পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৭১১-]৫১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো! কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তা’আলার (’আরশের) ছায়ায় সর্বপ্রথম কোন্ শ্রেণীর মানুষ স্থান পাবে? সাহাবীগণ বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই ভালো জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যে সকল (আমীর ও শাসকের) মানুষেরা যখন তাদের (জনসাধারণের) নিকট হক কথা বলে, তখন তারা তা গ্রহণ করে। আর যখন তাদের নিকট কোনো ন্যায্য অধিকার চাওয়া হয়, তখন তারা তা আদায় করে। আর মানুষের ওপর এমনভাবে শাসন করে, যেরূপ নিজের জন্য করে। (আহমাদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

عَنْ عَائِشَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَتَدْرُونَ مَنِ السَّابِقُونَ إِلَى ظِلِّ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ: «الَّذِينَ إِذَا أُعْطُوا الْحَقَّ قَبِلُوهُ وَإِذَا سُئِلُوهُ بَذَلُوهُ وَحَكَمُوا لِلنَّاسِ كحكمِهم لأنفُسِهم»

عن عاىشة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «اتدرون من السابقون الى ظل الله عز وجل يوم القيامة؟» قالوا: الله ورسوله اعلم قال: «الذين اذا اعطوا الحق قبلوه واذا سىلوه بذلوه وحكموا للناس كحكمهم لانفسهم»

ব্যাখ্যা: হাদীস বর্ণিত (ظِلِّ اللّٰهِ) ‘‘আল্লাহর ছায়া’’ দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর ‘আরশের ছায়া। কেউ কেউ বিনা প্রশ্নে বা বিনা সাদৃশ্যে ‘আল্লাহর ছায়াকে’ (ব্যাখ্যাবিহীন) শাব্দিক অর্থেই গ্রহণ করেছেন। কিয়ামতের দিন ঐ ছায়ায় সর্বাগ্রে ঐ শাসক ও আমীরগণ স্থান পাবে যারা হক কথা বা বিষয় নিজের বিরুদ্ধে হলেও তা কবুল করে এবং মাথা পেতে নেয়। আর তার কাছে কোনো ন্যায্য অধিকার দাবী করলে সে তা গোপন করে না বা তা আটকিয়ে রাখে না, বরং হকদার চাওয়া মাত্রই তাকে তা দিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়াও সে করে না।

আর কোনো ক্ষুদ্র বিষয়েও বিচার-ফায়সালায় পক্ষপাতিত্ব করে না, বরং নিজের জন্য বা নিকটতম ব্যক্তির জন্য যা ফায়সালা করে অন্যের জন্যও তাই করে। ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নীচু কোনো ভেদাভেদ করে না, সবার জন্য সে ইনসাফপূর্ণ ফায়সালা প্রদান করে। সে আল্লাহর এই আদেশ বাণীর অনুসরণ করে, আল্লাহর বাণী : ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্য দান করো; তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী কোনো আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৩৫)

ইতিপূর্বে হাদীস অতিবাহিত হয়েছে, ‘‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’’ (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৭১২-[৫২] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আমার উম্মাতের ওপর তিনটি বিষয়ে শঙ্কিত থাকি- তা হলো, চাঁদ বা তারকার কক্ষপথে অতিক্রম করার হিসাব অনুযায়ী বৃষ্টি কামনা করা এবং আমীর বা শাসকের জুলুম-অত্যাচার ও তাকদীদের প্রতি অবিশ্বাস করা। (আহমাদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: ثلاثةٌ أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي: الِاسْتِسْقَاءُ بِالْأَنْوَاءِ وَحَيْفُ السُّلْطَانِ وَتَكْذيب الْقدر

وعن جابر بن سمرة قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ثلاثة اخاف على امتي: الاستسقاء بالانواء وحيف السلطان وتكذيب القدر

ব্যাখ্যা: এখানে তিনটি কর্ম বা তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে, অথবা তিন প্রকারের মানুষের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ তিনটি কর্মের বা বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আমার উম্মাত পথভ্রষ্ট হয়ে যায় কিনা আমি সেই আশংকা করি।

প্রথমতঃ যারা তারকা অথবা চন্দ্রের কক্ষপথের মাধ্যমে বৃষ্টি বা পানি কামনা করে থাকে। চন্দ্রের ঊনত্রিশটি কক্ষ পথ রয়েছে, প্রত্যহ এক একটি কক্ষ পথে সে পরিভ্রমণ করে থাকে।

অনুরূপ তারকার রয়েছে নির্দিষ্ট কক্ষপথ, এই কক্ষপথেই তারা পরিভ্রমণ করে থাকে। আরবের মুশরিকগণ চন্দ্র অথবা তারকার উদয় অথবা কক্ষপথের মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করতো। অথবা ধারণা করতো যে, অমুক নক্ষত্রের কারণেই আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি। এটা মুসলিম ‘আক্বীদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

সহীহুল বুখারীতে (হাঃ ৪১৪৭) যায়দ ইবনু খালিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার বছর আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলোম। একরাতে খুব বৃষ্টি হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। এরপর আমাদের দিকে ফিরে বসলেন, অতঃপর বললেনঃ তোমরা জানো কি, তোমাদের রব কি বলেছেন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসূলই অধিক জানেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ আমার কতিপয় বান্দা আমার প্রতি ঈমান এনেছে, আর কতিপয় আমার প্রতি কুফরী করেছে। যারা বলেছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি তারা আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী মু’মিন, আর নক্ষত্রের (প্রভাবের) প্রতি অস্বীকারকারী। আর যারা বলেছে যে, অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে তারা তারকার প্রতি ঈমান এনেছে এবং আমাকে অস্বীকারকারী কাফির হয়েছে।

আল্লাহ বৃষ্টিদানের একচ্ছত্র কর্তৃত্বের অধিকারী মেনে নিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত প্রকৃতির স্বভাব মোতাবেক অমাবস্যা অথবা পূর্ণিমার সময় জোয়ার ভাটা অথবা সম্ভাবনার বৃষ্টিপাতের কথা বলা দোষণীয় নয়।

দ্বিতীয়তঃ বাদশাহ বা শাসকের জুলুমও অত্যাচার। অর্থাৎ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতের শাসকদের জুলুমের আশংকা করেছেন। (এ আশংকা আজ কতই না সত্যে পরিণত হয়েছে) [সম্পাদক]

তৃতীয়তঃ তাকদীর বা ভাগ্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। ভাগ্যের ভালো-মন্দ, মিষ্টতা-তিক্ততা সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, এটা ইসলামী ‘আক্বীদার অন্যতম একটি বিষয়। কিন্তু উম্মাতের এক দল লোক এই তাকদীরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, ফলে তারা ঈমানহারা হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ওপর সেই আশংকা ব্যক্ত করেছেন।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে আশংকা করেছেন। কেননা যারা আসবাব বা উপকরণকেই মৌলিক কারণ ও যথার্থ বলে বিশ্বাস করে এবং উপকরণের স্রষ্টাকে বাদ দেয় তারা মূলতঃ শির্কের মধ্যে আরেক শির্কে পতিত হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৭১৩-[৫৩] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ হে আবূ যার! ছয় দিন পর্যন্ত অপেক্ষা কর এরপর তোমাকে যে কথা বলা হবে (সেজন্য)। অতঃপর যখন সপ্তম দিন আসলো তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাকে ওয়াসিয়্যাত করছি যে, তুমি সর্বদা প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় কর। যদি তোমার থেকে কোনো অসৎ কাজ প্রকাশ পেয়ে যায়, তবে সাথে সাথে কোনো সৎ কাজ করো। কক্ষনো কারো নিকট কোনো কিছু চাইবে (প্রত্যাশা করবে) না, যদিও তোমার ছড়ি বা চাবুক নিচে পড়ে যায়। কারো আমানত নিজের কাছে রেখ না এবং দু’জন মানুষের মধ্যেও বিচারক হয়ো না। (আহমাদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سِتَّةَ أَيَّامٍ اعْقِلْ يَا أَبَا ذَرٍّ مَا يُقَالُ لَكَ بَعْدُ» فَلَمَّا كَانَ الْيَوْمُ السَّابِعُ قَالَ: «أُوصِيكَ بِتَقْوَى اللَّهِ فِي سِرِّ أَمْرِكَ وَعَلَانِيَتِهِ وَإِذَا أَسَأْتَ فَأَحْسِنْ وَلَا تَسْأَلَنَّ أَحَدًا شَيْئًا وَإِنْ سَقَطَ سَوْطُكَ وَلَا تَقْبِضْ أَمَانَةً وَلَا تَقْضِ بَيْنَ اثْنَيْنِ»

وعن ابي ذر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ستة ايام اعقل يا ابا ذر ما يقال لك بعد» فلما كان اليوم السابع قال: «اوصيك بتقوى الله في سر امرك وعلانيته واذا اسات فاحسن ولا تسالن احدا شيىا وان سقط سوطك ولا تقبض امانة ولا تقض بين اثنين»

ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ যার-কে বিশেষভাবে কথাগুলো বলেছিলেন। তিনি তাকে এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা, ওটা স্মরণ রাখা এবং তার উপর যথাযথ ‘আমল করার প্রতিও উৎসাহিত করেন।

ওয়া‘দা মোতাবেক যখন সপ্তম দিবস এলো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে গোপনে, প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির ওয়াসিয়্যাত করেন। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, তাকওয়া শব্দটি كَلِمَةً جَامِعَةً পরিপূর্ণ বাণী, যা ব্যাপক অর্থ বহন করে। ওটা মানুষের এমন মানবিক বৈশিষ্ট্য বা গুণ যে তা অর্জন করতে পেরেছে তার জন্য ওটাই যথেষ্ট হয়েছে। কুরআন ও হাদীসে এই তাকওয়ার বহু নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘আমি তোমাদের পূর্ববর্তী গ্রন্থের অধিকারীদেরকে এবং তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৩১)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে: أُوصِيكَ بِتَقْوَى اللّٰهِ فَإِنَّه رَأَسُ كُلِّ شَيْءٍ» «فَإِنَّه رَأْسُ الْأَمْرِ كُلِّه

‘‘আমি তোমাকে তাকওয়াল্লাহ বা আল্লাহ ভীতির ওয়াসিয়্যাত করছি, কেননা এই তাকওয়া হলো সকল কিছুর মূল।’’

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘নিশ্চয় তা সকল কর্মের মূল।’’

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর বাণী অনুরূপ এটিও ‘‘আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনি ভয় করো।’’ (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১০২)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: ‘‘আর যখনই তুমি কোনো মন্দ কাজ করবে সঙ্গে সঙ্গে নেক কাজ করো।’’ এটা ইশারা এই দিকে যে, মানুষ স্বভাবগতভাবে শাহ্ওয়াত বা প্রবৃত্তিপরায়ণ। তার মধ্যে যেমন রয়েছে পশুত্ববৃত্তি ঠিক তেমনি রয়েছে মালাক (ফেরেশতা) স্বভাবও। নিন্দনীয় কুস্বভাব ও পশুত্ববৃত্তি যখন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে তখনই মালাক স্বভাব ঐ কুস্বভাবকে নিভিয়ে দেয় ও নিবৃত করে ফেলে, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি মন্দ কাজের পর নেক কাজ করো, যা ঐ মন্দকে মুছে দিবে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: «وَلَا تَسْأَلَنَّ أَحَدًا» «شَيْئًا» ‘‘তুমি কখনো কারো কাছে কিছু সওয়াল করো না।’’ কারো কাছে কোনো কিছু সওয়াল করা বা চাওয়া খুবই হীন এবং নীচ কাজ।’’ সুতরাং মাখলূকের কাছে কোনো কিছু সওয়াল না করে মহাপরাক্রমশালী, দয়াময় আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং সকল প্রয়োজন তাঁর কাছে সোপর্দ করা হলো আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলের সর্বোচ্চ স্তর। ছোট প্রয়োজন হলেও দয়াময় আল্লাহর কাছেই চাওয়া উচিত এমনকি ঘোড়ার উপর থেকে চাবুকটি পড়ে গেলে তা উঠিয়ে দেয়ার জন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত নয়। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) সর্বদাই আল্লাহর কাছে এই বলে প্রার্থনা করতেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার চেহারাকে তুমি ছাড়া অন্যকে সিজদা প্রদান থেকে রক্ষা করেছো, ঐ চেহারাকে তুমি ছাড়া অন্যের নিকট কিছু চাওয়া থেকে রক্ষা করো।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী: «وَلَا تَقْبِضْ أَمَانَةً» ‘তুমি কারো আমানত গ্রহণ করো না, এর অর্থ হলো : প্রয়োজন ছাড়া কোনো মানুষের আমানত হিফাযাতের দায়িত্ব গ্রহণ করো না। কারণ এতে খিয়ানাতের এবং অপকর্মের আশংকা রয়েছে। কারো আমানত যথাযথভাবে বহন করা, তা সংরক্ষণ করা, অতঃপর সময় মতো তা মালিকের নিকট পৌঁছে দেয়া কঠিন কাজ।

অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’জনের মাঝে বিচার-ফায়সালার দায়িত্বভার গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। এটা আবূ যার -এর ব্যাপারে খাস হলেও বিধান সার্বজনীন। দুর্বল ও কোমল মনের ব্যক্তিদের এ দায়িত্ব গ্রহণ করা উচিত নয়। আবূ যার (রাঃ)-এর ঘটনা প্রথম অনুচ্ছেদে অতিবাহিত হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, আবূ দাঊদ হাঃ ১৬৪৫, নাসায়ী হাঃ ২৫৮৭)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৭১৪-[৫৪] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দশ বা ততোধিক লোকের অভিভাবক বা জিম্মাদার হয়েছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তার গলায় শিকল পরা অবস্থায় উপস্থিত করবেন। তার হাত গর্দানের সাথে বাঁধা অবস্থায় থাকবে, তার নেক ’আমল তাকে রক্ষা করবে অথবা তার কৃত অপরাধ তাকে ধ্বংস করবে। নেতৃত্বের প্রথম অবস্থা তিরস্কার ও নিন্দা, মধ্যম অবস্থায় লজ্জা, আর অবশেষে কিয়ামতের দিন অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে। (আহমাদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «مَا مِنْ رَجُلٍ يَلِي أَمْرَ عَشَرَةٍ فَمَا فَوْقَ ذَلِكَ إِلَّا أتاهُ اللَّهُ عزَّ وجلَّ مغلولاً يومَ القيامةِ يَدُهُ إِلَى عُنُقِهِ فَكَّهُ بِرُّهُ أَوْ أَوْبَقَهُ إِثْمُهُ أَوَّلُهَا مَلَامَةٌ وَأَوْسَطُهَا نَدَامَةٌ وَآخِرُهَا خِزْيٌ يومَ القيامةِ»

وعن ابي امامة عن النبي صلى الله عليه وسلم انه قال: «ما من رجل يلي امر عشرة فما فوق ذلك الا اتاه الله عز وجل مغلولا يوم القيامة يده الى عنقه فكه بره او اوبقه اثمه اولها ملامة واوسطها ندامة واخرها خزي يوم القيامة»

ব্যাখ্যা: সে কিয়ামতের দিন গর্দানের সাথে হাত বাঁধা অবস্থায় উপস্থিত হবে। অর্থাৎ (তার উপর) আল্লাহ অথবা মালায়িকার (ফেরেশতার) নির্দেশক্রমে সে গলবন্ধাবস্থায় আল্লাহর সমীপে উপনীত হবে। তার এই অবস্থা থেকে কেবলমাত্র তার ন্যায় ও ইনসাফ নামক সৎকর্ম তাকে উদ্ধার করতে পারবে। যদি সে ঐ ইনসাফ ও সৎকর্মে ব্যর্থ হয় তাহলে তার পাপ বা গুনাহ তাকে ধ্বংস করে দিবে।

নেতৃত্বের শুরু হয় গাল-মন্দ দিয়ে, মাঝখানে গিয়ে হতে হয় লজ্জিত ও অপমানিত আর শেষে অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা। দুনিয়া হলো আখিরাতের ক্ষেত্রস্বরূপ। সুতরাং দুনিয়ার কর্ম ফলই সে আখিরাতে ভোগ করবে। যেহেতু প্রশাসন ছিল তার কর্ম, আর সেখানে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা খুবই কঠিন কাজ, তাই এক্ষেত্রে তাকে জওয়াবদিহিতার মুখোমুখি হতেই হবে। আর যে জওয়াবদিহিতার মুখোমুখি হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৭১৫-[৫৫] মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে মু’আবিয়াহ্! তুমি যদি কোনো কাজের জন্য শাসক বা জিম্মাদার নিয়োগপ্রাপ্ত হও, তাহলে আল্লাহকে ভয় করবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। তিনি [মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)] বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথার পর থেকে আমি সর্বদা এ ধারণা করছিলাম যে, আমি একদিন এ দায়িত্বে নিযুক্ত হব। শেষ অবধি আমি এ পরীক্ষায় উপনীত হলাম। (আহমাদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ مُعَاوِيَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مُعَاوِيَةُ إِنْ وُلِّيتَ أَمْرًا فَاتَّقِ اللَّهَ وَاعْدِلْ» . قَالَ: فَمَا زِلْتُ أَظُنُّ أَنِّي مُبْتَلًى بِعَمَلٍ لِقَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم حَتَّى ابْتليت

وعن معاوية قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يا معاوية ان وليت امرا فاتق الله واعدل» . قال: فما زلت اظن اني مبتلى بعمل لقول النبي صلى الله عليه وسلم حتى ابتليت

ব্যাখ্যা: মু‘আবিয়াহ্ ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ)-এর আপন ভাই। মু‘আবিয়াহ্ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপদেশটি ছিল তার নেতৃত্ব পাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী ও ইঙ্গিত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, তুমি যদি কখনো হুকুমাত এবং ওয়ালায়াতের অধিকারী হও তাহলে বিচার ও শাসনকার্যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং লোকেদের মাঝে ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচারকার্য পরিচালনা করবে। মু‘আবিয়াহ্ অতীব বুদ্ধিমান সাহাবী, তিনি ধারণা করেন যে, একদিন না একদিন তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন। তার ظُنُّ বা ধারণা يَقِين (ইয়াক্বীন) নিশ্চয়তার অর্থ প্রদান করেছে। অর্থাৎ তার দৃঢ় বিশ্বাস হলো যে, তিনি একদিন ক্ষমতাশীল হবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৭১৬-[৫৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সত্তর সালের সূচনালগ্ন থেকে এবং শিশুদের নেতৃত্ব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। উপরি উল্লেখিত হাদীস ছয়টি ইমাম আহমাদ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন। আর মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসটি বায়হাক্বী ’দালায়িলিন্ নুবূওয়াহ্’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ رَأْسِ السَّبْعِينَ وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ» . رَوَى الْأَحَادِيثَ السِّتَّةَ أَحْمَدُ وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ حَدِيثَ مُعَاوِيَةَ فِي «دَلَائِلِ النُّبُوَّة»

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «تعوذوا بالله من راس السبعين وامارة الصبيان» . روى الاحاديث الستة احمد وروى البيهقي حديث معاوية في «دلاىل النبوة»

ব্যাখ্যা: সত্তরের গোড়ার যুগ হিজরী সন হিসাবে, না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর সময় থেকে তার উল্লেখ নেই। আবার শিশুদের নেতৃত্ব দ্বারা কার রাজত্ব বুঝানো হয়েছে তাও উল্লেখ নেই।

বাস্তবতায় দেখা যায়, হিজরী ৬০ থেকে ৭০ পর্যন্ত ইসলামের কয়েকটি কলঙ্কময় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এ সময়েই মসজিদে হারামের উপর আক্রমণ, কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা ইত্যাদি সংঘটিত হয়েছিল এবং মুহাক্কিকগণ বালকদের রাজত্ব দ্বারা ইয়াযীদ ইবনু মু‘আবিয়াহ্ এবং হাকাম ইবনু মারওয়ান-এর বংশধরের রাজত্ব চিহ্নিত করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৭১৭-[৫৭] ইয়াহ্ইয়া ইবনু হাশিম (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি ইউনুস ইবনু আবূ ইসহক হতে, তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যেরূপ হবে, তোমাদের ওপর সেরূপ শাসক নিযুক্ত করা হবে।[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ يَحْيَى بْنِ هَاشِمٍ عَنْ يُونُسَ بْنِ أَبِي إِسْحَاقَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَمَا تَكُونُونَ كَذَلِك يُؤمر عَلَيْكُم»

وعن يحيى بن هاشم عن يونس بن ابي اسحاق عن ابيه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «كما تكونون كذلك يومر عليكم»

ব্যাখ্যা: শাসক বা রাজ্য পরিচালক জনগণের খাদিম। জনগণ যদি শিক্ষিত সুশৃঙ্খল ও শান্তিকামী হয় তাহলে তাদের শাসকও হবে তাই, ফলে রাজ্য ভূ-স্বর্গে পরিণত হবে। পক্ষান্তরে প্রজা সাধারণ যদি উচ্ছৃঙ্খল, শঠ, প্রতারক এবং মূর্খ হয় তাহলে তাদের শাসকও তাই নির্বাচিত হবে। ফলে রাজ্য হবে অশান্তির কেন্দ্রবিন্দু। তাই জনগণকে আগে ভালো হতে হবে। নিজেরা ভালো না হয়ে শাসকদের ভালো হওয়ার আশা রাখা আদৌ সঙ্গত নয়।

অত্র হাদীসটির ব্যাখ্যা আবুদ্ দারদা কর্তৃক বর্ণিত ৩৭২১ নং হাদীসটিতে আরো স্পষ্ট করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে এ অর্থে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৭১৮-[৫৮] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় শাসক হলেন দুনিয়াতে আল্লাহ তা’আলার ছায়ার ন্যায়। নির্যাতিত ও অত্যাচারিত বান্দাগণ শাসকের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকে। সুতরাং তিনি যদি ন্যায়পরায়ণতার পথ অবলম্বন করেন, তবে তার জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। আর প্রজাদের কর্তব্য হলো তার শুকরিয়া আদায় করা। আর তিনি যখন জুলুম ও অত্যাচার করেন তখন গুনাহের বোঝা তার ওপর বর্তাবে, এমতাবস্থায় প্রজাসাধারণের ধৈর্যধারণ করা উচিত।[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ السُّلْطَانَ ظِلُّ اللَّهِ فِي الْأَرْضِ يَأْوِي إِلَيْهِ كُلُّ مَظْلُومٍ مِنْ عِبَادِهِ فَإِذَا عَدَلَ كَانَ لَهُ الْأَجْرُ وَعَلَى الرَّعِيَّةِ الشُّكْرُ وَإِذَا جَارَ كَانَ عَلَيْهِ الْإِصْرُ وعَلى الرّعية الصَّبْر»

وعن ابن عمر رضي الله عنه ان النبي صلى الله عليه وسلم قال: «ان السلطان ظل الله في الارض ياوي اليه كل مظلوم من عباده فاذا عدل كان له الاجر وعلى الرعية الشكر واذا جار كان عليه الاصر وعلى الرعية الصبر»

ব্যাখ্যা: এখানে (السُّلْطَانَ ظِلُّ اللّٰهِ) বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, (السُّلْطَانَ ظِلُّ الرَّحْمٰن) অর্থাৎ ‘সুলত্বন’ হলো জমিনে দয়াময়ের (আল্লাহর) ছায়া। কেননা সে জনসাধারণের কষ্ট দূর করে, যেমন ছায়া মানুষকে রৌদ্রের কষ্ট থেকে রক্ষা করে থাকে। ‘আরব পরিভাষায় ظِلُّ দ্বারা আশ্রয় এবং প্রতিরক্ষার পরোক্ষ অর্থ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তাহলে অর্থ হয় যে, বাদশাহ হলেন দুনিয়ায় জনগণের আশ্রয়স্থল এবং বিপদ ও কষ্টের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা স্বরূপ।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ বাক্যটি তাশবীহ বা সাদৃশ্য বর্ণনার জন্য এসেছে। (يَأْوِى إِلَيْهِ كُلُّ مَظْلُومٍ مِنْ عِبَادِه) প্রত্যেক মাযলূম নির্যাতিত ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। এ বাক্যটিতে সাদৃশ্যতা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ যেমন সূর্যোত্তাপ থেকে রক্ষার জন্য ছায়ার ঠাণ্ডায় আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে ঠিক তেমনি উৎপীড়িত মাযলূম মানুষ জুলুমের উত্তাপ থেকে রক্ষার জন্য বাদশাহর ন্যায় বিচারের স্নিগ্ধ ছায়াতলে আশ্রয় পেয়ে থাকে।

ছায়াকে আল্লাহর দিকে ইযাফত বা সম্পর্কিত করা অর্থাৎ ‘আল্লাহর ছায়া’ এ কথাটি তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা। যেমন বলা হয়, বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর, রূহুল্লাহ, নাকাতুল্লাহ ইত্যাদি। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে বলি তার (আল্লাহর) ‘ছায়া’ বলতে সৃষ্টির কোনো কিছুর দৃশ্যমান ছায়া সদৃশ নয়; বরং তাঁর মহান মর্যাদা অনুসারে তিনি বিশেষ গুণে একক ও অদ্বিতীয় এবং তাঁর স্বকীয় মর্যাদা অনুসারেই সেটি তার ক্ষেত্রে যেভাবে হওয়া প্রযোজ্য সেভাবেই। বাদশাহ যেমন দুনিয়াতে দুঃখ ও বেদনাক্লিষ্ট ব্যক্তির আশ্রয়স্থল, ঠিক তেমনি ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ কিয়ামতের দিন আল্লাহর ‘আরশের ছায়াতলে আশ্রয় লাভ করবেন যেদিন ঐ ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না।

বাদশাহর ইনসাফ ও ন্যায় বিচারের সুফল সে দুনিয়াতেও পাবে আখিরাতেও পাবে। আর যদি সে ন্যায় বিচার না করে এবং প্রজা সাধারণের ওপর জুলুম করে তাহলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও অস্ত্রধারণ না করে সবর ইখতিয়ার করা উচিত। জুলুমের কারণে সেই গুনাহগার হবে এবং আল্লাহর দরবারে জওয়াবদিহিতার মুখোমুখি হবে।

হাদীসের এ বাণীতে ইশারা রয়েছে যে, ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ আল্লাহর বিশেষ দান ও অনুগ্রহ। আর যালিম বাদশাহ হলো আল্লাহর প্রতিশোধ, ঘৃণা ও পরীক্ষা।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী : ‘‘নিশ্চয় এতে তোমাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে মহাপরীক্ষা।’’ (সূরা আল বাকারা ২ : ৪৯)

‘‘নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ বান্দার জন্য রয়েছে নিদর্শন।’’ (সূরা লুকমান ৩১ : ৩১)

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ঈমান দু’ভাগে বিভক্ত অর্ধেক হলো ধৈর্য আর অর্ধেক কৃতজ্ঞতা। আল্লাহ আমাদের দু’টি বস্তুই গ্রহণের তাওফীক দান করুন।

(السُّلْطَانَ ظِلُّ اللّٰهِ) ‘বাদশাহ আল্লাহর ছায়া’ এ বাক্য দ্বারা যেমন বাদশাহর মহান মর্যাদা বুঝানো হয়ে থাকে ঠিক তাকে সম্মান করার ইঙ্গিতও এতে রয়েছে।

অত্র হাদীসে স্পষ্টই এসেছে, «مَنْ أَكْرَمَ سُلْطَانَ اللّٰهِ فِي الدُّنْيَا أَكْرَمَهُ اللّٰهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» যে দুনিয়াতে বাদশাহকে সম্মান করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৭১৯-[৫৯] ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সহনশীল ও ন্যায়পরায়ণ শাসক হবেন আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম মর্যাদার অধিকারী। আর কিয়ামতের দিন যালিম ও অত্যাচারী শাসক হবে আল্লাহর নিকট সকল মানুষের মধ্যে নিকৃষ্টতম।[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَفْضَلَ عِبَادِ اللَّهِ عِنْدَ اللَّهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِمَامٌ عَادِلٌ رَفِيقٌ وَإِنَّ شَرَّ النَّاسِ عِنْدَ اللَّهِ مَنْزِلَةً يَوْمِ الْقِيَامَةِ إِمامٌ جَائِر خرق»

وعن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان افضل عباد الله عند الله منزلة يوم القيامة امام عادل رفيق وان شر الناس عند الله منزلة يوم القيامة امام جاىر خرق»

ব্যাখ্যা: (رَفِيقٌ) এর অর্থ অন্তরঙ্গ বন্ধু, নরম আচরণকারী, সহনশীল। অর্থাৎ ধনী-দরিদ্র, ইতর ভদ্র সকলের সাথে কোমল আচরণকারী, সহনশীল, ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিগণিত হবেন।

অনুরূপ কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হবে যালিম, নিষ্ঠুর শাসক। خَرِقٌ শব্দটি رَفِيقٌ এর বিপরীত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১১নং হাদীসে এ হাদীসের অনুরূপ হাদীস ও ব্যাখ্যা অতিবাহিত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৭২০-[৬০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি যদি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রতি এমন দৃষ্টিতে তাকায়, যাতে সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়, তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে ভীত-সন্ত্রস্ত করবেন। উপরি উল্লেখিত হাদীস চারটি বায়হাক্বী-এর ’শু’আবুল ঈমান’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। আর তিনি ইয়াহ্ইয়া-এর হাদীসের ব্যাপারে বলেছেনঃ এটা মুনক্বতি’ এবং য’ঈফ।[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من نَظَرَ إِلَى أَخِيهِ نَظْرَةً يُخِيفُهُ أَخَافَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَى الْأَحَادِيثَ الْأَرْبَعَةَ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» وَقَالَ فِي حَدِيثِ يَحْيَى هَذَا: مُنْقَطع وَرِوَايَته ضَعِيف

وعن عبد الله بن عمرو قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من نظر الى اخيه نظرة يخيفه اخافه الله يوم القيامة» . روى الاحاديث الاربعة البيهقي في «شعب الايمان» وقال في حديث يحيى هذا: منقطع وروايته ضعيف

ব্যাখ্যা: أَخِيهِ ‘তার ভাই’ এর দ্বারা নিজ ভাই, মুসলিম ভাই ইত্যাদি। যে কোনো মুসলিমই হতে পারে। তাকানো যদি রুক্ষ-ভীতিকর তাকানো হয় যার কারণে সে ভয় পায় বা আতংক হয়ে যায় তবে তার পরিণাম এই যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ভীতিগ্রস্ত করে ফেলবেন।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ইসলামের ভ্রাতৃত্বের কারণে একে অপরের নিকট নিরাপত্তার দাবী রাখে।
হাদীসে এসেছে, «الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِه وَيَدِه» প্রকৃত মুসলিম তো সেই যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদে থাকে।
এ অনুচ্ছেদে এ হাদীস ইশারা করে ঐদিকে ‘একজন মুসলিম অন্য কোনো মুসলিমের প্রতি ভীতিকর তাকানোর কারণেই কিয়ামতের দিন এই শাস্তির ভাগী হতে হচ্ছে। তাহলে যারা এর চেয়ে অধিক ভীতিকর কাজ এবং জুলুম করে- এ শ্রেণীর কর্মের জন্য কি শাস্তি ভোগ করতে পারে? পক্ষান্তরে বায়হাক্বী প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, কেউ যদি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রতি দয়ার দৃষ্টিতে তাকান তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

যদিও হাদীসটি দুর্বল বরং কেউ কেউ জাল বলেও মন্তব্য করেছেন, ফলে বিস্তারিত ব্যাখ্যা পরিহার করা হলো। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৭২১-[৬১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং ঘোষণা করেনঃ আমি হলাম সর্বশক্তিমান, আমি ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই। আমি রাজা-বাদশাহদের মালিক ও রাজাধিরাজ। সকল বাদশাহদের অন্তর আমার হাতের মুঠোতে। নিশ্চয় বান্দারা যখন আমার আনুগত্য করে, তখন আমি রাজা-বাদশাহদের অন্তরকে দয়া ও কোমলতার সাথে তাদের দিকে ফিরিয়ে দেই। আর বান্দারা যখন আমার অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়, তখন আমি তাদের অন্তরকে প্রজাদের জন্য কঠোর নিষ্ঠুর করে দেই। ফলে তারা প্রজাদেরকে কঠিন অত্যাচার করতে থাকে। সুতরাং তোমরা তখন তোমাদের শাসকদের জন্য বদ্দু’আ করো না; বরং নিজেদেরকে আল্লাহর জিকির ও ভারাক্রান্ত অন্তরে আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন থাকো, যাতে আমি তোমাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাই। (আবূ নু’আয়ম ’’হিল্ইয়াহ্’’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ: أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا مَالِكُ الْمُلُوكِ وَمَلِكُ الْمُلُوكِ قُلُوبُ الْمُلُوكِ فِي يَدِي وَإِنَّ الْعِبَادَ إِذَا أَطَاعُونِي حَوَّلْتُ قُلُوبَ مُلُوكِهِمْ عَلَيْهِمْ بِالرَّحْمَةِ وَالرَّأْفَةِ وَإِنَّ الْعِبَادَ إِذَا عَصَوْنِي حَوَّلْتُ قُلُوبَهُمْ بِالسُّخْطَةِ وَالنِّقْمَةِ فَسَامُوهُمْ سُوءَ الْعَذَابِ فَلَا تَشْغَلُوا أَنْفُسَكُمْ بِالدُّعَاءِ عَلَى الْمُلُوكِ وَلَكِنِ اشْغَلُوا أَنْفُسَكُمْ بِالذِّكْرِ وَالتَّضَرُّعِ كَيْ أَكْفِيَكُمْ ملوكَكم «. رَوَاهُ أَبُو نُعَيْمٍ فِي» الْحِلْيَةِ

وعن ابي الدرداء قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان الله تعالى يقول: انا الله لا اله الا انا مالك الملوك وملك الملوك قلوب الملوك في يدي وان العباد اذا اطاعوني حولت قلوب ملوكهم عليهم بالرحمة والرافة وان العباد اذا عصوني حولت قلوبهم بالسخطة والنقمة فساموهم سوء العذاب فلا تشغلوا انفسكم بالدعاء على الملوك ولكن اشغلوا انفسكم بالذكر والتضرع كي اكفيكم ملوككم «. رواه ابو نعيم في» الحلية

ব্যাখ্যা: ‘আল্লাহ বলেছেন’ (এটি হাদীসে কুদ্সী) হাদীসে উল্লেখিত (أَنَا اللّٰهُ) বাক্যে أَنَا শব্দটি ওয়াহ্দানিয়াত বা একত্বের জন্য প্রসিদ্ধ এবং প্রচলিত, অথবা শব্দটি একক مَعْبُودُ অর্থে ব্যবহৃত হয়। لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنَا বাক্যটি পূর্ববর্তী বাক্যের حَالٌ مُؤَكِّدَة বা তাকীদযুক্ত হাল হয়েছে।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) আল্লাহর কথা (أَنَا مَالِكُ الْمُلُوكِ وَمَلِكُ الْمُلُوكِ)-এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, مَلِكُ الْمُلُوكِ বাক্যটি مَالِكُ الْمُلُوكِ বাক্যের পরে আসা অগ্রসরতা ও উন্নতির ধাপ প্রকাশার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। الْمَلِكَ শব্দের অর্থ বাদশাহ বা রাজা; الْمَالِكِ শব্দের অর্থ মালিক, শাসক ইত্যাদি। কিন্তু الْمَلِكَ শব্দটি সিফাতের মুশাববাহ হিসেবে الْمَالِكِ শব্দের উপরে অধিক মহান ও বড়ত্ব প্রকাশক। আর ক্ষমতা প্রয়োগে অধিকতর শক্তিশালী। আর مَلِكُ হলো আদেশ নিষেধ প্রদানকারী এবং مَالِكُ হলো তা প্রয়োগকারী।مَالِكُ হলো রাজা, مَلِكُ হলেন রাজার রাজা-রাজাধিরাজ, কেউ কেউ এর বিপরীতও বলেছেন।

আল্লাহর কথা : ‘‘সমস্ত বাদশাহর অন্তর আমার মুঠোর মধ্যে’’ এ বাক্য প্রমাণ করে তার একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রয়োগের। তিনি তার অনুগত বান্দাদের জন্য তাদের শাসকের অন্তরকে পরিবর্তন করে দেন ফলে সে তার প্রজাদের প্রতি হয় দয়ার্দ্র ও সহনশীল।

পক্ষান্তরে জনগণ যদি আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হয়, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের শাসক শ্রেণীর অন্তরকে জনগণের প্রতি কঠোর ও নিষ্ঠুর বানিয়ে দেন, ফলে তারা প্রজাসাধারণের ওপর কঠিন শাস্তি ও নির্যাতনের স্টীম রোলার চালিয়ে দেয়।

এ সময় মানুষ সাধারণতঃ শাসকদের বিরুদ্ধে বদ্দু‘আ বা অভিশাপ করতে থাকে। এ অবস্থায় শাসকদের অভিশাপ না দিয়ে নিজেদের নৈতিক চরিত্র সংশোধন করে আল্লাহর স্মরণে ফিরে আসার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর নিজেদের নৈতিক স্খলনের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতে বলা হয়েছে। ফলে আল্লাহই তাদের সরকারের জুলুম থেকে তাদের নিষ্কৃতি প্রদানে এগিয়ে আসবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবুদ দারদা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء) 18. The Offices of Commander and Qadi
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে