পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭১৩-[৫৩] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ হে আবূ যার! ছয় দিন পর্যন্ত অপেক্ষা কর এরপর তোমাকে যে কথা বলা হবে (সেজন্য)। অতঃপর যখন সপ্তম দিন আসলো তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাকে ওয়াসিয়্যাত করছি যে, তুমি সর্বদা প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় কর। যদি তোমার থেকে কোনো অসৎ কাজ প্রকাশ পেয়ে যায়, তবে সাথে সাথে কোনো সৎ কাজ করো। কক্ষনো কারো নিকট কোনো কিছু চাইবে (প্রত্যাশা করবে) না, যদিও তোমার ছড়ি বা চাবুক নিচে পড়ে যায়। কারো আমানত নিজের কাছে রেখ না এবং দু’জন মানুষের মধ্যেও বিচারক হয়ো না। (আহমাদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سِتَّةَ أَيَّامٍ اعْقِلْ يَا أَبَا ذَرٍّ مَا يُقَالُ لَكَ بَعْدُ» فَلَمَّا كَانَ الْيَوْمُ السَّابِعُ قَالَ: «أُوصِيكَ بِتَقْوَى اللَّهِ فِي سِرِّ أَمْرِكَ وَعَلَانِيَتِهِ وَإِذَا أَسَأْتَ فَأَحْسِنْ وَلَا تَسْأَلَنَّ أَحَدًا شَيْئًا وَإِنْ سَقَطَ سَوْطُكَ وَلَا تَقْبِضْ أَمَانَةً وَلَا تَقْضِ بَيْنَ اثْنَيْنِ»
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ যার-কে বিশেষভাবে কথাগুলো বলেছিলেন। তিনি তাকে এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা, ওটা স্মরণ রাখা এবং তার উপর যথাযথ ‘আমল করার প্রতিও উৎসাহিত করেন।
ওয়া‘দা মোতাবেক যখন সপ্তম দিবস এলো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে গোপনে, প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির ওয়াসিয়্যাত করেন। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, তাকওয়া শব্দটি كَلِمَةً جَامِعَةً পরিপূর্ণ বাণী, যা ব্যাপক অর্থ বহন করে। ওটা মানুষের এমন মানবিক বৈশিষ্ট্য বা গুণ যে তা অর্জন করতে পেরেছে তার জন্য ওটাই যথেষ্ট হয়েছে। কুরআন ও হাদীসে এই তাকওয়ার বহু নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘আমি তোমাদের পূর্ববর্তী গ্রন্থের অধিকারীদেরকে এবং তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৩১)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে: أُوصِيكَ بِتَقْوَى اللّٰهِ فَإِنَّه رَأَسُ كُلِّ شَيْءٍ» «فَإِنَّه رَأْسُ الْأَمْرِ كُلِّه
‘‘আমি তোমাকে তাকওয়াল্লাহ বা আল্লাহ ভীতির ওয়াসিয়্যাত করছি, কেননা এই তাকওয়া হলো সকল কিছুর মূল।’’
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘নিশ্চয় তা সকল কর্মের মূল।’’
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর বাণী অনুরূপ এটিও ‘‘আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনি ভয় করো।’’ (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১০২)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: ‘‘আর যখনই তুমি কোনো মন্দ কাজ করবে সঙ্গে সঙ্গে নেক কাজ করো।’’ এটা ইশারা এই দিকে যে, মানুষ স্বভাবগতভাবে শাহ্ওয়াত বা প্রবৃত্তিপরায়ণ। তার মধ্যে যেমন রয়েছে পশুত্ববৃত্তি ঠিক তেমনি রয়েছে মালাক (ফেরেশতা) স্বভাবও। নিন্দনীয় কুস্বভাব ও পশুত্ববৃত্তি যখন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে তখনই মালাক স্বভাব ঐ কুস্বভাবকে নিভিয়ে দেয় ও নিবৃত করে ফেলে, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি মন্দ কাজের পর নেক কাজ করো, যা ঐ মন্দকে মুছে দিবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: «وَلَا تَسْأَلَنَّ أَحَدًا» «شَيْئًا» ‘‘তুমি কখনো কারো কাছে কিছু সওয়াল করো না।’’ কারো কাছে কোনো কিছু সওয়াল করা বা চাওয়া খুবই হীন এবং নীচ কাজ।’’ সুতরাং মাখলূকের কাছে কোনো কিছু সওয়াল না করে মহাপরাক্রমশালী, দয়াময় আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং সকল প্রয়োজন তাঁর কাছে সোপর্দ করা হলো আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলের সর্বোচ্চ স্তর। ছোট প্রয়োজন হলেও দয়াময় আল্লাহর কাছেই চাওয়া উচিত এমনকি ঘোড়ার উপর থেকে চাবুকটি পড়ে গেলে তা উঠিয়ে দেয়ার জন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত নয়। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) সর্বদাই আল্লাহর কাছে এই বলে প্রার্থনা করতেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার চেহারাকে তুমি ছাড়া অন্যকে সিজদা প্রদান থেকে রক্ষা করেছো, ঐ চেহারাকে তুমি ছাড়া অন্যের নিকট কিছু চাওয়া থেকে রক্ষা করো।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী: «وَلَا تَقْبِضْ أَمَانَةً» ‘তুমি কারো আমানত গ্রহণ করো না, এর অর্থ হলো : প্রয়োজন ছাড়া কোনো মানুষের আমানত হিফাযাতের দায়িত্ব গ্রহণ করো না। কারণ এতে খিয়ানাতের এবং অপকর্মের আশংকা রয়েছে। কারো আমানত যথাযথভাবে বহন করা, তা সংরক্ষণ করা, অতঃপর সময় মতো তা মালিকের নিকট পৌঁছে দেয়া কঠিন কাজ।
অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’জনের মাঝে বিচার-ফায়সালার দায়িত্বভার গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। এটা আবূ যার -এর ব্যাপারে খাস হলেও বিধান সার্বজনীন। দুর্বল ও কোমল মনের ব্যক্তিদের এ দায়িত্ব গ্রহণ করা উচিত নয়। আবূ যার (রাঃ)-এর ঘটনা প্রথম অনুচ্ছেদে অতিবাহিত হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, আবূ দাঊদ হাঃ ১৬৪৫, নাসায়ী হাঃ ২৫৮৭)