পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেনে সহনশীলতা
২৭৯৬-[৭] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সত্যবাদী, আমানতদার ব্যবসায়ী (কিয়ামতের দিন) নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের দলে থাকবেন। (তিরমিযী, দারাকুত্বনী)[1]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الْأَمِينُ معَ النبِّيِينَ والصِّدِّيقينَ والشهداءِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالدَّارَقُطْنِيّ.
ব্যাখ্যা: (التَّاجِرُ الصَّدُوْقُ الْأَمِيْنُ) ‘‘সত্যনিষ্ঠ ও আমানতদার ব্যবসায়ী’’ অর্থাৎ যে ব্যবসায়ী সর্বদা সত্য বলে মিথ্যার আশ্রয় নেয় না, সেই সাথে আমানতদারিতা রক্ষা করে, খিয়ানাত করে না; সে ব্যবসায়ী নাবী, সত্যবাদী ও শহীদগণের দলভুক্ত হবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেনে সহনশীলতা
২৭৯৭-[৮] ইবনু মাজাহ (রহঃ) এ হাদীসটিকে ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার হতে (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসটি গরীব।[1]
وَرَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ عَنِ ابْنِ عُمَرَ. وَقَالَ التِّرْمِذِيّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب
ব্যাখ্যা: (وَرَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ عَنِ ابْنِ عُمَرَ) হাদীসটি ইবনু মাজাহ ইনু ‘উমার থেকে বর্ণনা করেছেন।
ইবনু মাজার বর্ণনাটি এ রকম (التَّاجِرُ الْأَمِينُ الصَّدُوقُ الْمُسْلِمُ مَعَ الشُّهَدَاءِ يَوْمَ الْقِيَامَة) অর্থাৎ ‘‘আমানতদার সত্যনিষ্ঠ মুসলিম ব্যবসায়ী কিয়ামত দিবসে শহীদগণের সাথে থাকবে।’’
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেনে সহনশীলতা
২৭৯৮-[৯] কয়স ইবনু আবূ গরাযাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে আমাদেরকে (ব্যবসায়ীদেরকে) ’সামাসিরাহ্’ (দালাল গোষ্ঠী) হিসেবে অভিহিত করা হতো। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছ দিয়ে যাবার সময় আমাদেরকে ওই নামের চেয়ে আরো উত্তম ও সুন্দর নামে অভিহিত করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়! ব্যবসাকার্যে অনর্থক ও নিষ্প্রয়োজন কসম কাটা হয়ে থাকে। তাই তোমরা ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সাথে বিশেষভাবে দান-সাদাকাও করবে। (আবূ দাঊদ, তিরিমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَن قيس بن أبي غَرزَة قَالَ: كُنَّا نُسَمَّى فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السَّمَاسِرَةَ فَمَرَّ بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمَّانَا بِاسْمٍ هُوَ أَحْسَنُ مِنْهُ فَقَالَ: «يَا مَعْشَرَ التُّجَّارِ إِنَّ الْبَيْعَ يَحْضُرُهُ اللَّغْوُ وَالْحَلِفُ فَشُوبُوهُ بِالصَّدَقَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: (كُنَّا نُسَمّٰى السَّمَاسِرَةَ) ‘‘আমাদেরকে সামাসিরাহ্ বলা হত’’ অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের ‘সামাসিরাহ্’ বলে আহবান করা হত। নিহায়াহ্’র লেখক বলেনঃ সামাসিরাহ্ ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যে ব্যক্তি ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে দূতিয়ালী করে থাকে। অর্থাৎ ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ সিমসার অনারব শব্দ। যারা বেচা-কেনার মাধ্যমে লিপ্ত ছিল তাদের অধিকাংশই ছিল অনারব। ফলে ‘আরব ব্যবসায়ীগণ তাদের কাছ থেকে এ শব্দটি শিখে নেয় এবং নিজেদের মধ্যে তা প্রয়োগ করে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২০৮)
(فَقَالَ : يَا مَعْشَرَ التُّجَّارِتاجر) ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়!’’ অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবসায়ীদেরকে অনারব ভাষার পরিবর্তে ‘আরবী ভাষা ব্যবহার করে তাদেরকে التُّجَّارِ শব্দ দ্বারা আহবান করেন। আর তাই এ শব্দটি ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচলিত হয়। এজন্য বলা হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিমসার শব্দ পরিবর্তন করে تاجر নামকরণ করেছেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২০৮)
(إِنَّ الْبَيْعَ يَحْضُرُهُ اللَّغْوُ وَالْحَلِفُ) ‘‘বেচা-কেনাতে অনর্থক কথা ও নিষ্প্রয়োজন কসম কাটা হয়’’ অর্থাৎ বেচা-কেনার সময় ক্রেতা ও বিক্রেতা অনেক অনর্থক কথা বলে থাকে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বিক্রেতা মিথ্যা শপথও করে ফেলে যা কবীরা গুনাহ।
(فَشُوبُوهُ بِالصَّدَقَةِ) ‘‘এর সাথে সাদাকা মিশিয়ে দাও’’ অর্থাৎ বেচা-কেনার চুক্তি সম্পাদনের সাথে সাথেই সাদাকা কর। কেননা সাদাকা আল্লাহ তা‘আলার গযবকে ঠাণ্ডা করে দেয়। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ বেচা-কেনার সময় অনর্থক অতিরিক্ত কথাবার্তা বলতে পারে, এমনকি অনেক সময় তা শপথ পর্যন্ত গড়ায়। এতে কবীরা গুনাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা আল্লাহ তা‘আলা অপছন্দ করেন এবং এমন ব্যক্তির ওপর রাগান্বিত হন। অতএব আল্লাহ তা‘আলার রাগ প্রশমিত করার জন্য তোমরা সাদাকা কর। অত্র হাদীসে বেশী বেশী সাদাকা করার ইঙ্গিত রয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেনে সহনশীলতা
২৭৯৯-[১০] ’উবায়দ ইবনু রিফা’আহ্ তাঁর পিতার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে ব্যবসায়ীগণ বদকাররূপে উপস্থিত হবেন। অবশ্য যারা মুত্তাক্বী, পরহেযগার, নেককার ও সত্যবাদী হবেন তারা এরূপ হবেন না। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَن عبيد بنِ رفاعةَ عَنْ أَبِيهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «التُّجَّارُ يُحْشَرُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فُجَّارًا إِلَّا مَنِ اتَّقَى وَبَرَّ وَصَدَقَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (إِلَّا مَنِ اتَّقٰى) ‘‘তবে যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করল’’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কবীরা ও সগীরাহ্ গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখল, কোনো ধোঁকাবাজী করল না এবং খিয়ানাত করল না, লোকেদের সাথে সদাচারণ করল এবং ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য করল এমন ব্যবসায়ীগণ পাপীদের দলভুক্ত হবে না।
(وَبَرَّ وَصَدَقَ) ‘‘শপথ পূর্ণ করল এবং সত্য কথা বলল’’। কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ যেহেতু ব্যবসায়ীদের লেনদেনের মধ্যে প্রকৃত বিষয় গোপন করে ধোঁকা দেয়ার প্রবণতা বেশী এবং পণ্য কাটতির জন্য মিথ্যা শপথের মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে, তাই তাদেরকে পাপী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে যারা হারাম কার্য পরিহার করে, শপথ করলে সত্য শপথ করে এবং শপথ পূর্ণ করে, আর সাধারণভাবে সত্য কথা বলে তাদেরকে পাপীদের দল থেকে পৃথক করেছেন।
(তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২১০; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেনে সহনশীলতা
২৮০০-[১১] ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) হাদীসটি বারা হতে শু’আবুল ঈমান-এ বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।[1]
- - -
বিঃ দ্রঃ (وَهٰذَا الْبَابُ خَالٍ مِنَ الْفَصْلُ الثَّالِثُ) আর এ অধ্যায়ে তৃতীয় অনুচ্ছেদ নেই।
وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ فِي
شُعَبِ الْإِيمَانِ. عَنِ الْبَرَاءِ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
وَهَذَا الْبَابُ خَالٍ مِنَ الْفَصْلِ الثَّالِثِ