পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ
২৯৪২-[৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে সূর্যগ্রহণ হলো, যেদিন তাঁর পুত্র ইব্রাহীম ইন্তেকাল করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদেরকে নিয়ে ছয় রুকূ’ ও চার সিজদা দিয়ে দুই রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত শেষ করলেন, আর সূর্য তার পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল। এমতাবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদেরকে যেসব বিষয়ের ওয়া’দা দেয়া হয়, আমি আমার এই সালাতে তা প্রত্যক্ষ করেছি। এমন সময় আমার সামনে জাহান্নামকে আনা হয়েছিল। আর এটা তখনই হয়েছিল যখন তোমরা আমাকে দেখছিলে, তখন আগুনের ফুল্কি পৌঁছার ভয়ে আমি পিছনে হটেছিলাম। এমনকি বাঁকা মাথা লাঠিধারী [’আমর ইবনু লুহায়’আহ্]-কেও দেখেছি, সে তাতে আপন নাড়িভূঁড়ি টানা-হিঁচড়ে করছিল, সে বাঁকা মাথা লাঠি দিয়ে হাজীদের জিনিস চুরি করতো।
যদি লোকেরা টের পেত, তখন বলে উঠতো, আমার লাঠির মাথায় আটকে গেছে। আর যদি টের না পেত তবে তা নিয়ে যেত। এমনকি আমি জাহান্নামে বিড়ালধারীকেও দেখেছি, যে সেটি বেঁধে রেখেছিল। অথচ তাকে খাদ্য দিত না, আর ছেড়েও দিত না, যাতে তা মাটির জীব ধরে খেতে পারে। পরিশেষে তা ক্ষুধায় কাতর হয়ে মারা গেল। অতঃপর আমার কাছে জান্নাত আনা হলো, আর তা ঐ সময় হয়েছিল যখন তোমরা দেখলে আমি সামনে এগিয়ে গেলাম, এমনকি আমি আমার এ অবস্থানে দাঁড়ালাম। অবশ্যই তখন আমি এই ইচ্ছায় হাত বাড়িয়ে ছিলাম যে, আমি তার ফল নেই, যাতে তোমরা তা দেখতে পাও। অতঃপর আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠল যে, আমি যেন তা থেকে বিরত থাকি। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْغَصْبِ وَالْعَارِيَةِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ مَاتَ إِبْرَاهِيمُ بْنُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى بِالنَّاسِ سِتَّ رَكَعَاتٍ بِأَرْبَعِ سَجَدَاتٍ فَانْصَرَفَ وَقَدْ آضَتِ الشَّمْسُ وَقَالَ: مَا مِنْ شَيْءٍ تُوعَدُونَهُ إِلَّا قَدْ رَأَيْتُهُ فِي صَلَاتِي هَذِهِ لَقَدْ جِيءَ بِالنَّارِ وَذَلِكَ حِينَ رَأَيْتُمُونِي تَأَخَّرْتُ مَخَافَةَ أَنْ يُصِيبَنِي مِنْ لَفْحِهَا وَحَتَّى رَأَيْتُ فِيهَا صَاحِبَ الْمِحْجَنِ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِي النَّارِ وَكَانَ يسرق الْحَاج بمحجته فَإِن فطن لَهُ قَالَ: إِنَّمَا تعلق بمحجتي وَإِنْ غُفِلَ عَنْهُ ذَهَبَ بِهِ وَحَتَّى رَأَيْتُ فِيهَا صَاحِبَةَ الْهِرَّةِ الَّتِي رَبَطَتْهَا فَلَمْ تُطْعِمْهَا وَلَمْ تَدَعْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ حَتَّى مَاتَتْ جُوعًا ثُمَّ جِيءَ بِالْجَنَّةِ وَذَلِكَ حِينَ رَأَيْتُمُونِي تَقَدَّمْتُ حَتَّى قُمْتُ فِي مَقَامِي وَلَقَدْ مَدَدْتُ يَدِي وَأَنَا أُرِيدُ أَنْ أَتَنَاوَلَ مِنْ ثَمَرَتِهَا لِتَنْظُرُوا إِلَيْهِ ثُمَّ بَدَا لِي أَنْ لَا أفعل . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (بَدَا لِىْ أَنْ لَا أَفْعَلَ) ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ সম্ভবত জান্নাতের ফল তাদের কাছে প্রকাশ না পাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক মনে করা যাতে স্থির ঈমান অস্থিরতার দিকে পরিবর্তিত না হয় অথবা তিনি যদি তাদেরকে জান্নাতের ফল দেখান, তাহলে তাদেরকে জাহান্নামে পোড়ানো দেখানোও আবশ্যক হয়ে যেত। আর তখন আশার উপর ভয় প্রাধান্য পেত, ফলে তাদের জীবন পদ্ধতির বিষয়াবলী ধ্বংস হয়ে যেত। এজন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا وَلَضَحِكْتُمْ قَلِيلًا) অর্থাৎ- ‘‘আমি যা জানি তোমারা যদি তা জানতে অবশ্যই তোমরা বেশি কাঁদতে এবং অল্প হাসতে।’’
নববী (রহঃ) বলেনঃ বিদ্বানগণ বলেন, সম্ভবত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাত, জাহান্নাম স্বচক্ষক্ষ দেখেছেন, আল্লাহ তা প্রকাশ করেছেন এবং নাবীর মাঝে ও এদের মাঝ থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়েছেন যেভাবে মসজিদে আকসা এবং তাঁর মাঝের পর্দা সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। আর এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, এ দর্শন ছিল ‘ইলমী দর্শন। অর্থাৎ ইতিপূর্বে তিনি যা জানতে পারেননি ঐ সময় ওয়াহীর মাধ্যমে তাঁকে তা বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে। অতঃপর এ থেকে তাঁর এমন ভয়-ভীতি অর্জন হয়েছে ইতোপূর্বে যা অর্জন হয়নি, প্রথম ব্যাখ্যাটি সর্বোত্তম এবং হাদীসের শব্দসমূহের সাথে সর্বাধিক সাদৃশ্যময়, যাতে আছে স্বচক্ষক্ষ দেখার উপর প্রমাণ বহনকারী বিষয়সমূহ আর এটা তার পেছানোর কারণে যাতে জ্বলন্ত আগুন তাঁর কাছে পৌঁছতে না পারে এবং আঙ্গুরের থোকা ছিঁড়ে আনতে আগানোর কারণে।
অত্র হাদীসের শিক্ষাঃ
(১) জান্নাত, জাহান্নাম সৃষ্ট, উপস্থিত এবং জান্নাতের ফল দুনিয়ার ফলের মতো দেখতে। আর এটা আহলুস্ সুন্নাহর মত,
(২) ধ্বংস ও শাস্তির স্থান থেকে পেছানো সুন্নাত,
(৩) অল্পকাজ সালাতকে বাতিল করে না,
(৪) কোনো কোনো মানুষকে বর্তমানে প্রকৃত জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হচ্ছে, বিড়ালটিকে বাঁধার কারণে ঐ মহিলাটিকে জাহান্নামে শাস্তি দেয়াতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, মহিলার কাজটি কবীরা গুনাহ ছিল। কেননা, বিড়ালকে বাধা এবং বিড়ালটির মৃত্যু পর্যন্ত মহিলার ঐ কাজে অটল থাকা সগীরাহ্ গুনাহের উপর স্থায়ী হওয়া, আর সগীরাহ্ গুনাহের উপর স্থায়ী হওয়া সগীরাহ্ গুনাহকে কবীরা গুনাহে পরিণত করে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)