পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিয়ের প্রচার, প্রস্তাব ও শর্তাবলী প্রসঙ্গে
৩১৪৯-[১০] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সালাতের তাশাহ্হুদ এবং হাজাতের (অন্যান্য কাজে) তাশাহহুদ পাঠ করা শিখিয়েছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সালাতের তাশাহহুদ হলো-
’’আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াস্সলাওয়া-তু ওয়াত্ব ত্বইয়্যিবা-তু, আস্সালা-মু ’আলায়কা আইয়ুহান্ নবীয়্যু, ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহ্। আস্সালা-মু ’আলায়না- ওয়া ’আলা- ’ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন, আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়া রসূলুহ্’’
(অর্থাৎ- সকল প্রকার মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ’ইবাদাত আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার ওপর আল্লাহর সালাম, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর সালাম বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো মা’বূদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসূল।)
আর হাজাতের তাশাহহুদ হলো এই যে,
’’ইন্নাল হামদা লিল্লা-হি ওয়া নাস্তা’ঈনুহূ ওয়া নাস্তাগফিরুহূ ওয়ানা’ঊযুবিল্লা-হি মিন্ শুরূরি আনফুসিনা- মাই ইয়াহদিহিল্লা-হু ফালা- মুযিল্লা লাহূ ওয়ামাই ইউযলিল ফালা- হা-দিয়া লাহূ ওয়া আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান্ ’আবদুহূ ওয়া রসূলুহ্’’
(অর্থাৎ- সকল প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁর নিকট ক্ষমা চাই। আমরা তাঁর নিকট প্রার্থনা করছি নিজেদের মনের কুচিন্তা হতে। আল্লাহ যাকে হিদায়াত করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ হিদায়াত করতে পারে না। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো মা’বূদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁরা বান্দা ও রসূল।)।
(রাবী ইবনু মাস্’ঊদ বলেন) অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনটি আয়াত পড়লেন- [১ম আয়াত] অর্থাৎ- ’’হে মু’মিনগণ! তোমার আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ কর না’’- (সূরা আ-লি ’ইমরান ৩ : ১০২)। [২য় আয়াত] অর্থাৎ- ’’হে মু’মিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে একে অপরের নিকট (স্বীয় অধিকার) প্রার্থনা কর এবং সতর্ক থাক আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১)। [৩য় আয়াত] অর্থাৎ- ’’হে মু’মিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল, তাহলে আল্লাহ তোমাদের কর্মকা-কে ত্রুটিমুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন। যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই লাভ করবে মহাসাফল্য’’- (সূরা আল আহযা-ব ৩৩ : ৭১)।
(আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]
আর জামি’ আত্ তিরমিযীতে আছে যে, আয়াত তিনটি সুফ্ইয়ান সাওরী বর্ণনা করেছেন।
ইবনু মাজাহ الْحَمْدَ لِلّٰهِ ’’সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর’’ বাক্যের পর বাড়িয়ে বলেছেন, نَحْمَدُه ’’আমরা তার প্রশংসা করছি’’ এবংمِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسنَا ’’নিজেদের মন্দকর্ম থেকে’’ বাক্যের পর বৃদ্ধি করেছেন وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا ’’আর আমাদের মন্দ কার্যক্রম থেকে’’।
দারিমী বৃদ্ধি করেছেন عَظِيمًا ’’বড় রকমের কৃতকার্য হয়েছে’’ বাক্যের পর ثُمَّ يَتَكَلَّمُ بِحَاجَتِه ’’অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাজাতের উল্লেখ করতেন’’। শারহুস্ সুন্নাহ্ কিতাবে ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, ’হাজাত’ তথা বিবাহ ও অন্যান্য কাজ বুঝানো হয়েছে।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: عَلَّمَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ التَّشَهُّدَ فِي الصَّلَاةِ وَالتَّشَهُّدَ فِي الْحَاجَةِ قَالَ: التَّشَهُّدُ فِي الصَّلَاةِ: «التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ» . وَالتَّشَهُّدُ فِي الْحَاجَةِ: «إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسنَا من يهد اللَّهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ» . وَيَقْرَأُ ثَلَاثَ آيَاتٍ (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسلمُونَ)
(يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تساءلون وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا)
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيما)
رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَفِي جَامِعِ التِّرْمِذِيِّ فَسَّرَ الْآيَاتِ الثَّلَاثَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَزَادَ ابْنُ مَاجَهْ بَعْدَ قَوْلِهِ: «إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ» وَبَعْدَ قَوْلِهِ: «من شرور أَنْفُسنَا وَمن سيئات أَعمالنَا» وَالدَّارِمِيُّ بَعْدَ قَوْلِهِ «عَظِيمًا» ثُمَّ يَتَكَلَّمُ بِحَاجَتِهِ وَرَوَى فِي شَرْحِ السُّنَّةِ عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ فِي خطْبَة الْحَاجة من النِّكَاح وَغَيره
ব্যাখ্যা: ইবনু মাস্‘ঊদ -এর বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল গৃহীত হয় যে, বিবাহের চুক্তির সময় খুৎবা পড়ার শারী‘আত সুন্নাত। ইমাম তিরমিযী তাঁর সুনানে বলেন, বিদ্বানগণ বলেছেন যে, খুৎবা ছাড়াও বিবাহ বৈধ। আর এটাই সুফ্ইয়ান সাওরীসহ অন্যান্য বিদ্বানদের মতো। ইসমা‘ঈল বিন ইব্রাহীম বর্ণিত হাদীস খুৎবা পড়া বৈধতার উপরে প্রমাণ করে। অতএব বিবাহের খুৎবা পড়া মুস্তাহাব। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২১১৮)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিয়ের প্রচার, প্রস্তাব ও শর্তাবলী প্রসঙ্গে
৩১৫০-[১১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে খুৎবায় তাশাহহুদ (আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন) নেই, তা কাটা হাতের ন্যায়। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُّ خُطْبَةٍ لَيْسَ فِيهَا تَشَهُّدٌ فَهِيَ كَالْيَدِ الْجَذْمَاءِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা তূরিবিশতী (রহঃ) বলেনঃ এখানে মৌলিক তাশাহ্হুদ হলো ‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লা-হ’’ আর এর দ্বারাই আল্লাহর প্রশংসা গণ্য করা হয়। ‘আল্লামা কারী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসটি আবূ দাঊদ, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আর কাটা হাত দ্বারা সে হাত উদ্দেশ্য যা দ্বারা ব্যক্তি কোনো উপকার পায় না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১১০৬)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিয়ের প্রচার, প্রস্তাব ও শর্তাবলী প্রসঙ্গে
৩১৫১-[১২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজই আল্লাহর তা’আলার প্রশংসার সাথে শুরু না হলে, তবে তা বরকতশূন্য হয়। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُّ أَمْرٍ ذِي بَالٍ لَا يُبْدَأُ فِيهِ بِالْحَمْدِ لِلَّهِ فَهُوَ أَقْطَعُ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিয়ের প্রচার, প্রস্তাব ও শর্তাবলী প্রসঙ্গে
৩১৫২-[১৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা বিবাহকার্য প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে মসজিদে সম্পন্ন কর এবং তাতে দফ বাজাও। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعْلِنُوا هَذَا النِّكَاحَ وَاجْعَلُوهُ فِي الْمَسَاجِدِ وَاضْرِبُوا عَلَيْهِ بِالدُّفُوفِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা : ফাক্বীহগণ বলেন, এখানে দফ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যাতে কোনো ঘণ্টাধ্বনি নেই। ইবনুল হুমাম (রহঃ) অনুরূপ বলেছেন। হাফিয ‘আসকালানী (রহঃ) বলেনঃ তারা (وَاضْرِبُوا) অর্থাৎ- ‘‘দফ বাজাও’’ এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছে যে, দফ বাজানো শুধু পুরুষের জন্য খাস নয় বরং নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু হাদীসটি য‘ঈফ। একাধিক বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, দফ বাজানোটা এমন মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য যাদের সাথে পুরুষের সাক্ষাৎ হবে না। অনুরূপভাবে বাসরে গান গাওয়া ও মহিলার জন্য নির্ধারিত। পুরুষের জন্য তা বৈধ নয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ১০৮৯)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিয়ের প্রচার, প্রস্তাব ও শর্তাবলী প্রসঙ্গে
৩১৫৩-[১৪] মুহাম্মাদ ইবনু হাত্বিব আল জুমাহী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হালাল ও হারাম বিয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো উচ্চৈঃস্বর ও দফ বাজানো। (আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ حَاطِبٍ الْجُمَحِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فَصَلَ مَا بَيْنَ الْحَلَالِ وَالْحَرَامِ: الصَّوْتُ وَالدُّفُّ فِي النِّكَاحِ . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: এখানে الصَّوْتُ (উচ্চৈঃস্বর) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বৈধ গান, অর্থাৎ (যে গানগুলোতে অহেতুক কথা, প্রেম বিনিময়, অশ্লীল বাক্য ও এমন কথা যাতে শির্ক রয়েছে, এমন কোনো কথা না থাকা)। কেননা বৈধ গান দফ বাজানোর মাধ্যমে বাসর উপলক্ষ্যে গাওয়া জায়িয। আর রুবায়ই‘ বিনতু মু‘আবিবয বর্ণিত হাদীস এটার উপর প্রমাণ করছে। আর এটা সহীহ হাদীস যা বুখারী বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে যে, বালিকারা দফ বেজে গান গাওয়া শুরু করল এবং বদরের যুদ্ধে আমাদের পিতৃপুরুষ যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের স্মরণ করতে লাগল।
সহীহুল বুখারীর অপর বর্ণনায় রয়েছে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এক মহিলাকে আনসারী এক পুরুষের সঙ্গে বাসরে পাঠালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ‘আয়িশাহ্! তোমাদের কাছে কি কোনো গায়িকা ছিল না? কারণ আনসারীরা তো গান খুব পছন্দ করে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১০৮৮)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিয়ের প্রচার, প্রস্তাব ও শর্তাবলী প্রসঙ্গে
৩১৫৪-[১৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার অধীনে এক আনসারী মেয়ে ছিল; যাকে আমি বিয়ে দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ’আয়িশাহ্! (বিয়েতে) তোমরা কি গীত গাইলে না? আনসারী গোত্রের লোকেরা তো গীত পছন্দ করে। (সহীহ ইবনু হিব্বান)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَتْ عِنْدِي جَارِيَةً مِنَ الْأَنْصَارِ زَوَّجْتُهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَائِشَةُ أَلَا تُغَنِّينَ؟ فَإِنَّ هَذَا الْحَيَّ مِنَ الْأَنْصَارِ يُحِبُّونَ الْغِنَاءَ» . رَوَاهُ ابْن حبَان فِي صَحِيحه
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিয়ের প্রচার, প্রস্তাব ও শর্তাবলী প্রসঙ্গে
৩১৫৫-[১৬] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আয়িশাহ্ (রাঃ) তাঁর এক আত্মীয় আনসারী নারীর বিবাহ সম্পাদন করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বাইরে থেকে) এসে বললেন, তোমরা কি মেয়েটিকে স্বামীর কাছে পাঠিয়েছ? তারা বলল, জী, হ্যাঁ। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মেয়েটির সাথে (গীত) গাইতে পারে এমন কাউকে কি পাঠিয়েছ? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আনসার গোত্রের মধ্যে গীতপ্রীতি রয়েছে, তাই তোমরা যদি তার সাথে এমন কাউকে পাঠাতে যে গাইত ’’আমরা তোমাদের নিকট এসেছি, আমরা তোমাদের কাছে এসেছি; তোমাদের কল্যাণ হোক ও আমাদের কল্যাণ হোক’’। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: أنكحت عَائِشَة ذَات قَرَابَةٍ لَهَا مِنَ الْأَنْصَارِ فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَهَدَيْتُمُ الْفَتَاةَ؟» قَالُوا: نعم قَالَ: «أرسلتم مَعهَا من تغني؟» قَالَتْ: لَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الْأَنْصَارَ قَوْمٌ فِيهِمْ غَزَلٌ فَلَوْ بَعَثْتُمْ مَعَهَا مَنْ يَقُولُ:
أَتَيْنَاكُمْ أَتَيْنَاكُمْ فحيانا وحياكم . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিয়ের প্রচার, প্রস্তাব ও শর্তাবলী প্রসঙ্গে
৩১৫৬-[১৭] সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মেয়েকে যদি তার দু’জন ওয়ালী (অভিভাবক) বিবাহ সম্পাদন করে (যা দু’জনের অজানা অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন হয়), তাহলে প্রথমজনের (বিয়ে) সঠিক হবে। অনুরূপ কোনো পণ্যদ্রব্য দু’জনের নিকট বিক্রি করলে প্রথমজনের (বিক্রি) বৈধ হবে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, দারিমী)[1]
وَعَنْ سَمُرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَيُّمَا امْرَأَةٍ زَوَّجَهَا وَلِيَّانِ فَهِيَ لِلْأَوَّلِ مِنْهُمَا وَمَنْ بَاعَ بَيْعًا مِنْ رَجُلَيْنِ فَهُوَ لِلْأَوَّلِ مِنْهُمَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা: ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন, এ হাদীসের উপরেই বিদ্বানদের ‘আমল রয়েছে। এ মর্মে তাদের মাঝে কোনো মতপার্থক্য আছে, এটা আমার জানা নেই। সুতরাং দু’জন ওয়ালী যখন আগপিছ করে এক মহিলাকে বিবাহ দিবে তখন প্রথম বিবাহ কার্যকর হবে আর দ্বিতীয়টি বাতিল হবে। আর উভয় ওয়ালী এক সঙ্গে বিবাহ দিলে উভয়টি বাতিল হয়ে যাবে। আর এটাই আস্ সাওরী, আহমাদ ও ইসহকসহ প্রমুখগণের মত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২০৮৮)