পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মোহর
৩২০৪-[৩] ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা স্ত্রীদের মোহর নির্ধারণে সীমালঙ্ঘন করো না। কেননা যদি উক্ত মোহর নির্ধারণ দুনিয়াতে সম্মান এবং আল্লাহর নিকট তাকওয়ার বিষয় হতো, তবে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই তোমাদের চেয়ে তা নির্ধারণে অধিক অগ্রগামী হতেন। কিন্তু ১২ উকিয়্যার বেশি পরিমাণ মোহর নির্ধারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোনো সহধর্মিণীকে বিয়ে করেছেন কিংবা কোনো মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: أَلَا لَا تُغَالُوا صَدُقَةَ النِّسَاءِ فَإِنَّهَا لَوْ كَانَتْ مَكْرُمَةً فِي الدُّنْيَا وَتَقْوَى عِنْدَ اللَّهِ لَكَانَ أَوْلَاكُمْ بِهَا نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا عَلِمْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَكَحَ شَيْئًا مِنْ نِسَائِهِ وَلَا أَنْكَحَ شَيْئًا مِنْ بَنَاتِهِ عَلَى أَكْثَرَ مِنَ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ أُوقِيَّةً. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ
ব্যাখ্যা : এ হাদীসের বক্তব্য ‘উমার -এর, তিনি অধিক মোহর ধার্য পছন্দ করতেন না। কাযী ‘ইয়ায বলেন, لَا تُغَالُوْا অর্থ হলো لا تكثروا তোমরা বেশী করো না, অর্থাৎ মহিলাদের মোহর খুব বেশী বেঁধো না। বেশী মোহর ধার্য করা কোনো সম্মানের প্রতীক নয় এবং তাকওয়ার কোনো কাজও নয়। আল্লাহ বলেন, ‘‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে তাকওয়াবান’’- (সূরা আল হুজুরত ৪৯ : ১৩)।
অধিক মোহর যদি সম্মানের প্রতীক হতো তাহলে সর্বপ্রথম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে অধিক মোহর দিয়ে বিয়ে করতেন এবং তার কন্যাগণকেও অধিক মোহরে বিয়ে দিতেন, অথচ তিনি ১২ উকিয়্যার বেশী মোহরে কোনো নারীকে বিয়ে করেননি এবং তার কোনো কন্যাকেও বিয়ে দেননি। আর উম্মু হাবীবাহ্ -এর বিয়েতে অতিরিক্ত টাকার বিষয়টি পূর্বের হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, নাজাশী বাদশা তিনি তা নিজের পক্ষ থেকে নাবীজীর সম্মানে প্রদান করেছিলেন। আর ‘নাশ্’ বা অর্ধ দিরহাম বা ভগ্নাংশের কথা বাদ দিয়ে এখানে বলা হয়েছে। এরূপ বলার বিধান রয়েছে; সুতরাং তা পূর্বের হাদীসের বর্ণিত সংখ্যার পরিপন্থী নয়।
যদি কেউ প্রশ্ন করে মোহর বেশী না বাঁধার কথাটি আল কুরআনের এই আয়াতের পরিপন্থী, আল্লাহ বলেছেনঃ ‘‘আর যদি তোমরা একজনকে অঢেল বা রাশি রাশি সম্পদ দিয়েও থাকো তবে তা থেকে কোনো কিছুই তোমরা গ্রহণ করো না।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ২০)
উত্তরে বলব, আল কুরআনের আয়াতটি মোহর বেশী প্রদান জায়িয প্রমাণ করে মাত্র, উত্তমতা প্রমাণকারী নয়। আর আমাদের কথা হলো আফযালিয়াত বা উত্তমতা নিয়ে, জায়িয নিয়ে নয়। ‘উমার -এর বক্তব্যে ঘোষণা করেন, তোমরা মহিলাদের জন্য চল্লিশ উকিয়্যার বেশী নির্ধারণ করো না, কেউ যদি বেশী নির্ধারণ করে তবে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা নেয়া হবে। এ কথা শুনে একমহিলা প্রতিবাদ করে বললেন, কে আপনাকে এ কথা বলার অধিকার দিল? অর্থাৎ এই চল্লিশ উকিয়্যার সীমা নির্ধারণের অধিকার কে আপনাকে দিয়েছে? অথচ আল্লাহ বলেছেন, ‘‘যদি তোমরা তাদের কাউকে রাশি রাশি সম্পদও মোহর প্রদান কর .....।’’ এ প্রমাণ ও যুক্তিভিত্তিক দলীল শুনে ‘উমার বললেন, মহিলাটি ঠিক বলেছেন, আর লোকটি অর্থাৎ স্বয়ং ‘উমার ভুল করেছেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২১০৬; তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১১১৪)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মোহর
৩২০৫-[৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি স্ত্রীর মোহর হিসেবে এক অঞ্জলি (দু’ হাতের মুঠির সমন্বয়ের) পরিমাণ ছাতু অথবা খেজুর দিল, সে তাকে নিজের জন্য হালাল করে নিল। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَعْطَى فِي صَدَاقِ امْرَأَتِهِ مِلْءَ كَفَّيْهِ سَوِيقًا أَوْ تَمْرًا فَقَدِ اسْتحلَّ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: বিবাহে মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নিয়ে ফুকাহায়ে কিরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অত্র হাদীসটি মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারণের ইঈিত বহণ করে। কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রীকে মোহর হিসেবে অঞ্জলিভরে ভাজা গম, যব বা ভুট্টার আটা প্রদান করে, অথবা খেজুর প্রদান করে তাহলে তা মোহর হিসেবে গণ্য হবে এবং স্ত্রী তার জন্য হালাল হয়ে যাবে। যদিও তা দশ দিরহামের চেয়ে কম। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) উক্ত হাদীস সহ আরো অন্যান্য হাদীসের প্রামাণিকতার ভিত্তিতে উল্লেখিত পরিমাণের মোহর দিয়ে বিবাহ বৈধ হওয়াকে সাব্যস্ত করেন। অনুরূপভাবে হানাফী মাযহাবের কতক আলিম বলেন, যিনি দশ দিরহামের কমে মোহর জায়িয নয় বলে মনে করেন কম পক্ষে তার জন্য উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে ঐ পরিমান মোহরে বিবাহের বৈধতা দেয়া উচিত।
ইমাম খত্ত্বাবী (রহঃ) বলেনঃ মোহর স্বামী-স্ত্রীর বিষয়, স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের সম্মতিক্রমে ও সন্তুষ্টচিত্তে তা নির্ধারিত হয়। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ কত এবং কি বস্তু দিয়ে তা আদায় হবে এটা দু’জনে সানন্দে নির্ধারণ করবে। যদিও ফুকাহায়ে কিরাম মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নিয়ে মতানৈক্য করেছেন।
ইমাম সুফ্ইয়ান সাওরী, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহক প্রমুখ ইমাম ও ফুকাহার মতে মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্দিষ্ট নয়, বরং তা স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের সম্মতিতে নির্ধারিত হবে।
প্রখ্যাত তাবি‘ঈ সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব বলেন, একটি চাবুকও যদি স্ত্রীকে মোহর হিসেবে প্রদান করা হয়, তাহলে স্ত্রী বৈধ হয়ে যাবে।
ইমাম মালিক (রহঃ) বলেনঃ মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো এক দীনারের এক-চতুর্থাংশ। আসহাবুর রায় বা ক্বিয়াসপন্থহীগণ বলেন, মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো দশ দিরহাম। তারা এই পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন চোরের হাত কাটার উপর ক্বিয়াস করে, কেননা কোনো চোর সর্বনিম্ন দশ দিরহাম চুরি করলেই কেবল তার হাত কাটা হয়, অন্যথায় নয়। সুতরাং বুঝা গেল একটা অঙ্গের ন্যূনতম বিনিময় দশ দিরহাম, এর নিচে নয়। এ থেকেই তারা ক্বিয়াস করেন যে, স্বামী-স্ত্রী বিবাহের মাধ্যমে একটি অঙ্গকেই বৈধ করে নেয়, আর তা নেয় মোহরের বিনিময়ে। সুতরাং তা দশ দিরহামের নিচে বৈধ নয়।
সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) বলেন, মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ পঞ্চাশ দিরহাম। ‘আল্লামা নাখ‘ঈ (রহঃ) বলেন, মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ চল্লিশ দিরহাম। আর ইবনু শুব্রুমাহ্ বলেন, পাঁচ দিরহাম।
যে সকল ফুকাহা বলেন, মোহরের সর্বনিম্ন কোনো পরিমাণ নেই, তারা উল্লেখিত হাদীস ছাড়াও নিমেণর হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «فَالْتَمِسْ وَلَوْ خَاتَمًا مِنْ حَدِيدٍ» ‘‘একটি লোহার আংটি হলেও তুমি তোমার স্ত্রীর মোহর দেয়ার জন্য তা অনুসন্ধান কর।’’ মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ সম্পর্কে এই বিশুদ্ধ হাদীসটি প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। অপরদিরকে হানাফী ‘আলিমগণ বলেন, যদিও হাদীসটি বিশুদ্ধ কিন্তু তা ঐ যুগের একটি প্রথার দিকে নির্দেশ করে তা হলো ‘‘তুমি একটি লোহার আংটি হলেও মোহর হিসেবে তা নগদ প্রদান কর।’’ অর্থাৎ হাদীসটি নগদ প্রদানে সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারক, সামগ্রিক মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ণয়ক নয়।
বলাবাহুল্য এই তা‘বীল বা ব্যাখ্যা সহীহ হাদীস বর্জনের আরেক কৌশল। তাই ব্যাখ্যাকার মুল্লা ‘আলী আল কারী (হানাফী) (রহঃ) বলেছেনঃ উল্লেখিত মতানৈক্যের ভিত্তিতে ও তাদের প্রামাণ্য দলীলের ভিত্তিতে বলা যায় যে, ইমাম শাফি‘ঈ সহ যারা মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নেই বলেছেন তাদের মতটিই সুস্পষ্ট বিশুদ্ধ দলীলের মাধ্যমে প্রমাণিত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২১১০; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মোহর
৩২০৬-[৫] ’আমির ইবনু রবী’আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বানী ফাযারহ্ গোত্রের জনৈকা রমণীর (মোহর বাবদ) এক জোড়া জুতার বিনিময়ে বিবাহ হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এক জোড়া জুতার বিনিময়ে তোমাকে অর্পণ করতে রাজি হয়েছ? সে বলল, জি, হ্যাঁ। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার বিবাহের সম্মতি দিলেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ عَامِرِ بْنِ رَبِيعَةَ: أَنَّ امْرَأَةً مَنْ بَنِي فَزَارَةَ تَزَوَّجَتْ عَلَى نَعْلَيْنِ فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَرَضِيتِ مِنْ نَفْسِكِ وَمَالِكِ بِنَعْلَيْنِ؟» قَالَتْ: نَعَمْ. فَأَجَازَهُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ পূর্বেও হাদীসে বিস্তারিত আলোচনা হয়ে গেছে, সুতরাং সে বিষয়ে আলোচনা নিষ্প্রয়োজন।
হানাফী মাযহাবের ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, দশ দিরহামের কম মোহর বৈধ হওয়া সংক্রান্ত যত হাদীস রয়েছে সবগুলো দুর্বল, কেবল লোহার আংটি সংক্রান্ত হাদীসটি ছাড়া। ঐ হাদীসের সম্পর্কে তাদের তা‘বীল ও ব্যাখ্যা পূর্বের হাদীসে অতিবাহিত হয়েছে।
অনুরূপভাবে ফাযারহ্ গোত্রের এক মহিলা দু’টো জুতার বিনিময়ে বিবাহে রাযী হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দেন, ফলে তাদের বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যায়।
অবশ্য মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেনঃ বিবাহ শুদ্ধ হয় বটে তবে স্ত্রীর জন্য মোহরে মিসাল ধার্য হবে এবং স্বামীর নিকট তা দাবী করবে। পক্ষান্তরে আরেকদল মুহাদ্দিসের বক্তব্য হলোঃ মূলে একটি হলেও বিশুদ্ধ হাদীস থাকায় য‘ঈফ হাদীসগুলো তার সহায়ক হয় ও শক্তি যোগায়।
মোহরে মিসাল হলো নারীর সৌন্দর্যে কমারিত্বে, অর্থ-সম্পদে সমসাময়িক নিজ বংশের অন্যান্য নারীর সমপরিমাণ মোহর হওয়া। নিজ বংশের অন্যান্য নারী হলো আপন বোন, বৈমাতৃয় বোন, বৈপিতৃয় বোন, ফুপু, চাচাত বোন ইত্যাদি। আর ঐ নারীর ‘ইদ্দত হবে মৃত্যুর ‘ইদ্দত, অর্থাৎ চারমাস দশদিন এবং সে স্বামীর যথাযথ মীরাস লাভ করবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১১১৩; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মোহর
৩২০৭-[৬] ’আলক্বমাহ্ (রহঃ) ইবনু মাস্’ঊদ হতে বর্ণনা করেন। একদিন জনৈক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, এক ব্যক্তি মোহর নির্ধারণ না করে বিয়ে করেছে এবং স্ত্রীর সাথে সহবাসের পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছে; শারী’আতে এর বিধান কি? উত্তরে ইবনু মাস্’ঊদ বললেন, তার পরিবারের অপর নারীদের মোহরের সমপরিমাণ মোহর দিতে হবে। তা হতে কমও নয়, বেশিও নয় এবং স্ত্রীর ’ইদ্দত (৪ মাস ১০ দিন) পালন করতে হবে এবং স্ত্রী তার উত্তরাধিকারী হবে। এটা শুনে আশজা’ঈ গোত্রের এক সাহাবী মা’কল ইবনু সিনান দাঁড়িয়ে বললেন, আমাদের আশজা’ঈ গোত্রের এক স্ত্রীলোক বিরওয়া’ বিনতু ওয়াশিক সম্পর্কেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ বিধান কার্যকরী করেন। এতে ইবনু মাস্’ঊদ অত্যন্ত খুশী হলেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, দারিমী)[1]
وَعَنْ عَلْقَمَةَ عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ: أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ رَجُلٍ تَزَوَّجَ امْرَأَةً وَلَمْ يَفْرِضْ لَهَا شَيْئا وَلم يدْخل بهَا حَتَّى مَاتَ فَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: لَهَا مِثْلُ صَدَاقِ نِسَائِهَا. لَا وَكْسَ وَلَا شَطَطَ وَعَلَيْهَا الْعِدَّةُ وَلَهَا الْمِيرَاثُ فَقَامَ مَعْقِلُ بْنُ سِنَانٍ الْأَشْجَعِيُّ فَقَالَ: قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بِرْوَعَ بِنْتِ وَاشَقٍ امْرَأَةٍ مِنَّا بِمِثْلِ مَا قَضَيْتَ. فَفَرِحَ بِهَا ابْنُ مَسْعُودٍ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা : ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) ছিলেন সাহাবীদের মধ্যে ফাকীহ সাহাবী। তিনি ঐ মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হন যে, মহিলার মোহর নির্ধারণ না করেই বিবাহ হয়, অতঃপর সহবাসের পূর্বেই তার স্বামী ইন্তেকাল করেন, এই মহিলার মোহর কি হবে? ‘ইদ্দত কতদিন এবং সে স্বামীর সম্পদের মীরাস পাবে কিনা? সাহাবী ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ একমাস ভরে ইজতিহাদ করে উত্তর দেন যে, মহিলা মোহরে মিসাল পাবে, এর কমও নয় বেশীও নয়।
ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) এ ফায়সালা দেয়ার পর বললেন, ‘‘আমি এ ফয়সালা দিলাম আমার পক্ষ থেকে, যদি সঠিক হয় তবে তা আল্লাহ ও তদীয় রসূলের পক্ষ থেকে, আর যদি ভুল হয় তবে তা এক বান্দার মায়ের পুত্র থেকে হয়েছে।’’ অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘‘যদি সঠিক হয় তবে তা আল্লাহ ও তদীয় রসূলের পক্ষ থেকে, আর যদি ভুল হয় তবে তা আমার পক্ষ থেকে এবং শায়ত্বনের পক্ষ থেকে, আল্লাহ ও তার রসূল এ থেকে দায় মুক্ত।’’ ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ -কে সত্যায়ন করে মা‘আকিল ইবনু সিনান এবং আবুল জার্রাহ্ বলেন, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরওয়া বিনতু ওয়াসিক-এর কন্যার জন্য এমন ফায়সালাই দিয়েছিলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ এ কথা শুনে খুবই আনন্দিত হন, কারণ তার ইজতিহাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফায়সালার অনুকূল হয়েছে। পক্ষান্তরে ‘আলী সহ সাহাবীগণের একটি দল বলেন, মহিলার স্বামীর সাথে সহবাস বা একান্ত বাস না হওয়ায় সে মোহর পাবে না, তবে তার মীরাস এবং ‘ইদ্দত ধার্য হবে। এ ব্যাপারে ইমাম শাফি‘ঈ-এর অবশ্য উভয়বিধ বক্তব্য রয়েছে। ইমাম মুযহির (রহঃ) বলেন, ইমাম আবূ হানীফাহ্ এবং ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল-এর মাযহাব ইবনু মাস্‘ঊদ -এর মতের উপর।
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে এই ইখতিলাফ হলো ঐ মহিলার ব্যাপারে যার বিবাহে কোনো প্রকারের মোহর নির্ধারণ হয়নি এবং তার স্বামী তার সাথে সহবাসের পূর্বেই (স্বামী) মৃত্যুবরণ করল। কিন্তু যদি স্বামী সহবাস করে মৃত্যুররণ করে থাকে তাহলে সর্বসম্মত মতে স্ত্রীর জন্য মোহরে মিসাল ওয়াজিব হবে। কেউ যদি বিবাহ করে স্ত্রীর সাথে সহবাসের পূর্বেই তালাক প্রদান করে তাহলে ঐ মহিলার স্বামীর অর্থনৈতিক সামর্থ্যের উপর বিবেচনা করে বিচারক বা হাকিম তার জন্য মুত্‘আহ্’’ নির্ধারণ করে দিবেন। যেমন পরিধেয় বস্ত্র, ওড়না, আংটি ইত্যাদি। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২১১৪; তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১১৪৫)