «من اتخذ غير ذلك فهو غال» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: মুসতাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, কেউ ইসলামী রাষ্ট্রের সচিব বা কর্মকর্তা নিযুক্ত হলে যদি স্ত্রীর ভরণ-পোষণ না করতে পারে তাহলে রাষ্ট্র থেকে নিতে পারবে। মুযহির বলেন, হাদীসে বর্ণিত ‘‘স্ত্রী না থাকলে স্ত্রী গ্রহণ করবে’’ এর অর্থ হলো যদি বিবাহ করার মোহর না থাকে তাহলে মোহর রাষ্ট্রের থেকে নিতে পারবে। অনুরূপভাবে ন্যায়সঙ্গতভাবে স্ত্রীর ভরণ-পোষণ নিতে পারবে তবে অন্যায়ভাবে বা অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করলে তা হারাম সাব্যস্ত হবে। অনুরূপভাবে যদি খাদিমের প্রয়োজন হয় তা নিতে পারবে যদি বাড়ী না থাকে বাড়ী নিতে পারবে। এসবগুলোই নিতে পারবে ন্যায়সঙ্গতভাবে অন্যায়ভাবে একটি পয়সাও নিতে পারবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৯৪৩; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকদের (সহকর্মীদের) বেতন ও হাদিয়া গ্রহণ করা

৩৭৫২-[৮] ’আদী ইবনু ’উমায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে মানব সকল! তোমাদের কাউকে যদি আমাদের কোনো কাজে নিযুক্ত করা হয়। অতঃপর সে যদি তা থেকে একটি সুঁই পরিমাণ অথবা তার চেয়ে অধিক কিছু লুক্কায়িত রাখে, তাহলে সে খিয়ানাতকারী বলে সাব্যস্ত হবে। কিয়ামতের দিনে সে তা বহন করে উত্থিত হবে। তখন জনৈক আনসারী দাঁড়িয়ে বলে উঠলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমার ওপর যে কাজ অর্পণ করেছেন, তা অনুগ্রহপূর্বক প্রত্যাহার করে নিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কেন এটা বলছ? লোকটি বলল, আমি শুনেছি যে, আপনি এরূপ এরূপ (ভীতিকর) কথা বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, আমি আবারও বলছি, যাকে আমরা কোনো কাজে নিযুক্ত করি, তখন সে যেন তার কম ও বেশি যাই হোক (সবকিছু) আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়। অতঃপর তাকে যা কিছু দেয়া হবে, শুধু তাই গ্রহণ করবে। আর যা থেকে নিষেধ করা হবে, তা থেকে সর্বদা বিরত থাকে। (মুসলিম ও আবূ দাঊদ; তবে শব্দবিন্যাস আবূ দাঊদ-এর)[1]

وَعَن عَدِيِّ بنِ عَمِيرةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ مَنْ عُمِّلَ مِنْكُمْ لَنَا عَلَى عَمَلٍ فَكَتَمَنَا مِنْهُ مِخْيَطًا فَمَا فَوْقَهُ فَهُوَ غَالٌّ يَأْتِي بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ اقْبَلْ عَنِّي عَمَلَكَ. قَالَ: «وَمَا ذَاكَ؟» قَالَ: سَمِعْتُكَ تَقُولُ: كَذَا وَكَذَا قَالَ: «وَأَنَا أَقُولُ ذَلِكَ مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ عَلَى عَمَلٍ فَلْيَأْتِ بِقَلِيلِهِ وَكَثِيرِهِ فَمَا أُوتِيَ مِنْهُ أَخَذَهُ وَمَا نُهِيَ عَنْهُ انْتَهَى» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَأَبُو دَاوُد وَاللَّفْظ لَهُ

وعن عدي بن عميرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «يا ايها الناس من عمل منكم لنا على عمل فكتمنا منه مخيطا فما فوقه فهو غال ياتي به يوم القيامة» . فقام رجل من الانصار فقال: يا رسول الله اقبل عني عملك. قال: «وما ذاك؟» قال: سمعتك تقول: كذا وكذا قال: «وانا اقول ذلك من استعملناه على عمل فليات بقليله وكثيره فما اوتي منه اخذه وما نهي عنه انتهى» . رواه مسلم وابو داود واللفظ له

ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পেয়ে তাতে খিয়ানাত সম্পর্কে কঠোর হুশিয়ারী স্বরূপ। হাফিয ইবনু হাজার আস্ক্বালানী (রহঃ) বলেছেনঃ ‘উমায়রাহ্ নামে আসমায়ে রিজালে কোনো রাবী নেই বরং ‘আমীরাহ্ আছে, তবে নাসায়ীতে ‘উমায়রাহ্ ও ‘আমিরাহ্ দু’টিই ব্যবহৃত হয়েছে। এমনটাই বর্ণনা এসেছে সহীহ মুসলিম-এর ব্যাখ্যায়। কেউ কেউ বলেন, তিনি হলেন আল্ কিনদী আল্ হাযরামী কূফায় বসবাস করতেন, অতঃপর সেখান থেকে জাযিরায় স্থানান্তরিত হন, সেখানে বসবাস করতে থাকেন, পরে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।

অত্র হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বললেন, আমরা যাকে দায়িত্ব দিলাম তারপর সে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের একটি সুতাও যদি গোপনে নিয়ে নেয় তাহলে এর জন্য সে কিয়ামতে খিয়ানাতকারীর কাতারে দাঁড়াবে। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এহেন ভীতসন্ত্রস্ত বক্তব্য শুনে তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে চাইলেন। এ থেকে বুঝা যায়, দায়িত্ব শুধু নিলেই হবে না তা যথাযথ পালন না করতে পারলে অব্যাহতি নেয়াই শ্রেয়। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৮৩৩; ‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫৭৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকদের (সহকর্মীদের) বেতন ও হাদিয়া গ্রহণ করা

৩৭৫৩-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষ গ্রহণকারী ও ঘুষ প্রদানকারী উভয়ের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]

وَعَن عبد الله بن عَمْرو قَالَ: لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم الرَّاشِيَ وَالْمُرْتَشِيَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ

وعن عبد الله بن عمرو قال: لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم الراشي والمرتشي. رواه ابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরকারী দায়িত্ব পালনকারী ঐসব লোকেদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন যারা দায়িত্ব পালনে ঘুষ লেন-দেন করে থাকে। ঘুষ বলা হয় যার মাধ্যমে তদবীর করে কাঙ্খিত লক্ষ্য পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয় যদিও তা ভুল পন্থা। ‘রাশী’ হলো সে যে কাউকে কিছু দিল এ আশায় যে, সে তাকে অন্যায় কাজে সহযোগিতা করবে। অপরদিকে যে তা গ্রহণ করে তাকে হাদীসের পরিভাষায় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মুরতাশী’ বলেছেন। আর ‘রাশী’ ও ‘মুরতাশী’র মধ্যে লেন-দেনের পরিমাণ কম-বেশী করতে ভূমিকা পালনকারীকে রায়শ বলে।

 কারো ওপর থেকে জুলুম অপসারণের নিমিত্তে প্রদত্ত টাকা বা অর্থ ঘুষের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাবি‘ঈদের একদল থেকে প্রমাণিত আছে, তারা বলেনঃ لَا بَأْسَ أَنْ يُصَانِعَ الرَّجُلُ عَنْ نَفْسِه وَمَالِه إِذَا خَافَ الظلم অর্থাৎ- যদি কেউ তার নিজের আত্মা ও অর্থের ব্যাপারে জুলুমের আশংকা করে তাহলে এ থেকে বাঁচার জন্য কোনো উপায় অবলম্বন করলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। ইবনুল আসীর (রহঃ) এ কথাই বলেছেন।

মিরকাতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেন, الرِّشْوَةُ مَا يُعْطٰى لِإِبْطَالِ حَقٍّ أَوْ لِإِحْقَاقِ بَاطِلٍ অর্থাৎ- সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানানোর উদ্দেশে অর্থনৈতিক লেন-দেনকে ঘুষ বলা হয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩৩৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকদের (সহকর্মীদের) বেতন ও হাদিয়া গ্রহণ করা

৩৭৫৪-[১০] আর তিরমিযী ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।[1]

وَرَوَاهُ التِّرْمِذِيّ عَنهُ وَعَن أبي هُرَيْرَة

ورواه الترمذي عنه وعن ابي هريرة

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকদের (সহকর্মীদের) বেতন ও হাদিয়া গ্রহণ করা

৩৭৫৫-[১১] আর আহমাদ ও বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমানে সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে অতিরিক্ত আছে, গ্রহণকারী ও প্রদানকারীর মাঝে সংযোগ স্থাপনকারীকেও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন।[1]

وَرَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» عَنِ ثَوْبَانَ وَزَادَ: «وَالرَّائِشَ» يَعْنِي الَّذِي يَمْشِي بَيْنَهُمَا

ورواه احمد والبيهقي في «شعب الايمان» عن ثوبان وزاد: «والراىش» يعني الذي يمشي بينهما

হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ সাওবান (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিচারকদের (সহকর্মীদের) বেতন ও হাদিয়া গ্রহণ করা

৩৭৫৬-[১২] ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, (সফরের উদ্দেশে) তুমি তোমার যুদ্ধাস্ত্র ও প্রয়োজনীয় বস্ত্রাদি নিয়ে আমার নিকট চলে আসো। তিনি বলেনঃ অতএব আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলাম, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উযূ করছিলেন। আমাকে দেখে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে ’আমর! আমি তোমাকে এজন্য ডেকে এনেছি যে, তোমাকে (গভর্নর বা শাসকরূপে) এক অঞ্চলে পাঠাব। আল্লাহ তা’আলা তোমাকে নিরাপত্তায় রাখুন এবং গনীমাতের ধন-সম্পদও দান করুন। আর আমিও তোমাকে কিছু মাল দিবো। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম : হে আল্লাহর রসূল! ধন-সম্পদের লোভে আমার হিজরত ছিল না; বরং আমার হিজরত ছিল আল্লাহ ও তাঁর রসূল-এর সন্তুষ্টি কামনায়। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সৎলোকের জন্য পবিত্র মাল কতই না উত্তম। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]

আর আহমাদও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর অপর বর্ণনাতে আছে, সৎলোকের জন্য ভালো মালই উত্তম জিনিস।

وَعَن عَمْرِو بن العاصِ قَالَ: أَرْسَلَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنِ اجْمَعْ عَلَيْكَ سِلَاحَكَ وَثِيَابَكَ ثُمَّ ائْتِنِي» قَالَ: فَأَتَيْتُهُ وَهُوَ يَتَوَضَّأُ فَقَالَ: «يَا عَمْرُو إِنِّي أَرْسَلْتُ إِلَيْكَ لِأَبْعَثَكَ فِي وُجْةٍ يُسَلِّمُكَ اللَّهُ وَيُغَنِّمُكَ وَأَزْعَبَ لَكَ زَعْبَةً مِنَ الْمَالِ» . فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا كَانَتْ هِجْرَتِي لِلْمَالِ وَمَا كَانَتْ إِلَّا لِلَّهِ ولرسولِه قَالَ: «نِعِمَّا بِالْمَالِ الصَّالِحِ لِلرَّجُلِ الصَّالِحِ» . رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السُّنَّةِ» وَرَوَى أَحْمَدُ نَحْوَهُ وَفِي روايتِه: قَالَ: «نِعْمَ المالُ الصَّالحُ للرَّجُلِ الصالحِ»

وعن عمرو بن العاص قال: ارسل الى رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان اجمع عليك سلاحك وثيابك ثم اىتني» قال: فاتيته وهو يتوضا فقال: «يا عمرو اني ارسلت اليك لابعثك في وجة يسلمك الله ويغنمك وازعب لك زعبة من المال» . فقلت: يا رسول الله ما كانت هجرتي للمال وما كانت الا لله ولرسوله قال: «نعما بالمال الصالح للرجل الصالح» . رواه في «شرح السنة» وروى احمد نحوه وفي روايته: قال: «نعم المال الصالح للرجل الصالح»

ব্যাখ্যা: ‘আমর বিন ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারি-

(ক) নেতার প্রতি আনুগত্য।

(খ) অযূরত অবস্থায় দীনী কথাবার্তা বলা জায়িয।

(গ) নেতা তার অধিনস্থদেরকে কল্যাণের প্রতি আহবান করবে।

(ঘ) ধন-সম্পদের ক্ষেত্রে বিশেষ নাসীহাত প্রয়োজন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আমর ইবনুল আস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে