২৬৯১

পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৯১-[১৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধিহীন তেল ব্যবহার করতেন। (তিরমিযী)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَدَّهِنُ بالزيت وَهُوَ محرمٌ غيرَ المقنّتِ يَعني غيرَ المطيَّبِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن ابن عمر رضي الله عنهما ان النبي صلى الله عليه وسلم كان يدهن بالزيت وهو محرم غير المقنت يعني غير المطيب. رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, তেল যদি সুগন্ধি মিশ্রিত না থাকে তাহলে তা দ্বারা তেল মালিশ করা জায়িয। কিন্তু অত্র হাদীসটি একটি য‘ঈফ হাদীস। আরো বুঝা গেল যদি তেলে সুগন্ধি মিশ্রিত থাকে তাহলে মালিশ বৈধ হবে না মুহরিমের জন্য। ‘আল্লামা ইবনুল মুনযীর (রহঃ) বলেন, মুহরিমের জন্য যায়তুন, চর্বি, ঘি এবং তিলের তৈল খাওয়া এবং তা মাথা ও দাড়ি ব্যতীত মাখানো জায়িয। তিনি আরো বলেছেন, ‘উলামায়ে কিরামের ঐকমত্যে মুহরিমের শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার নিষেধ তবে যায়তুন মাখতে পারে।

আমি [‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ)] বলব, তেল সারা শরীরে মাথা ও দাড়ি ব্যতীত ব্যবহার জায়িয- এটা সকলের ঐকমত্যের কথা যারা বলেছেন তাদের কথার ভিতর ইজমা নিয়ে একটু সংশয় রয়েছে।

কেননা হানাফী ও মালিকী বিদ্বানদের কথা থেকে বুঝা যায় যে, তারা তেল মালিশ করার বিপক্ষে। যেমন প্রসিদ্ধ ফিকহের কিতাব হিদায়াতে রয়েছে, ‘‘মুহরিম কোন প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الحاج الشعث التفل হাজী নিজেকে আল্লাহমুখী করতে গিয়ে এলোমেলো করে রাখবে।

‘আল্লামা ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেন, والشعث انتشار الشعر وتغييره لعد تعهده অর্থাৎ- شعث অর্থ হলো চুল বিক্ষিপ্ত ও পরিবর্তন করে রাখা নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার মাধ্যমে। সুতরাং এ হাদীসই প্রমাণ করে মুহরিম তেল মাখবে না, কারণ তেল মাখালে তো আর চুল এলোমেলো থাকে না।

‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) তাঁর ‘‘শারহুল মানাসিক’’ নামক কিতাবে বলেন, ‘‘যদি মুহরিম সুগন্ধি মিশ্রিত ছাড়া তেল যেমনঃ খাঁটি তেল অথবা তেলের অধিকাংশটা যায়তুন ব্যবহার করে তাহলে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বলেছেন, তার ফিদিয়া দেয়া লাগবে। আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেছেন, সাদাকা দিতে হবে। তবে আবূ হানীফা (রহঃ) থেকে সাদাকা দেয়ার মতও পাওয়া যায়। অপরদিকে যদি পুরোটাই যায়তুন হয়, তাহলে সকলের ঐকমত্যে সাদাকা দিতে হবে। যদি সে সুগন্ধি তেল মাখে তাহলে এ ফাতাওয়া, তবে যদি ঔষধ হিসেবে তেল মাখে অথবা খায় তাহলে সকলের ঐকমত্যে তাকে কোন কিছুই দেয়া লাগবে না। যদি ঘি, চর্বি, তেল হিসেবে ব্যবহার করে অথবা তা যদি ভক্ষণ করে তাহলে কোন অসুবিধা নেই। এ ক্ষেত্রে চুল আর শরীরের মধ্যে কোন পার্থক্য হবে না।

আল বাযায়ী কিতাবে আছে, যদি মুহরিম এমন কোন প্রকার তেল মাখে যা সুগন্ধিযুক্ত এবং তা যদি শরীরের পুরো অঙ্গে হয় তাহলে তার ওপর ফিদিয়া দেয়া আবশ্যক। আর যদি সুগন্ধি মিশ্রিত না হয় তাহলে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বলেন, তারও ফিদিয়া দেয়া লাগবে। আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেছেন, সাদাকা দিতে হবে। আমাদের সাথীরা বলেছেন, ‘‘শরীরে যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয় তা মোটামুটি তিন প্রকার।

এক প্রকার হল যা শুধুই সুগন্ধি, যেমনঃ মিসকে আম্বার কোন মুহরিম যদি এ প্রকারের সুগন্ধি ব্যবহার করেন যেভাবেই করুন না কেন তার কাফফারাহ্ আবশ্যক হবে। এমনকি যদি এর মাধ্যমে তার চোখের ঔষধ লাগিয়ে থাকেন তাহলেও একই হুকুম।

দ্বিতীয় প্রকার হলো যেটা বস্ত্তত কোন সুগন্ধি নয় যেমনঃ চর্বি, সুতরাং মুহরিম যদি এটার মাধ্যম তেল মালিশ করে বা খেয়ে ফেলেন তাতে কোন সুগন্ধি নয় তবে মাঝে মধ্যে তা সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ তেল, তিলের তেল ইত্যাদি। সুতরাং যদি কোন মুহরিম এটাকে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করে তাহলে তার ওপর কাফফারাহ ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে যদি খাওয়ার কাজে বা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে তাহলে কাফফারাহ আবশ্যক হবে না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)