পরিচ্ছেদঃ ১১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে
২৬৯২-[১৫] নাফি’ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) শীত অনুভব করে বললেন, নাফি’! আমার গায়ে একটি কাপড় জড়িয়ে দাও। (নাফি’ বলেন) আমি তাঁর গায়ের উপর একটি ওভারকোট জড়িয়ে দিলাম। তখন তিনি (ইবনু ’উমার) বললেন, আমার গায়ে ওভারকোট জড়িয়ে দিলে অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিমের জন্য তা নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ نَافِعٍ
أَنَّ ابْنَ عُمَرَ وَجَدَ الْقُرَّ فَقَالَ: ألق عَليّ ثوبا نَافِعُ فَأَلْقَيْتُ عَلَيْهِ بُرْنُسًا فَقَالَ: تُلْقِي عَلَيَّ هَذَا وَقَدْ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَلْبَسَهُ الْمُحْرِمُ؟ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد؟
ব্যাখ্যা: (قَدْ نَهٰى رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ أَنْ يَلْبَسَهُ الْمُحْرِمُ؟) ‘‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম ব্যক্তিকে তা পড়তে নিষেধ করেছেন’’। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেনঃ নাফি' (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর শরীরের উপর ঢিলেঢালা লম্বা পোশাক ঝুলিয়ে দিলেন। আমাদের মত হলো, মুহরিম ব্যক্তির জন্য সেলাই করা পোশাক পড়া অথবা তা দ্বারা শরীরের কোন অঙ্গ ঢেকে ফেলা বৈধ নয়। শুধুমাত্র অপারগ অবস্থা ছাড়া। তিনি আরো বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) সাবধানতা অবলম্বনের জন্য সেলাই করা কাপড়কে মুহরিম ব্যক্তির জন্য অপছন্দ করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে
২৬৯৩-[১৬] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহায়নাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মক্কার পথে ’লুহা- জামাল’ নামক জায়গায় নিজের মাথার মাঝখানে শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَالِكٍ بن بُحَيْنَةَ قَالَ: احْتَجَمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُحْرِمٌ بِلَحْيِ جَمَلٍ مِنْ طريقِ مكةَ فِي وسط رَأسه
ব্যাখ্যা: কোন কোন বর্ণনায় لحيى جمل আছে, ‘জামাল’ মক্কা নগরীর একটি রাস্তার নাম। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, বাকরী তাঁর ‘‘মু‘জামাহ্’’য় বলেছেন ‘জামাল’ হলো একটি কূপ যার আলোচনা তায়াম্মুম অধ্যায়ের মধ্যে আবূ জাহম-এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। ইবনু ওয়াযযাহ্ বলেন, ‘জামাল’ হলো জুহফার গিরিপথ মক্কায় হাজীদের পানি পান করানোর স্থান থেকে সাত মাইল দূরে। আল ক্বমূস প্রণেতা বলেন, لحى جمل হলো হারামায়নের মাঝে অবস্থিত একটি স্থান এবং তা মদীনার নিকটবর্তী।
পরিচ্ছেদঃ ১১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে
২৬৯৪-[১৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় ব্যথার কারণে তাঁর পায়ের পাতার উপর শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: احْتَجَمَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُحْرِمٌ عَلَى ظَهْرِ الْقَدَمِ مِنْ وَجَعٍ كَانَ بِهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ
ব্যাখ্যা: নাসায়ীর বর্ণনায় রয়েছে, (وثئ) ‘‘ওয়াসয়ুন’’ হচ্ছে এমন আঘাত বা ব্যথা যা গোশতে হয় হাড্ডি পর্যন্ত পৌঁছে না, অথবা ব্যথাটি হাড় পর্যন্ত পৌঁছায় কিন্তু হাড় ভাঙ্গে না। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেছেন, পায়ের উপরিভাগে শিঙ্গা লাগানো কোন চুল বা পশম কাটা ছাড়াই সম্ভব। সুতরাং চুল কাটা ছাড়া শিঙ্গা লাগালে তাতে কোন অসুবিধা নেই, পাশাপাশি শিঙ্গা তো লাগানো হয়েছে অসুস্থতার কারণে, তাই এখানে অতিরিক্ত আরো সুযোগ প্রদত্ত হল। আমি [‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ)] বলবো, এ হাদীসে আছে পায়ের উপরিভাগে শিঙ্গা লাগানোর কথা, কিন্তু ইবনু ‘আব্বাস ও ইবনু বুহায়নাহ্’র হাদীসে আছে, মাথা ব্যথার কারণে মাথায় শিঙ্গা লাগানোর কথা, আবার জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে পিঠের অথবা গুপ্তাঙ্গে। এগুলো ভিন্ন হওয়ার কারণ কয়েকটিঃ
১. দু’ ধরনের যন্ত্রণার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ জায়গায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।
২. একবার ছিল ‘উমরার ক্ষেত্রে আর অন্যবার ছিল বিদায় হজ্জের সময়। কেউ কেউ এর বলেছেন বিদায় হজ্জে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিঙ্গা লাগিয়েছেন একাধিকবার।
পরিচ্ছেদঃ ১১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে
২৬৯৫-[১৮] আবূ রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবি মায়মূনাহ্-কে হালাল অবস্থায় বিয়ে করেছিলেন এবং হালাল অবস্থায়ই তার সাথে মেলামেশা করেছিলেন। আর আমিই ছিলাম তাদের মধ্যে বার্তাবাহক। (আহমাদ, তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী হাদীসটি হাসান বলেছেন)[1]
وَعَن أبي رافعٍ
قَالَ: تَزَوَّجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَيْمُونَةَ وَهُوَ حَلَالٌ وَبَنَى بِهَا وَهُوَ حَلَالٌ وَكُنْتُ أَنَا الرَّسُولَ بَيْنَهُمَا. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি প্রথম পরিচ্ছেদের ইয়াযীদ বিন আসম-এর, যা পূর্বে চলে গেছে তারই মত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনাহ্ (রাঃ)-কে বিবাহ করেছেন হালাল অবস্থায় যদিও এ বর্ণনাটি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনার বিপরীত। ইমাম হাযিমী তাঁর কিতাব ‘বায়ানুন্ নাসিখ ওয়াল মানসূখ’ (পৃঃ ১১) বলেন, আবূ রাফি'-এর হাদীসই বেশি ‘আমলের উপযুক্ত, কারণ তিনি হচ্ছেন ঘটনার বাস্তবসাক্ষী আর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হলেন বর্ণনাকারী। সুতরাং বাস্তব সাক্ষী যিনি তার বর্ণনার সাথে অন্য কোন সাধারণ বর্ণনাকারীর বর্ণনা যদি সাংঘর্ষিক হয় তাহলে বাস্তবসাক্ষী যিনি তার বর্ণনাটা অগ্রাধিকার পাওয়াই স্বাভাবিক। এমনটাই ঘটেছিল যখন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) মোজার উপর মাসেহ করার মাসআলাহ্ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন তখন তিনি মাসআলাটি প্রশ্নকারীকে ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট থেকে জেনে নিতে বলেন এবং বলেন, কারণ ‘আলী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফর করতেন। সুতরাং সফরে মোজার উপর মাসেহ কেমন হবে তা আমার চেয়ে তিনিই ভালো জানেন। এ মতই ইমাম যায়লা‘ঈ সমর্থন করেছেন। (নাস্বুর রায়াহ ৩য় খণ্ড পৃঃ ১৭৪)