পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে
২৬৮৯-[১২] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে তাদের ইহরামে হাত মোজা ও বোরকা এবং ওয়ারস্ (জা’ফরানে রঞ্জিত কাপড়) পরতে নিষেধ করতে শুনেছেন। তারপর (ইহরামের পর) তারা যে কোন কাপড় পছন্দ করে পরতে পারবে- তা কুসুমী বা রেশমী হোক অথবা যে কোন ধরনের অলংকার অথবা পাজামা বা পিরান বা মোজা পরতে পারে। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْهَى النِّسَاءَ فِي إِحْرَامِهِنَّ عَنِ الْقُفَّازَيْنِ وَالنِّقَابِ وَمَا مَسَّ الْوَرْسُ وَالزَّعْفَرَانُ مِنَ الثِّيَابِ وَلْتَلْبَسْ بَعْدَ ذَلِكَ مَا أحبَّتْ من ألوانِ الثيابِ معصفر أوخز أَو حلي أَو سروايل أَو قميصٍ أَو خُفٍّ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (النِّقَابِ) ‘‘নিক্বাব’’ এখান থেকে বুঝা যায় মুহরিমার জন্য জায়িয নেই মোজা ও বোরকা পরা, আর এটাই সহীহ এবং সঠিক।
(مُعَصْفَرٍ) আমি [‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ)] বলব, (مُعَصْفَرٍ) শব্দটি মিশকাত ও মাসাবীহের সব পাণ্ডুলিপিতে এ শব্দই রয়েছে। আবূ দাঊদে রয়েছে (مُعَصْفَرٍ) এমনটাই বলেছেন আল মুনতাকা কিতাবের লেখক এবং শারহুল মুহাযযাব-এর লেখকের ‘আল্লামা ইমাম নাবাবী, হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) তাঁর ‘তালখীস’-এ, ইমাম বায়হাক্বী তাঁর ‘সুনান’-এ, ইমাম যায়লা‘ঈ তাঁর ‘নাসবুর রায়াহ্’-এ। ইমাম হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ কিতাবে বলেছেন, (من معصفر) অর্থাৎ- من অতিরিক্ত করে। ইবনু ‘আবদুল বার-এর ‘‘জামি‘উল উসূল’’-এও এমনটিই আছে।
এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, মুহরিমার জন্য ‘উসফুর (হলুদ) রঙের কাপড় পরিধান জায়িয আছে- এমনটাই মতামত ব্যক্ত করেছেন ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ। ইমাম মালিক (রহঃ) এটাকে মাকরূহ বলেছেন এবং ইমাম সাওরী ও ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) এটা নিষেধ করেছেন। খারক্বী (রহঃ) বলেন, উসফুর রং মিশ্রিত কাপড় পরতে কোন অসুবিধা নেই।
‘আল্লামা ইবনু কুদামাহ্ বলেছেনঃ উসফুর যেহেতু কোন সুগন্ধি না তাই সেটা ব্যবহারে এবং তার ঘ্রাণ নিতে কোন অসুবিধা নেই- এটাই জাবির ইবনু ‘উমার, ‘আবদুল্লাহ বিন জা‘ফার, ‘আক্বীল বিন আবী ত্বলিব বলেছেন; এটা ইমাম শাফি‘ঈ-এরও মত। ‘আল্লামা শানক্বীতী (রহঃ) বলেছেন, সঠিক কথা হলো উসফুর কোন সুগন্ধি নয়, ঠিক তবে তা পরিধান করা জায়িয নেই।
পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে
২৬৯০-[১৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম, তখন আরোহী দল আমাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করতো। তারা আমাদের কাছাকাছি আসলে আমাদের সকলেই নিজ নিজ মাথার চাদর চেহারার উপর ঢেকে দিতাম। আর তারা চলে যেত আমরা তখন তা (খুলতাম) সরিয়ে নিতাম। (আবূ দাঊদ, আর ইবনু মাজাহ এর মর্মার্থ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا جَاوَزُوا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا عَلَى وجهِها فإِذا جاوزونا كشفناهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَلابْن مَاجَه مَعْنَاهُ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, প্রয়োজন সাপেক্ষে মুহরিমাহ্ মহিলা তার চেহারার উপর পর্দা দিতে পারে যেমনটি ‘আমল করেছেন উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ও তার সাথের অন্যান্য মহিলা সাহাবী (রাঃ), অথচ তারা ছিলেন মুহরিমাহ্ ঠিক এ মুহূর্তে তারা পুরুষদের পাশ অতিক্রমকালে মুখে পর্দা ফেলেছিলেন যদিও মুহরিমাহ্ অবস্থায় মুখে পর্দা ফেলানো বা মুখ ঢেকে রাখা ঠিক নয়।
‘আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, মুহরিমাহ্ মুখে নিক্বাব দিবে না- এ মর্মে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা রয়েছে কিন্তু মাথা থেকে কাপড় একটু ঝুলিয়ে দেবার ব্যাপারে একাধিক ফকীহ মতামত দিয়েছেন। তবে নিষেধ করেছেন ওড়না, কাপড়- এগুলো মুখে শক্ত করে বাঁধতে এবং বোরকা পরতে। প্রথম কথার কথক হলেন ‘আত্বা, মালিক, সুফিয়ান, সাওরী, আহমাদ বিন হাম্বল, ইসহাক, মুহাম্মাদ ইবনু হাসান, ইমাম শাফি‘ঈ এটাকে সহীহ বলেছেন এবং এ কথাই বলেছেন ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) এবং ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর ছাত্রবৃন্দ।
‘আল্লামা ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) তাঁর মুগনী কিতাবে (৩য় খণ্ড ৩২৬ পৃষ্ঠায়) বলেন, পুরুষদের নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে মুহরিমাহ্ যদি প্রয়োজনবোধ করেন তার মুখ ঢেকে রাখতে, তাহলে মাথার উপরের কাপড়টি তার মুখে ঝুলিয়ে দিতে পারেন।
পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে
২৬৯১-[১৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধিহীন তেল ব্যবহার করতেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَدَّهِنُ بالزيت وَهُوَ محرمٌ غيرَ المقنّتِ يَعني غيرَ المطيَّبِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, তেল যদি সুগন্ধি মিশ্রিত না থাকে তাহলে তা দ্বারা তেল মালিশ করা জায়িয। কিন্তু অত্র হাদীসটি একটি য‘ঈফ হাদীস। আরো বুঝা গেল যদি তেলে সুগন্ধি মিশ্রিত থাকে তাহলে মালিশ বৈধ হবে না মুহরিমের জন্য। ‘আল্লামা ইবনুল মুনযীর (রহঃ) বলেন, মুহরিমের জন্য যায়তুন, চর্বি, ঘি এবং তিলের তৈল খাওয়া এবং তা মাথা ও দাড়ি ব্যতীত মাখানো জায়িয। তিনি আরো বলেছেন, ‘উলামায়ে কিরামের ঐকমত্যে মুহরিমের শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার নিষেধ তবে যায়তুন মাখতে পারে।
আমি [‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ)] বলব, তেল সারা শরীরে মাথা ও দাড়ি ব্যতীত ব্যবহার জায়িয- এটা সকলের ঐকমত্যের কথা যারা বলেছেন তাদের কথার ভিতর ইজমা নিয়ে একটু সংশয় রয়েছে।
কেননা হানাফী ও মালিকী বিদ্বানদের কথা থেকে বুঝা যায় যে, তারা তেল মালিশ করার বিপক্ষে। যেমন প্রসিদ্ধ ফিকহের কিতাব হিদায়াতে রয়েছে, ‘‘মুহরিম কোন প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الحاج الشعث التفل হাজী নিজেকে আল্লাহমুখী করতে গিয়ে এলোমেলো করে রাখবে।
‘আল্লামা ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেন, والشعث انتشار الشعر وتغييره لعد تعهده অর্থাৎ- شعث অর্থ হলো চুল বিক্ষিপ্ত ও পরিবর্তন করে রাখা নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার মাধ্যমে। সুতরাং এ হাদীসই প্রমাণ করে মুহরিম তেল মাখবে না, কারণ তেল মাখালে তো আর চুল এলোমেলো থাকে না।
‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) তাঁর ‘‘শারহুল মানাসিক’’ নামক কিতাবে বলেন, ‘‘যদি মুহরিম সুগন্ধি মিশ্রিত ছাড়া তেল যেমনঃ খাঁটি তেল অথবা তেলের অধিকাংশটা যায়তুন ব্যবহার করে তাহলে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বলেছেন, তার ফিদিয়া দেয়া লাগবে। আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেছেন, সাদাকা দিতে হবে। তবে আবূ হানীফা (রহঃ) থেকে সাদাকা দেয়ার মতও পাওয়া যায়। অপরদিকে যদি পুরোটাই যায়তুন হয়, তাহলে সকলের ঐকমত্যে সাদাকা দিতে হবে। যদি সে সুগন্ধি তেল মাখে তাহলে এ ফাতাওয়া, তবে যদি ঔষধ হিসেবে তেল মাখে অথবা খায় তাহলে সকলের ঐকমত্যে তাকে কোন কিছুই দেয়া লাগবে না। যদি ঘি, চর্বি, তেল হিসেবে ব্যবহার করে অথবা তা যদি ভক্ষণ করে তাহলে কোন অসুবিধা নেই। এ ক্ষেত্রে চুল আর শরীরের মধ্যে কোন পার্থক্য হবে না।
আল বাযায়ী কিতাবে আছে, যদি মুহরিম এমন কোন প্রকার তেল মাখে যা সুগন্ধিযুক্ত এবং তা যদি শরীরের পুরো অঙ্গে হয় তাহলে তার ওপর ফিদিয়া দেয়া আবশ্যক। আর যদি সুগন্ধি মিশ্রিত না হয় তাহলে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বলেন, তারও ফিদিয়া দেয়া লাগবে। আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেছেন, সাদাকা দিতে হবে। আমাদের সাথীরা বলেছেন, ‘‘শরীরে যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয় তা মোটামুটি তিন প্রকার।
এক প্রকার হল যা শুধুই সুগন্ধি, যেমনঃ মিসকে আম্বার কোন মুহরিম যদি এ প্রকারের সুগন্ধি ব্যবহার করেন যেভাবেই করুন না কেন তার কাফফারাহ্ আবশ্যক হবে। এমনকি যদি এর মাধ্যমে তার চোখের ঔষধ লাগিয়ে থাকেন তাহলেও একই হুকুম।
দ্বিতীয় প্রকার হলো যেটা বস্ত্তত কোন সুগন্ধি নয় যেমনঃ চর্বি, সুতরাং মুহরিম যদি এটার মাধ্যম তেল মালিশ করে বা খেয়ে ফেলেন তাতে কোন সুগন্ধি নয় তবে মাঝে মধ্যে তা সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ তেল, তিলের তেল ইত্যাদি। সুতরাং যদি কোন মুহরিম এটাকে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করে তাহলে তার ওপর কাফফারাহ ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে যদি খাওয়ার কাজে বা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে তাহলে কাফফারাহ আবশ্যক হবে না।