পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুফ্‘আহ্
শুফ্’আহ্ হলো ব্যক্তির মালিকানার মধ্যে সংযুক্ত একটি মালিকানার নাম। এটা মূলত ’আরবদের উক্তি-(كَانَ وِتْرًا فَشَفَعْتُه بِآخَرَ) অর্থাৎ- ’’সে বেজোড় ছিল, অতঃপর অন্যের মাধ্যমে তাকে জোড়ে পরিণত করেছি। আমি তার জোড়া নির্ধারণ করেছি।’’ এ থেকে গৃহীত। অর্থাৎ- অংশীদার হওয়ার কারণে স্থাবর সম্পত্তির বিক্রি হওয়ার সময় তা ক্রয়ের অগ্রাধিকার লাভ। শা’বী (রহঃ)-এর মতে,
مَنْ بِيعَتْ شُفْعَتُه وَهُوَ حَاضِرٌ فَلَمْ يَطْلُبْ ذٰلِكَ فَلَا شُفْعَةَ لَه
অর্থাৎ- যার শুফ্’আহ্ বিক্রি করা হবে, এমতাবস্থায় সে উপস্থিত থেকে তা দাবী না করলে তার কোনো শুফ্’আহ্ নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
২৯৬১-[১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুফ্’আহ্-এর বিষয়ে ফায়সালা করেছেন সেসব (স্থাবর) সম্পত্তিতে, যা ভাগ-বণ্টন করা হয়নি। যখন সীমানা নির্ধারিত হয় ও পথ পৃথক করা হয়, তখন শুফ্’আহ্ নেই। (বুখারী)[1]
بَابُ الشُّفْعَةِ
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَضَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالشُّفْعَةِ فِي كُلِّ مَا لَمْ يُقْسَمْ فَإِذَا وَقَعَتِ الْحُدُودُ وَصُرِفَتِ الطُّرُقُ فَلَا شُفْعَة. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (فَإِذَا وَقَعَتِ الْحُدُودُ) যখন বণ্টনের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারিত হয়। ইবনুল মালিক বলেনঃ অর্থাৎ যখন নির্দিষ্ট করা হয় এবং বণ্টনের ফলে আইল বা খুঁটি দ্বারা তা প্রকাশ করা হয়।
(وَصُرِفَتِ الطُّرُقُ) রাস্তা পৃথক করা হয়। ইবনুল মালিক বলেনঃ অর্থাৎ একত্র অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে তা পৃথকভাবে প্রকাশ পায়। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২৫৭)
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুফ্‘আহ্
২৯৬২-[২] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক এমন অংশীদারী সম্পত্তিতে শুফ্’আহ্’র অধিকার দিয়েছেন, যা ভাগ-বণ্টন করা হয়নি। যদি তা ঘর-বাড়ি বা বাগান হয়। তার পক্ষে তা বিক্রি করা জায়িয নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অংশীদারকে অবহিত করে। অংশীদার স্বীয় ইচ্ছায় গ্রহণ করবে, আর ইচ্ছা না করলে ছেড়ে দেবে। যখন এ সংবাদ না দিয়ে বিক্রি করবে, শুফ্’আহ্-ই তার হকদার হবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الشُّفْعَةِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالشُّفْعَةِ فِي كُلِّ شَرِكَةٍ لَمْ تُقْسَمْ رَبْعَةٍ أَوْ حَائِطٍ: «لَا يَحِلُّ لَهُ أَن يَبِيع حَتَّى يُؤذن شَرِيكه فَإِن شَاءَ أَخَذَ وَإِنْ شَاءَ تَرَكَ فَإِذَا بَاعَ وَلَمْ يُؤْذِنْهُ فَهُوَ أَحَقُّ بِهِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি, ‘‘যে ব্যক্তির বাড়ী-ভিটা অথবা খেজুর বৃক্ষের ক্ষেত্রে অংশীদার থাকবে ঐ ব্যক্তির জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত তা বিক্রয় করা বৈধ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত বিক্রয়ের বিষয়টি তার অংশীদারকে না জানানো হবে, অতঃপর অংশীদার যদি পছন্দ করে তাহলে তা গ্রহণ করবে আর অপছন্দ করলে তা ছেড়ে দিবে।’’
অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বণ্টন করা হয়নি এমন প্রত্যেক অংশীদার পূর্ণ জিনিসে শুফ্‘আর ফায়সালা দিয়েছেন, অর্থাৎ- বাড়ী-ভিটা অথবা বাগান অংশীদারকে না জানিয়ে বিক্রয় করা বৈধ হবে না। অতঃপর অংশীদার যদি তা গ্রহণ করতে চায় তাহলে সে গ্রহণ করবে আর যদি ছেড়ে দিতে চায়। তাহলে ছেড়ে দিবে, অতঃপর ব্যক্তি যখন তা বিক্রি করে দিবে। অংশীদারকে যদি না জানিয়ে তা বিক্রয় করা হয় তাহলে বিক্রয়ের পর অংশীদার তার বেশি হকদার।
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জমি অথবা বাড়ী-ভিটা অথবা বাগানের ক্ষেত্রে প্রতিটি অংশীদারিত্ব বস্তুতে শুফ্‘আহ্ আছে, ব্যক্তির জন্য তা বিক্রয় করা ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিক হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত বিক্রয়ের বিষয়টি তার অংশীদারের কাছে উপস্থাপন না করা হবে। অতঃপর অংশীদার তা গ্রহণ করবে অথবা বর্জন করবে, অতঃপর ব্যক্তি যদি বিক্রয়ের বিষয়ে উপস্থাপন করতে অস্বীকার করে তাহলে বিক্রয়ের পর অংশীদার তার বেশি হকদার যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে না জানানো হবে। যা বিক্রি করা হয়নি এমন ভূসম্পত্তির ক্ষেত্রে অংশীদারের জন্য শুফ্‘আহ্ প্রমাণের ব্যাপারে মুসলিমগণ একমত। বিদ্বানগণ বলেন, শুফ্‘আহ্ প্রমাণের ক্ষেত্রে কৌশল হলো অংশীদার হতে ক্ষতি দূর করা, আর শুফ্‘আকে ভূসম্পত্তির সাথে খাস করা হয়েছে, কেননা তা সর্বাধিক ক্ষতিকর শ্রেণী। তারা ঐ কথার উপরেও একমত হয়েছে যে, প্রাণী, কাপড়, পণ্য সামগ্রী ও সকল স্থানান্তরযোগ্য বস্তুর মাঝে শুফ্‘আহ্ নেই।
কাযী বলেনঃ কতিপয় ব্যক্তি ব্যতিক্রম পথ অবলম্বন করে, পণ্য সামগ্রীতেও শুফ্‘আহ্ সাব্যস্ত করেছেন। আর তা ‘আত্বা হতে বর্ণিত, প্রতিটি জিনিসে তা সাব্যস্ত হবে এমনকি কাপড়েও ইবনুল মুনযির এভাবে তার থেকে বর্ণনা করেন। আহমাদ হতে এক বর্ণনা আছে, নিশ্চয় শুফ্‘আহ্ প্রাণী এবং পৃথক ভবনে সাব্যস্ত হয়। পক্ষান্তরে বণ্টনকৃত বস্তু তাতে কি প্রতিবেশিত্বের কারণে শুফ্‘আহ্ সাব্যস্ত হবে? এতে মতানৈক্য রয়েছে। শাফি‘ঈ, মালিক, আহমাদ ও জুমহূর বিদ্বানদের মতে প্রতিবেশিত্বের কারণে শুফ্‘আহ্ সাব্যস্ত হবে না। ইবনুল মুনযির একে ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব, ‘উসমান বিন ‘আফফান, সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব, সুলায়মান বিন ইয়াসার, ‘উমার বিন ‘আব্দুল ‘আযীয, যুহরী, ইয়াহ্ইয়া আল আনসারী, আবুয্ যিনাদ, রবী‘আহ্, মালিক, আওযা‘ঈ, মুগীরাহ্ বিন ‘আবদুর রহমান, আহমাদ, ইসহক এবং আবূ সাওর-এর কাছ থেকে একে বর্ণনা করেছেন। আর আবূ হানীফাহ্ ও সাওরী বলেন, প্রতিবেশিত্বের কারণে শুফ্‘আহ্ সাব্যস্ত হবে। আর আল্লাহ সর্বাধিক ভালো জনেন।
শারহে মুসলিম-এর ভাষ্যকার বলেনঃ আমাদের সাথীবর্গ এবং অন্যান্যরা এ হাদীস দ্বারা ঐ কথার উপর প্রমাণ গ্রহণ করেছেন যে, শুফ্‘আহ্ কেবল বণ্টনের সম্ভাবনা রয়েছে এমন ভূসম্পত্তির ক্ষেত্রে সাব্যস্ত হয়, ছোট গোসলখানা, চাক্কি (যাঁতাকল) এবং অনুরূপ কিছুর বিপরীত। যা বণ্টনের সম্ভাবনা রাখে না এমন বস্তুর ক্ষেত্রে যারা শুফ্‘আর কথা বলে তারা এ হাদীসের মাধ্যমেই দলীল পেশ করে। (শারহে মুসলিম ১১/১২শ খন্ড, হাঃ ১৬০৮)
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুফ্‘আহ্
২৯৬৩-[৩] আবূ রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শুফ্’আহ্’র সর্বাধিক হকদার হলো তার নিকটতম প্রতিবেশী। (বুখারী)[1]
بَابُ الشُّفْعَةِ
وَعَنْ أَبِي رَافِعٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْجَارُ أَحَقُّ بِسَقَبِهِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (الْجَارُ أَحَقُّ بِسَقَبِه) অর্থাৎ- প্রতিবেশী তার নৈকট্যের কারণে অন্য প্রতিবেশী অপেক্ষা শুফ্‘আর বেশি হকদার।
তিরমিযীতে জাবির (রাঃ)-এর হাদীসে এসেছে, (الْجَارُ أَحَقُّ بِسَقَبِه يُنْتَظَرُ بِه إِذَا كَانَ غَائِبًا إِذَا كَانَ طَرِيقُهُمَا وَاحِدًا) অর্থাৎ- প্রতিবেশী তার নৈকট্যের কারণে অন্য প্রতিবেশী অপেক্ষা শুফ্‘আর বেশী হকদার, প্রতিবেশী যখন অনুপস্থিত থাকবে তখন বিক্রেতা তার অপেক্ষা করবে যদি তাদের উভয়ের পথ একই হয়। ইবনু বাত্ত্বাল বলেন, আবূ হানীফাহ্ এবং তার সাথীবর্গ এ হাদীসের মাধ্যমে প্রতিবেশীর জন্য শুফ্‘আহ্ প্রমাণিত হওয়ার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করেছেন। অন্যান্যগণ এর ব্যাখ্যা করেছেন যে, প্রতিবেশী দ্বারা উদ্দেশ্য হলো অংশীদার ঐ কথার উপর ভিত্তি করে যে, আবূ রাফি‘ দু’টি বাড়ীতে সা‘দ-এর অংশীদার ছিল। আর এজন্যই তিনি তাকে তার থেকে তা ক্রয়ের জন্য আহবান করেছেন।
নিশ্চয় তিনি বলেন, আর তাদের উক্তি নিঃসন্দেহে আভিধানিক অর্থে এমন না যা শরীককে প্রতিবেশী নামকরণ করার দাবী করে, সুতরাং তা প্রত্যাখ্যাত। কেননা কোনো জিনিসের নিকট হওয়া প্রতিটি জিনিসকে তার প্রতিবেশী বলা হয়, ব্যক্তি এবং তার স্ত্রীর মাঝে যে মেলামেশা রয়েছে সে কারণে ‘আরবরা ব্যক্তির স্ত্রীকে তার প্রতিবেশী বলে।
ইবনুল মুনীর এর সমালোচনা করেছেন, যে হাদীসের বাহ্যিক দিক হলো আবূ রাফি‘ সা‘দ-এর বাড়ীর বিস্তৃত অংশের না। ‘উমার বিন শুববাহ উল্লেখ করেন, সা‘দ বিদেশে দু’টি বাড়ী ক্রয় করেছিলেন, বাড়ী দু’টি সামনাসামনি ছিল উভয়ের মাঝে দশ গজ ব্যবধান ছিল, আর যে বাড়ীটি মসজিদের ডান পাশে ছিল তা ছিল আবূ রাফি‘-এর। অতঃপর তিনি তার থেকে তা ক্রয় করেছেন। অতঃপর তিনি (ইবনু বাত্ত্বল) অধ্যায়ের হাদীসটি চালিয়ে দেন। সুতরাং তার কথা দাবী করছে, নিশ্চয় সা‘দ আবূ রাফি‘ থেকে বাড়ী ক্রয় করার পূর্বে আবূ রাফি‘-এর প্রতিবেশী ছিল, অংশীদার ছিল না। কতিপয় আহনাফ বলেন, যে সকল শাফি‘ঈ মতাবলম্বীরা শব্দটির প্রকৃত অর্থকে রূপকার্থের উপর চাপিয়ে দেয়ার কথা বলে, তাদের কর্তব্য প্রতিবেশীর শুফ্‘আহ্ সম্পর্কে কথা বলা। কেননা প্রতিবেশীর নিকটবর্তী অর্থে প্রকৃত, আর অংশীদার অর্থে রূপক।
যারা প্রতিবেশীর শুফ্‘আহ্ সাব্যস্ত করেনি তারা প্রমাণ পেশ করেছে যে, যে কারণে শারীকের জন্য শুফ্‘আহ্ সাব্যস্ত হয় তা প্রতিবেশীর মধ্যে অনুপস্থিত আর তা হলো- অংশীদারের কাছে কখনো অংশীদার পৌঁছে, তখন আগত অংশীদার কর্তৃক অপর অংশীদার কষ্ট পায়, ফলে প্রয়োজন ‘‘পরস্পর বণ্টনের’’ দিকে আহবান করে, এতে ব্যক্তির মালিকত্বের কর্তৃত্বে ঘাটতির মাধ্যমে ক্ষতি সাধন হয়, অথচ বণ্টনকৃত বস্তুতে এটা পাওয়া যায় না। আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞাত। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২৫৮)
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুফ্‘আহ্
২৯৬৪-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো প্রতিবেশী যেন তার কোনো প্রতিবেশীকে দেয়ালে কড়িকাঠ গাড়তে বারণ না করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الشُّفْعَةِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَمْنَعْ جَارٌ جَارَهُ أَنْ يَغْرِزَ خَشَبَةً فِي جِدَاره»
ব্যাখ্যা: (لَا يَمْنَعْ جَارٌ جَارَه) অর্থাৎ- মানবতা ও সদারচণ স্বরূপ। (أَنْ يَغْرُزَ خَشَبَةً فِىْ جِدَارِه) অর্থাৎ- অন্যের দেয়ালে, যখন তা দেয়ালের ক্ষতিসাধন না করবে। নববী (রহঃ) বলেনঃ বিদ্বানগণ এ হাদীসের অর্থের ক্ষেত্রে মতানৈক্য করেছেন। হাদীসটি কি প্রতিবেশীকে নিজ বাড়ীর দেয়ালের উপর কাঠ বা লাকড়ী রাখার সুযোগ দেয়া সদাচরণ, নাকি আবশ্যক? এ ক্ষেত্রে ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম মালিক-এর অনুসারীদের দু’টি উক্তি রয়েছে, দু’টি উক্তির মাঝে সর্বাধিক বিশুদ্ধ হলো তা সদাচরণ স্বরূপ। ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও এ মত পোষণ করেছেন। দ্বিতীয়তঃ ওয়াজিব এ মত পোষণ করেছেন আহমাদ ও হাদীস বিশারদগণ, আর এ বর্ণনার পরে আবূ হুরায়রাহ্ -এর উক্তির কারণে এটিই প্রকাশমানঃ (مَالِي أَرَاكُمْ عَنْهَا مُعْرِضِينَ، وَاللّٰهِ لَأَرْمِيَنَّ بِهَا بَيْنَ أَكْتَافِكُمْ) অর্থাৎ- আমার কি হলো, আমি তোমাদেরকে এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখছি, আল্লাহর শপথ আমি অবশ্যই তা তোমাদের কাঁধসমূহের মাঝে নিক্ষেপ করব। আর এটা এ কারণে যে, তারা এর প্রতি ‘আমল করা হতে বিরত ছিল। আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে আছে- অতঃপর তারা তাদের মাথাসমূহ ঘুরিয়ে নিলে তিনি বলেন, আমার কি হলো আমি তোমাদেরকে দেখছি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ? অর্থাৎ- এ সুন্নাত অথবা বৈশিষ্ট্য, অথবা উপদেশ অথবা বাণীসমূহ হতে।
(لَأَرْمِيَنَّ بِهَا بَيْنَ أَكْتَافِكُمْ) এ উক্তির অর্থ হলো, এর মাধ্যমে আমি ফায়সালা করব, তা স্পষ্ট করব, এর মাধ্যমে তিরস্কার করে তোমাদেরকে দুঃখিত করব, যেমন বস্তু দ্বারা মানুষকে তার কাঁধের মাঝে আঘাত করা হয়। পূর্ববর্তীরা উত্তর দিয়েছে যে, তাদের মুখ ফিরিয়ে নেয়া মূলত এ কারণে যে, তারা তা হতে নুদুব তথা সদাচরণের অর্থ গ্রহণ করেছেন ওয়াজিবের না। আর যদি তা ওয়াজিব হত তাহলে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়ার উপর একমত হত না।
ত্বীবী বলেন, (لَأَرْمِيَنَّ بِهَا) উক্তিতে সর্বনামটি লাকড়ীর দিকে প্রত্যাবর্তন করা বৈধ হবে এবং তা হবে তাঁর দাবীর উপর তাদের অকাট্য দলীল গ্রহণ সম্পর্কে ইঙ্গিত স্বরূপ। অর্থাৎ- আমি বলছি না যে, লাকড়ী দেয়ালের উপর নিক্ষেপ করা হবে, বরং তোমাদের কাঁধসমূহের মাঝে, এটা মূলত প্রতিবেশীর অধিকারের ক্ষেত্রে দয়া ও সদাচরণ করতে এবং প্রতিবেশীর বোঝা বহন করতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াসিয়্যাত করার কারণে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৪৬৩)
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুফ্‘আহ্
২৯৬৫-[৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা কোনো রাস্তার (প্রস্থের) ব্যাপারে মতভেদ করবে, তখন তার প্রস্থ ধরবে সাত হাত। (মুসলিম)[1]
بَابُ الشُّفْعَةِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا اخْتَلَفْتُمْ فِي الطَّرِيقِ جُعِلَ عرضه سَبْعَة أَذْرع» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (إِذَا اخْتَلَفْتُمْ فِي الطَّرِيقِ فَاجْعَلُوهُ سَبْعَةَ أَذْرُعٍ) অর্থাৎ- ‘‘তোমরা যখন পথের ক্ষেত্রে মতানৈক্য করবে তখন তোমরা তাকে সাত হাতে পরিণত করবে’’ এ শব্দে বর্ণনা করেন। অনুরূপ ইবনু মাজাহতে ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস রয়েছে।
(فِي الطَّرِيقِ) অর্থাৎ মৃত রাস্তা (পরিত্যক্ত)। মুসতাম্লী তার বর্ণনাতে الْمِيتَاءَ শব্দ বৃদ্ধি করেছেন এবং এর কোনো সমর্থন নিয়ে আসা হয়নি, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনার ক্ষেত্রে তা সংরক্ষিতও না। স্বভাবত হাদীসের কতিপয় সানাদে যা বর্ণিত হয়েছে, এ বর্ণনাকে সেদিকে ইঙ্গিত করতে লেখক একে তরজমাতে উল্লেখ করেছেন। আর ওটা ‘আব্দুর রাযযাক ইবনু ‘আব্বাস হতে যা সংকলন করেছেন তার অন্তর্ভুক্ত। ইবনু ‘আব্বাস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, (الْمِيتَاءِ فَاجْعَلُوهَا سَبْعَةَ أَذْرُعٍ) অর্থাৎ- ‘‘তোমরা যখন মৃত পথের ক্ষেত্রে মতানৈক্য করবে তখন তোমরা তাকে সাত হতে পরিণত কর।’’
‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ যিয়াদাতুস্ সানাদে বর্ণনা করেন, ত্ববারী ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, (إِذَا اخْتَلَفْتُمْ فِي الطَّرِيقِ الْمِيتَاءِ فَاجْعَلُوهَا سَبْعَةَ أَذْرُعٍ) অতঃপর তিনি একে দীর্ঘ হাদীসের মাঝে উল্লেখ করেন। ইবনু ‘আদীতে আনাস-এর হাদীসে আছে, (قَضٰى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ فِي الطَّرِيقِ الْمِيتَاءِ) ‘‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ মৃত পথের ব্যাপারে ফায়সালা দিয়েছেন যেখানে প্রত্যেক স্থান হতে আসা হয়।’’ তিনটি সানাদেই সমালোচনা রয়েছে।
(بِسَبْعَةِ أَذْرُعٍ) যা প্রকাশ পাচ্ছে তা হলো- এখানে ذِرَاعُ দ্বারা আদাম সন্তানের হাত উদ্দেশ্য। সুতরাং তা মাঝারি পন্থার মাধ্যমে বিবেচনা করা হবে। একমতে বলা হয়েছে- এখানে ذِرَاعُ দ্বারা বিল্ডিংয়ের সুপরিচিত গজ উদ্দেশ্য। ত্ববারী বলেন, এর অর্থ- অংশীদারপূর্ণ পথের পরিমাণ সাত হাত করা। অতঃপর জমিনে অংশীদারদের প্রত্যেকের জন্য ঐ পরিমাণ অবশিষ্ট থাকা যার মাধ্যমে সে উপকৃত হয় এবং অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। পথকে সাত হাতে পরিণত করাতে হিকমাত হলো- প্রবেশ করা ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে বোঝাসমূহ যেন পথে প্রবেশ করতে পারে। গেইটসমূহের নিকট রাস্তা যে পরিমাণ তাদের জন্য আবশ্যক রাস্তা সে পরিমাণ তাদের জন্য প্রশস্ত হতে পারে। যে পথের কিনারাতে বেচাকেনার জন্য বসবে সে পথ যদি সাত হাত অপেক্ষা বেশী হয় তাহলে অতিরিক্ত অংশে বসা হতে নিষেধ করা যাবে না। আর যদি কম হয় তাহলে নিষেধ করা হবে যাতে অন্যের পথ সংকীর্ণ হয়ে না যায়। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৪৭৩)
কোনো ব্যক্তি যদি তার মালিকানাধীন কোনো ভূখণ্ডকে পথিকদের অবলম্বনের পথ হিসেবে নির্ধারণ করে তাহলে সে পথের পরিমাণ হবে তার ইচ্ছামাফিক এবং উত্তম হলো রাস্তা প্রশস্ত হওয়া। আর রাস্তাটি যদি কোনো সম্প্রদায়ের ভূমিতে হয় এবং তারা তা শস্য ফলানোর উপযুক্ত করার ইচ্ছা করে, অতঃপর তারা কোনো পথের পরিমাণের (প্রশস্ততার ক্ষেত্রে) উপর ঐকমত্য হলে সেটাই ধর্তব্য। পক্ষান্তরে তার পরিমাণের ক্ষেত্রে মতানৈক্য করলে তা হবে সাত হাত। এটাই হাদীসের উদ্দেশ্য। আর আমরা যখন কোনো চলার পথকে সাত হাত হতে বেশী পাবো, তাহলে কারো জন্য সে পথের কোনো অংশের উপর কর্তৃত্ব করা বৈধ হবে না, যদিও তা পরিমাণে কম হয় তবে তার জন্য তার আশেপাশের জমি আবাদ করার অধিকার রয়েছে। সে তাকে এমনভাবে আবাদ করার ক্ষমতা রাখবে যা পথিকদের ক্ষতিসাধন করবে না। (শারহে মুসলিম ১১/১২শ খন্ড, হাঃ ১৬১৩)