পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২২০-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর বিবাহে ছাতু ও খেজুর দ্বারা ওয়ালীমা করেছিলেন। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أولم على صَفِيَّة بسويق وتمر. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: পূর্বে ৩২১৪ নং হাদীসে সফিয়্যাহ্ -এর বিবাহোত্তর ওয়ালীমার বিবরণ অতিবাহিত হয়েছে, সেই ওয়ালীমার খানা ছিল হায়স। এ হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফিয়্যাহ্-এর ওয়ালীমাহ্ খেজুর এবং ছাতু দ্বারা সম্পন্ন করেছিলেন। ভিন্ন দু’টি হাদীসের সমন্বয়ে মুহাদ্দিসগণ বলেন, সফিয়্যার সাথে বিয়ের ওয়ালীমায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় খাদ্যই পরিবেশন করেছিলেন, যে বর্ণনাকারীর নিকট যা ছিল অথবা যে যা খেয়েছেন সে তাই বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া আরো বলা যায়, হায়স তৈরি করতেও যব বা ছাতু এবং খেজুর ব্যবহার করা হয়। সুতরাং হয়তো এক বর্ণনাকারী হায়সের কথা বলেছেন, অন্য বর্ণনাকারী হায়সের মৌল উপাদানের কথা বলেছেন, তাই দ্বিবিধ কথার মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৪০; তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১০৯৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২২১-[১২] সাফীনাহ্ (রাঃ) (উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর মুক্ত দাসী) হতে বর্ণিত। একদিন জনৈক ব্যক্তি ’আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মেহমান হলে তার জন্য খাবারের আয়োজন করেন। এমতাবস্থায় ফাতিমা (রাঃ) বললেন, আমরা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দা’ওয়াত করি আর তিনি আমাদের সাথে আহার করতেন, তবে কতই না উত্তম হত! অতঃপর তারা তাঁকে দা’ওয়াত করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে ঘরের দরজায় দুই পাশের দুই চৌকাঠ ধরে দাঁড়িয়ে দেখলেন যে, ঘরের এককোণে একটি রঙিন নকশাদার পর্দা ঝুলছে। এটা দেখে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফিরে যেতে লাগলে ফাতিমা (রাঃ) তাঁর পিছু ছুটে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনাকে ঘরে প্রবেশ করা থেকে কিসে পিছুটান দিয়েছে (বাধাদান করেছে)? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার পক্ষে অথবা কোনো নবীর পক্ষে নকশাকৃত এমন সুসজ্জিত ঘরে প্রবেশ ঠিক নয়। (আহমাদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ سَفِينَةَ: أَنَّ رَجُلًا ضَافَ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ فَصَنَعَ لَهُ طَعَامًا فَقَالَتْ فَاطِمَةُ: لَوْ دَعَوْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَكَلَ مَعَنَا فَدَعَوْهُ فَجَاءَ فَوَضَعَ يَدَيْهِ عَلَى عِضَادَتَيِ الْبَابِ فَرَأَى الْقِرَامَ قَدْ ضُرِبَ فِي نَاحِيَةِ الْبَيْتِ فَرَجَعَ. قَالَتْ فَاطِمَةُ: فَتَبِعْتُهُ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا رَدَّكَ؟ قَالَ: «إِنَّهُ لَيْسَ لِي أَوْ لِنَبِيٍّ أَنْ يَدْخُلَ بَيْتا مزوقا» . رَوَاهُ أَحْمد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: হাদীসের বর্ণনাকারী হলেন, উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালমাহ্ (রাঃ)-এর আযাদকৃত দাসী।
এক ব্যক্তি ‘আলী -এর মেহমান হয়েছিল। ‘আরবদের পরিভাষায় إِذَا نَزَلَ بِه ضَيْفًا যখন কোনো বাড়ীতে মেহমান আসে তখন বলা হয় «ضَافَه ضَيْفًا» অর্থাৎ তার নিকটে মেহমান এসেছে। আবার «ضَافَ الرَّجُلُ» লোকটি মেহমানদারী করল; ঐ সময় বলা হয় «إِذَا نَزَلَ بِه ضَيْفًا» যখন তার নিকট মেহমান (হয়েছে) আগমন করে।
ফাতিমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দা‘ওয়াতের ইচ্ছা পোষণ করার কারণ হলো খাদ্যে বরকত লাভ করা, আর খানার অনুষ্ঠানটাও সুন্দর হওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বোচ্চ সম্মান প্রর্দশন এবং পিতৃত্বেও পরিচয় তো আছেই। ইচ্ছা মোতাবেক তাকে দা‘ওয়াত করাও হলো এবং তিনি সময়মত আসলেনও, কিন্তু ঘরের দরজার দু’দিকে দুই চৌকাঠে হাত দিয়ে ঘরের মধ্যে তাকাতেই ভিতরে খুব উন্নত চিকন রঙিন পশমী নকশাদার পর্দার কাপড় টাঙ্গানো দেখলেন। এটা দেখেই তিনি খানাপিনা না করে সোজা বাড়ী রওনা হলেন। ফাতিমা (রাঃ) পিছে পিছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাদের ঘরে না ঢুকে এবং খাদ্য গ্রহণ না করেই ফিরে আসার কারণ কি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার মতো মানুষের অথবা কোনো নাবীর জন্য উচিত নয় এমন ঘরে প্রবেশ করা যা খুব চাকচিক্যময় করে সাজানো হয়। হাদীসে (مُزَوَّقًا) শব্দ এসেছে, যার অর্থ সাজানো, অলংকৃত ও নকশাদার করা, চাকচিক্য করে তোলা ইত্যাদি।
ইবনুল মালিক ঐ হাদীসের মুতাবা‘আত করে বলেন, «كَانَ ذٰلِكَ مُزَيَّنًا مُنَقَّشًا» অর্থাৎ পর্দার কাপড়টি ছিল নকশাদার এবং অলংকৃত। কেউ কেউ বলেছেন ওটা নকশাদার ছিল এমনটি নয় তবে তা বর সাজানোর আসনের মতো ছিল, যা দিয়ে ঘরের প্রাচীর বা বেড়াকে ঢেকে রেখেছে। এটাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মনের ব্যাকুলতা সৃষ্টি করেছিল। যা অহংকারীদের কাজের সাদৃশ্য। এ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, যেখানে অপছন্দনীয় কাজ বিদ্যমান সেখানে দা‘ওয়াত গ্রহণ করা আবশ্যক নয়।
(‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৫১; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২২২-[১৩] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দা’ওয়াত পেয়ে (ওযরবিহীনভাবে) প্রত্যাখ্যান করে, সে আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যাচরণ করল। আর যে ব্যক্তি বিনা দা’ওয়াতে আসলো সে যেন চোর সেজে ঢুকেছে এবং লুণ্ঠনকারীরূপে বের হয়ে গেছে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ دُعِيَ فَلَمْ يُجِبْ فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَمن دخل على غَيْرِ دَعْوَةٍ دَخَلَ سَارِقًا وَخَرَجَ مُغِيرًا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের ব্যাখ্যা পূর্বের ৩২১৮ নং হাদীসের কিঞ্চিৎ অতিবাহিত হয়েছে। ওযর ছাড়া কারো দা‘ওয়াত প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়, যে দা‘ওয়াত প্রত্যাখ্যান করলো করল সে আল্লাহ ও তার রসূলের নাফরমানী করল। কারো খাবার অনুষ্ঠানে কেউ দা‘ওয়াত ছাড়া প্রবেশ সে যেন চোরের মতো সংগোপনে খাবার টেবিলে প্রবেশ করল। এজন্য সে চোরের ন্যায় গুনাহ্গার হবে। সে যদি খায় তাহলে খাবার খেয়ে সে জবরদখলকারী হিসেবে বের হয়। আল্লাহর নাবী ছিলেন উত্তম আদর্শের মূর্তপ্রতীক। তিনি তার উম্মাতকে মাকারিমুল আখলাকিল বাহিয়্যাহ্ বা মনোমুগ্ধকর উত্তম আদর্শ ও চারিত্রিক গুণাবলী শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাদেরকে হীনতা নীচুতা ইত্যাদি অশোভন এবং অসৎ চারিত্রিক আচরণ ও গুণাবলী থেকে বারণ করেছেন। দা‘ওয়াত ছাড়া কারো বাড়ীতে প্রবেশ করা হীনতা, নীচুতা, লাঞ্ছনা ও অপমানজনক কর্ম। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা থেকে তার উম্মাতকে বারণ করেছেন। অনুরূপ কেউ দা‘ওয়াত দিলে তা গ্রহণ না করা আত্মঅহংকারীর কাজ এবং পরস্পর সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য পরিপন্থী কাজ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা থেকেও উম্মাতকে বারণ করেছেন। খুলকুল হাসানাহ্ বা উত্তম চরিত্র হলো উল্লেখিত দু’টি নিন্দনীয় চারিত্রিক গুণাবলী থেকে ভারসাম্যপূর্ণ মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৩৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২২৩-[১৪] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের মধ্যে এক সাহাবী বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাকে যখন দু’ ব্যক্তি (একই সাথে) দা’ওয়াত দেয়, তখন নিকটবর্তীর দা’ওয়াত গ্রহণ কর। আর উভয়ের মধ্যে তার দা’ওয়াত গ্রহণ কর যে আগে দা’ওয়াত দিয়েছে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا اجْتَمَعَ الدَّاعِيَانِ فَأَجِبْ أَقْرَبَهُمَا بَابًا وَإِنْ سَبَقَ أَحَدُهُمَا فَأَجِبِ الَّذِي سَبَقَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: বর্ণনাকারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের মধ্য হতে কোনো একজন তার নাম বা পরিচিতি নেই; সাহাবীগণ প্রত্যেকেই যেহেতু ন্যায়পরায়ণ আদেল, সুতরাং তাদের অপরিচিতি কোনো দোষণীয় নয়। অন্য রাবীর কারণে এটি দুর্বল।
মুসলিমদের দা‘ওয়াত কবুল করা আবশ্যক, এখন একই সাথে যদি দু’জন মুসলিম দা‘ওয়াত প্রদান করে তবে কার দা‘ওয়াত কবুল করতে হবে অত্র হাদীসে তার বিধান বিধৃত হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশীর দা‘ওয়াত আগে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী : ‘‘নিকটতম প্রতিবেশী এবং দূরতম প্রতিবেশী ’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৩৬)।
দু’জনের একজন যদি দা‘ওয়াতে অগ্রণী হয় তবে অগ্রণীর দা‘ওয়াত অগ্রণীয়। কারণ তার হক আগে সাব্যস্ত হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৫২; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২২৪-[১৫] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রথম দিনের খাবারের আয়োজন আবশ্যকীয়, দ্বিতীয় দিনের আয়োজন সুন্নাত, তৃতীয় দিনের আয়োজন লোকদেখানো। আর যে লোক দেখানো আয়োজন করে, আল্লাহ তা’আলাও তাকে সর্বসাধারণের সামনে (কিয়ামতের দিন) রিয়াকারী বলেই ঘোষণা করবেন। (তিরযিমী)[1]
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَعَامُ أَوَّلِ يَوْمٍ حق وَطَعَام يَوْم الثَّانِي سنة وَطَعَام يَوْم الثَّالِثِ سُمْعَةٌ وَمَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: বিবাহ উৎসবে তিনদিন খানা-পিনা অনুষ্ঠানাদি চলে থাকে। এ ক্ষেত্রে বরপক্ষ মানুষকে দা‘ওয়াত করে থাকে, অন্যদের কবুল করার আবশ্যকতা কতটুক অত্র হাদীসে তা বিধৃত হয়েছে। হাদীসে এসেছে, প্রথম দিনের খানা আবশ্যক বা ওয়াজিব। এটা তাদের পক্ষে দলীল যারা ওয়ালীমাহ্ করাকে ওয়াজিব অথবা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ মনে করেন। ওয়াজিবের ভিত্তিতেই তা বর্জনকারী গুনাহগার হয়ে থাকে এবং শাস্তি ও ভৎর্সনার উপযোগী হয়।
দ্বিতীয় দিনের খানা সুন্নাত, হতে পারে প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় দিনই ‘আক্দের পরে আবার প্রথম দিন আক্দের পূর্বে এবং দ্বিতীয় দিন আক্দের পরে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর তৃতীয় দিনের খানা (খ্যাতি বা সুনামের জন্য ) সুনাম সুখ্যাতি এবং রিয়া বা লৌকিকতার জন্য হয়ে থাকে। যেন লোকে তা শোনে এবং দেখে, তবে তাতে রিয়া বা লৌকিকতার চেয়েও সুনাম-সুখ্যাতি অথবা ব্যক্তির স্বাবলম্বীতাই প্রাধান্য পেয়ে থাকে, যা পরিত্যাজ্য। কেননা যে ব্যক্তি অহংকারবশত বা লৌকিকতা প্রদর্শন করতঃ নিজেকে বদান্যতা, মহানুভবতা বা উদারতার গুণে প্রসিদ্ধ করার প্রয়াস চালায়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিবসে ‘‘আহলুল আরাসাত’’ বা ফাঁকা জায়গার অধিবাসীর মাঝে একজন চরম মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রসিদ্ধি করাবেন।
তথায় আল্লাহ তা‘আলা বিয়াকারী ব্যক্তির রিয়া (লৈাকিকতা) এবং সুম্‘আহ্ (সুনাম-সুখ্যাতি) সৃষ্টিকূলের কর্ণকুহরে পৌঁছিয়ে দিবেন, ফলে রিয়াকারী লোকটি জনসম্মুখে অপমানিত হবে।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ যখন আল্লাহ তা‘আলা কোনো ব্যক্তিকে নি‘আমাত দিয়ে থাকেন তখন ঐ ব্যক্তির উচিত নি‘আমাতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। ফলে প্রথম দিনের ওয়ালীমাহ্ আদায়ে ভুল-ত্রুটি শুদ্ধ করার লক্ষ্যক্ষ দ্বিতীয় দিনে ওয়ালীমাহ্ অনুষ্ঠান করা মুস্তাহাব। কেননা সুন্নাত পালন ওয়াজিবের পরিপূরক। আর তৃতীয় দিবসের ওয়ালীমাহ্ রিয়া এবং সুম্‘আহ্ ছাড়া আর কিছু নয়। তাই প্রথম দিবসের ওয়ালীমার দা‘ওয়াত গ্রহণ করা আবশ্যক, দ্বিতীয় দিবসের দা‘ওয়াত গ্রহণ করা মুস্তাহাব, আর তৃতীয় দিবসের দা‘ওয়াত গ্রহণ করা মাকরূহ তাহরীম তথা হারাম। এতে ইমাম মালিক-এর সাথীদের মতের প্রত্যুত্তর দেয়া হলো। কেননা তারা সাতদিন পর্যন্ত ওয়ালীমার দা‘ওয়াত গ্রহণ করা মুস্তাহাব বলেন।
ইমাম ত্ববারানী ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে, প্রথম দিবসে ওয়ালীমার খাবার সুন্নাত, দুই দিনের খাবার মর্যাদাপূর্ণ কাজ এবং তিন দিনের খাবার রিয়া ও সুম্‘আহ্। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১০৯৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২২৫-[১৬] ’ইকরিমাহ্ (রহঃ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লৌকিকতা প্রদর্শনকারী দুই প্রতিযোগীর খাদ্য আয়োজনে যেতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
মাসাবীহ-এর গ্রন্থকার মুহয়্যিইউস্ সুন্নাহ্ বলেন, প্রকৃতপক্ষে হাদীসটি ’ইকরিমাহ্ মুরসালরূপে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন।
وَعَنْ عِكْرِمَةَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ طَعَامِ الْمُتَبَارِيَيْنِ أَنْ يُؤْكَلَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَقَالَ مُحْيِي السُّنَّةِ: وَالصَّحِيحُ أَنَّهُ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُرْسَلًا
ব্যাখ্যা: মানুষকে খানা খাওয়ানো উত্তম ‘ইবাদাত। এটা হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে, গর্ব-অহংকার কিংবা নাম যশের উদ্দেশে নয়। কেউ যদি ফখর বা গর্ব অহংকার নিয়ে কাউকে দা‘ওয়াত করে অথবা গর্ব-অহংকার প্রকাশার্থে দা‘ওয়াত করে তবে তাদের এ অনুষ্ঠানের খাদ্য খেতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। বিশেষ করে দু’জন বা ততোধিক ব্যক্তি যদি পরস্পর গর্ব অহংকারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় যে, কে কার উপর প্রাধান্য লাভ করতে পারে। তবে এ শ্রেণীর মানুষের খাদ্য খাওয়া নিষেধ।
এটা নিষেধ এজন্য যে, এতে রয়েছে আত্মঅহংকার ও রিয়া, আর লৌকিকতা হলো সূক্ষ্ম শির্ক যা গুনাহে কবীরা বা মহাপাপ।
অনেক ‘আলিমকে দা‘ওয়াত করা হলে তারা তা কবুল করতেন না। তাদের যদি বলা হতো সালাফদের অনেককেই তো দা‘ওয়াত করা হতো এবং তারা তা কবুলও করতেন? উত্তরে বলতেন, তারা দা‘ওয়াত গ্রহণ করতেন পরস্পর সৌহার্দ ও সস্প্রীতি রক্ষার জন্য আর তোমাদের এ দা‘ওয়াত তো চলছে অহংকার ও প্রতিদানের ভিত্তিতে।
বর্ণিত আছে, একদা ‘উমার ও ‘উসমান (রাঃ) একটি খাদ্যানুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন এবং তারা দা‘ওয়াত কবুল করেন। দা‘ওয়াতে রওয়ানা হয়ে ‘উমার ‘উসমান -কে বললেন, আমি তো উপস্থিত হলাম বটে কিন্তু মন চাচ্ছে যে, অংশগ্রহণ না করি। ‘উসমান বললেন, কেন? উত্তরে ‘উমার বললেন, আমি ভয় পাচ্ছি যে, খাদ্যানুষ্ঠানটি গর্বাহংকারের হয় কিনা? (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৫০; মিরকাতুল মাফাতীহ)