৩২০৫

পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মোহর

৩২০৫-[৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি স্ত্রীর মোহর হিসেবে এক অঞ্জলি (দু’ হাতের মুঠির সমন্বয়ের) পরিমাণ ছাতু অথবা খেজুর দিল, সে তাকে নিজের জন্য হালাল করে নিল। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَعْطَى فِي صَدَاقِ امْرَأَتِهِ مِلْءَ كَفَّيْهِ سَوِيقًا أَوْ تَمْرًا فَقَدِ اسْتحلَّ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن جابر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من اعطى في صداق امراته ملء كفيه سويقا او تمرا فقد استحل» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: বিবাহে মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নিয়ে ফুকাহায়ে কিরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অত্র হাদীসটি মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারণের ইঈিত বহণ করে। কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রীকে মোহর হিসেবে অঞ্জলিভরে ভাজা গম, যব বা ভুট্টার আটা প্রদান করে, অথবা খেজুর প্রদান করে তাহলে তা মোহর হিসেবে গণ্য হবে এবং স্ত্রী তার জন্য হালাল হয়ে যাবে। যদিও তা দশ দিরহামের চেয়ে কম। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) উক্ত হাদীস সহ আরো অন্যান্য হাদীসের প্রামাণিকতার ভিত্তিতে উল্লেখিত পরিমাণের মোহর দিয়ে বিবাহ বৈধ হওয়াকে সাব্যস্ত করেন। অনুরূপভাবে হানাফী মাযহাবের কতক আলিম বলেন, যিনি দশ দিরহামের কমে মোহর জায়িয নয় বলে মনে করেন কম পক্ষে তার জন্য উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে ঐ পরিমান মোহরে বিবাহের বৈধতা দেয়া উচিত।

ইমাম খত্ত্বাবী (রহঃ) বলেনঃ মোহর স্বামী-স্ত্রীর বিষয়, স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের সম্মতিক্রমে ও সন্তুষ্টচিত্তে তা নির্ধারিত হয়। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ কত এবং কি বস্তু দিয়ে তা আদায় হবে এটা দু’জনে সানন্দে নির্ধারণ করবে। যদিও ফুকাহায়ে কিরাম মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নিয়ে মতানৈক্য করেছেন।

ইমাম সুফ্ইয়ান সাওরী, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহক প্রমুখ ইমাম ও ফুকাহার মতে মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্দিষ্ট নয়, বরং তা স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের সম্মতিতে নির্ধারিত হবে।

প্রখ্যাত তাবি‘ঈ সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব বলেন, একটি চাবুকও যদি স্ত্রীকে মোহর হিসেবে প্রদান করা হয়, তাহলে স্ত্রী বৈধ হয়ে যাবে।

ইমাম মালিক (রহঃ) বলেনঃ মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো এক দীনারের এক-চতুর্থাংশ। আসহাবুর রায় বা ক্বিয়াসপন্থহীগণ বলেন, মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো দশ দিরহাম। তারা এই পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন চোরের হাত কাটার উপর ক্বিয়াস করে, কেননা কোনো চোর সর্বনিম্ন দশ দিরহাম চুরি করলেই কেবল তার হাত কাটা হয়, অন্যথায় নয়। সুতরাং বুঝা গেল একটা অঙ্গের ন্যূনতম বিনিময় দশ দিরহাম, এর নিচে নয়। এ থেকেই তারা ক্বিয়াস করেন যে, স্বামী-স্ত্রী বিবাহের মাধ্যমে একটি অঙ্গকেই বৈধ করে নেয়, আর তা নেয় মোহরের বিনিময়ে। সুতরাং তা দশ দিরহামের নিচে বৈধ নয়।

সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) বলেন, মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ পঞ্চাশ দিরহাম। ‘আল্লামা নাখ‘ঈ (রহঃ) বলেন, মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ চল্লিশ দিরহাম। আর ইবনু শুব্রুমাহ্ বলেন, পাঁচ দিরহাম।

যে সকল ফুকাহা বলেন, মোহরের সর্বনিম্ন কোনো পরিমাণ নেই, তারা উল্লেখিত হাদীস ছাড়াও নিমেণর হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «فَالْتَمِسْ وَلَوْ خَاتَمًا مِنْ حَدِيدٍ» ‘‘একটি লোহার আংটি হলেও তুমি তোমার স্ত্রীর মোহর দেয়ার জন্য তা অনুসন্ধান কর।’’ মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ সম্পর্কে এই বিশুদ্ধ হাদীসটি প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। অপরদিরকে হানাফী ‘আলিমগণ বলেন, যদিও হাদীসটি বিশুদ্ধ কিন্তু তা ঐ যুগের একটি প্রথার দিকে নির্দেশ করে তা হলো ‘‘তুমি একটি লোহার আংটি হলেও মোহর হিসেবে তা নগদ প্রদান কর।’’ অর্থাৎ হাদীসটি নগদ প্রদানে সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারক, সামগ্রিক মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ণয়ক নয়।

বলাবাহুল্য এই তা‘বীল বা ব্যাখ্যা সহীহ হাদীস বর্জনের আরেক কৌশল। তাই ব্যাখ্যাকার মুল্লা ‘আলী আল কারী (হানাফী) (রহঃ) বলেছেনঃ উল্লেখিত মতানৈক্যের ভিত্তিতে ও তাদের প্রামাণ্য দলীলের ভিত্তিতে বলা যায় যে, ইমাম শাফি‘ঈ সহ যারা মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নেই বলেছেন তাদের মতটিই সুস্পষ্ট বিশুদ্ধ দলীলের মাধ্যমে প্রমাণিত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২১১০; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)