পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিয়ের প্রচার, প্রস্তাব ও শর্তাবলী প্রসঙ্গে
৩১৫৭-[১৮] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে থেকে জিহাদে শরীক থাকতাম, তখন আমাদের সাথে স্ত্রীগণ থাকত না, তাই (কাম-উদ্দীপনা হতে হিফাযাতের উদ্দেশে) আমরা খাসী বা খোঁজা হওয়ার কথা জানালে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা করতে আমাদেরকে নিষেধ করলেন। অতঃপর আমাদেরকে মুত্’আহ্ বিয়ের অনুমতি দিলেন। সুতরাং আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কাপড়ের বিনিময়ে নির্ধারিত সময়ের জন্য বিয়ে করত। অতঃপর ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ কুরআন মাজীদের আয়াত তিলাওয়াত করলেন, অর্থাৎ- ’’হে মু’মিনগণ! আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য যে পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন, তা তোমরা হারাম করো না’’- (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৮৭)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: كُنَّا نَغْزُو مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَنَا نِسَاءٌ فَقُلْنَا: أَلَا نَخْتَصِي؟ فَنَهَانَا عَنْ ذَلِكَ ثُمَّ رَخَّصَ لَنَا أَنْ نَسْتَمْتِعَ فَكَانَ أَحَدُنَا يَنْكِحُ الْمَرْأَةَ بِالثَّوْبِ إِلَى أَجَلٍ ثُمَّ قَرَأَ عَبْدُ اللَّهِ: (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحَرِّمُوا طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكُمْ)
ব্যাখ্যা: বিশুদ্ধ কথা হলো, মুত্‘আহ্ বিবাহ হারাম হওয়া কিংবা বৈধ হওয়ার বিষয়টা দুই বার সংঘটিত হয়েছে। এটি হালাল ছিল খায়বার যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত। এরপর তা খায়বারের দিনে হারাম করা হয়, এরপর আবার মক্কা বিজয়ের বছরে তিনদিনের জন্য বৈধ ঘোষণা করা হয়। আর এটাই আওত্বাসের দিন ছিল, অতঃপর এটা (মুত্‘আহ্) স্থায়ীভাবে হারাম হয়ে যায় এবং কিয়ামত পর্যন্ত এটি হারাম থাকবে।
সকল ‘উলামাগণহ্ এ মর্মে একমত যে, মুত্‘আহ্ হলো নির্ধারিত সময় পর্যন্ত বিবাহ করা, এতে উক্ত মহিলার জন্য কোনো উত্তরাধিকার থাকবে না। আর এ বিবাহ নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেই ভঙ্গ হয়ে যাবে। ত্বলাকের কোনো প্রয়োজন নেই। আর মুত্‘আহ্ বিবাহ যে হারাম, এ মর্মে সকল ‘উলামাগণের ঐকমত্য রয়েছে। শুধু রাফিজীরা (শী‘আরা) এটাকে বৈধ মনে করে। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪০৪)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিয়ের প্রচার, প্রস্তাব ও শর্তাবলী প্রসঙ্গে
৩১৫৮-[১৯] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুত্’আহ্ বিবাহ ইসলামের প্রথম (প্রাথমিক) যুগে ছিল। কেউ যখন কোনো অপরিচিত অবস্থায় দূরবর্তী স্থানে যেত, অতঃপর যতদিন তার ধারণায় সে স্থানে থাকবে, তত দিনের জন্য সে বিয়ে করে নিত। আর উক্ত স্ত্রীলোকটি তার আসবাবপত্র দেখাশুনা করত ও তার খাবার তৈরি করত। এভাবে যখন এ আয়াত নাযিল হলো, অর্থাৎ- ’’যারা তাদের স্ত্রীগণ ও ক্রীতদাসীগণ ব্যতীত নিজেদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৬; সূরা আল মা’আ-রিজ ৭০ : ৩০)। ইবনু ’আব্বাস বলেন, তখন এই দু’ শ্রেণীর নারীগণ ব্যতীত সকল লজ্জাস্থান হারাম হয়ে গেল। (তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إِنَّمَا كَانَتِ الْمُتْعَةُ فِي أول الْإِسْلَام كَانَ الرجل يقدم الْبَلدة لَيْسَ لَهُ بِهَا مَعْرِفَةٌ فَيَتَزَوَّجُ الْمَرْأَةَ بِقَدْرِ مَا يرى أَنَّهُ يُقِيمُ فَتَحْفَظُ لَهُ مَتَاعَهُ وَتُصْلِحُ لَهُ شَيَّهُ حَتَّى إِذَا نَزَلَتِ الْآيَةُ (إِلَّا عَلَى أَزوَاجهم أَو مَا ملكت أَيْمَانهم)
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: فَكُلُّ فَرْجٍ سِوَاهُمَا فَهُوَ حرَام. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এ আয়াতে কারীমা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তাদের গুণ বর্ণনা করতে চেয়েছেন যে, নিশ্চয় তারা সকলেই স্ত্রী কিংবা দাসী ব্যতীত বহুগামিতা থেকে নিজেদের লজ্জাস্থানকে হিফাযাত করবে। আর মুত্‘আহ্ এটি কোনো বিবাহ নয়, কারণ সকলের ঐকমত্য রয়েছে যে, এতে কোনো মীরাস নেই। আবার এটি দাসত্বও নয়। বরং এটি নির্দিষ্ট দিনের জন্য মহিলার নিজের পারিশ্রমিক, সুতরাং এটি কোনো বিধানের আওতায় পড়বে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১১২২)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিয়ের প্রচার, প্রস্তাব ও শর্তাবলী প্রসঙ্গে
৩১৫৯-২০] ’আমির ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক বিবাহে করাযাহ্ ইবনু কা’ব ও আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ) সাহাবীদ্বয়ের নিকট উপস্থিত হই। উক্ত বিবাহে কিছু মেয়ে গীত গাইছে। এটা দেখে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (সম্মানিত) সাহাবীদ্বয় এবং বদর যুদ্ধের মুজাহিদগণ! আপনাদের সামনে এগুলো কি করা হচ্ছে (গীত গাইছে)? তখন তাঁরা বললেন, যদি ইচ্ছা হয় আমাদের সাথে বসে শুনতে পার, অন্যথায় চলে যাও। আমাদের জন্য বিয়েতে বিনোদন, আনন্দের (গীতের) অনুমতি দিয়েছেন। (নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى قَرَظَةَ بْنِ كَعْبٍ وَأَبِي مَسْعُودٍ الْأَنْصَارِيِّ فِي عُرْسٍ وَإِذَا جِوَارٍ يُغَنِّينَ فَقُلْتُ: أَيْ صَاحِبَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَهْلَ بَدْرٍ يُفْعَلُ هَذَا عِنْدَكُمْ؟ فَقَالَا: اجْلِسْ إِنْ شِئْتَ فَاسْمَعْ مَعَنَا وَإِنْ شِئْتَ فَاذْهَبْ فَإِنَّهُ قَدْ رَخَّصَ لَنَا فِي اللَّهْوِ عِنْدَ الْعُرْسِ. رَوَاهُ النَّسَائِيّ