পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদীনার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে
২৭৫৩-[২৬] আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মদীনায় কক্ষনো মাসীহ দাজ্জালের আতঙ্ক বা ভীতি প্রবেশ করতে পারবে না। তখন মদীনায় সাতটি গেট থাকবে এবং প্রতিটি গেটেই দু’জন করে মালাক (ফেরেশতা) নিযুক্ত থাকবেন। (বুখারী)[1]
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْمَدِينَةَ رُعْبُ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ لَهَا يَوْمَئِذٍ سَبْعَةُ أَبْوَابٍ عَلَى كُلِّ بَابٍ مَلَكَانِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: দাজ্জালের ভীতি এবং আতংক মদীনায় প্রবেশ করবে না, অর্থাৎ- মাসীহে দাজ্জাল পৃথিবীর সকল স্থানে প্রবেশ করলেও মক্কা এবং মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না। দাজ্জালকে মাসীহ বলা হয় এজন্য যে, মাসীহ শব্দের অর্থ স্পর্শকারী যেহেতু সে সমগ্র জমিন স্পর্শ করবে, অর্থাৎ- ভ্রমণ ও করতলগত করবে। অথবা সে হবে কানা, অর্থাৎ- একটি চোখ কারো দ্বারা মাসেহ (স্পর্শ) বা আক্রান্ত হয়েছে। দাজ্জালের নামের সাথে মাসীহ শব্দটি যুক্ত করা হয়ে থাকে, এটা ‘ঈসা যে মাসীহ (আঃ) তা থেকে পৃথক করার জন্য। মাসীহে দাজ্জাল পৃথিবীতে প্রকাশ পেলে সে সমগ্র পৃথিবী পরিভ্রমণ করবে কিন্তু মক্কা-মদীনায় প্রবেশ ও অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না। ঐ সময় মদীনার সাতটি প্রবেশ পথ থাকবে, প্রত্যেক প্রবেশ পথে দু’জন করে মালাক দন্ডায়মান থাকবে, তারা তাকে প্রবেশে বাধা দিবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদীনার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে
২৭৫৪-[২৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই দু’আ করেছেন, ’’আল্লা-হুম্মাজ্’আল বিল মদীনাতি যি’ফাই মা- জা’আলতা বিমক্কাতা মিনাল বারাকাহ্’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি মক্কায় যে বারাকাত দান করেছো মদীনায় তার দ্বিগুণ বারাকাত দান কর।)। (বুখারী, মুসলিম)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اللَّهُمَّ اجْعَلْ بِالْمَدِينَةِ ضِعفَي مَا جعلت بِمَكَّة من الْبركَة»
ব্যাখ্যা: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার জন্য মক্কার বারাকাতে দ্বিগুণ বারাকাত চেয়ে দু‘আ করেছেন। ‘আরাবীতে ضِعْفِ এর অর্থ এর সমপরিমাণ; হাদীসে এরই দ্বিবচন ব্যবহার করা হয়েছে, সুতরাং তার অর্থ দাঁড়ায় দু’ গুণ। মদীনার এ বারাকাত দুনিয়ার ক্ষেত্রে, সাওয়াব বা আখিরাতের পুণ্যের ক্ষেত্রে নয়। যেমন- তিনি মদীনার ‘‘সা’’ এবং ‘‘মুদ্’’ এর মধ্যে বারাকাতে প্রার্থনা করেছেন। সাওয়াবের ক্ষেত্রে এমনটি নয়, সুতরাং বলা যাবে না যে, মদীনার সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) মক্কার সালাতের দ্বিগুণ হবে। অথবা বলা যায় এ বারাকাত ‘আম্ সকল বিষয়েই প্রযোজ্য সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) ছাড়া, কারণ এ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র হাদীস রয়েছে। আল্লাহর নাবী অনুরূপভাবে সিরিয়া ও ইয়ামানের বারাকাতের জন্যও দু‘আ করেছেন, এটা তাকীদের জন্য এর দ্বারা এ দেশ বা শহরগুলো মক্কার ওপর প্রাধান্য পাবে না।
‘আল্লামা মুবারাকপূরী তাঁর পিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তিনি বলেছেনঃ মক্কার দ্বিগুণ চেয়ে দু‘আর অর্থ হলো মক্কার বাইরে যে বস্ত্ত দ্বারা একজন পরিতৃপ্ত হবে মক্কায় তা দিয়ে দু’জন পরিতৃপ্ত হবে, আর মদীনায় তা তিনজনের পরিতৃপ্তিদায়ক হবে। প্রকাশ যে হাদীসের এ বারাকাত নির্দিষ্ট সময়কাল দ্বারা সীমাবদ্ধ। ইমাম নাবাবী বলেন, এটা ‘‘মুদ্’’ এবং ‘‘সা’’-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ অন্য বস্ত্ততে নয়। কেউ কেউ বলেছেনঃ বারাকাত সকল যুগেই বিদ্যমান থাকবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদীনার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে
২৭৫৫-[২৮] ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর পরিবারের এক ব্যক্তি (সাহাবী) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কেবল আমার উদ্দেশেই এসে আমার কবর যিয়ারত করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার পাশে থাকবে। আর যে ব্যক্তি মদীনাতে বসবাস করবে এবং মুসীবাতে ধৈর্য ধারণ করবে, কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সাক্ষী ও সুপারিশকারী হবো। আর যে ব্যক্তি দু’ হারামের কোন একটিতে মৃত্যুবরণ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে বিপদমুক্তদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে উঠাবেন।[1]
وَعَنْ رَجُلٍ مِنْ آلِ الْخَطَّابِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ زَارَنِي مُتَعَمِّدًا كَانَ فِي جِوَارِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَكَنَ الْمَدِينَةَ وَصَبَرَ عَلَى بَلَائِهَا كُنْتُ لَهُ شَهِيدًا وَشَفِيعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ مَاتَ فِي أَحَدِ الْحَرَمَيْنِ بَعَثَهُ اللَّهُ مِنَ الْآمِنِينَ يَوْمَ الْقِيَامَة»
ব্যাখ্যা: খাত্ত্বাবের বংশের একজন লোক দ্বারা হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, মীরাক-এর লিখনীতে হাতিব-এর বংশের একজন লোকের কথা উল্লেখ হয়েছে।
বায়হাক্বীর এক সনদে ‘উমার-এর বংশের একজন লোকের কথা উল্লেখ হয়েছে। এভাবে আরো কিছু বৈসাদৃশ্যমূলক শব্দে হাদীসটি বর্ণিত হওয়ায় মুল্লা ‘আলী আল কারী এটিকে হাদীসে মুযত্বরাব বলে উল্লেখ করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে আমার যিয়ারত করবে.....।’’ এ যিয়ারত দ্বারা বৈধ যিয়ারত উদ্দেশ্য। ইচ্ছা করে এর মূলে ‘আরাবীতে مُتَعَمِّدًا -এর দ্বারা উদ্দেশ্য শুধুমাত্র যিয়ারতের জন্য গমন করা, কোন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নয়, অথবা লোক দেখানো কিংবা অন্য কোন বাতিল উদ্দেশেও নয়, বরং ইখলাসের সাথে সাওয়াবের উদ্দেশেই যিয়ারত করা। আর যে মদীনায় বাস করবে এবং সেখানকার দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ করবে। এখানে দুঃখ-কষ্ট বলতে সেটার ক্ষরা, অর্থ সংকট ও দৈন্যতা, বিভিন্ন আহলে বিদ্‘আতীদের দ্বারা অত্যাচার ইত্যাদি। আমি তার সাক্ষ্য দানকারী এবং সুপারিশকারী হব, এর অর্থ হলো তার গুনাহের জন্য সুপারিশকারী এবং নেক কাজের সাক্ষ্য দানকারী হব।
মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, واو (ওয়াও) অক্ষরটি এবং অর্থের পরিবর্তে او (আও) অর্থেও হতে পারে; তখন এর অর্থ হবে আমি তার সুপারিশকারী অথবা সাক্ষ্য দানকারী হব।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘যে ব্যক্তি দু’ হারামের কোন একটিতে মৃত্যুবরণ করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্বিয়ামাতের দিবসে নিরাপদে উঠাবেন।’’ এখানে নিরাপদ বলতে ক্বিয়ামাতের ভয়াবহ ভীতিপ্রদ অবস্থাদির থেকে নিখাদ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর যিয়ারতের উদ্দেশে সফর করার বিষয়ে সামনে বিস্তারিত বিবরণ আসছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদীনার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে
২৭৫৬-[২৯] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি মারফূ’ হিসেবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার মৃত্যুর পর হজ্জ/হজ সম্পন্ন করে আমার (কবর) যিয়ারত করবে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে আমার জীবিতাবস্থায় আমার সাথেই যিয়ারত করেছে। (অত্র হাদীস দু’টি ইমাম বায়হাক্বী ’’শু’আবুল ঈমান’’-এ বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ مَرْفُوعًا: «مَنْ حَجَّ فَزَارَ قَبْرِي بَعْدَ مَوْتِي كَانَ كَمَنْ زَارَنِي فِي حَياتِي» . رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘যে ব্যক্তি হজ্জ/হজ করল। অতঃপর আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করল, সে আমার জীবদ্দশাকালে আমার সাথে সাক্ষাতকারীর ন্যায়।’’ মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, فَزَارَ শব্দের মধ্যে ف অক্ষরটি তা‘ক্বীবিয়াহ্ বা অনুবর্তী অর্থে ব্যবহার হয়েছে। যার ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর যিয়ারতটি হজ্জের পরেই হবে আগে নয়। স্বাভাবিক কায়দার চাহিদাও ফারযের পরই সুন্নাতের স্থান। এ ব্যাপারে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) থেকে একটি সুন্দর ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছে ইমাম হাসান (রহঃ)। তিনি বলেছেনঃ যদি হজ্জটি ফরয হজ্জ/হজ হয়ে থাকে তাহলে হাজীর জন্য সর্বোত্তম হলো আগে হজ্জ সম্পন্ন করে নিবে, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে। আর যদি হজ্জ নফল হয়ে থাকে তবে তার ইচ্ছা যে কোনটি আগে করতে পারে।
প্রকাশ যে, হাদীসের প্রকাশ্য দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রথমে হজ্জ করাই উত্তম, কেননা আল্লাহর হাক্ব সর্বদাই অগ্রণীয়। যেমন- মসজিদে নাবাবীতে ঢুকে কবর যিয়ারতের আগে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়ে নিতে হয়। আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেনঃ সালফে সলিহীন সাহাবী এবং তাবি‘ঈ যারা মদীনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর যিয়ারতের মাধ্যমে শুরু করেছেন বলে উল্লেখ রয়েছে, সেটা ইহরাম বাঁধা উত্তম। আর তিনি মদীনার যুল্ হুলায়ফাহ্ থেকে ইহরাম বেঁধেছেন। এ অবস্থায় মদীনায় ইহরামের পূর্বে কবর যিয়ারত করে নিবে। এ উত্তম কেবল ঐ ব্যক্তিদের জন্য যাদের মীকাত যুল্ হুলায়ফাহ্, আর মদীনাহ্ হয়েই তো সেখানে যেতে হয়।
এ হাদীস দ্বারা সর্বসম্মতভাবে কবর যিয়ারতের ফাযীলাত স্বীকৃত হয়। কিন্তু নিসক কবর যিয়ারতের উদ্দেশে সফর করা বৈধ কি-না তা নিয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম সুবকী নিসক কবর যিয়ারতের উদ্দেশে সফর করাকে বৈধ বলে মনে করেন।
পক্ষান্তরে আরেক শ্রেণী তথা জমহূর সাহাবী, তাবি‘ঈ এবং আয়িম্মায়ে কিরামের মতে নিসক (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) কবর যিয়ারতের উদ্দেশে সফর করা বৈধ নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বজনবিদিত হাদীসঃ لا تشدوا الرحال إلا إلى ثلاثة مساجد، إلخ তিনটি মাসজিদ ছাড়া কোথাও সফরের জন্য বাহন বাঁধবে না.....। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্ম দ্বারাও কোন কবর যিয়ারতের উদ্দেশে সফর প্রমাণিত হয়নি, সুতরাং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ববরের জন্যও সফর বৈধ নয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদীনার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে
২৭৫৭-[৩০] ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসেছিলেন, এমন সময় মদীনায় একটি কবর খোঁড়া হচ্ছিল। তখন জনৈক ব্যক্তি কবরে উঁকি মেরে বললো, মু’মিনের জন্য কি এটা মন্দ স্থান? এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি খারাপ কথাই না বললে! লোকটি তখন বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি কথাটি এ উদ্দেশে বলিনি, বরং আমার কথা বলার অর্থ হলো, সে আল্লাহর পথে বিদেশে এসে কেন শাহীদ হলো না (অর্থাৎ- মদীনায় মৃত্যুবরণ করল এবং এখানে কবরস্থ হতে চলল)? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর পথে শাহীদ হবার মতো সমতুল্য আর অন্য কিছুই সম্ভব নয়। তবে মনে রাখবে, আল্লাহর জমিনে এমন কোন জায়গা নেই, যেখানে আমার কবর হওয়া মদীনার চেয়ে আমার কাছে প্রিয়তম হতে পারে। এ কথাটি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার বললেন। [ইমাম মালিক (রহঃ) হাদীসটি মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন][1]
لإرساله وَعَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ جَالِسًا وَقَبْرٌ يُحْفَرُ بِالْمَدِينَةِ فَاطَّلَعَ رَجُلٌ فِي الْقَبْرِ فَقَالَ: بِئْسَ مَضْجَعِ الْمُؤْمِنِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بئس مَا قُلْتَ» قَالَ الرَّجُلُ إِنِّي لَمْ أُرِدْ هَذَا إِنَّمَا أَرَدْتُ الْقَتْلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا مِثْلَ الْقَتْلِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ مَا عَلَى الْأَرْضِ بُقْعَةٌ أَحَبُّ إِلَيَّ أَنْ يَكُونَ قَبْرِي بِهَا مِنْهَا» ثَلَاثَ مَرَّاتٍ. رَوَاهُ مَالِكٌ مُرْسَلًا
ব্যাখ্যা: মু’মিনের ক্ববরের উপর লোকটির মন্তব্য ছিল খারাপ, যদিও তার নিয়্যাত তথাকথিত খারাপ উদ্দেশে ছিল না। কেননা মু’মিন ব্যক্তির কবর হবে জান্নাতের বাগান সদৃশ, তাকে খারাপ বলা মোটেও সঠিক হয়নি। এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঐ কথাটিকেই খারাপ বলে প্রতিবাদ করেছেন। সাথে সাথে মদীনায় তার অন্তিম শয়ন কক্ষ, অর্থাৎ- কবর হওয়ার আশাব্যক্ত করেছেন। লোকটির উদ্দেশ্য ছিল মদীনাহ্ ত্যাগ করে দূর দেশে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে যুদ্ধ শাহীদ হয়ে সেখানে সমাহিত হওয়াই অধিক ফাযীলাতের বিষয়। তার উদ্দেশ্য সঠিক হলেও কথাটি সঠিক হয়নি, তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতিবাদ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মদীনার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে
২৭৫৮-[৩১] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (হজের সফরে) ’আক্বীক্ব উপত্যকায় বলতে শুনেছি, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এ রাতে আমার রবের পক্ষ হতে আমার কাছে এক আগন্তুক এসে বললো, আপনি এ বারাকাতময় উপত্যকায় (দু’ রাক্’আত নফল) সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করুন এবং বলুন, ’উমরা হজের মধ্যে গণ্য। অন্য এক বর্ণনায় আছে, একে ’উমরা ও হজ্জ/হজ বলুন। (বুখারী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ بِوَادِي الْعَقِيقِ يَقُولُ: أَتَانِي اللَّيْلَةَ آتٍ مِنْ رَبِّي فَقَالَ: صَلِّ فِي هَذَا الْوَادِي الْمُبَارَكِ وَقُلْ: عُمْرَةٌ فِي حَجَّةٍ . وَفِي رِوَايَة: «قل عُمرةٌ وحِجّةٌ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যা: (عَقِيْقِ) ‘আক্বীক্ব মদীনার যুলহুলায়ফার সন্নিকটের একটি জায়গা। মদীনাহ্ থেকে সেটার দূরত্ব চার মাইল। মুসনাদে আহমাদ-এর শারাহ গ্রন্থে শায়খ আহমাদ শাকির বলেছেন, এখানে ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীসে ‘আক্বীক্ব বলতে যুলহুলায়ফার বাত্বনি ওয়াদীর সন্নিকটে অবস্থিত একটি স্থান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে (আল্লাহর নিকট থেকে) আগন্তুক ছিলেন জিবরীল (আঃ), তিনি তাকে সেখানে যে সালাতের নির্দেশ করেছিলেন সেটি ছিল ইহরামের জন্য সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করা।
কেউ কেউ বলেছেন, এটা ছিল ফজরের সালাত (সালাত/নামাজ/নামায)। জিবরীল (আঃ) ‘আক্বীক্ব উপত্যকাকে বলেছেন, এটা বারাকাতপূর্ণ উপত্যকা অবশ্য ‘আক্বীক্ব উপত্যকা এই বারাকাত ঐ সময়ের জন্যই ছিল পরবর্তী সময়ের তা মদীনার বারাকাতপূর্ণ বা ফাযীলাতপূর্ণ কোন স্থান হিসেবে খ্যাতি লাভ করতে পারেনি।
মালাক (ফেরেশতা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যই সফরের ‘উমরাকে বন্ধুর সাথে সংযুক্ত করার কথা বলেছেন। সুতরাং এই ভিত্তিতে বলা যায় তিনি কিরান হজ্জকারী ছিলেন। এর অন্যান্য ব্যাখ্যা করেছেন উদ্দেশের অতীব দূর অর্থ, যেমন- কেউ কেউ বলেছেন, তিনি হজ্জের কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর ঐ বছরেই বাড়ী ফেরার আগে ‘উমরা করেছেন। ‘আল্লামা ত্ববারী বলেন, আল্লাহর নাবীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যেন তার সাহাবীগণকে বলে দিতে পারেন যে কিরান হজ্জ/হজ করা বৈধ।