পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে
২৫৮৬-[২৬] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এ দু’টি কোণ তথা রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ কষ্টে ও আরামে কোন অবস্থাতেই স্পর্শ করতে ছাড়িনি যখন থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ দু’ কোণ (রুকন) স্পর্শ করতে দেখেছি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: مَا تَرَكْنَا اسْتِلَامَ هَذَيْنِ الرُّكْنَيْنِ: الْيَمَانِي وَالْحَجَرِ فِي شِدَّةٍ وَلَا رخاء مُنْذُ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يستلمهما
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, বাহ্যিক কথা হচ্ছে, ইবনু ‘উমার (রাঃ) ভীড়ের সময় চুম্বন করা ছেড়ে দেয়াকে ওযর হিসেবে গ্রহণ করতেন না।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে
২৫৮৭-[২৭] বুখারী ও মুসলিমের অপর বর্ণনায় রয়েছে, নাফি’ (রহঃ) বলেছেনঃ আমি ইবনু ’উমার (রাঃ)-কে হাজারে আসওয়াদ নিজ হাতে স্পর্শ করে হাত চুমু খেতে দেখেছি। আর তাঁকে এটা বলতে শুনেছি, যখন থেকে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এটা করতে দেখেছি, তখন থেকে এটা কক্ষনো পরিত্যাগ করিনি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا: قَالَ نَافِعٌ: رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ يَسْتَلِمُ الْحَجَرَ بِيَدِهِ ثُمَّ قَبَّلَ يَدَهُ وَقَالَ: مَا تَرَكْتُهُ مُنْذُ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْعَله
ব্যাখ্যা: মুসলিমের শব্দে রয়েছে, (يَسْتَلِمُ الْحَجَرَ بِيَدَيْهِ ثُمَّ قَبَّلَ يَدَه) অর্থাৎ- তিনি তার হাত দিয়ে পাথর স্পর্শ করলেন। অতঃপর হাত চুম্বন করলেন। সম্ভবত এটা (অর্থাৎ- হাত দিয়ে চুম্বন করা) ভীড়ের সময় করেছিলেন। যখন তিনি পাথর চুম্বন করতে সক্ষম হননি। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি মুখ দিয়ে পাথর চুম্বন করেছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে
২৫৮৮-[২৮] উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করলাম যে, আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তুমি সওয়ার হয়ে মানুষের পেছনে পেছনে তাওয়াফ করো। তিনি [উম্মু সালামাহ (রাঃ)] বলেন, আমি তাওয়াফ করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর পাশে দাঁড়িয়ে সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করছিলেন এবং সালাতে সূরা ’’ওয়াত্ তূর ওয়া কিতা-বিম্ মাসতূর’’ পড়ছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: شَكَوْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنِّي أَشْتَكِي. فَقَالَ: «طُوفِي مِنْ وَرَاءِ النَّاسِ وَأَنْتِ رَاكِبَةٌ» فَطُفْتُ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي إِلَى جَنْبِ الْبَيْتِ يَقْرَأُ ب (الطُّورِ وكِتَابٍ مسطور)
ব্যাখ্যা: উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ্ যায়নাব বিনতু আবূ সালামাহ (রাঃ)-এ মা, মক্কা হতে মদীনাহ্ যাওয়ার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অসুস্থতার অভিযোগ করলেন যে, তিনি অসুস্থতাজনিত দুর্বলতার কারণে পায়ে হেঁটে তাওয়াফ করতে সক্ষম নন। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মানুষের পেছনে পেছনে তাওয়াফ করার আদেশ দেন, যেন তিনি পুরুষদের হতে আড়ালে থাকতে পারেন এবং তার বাহন তাওয়াফকারী মানুষদের কষ্ট না দেয়, তিনি তাকে তাদের কাতার হতে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে
২৫৮৯-[২৯] ’আবিস ইবনু রবী’আহ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’উমার (রাঃ)-কে হাজারে আসওয়াদ চুমু দিতে দেখেছি এবং তাঁকে বলতে শুনেছি- আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র, যা কারো উপকার বা ক্ষতি করতে পারো না। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমাকে চুমু দিতে না দেখতাম তবে আমি কক্ষনো তোমাকে চুমু দিতাম না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
وَعَنْ عَابِسِ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ: رَأَيْت عمر يقبل الْحجر وَيَقُول: وَإِنِّي لَأَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ مَا تَنْفَعُ وَلَا تَضُرُّ وَلَوْلَا أَنِّي رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقبل مَا قبلتك
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে ‘উমার (রাঃ)-এর উক্তি, ‘‘আমি অধিক জানি যে, তুমি একটি পাথর। উপকার করতে পারো না এবং ক্ষতিও করতে পারো না। যদি আমি না দেখতাম যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুম্বন করেছেন, তবে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।’’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য কি?
এ প্রসঙ্গে ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ‘উমার (রাঃ) এজন্য বলেছেন যে, যেন ইসলামে নবদিক্ষিত কিছু মুসলিমরা বিভ্রান্ত না হয় যারা পাথর পূজা, তার সম্মান করা, তার পরকালের আশা করা এবং তার সম্মানের ত্রুটির কারণে ক্ষতি হয়- এ আশঙ্কার সাথে সুপরিচিত। তিনি আশংকা করলেন যে, তাদের কেউ তাকে চুম্বন করতে দেখে ফিতনায় পড়বে। ফলে তিনি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করলেন যে, এই পাথর কোন উপকার করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না। এটা কেবল বিধান পালন করে প্রতিদানের আশায় করা হয়।
এ হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে পাথর চুম্বন করার মাধ্যমে। যদি অনুসরণ করা উদ্দেশ্য না হত, তবে চুম্বন করতেন না।
সারকথা হচ্ছে, আমরা যা করব, বলব এবং বিশ্বাস করব তা হবে সহীহ সুন্নাহভিত্তিক। আর আমরা বিদ্‘আতী কাজ, ‘আক্বীদাহ্ ও ‘আমল নষ্ট হয়ে যায় এমন শৈথিল্য করা হতে সতর্ক থাকব।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে
২৫৯০-[৩০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রুকনে ইয়ামানীর সাথে সত্তরজন মালাক (ফেরেশতা) নিয়োজিত রয়েছেন। যখন কোন ব্যক্তি বলে, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষমা ও কুশল প্রার্থনা করছি। হে রব! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান কর, আখিরাতেও কল্যাণ দান করো এবং জাহান্নামের ’আযাব হতে রক্ষা করো। তখন সেসব মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বলে ওঠেন, ’আমীন’ (আল্লাহ কবূল কর)। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «وُكِّلَ بِهِ سَبْعُونَ مَلَكًا» يَعْنِي الرُّكْنَ الْيَمَانِيَ فَمَنْ قَالَ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ قَالُوا: آمين . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে রুকনে ইয়ামানীর ফাযীলাত বর্ণিত হয়েছে। যদি রুকনে ইয়ামানীর মর্যাদা এমন হয় তাহলে রুকনে আসওয়াদের মর্যাদা এর চেয়ে অধিক এবং উচ্চ। কিন্তু মর্যাদা এর জন্যই নির্দিষ্ট। আর হাজারে আসওয়াদের অনেক ফাযীলাত ও অন্যান্য পরিপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
সুতরাং যে রুকনে ইয়ামানীতে পৌঁছে অতিক্রম করতে করতে উক্ত দু‘আ তথা
اللهم انى اسئلك.........وقنا عذاب النار
এ দু‘আটি পড়ে তার দু‘আ কবূলের জন্য মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) ‘আমীন’ বলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে
২৫৯১-[৩১] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ সাতবার তাওয়াফ করে এবং ’’সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াল হামদুলিল্লা-হি ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার, ওয়ালা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহরই, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন উপাস্য নেই, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া কারো উপায় বা শক্তি নেই।) দু’আটি পড়া ব্যতীত আর কোন কথা না বলে তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, তার (’আমলনামায়) দশটি নেকী লিপিবদ্ধ করা হয় এবং তার দশটি মর্যাদাও বৃদ্ধি করা হয়। আর যে ব্যক্তি তাওয়াফ করা অবস্থায় কথাবার্তা বলবে সে আল্লাহ তা’আলার রহমতে তার পা দিয়ে ঢেউ উঠিয়েছে যেমন কোন ব্যক্তি নিজের পা দিয়ে পানিতে ঢেউ উঠিয়ে থাকে। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ طَافَ بِالْبَيْتِ سَبْعًا وَلَا يَتَكَلَّمُ إِلَّا بِ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ مُحِيَتْ عَنْهُ عَشْرُ سَيِّئَاتٍ وَكُتِبَ لَهُ عَشْرُ حَسَنَاتٍ وَرُفِعَ لَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ. وَمَنْ طَافَ فَتَكَلَّمَ وَهُوَ فِي تِلْكَ الْحَالِ خَاضَ فِي الرَّحْمَةِ بِرِجْلَيْهِ كَخَائِضِ الماءِ برجليه . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: যদি কেউ তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ এবং তাকবীর বলা ব্যতীত মানুষের সাথে কথা বলে তবুও সে সাওয়াব ও শরীরের নিম্নাংশ নিবিষ্টকারী। কেননা সে অশোভনীয় কাজ করেছে। আর সে অনেক রহমাত পাবে না আল্লাহর যিকির না করার কারণে। আর যখন সে আল্লাহরই যিকির করে অন্য কারো সাথে কথা বলে না তখন সে রহমাতের সাগরে ডুবে যায় পা থেকে মাথা এবং নিচ থেকে উঁচু পর্যন্ত।