পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুফ্‘আহ্
২৯৬২-[২] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক এমন অংশীদারী সম্পত্তিতে শুফ্’আহ্’র অধিকার দিয়েছেন, যা ভাগ-বণ্টন করা হয়নি। যদি তা ঘর-বাড়ি বা বাগান হয়। তার পক্ষে তা বিক্রি করা জায়িয নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অংশীদারকে অবহিত করে। অংশীদার স্বীয় ইচ্ছায় গ্রহণ করবে, আর ইচ্ছা না করলে ছেড়ে দেবে। যখন এ সংবাদ না দিয়ে বিক্রি করবে, শুফ্’আহ্-ই তার হকদার হবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الشُّفْعَةِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالشُّفْعَةِ فِي كُلِّ شَرِكَةٍ لَمْ تُقْسَمْ رَبْعَةٍ أَوْ حَائِطٍ: «لَا يَحِلُّ لَهُ أَن يَبِيع حَتَّى يُؤذن شَرِيكه فَإِن شَاءَ أَخَذَ وَإِنْ شَاءَ تَرَكَ فَإِذَا بَاعَ وَلَمْ يُؤْذِنْهُ فَهُوَ أَحَقُّ بِهِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি, ‘‘যে ব্যক্তির বাড়ী-ভিটা অথবা খেজুর বৃক্ষের ক্ষেত্রে অংশীদার থাকবে ঐ ব্যক্তির জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত তা বিক্রয় করা বৈধ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত বিক্রয়ের বিষয়টি তার অংশীদারকে না জানানো হবে, অতঃপর অংশীদার যদি পছন্দ করে তাহলে তা গ্রহণ করবে আর অপছন্দ করলে তা ছেড়ে দিবে।’’
অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বণ্টন করা হয়নি এমন প্রত্যেক অংশীদার পূর্ণ জিনিসে শুফ্‘আর ফায়সালা দিয়েছেন, অর্থাৎ- বাড়ী-ভিটা অথবা বাগান অংশীদারকে না জানিয়ে বিক্রয় করা বৈধ হবে না। অতঃপর অংশীদার যদি তা গ্রহণ করতে চায় তাহলে সে গ্রহণ করবে আর যদি ছেড়ে দিতে চায়। তাহলে ছেড়ে দিবে, অতঃপর ব্যক্তি যখন তা বিক্রি করে দিবে। অংশীদারকে যদি না জানিয়ে তা বিক্রয় করা হয় তাহলে বিক্রয়ের পর অংশীদার তার বেশি হকদার।
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জমি অথবা বাড়ী-ভিটা অথবা বাগানের ক্ষেত্রে প্রতিটি অংশীদারিত্ব বস্তুতে শুফ্‘আহ্ আছে, ব্যক্তির জন্য তা বিক্রয় করা ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিক হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত বিক্রয়ের বিষয়টি তার অংশীদারের কাছে উপস্থাপন না করা হবে। অতঃপর অংশীদার তা গ্রহণ করবে অথবা বর্জন করবে, অতঃপর ব্যক্তি যদি বিক্রয়ের বিষয়ে উপস্থাপন করতে অস্বীকার করে তাহলে বিক্রয়ের পর অংশীদার তার বেশি হকদার যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে না জানানো হবে। যা বিক্রি করা হয়নি এমন ভূসম্পত্তির ক্ষেত্রে অংশীদারের জন্য শুফ্‘আহ্ প্রমাণের ব্যাপারে মুসলিমগণ একমত। বিদ্বানগণ বলেন, শুফ্‘আহ্ প্রমাণের ক্ষেত্রে কৌশল হলো অংশীদার হতে ক্ষতি দূর করা, আর শুফ্‘আকে ভূসম্পত্তির সাথে খাস করা হয়েছে, কেননা তা সর্বাধিক ক্ষতিকর শ্রেণী। তারা ঐ কথার উপরেও একমত হয়েছে যে, প্রাণী, কাপড়, পণ্য সামগ্রী ও সকল স্থানান্তরযোগ্য বস্তুর মাঝে শুফ্‘আহ্ নেই।
কাযী বলেনঃ কতিপয় ব্যক্তি ব্যতিক্রম পথ অবলম্বন করে, পণ্য সামগ্রীতেও শুফ্‘আহ্ সাব্যস্ত করেছেন। আর তা ‘আত্বা হতে বর্ণিত, প্রতিটি জিনিসে তা সাব্যস্ত হবে এমনকি কাপড়েও ইবনুল মুনযির এভাবে তার থেকে বর্ণনা করেন। আহমাদ হতে এক বর্ণনা আছে, নিশ্চয় শুফ্‘আহ্ প্রাণী এবং পৃথক ভবনে সাব্যস্ত হয়। পক্ষান্তরে বণ্টনকৃত বস্তু তাতে কি প্রতিবেশিত্বের কারণে শুফ্‘আহ্ সাব্যস্ত হবে? এতে মতানৈক্য রয়েছে। শাফি‘ঈ, মালিক, আহমাদ ও জুমহূর বিদ্বানদের মতে প্রতিবেশিত্বের কারণে শুফ্‘আহ্ সাব্যস্ত হবে না। ইবনুল মুনযির একে ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব, ‘উসমান বিন ‘আফফান, সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব, সুলায়মান বিন ইয়াসার, ‘উমার বিন ‘আব্দুল ‘আযীয, যুহরী, ইয়াহ্ইয়া আল আনসারী, আবুয্ যিনাদ, রবী‘আহ্, মালিক, আওযা‘ঈ, মুগীরাহ্ বিন ‘আবদুর রহমান, আহমাদ, ইসহক এবং আবূ সাওর-এর কাছ থেকে একে বর্ণনা করেছেন। আর আবূ হানীফাহ্ ও সাওরী বলেন, প্রতিবেশিত্বের কারণে শুফ্‘আহ্ সাব্যস্ত হবে। আর আল্লাহ সর্বাধিক ভালো জনেন।
শারহে মুসলিম-এর ভাষ্যকার বলেনঃ আমাদের সাথীবর্গ এবং অন্যান্যরা এ হাদীস দ্বারা ঐ কথার উপর প্রমাণ গ্রহণ করেছেন যে, শুফ্‘আহ্ কেবল বণ্টনের সম্ভাবনা রয়েছে এমন ভূসম্পত্তির ক্ষেত্রে সাব্যস্ত হয়, ছোট গোসলখানা, চাক্কি (যাঁতাকল) এবং অনুরূপ কিছুর বিপরীত। যা বণ্টনের সম্ভাবনা রাখে না এমন বস্তুর ক্ষেত্রে যারা শুফ্‘আর কথা বলে তারা এ হাদীসের মাধ্যমেই দলীল পেশ করে। (শারহে মুসলিম ১১/১২শ খন্ড, হাঃ ১৬০৮)