পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২১০-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আব্দুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ)-এর শরীরে হলুদের চিহ্ন দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কিসের রং এটা? তিনি বললেন, আমি জনৈকা (আনসারী) নারীকে খেজুর দানার সমপরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিয়ে করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা’আলা তোমার বিয়েকে বরকতময় করুন। একটি বকরী দিয়ে হলেও তুমি ওয়ালীমাহ্ কর। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْوَلِيْمَةِ
عَنْ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى عَلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ أَثَرَ صُفْرَةٍ فَقَالَ: «مَا هَذَا؟» قَالَ: إِنِّي تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً عَلَى وَزْنِ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ قَالَ: «بَارَكَ اللَّهُ لَكَ أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ»
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-এর শরীরে অথবা কাপড়ে (জা‘ফরানের) হলোদে চিহ্ন লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, একি? অর্থাৎ এ হলুদ রং কোত্থেকে এলো? উত্তরে তিনি বললেন, আমি একজন মহিলাকে বিয়ে করেছি।
‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ প্রশ্ন ছিল গায়ে বা কাপড়ে রং লাগার কারণ কি? উত্তরে যা বলার তাই বললেন। মূলতঃ এটা ছিল استفهام انكارى অর্থাৎ অস্বীকৃতিজ্ঞাপক প্রশ্ন, তিনি যেন এটা অস্বীকার ও অপছন্দ করছিলেন। তিনি সুগন্ধ মিশ্রিত তৈল মাখতে নিষেধ করতেন। এর উত্তরে ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ যেন বললেন, এটা তার মাখানো কোনো সুগন্ধযুক্ত তেলের রং নয় বরং তার নব বিবাহিতা স্ত্রীর সাথে বাসর উদযাপনের ফলে তার সংস্পর্শে লাগা রং বিশেষ, এটা ইচ্ছাজনিত নয় এবং অসাবধানতাজনিত বিষয়। ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-এর বিবাহের মোহর নির্ধারিত হয়েছিল এক নাওয়াত পরিমাণ ওযনের স্বর্ণ।
কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ নাওয়াত বলা হয় পাঁচ দিরহামকে, যেমন বিশ দিরহামকে এক নাশ্ এবং চল্লিশ দিরহামকে এক উকিয়্যাহ্ বলা হয়। কেউ কেউ বলেছেন, নাওয়াত হলো ঐ পরিমাণ স্বর্ণ যার মূল্য পাঁচ দিরহামের মতো। আবার কেউ কেউ বলেছেন, নাওয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো খেজুরের বিচি। শেষ কথা যা এখানে স্পষ্ট তা হলো সামান্য পরিমাণ স্বর্ণ। এই পরিমাণকেই কেউ এক-ষষ্ঠাংশ মিসকালের কাছাকাছি বলে উল্লেখ করেছেন; কেউ এক-চতুর্থ মিছকাল বা তার চেয়েও কম যার মূল্য দশ দিরহামের সমান বলে উল্লেখ করেছেন। তবে প্রথম মতটি গ্রহণ অধিক সম্ভাবনাময়। সুতরাং নাওয়াতের অর্থ পাঁচ দিরহামের পরিমাণ, যা স্বর্ণের ওযনে সমান, অর্থাৎ সাড়ে তিন মিসকাল স্বর্ণ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-এর বিবাহের কথা শুনে তার দাম্পত্য জীবনের বারাকাতের জন্য দু‘আ করলেনঃ بَارَكَ اللّٰهُ لَكَ অর্থাৎ আল্লাহ তোমার জীবনকে বরকতময় করুন। এ হাদীস থেকে বিবাহিত ব্যক্তির জন্য বারাকাতের দু‘আ করা মুস্তাহাব বা সুন্নাত প্রমাণিত হয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-কে বিবাহোত্তর ওয়ালীমাহ্ খাওয়ানোর নির্দেশ করেন। ইবনুল মালিক বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই প্রকাশ্য নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারা কতিপয় ‘উলামাহ্ বিবাহোত্তর ওয়ালীমাহ্ খাওয়ানোকে ওয়াজিব বলে মন করেন। তবে অধিকাংশ ‘উলামারা বলেন, এ নির্দেশ মুস্তাহাব অর্থে ব্যবহৃত হবে।
ওয়ালীমাহ্ কখন করতে হবে? এর উত্তরে বলা হয় ওয়ালীমাহ্ হবে বাসর উদযাপনের পরে, কেউ আবার বিবাহের আকদ সম্পাদন হওয়ার পরেই মতামত পেশ করেছেন। কেউবা আবার বিবাহের সময় এবং বাসর উদযাপনের পর দু’ সময়েই ওয়ালীমা করার কথা বলেছেন। ইমাম মালিকের একদল অনুসারী তো সাতদিন ভরে ওয়ালীমাগ্ খাওয়ানো মুস্তাহাব বলে মনে করে থাকেন। তবে নির্ভরযোগ্য এবং পছন্দনীয় মত হলো ওয়ালীমাহ্ খাওয়ানো বিবাহকারীর সাধ্য ও সামর্থ্যের উপর নির্ভর করবে। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২০৪৯; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪২৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২১১-[২] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ)-এর বিয়েতে যত বড় আয়োজনে ওয়ালীমাহ্ করেন, আর অন্য কোনো স্ত্রীর বিয়েতে তা করেননি। এতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক বকরী দ্বারা ওয়ালীমাহ্ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْوَلِيْمَةِ
وَعَنْهُ قَالَ: مَا أَوْلَمَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَحَدٍ مِنْ نِسَائِهِ مَا أولم على زَيْنَب أولم بِشَاة
ব্যাখ্যা: হাদীসের মর্মকথা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রী যায়নাব-এর সাথে বিবাহোত্তর ওয়ালীমাহ্ যত বেশী সুন্দর এবং পরিসরে করেছিলেন এমনটি অন্য কোনো স্ত্রীর বেলায় করেননি। তিনি বকরী যবেহ করে তার ওয়ালীমাহ্ করেছিলেন।
মাওয়াহিব নামক গ্রন্থে আছে, উম্মুল মু’মিনীন যায়নাব বিনতু জাহ্শ (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফুপী আমীমাহ্ বিনতু ‘আবদুল মুত্ত্বালিব-এর কন্যা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার পালক পুত্র যায়দ ইবনু হারিসাহ্-এর সাথে বিবাহ দিয়ে দেন। দীর্ঘদিন অবস্থানের পর যায়দ ইবনু হারিসাহ্ তাকে তালাক প্রদান করেন। অতঃপর যখন তার ‘ইদ্দত শেষ হয় তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দ ইবনু হারিসাকে বলেন, তুমি যায়নাব-এর কাছে গিয়ে আমার কথা উল্লেখ কর, অর্থাৎ আমার পক্ষ থেকে তাকে বিয়ের প্রস্তাব পেশ কর। যায়দ ইবনু হারিসাহ্ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ পালনে যায়নাব (রাঃ)-এর বাড়ী গেলাম এবং দরজার দিকে পিঠ ফিরিয়ে কললাম, হে যায়নাব! আল্লাহর রসূল তোমাকে স্মরণ করিয়ে অর্থাৎ বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছেন। এ কথা শুনে যায়নাব বললেন, আমি কোনো কাজই করতে যাই না যতক্ষণ না আমার রবের নির্দেশ জারী হয়। অতঃপর যায়নাব তার একটি মসজিদ ছিল সেদিকে রওনা হলেন, এরপর এ আয়াত নাযিল হলো:
فَلَمَّا قَضٰى زَيْدٌ مِنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا অর্থাৎ- ‘‘অতঃপর যায়দ যখন যায়নাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে তোমার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দিলাম।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৩৭)
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোজা যায়নাব-এর বাড়ী চলে আসলেন এবং অনুমতি ছাড়াই তার ঘরে প্রবেশ করলেন। (সহীহ মুসলিম)
এ ঘটনার পর মুনাফিকরা বলতে লাগল মুহাম্মাদ পুত্রবধূকে হারাম বলে অর্থাৎ ছেলের বউকে বিবাহ করা হারাম বলে ঘোষণা করে থাকে অথচ নিজেই পুত্রবধূকে বিয়ে করে বসেছে। তখনই এ আয়াত নাযিল হলো:
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ
অর্থাৎ ‘‘মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যেকার কোনো পুরুষের পিতা নয়।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৪০)
যায়নাব (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যান্য স্ত্রীদের ওপর গর্ব করে বলতেন : তোমাদের পিতাগণ ‘‘তোমাদের অভিভাবক হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তোমাদেরকে’’ বিয়ে দিয়েছেন আর আমাকে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা নিজে সপ্তম আসমানের উপর আমাকে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে) বিয়ে দিয়েছেন। (তিরমিযী)
যায়নাব-এর আসল নাম ছিল বারীরাহ্ , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখলেন যায়নাব।
আনাস (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যায়নাবকে বিয়ে করলেন তখন ওয়ালীমার জন্য কওমের লোকজনকে দা‘ওয়াত করলেন। লোকজন খানা খাওয়া শেষ হলে বসে বসে গল্প শুরু করল, এটা হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ভীষণ কষ্টের, কারণ তিনি তাদের উঠে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত করলেন কিন্তু তারা উঠলেন না। অনেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বিব্রত ও অস্বস্তি অবস্থা দেখে একে একে উঠে চলে গেলেন কিন্তু তিনজন লোক অবশিষ্ট বসেই রইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশের জন্য এসে দেখেন লোকজন বসেই আছেন। এরপর তারা যখন চলে গেলেন তখন আমি (আনাস) গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খবর জানালাম যে, তারা চলে গেছেন।
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলেন। এ সময় আমি ঘরে ঢোকার জন্য গেলাম কিন্তু তিনি আমার ও তার মাঝে পর্দা টেনে দিলেন, তখনই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করলেন:
يٰاَيُّهَا الَّذِينَ اٰمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ
অর্থাৎ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নাবীর ঘরে প্রবেশ করো না।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫৩)
বিস্তারিত ঘটনা তাফসীরে ইবনু কাসীর ও অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থ দেখুন। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫১৬৮; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪২৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২১২-[৩] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ)-এর বিয়েতে ওয়ালীমাহ্ করেন, তিনি লোকেদেরকে রুটি ও গোশ্ত/মাংস দ্বারা পরিতৃপ্ত করেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الْوَلِيْمَةِ
وَعَنْهُ قَالَ: أَوْلَمَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ بَنَى بِزَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ فأشبع النَّاس خبْزًا وَلَحْمًا. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: যায়নাব বিনতু জাহশ-এর সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবাহ ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর বিবাহ। আবহমানকালের সামাজিক কুসংস্কার ভেঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা মানব সভ্যতার সামাজিক সংস্কার সাধন করেন। এ বিবাহ সম্পাদনের কাজ সপ্তম আসমানের উপর সংঘটিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিবাহে প্রচুর লোকজনকে ওয়ালীমার দা‘ওয়াত করেছিলেন। সেখানে অঢেল গোশত রুটি তৈরি হয়েছিল অথবা গোশত রুটি সংমিশ্রণে সারীদ বা অন্যকিছু তৈরি হয়েছিল। লোকজন এসব খাদ্য অত্যন্ত তৃপ্তিসহ খেয়েছিলেন। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৯৪; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২১৩-[৪] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-কে মুক্ত করে বিয়ে করেন। এ মুক্তিদান মোহর হিসেবে পরিগণিত হয় এবং হায়স (খেজুর, পনির ও ঘি সংমিশ্রণে প্রস্তুতকৃত) খাদ্য দ্বারা ওয়ালীমাহ্ করেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْوَلِيْمَةِ
وَعَنْهُ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ أَعْتَقَ صَفِيَّةَ وَتَزَوَّجَهَا وَجَعَلَ عِتْقَهَا صَدَاقَهَا وَأَوْلَمَ عَلَيْهَا بحيس. مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনীন সফিয়্যাহ্ (রাঃ) ছিলেন মূসা (আঃ)-এর ভাই হারূন ইবনু ‘ইমরান (আঃ) -এর বংশের হুয়াই ইবনু আখতাব-এর কন্যা। তার পিতা মদীনার বিখ্যাত ইয়াহূদী বানু নাযীর গোত্রের সর্দার ছিলেন, মা ছিলেন বানী কুরায়যাহ্-এর সর্দার সামাওয়াল-এর কন্যা। সফিয়্যাহ্-এর আসল নাম ছিল যায়নাব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এসে তার নাম হয় সফিয়্যাহ্। সফিয়্যাহ্ পিতা এবং মাতা উভয়ের বংশের দিক থেকে ছিলেন দারুণ বংশমর্যাদার অধিকারিণী। সপ্তম হিজরীতে খায়বার যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি যুদ্ধবন্দী হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মুক্ত করে দেন এবং স্বীয় বিবাহ বন্ধনে এনে উম্মুল মু’মিনীনের মর্যাদা দান করেন।
বন্দিত্ব থেকে তাকে মুক্ত করাই ছিল তার বিবাহের মোহর। মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, এটা একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস বা বিশেষত্ব ছিল। শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থকার বলেন, বিদ্বানগণ মতবিরোধ করেছেন ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে তার দাসীকে মুক্ত করে বিবাহ করে নেয় এবং ঐ দাসত্ব মুক্তই তার মোহর ধার্য করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একদল সাহাবীসহ কতিপয় বিদ্বান প্রকাশ্য হাদীসের ভিত্তিতে দাসত্ব মুক্তিকে মোহর ধার্য করা বৈধ মনে করেন। কিন্তু অন্য আরেকদল বিদ্বান এটা বৈধ বলে মনে করেন না। তারা প্রকাশ্য ঐ হাদীসের নানা তা‘বীল বা ব্যাখ্যা করে থাকেন।
এ হাদীস থেকে এটাও দলীল গ্রহণ করা হয় যে, দাসীকে মুক্ত করার পর তাকে বিবাহ করা অপছন্দনীয় নয়। দাস-দাসীর প্রথা বর্তমানে পৃথিবীতে চালু নেই। সুতরাং বিস্তারিত আর আলোচনা করা হলো না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই স্ত্রী সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর বিবাহের ওয়ালীমাহ্ হায়স নামক খাদ্য দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছিল। হায়স হলো খেজুর, পনীর এবং ঘি-এর সংমিশ্রণে তৈরি এক প্রকার উপাদেয় এবং অত্যন্ত রুচিকর ও সুস্বাদু খাদ্য, যা ‘আরবদের কাছে খুব জনপ্রিয় ও লোভনীয় ছিল। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫১৬৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২১৪-[৫] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার ও মদীনার পথে (প্রত্যাবর্তনকালে) সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর সাথে (বিবাহ বাসরের উদ্দেশে) তিনদিন অবস্থান করেন। আমি মুসলিমগণকে তাঁর ওয়ালীমার দা’ওয়াত করি, কিন্তু উক্ত ওয়ালীমায় রুটি-গোশ্ত/মাংস ছিল না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চামড়ার দস্তরখানা বিছানোর নির্দেশ দিলেন। দস্তরখানা বিছানো হলে তাতে খেজুর, পনির ও ঘি রাখলেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الْوَلِيْمَةِ
وَعَنْهُ قَالَ: أَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ خَيْبَرَ وَالْمَدِينَةِ ثَلَاثَ لَيَالٍ يُبْنَى عَلَيْهِ بِصَفِيَّةَ فَدَعَوْتُ الْمُسْلِمِينَ إِلَى وَلِيمَتِهِ وَمَا كَانَ فِيهَا مِنْ خُبْزٍ وَلَا لَحْمٍ وَمَا كَانَ فِيهَا إِلَّا أَن أمربالأنطاع فَبُسِطَتْ فَأَلْقَى عَلَيْهَا التَّمْرَ وَالْأَقِطَ وَالسَّمْنَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা : খায়বার বিজয় শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাহ্ এবং খায়বারের মধ্যবর্তী ‘সহবা’ নামক ভূ-খন্ডে তাঁবু খাটিয়ে তিনরাত অতিক্রম করেন। এ সময়ে সফিয়্যাহ্ (রাঃ) তার বাসরেই রাত যাপন করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রীতি ছিল যখনই কোনো অঞ্চল বা কোনো দূর্গ জয় করতেন সেখানে তিনি তিনদিন বা তিনরাত কাটিয়ে বিজয় চূড়ান্ত ও নিশ্চিত করে এবং পরিবেশ স্থিতিশীল করে সেখান থেকে ফিরতেন। এই সহবা নামক স্থানেই আনাস-এর মা উম্মু সুলায়ম বিনতু মিলহান সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-কে সাজগোজ করিয়ে বধূবেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাঁবুতে প্রেরণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বাসর উদযাপনের জন্য এ সময় (নতুন) বিশেষ তাঁবু তৈরি করা হয়েছিল। পরদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশক্রমে আনাস ওয়ালীমার জন্য মুসলিমদের দা‘ওয়াত করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চামড়ার বিছানা বা দস্তরখানা বিছানোর জন্যও নির্দেশ করলেন, ফলে তা বিছানো হলো। এবার দস্তরখানে খেজুর, পনীর, ঘি ইত্যাদি রাখা হলো এবং সেগুলো মিশ্রিত করে হায়স তৈরি করা হলো। এই ওয়ালীমার খাদ্য তালিকায় গোশত এবং রুটি ছিল না।
সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর বিস্তারিত ঘটনা বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। মাওয়াহিব নামক গ্রন্থে উল্লেখ আছে, উম্মুল মু’মিনীন সফিয়্যাহ্ বিনতু হুয়াই ইবনু আখতাব, কেননা ইবনু আবুল হুকায়ক-এর বিবাহাধীন ছিলেন। ৭ম হিজরীতে তার স্বামী খায়বার যুদ্ধে নিহত হলে এবং খায়বার পতন হলে তিনি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে বন্দী হিসেবে নীত হন। বন্দীদের যখন একত্রিত করা হয় তখন সাহাবী দাহিয়্যাতুল কলবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আরয কারলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে (বন্দীদের মধ্য থেকে) একটা দাসী দান করুন। আল্লাহর নাবী বললেন, যাও তুমি ঐ বন্দীদের মধ্য থেকে একটি বন্দী নিয়ে নাও। দাহিয়্যাহ্ গিয়ে সফিয়্যাহ্ বিনতু হুয়াই-কে নিয়ে নিলেন। এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে জানালেন, হে আল্লাহর রসূল! সম্ভ্রান্ত বানী নাযীর ও বানী কুবায়যার নেত্রী সফিয়্যাহ্কে দাহিয়্যাহ্-এর হাতে তুলে দিলেন?
তার মতো সম্ভ্রান্ত এবং মহীয়সী নারীর তো সে মর্যাদা দিতে পারবে না, সে তো কেবল আপনার স্বকীয় সত্তার জন্যই শোভন! এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দাহিয়্যাহ্-কে ডাকো। দাহিয়্যাহ্ সফিয়্যাহ্কে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাযির হলে তিনি দাহিয়্যাহ্-কে বললেন, তুমি বন্দীদের মধ্যে থেকে অন্য একটি বন্দী নিয়ে যাও। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সকল গুণাবলী ও বংশ মর্যাদার খেয়াল করে তাকে মুক্ত করে দিলেন এবং নিজে বিয়ে করে নিলেন। তার মুক্ত হওয়াটাই ছিল তার বিয়ের মোহর। খায়বায় এবং মদীনার মধ্যবর্তী সহবা নামক স্থানে উম্মু সুলায়ম (আনাস -এর মা) সফিয়্যাহ্-এর পোষাক পরিবর্তন করে উত্তম পোষাক পরালেন এবং সুন্দররূপে সাজিয়ে বধূবেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাসরে পেশ করলেন। লোকেরা সফিয়্যার ব্যাপারে বলাবলি করছিল। কেউ বলল আল্লাহর নাবী তাকে বিয়ে করেছেন, কেউ বলছিল তাকে উম্ম ওয়ালাদ বানিয়েছেন। এক পর্যায়ে লোকেরা যখন দেখল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লোকজন থেকে পর্দাবৃত করছেন তখন তারা বুঝে নিলেন যে, তিনি তাকে স্ত্রী হিসেবেই গ্রহণ করেছেন।
জাবির থেকে বর্ণিত, খায়বারের যুদ্ধের সময় যেদিন সফিয়্যাহ্-এর বাবা, ভাই নিহত হলো সেদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফিয়্যাহ্-কে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে দিয়ে পরিবারের জীবিত অবশিষ্ট লোকেদের সাথে চলে যাওয়ার অথবা ইসলাম গ্রহণ করার ইখতিয়ার দিয়ে স্বীয় সত্বার সান্নিধ্যে থাকার কথা জানালেন। সফিয়্যাহ্ ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং আল্লাহ ও তার রসূলকেই গ্রহণ করে নিলেন। আনাস -এর বিভিন্ন বর্ণনাবলীর সার-সংক্ষক্ষপ এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই প্রস্তাবই দিয়েছিলেন যে, আমাকে কি তোমার প্রয়োজন আছে? উত্তরে সফিয়্যাহ্ বললেন, হে আল্লাহর রসূল আমি শির্কের জীবনেই এটা মনে মনে কামনা করতাম আর আল্লাহ যখন আমাকে সেই সুযোগ করে দিলেন তা কিভাবে আমি ত্যাগ করতে পারি? আবূ হাতিম প্রমুখ মুহাদ্দিস ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার থেকে একটি ঘটনা উদ্বৃত করেছেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফিয়্যাহ্-এর ‘‘চোখে কোনো কিছু দিয়ে আঘাতের নীলাভ’’ দাগ লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, এ দাগ কিসের? উত্তরে তিনি বললেন, একদা আমি আমার স্বামীর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলাম এমন সময় স্বপ্নে দেখি আকাশের চাঁদ আমার কোলে এসে পড়ল! এ স্বপ্নের কথা স্বামীকে জানালে তিনি আমার মুখমণ্ডলে ভীষণভাবে চপটেঘাত করে বলেন, তুমি বুঝি এখন ইয়াসরিবের রাজার আশা করছ? (ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড, হাঃ ৪২১৩; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২১৫-[৬] সফিয়্যাহ্ বিনতু শায়বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জনৈকা স্ত্রীর বিবাহে দুই মুদ যব (ছাতু) দ্বারা ওয়ালীমাহ্ করেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الْوَلِيْمَةِ
وَعَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ قَالَتْ: أَوْلَمَ النَّبِيُّ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم على النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى بَعْضِ نِسَائِهِ بمدين من شعير. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা : হাদীসের বর্ণনাকারী সফিয়্যাহ্ বিনতু শায়বাহ্ আল হাজারী (রাঃ) তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন কিনা অর্থাৎ সহাবিয়াতের মর্যাদা লাভ করেছিলেন কিনা তা নিয়ে জীবনীকারগণ ইখতিলাফ করেছেন। অনেকেই বলেছেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাৎ পাননি। সুতরাং তার বর্ণিত হাদীস মুরসাল, তবে একটি সানাদে তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখতে হলে ফাতহুল বারী দ্রষ্টব্য।
‘আল্লামা সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামান্য দুই মুদ পরিমাণ যব বা ছাতু দিয়ে যেই স্ত্রীর ওয়ালীমাহ্ করেছিলেন সম্ভবত তিনি ছিলেন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ), তার আসল নাম ছিল হিন্দ, উম্মু সালামাহ্ হলো ডাকনাম বা উপনাম। কেউ কেউ তার নাম রামশা বলেও উল্লেখ করেছন, তবে অনেক মুহাদ্দিসই এটাকে ভিত্তিহীন বলেছেন। উম্মু সালামাহ্-এর পিতার নাম ছিল আবূ উমাইয়াহ্ ইবনু মুগীরাহ্ আল মাখযূমী, মাতা আতিকাহ্ বিনতু আমির ইবনু রবী‘আহ্! কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশেরই ফুপাতো বোন। উম্মু সালামাহ্-এর প্রথম বিয়ে হয় আবূ সালামাহ্ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল আসাদ আল মাখযূমীর সাথে। তিনি তার স্বামীর সাথে হাবাশায় প্রথম হিজরতকারী ছিলেন।
সহীহ মুসলিমে উম্মু সালামাহ্ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : কোনো ব্যক্তি যদি বিপদ মুসীবাতে নিপতিত হয়, অতঃপর সে বলে ‘‘ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি র-জি‘ঊন, আল্লা-হুম্মা জুরনী ফী মুসীবাতি ওয়াখলুফলী খয়রম মিনহা-’’, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার চেয়েও উত্তম স্থলাভিষিক্ত-প্রতিনিধি দান করেন। উম্মু সালামাহ্ বলেন, আমার স্বামী আবূ সালামার মৃত্যু হলে আমি ‘‘ইন্না লিল্লা-হি ...’’ পড়তে লাগলাম, কিন্তু মনে মনে ভাবলাম আমার স্বামী আবূ সালামার চেয়ে উত্তম মানুষ আর কে আছে? অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তার রসূলকেই আমার জন্য তার স্থলাভিষিক্ত করলেন।
উম্মু সালামার দীনের প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং আল্লাহ ও তদীয় রসূলের প্রতি অসাধারণ ভালোবাসা ইসলামের ইতিহাস তাকে মহীয়সী করে তুলেছে। তিনি বিধবা হলে তার অসহায়ত্ব দেখে আবূ বাকর তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন, কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করেন, অতঃপর ‘উমার প্রস্তাব দেন, এটাও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রস্তাব আসলে তিনি তাকে স্বাগত জানিয়ে আরয করেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রস্তাব আমার জন্য তো ভীষণ আনন্দের বিষয় কিন্তু আমার যে তিনটি সমস্যা রয়েছে; প্রথমতঃ আমি অত্যন্ত লজ্জাশীলা নারী, দ্বিতীয়তঃ আমি বেশ কয়জন নাবালেগ শিশুর দেখাশুনার দায়িত্বশীলা, তৃতীয়তঃ আমি এমন একজন নারী যে, এখানে আমার কোনো অভিভাবকও নেই যিনি আমাকে ওয়ালী হয়ে বিবাহ দিবেন? এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, ওহে উম্মু সালামাহ্! কোনো তুমি যে লজ্জা-শরমের কথা বলছ আমি আল্লাহর কাছে তোমার জন্য দু‘আ করব যাতে আল্লাহ তা‘আলা তোমার এই অহেতুক লজ্জা দূর করে দেন। আর তুমি যে সন্তানের কথা বলছ নিশ্চয় তাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হবেন। আর তুমি বলেছ তোমার অভিভাবকের কথা, তোমার নিকটে দূরে এমনকি কোনো অভিভাবক আছে যে আমাকে অপছন্দ করতে পারে? এ কথা শুনে উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তার ছেলেকে বললেন, হে বৎস! তুমি আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। অতঃপর সে তার মাকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন। এ দ্বারা প্রমাণিত যে, সন্তান ওয়ালী হয়ে তার বিধবা কিংবা স্বামীহীনা মাকে বিবাহ দিতে পারে। অবশ্য ইমাম শাফি‘ঈ তার ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫১৭২; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২১৬-[৭] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাউকেও ওয়ালীমার দা’ওয়াত দিলে সে যেন তাতে শামিল থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْوَلِيْمَةِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْوَلِيمَةِ فَلْيَأْتِهَا» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: فَلْيُجِبْ عُرْسًا كَانَ أَو نَحوه
ব্যাখ্যা : বিবাহের ওয়ালীমার দা‘ওয়াত দেয়া সুন্নাত, গ্রহণ করাও সুন্নাত। সহীহ মুসলিম-এর এক বর্ণনায় ওয়ালীমাহ্ এবং অনুরূপ অন্যান্য অনুষ্ঠানাদি যেমন ‘আক্বীকার দা‘ওয়াতের কথাও এসেছে। এমনকি খাৎনার দা‘ওয়াত। তবে বিবাহের ওয়ালীমাহ্ ও অনুরূপ অন্যান্য দা‘ওয়াতের কথাটি মুসলিমের উদ্ধৃতিতে বলা হলো, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা নয় বরং রাবীর নিজস্ব কথা যা তিনি তাতে সংযোজন করেছেন। জামিউস্ সগীর গ্রন্থে হাদীসটি এভাবে এসেছে, ‘‘তোমাদের কেউ যখন কোনো নব বরের ওয়ালীমার জন্য দা‘ওয়াত দেয় তখন সে যেন তা কবুল করে।’’ মুসলিম ও ইবনু মাজাহও এটি বর্ণনা করেছেন। বলা হয়, ওয়ালীমার দা‘ওয়াত গ্রহণ করা ওয়াজিব, বিনা ওযরে দা‘ওয়াত তরককারী গুনাহগার হবে। এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আরো নির্দেশ রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি দা‘ওয়াত বর্জন করল সে আল্লাহ ও তদীয় রসূলের নাফরমানী করল।’’ (সহীহ মুসলিম হাঃ ১০৬, ১৪৩১)
কেউ কেউ বলেছেন, দা‘ওয়াতে হাযির হওয়া মুস্তাহাব আর সওম পালন না করলে খাওয়াও ভালো। দা‘ওয়াত যদি ওয়ালীমাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর হয় তাহলে তা গ্রহণ করা মুস্তহাব।
যে সকল ওযরের কারণে কবূলের আবশ্যকতা রহিত হবে অর্থাৎ দা‘ওয়াত পরিহার করা যাবে সেগুলো হলো : খাদ্য সন্দেহযুক্ত হওয়া, খাদ্যানুষ্ঠানে শুধু ধনীদের খাস করে দা‘ওয়াত করা হয় এবং গরীবদের বর্জন করা হয়, অথবা সেখানে এমন লোক আছে যে উপস্থিত সভ্যদের কষ্ট দেয়, অথবা সেখানে এমন সব লোক বসবে যাদের সাথে বসা উচিত নয়। অথবা দা‘ওয়াতকারী তার অনিষ্টতা চাপা দেয়ার জন্য কিংবা তার যশ খ্যাতি প্রকাশের লোভে দা‘ওয়াত করেছে। অথবা দা‘ওয়াতকারী তার বাতিল ও নিষিদ্ধ কর্মের সমর্থন আদায় বা সাহায্যের জন্য দা‘ওয়াত করছে। কিংবা সেখানে নিষিদ্ধ কর্ম হয়ে থাকে যেমন মদ্যপান, অশ্লীল খেল-তামাশা ইত্যাদি। এমনকি বিছানাও যদি রেশমীর বিছানা হয় এ জাতীয় অনুষ্ঠানের দা‘ওয়াত বর্জন করা বৈধ, বরং উচিত বর্তমানের দা‘ওয়াতী অনুষ্ঠানগুলোতে কোনো না কোনো দিক থেকে এ জাতীয় কর্মকা- হয়েই থাকে। সুতরাং এ জাতীয় অনুষ্ঠানে যোগদান না করার ওযর বিদ্যমান এবং গ্রহণযোগ্য। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫১৭৩, শারহে মুসলিম ৯ম/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪২৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২১৭-[৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাউকেও খাবার আয়োজনে দা’ওয়াত দিলে, সে যেন গ্রহণ করে। তবে ইচ্ছা থাকলে খাবে, অন্যথায় খাবে না। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْوَلِيْمَةِ
وَعَنْ جَابِرٍ: قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ إِلَى طَعَام فليجب وَإِن شَاءَ طَعِمَ وَإِنْ شَاءَ تَرَكَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: ওয়ালীমাহ্ অথবা ‘আক্বীকাহ্ ইত্যাদি খাবার অনুষ্ঠানের দা‘ওয়াত গ্রহণ করা উচিত এবং সেখানে উপস্থিত হওয়াও উচিত। ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ ঘোষিত হয়েছে, আর নির্দেশসূচক বাণী ওয়াজীবের অর্থ প্রদান করে, যদি সঙ্গত কোনো ওযর না থাকো। অবশ্য যার দূর-দূর্গম কষ্টকর পথপরিক্রমার ওযর রয়েছে তার ওপর থেকে রহিত হয়ে যাবে।
জুমহূর ‘উলামার মতে এ নির্দেশসূচক বাণী মুস্তাহাব অর্থে ব্যবহার হবে।
দা‘ওয়াত কবুল করার পর খাওয়ার বিষয়টিও তার ইচ্ছা, ইচ্ছা করলে সে খেতে পারে ইচ্ছা করলে তা পরিহারও করতে পারে। হাদীসটি আবূ দাঊদও বর্ণনা করেছেন। এছাড়া আবূ দাঊদ, আহমাদ, মুসলিম, তিরমিযী প্রমুখ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে নিমেণর বাক্য আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন :
‘‘তোমাদের কাউকেও যখন কোনো খাদ্যের জন্য দা‘ওয়াত দেয়া হয় সে যেন তা কবুল করে নেয়, যদি সে সায়িম (রোযাদার) না হয় তবে যেন সে খায় আর যদি সায়িম হয় তবে তাদের সাথে যেন (অনুষ্ঠানে) সঙ্গ দেয়।
ত্ববারানী-এর বর্ণনায় ‘‘সে যেন তাদের সাথে সঙ্গ দেয়’’ এর পরিবর্তে ‘‘সে যেন তাদের বারাকাতের জন্য দু‘আ করে’’ বাক্য এসেছে। আবার মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযী ইত্যাদি গ্রন্থে এসেছে ‘‘সায়িম (রোযাদার) হলে সে যেন বলে আমি সায়িম’’। (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩০; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২১৮-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ ওয়ালীমার খাদ্য নিকৃষ্ট খাদ্য, যে আয়োজনে শুধু ধনীদের দা’ওয়াত করা হয় এবং গরীবদের বঞ্চিত করা হয়। আর যে (বিনা কারণে) দা’ওয়াত প্রত্যাহার করে, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْوَلِيْمَةِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «شَرُّ الطَّعَامِ طَعَامُ الْوَلِيمَةِ يُدْعَى لَهَا الْأَغْنِيَاءُ وَيُتْرَكُ الْفُقَرَاءُ وَمَنْ تَرَكَ الدَّعْوَةَ فَقَدْ عَصَى الله وَرَسُوله»
ব্যাখ্যা: এখানে মন্দ খাদ্য বলতে ঐ অনুষ্ঠানের খাদ্য যাতে শুধু ধনীদের দা‘ওয়াত করা হয় গরীবদের পরিহার করা হয়, যেমন মানুষের মধ্যে মন্দ মানুষ সেই যে নিজে একাই খায় অন্যকে খাদ্যে অংশ দেয় না বা শরীক রাখে না।
কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ খাদ্যকে মন্দ বলে অভিহিত করা হয়েছে এর কারণ পরের বাক্যে উল্লেখ হয়েছে, আর তা হলো গরীবকে বর্জন করা। মূলতঃ কোনো খাদ্য মন্দ নয় বরং খাদ্যের অবস্থার কারণে তাকে মন্দ বলা হয়েছে মাত্র। সুতরাং কোনো ব্যক্তিকে যদি এমন ওয়ালীমাহ্ দা‘ওয়াত করা হয় আর ওয়ালীমার দা‘ওয়াত গ্রহণের নির্দেশসূচক হাদীসের ভিত্তিতে সে দা‘ওয়াত গ্রহণ করে এবং খাদ্যে অংশগ্রহণ করে তবে সে মন্দ বা নিকৃষ্ট খাদ্য খেলো এমনটি নয়।
কেউ যদি বিনা ওযরে দা‘ওয়াত বর্জন করে সে আল্লাহ ও তার রসূলের নাফরমানী করল। আল্লাহর নাফরমানী এজন্য যে, সে ব্যক্তি হাদীস বর্জন করে রসূলের নাফরমানী করল, রসূলের নাফরমানী মানেই আল্লাহর নাফরমানী। দা‘ওয়াত গ্রহণ যারা ওয়াজিব বলেন তারা এই যুক্তিতেই বলে থাকেন। কিন্তু জুমহূর ‘উলামায়ে কিরাম দা‘ওয়াত গ্রহণকে বড় জোর তাকীদযুক্ত মুস্তাহাব বলে মনে করেন। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫১৭৭; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩২; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)
৩২১৯-[১০] আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসারগণের মধ্যে আবূ শু’আয়ব নামক এক ব্যক্তির গোশ্ত/মাংস বিক্রেতা একজন ক্রীতদাস ছিল। সে ক্রীতদাসকে বলল, তুমি আমার জন্য পাঁচজনের অনুপাতে খাদ্য প্রস্তুত কর। আমি পাঁচজনের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেও দা’ওয়াত করতে ইচ্ছুক। সুতরাং সে হিসাবে তাঁর জন্য খাবার তৈরি করা হলো। অতঃপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দা’ওয়াত করলেন। অতঃপর পথিমধ্যে তাঁদের (পাঁচজনের) সাথে একজন শামিল হলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ শু’আয়বকে ডেকে বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে তাকে (অতিরিক্ত লোকটিকে) অনুমতি দিতে পার, ইচ্ছা করলে না করতে পার। সে বলল, না, বরং আমি তাকে অনুমতি দিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْوَلِيْمَةِ
وَعَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ: كَانَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ يُكْنَى أَبَا شُعَيْبٍ كَانَ لَهُ غُلَامٌ لَحَّامٌ فَقَالَ: اصْنَعْ لِي طَعَامًا يَكْفِي خَمْسَةً لَعَلِّي أَدْعُو النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَامِسَ خَمْسَةٍ فَصَنَعَ لَهُ طعيما ثمَّ أتها فَدَعَاهُ فَتَبِعَهُمْ رَجُلٌ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَبَا شُعَيْبٍ إِنَّ رَجُلًا تَبِعَنَا فَإِنْ شِئْتَ أَذِنْتَ لَهُ وَإِنْ شِئْتَ تركته» . قَالَ: لَا بل أَذِنت لَهُ
ব্যাখ্যা: সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিভিন্ন সময়ই বাড়ীতে দা‘ওয়াত করে নিতেন। আবূ শু‘আয়ব সম্ভবত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারার মধ্যে অনাহারের চিহ্ন দেখতে পেয়েছিলেন, তাই তাকে দা‘ওয়াত করেছিলেন। সুতরাং এজন্য গোলামকে দিয়ে যথাসময়ে কিছু হালকা খাদ্য তৈরি করানো হলো। طُعَيْمًا শব্দটি ক্ষুদ্রার্থ বাহক বিশেষ্য, এর অর্থ ছোট, ক্ষুদ্র, হালকা ইত্যাদি। এখানে অনাড়ম্বর, সাধারণ বা সাদামাটা খাদ্য বুঝানো উদ্দেশ্যও হতে পারে।
খাদ্য তৈরি হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চারজন সাহাবীসহ তাকে ডাকলেন। তাদের সাথে আরেকজন সাহাবীও গেলেন যাকে দা‘ওয়াত করা হয়নি। বাড়ীতে পৌঁছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দা‘ওয়াতকারী আবূ শু‘আয়বকে বললেন, হে আবূ শু‘আয়ব! আমাদের সাথে একজন লোক এসেছে, অর্থাৎ সে রাস্তা থেকে এসেছে যাকে তুমি দা‘ওয়াত করনি, এখন তুমি যদি চাও তাকে ভিতরে আসার এবং খানা খাবার অনুমতি দিতে পার আর তুমি ইচ্ছা করলে তাকে বর্জন করতে পার। আবূ শু‘আয়ব তখন বললেন , হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তাকে বাদ রাখব না, বরং আমি তাকে অনুমতি দিলাম।
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, কোনো কওমের যিয়াফতে যিয়াফতকারীর অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা বা অংশগ্রহণ করা বৈধ নয় এবং সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশ ছাড়া মেহমানের জন্যও বৈধ নয় তাদের সাথে দা‘ওয়াতবিহীন কোনো লোক গমন করলে তাকে অনুমতি দেয়া। হ্যাঁ যদি সর্বসাধারণের আসার অনুমতি থাকে অথবা অতিরিক্ত কেউ আসাতে দা‘ওয়াতকারী খুশী হয়েছেন জানা যায় তবে তা স্বতন্ত্র কথা।
শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, যাকে দা‘ওয়াত করা হয়নি তাকে সেখানে গিয়ে খাদ্য গ্রহণ বৈধ নয়। একদল ‘উলামার মতে কারো সাথে যদি পূর্ব বন্ধুত্ব থাকে ঐ বন্ধু যে খাদ্য দিয়েছে তা সে নিজে খেতে পারবে এবং অপরকেও খাওয়াতে পারবে, এমনকি খাবার বহন করে বাড়ীতেও আনতে পারবে। তবে খাবার দস্তরখানে বসে পড়লে তখন স্বভাবসিদ্ধ নিয়ম হলো খেয়েই যেতে হবে, বহন করে বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া যাবে না এবং অন্যকেও খাওয়ানো যাবে না। একই দস্তরখানে অংশগ্রহণকারী সকলেই পরস্পর একটি খাদ্যে অংশগ্রহণ করতে পারবে, তবে দস্তরখান ভিন্ন হলে তা বৈধ নয়।
মুযহির বলেনঃ এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট বিবরণ যে, কারো বাড়ীতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ, দা‘ওয়াতী ব্যক্তির জন্য ও দা‘ওয়াতকারীর অনুমতি ছাড়া অন্যকে সাথে নিয়ে যাওয়া বৈধ নয়।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ দা‘ওয়াতী ব্যক্তির সাথে যদি কেউ এসেই পরে তাহলে তার জন্য মুস্তাহাব হলো দা‘ওয়াতকারীর অনুমতি প্রার্থনা করা, আর দা‘ওয়াতকারীরও উচিত তাকে ফিরিয়ে না দেয়া। হ্যাঁ যদি তার দ্বারা উপস্থিত দা‘ওয়াতী মেহমানদের কোনো কষ্ট হয় তবে তাকে স্বহৃদয়তার সাথে মিষ্টি ও নম্র্ কথা বলে বিদায় করে দিবে, পারলে কিছু খাদ্য সাথে দিয়ে বিদায় করলে আরো ভালো ও সুন্দর হয়। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫৪৬১; শারহে মুসলিম ১৩/১৪ খন্ড, হাঃ ২০৩৬; মিরকাতুল মাফাতীহ)