পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অংশীদারিত্ব ও ওয়াকালাহ্ (দায়িত্ব প্রদান)
২৯৩৬-[৭] সুহায়ব আর্ রূমী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন প্রকার বিষয়ে বরকত রয়েছে- অঙ্গীকারের উপর বিক্রি করা (নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত), ভাগে বা শারীকে ব্যবসা-বাণিজ্য করা এবং ঘরের কাজে গমের সাথে যব মেশানো, বিক্রির উদ্দেশে নয়। (ইবনু মাজাহ)[1]
عَن صُهَيْبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلَاثٌ فِيهِنَّ الْبَرَكَةُ: الْبَيْعُ إِلَى أَجَلٍ والمقارضة واخلاط الْبُرِّ بِالشَّعِيرِ لِلْبَيْتِ لَا لِلْبَيْعِ . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: (ثَلَاثٌ) থেকে উদ্দেশ্য হলো তিনটি বৈশিষ্ট্য, (فِيهِنَّ الْبَرَكَةُ) তাতে বরকত আছে, অর্থাৎ তাতে অনেক কল্যাণ আছে,
(الْبَيْعُ إِلٰى أَجَلٍ) অর্থাৎ- মূল্যের ক্ষেত্রে ক্রেতা ব্যক্তিকে অবকাশ দেয়া যার ফলে অফুরন্ত সাওয়াব ও সুন্দর গুণকীর্তন ধার্য করা হয়।
(الْمُقَارَضَةُ) লাভ-ক্ষতির অংশীদারিত্বভিত্তিক যৌথ ব্যবসা। ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ অন্যকে দেয়ার জন্য ব্যক্তি নিজ সম্পদ হতে কিছু আলাদা করা, যাতে সে ব্যক্তি ঐ সম্পদ কাজে খাটিয়ে লাভ করতে পারে এবং লভ্যাংশ উভয়ে বণ্টন করে নিতে পারে। এতে অল্পতুষ্টি ও পণ্য বৃদ্ধির প্রতি লোভ না করার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে।
(اِخْلَاطُ الْبُرِّ بِالشَّعِيرِ) অর্থাৎ- ‘‘জীবিকা পূর্ণতার উদ্দেশে যবের সাথে গম মিশ্রিত করা।’’ যা আল্লাহ তা‘আলার বাণী থেকে প্রমাণিত। إِذَا أَنْفَقُوْا لَمْ يُسْرِفُوْا وَلَمْ يَقْتُرُوْا وَكَانَ بَيْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا ‘‘আর যারা যখন খরচ করে তখন সীমালঙ্ঘন করে না, কার্পণ্য করে না এবং এর মাঝেই স্থির।’’ এ বাণী হতে গৃহীত।
(সূরা আল ফুরকান ২৫ : ৬৭)
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তিনটি বৈশিষ্ট্যের মাঝে নিজ অধিকারে ছাড় দেয়ার প্রমাণ রয়েছে। তিনটি বৈশিষ্ট্য হতে প্রথম দু’টির উপকারিতা অন্যের দিকে বর্তায়, আর তৃতীয়টিতে নিজের দিকে। হাদীসে (لِلْبَيْتِ لَا لِلْبَيْعِ) বলার কারণ ব্যক্তির প্রবৃত্তি দমন করা। আর বিক্রয়ের জন্য মিশ্রিত করার অনুমতি না দেয়ার কারণ এতে মুসলিমদের এক ধরনের ধোঁকায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অংশীদারিত্ব ও ওয়াকালাহ্ (দায়িত্ব প্রদান)
২৯৩৭-[৮] হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি কুরবানীর পশু ক্রয়ের জন্য একটি দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিয়ে বাজারে পাঠালেন। তিনি এক দীনারে একটি দুম্বা ক্রয় করলেন এবং তা দুই দীনারে বিক্রি করলেন। অতঃপর তিনি এক দীনার দিয়ে একটি কুরবানীর পশু ক্রয় করলেন। অতঃপর পশু ও অতিরিক্ত দীনার এনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা (অতিরিক্ত দীনার) দান করে দিলেন এবং তার জন্য দু’আ করলেন যেন তার ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকত হয়। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن حَكِيم بن حزَام أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ مَعَهُ بِدِينَارٍ لِيَشْتَرِيَ لَهُ بِهِ أُضْحِيَّةً فَاشْتَرَى كَبْشًا بِدِينَارٍ وَبَاعَهُ بِدِينَارَيْنِ فَرَجَعَ فَاشْتَرَى أُضْحِيَّةً بِدِينَارٍ فَجَاءَ بِهَا وَبِالدِّينَارِ الَّذِي اسْتَفْضَلَ من الْأُخْرَى فَتصدق رَسُول الله صلى بِالدِّينَارِ فَدَعَا لَهُ أَنْ يُبَارَكَ لَهُ فِي تِجَارَته. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (فَتَصَدَّقَ بِه) অর্থাৎ দীনারটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দান করলেন। এর মাধ্যমে বিদ্বানদের একটি দল এ অংশটিকে মূলনীতি নির্ধারণ করে বলেছেন, যার কাছে সন্দেহের পন্থায় সম্পদ পৌঁছবে এবং তার হকদার কে তা জানবে না, এমতাবস্থায় সে তা দান করে দিবে। এখানে সন্দেহের দিক হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর প্রাণী বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘উরওয়াকে অনুমতি দেননি এবং হাকীম বিন হিযামকেও না। এমতাবস্থায় তা দান করার সম্ভাবনা রাখছে, কেননা সে অর্থ তিনি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে কুরবানীর প্রাণী ক্রয়ের জন্য বের করেছেন। সুতরাং তিনি তার মূল্য খেতে অপছন্দ করেছেন। এ উক্তিটি ‘‘নায়নুল আওত্বার’’-এ ব্যক্ত করেছেন।’ (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৩৮৪; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, ১২৫৭)
‘আওনুল মা‘বূদে অবশিষ্ট আলোচনাতে আছে, খত্ত্বাবী বলেনঃ এ হাদীসটি ঐ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত আসহাবুর্ রায় যার দ্বারা দলীল গ্রহণ করে থাকে, কেননা তারা (আসহাবুর্ রায়) ‘আমর কর্তৃক যায়দ-এর মাল বিক্রয় বৈধ মনে করে। যায়দ কর্তৃক এর অনুমতি দেয়া ছাড়াই অথবা ‘আমর-এর কাছে দায়িত্ব অর্পণ ছাড়াই। অথচ বিক্রয়কে মালিকের অনুমতির উপর ঝুলিয়ে রাখা হয়, অতঃপর মালিক যদি অনুমতি দেয় তাহলে তা বৈধ হয় তবে তারা মালিকরে অনুমতি ছাড়া মালিকের জন্য ক্রয় করা বৈধ মনে করে না। আর মালিক বিন আনাস ক্রয়-বিক্রয় উভয়টা বৈধ বলেছেন। শাফি‘ঈ এর কোনটিকেই বৈধ মনে করেন না, কেননা তা ধোঁকা। আর তিনি জানেন না, মালিক ঐ ক্রয়-বিক্রয় অনুমতি দিবেন কি দিবেন না? অনুরূপভাবে তিনি কণের সন্তুষ্টি অথবা ওয়ালীর অনুমতির উপর ঝুলে থাকা বিবাহকে বৈধ মনে করেন না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৩৮৪)