পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা

২৭৫৯-[১] মিকদাদ বিন মা’দীকারিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কারো জন্য নিজের হাতের (কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে) উপার্জনের আহারের চেয়ে আর কোনো উত্তম আহার নেই (অর্থাৎ- কোনো ব্যক্তি কখনো উত্তম খাদ্য খায়নি হাতের উপার্জনের খাদ্যের চেয়ে)। আল্লাহর নবী দাঊদ (আঃ) নিজের হাতের উপার্জনে আহার করতেন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْكَسْبِ وَطَلَبِ الْحَلَالِ

عَن الْمِقْدَاد بْنِ مَعْدِي كَرِبَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ وَإِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عمل يَدَيْهِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن المقداد بن معدي كرب قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ما اكل احد طعاما قط خيرا من ان ياكل من عمل يديه وان نبي الله داود عليه السلام كان ياكل من عمل يديه» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (خَيْرًا) অর্থাৎ উত্তম খাদ্য। (مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ) স্বহস্তে উপার্জন। মুযহির বলেন, স্বহস্তে উপার্জনের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তন্মধ্যে উপার্জনকারী কর্মে ব্যস্ত থাকার ফলে নিজেকে অন্যায় ও অনর্থক কাজ হতে বিরত রাখতে সক্ষম হয়। অন্যের নিকট হাত পাতার যিল্লাতি থেকে রক্ষা পায় এবং অহংকার হতে মুক্তি পায়। তবে উপার্জনকারীকে এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, কর্মই তার রিযক্বের ব্যবস্থাপক নয় বরং রিযকের ব্যবস্থাপক মহান রিযকদাতা আল্লাহ তা‘আলা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(وَإِنَّ نَبِىَّ اللّٰهِ دَاودَ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ) নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার নাবী দাঊদ (আঃ) স্বহস্তে উপার্জন করে খেতেন। নাবূওয়াত আল্লাহ প্রদত্ত মহান মর্যাদা। এত সুমর্যাদার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজে উপার্জন করে স্বীয় ব্যয় নির্বাহ করতেন। এ দ্বারা স্বহস্তে উপার্জনের উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, স্বহস্তে উপার্জন সম্মানহানীর বিষয় নয় বরং তা সুমর্যাদার অধিষ্ঠিত নাবীদের সুন্নাত। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২০৭২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা

২৭৬০-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : ’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَسْبِ وَطَلَبِ الْحَلَالِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَأَنَّ اللَّهَ أَمَرَ المؤْمنينَ بِمَا أمرَ بِهِ المرسَلينَ فَقَالَ: (يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ واعْمَلوا صَالحا)
وَقَالَ: (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ)
ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ: يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِّيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان الله طيب لا يقبل الا طيبا وان الله امر المومنين بما امر به المرسلين فقال: (يا ايها الرسل كلوا من الطيبات واعملوا صالحا) وقال: (يا ايها الذين امنوا كلوا من طيبات ما رزقناكم) ثم ذكر الرجل يطيل السفر اشعث اغبر يمد يديه الى السماء: يا رب يا رب ومطعمه حرام ومشربه حرام وملبسه حرام وغذي بالحرام فانى يستجاب لذلك؟ . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (إِنَّ اللّٰهَ طَيِّبٌ) আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, অর্থাৎ তিনি সকল প্রকার দোষ-ত্রুটিমুক্ত।

(لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا) তিনি পবিত্র ছাড়া কিছু গ্রহণ করে না। আল্লাহর রাস্তায় যা কিছু দান করা হয় তা যদি পবিত্র না হয়, শারী‘আতের দৃষ্টিতে হালাল না হয় এবং নিয়্যাতের মধ্যে অসৎ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা ঐ দান গ্রহণ করেন না। ‘আল্লামা ইমাম নববী বলেন, অত্র হাদীসে হালাল উপার্জন থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং অসদোপায়ে উপার্জন করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করা থেকে পরোক্ষভাবে নিষেধ করা হয়েছে। (শারহে মুসলিম ৭/৮ খন্ড, হাঃ ১০১৫)

(يُطِيلُ السَّفَرَ) ‘‘দীর্ঘপথ ভ্রমণ করে’’ অর্থাৎ আল্লাহর পথে ভ্রমণ করে যেমন হজ্জ/হজ, জিহাদ, আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনের নিমিত্তে।

(أَشْعَثَ أَغْبَرَ) চুল এলোমেলো ও শরীর ধূলিমলিন করে। অর্থাৎ তার শরীরে ভ্রমণের ছাপ স্পষ্ট দেখা যায়।

(يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ : يَا رَبِّ! يَا رَبِّ!) আকাশপানে হাত তুলে ইয়া রব্, ইয়া রব্! বলে কান্নাকাটি করে। অর্থাৎ যে অবস্থায় আল্লাহর নিকট দু‘আ করলে তিনি তা কবুল করেন ঐ সকল অবস্থায়ই তার মধ্যে বিদ্যমান। এতদসত্ত্বেও তার দু‘আ কবুল হয় না, কারণ (مَطْعَمُه حَرَامٌ وَمَشْرَبُه حَرَامٌ) তার খাবার তার পানীয়, তার পোশাক সকল কিছুই হারাম উপায়ে অর্জিত।

(فَأَنّٰى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ؟) অতএব কিভাবে তার দু‘আ কবুল করা হবে। এতে জানা গেল যে, দু‘আ কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হলো হালাল উপায়ে অর্জিত খাবার খেতে হবে এবং হালাল উপায়ে অর্জিত পোশাক পরিধান করতে হবে। তাহলেই আল্লাহর কাছে দু‘আ গৃহীত হবে নচেৎ নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা

২৭৬১-[৩] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের সামনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন কেউ কি উপায়ে ধন-সম্পদ উপার্জন করলো, হারাম না হালাল উপায়ে- এ ব্যাপারে কেউ কোনো প্রকার পরোয়া করবে না। (বুখারী)[1]

بَابُ الْكَسْبِ وَطَلَبِ الْحَلَالِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يُبَالِي الْمَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ أَمِنَ الْحَلَالِ أم من الْحَرَام» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ياتي على الناس زمان لا يبالي المرء ما اخذ منه امن الحلال ام من الحرام» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (مَا أَخَذَ مِنْهُ أَمِنَ الْحَلَالِ أَمْ مِنَ الْحَرَامِ) ‘‘ঐ যুগের লোক এটা ভ্রূক্ষেপ করবে না সে কি হালাল মাল গ্রহণ করল নাকি হারাম মাল গ্রহণ করল।’’ অর্থাৎ তার উপার্জন হালাল পন্থায় হলো নাকি হারাম পন্থায় হলো মোটেই তা পরোয়া করবে না। ইবনুত্ তীন বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্য দ্বারা মালের ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেনঃ এমন একটা সময় আসবে যখন মানুষের মুখ্য উদ্দেশ্য হবে সম্পদ অর্জন করা। কিন্তু এ অর্জন হারাম পন্থায় হলো নাকি হারাম পন্থায় হলো তা সে পরোয়া করবে না। তার নিকট হালাল হারামের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। উভয়টাই তার নিকট সমান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই পার্থক্য না করাকেই তিরস্কার করেছেন। নচেৎ হালাল পন্থায় সম্পদ উপার্জন করা দোষণীয় বিষয় নয়, বরং তা কাম্য। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২০৫৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা

২৭৬২-[৪] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এ উভয়ের মধ্যে এমন অনেক সন্দেহভাজন বিষয় বা বস্ত্ত আছে, যে ব্যাপারে অনেক মানুষই এগুলো হালাল, কি হারাম- এ বিষয়ে অবগত নয়। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় হতে বিরত থাকবে, তার দীন ও মান-মর্যাদা পুত-পবিত্র থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত থাকবে, সে সহসাই হারামে জড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি সেই রাখালের ন্যায়, যে রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার কাছাকাছি নিয়ে চরালো, তার পাল অজান্তেই নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

সাবধান! প্রত্যেক দায়িত্বশীলেরই (প্রশাসন বা সরকারেরই) চারণভূমি (নিষিদ্ধ এলাকা) আছে, আর আল্লাহ তা’আলার নিষিদ্ধ চারণভূমি হারামসমূহকে নির্ধারিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, মানব দেহের ভিতরে একটি মাংসপিন্ড আছে, যা ভালো থাকলে গোটা শরীরই ভালো থাকে। আর এটি নষ্ট হয়ে গেলে বা বিকৃতি ঘটলে সমস্ত শরীরটাই নষ্ট হয়ে যায়। সেই মাংসপিন্ডটিই হলো ’কলব’ (অন্তঃকরণ)। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَسْبِ وَطَلَبِ الْحَلَالِ

وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الشبهاب استبرَأَ لدِينهِ وعِرْضِهِ ومَنْ وقَعَ فِي الشبُّهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى يُوشِكُ أَنْ يَرْتَعَ فِيهِ أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى أَلَا وَإِنَّ حِمَى اللَّهِ مَحَارِمُهُ أَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُله أَلا وَهِي الْقلب»

وعن النعمان بن بشير قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الحلال بين والحرام بين وبينهما مشتبهات لا يعلمهن كثير من الناس فمن اتقى الشبهاب استبرا لدينه وعرضه ومن وقع في الشبهات وقع في الحرام كالراعي يرعى حول الحمى يوشك ان يرتع فيه الا وان لكل ملك حمى الا وان حمى الله محارمه الا وان في الجسد مضغة اذا صلحت صلح الجسد كله واذا فسدت فسد الجسد كله الا وهي القلب»

ব্যাখ্যা:  (الْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ) ‘‘হালাল সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট’’- এ দুইয়ের মাঝে কিছু বস্তু আছে অস্পষ্ট।

‘আল্লামা নববী বলেনঃ বস্তু তিন প্রকার-

(১) সুস্পষ্ট হালাল। যার হালাল হওয়া বিষয়টি গোপনীয় নয়। যেমন- রুটি, ফলমূল, তৈল, মধু, ঘি, দুধ, হালাল প্রাণীর গোশত ও তার ডিম- এরূপ খাবার জাতীয় বস্তু। অনুরূপভাবে কথাবার্তা বলা, চলাফেরা করা ইত্যাদি যা হালাল হওয়া সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই।

(২) সুস্পষ্ট হারাম। যেমন- মাদকদ্রব্য, শুকর, মৃত পশুর গোশ্ত/গোশত, পেশাব, প্রবাহিত রক্ত। অনুরূপ যিনা করা, মিথ্যা বলা, পরনিন্দা করা এবং বিয়ে করা হারাম নয় এমন মহিলার দিকে তাকানো।

(৩) সন্দেহযুক্ত বস্তু। অর্থাৎ এমন বিষয় যার হালাল হওয়াটা সুস্পষ্ট নয় এবং হারাম হওয়ায় সুস্পষ্ট নয়। এজন্য এর বিধান অনেক মানুষেই জানে না। তবে ধর্মীয় বিধান সম্পর্কে যারা বিশেষ জ্ঞান রাখে তারা ইজতিহাদের মাধ্যমে শারী‘আতের দলীলের ভিত্তিতে বস্তুগুলোকে হালাল অথবা হারামের সাথে সংযুক্ত করতে সক্ষম হয়। তবে ইজতিহাদ করার পরও যদি তার বিধান সুস্পষ্ট না হয় তাহলে সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন স্বরূপ তা পরিত্যাগ করাই আল্লাহ ভীতির দাবী এবং তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণীর অন্তর্ভুক্ত।

(فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ فَقَدِ اسْتَبْرَأَ لدِيْنِه وَعِرْضِه) ‘‘যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিত্যাগ করল সে তার দীন ও মর্যাদাকে রক্ষা করল।’’ অর্থাৎ শারী‘আতের তিরস্কার থেকে সে তার দীনকে রক্ষা করল এবং মানুষের সমালোচনা থেকে স্বীয় মর্যাদাকে সংরক্ষণ করল। (শারহে মুসলিম ১১/১২ খন্ড, হাঃ ১৫৯৯)

(مَنْ وقَعَ فِى الشبُّهَاتِ وَقَعَ فِى الْحَرَامِ) ‘‘যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয়ে পতিত হলো সে হারামের মধ্যে নিপতিত হলো। যেহেতু সন্দেহযুক্ত বস্তু হালালও হতে পারে, আবার হারামও হতে পারে। তাই হারামে নিপতিত হওয়া থেকে মুক্ত নয়। এটা সেই নিষিদ্ধ এলাকার সাথে তুলনীয় সরকার যে এলাকাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এখন কেউ যদি নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার নিকট দিয়ে ঘুরাফেরা করে তাহলে যে কোনো মুহূর্তে নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে যেতে পারে, তেমনিভাবে যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বস্তু হতে দূরে না থাকে তাহলে যে কোনো মুহূর্তে হারামে নিপতিত হতে পারে। তাই সন্দেহযুক্ত বস্তু হতে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা

২৭৬৩-[৫] রাফি’ বিন খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুকুর বিক্রয়লব্ধ মূল্য ঘৃণিত বস্তু, যিনা-ব্যভিচারের বিনিময়ও ঘৃণিত, শিঙ্গা লাগানোর (রক্তমোক্ষণের) ব্যবসা ঘৃণিত। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَسْبِ وَطَلَبِ الْحَلَالِ

وَعَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ثَمَنُ الْكَلْبِ خَبِيثٌ وَمَهْرُ الْبَغِيِّ خَبِيثٌ وَكَسْبُ الْحَجَّامِ خَبِيثٌ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن رافع بن خديج قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ثمن الكلب خبيث ومهر البغي خبيث وكسب الحجام خبيث» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (ثَمَنُ الْكَلْبِ خَبِيثٌ) ‘‘কুকুরের মূল্য ঘৃণ্য বা হারাম’’ শুধুমাত্র خَبِيثٌ শব্দ দ্বারা কোনো কিছু হারাম হওয়া বুঝায় না। কেননা এ হাদীসের শেষাংশে বলা হয়েছে যে, (كَسْبُ الْحَجَّامِ خَبِيثٌ) ‘‘রক্তমোক্ষণের উপার্জন ঘৃণ্য।’’ অথচ সর্বসম্মতিক্রমে তা হলো হালাল। কুকুরের মূল্য হারাম হওয়ার দলীল পরবর্তী ২৭৬৪ নং হাদীস দ্রষ্টব্য।

(مَهْرُ الْبَغِىِّ خَبِيثٌ) ‘‘যিনার উপার্জন ঘৃণ্য’’। অর্থাৎ হারাম এ বিষয়ে ইজমা প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ সর্বসম্মতিক্রমে তা হারাম। কেননা যিনাকারিণী তা যিনার বিনিময় হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। আর যিনা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। আর যে কাজ করা হারাম তার বিনিময় গ্রহণ করাও হারাম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা

২৭৬৪-[৬] আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর বিক্রয় মূল্য, যিনা-ব্যভিচারের বিনিময় হতে ও গণকের গণনার মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَسْبِ وَطَلَبِ الْحَلَالِ

وَعَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الْأَنْصَارِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَمَهْرِ الْبَغِيِّ وَحُلْوَانِ الْكَاهِنِ

وعن ابي مسعود الانصاري ان رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن الكلب ومهر البغي وحلوان الكاهن

ব্যাখ্যা: (نَهٰى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ অধিকাংশ ‘আলিমদের মতে কুকুর বিক্রয় করা বিশুদ্ধ নয়। ইমাম নববী বলেনঃ কুকুর বিক্রয় করা হারাম। তা বিক্রয় করা বিশুদ্ধ নয়, তার মূল্য হালাল নয়। কুকুর প্রশিক্ষিত অথবা অপ্রশিক্ষিত হোক, তা পালন করা বৈধ হোক অথবা না হোক, তা হত্যাকারীর ওপর কোনো জরিমানা নেই। অধিকাংশ ‘আলিমদের অভিমত এটাই। তন্মধ্যে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), হাসান বাসরী (রহঃ), রবী‘আহ্, আওযা‘ঈ, হাকাম, হাম্মাদ, শাফি‘ঈ, আহমাদ, দাঊদ, ইবনুল মুনযির (রহঃ) প্রমুখ ‘আলিমগণ।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ যে সকল কুকুর দ্বারা উপকার গ্রহণ করা বৈধ তা বিক্রয় করা বিশুদ্ধ। তা হত্যাকারীর ওপর জরিমানা ওয়াজিব। ইবনুল মুনযির (রহঃ), জাবির (রাঃ), ‘আত্বা, নাখ‘ঈ প্রমুখ ‘আলিমগণ হতে তা বিক্রয় করা বৈধ হওয়ার কথা বর্ণনা করেছেন। ইমাম মালিক (রহঃ) হতে একাধিক বর্ণনা রয়েছে। এক বর্ণনা মতে, তা বিক্রয় করা বৈধ না বটে, তবে তা হত্যাকারীর ওপর জরিমানা প্রযোজ্য। ২য় বর্ণনা মতে, তা বিক্রয় করা বিশুদ্ধ এবং হত্যাকারীর ওপর জরিমানা ওয়াজিব। ৩য় বর্ণনা মতে, তা বিক্রয় করা বিশুদ্ধ নয় এবং তা হত্যাকারীর ওপর কোনো জরিমানা নেই। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খণ্ড, হাঃ ১৫৬৭)

(حُلْوَانِ الْكَاهِنِ) ‘‘গণকের উপার্জন’’। গণকের উপার্জনকে حُلْوَانِ এজন্য বলা হয় যে, তা বিনা পরিশ্রমে সহজেই উপার্জন হয়। মূলত গণক মিথ্যা কথা দ্বারা মানুষকে ধোঁকা দেয় আর তা হারাম বিধায় গণকের উপার্জন হারাম।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা

২৭৬৫-[৭] আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তমোক্ষণ কাজের বিনিময়, কুকুর বিক্রয় মূল্য ও যিনা-ব্যভিচারের বিনিময় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লা’নাত (অভিসম্পাত) করেছেন সুদগ্রহীতা ও সুদদাতার প্রতি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো লা’নাত করেছেন ওই ব্যক্তির প্রতি যে দেহের কোনো অংশে নাম বা চিত্রাঙ্কন করে ও করায়। তাছাড়াও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবি অঙ্কনকারীর প্রতিও লা’নাত করেছেন। (বুখারী)[1]

بَابُ الْكَسْبِ وَطَلَبِ الْحَلَالِ

وَعَن أبي حجيفة أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ ثَمَنِ الدَّمِ وَثَمَنِ الْكَلْبِ وَكَسْبِ الْبَغِيِّ وَلَعَنَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ وَالْمُصَوِّرَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابي حجيفة ان النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن الدم وثمن الكلب وكسب البغي ولعن اكل الربا وموكله والواشمة والمستوشمة والمصور. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (نَهٰى عَنْ ثَمَنِ الدَّمِ) রক্তের মূল্য নিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ রক্ত বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। কেননা প্রবাহিত রক্ত নাপাক। তাই তার মূল্য গ্রহণ করা হারাম। কারো কারো মতে, রক্তের মূল্য বলতে রক্তমোক্ষণের বিনিময় উদ্দেশ্য।

(لَعَنَ اٰكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَه) ‘‘সুদগ্রহীতা সুদদাতা উভয়ের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নাত করেছেন। কোনো কাজের প্রতি লা‘নাত করা উক্ত কাজ হারাম হওয়ার দলীল। অর্থাৎ সুদ দেয়া ও সুদ নেয়া উভয়টিই হারাম।

(الْوَاشِمَةَ) ‘‘উল্কি অঙ্কনকারিণী’’। অর্থাৎ শরীরে সুঁই গেঁথে ছিদ্র করে তার মধ্যে সুরমা অথবা নীল প্রয়োগ করে শরীরের কোনো অংশকে সবুজ অথবা নীল রঙে রূপান্তর করা। মূর্খ ও কাফিরগণ এ কাজ করে থাকে। আর এতে সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনা হয়। আর সৃষ্টির পরিবর্তন আনয়ন করা হারাম। তাই উল্কি আঁকা হারাম এবং এ কাজ করানোও হারাম। তাই যে এ কাজ করে এবং করায় উভয়ের প্রতিই লা‘নাত।

(الْمُصَوِّرَ) ‘‘ছবি অঙ্কনকারী’’ এর দ্বারা প্রাণীর প্রতিকৃতি নির্মাণ বা তার ছবি অঙ্কন করা। কেননা যে সমস্ত মূর্তির পূজা হয় তা প্রাণীর আকৃতিতে গঠিত। তাই আল্লাহ তা‘আলা প্রাণীর প্রতিকৃতি বা তার ছবি বানানো হারাম করেছেন। আর এ কর্ম সম্পাদনকারীর প্রতি লা‘নাত। পক্ষান্তরে বৃক্ষ ও তরুলতার ছবি অঙ্কন করা হারাম নয়। কেননা এগুলোর ছবি বানিয়ে পূজা করা হয় না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ জুহাইফাহ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা

২৭৬৬-[৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন মক্কা বিজয়ের বৎসর, সেখানে অবস্থানকালে আল্লাহ ও তাঁর রসূল মদ বিক্রি, মৃতজীব বিক্রি, শূকর বিক্রি, কোনো প্রকার মূর্তি বিক্রি হারাম করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! মৃত জীবের চর্বি নৌকায় (বিভিন্ন চামড়াজাত দ্রব্যে) লাগানো হয় এবং লোকেরা তা দিয়ে বাতি জ্বালিয়ে থাকে, তা বিক্রি করা সম্পর্কে আপনার সিদ্ধান্ত কি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তা-ও বিক্রি করা যাবে না, এটাও হারাম। অতঃপর এর সাথে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কথাও বললেন, আল্লাহ তা’আলা ইয়াহূদী জাতিকে ধ্বংস করুন। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য যখন (হালাল যাবাহকৃত জীবেরও) চর্বি হারাম করলেন, তখন তারা (অবাধ্য হয়ে কৌশল অবলম্বন করে) তা গলিয়ে বিক্রি করতে লাগলো ও এর মূল্য ভোগ করতে থাকলো। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَسْبِ وَطَلَبِ الْحَلَالِ

وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ عَامَ الْفَتْحِ وَهُوَ بِمَكَّةَ: «إِنَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ حَرَّمَ بَيْعَ الْخَمْرِ وَالْمَيْتَةِ وَالْخِنْزِيرِ وَالْأَصْنَامِ» . فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ شُحُومَ الْمَيْتَةِ؟ فَإِنَّهُ تُطْلَى بِهَا السُّفُنُ وَيُدْهَنُ بِهَا الْجُلُودُ وَيَسْتَصْبِحُ بِهَا النَّاسُ؟ فَقَالَ: «لَا هُوَ حَرَامٌ» . ثُمَّ قَالَ عِنْدَ ذَلِكَ: «قَاتَلَ اللَّهُ الْيَهُودَ إِنَّ اللَّهَ لَمَّا حَرَّمَ شُحُومَهَا أَجْمَلُوهُ ثُمَّ بَاعُوهُ فَأَكَلُوا ثَمَنَهُ»

وعن جابر انه سمع رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول عام الفتح وهو بمكة: «ان الله ورسوله حرم بيع الخمر والميتة والخنزير والاصنام» . فقيل: يا رسول الله ارايت شحوم الميتة؟ فانه تطلى بها السفن ويدهن بها الجلود ويستصبح بها الناس؟ فقال: «لا هو حرام» . ثم قال عند ذلك: «قاتل الله اليهود ان الله لما حرم شحومها اجملوه ثم باعوه فاكلوا ثمنه»

ব্যাখ্যা: (إِنَّ اللّٰهَ وَرَسُوْلَه حَرَّمَ بَيْعَ الْخَمْرِ وَالْمَيْتَةِ وَالْخِنْزِيرِ) ‘‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল হারাম করেছেন মদ, মৃত পশু, শুকর ও মূর্তি বিক্রয় করা।’’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে উল্লেখিত বস্তুসমূহ হারাম করেছেন এবং তা ক্রয়-বিক্রয়ও হারাম করেছেন। আর আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসসমূহে উক্ত বস্তুগুলোর ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন।

‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ অত্র হাদীসে আল্লাহর উল্লেখের পরে তাঁর রসূলের উল্লেখ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলা তা হারাম করেছেন এবং আল্লাহর পক্ষ হতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মাঝে এর ঘোষণা দিয়েছেন। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি।

(أَرَأَيْتَ شُحُومَ الْمَيْتَةِ؟) ‘‘মৃত পশুর চর্বি’’ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? অর্থাৎ এর হুকুম কি? তা ব্যবহার করা বা তা বিক্রয় করা কি বৈধ? কেননা লোকজন বিভিন্ন কাজে তা ব্যবহার করে থাকে। যেমন নৌকা প্রলেপ দেয়া, চামড়া পাকা করা এবং জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। অতএব তা দ্বারা এ কাজ করা কি বৈধ? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ لَا هُوَ حَرَامٌ না, তা ব্যবহার করা বৈধ নয়, বরং তা ব্যবহার করা হারাম, অথবা তা বিক্রয় করা অবৈধ।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ  لَا هُوَ حَرَامٌ এর অর্থ হলো তোমরা তা বিক্রয় করবে না। কেননা তা বিক্রয় করা হারাম। ইমাম শাফি‘ঈ ও তাঁর সহচরদের মতে মৃত পশুর চর্বি বিক্রয় করা হারাম। তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। ‘আত্বা ইবনু আবূ রবাহ এবং মুহাম্মাদ ইবনু জারীর ত্ববারী (রহঃ)-এর অভিমতও তাই। অধিকাংশ ‘আলিমদের মতে মৃত পশুর পাকা চামড়া ব্যতীত আর কোনো কিছুই ব্যবহার করা বৈধ নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

হাদীসের শিক্ষা:

(১) যা খাওয়া হারাম তা ব্যবহার করাও হারাম। তবে শারী‘আত যেক্ষেত্রে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে, সেক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা বৈধ। যেমন- যে পশু খাওয়া বৈধ তা মারা গেলে তার চামড়া পাকা করে তা ব্যবহার করা বৈধ যা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

(২) যা খাওয়া হারাম তা বিক্রয় করাও হারাম। এমনকি তা রূপান্তর করে বিক্রয় করাও হারাম।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা

২৭৬৭-[৯] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ইয়াহূদী জাতিকে ধ্বংস করুন; (হালাল জীবেরও) চর্বি তাদের জন্য হারাম করা হয়েছিল। কিন্তু তারা ঐরূপ জাতীয় চর্বি গলিয়ে তা বিক্রি করেছে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَسْبِ وَطَلَبِ الْحَلَالِ

وَعَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: «قَاتَلَ اللَّهُ الْيَهُودَ حُرِّمَتْ عَلَيْهِمُ الشُّحُومُ فجملوها فَبَاعُوهَا»

وعن عمر رضي الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «قاتل الله اليهود حرمت عليهم الشحوم فجملوها فباعوها»

ব্যাখ্যা: (فَجَمَلُوْهَا فَبَاعُوْهَا) ‘‘তা আগুনের দ্বারা জ্বাল দিয়ে গলিয়ে বিক্রয় করত।’’

(شُحُومُ) চর্বি, আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর চর্বি হারাম করেছিলেন। ফলে তারা তা আগুনে শেক দিয়ে ودك গলিত চর্বিতে রূপান্তর করত, এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তদের জন্য বদ্দু‘আ করেছেন। কেননা হারাম বস্তুকে তারা হালাল করার জন্য হিলার আশ্রয় নিয়েছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা

২৭৬৮-[১০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর বিক্রির মূল্য ও বিড়াল বিক্রয়ের মূল্য (গ্রহণ করতে) নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْكَسْبِ وَطَلَبِ الْحَلَالِ

وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَالسِّنَّوْرِ. رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن الكلب والسنور. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (نَهٰى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَالسِّنَّوْرِ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর ও বিড়ালের মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। কুকুরের মূল্য সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা হয়েছে।

‘‘বিড়ালের মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।’’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যে বিড়াল দ্বারা কোনো উপকার হয় না অথবা এ নিষেধাজ্ঞা দ্বারা উদ্দেশ্য তার মূল্য গ্রহণ করা মাকরূহ। কেননা বিড়াল পবিত্র, তা নাপাক নয় যা অন্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে তা বিক্রয় করে তার মূল্য গ্রহণ করা এজন্য অপছন্দ করেছেন যাতে লোকেরা তা দান করতে অথবা ধার দিতে অভ্যস্ত হয়। অতএব যে বিড়াল দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় তা যদি কেউ বিক্রয় করে তবে তা বৈধ এবং তার মূল্য হালাল। এটাই অধিকাংশ ‘আলিমদের অভিমত। তবে ইবনুল মুনযির, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), তাঊস ও মুজাহিদ (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তা বিক্রয় করা বৈধ নয় এবং তারা এ হাদীসটি দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

জুমহূর ‘আলিমগণ এর জবাবে বলেছেন যে, হাদীসে এর দ্বারা হারাম উদ্দেশ্য নয়, বরং মাকরূহ উদ্দেশ্য এবং সেই বিড়াল বিক্রয় করা নিষেধ যার দ্বারা কোনো উপকার হয় না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা

২৭৬৯-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ ত্বয়বাহ্ নামের এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন (রক্তমোক্ষণ করেছিলেন)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (এর বিনিময়ে) তাকে এক সা’[1] খুরমা দেবার জন্য নির্দেশ দিলেন এবং তার মালিকপক্ষকে আদেশ করলেন, তার ওপর ধার্যকৃত উপার্জনের পরিমাণ কমিয়ে দিতে। (বুখারী, মুসলিম)[2]

بَابُ الْكَسْبِ وَطَلَبِ الْحَلَالِ

وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: حَجَمَ أَبُو طَيْبَةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأُمِرَ لَهُ بِصَاعٍ مِنْ تَمْرٍ وَأَمَرَ أَهْلَهُ أَنْ يُخَفِّفُوا عَنْهُ مِنْ خراجه

وعن انس رضي الله عنه قال: حجم ابو طيبة رسول الله صلى الله عليه وسلم فامر له بصاع من تمر وامر اهله ان يخففوا عنه من خراجه

ব্যাখ্যা: (فَأُمِرَ لَه بِصَاعٍ مِنْ تَمْرٍ) শিঙ্গা লাগানের বিনিময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ ত্বয়বাহ্-কে এক সা‘ খেজুর দেয়ার নির্দেশ দিলেন। হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, শিঙ্গা লাগিয়ে উপার্জন করা বৈধ। কেননা তা যদি বৈধ না হয়ে হারাম হত, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিনিময় দেয়ার নির্দেশ দিতেন না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে