পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - দিয়াত (রক্তপণ)

৩৪৮৬-[১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এটা আর এটা সমতুল্য, অর্থাৎ কনিষ্ঠা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি। (বুখারী)[1]

بَابُ الدِّيَاتِ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «هَذِهِ وَهَذِهِ سَوَاءٌ» يَعْنِي الخِنصرُ والإبهامَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن ابن عباس عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «هذه وهذه سواء» يعني الخنصر والابهام. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: দিয়াত আদায়ের ক্ষেত্রে সকল আঙ্গুলই সমান, যেই আঙ্গুলই হোক না কেন বড় ছোট কোনো প্রকার তারতম্য করা যাবে না। শারহুস্ সুন্নাহ্ কিতাবে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক আঙ্গুলের বিনিময়ে দশটি উট দিয়াত হিসেবে আদায় করা ওয়াজিব। হাত ও পায়ের আঙ্গুলের মধ্যে কোনো প্রকার পার্থক্য নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৮৯৫; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৫৪৮; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩৯২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - দিয়াত (রক্তপণ)

৩৪৮৭-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী লিহ্ইয়ান গোত্রের জনৈকা মহিলার গর্ভস্থ ভ্রূণ (পেটের বাচ্চা) হত্যার ফায়সালা দিয়েছেন (তথা যে ভ্রূণটি নিহত হয়ে তার পেট থেকে পড়ে গিয়েছিল), একটি গোলাম বা বাঁদী রক্তপণস্বরূপ আদায় করতে হবে। কিন্তু রক্তপণ আদায়ের পূর্বেই মহিলাটি মৃত্যুবরণ করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফায়সালা করলেন যে, তার উত্তরাধিকার তার সন্তান এবং স্বামী পাবে এবং রক্তপণ তার অভিভাবকদেরকে আদায় করতে হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الدِّيَاتِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنِينِ امْرَأَةٍ مَنْ بَنِي لِحْيَانَ سَقَطَ مَيِّتًا بِغُرَّةِ: عَبْدٍ أَوْ أَمَةٍ ثُمَّ إِنَّ الْمَرْأَةَ الَّتِي قُضِيَ عَلَيْهَا بِالْغُرَّةِ تُوُفِّيَتْ فَقَضَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَنْ مِيرَاثَهَا لبنيها وَزوجهَا الْعقل على عصبتها

وعن ابي هريرة قال: قضى رسول الله صلى الله عليه وسلم في جنين امراة من بني لحيان سقط ميتا بغرة: عبد او امة ثم ان المراة التي قضي عليها بالغرة توفيت فقضى رسول الله صلى الله عليه وسلم بان ميراثها لبنيها وزوجها العقل على عصبتها

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে লিহ্ইয়ান গোত্রের কথা বলা হয়েছে আর সামনের হাদীসে হুযায়ল গোত্রের কথা বলা হয়েছে। মূলতঃ ঘটনা একই। কেননা লিহ্ইয়ান হলো হুযায়ল গোত্রের একটি ছোট অংশ। সুতরাং উভয় হাদীসের মধ্যে কোনো বৈপরীত্য নেই। হাদীসের বাণী (سَقَطَ مَيِّتًا) অর্থাৎ গর্ভপাতটি হয়েছিল মৃতাবস্থায়, তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দাস বা একটি দাসী প্রদান করার ফায়সালা দিয়েছেন। আর যদি জীবন্ত অবস্থায় গর্ভপাত হওয়ার পর মারা যায় তবে পূর্ণ দিয়াত দেয়া ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে ছেলে সন্তান হলে একশত উট আর মেয়ে সন্তান হলে পঞ্চাশটি উট ওয়াজিব হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৯০৯; শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৮১; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৫৬৬; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪১০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - দিয়াত (রক্তপণ)

৩৪৮৮-[৩] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযায়ল গোত্রের দুই মহিলা পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ে একজন অপরজনের ওপর পাথর মেরে আঘাত করে। ফলে একজন তার গর্ভস্থিত ভ্রূণসহ নিহত হয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফায়সালা দিলেন যে, গর্ভস্থিত ভ্রূণের রক্তপণ হলো একজন গোলাম বা বাঁদী। আর নিহত মহিলার রক্তপণ হত্যাকারিণী মহিলার অভিভাবকদেরকে আদায় করতে হবে। আর হত্যাকারিণী মহিলার (মৃত্যুতে) সন্তান এবং উত্তরাধিকারীরা তার মীরাস পাবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الدِّيَاتِ

وَعَنْهُ قَالَ: اقْتَتَلَتِ امْرَأَتَانِ مِنْ هُذَيْلٍ فَرَمَتْ إِحْدَاهُمَا الْأُخْرَى بِحَجَرٍ فَقَتَلَتْهَا وَمَا فِي بَطْنِهَا فَقَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ دِيَةَ جَنِينِهَا غُرَّةٌ: عَبْدٌ أَوْ وَلِيدَةٌ وَقَضَى بِدِيَةِ الْمَرْأَةِ عَلَى عَاقِلَتِهَا وورَّثَها ولدَها وَمن مَعَهم

وعنه قال: اقتتلت امراتان من هذيل فرمت احداهما الاخرى بحجر فقتلتها وما في بطنها فقضى رسول الله صلى الله عليه وسلم ان دية جنينها غرة: عبد او وليدة وقضى بدية المراة على عاقلتها وورثها ولدها ومن معهم

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের ঘটনা আর পূর্বের হাদীসের ঘটনা অনুরূপ। ولد একটি জাতিগত শব্দ। এটা দ্বারা একজন বা বহুজনকেও বুঝায়। এখানে সমস্ত সন্তান উদ্দেশ্য, সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক।

(وَمَنْ مَعَهُمْ) এর দ্বারা অন্যান্য ‘‘যাবিল ফুরুয’’ ওয়ারিসদের কথা বুঝানো হয়েছে। আসাবাগণকে এ কারণে দিয়াত আদায় করতে হয় যে, প্রথমতঃ হত্যাকারী কোনো কাজ করতে তাদের ওপর বেশী ভরসা রাখে। দ্বিতীয়তঃ এ হত্যাকারী যদি কোনো ভালো এবং প্রশংসনীয় কাজ করে, তখনও তারা লাভবান হয় ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করে থাকে। সুতরাং দায়-দায়িত্ব বহনেও তারা অংশীদার থাকবে। এটাই যুক্তিসঙ্গত। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৯১০; শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৮১; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৫৬৬; শারহেন্ নাসায়ী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ৪৮৩৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - দিয়াত (রক্তপণ)

৩৪৮৯-[৪] মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন দুই সতীন পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ে পাথর অথবা তাঁবুর খুঁটি দ্বারা একজন অপরজনকে আঘাত করলে গর্ভধারিণীর গর্ভপাত হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গর্ভস্থিত ভ্রূণের জন্য একটি গোলাম বা বাঁদী দেয়ার ফায়সালা করেন। আর এটা হত্যাকারিণী মহিলার অভিভাবকদের ওপর ওয়াজিব করলেন। (তিরমিযী)[1]

আর মুসলিম-এর বর্ণনায় আছে, মুগীরাহ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈকা মহিলা তার সতিনকে তাঁবুর খুঁটির আঘাতে মেরেই ফেলল। নিহত মহিলাটি ছিল গর্ভবতী। মুগীরাহ্ বলেন, তাদের একজন ছিল লিহ্ইয়ান গোত্রের রমণী। রাবী বলেন, নিহত মহিলার রক্তপণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যাকারিণীর অভিভাবকদের ওপর ওয়াজিব করলেন আর গর্ভস্থিত ভ্রূণের রক্তপণস্বরূপ একটি গোলাম বা বাঁদী দেয়ার নির্দেশ প্রদান করলেন।

بَابُ الدِّيَاتِ

وَعَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ: أَنَّ امْرَأَتَيْنِ كَانَتَا ضَرَّتَيْنِ فَرَمَتْ إِحْدَاهُمَا الْأُخْرَى بِحَجَرٍ أَوْ عَمُودِ فُسْطَاطٍ فَأَلْقَتْ جَنِينَهَا فَقَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الجَنينِ غُرَّةً: عبْداً أَوْ أَمَةٌ وَجَعَلَهُ عَلَى عَصَبَةِ الْمَرْأَةِ هَذِهِ رِوَايَةُ التِّرْمِذِيِّ وَفِي رِوَايَةِ مُسْلِمٍ: قَالَ: ضَرَبَتِ امْرَأَةٌ ضَرَّتَهَا بِعَمُودِ فُسْطَاطٍ وَهِيَ حُبْلَى فَقَتَلَتْهَا قَالَ: وَإِحْدَاهُمَا لِحْيَانَيَّةٌ قَالَ: فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دِيَة الْمَقْتُول عَلَى عَصَبَةِ الْقَاتِلَةِ وَغُرَّةً لِمَا فِي بَطْنِهَا

وعن المغيرة بن شعبة: ان امراتين كانتا ضرتين فرمت احداهما الاخرى بحجر او عمود فسطاط فالقت جنينها فقضى رسول الله صلى الله عليه وسلم في الجنين غرة: عبدا او امة وجعله على عصبة المراة هذه رواية الترمذي وفي رواية مسلم: قال: ضربت امراة ضرتها بعمود فسطاط وهي حبلى فقتلتها قال: واحداهما لحيانية قال: فجعل رسول الله صلى الله عليه وسلم دية المقتول على عصبة القاتلة وغرة لما في بطنها

ব্যাখ্যা: ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসে বর্ণিত হত্যার লাঠিটি ছিল তাঁবুর ছোট খুঁটি। غُرَّةٌ শব্দের অর্থ হলো- দাস-দাসী, যদি কেউ কোনো গর্ভবতীকে হত্যা করে তবে গর্ভবতী ও গর্ভস্থ সন্তানের জন্য আলাদা আলাদাভাবে তার ওপর দিয়াত ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ গর্ভবতীর জন্য পূর্ণ দিয়াত আদায় করতে হবে, আর গর্ভস্থ সন্তানের জন্য একটি غُرَّةٌ অর্থাৎ দাস বা দাসী দিয়াত হিসেবে প্রদান করতে হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৯০৫; শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৮১; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪১১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে