পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৭৪-[১৪] মুহাজির আল মাক্কী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার জাবির কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহকে দেখে (দু’আ পাঠের সময়) নিজের দুই হাত উঠাবে। জবাবে জাবির (রাঃ) বললেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজ্জ/হজ করেছি, কিন্তু কক্ষনো আমরা এরূপ করিনি। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

عَنِ الْمُهَاجِرِ الْمَكِّيِّ قَالَ: سُئِلَ جَابِرٌ عَنِ الرَّجُلِ يَرَى الْبَيْتَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فَقَالَ قَدْ حَجَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ نَكُنْ نَفْعَلُهُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ

عن المهاجر المكي قال: سىل جابر عن الرجل يرى البيت يرفع يديه فقال قد حججنا مع النبي صلى الله عليه وسلم فلم نكن نفعله. رواه الترمذي وابو داود

ব্যাখ্যা: কাবা দর্শনে হাত উত্তোলন করার হুকুমঃ বায়তুল্লাহ দেখার সাথে সাথে হাত উত্তোলন করে দু‘আ করা জায়িয আছে কিনা- এ বিষয়ে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ রযেছে, যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

ইমাম আবূ হানীফা, শাফি‘ঈ, আহমাদ, সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) প্রমুখ ইমামদের নিকট বায়তুল্লাহ নজরে পরার সময় উভয় হাত উত্তোলন করে দু‘আ পড়া সুন্নাত। তাদের দলীল হলো ইবনু জুরায়জ-এর একটি হাদীস এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত এই হাদীসে রয়েছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত স্থানে হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন- সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আরম্ভকালে, বায়তুল্লাহর নিকট, বায়তুল্লাহ দর্শনে, সাফা-মারওয়ায়, ‘আরাফাতে, মুযদালিফায় এবং দু’ জামারায়।

আর ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে বায়তুল্লাহ দর্শনকালে দু‘আ পাঠের সময় হাত উত্তোলন করা বৈধ নয়। তিনি উপরোক্ত মুহাজিরে মাক্কী বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন। বর্ণিত হাদীসটি ইমাম তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৭৫-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাহ্ হতে (হজ্জ/হজ ও ’উমরা পালনের জন্য) মক্কায় প্রবেশ করে হাজারে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হলেন, একে চুমু খেলেন। তারপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন, এরপর সাফা পাহাড়ের দিকে এলেন এবং এর উপর উঠলেন যাতে বায়তুল্লাহ দেখতে পান। তারপর দু’ হাত উঠালেন এবং উদারমনে আল্লাহর যিকির ও দু’আ করতে লাগলেন। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: أَقْبَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَخَلَ مَكَّةَ فَأَقْبَلَ إِلَى الْحَجَرِ فَاسْتَلَمَهُ ثُمَّ طَافَ بِالْبَيْتِ ثُمَّ أَتَى الصَّفَا فَعَلَاهُ حَتَّى يَنْظُرَ إِلَى الْبَيْتِ فَرَفَعَ يَدَيْهِ فَجَعَلَ يَذْكُرُ اللَّهَ مَا شَاءَ وَيَدْعُو. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابي هريرة قال: اقبل رسول الله صلى الله عليه وسلم فدخل مكة فاقبل الى الحجر فاستلمه ثم طاف بالبيت ثم اتى الصفا فعلاه حتى ينظر الى البيت فرفع يديه فجعل يذكر الله ما شاء ويدعو. رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রত্যেক মক্কায় প্রবেশকারী ব্যক্তিই তাওয়াফ করবে। চাই সে মুহরিম হোক অথবা না হোক।

বর্ণিত হাদীসটি এর উপরও দলীল যে, বায়তুল্লাহ দেখার পর নির্ধারিত কোন দু‘আ পাঠ করার বিধান নেই। বরং যে কোন দু‘আই করতে পারে। তবে দু‘আয়ে মাসুরা বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত দু‘আ পড়া উত্তম।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৭৬-[১৬] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বায়তুল্লাহর চারদিকে তাওয়াফ করা সালাতেরই মতো, তবে এতে তোমরা কথা বলতে পারো। তাই তাওয়াফের সময় ভালো কথা ব্যতীত আর কিছু বলবে না। (তিরমিযী, নাসায়ী ও দারিমী)[1]

ইমাম তিরমিযী (রহঃ) একদল মুহাদ্দিসের নাম উল্লেখ করেছেন যারা এ হাদীসকে ইবনু ’আব্বাস-এর উক্তি (মাওকূফ) বলে উল্লেখ করেছেন।

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الطَّوَافُ حَوْلَ الْبَيْتِ مِثْلُ الصَّلَاةِ إِلَّا أَنَّكُمْ تَتَكَلَّمُونَ فِيهِ فَمَنْ تَكَلَّمَ فِيهِ فَلَا يَتَكَلَّمَنَّ إِلَّا بِخَيْرٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَذَكَرَ التِّرْمِذِيُّ جَمَاعَةً وَقَفُوهُ عَلَى ابْنِ عباسٍ

وعن ابن عباس ان النبي صلى الله عليه وسلم قال: «الطواف حول البيت مثل الصلاة الا انكم تتكلمون فيه فمن تكلم فيه فلا يتكلمن الا بخير» . رواه الترمذي والنساىي والدارمي وذكر الترمذي جماعة وقفوه على ابن عباس

ব্যাখ্যা: ইমাম তিরমিযী (রহঃ) একদল মুহাদ্দিসের নাম উল্লেখ করেছেন, যারা এ হাদীসটিকে ইবনু ‘আব্বাস-এর উক্তি (মাওকূফ) হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।

‘বায়তুল্লাহর চারদিকে তাওয়াফ করা সালাতের মতো’ এর অর্থ এই নয় যে, সালাতে যেমন কিরাআত, রুকূ‘, সিজদা্ ইত্যাদি আছে তেমনিভাবে তাওয়াফের মধ্যেও এগুলো আছে। তবে শরীর পাক, কাপড় পাক ও সতর ঢাকা যেমনিভাবে সালাতের জন্য অপরিহার্য, তেমনিভাবে তাওয়াফের জন্যও অপরিহার্য। এদিক দিয়ে তাওয়াফ সালাতের সাদৃশ্য। এ হাদীসের ভিত্তিতে ইমামগণ বলেছেন পবিত্রতা তাওয়াফের জন্য শর্ত। কিন্তু হানাফীদের নিকট শর্ত নয় বরং উত্তম।

আলোচ্য হাদীসে তাওয়াফের মধ্যে উত্তম কথা বলা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে দলীল। উত্তম কথা হলো যিকির, তিলাওয়াত, দীনী ‘ইলম শিক্ষা করা বা শিক্ষা দেয়া ইত্যাদি। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে তার এ সকল কাজে যেন অপরের কষ্ট না হয়। যদি কারো তাওয়াফ চলাকালীন সময় হাদাস (অপবিত্র) হয়ে যায়, তাহলে নতুন করে উযূ করে পুনরায় তাওয়াফ শুরু করতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৭৭-[১৭] উক্ত রাবী [ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হাজারে আসাওয়াদ যখন জান্নাত হতে নাযিল হয়, তখন তা দুধের চেয়েও বেশি সাদা ছিল। অতঃপর আদম সন্তানের গুনাহ একে কালো করে দেয়। [আহমাদ ও তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।][1]

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَزَلَ الْحَجَرُ الْأَسْوَدُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِي آدَمَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيح

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «نزل الحجر الاسود من الجنة وهو اشد بياضا من اللبن فسودته خطايا بني ادم» . رواه احمد والترمذي وقال: هذا حديث حسن صحيح

ব্যাখ্যা: অনেক ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন হাদীসটি তার প্রকাশ্য অর্থেই গ্রহণ করতে হবে। প্রকৃতপক্ষেই তা জান্নাতী পাথর জান্নাত হতে তা অবতীর্ণ করা হয়েছে।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন হাজারে আসওয়াদ পৃথিবীতে আসে তখন সেটা দুধের চেয়ে সাদা ছিল। অতঃপর আদাম সন্তানদের পাপের দ্বারা সেটা কালো হয়ে গেল। অর্থাৎ- বানী আদামের যে সকল লোক হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করে তাদের গুনাহের দ্বারা এ পাথর সাদা থেকে কালো হয়েছে। এ কথাগুলো সুনানে আত্ তিরমিযী’র বর্ণনায় এসেছে। মুসনাদে আহমাদের বর্ণনা হলো- হাজারে আসওয়াদ জান্নাত থেকে এসেছে। আর সেটা ছিল বরফের চেয়েও সাদা। অতঃপর মুশরিকদের পাপের দরুন সেটা কালো রং ধারণ করেছে। ত্ববারানী’র এক বর্ণনায় এসেছে- হাজারে আসওয়াদ জান্নাতের পাথরসমূহের মধ্যে একটি পাথর। এটা ছাড়া দুনিয়াতে জান্নাতের আর কিছুই নেই। আর এটা পানির মতো সাদা ছিল।

কাযী বায়যাবী (রহঃ) বলেন-এ হাদীস দ্বারা হাজারে আসওয়াদের ফাযীলাতের কথা বুঝানো হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৭৮-[১৮] উক্ত রাবী [ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজারে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহর কসম! কিয়ামতের দিন আল্লাহ এটিকে উঠাবেন, তখন এর দু’টি চোখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখতে পাবে। তার একটি জিহ্বা থাকবে ও এই জিহবা দিয়ে সে কথা বলবে এবং যে তাকে ঈমানের সাথে চুমু দিয়েছে তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। (তিরমিযী, ইনু মাজাহ ও দারিমী)[1]

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْحَجَرِ: «وَاللَّهِ لَيَبْعَثَنَّهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَهُ عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِهِ يَشْهَدُ عَلَى مَنِ اسْتَلَمَهُ بِحَقٍّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه والدارمي

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم في الحجر: «والله ليبعثنه الله يوم القيامة له عينان يبصر بهما ولسان ينطق به يشهد على من استلمه بحق» . رواه الترمذي وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: (وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِه) তুরবিশতী (রহঃ) বলেনঃ মৃত্যুর পরে পুনরুত্থান, যা মানুষের জন্য নির্দিষ্ট। এমনিভাবে পাথরকেও তিনি জীবন দিতে সক্ষম যাতে সে কথা বলতে পারে। আর তাকে বাকশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দিবেন যাতে সে পার্থক্য করতে পারে- কে প্রকৃত স্পর্শকারী আর কে নয়? আর এই দু’টি যন্ত্র হল- চক্ষু ও জিহবা।

(يَشْهَدُ عَلٰى مَنِ اسْتَلَمَه بِحَقٍّ) স্পর্শকারী শুধু স্পর্শ করবে তার নিজের জন্য এমনটি যেন না হয়, বরং আল্লাহর নির্দেশ ও সুন্নাতের অনুসরণ যেন ‘আমল করা উদ্দেশ্য হয়। ইমাম ‘ইরাকী বলেনঃ এখানে عَلٰى শব্দটি لام এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে স্পর্শ করার সাক্ষ্য হিসেবে, যাতে সংরক্ষণ করা বুঝায়।

(بِحَقٍّ) প্রকৃতপক্ষেই তা হবে ঈমান ও সাওয়াবের আশায়। এ হাদীসকে বাহ্যিক অর্থের উপরই বুঝানো হয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বস্ত্তর ক্ষেত্রে বাকশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে সক্ষম যেমনটি তিনি মানুষের ক্ষেত্রে করবেন। আর যাদের অন্তরে বক্রতা আছে তারা এর অপব্যাখ্যা করে। তারা বলে, مستلم (স্পর্শকারী) ব্যক্তির প্রতিদান দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৭৯-[১৯] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, হাজারে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহীম জান্নাতের ইয়াকূতসমূহের মধ্যে দু’টি ইয়াকূত। আল্লাহ এদের নূর (আলো) দূর করে দিয়েছেন। যদিও এ দু’টির নূর (আলো) আল্লাহ তা’আলা দূর করে না দিতেন। তবে এরা পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তের মধ্যে যা আছে তাকে আলোকময় করে দিতো। (তিরমিযী)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ الرُّكْنَ وَالْمَقَامَ يَاقُوتَتَانِ مِنْ يَاقُوتِ الْجَنَّةِ طَمَسَ اللَّهُ نورَهما وَلَو لم يطمِسْ نورَهما لأضاءا مَا بينَ المشرقِ والمغربِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن ابن عمر قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «ان الركن والمقام ياقوتتان من ياقوت الجنة طمس الله نورهما ولو لم يطمس نورهما لاضاءا ما بين المشرق والمغرب» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: মাকামে ইব্রাহীমকে সালাতের স্থান বানানোর জন্য কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ এসেছে, وَاتَّخِذُوْا مِنْ مِّقَامِ إِبْرَاهِيْمَ مُصَلًّى সুতরাং তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করবে। যদি ভীড়ের কারণে তৎক্ষণিকভাবে তার নিকট পড়তে না পারে তাহলে যেখানে সম্ভব সেখানে আদায় করবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৮০-[২০] ’উবায়দ ইবনু উমায়র (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) দু’ রুকনের (হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর) কাছে যেভাবে ভীড় করতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের আর কাউকে এমনভাবে (প্রতিযোগিতামূলকভাবে) ভীড় করতে দেখিনি। ইবনু ’উমার(রাঃ) বলেন, আমি যদি এরূপ করি (তাতে দোষের কোন বিষয় নয়), কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই এদের স্পর্শ করা গুনাহের কাফফারাহ্। আমি তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) আরো বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর চারদিকে সাতবার তাওয়াফ করবে ও তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করবে, তবে তা তার জন্য গোলাম মুক্ত করে দেবার সমতুল্য হবে। এটা ছাড়াও তাঁকে (ইবনু ’উমার (রাঃ)-কে) বলতে শুনেছি, কোন লোক এতে এক পা ফেলে অপর পা উঠানোর আগেই বরং আল্লাহ তা’আলা তার একটি গুনাহ মাফ করে দেন ও তার জন্যে একটি সাওয়াব নির্ধারণ করেন। (তিরমিযী)[1]

وَعَن عُبيدِ بنِ عُمَيرٍ: أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ يُزَاحِمُ عَلَى الرُّكْنَيْنِ زِحَامًا مَا رَأَيْتُ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُزَاحِمُ عَلَيْهِ قَالَ: إِنْ أَفْعَلْ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ مَسْحَهُمَا كَفَّارَةٌ لِلْخَطَايَا» وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: «مَنْ طَافَ بِهَذَا الْبَيْتِ أُسْبُوعًا فَأَحْصَاهُ كَانَ كَعِتْقِ رَقَبَةٍ» . وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: «لَا يَضَعُ قَدَمًا وَلَا يَرْفَعُ أُخْرَى إِلا حطَّ اللَّهُ عنهُ بهَا خَطِيئَة وكتبَ لهُ بهَا حَسَنَة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن عبيد بن عمير: ان ابن عمر كان يزاحم على الركنين زحاما ما رايت احدا من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم يزاحم عليه قال: ان افعل فاني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «ان مسحهما كفارة للخطايا» وسمعته يقول: «من طاف بهذا البيت اسبوعا فاحصاه كان كعتق رقبة» . وسمعته يقول: «لا يضع قدما ولا يرفع اخرى الا حط الله عنه بها خطيىة وكتب له بها حسنة» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: অন্যান্য সহাবায়ে কিরাম অধিক ভীড়ের সময় হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীকে স্পর্শ করা ছেড়ে দিতেন। কেননা তাতে নিজের এবং অপর লোকদের কষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সহাবায়ে কিরামের মাঝে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছোট থেকে ছোট সকল কাজকেও পরিপূর্ণরূপে মুহাব্বাতের সাথে আদায় করতেন। বর্তমান যুগে ভীড় বেশি হওয়ার কারণে অন্যান্য সহাবায়ে কিরামের আমলের অনুসরণ করাই আমাদের জন্য উত্তম।

শায়খ ‘আবদুল হাক্ব মুহাম্মাদ দেহলবী (রহঃ) লুম্‘আত নামক কিতাবে বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর কথা اِنْ اَفْعَلُ যদি আমি করি এর ব্যাখ্যা হলো যদি আমি হাজারে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানীকে স্পর্শ করার জন্য ভীড় করি তোমরা আমাকে নিষেধ করো না। কেননা আমি এ দু’টি স্পর্শ করার ব্যাপারে যে ফাযীলাত শুনেছি তার উপর আমি নিজেকে স্থির রাখতে পারি না।

বায়তুল্লাহকে সাতবার তাওয়াফ করাকে গোলাম আজাদের সমতুল্য ধরা হয়েছে। এর ব্যাখ্যায় অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরাম সাতবার প্রদক্ষিণ করার অর্থ উদ্দেশ্য নিয়েছেন। আর কিছু ‘উলামায়ে কিরাম সাতদিন তাওয়াফ করার অর্থ নিয়েছেন। কিন্তু প্রথমটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। কেননা অন্যান্য হাদীস দ্বারা এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে বর্ণিত সাওয়াব সে পাবে যদি তাওয়াফের ওয়াজিব, সুন্নাত এবং শর্তসমূহ সবকিছু ঠিকভাবে আদায় করে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৮১-[২১] ’আব্দুল্লাহ ইবনুস্ সায়িব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দু’ রুকনের (হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী) মধ্যবর্তী স্থানে এ দু’আ পড়তে শুনেছি- ’’রব্বানা- আ-তিনা ফিদ্‌দুন্ইয়া- হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াক্বিনা- ’আযা-বান্না-র’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান কর এবং জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কর।)। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن عبد الله بن السَّائِب قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَا بَيْنَ الرُّكْنَيْنِ: (رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَاب النَّار)
رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن عبد الله بن الساىب قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ما بين الركنين: (ربنا اتنا في الدنيا حسنة وفي الاخرة حسنة وقنا عذاب النار) رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: বর্ণিত হাদীসটি তাওয়াফের মাঝে এবং হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানের মাঝে দু‘আ করা সুন্নাত হওয়ার উপর দলীল। হাদীসটি ইমাম আবূ দাঊদ, ইবনু হিব্বান, হাকিম এবং বায়হাক্বীও বর্ণনা করেছেন।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৮২-[২২] সফিয়্যাহ্ বিনতু শায়বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ তুজরাহ্-এর মেয়ে আমাকে বলেছেন, আমি কুরায়শ গোত্রের কিছু মহিলার সাথে আবূ হুসায়ন পরিবারের একটি ঘরে প্রবেশ করলাম যাতে আমরা সাফা মারওয়ার সা’ঈর সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পাই। তখন আমি তাঁকে সা’ঈ করতে দেখলাম, জোরে জোরে পা ফেলার কারণে তাঁর চাঁদর এদিকে-সেদিকে দুলছিল। আর তখন আমি তাঁকে এ কথাও বলতে শুনেছি, ’’তোমরা সা’ঈ করো’’। কেননা সা’ঈ করা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিপিবদ্ধ (নির্ধারণ) করেছেন। (বাগাবীর শারহুস্ সুন্নাহ এবং আহমাদ কিছু ভিন্নতার সাথে)[1]

وَعَن صفيةَ بنتِ شيبةَ قَالَتْ: أَخْبَرَتْنِي بِنْتُ أَبِي تُجْرَاةَ قَالَتْ: دَخَلْتُ مَعَ نِسْوَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ دَارَ آلِ أَبِي حُسَيْنٍ نَنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَسْعَى بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ فَرَأَيْتُهُ يَسْعَى وَإِنَّ مِئْزَرَهُ لَيَدُورُ مِنْ شِدَّةِ السَّعْيِ وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: «اسْعَوْا فَإِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَيْكُمُ السَّعْيَ» . رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ وَرَوَاهُ أَحْمد مَعَ اخْتِلَاف

وعن صفية بنت شيبة قالت: اخبرتني بنت ابي تجراة قالت: دخلت مع نسوة من قريش دار ال ابي حسين ننظر الى رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو يسعى بين الصفا والمروة فرايته يسعى وان مىزره ليدور من شدة السعي وسمعته يقول: «اسعوا فان الله كتب عليكم السعي» . رواه في شرح السنة ورواه احمد مع اختلاف

ব্যাখ্যা: বর্ণিত হাদীসটি দ্বারা বুঝা যায়, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা-মারওয়ার মাঝে পায়ে হেঁটে সা‘ঈ করেছিলেন। অনেক ‘আলিমগণ বলেছেন, এটা ‘উমরার সা‘ঈ ছিল। কেননা অন্য হাদীস দ্বারা বুঝা যায় বিদায় হজে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরোহী অবস্থায় সা‘ঈ করেছেন।

সা‘ঈর বিধান সম্পর্কে ইমামগণের মতবিরোধঃ

হজ্জ/হজ আদায়ের ক্ষেত্রে সা‘ঈ করা কী? ইমাম শাফি‘ঈ, মালিক ও আহমাদ (রহঃ) প্রমুখের মতে সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করা রুকন তথা ফরয। তাদের নিকট সা‘ঈ ব্যতীত হজ্জ/হজ হবে না। তাদের কথার দলীল হলো আলোচ্য হাদীসের এই অংশ قال عليه السلام اِسْعَوْا فَإِنَّ اللّٰهَ كَتَبَ عَلَيْكُمُ السَّعْىَ অর্থাৎ- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা সা‘ঈ করো। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ওপর সা‘ঈকে নির্ধারণ করেছেন।

ইমাম আবূ হানীফা ও সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) প্রমুখ ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, সা‘ঈ ওয়াজিব। তাদের দলীল আল্লাহ তা‘আলার মহান বাণী لَا جُنَاحَ عَلَيْهِ اَنْ يَّطَّوَّفَ بِهِمَا উল্লেখিত আয়াতে لَا جُنَاحَ বৈধতার প্রতি ইঙ্গিত করেছে। তাছাড়া আরো দলীল রয়েছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৮৩-[২৩] কুদামাহ্ ইবনু ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আম্মার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উটের পিঠে চড়ে সাফা মারওয়ার মাঝে সা’ঈ করতে দেখেছি। কিন্তু কাউকেও মারতে বা হাঁকাতে দেখিনি এবং এমনকি আশেপাশে ’সরো’ ’সরো’ বলতেও শুনিনি। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]

وَعَنْ قُدَامَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمَّارٍ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْعَى بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ عَلَى بَعِيرٍ لَا ضرب وَلَا طرد وَلَا إِلَيْك. رَوَاهُ فِي شرح السّنة

وعن قدامة بن عبد الله بن عمار قال: رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم يسعى بين الصفا والمروة على بعير لا ضرب ولا طرد ولا اليك. رواه في شرح السنة

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের রাবী কুদামাহ্ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্মার, যিনি প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি মক্কায় বসবাস করতেন।

এ প্রখ্যাত সাহাবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বিদায় হজ্জের সময় সাক্ষাত করেন। কুদামাহ্ থেকে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা খুবই সীমিত।

এ হাদীসের আলোকে এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, সময় ক্ষেত্রে বাহনে করে ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করা যাবে। অথবা সাধারণভাবে সাফা-মারওয়ার মাঝে বাহনে চড়ে সা‘ঈ করার বৈধতা প্রদান করা হয়েছে আলোচ্য হাদীসের মাধ্যমে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৮৪-[২৪] ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সবুজ চাদর ইযত্বিবা হিসেবে গায়ে দিয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]

وَعَنْ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَافَ بِالْبَيْتِ مُضْطَجعا بِبُرْدٍ أَخْضَرَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ

وعن يعلى بن امية قال: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم طاف بالبيت مضطجعا ببرد اخضر. رواه الترمذي وابو داود وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: (اَلْاِضْطِبَاعَ) ইযত্বিবা' বলা হয় ডান কাঁধকে বিবস্ত্র রেখে সমস্ত চাদরকে বাম কাঁধের উপর রাখা। কেননা চাদরের মধ্যভাগকে বগলের দিকে রাখা হয় এবং ডান বাহু উন্মুক্ত থাকে।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, (اَلْاِضْطِبَاعَ) হলো ইযার বা লুঙ্গিকে ডান বগলের নিচে প্রবেশ করানো এবং তার অপর প্রান্তকে বাম কাঁধে রাখা আর ডান কাঁধ খোলা থাকবে।

ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, (اَلْاِضْطِبَاعَ) ইযত্বিবা‘ হলো ইযার (লুঙ্গি) অথবা চাদর নিয়ে এটার মধ্যভাগকে ডান বগলের নিচে রাখা। আর অবশিষ্ট দুই পার্শকে বাম কাঁধের উপর বক্ষ ও পিঠের দিক হতে রাখা।

কেউ কেউ বলেন, এটা (اَلْاِضْطِبَاعَ) করা হয় সাহসিকতা প্রকাশের জন্য। যেমন তাওয়াফের সময় দুই হাত ঝুকিয়ে হাঁটা। আর সর্বপ্রথম (اَلْاِضْطِبَاعَ) করা হয় ‘উমরাতুল কাযাতে। যেন এটা দুই হাত ঝুকিয়ে হাঁটার সময় সহায়ক হয়। আর মুশরিকরা যেন তাদের শক্তি লক্ষ্য করে। অতঃপর তা সুন্নাতে পরিণত হয়। সাত চক্করেই (اَلْاِضْطِبَاعَ) করতে হয়। তাওয়াফ শেষ হলে তখন কাপড় ঠিক করে নেয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফের দুই রাক্‘আতের সময় (اَلْاِضْطِبَاعَ) করেননি। অতএব তাওয়াফ শেষ হলে দু’ রাক্‘আত সালাতে অথবা তাওয়াফ চলাকালীন সালাতে দাঁড়ালে অবশ্যই দু’ কাঁধ ঢেকে নিবে।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৮৫-[২৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ জি’রানাহ্ হতে ’উমরা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বায়তুল্লাহর তাওয়াফে তিনবার জোরে জোরে চলেছেন এবং তাঁদের চাদরসমূহ ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর রেখেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم وأصحابَه اعتمروا من الجعْرانة فَرَمَلُوا بِالْبَيْتِ ثَلَاثًا وَجَعَلُوا أَرْدِيَتَهُمْ تَحْتَ آبَاطِهِمْ ثُمَّ قَذَفُوهَا عَلَى عَوَاتِقِهِمُ الْيُسْرَى. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم واصحابه اعتمروا من الجعرانة فرملوا بالبيت ثلاثا وجعلوا ارديتهم تحت اباطهم ثم قذفوها على عواتقهم اليسرى. رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: সাহাবীগণ চাদরকে তাদের ডান কাঁধের নীচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর ফেলে দিতেন।

এ হাদীস হতে প্রমাণিত হয় যে, তাওয়াফে রমল ও ইযত্বিবা' করতে হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك) 11. The Rites of Pilgrimage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১২ পর্যন্ত, সর্বমোট ১২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে