পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুফ্‘আহ্
২৯৬৬-[৬] সা’ঈদ ইবনু হুরায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে যখন কোনো ব্যক্তি বাড়ি অথবা জমিন বিক্রি করবে, তার কাজে বরকত না হওয়ারই সে উপযুক্ত। তবে সে যদি তা অনুরূপ কাজে লাগায়। (ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]
عَن سعيد بن حُرَيْث قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ بَاعَ مِنْكُمْ دَارًا أَوْ عَقَارًا قَمِنٌ أَنْ لَا يُبَارَكُ لَهُ إِلَّا أَنْ يَجْعَلَهُ فِي مِثْلِهِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ والدارمي
ব্যাখ্যা: (أَوْ عَقَارًا) আর তা হলো ভূসম্পত্তি অথবা প্রত্যেক এমন সম্পদ যার মূল (বা উত্তম) আছে, অর্থাৎ- বাড়ী অথবা ভূসম্পত্তি এমনটি ‘মুগরিব’ গ্রন্থে আছে। (أَنْ لَا يُبَارَكُ لَه) অর্থাৎ- প্রয়োজন ছাড়াই তা বিক্রি করলে বিক্রয়কারীকে তার বিক্রয় করা বস্তুর মূল্যে বরকত দেয়া হবে না।
(إِلَّا أَنْ يَجْعَلَه) অর্থাৎ- তবে বিক্রয় করা বস্তুর মূল্যকে যদি ঐ রকম কাজে, তথা বাড়ী ও ভূসম্পত্তির কাজে ব্যবহার করা হয় তাহলে আলাদা কথা। মুযহির বলেনঃ বাড়ী এবং জমিসমূহ বিক্রয় করা এবং সেগুলোর মূল্য স্থানান্তরযোগ্য বিষয়ের জন্য ব্যয় করা মুস্তাহাব নয়। কেননা এগুলো অনেক উপকারী, বিপদগ্রস্ত কম হয়, চোর একে চুরি করে না, এর সাথে কোনো আক্রমণ সম্পর্কিত হয় না, যা স্থানান্তরযোগ্য বস্তুসমূহের বিপরীত। অতএব সর্বোত্তম হলো তা বিক্রয় না করা। আর যদি তা বিক্রয় করে তবে সর্বোত্তম হলো তার মূল্য জমিন ক্রয় অথবা ঘর-বাড়ী নির্মাণের জন্য ব্যয় করা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুফ্‘আহ্
২৯৬৭-[৭] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিবেশী তার শুফ্’আর সর্বাধিক হকদার। প্রতিবেশী অনুপস্থিত থাকলে তার জন্য এ ব্যাপারে অপেক্ষা করা হবে, যদি উভয়ের পথ এক হয়। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْجَارُ أَحَقُّ بِشُفْعَتِهِ يُنْتَظَرُ لَهَا وَإِنْ كَانَ غَائِبًا إِذَا كَانَ طَرِيقُهُمَا وَاحِدًا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ. والدارمي
ব্যাখ্যা: (الْجَارُ أَحَقُّ بِشُفْعَتِه) অর্থাৎ- তার প্রতিবেশীর শুফ্‘আহ্ সম্পর্কে। (يُنْتَظَرُ بِه) ইবনু রিসলান বলেন, এ অংশটুকু সম্ভাবনা রাখছে একজন শিশু যতক্ষণ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার জন্য শুফ্‘আর বিষয়ে অপেক্ষা করতে হবে। আর ত্ববারানী তাঁর মু‘জামুস্ সগীর ও আওসাতে জাবির হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণনা করেন, (الصَّبِيُّ عَلٰى شُفْعَتِه حَتّٰى يُدْرِكَ فَإِذَا أَدْرَكَ فَإِنْ شَاءَ أَخَذَ وَإِنْ شَاءَ تَرَكَ) ‘‘শিশু যতক্ষণ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে শুফ্‘আর উপরে থাকবে। অতঃপর যখন প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখন ইচ্ছা করলে শুফ্‘আহ্ গ্রহণ করবে আর ইচ্ছা করলে তা বর্জন করবে।’’ দুর্বল; এর সানাদে ‘আবদুল্লাহ বিন বুযায়গ আছে, নায়ল গ্রন্থে এভাবে আছে।
(إِذَا كَانَ طَرِيقُهُمَا وَاحِدًا) অর্থাৎ- দু’ প্রতিবেশী অথবা দু’ বাড়ীর রাস্তা যদি এক হয়। নায়ল গ্রন্থকার বলেন, শুধু প্রতিবেশিত্বের কারণে শুফ্‘আহ্ প্রমাণিত হয় না। বরং তার সাথে পথের সংযুক্তি আবশ্যক। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩৬৯; ‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩০৫৩)
(وَإِنْ كَانَ غَائِبًا) এতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ আছে যে, অনুপস্থিত ব্যক্তির শুফ্‘আহ্ বাতিল হয় না, যদিও উপস্থিত হতে বিলম্ব হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই বলা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুফ্‘আহ্
২৯৬৮-[৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শরীক হলো শাফী’, আর প্রত্যেক [স্থাবর] জিনিসেই শুফ্’আহ্ রয়েছে। (তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الشَّرِيكُ شَفِيعٌ وَالشُّفْعَةُ فِي كل شَيْء» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ قَالَ:
ব্যাখ্যা: (وَالشُّفْعَةُ فِىْ كُلِّ شَيْءٍ) যা স্থানান্তরযোগ্য অথবা স্থানান্তরযোগ্য নয় যারা এমন সকল বস্তুর ক্ষেত্রে, শুফ্‘আহ্ রয়েছে বলে উক্তি করেন তারা এ হাদীসকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, কিন্তু হাদীসটি মুরসাল হওয়ার কারণে ত্রুটিযুক্ত।
হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে বলেনঃ বায়হাক্বী ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে মারফূ‘ সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেন, (الشُّفْعَةُ فِىْ كُلِّ شَيْءٍ) ‘‘প্রত্যেক বস্তুতে শুফ্‘আহ্ আছে।’’ এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। তবে মুরসাল হওয়ার কারণে তা ত্রুটিযুক্ত। ত্বহাবী জাবির-এর হাদীস হতে এমন এক সানাদে এর শাহিদ বা সমর্থন বর্ণনা করেছেন। যার বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে (لا بأس) বলা হয়েছে। (لا بأس) বলতে এমন বর্ণনাকারী যাদের হাদীস দলীলযোগ্য নয়, তবে পরীক্ষা চালানোর জন্য লেখা যাবে।
অধিকাংশ বিদ্বানগণ বলেন, শুফ্‘আহ্ কেবল ঘর-বাড়ী ও জমিতে হয়ে থাকে। তারা প্রত্যেক বস্তুতে শুফ্‘আর মতামত ব্যক্ত করেননি। তারা জাবির-এর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন, (قَضٰى رَسُولُ اللّٰهِ ﷺ بِالشُّفْعَةِ فِي كُلِّ شَرِكَةٍ لَمْ تُقْسَمْ رَبْعَةٍ أَوْ حَائِطٍ) অর্থাৎ- বণ্টন করা হয়নি এমন প্রত্যেক অংশীদারপূর্ণ বিষয়ে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুফ্‘আর ফায়সালা দিয়েছেন তথা বাড়ী-ভিটা অথবা বাগানের ক্ষেত্রে। হাদীসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন। কারী বলেন, এ হাদীসটিতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ আছে যে, যা কিছু স্থানান্তরযোগ্য নয় এমন ক্ষেত্র ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে শুফ্‘আহ্ প্রমাণিত হয় না। যেমন- ঘর-বাড়ী, জমি-জমা, বাগ-বাগিচা। যা স্থানান্তর করা যায় তাতে শুফ্‘আহ্ নেই, যেমন পণ্য-সামগ্রী ও প্রাণীসমূহ। এটা সাধারণ বিদ্বানদের উক্তি। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩৭১)
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুফ্‘আহ্
২৯৬৯-[৯] তিনি [ইমাম তিরমিযী (রহঃ)] বলেন, হাদীসটি ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত হয়েছে, আর এটাই অধিক বিশুদ্ধ।[1]
وَقَدْ رُوِيَ عَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُرْسَلًا وَهُوَ أصح
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুফ্‘আহ্
২৯৭০-[১০] ’আব্দুল্লাহ ইবনু হুবায়শ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে বরই গাছ কেটেছে, তাকে আল্লাহ মাথা নিচু করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن عبد الله بن جحش قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَطَعَ سِدْرَةً صَوَّبَ اللَّهُ رَأْسَهُ فِي النَّارِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَقَالَ: هَذَا الْحَدِيثُ مُخْتَصَرٌ يَعْنِي: مَنْ قَطَعَ سِدْرَةً فِي فَلَاةٍ يَسْتَظِلُّ بِهَا ابْنُ السَّبِيلِ وَالْبَهَائِمُ غَشْمًا وَظُلْمًا بِغَيْرِ حَقٍّ يَكُونُ لَهُ فِيهَا صَوَّبَ الله رَأسه فِي النَّار
ব্যাখ্যা: (مَنْ قَطَعَ سِدْرَةً) অর্থাৎ- উদ্ভিদ বিশেষ। ত্ববারানীর বর্ণনাতে একটু বেশী এসেছে, (مِنْ سِدْرِ الْحَرَمِ)। ‘‘হারামের বরই গাছ’’ আর এ বর্ণনাটির উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে দিচ্ছে, জটিলতা দূর করছে। এভাবে শারহুল জামি‘উস্ সগীরে আছে, (سُئِلَ أَبُو دَاودَ... إِلَخْ) আবূ দাঊদকে প্রশ্ন করা হলো..... শেষ পর্যন্ত। আর আবূ দাঊদ যার মাধ্যমে উত্তর দিয়েছে তাও আছে এবং বিদ্বানগণ ঐ ব্যাপারে তাকে সমর্থন করেছেন। তার বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা আবশ্যক।
নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেন, একমতে বলা হয়েছে- এর দ্বারা তিনি মক্কার বরই বৃক্ষ উদ্দেশ্য করেছেন, কেননা তা হারাম এলাকা। একমতে বলা হয়েছে- মদীনার বরই বৃক্ষ, তা কর্তন করতে নিষেধ করা হয়েছে যাতে তা (গাছ) সেদিকে হিজরতকারীদের জন্য ছায়াতে পরিণত হতে পারে। আরও একমতে বলা হয়েছে, এ দ্বারা ঐ বরই বৃক্ষ উদ্দেশ্য যা মরুভূমিতে হয়ে থাকে, আর তাতে পথিক এবং প্রাণীসমূহ ছায়া গ্রহণ করে থাকে। অথবা যা মানুষের মালিকানাধীন থাকে, অতঃপর অত্যাচারী তার ওপর অত্যাচার চালিয়ে অন্যায়ভাবে তা কর্তন করে। এ সত্ত্বেও হাদীসটি মুযতরাবুর্ রিওয়ায়াহ্। কেননা অধিকাংশ বর্ণনাই ‘উরওয়াহ্ বিন যুবায়র হতে বর্ণনা করা হয়, আর তিনি বরই বৃক্ষ কাটতেন এবং তা দ্বারা দরজা তৈরি করতেন।
হিশাম বলেনঃ এগুলো বরই বৃক্ষের দরজা, আমার পিতা কেটেছেন এবং তা কাটা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে বিদ্বানগণ একমত।
(صَوَّبَ اللّٰهُ) মাথা ধরে নিক্ষেপ করবেন জাহান্নামে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫২৩০)