পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৩৮৯-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে ঘুম থেকে উঠে বলতেন,
’’আল্ল-হুম্মা বিকা আসবাহনা-, ওয়াবিকা আমসায়না-, ওয়াবিকা নাহ্ইয়া-, ওয়াবিকা নামূতু, ওয়া ইলায়কাল মাসীর’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্যে সকালে [ঘুম থেকে] উঠি, তোমারই সাহায্যে আমরা সন্ধ্যায় পৌঁছি। তোমারই নামে আমরা জীবিত হই [ঘুম থেকে উঠি] ও তোমারই নামে আমরা মৃত্যুবরণ করি [ঘুমাতে যাই]। আর তোমার কাছেই আমরা ফিরে যাব।)।
সন্ধ্যার সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন,
’’আল্ল-হুম্মা বিকা আমসায়না-, ওয়াবিকা আসবাহনা-, ওয়াবিকা নাহ্ইয়া-, ওয়াবিকা নামূতু ওয়া ইলায়কান্ নুশূর’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্যে সন্ধ্যা বেলায় এসে পৌঁছি, তোমারই সাহায্যে সকালে উঠি। তোমারই নামে আমরা জীবিত হই, তোমারই নামে আমরা মৃত্যুবরণ করি। আর তোমারই দিকে আমরা পুনঃএকত্রিত হব।)। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَصْبَحَ قَالَ: «اللَّهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا وَبِكَ أَمْسَيْنَا وَبِكَ نَحْيَا وَبِكَ نَمُوتُ وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ» . وَإِذَا أَمْسَى قَالَ: «اللَّهُمَّ بِكَ أَمْسَيْنَا وَبِكَ أَصْبَحْنَا وَبِكَ نَحْيَا وَبِكَ نَمُوتُ وَإِلَيْكَ النُّشُورُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: আত্ তিরমিযী’র অপর বর্ণনায় রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীগণকে এটা বলা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, যখন তোমাদের কেউ ভোরে ঘুম থেকে উঠবে সে যেন (এ দু‘আ) বলবে।
ইবনু মাজার বর্ণনায় রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন তোমরা সকাল করবে তখন এ দু‘আ বলো।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৩৯০-[১০] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেছেন, একদিন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে একটি দু’আ বলে দিন যা আমি সকাল-সন্ধ্যায় পড়তে পারি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি পড়বে, ’
’আল্ল-হুম্মা ’আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ্শাহা-দাতি, ফা-ত্বিরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, রব্বা কুল্লি শাইয়িন, ওয়া মালীকাহূ আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা, আ’ঊযুবিকা মিন্ শাররি নাফ্সী, ওয়ামিন শার্রিশ্ শায়ত্ব-নি, ওয়া শিরকিহী’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! যিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, প্রত্যেক জিনিসের প্রতিপালক ও মালিক- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, আমি তোমার কাছে আমার মনের মন্দ হতে, শয়তানের মন্দ ও তাঁর শির্ক হতে আশ্রয় চাই।)
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি এ দু’আ সকালে-সন্ধ্যায় ও ঘুমানোর সময় পড়বে।’’ (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও দারিমী)[1]
وَعنهُ قَالَ: قَالَ أَبُو بَكْرٍ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مُرْنِي بِشَيْءٍ أَقُولُهُ إِذَا أَصْبَحْتُ وَإِذَا أَمْسَيْتُ قَالَ: «قُلِ اللَّهُمَّ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَهُ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ قُلْهُ إِذَا أَصْبَحْتَ وَإِذَا أَمْسَيْتَ وَإِذَا أَخَذْتَ مضجعك» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد والدارمي
ব্যাখ্যা: নিশ্চয় আলোচ্য হাদীসটি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এর বর্ণনায় সরাসরি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত এবং তিনি [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] আবূ বাকর (রাঃ)-এর জিজ্ঞাসার সময় উপস্থিত ছিলেন। কতিপয় অনুলিপিতে অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। তবে কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে যে, আবূ বাকর (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি বললাম, (قُلْتُ) ‘ছাড়া’ এ কথাটি উল্লেখ করা। জামি' আল মাখরাজাইনেও অনুরূপ রয়েছে, ‘আল্লামা বাগাবী (রহঃ) মাসাবীহতেও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। নাবাবী (রহঃ) ‘‘আল আযকার’’-এ, আল জাযরী ‘‘জামি' আল উসূল’’-এ, ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) ‘‘তুহফাতুয্ যাকিরীন’’-এ অনুরূপ উল্লেখ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৩৯১-[১১] আবান ইবনু ’উসমান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে বান্দা প্রত্যেক সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়বে, ’’বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা- ইয়াযুররু মা’আইস্মিহী শায়উন ফিল আরযি ওয়ালা- ফিস্সামা-য়ি, ওয়া হুওয়াস্ সামী’উল ’আলিম’’ (অর্থাৎ- আল্লাহর নামে শুরু করছি, যে নামের সাথে আসমান ও জমিনে কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সব শুনেন ও জানেন)- কোন কিছু তাকে ক্ষতি করতে পারে না। বর্ণনাকারী বলেন, আবান পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এজন্য যারা হাদীস শুনছিলেন তারা তাঁর দিকে তাকাচ্ছিল। আবান তখন বললেন, আমার দিকে কী দেখছ? নিশ্চয়ই হাদীস যা আমি বর্ণনা করছি তাই, তবে যেদিন আমি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছি সেদিন এ দু’আ পড়িনি। এ কারণে আল্লাহ আমার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছিলেন তা কার্যকরী হয়েছে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ। কিন্তু আবূ দাঊদ-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, সে রাতে তাঁর ওপর কোন আকস্মিক বিপদাপদ ঘটবে না যে পর্যন্ত না ভোর হয়, আর যে তা ভোরে বলবে তার ওপর কোন আকস্মিক বিপদাপদ সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না সন্ধ্যা উপনীত হয়।)[1]
وَعَنْ أَبَانَ بْنِ عُثْمَانَ قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي يَقُولَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ عَبْدٍ يَقُولُ فِي صَبَاحِ كُلِّ يَوْمٍ وَمَسَاءِ كُلِّ لَيْلَةٍ بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَيَضُرَّهُ شَيْءٌ» . فَكَانَ أَبَانُ قَدْ أَصَابَهُ طَرَفُ فَالَجٍ فَجَعَلَ الرَّجُلَ يَنْظُرُ إِلَيْهِ فَقَالَ لَهُ أَبَانُ: مَا تَنْظُرُ إِلَيَّ؟ أَمَا إِنَّ الْحَدِيثَ كَمَا حَدَّثْتُكَ وَلَكِنِّي لَمْ أَقُلْهُ يَوْمَئِذٍ لِيُمْضِيَ اللَّهُ عَلَيَّ قَدَرَهُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه وَأَبُو دَاوُد وَفِي رِوَايَته: «لَمْ تُصِبْهُ فُجَاءَةُ بَلَاءٍ حَتَّى يُصْبِحَ وَمَنْ قَالَهَا حِينَ يُصْبِحُ لَمْ تُصِبْهُ فُجَاءَةُ بَلَاءٍ حَتَّى يُمسيَ»
ব্যাখ্যা: আল বুখারী (রহঃ) আল আদাবুল মুফরাদে এ শব্দে উল্লেখ করেছেন যে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তিন তিনবার করে (بِسْمِ اللّٰهِ الَّذِىْ لَا يَضُرُّ مَعَ اِسْمِه شَىْءٌ فِى الْأَرْضِ وَلَا فِى السَّمَآءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ) এ দু‘আ পড়বে, ঐ দিন এবং রাতে কোন কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না। আলোচ্য হাদীসে এ মর্মে দলীল রয়েছে যে, নিশ্চয় এ (দু‘আয় উল্লেখিত) শব্দগুলো তা পাঠকারী থেকে সকল ক্ষতি প্রতিহত করবে, রাত ও দিনে তার উপর কোন ক্ষতি পৌঁছবে না, যখন সে তা রাত ও দিনের প্রথমভাগে পড়বে।
আবূ দাঊদ-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে যে, লোকটি তার (আবান) নিকট হাদীস শুনার পর তার দিকে তাকাতে লাগল। অতঃপর তিনি (আবান) বললেন, আমার দিকে তাকাচ্ছ কেন? আল্লাহর কসম! আমি ‘উসমান -এর উপর মিথ্যা বলছি না এবং ‘উসমান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর মিথ্যা বলেননি.....।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৩৯২-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যা হলে বলতেন, ’
’আম্সায়না- ওয়া আম্সাল মুলকু লিল্লা-হি ওয়ালহাম্দু লিল্লা-হি লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়াহুওয়া ’আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর, রব্বী আস্আলুকা খয়রা মা- ফী হা-যিহিল লায়লাতি ওয়া খয়রা মা- বা’দাহা- ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন্ শার্রি মা- ফী হা-যিহিল লায়লাতি ওয়াশার্রি মা- বা’দাহা- রব্বী আ’ঊযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়ামিন্ সূয়িল কিবারি আউইল কুফরি’’
(অর্থাৎ- আমরা সন্ধ্যায় এসে পৌঁছলাম এবং সমগ্র সাম্রাজ্য সন্ধ্যায় এসে পৌঁছল আল্লাহর উদ্দেশে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই। তাঁরই রাজত্ব ও শাসন, তাঁরই জন্য সব প্রশংসা। আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আমি তোমার কাছে চাই এ রাতে যা কল্যাণ আছে তা হতে, এরপরে যা আছে তার কল্যাণ হতে। আর আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই এ রাতে যা অকল্যাণ রয়েছে তা হতে। এরপরে যা অকল্যাণ রয়েছে তা হতেও। হে রব! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই অলসতা হতে ও বার্ধক্যের অকল্যাণ হতে; অথবা বলেছেন, কুফরীর অনিষ্টতা হতে।)।
আর অপর এক বর্ণনায় আছে, বার্ধক্যের অকল্যাণ ও দাম্ভিকতা হতে। হে পরওয়ারদিগার! আমি তোমার কাছে জাহান্নাম ও কবরের শাস্তি হতে আশ্রয় চাই। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সকালে উঠতেন তখনও এ দু’আ পড়তেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পড়তেন, ’’আস্বাহনা- ওয়া আস্বাহাল মুলকু লিল্লা-হি’’ (অর্থাৎ- আমরা সকালে এসে উপনীত হলাম। আর সমগ্র সাম্রাজ্যও আল্লাহর উদ্দেশে এসে উপনীত হলো।) (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী; তবে ইমাম তিরমিযীর বর্ণনায়مِنْ سُوْءِ الْكُفْرِ বাক্যটির উল্লেখ নেই)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ إِذَا أَمْسَى: «أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ رَبِّ أَسْأَلُكَ خَيْرَ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَخَيْرَ مَا بَعْدَهَا وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَمِنْ سُوءِ الْكِبَرِ أَوِ الْكُفْرِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «مِنْ سُوءِ الْكِبَرِ وَالْكِبْرِ رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرِ» . وَإِذَا أَصْبَحَ قَالَ ذَلِكَ أَيْضًا: «أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلَّهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَفِي رِوَايَتِهِ لم يذكر: «من سوءِ الكفرِ»
ব্যাখ্যা: (أَوِ الْكُفْرِ) এখানে রাবীর সন্দেহ রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অহংকারের অনিষ্টতা বলেছেন, না-কি কুফরীর অনিষ্টতার কথা বলেছেন। জামি‘ আল উসূলে (والْكُفْرِ) উল্লেখ রয়েছে, অর্থাৎ- أَوِ -এর পরিবর্তে واو রয়েছে। অর্থাৎ- سُوْءِ الْكِبَرِ যাতে কুফরী রয়েছে তার অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই। ‘আল্লামা কারী (রহঃ) বলেনঃ কুফর, তার পাপ ও তার অশুভ পরিণতি থেকে আশ্রয় চাই।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৩৯৩-[১৩] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন কন্যা হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে শিখাতেন এভাবে, যখন তুমি ভোরে বিছানা হতে উঠবে তখন বলবে,
’’সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী, ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি, মা-শা-আল্ল-হু কা-না, ওয়ামা-লাম ইয়াশা’লাম ইয়াকুন, আ’লামু আন্নাল্ল-হা ’আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর, ওয়া আন্নাল্ল-হা কদ আহা-ত্বা বিকুল্লি শাইয়িন ’ইলমা-’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ তা’আলার প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আল্লাহর শক্তি-সামর্থ্য ছাড়া কারো কোন শক্তি নেই। আল্লাহ যা চান তাই হয়, যা তিনি চান না তা হয় না। আমি জানি, আল্লাহ সমস্ত জিনিসের উপর ক্ষমতাবান। আর সব জিনিসই আল্লাহ তার জ্ঞানের মাধ্যমে ঘিরে রেখেছেন।)।
যে ভোরে উঠে এ দু’আ পড়বে সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত সে (আল্লাহর) হিফাযাতে থাকবে। আর যে সন্ধ্যা হবার পর এ দু’আ পড়বে সে সকাল হওয়া (ঘুম হতে ওঠা) পর্যন্ত হিফাযাতে থাকবে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ بَعْضِ بَنَاتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعَلِّمُهَا فَيَقُولُ: قُولِي حِينَ تُصْبِحِينَ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ مَا شَاءَ اللَّهُ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ أَعْلَمُ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا فَإِنَّهُ مَنْ قَالَهَا حِينَ يُصْبِحُ حُفِظَ حَتَّى يُمْسِيَ وَمَنْ قَالَهَا حِينَ يُمْسِي حُفِظَ حَتَّى يصبح . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: হাফেয আসকালানী (রহঃ) আত্ তাকরীব গ্রন্থে বলেনঃ তার নামের উপর হাদীসের গ্রহণযোগ্যতা থেমে থাকবে না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যাগণ সকলেই সাহাবী ছিলেন, কাজেই নামের অজ্ঞতায় কোন ক্ষতি নেই। এ হাদীসটি নাসায়ী তার আল কুবরা গ্রন্থে এবং ইবনু সিনাইও বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেকেই বানী হাশিম-এর দাস ‘আবদুল হামিদ (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি তাঁর মা থেকে বর্ণনা করেছেন। আর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন এক কন্যার খিদমাত করতেন (খাদিমাহ্ ছিলেন)। অতএব নিশ্চয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা তাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা (উল্লেখিত দু‘আ) শিক্ষা দিতেন.....।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৩৯৪-[১৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ভোরে (ঘুম হতে) উঠে এ আয়াতটি পড়বে,
’’ফাসুবহা-নাল্ল-হি হীনা তুম্সূনা ওহীনা তুসবিহূন, ওয়া লাহুল হাম্দু ফিস্সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ওয়া ’আশিয়্যাও ওহীনা তুযহিরূন..... ওয়াকাযা-লিকা তুখরাজূন’’
(অর্থাৎ- অতএব আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর তোমরা সন্ধ্যায় ও সকালে এবং আসমান ও জমিনে প্রশংসা একমাত্র তারই জন্য, আর বিকালে ও দুপুরে উপনীত হও..... এভাবে বের হবে’’ পর্যন্ত’’- (সূরা আর্ রূম ৩০ : ১৭-১৯)। সে লাভ করবে ঐদিন যা তার ছুটে গেছে। আর যখন এ দু’আ সন্ধ্যায় পড়বে তখন সে লাভ করবে যা তার ঐ রাতে ছুটে গেছে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ حِينَ يُصْبِحُ: (فَسُبْحَانَ اللَّهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ ولهُ الحمدُ فِي السمواتِ والأرضِ وعشيَّاً وحينَ تُظهرون)
إِلى قَوْله: (وَكَذَلِكَ تُخْرَجونَ)
أَدْرَكَ مَا فَاتَهُ فِي يَوْمِهِ ذَلِكَ وَمَنْ قَالَهُنَّ حِينَ يُمْسِي أَدْرَكَ مَا فَاتَهُ فِي ليلتِهِ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: নাফি' ইবনু আল আরযাক ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললেনঃ আপনি কুরআনুল কারীমে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পেয়েছেন কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ এবং এ দু’টি আয়াত তিলাওয়াত করলেন এবং বললেনঃ এ আয়াত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও তার সময়কে একত্র করেছে।
وَكَذٰلِكَ تُخْرَجُوْنَ এটি الإخراج মাসদার হতে মাজহূলের সিগাহ্। এটি রাবী কর্তৃক সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, আর এটি সূরা আর্ রূম-এর আয়াত। يُخْرِجُ الْحَىَّ مِنَ الْمَيِّتِ অর্থাৎ- তিনি মৃত থেকে জীবন বের করেন। যেমন ডিম থেকে পাখি, শুক্রবিন্দু থেকে প্রাণী, বীজ থেকে উদ্ভিত, কাফির থেকে মু’মিন, গাফিল থেকে জিকিরকারী, মূর্খ থেকে জ্ঞানী, অসৎ থেকে সৎ। يُخْرِجُ الْحَىَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَىِّ وَيُحْىِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَكَذٰلِكَ تُخْرَجُوْنَ অর্থাৎ- তোমাদের কবর থেকে জীবিত বের করবেন হিসাব, শাস্তি এবং নিয়ামতের (জান্নাত) জন্য।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৩৯৫-[১৫] আবূ ’আইয়্যাশ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ভোরে (ঘুম থেকে) উঠে বলবে,
’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়াহুওয়া ’আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা’বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই। সাম্রাজ্য তাঁরই, প্রশংসাও তাঁর এবং তিনি সকল জিনিসের উপর সবচেয়ে শক্তিশালী।)।
তার জন্য এ দু’আ ইসমা’ঈল বংশীয় একটি চাকর মুক্ত করার সমতুল্য হবে এবং তার জন্য দশটি সাওয়াব লিখা হবে ও তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, আর তার দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং (সন্ধ্যা না হওয়া পর্যন্ত) সে শয়তান হতে হিফাযাতে থাকবে।
আর যদি সে ব্যক্তি এ দু’আ সন্ধ্যায় পড়ে তাহলে আবার সকালে (ঘুম হতে) ওঠার পূর্ব পর্যন্ত অনুরূপ সাওয়াব ও মর্যাদা পেতে থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে স্বপ্নে দেখল এবং বলল, হে আল্লাহর রসূল! আবূ ’আইয়্যাশ আপনার নাম করে এসব কথা বলে। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আবূ ’আইয়্যাশ সত্য কথা বলছে। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي عَيَّاشٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ قَالَ إِذَا أَصْبَحَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ كَانَ لَهُ عَدْلُ رَقَبَةٍ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ وَكُتِبَ لَهُ عَشْرُ حَسَنَاتٍ وَحَطَّ عَنْهُ عَشْرَ سَيِّئَاتٍ وَرفع عَشْرُ دَرَجَاتٍ وَكَانَ فِي حِرْزٍ مِنَ الشَّيْطَانِ حَتَّى يُمْسِيَ وَإِنْ قَالَهَا إِذَا أَمْسَى كَانَ لهُ مثلُ ذَلِك حَتَّى يُصبحَ . قَالَ حَمَّاد بن سَلمَة: فَرَأَى رَجُلٌ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيمَا يَرَى النَّائِمُ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبَا عَيَّاشٍ يُحَدِّثُ عَنْكَ بِكَذَا وَكَذَا قَالَ: «صَدَقَ أَبُو عَيَّاشٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: ইবনুস্ সিনায় রয়েছে, লোকটি বলল যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরলেন এবং বললেন, আবূ ‘আইয়্যাশ সত্য বলেছে, আবূ ‘আইয়্যাশ সত্য বলেছে, আবূ ‘আইয়্যাশ সত্য বলেছে। (فَرَأَى رَجُلٌ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ অর্থাৎ- এক লোক রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে স্বপ্নে দেখল) এটি উল্লেখ করা হয়েছে তা জাহির করার জন্য স্বপ্নের স্থায়িত্ব বুঝানো ও অন্তরের প্রশান্তির জন্য। সেটার (স্বপ্নের) বিশুদ্ধতার উপর দলীল গ্রহণের জন্য নয়। কারণ এ মর্মে সকলের ঐকমত্য রয়েছে যে, স্বপ্নের মাধ্যমে হুকুম এবং হাদীস কোনটি সাব্যস্ত হবে না। কারণ ঘুমন্ত ব্যক্তি মুখস্থ করতে পারবে না। সুতরাং সে তার শ্রবণের বিপরীত বর্ণনা করবে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৩৯৬-[১৬] হারিস ইবনু মুসলিম আত্ তামীমী (রহঃ) তাঁর পিতা হতে, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। একদিন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃদুস্বরে বললেন, তুমি মাগরিবের সালাত আদায় শেষে কারো সাথে কথা বলার আগে সাতবার পড়বে, ’’আল্ল-হুম্মা আজিরনী মিনান্না-র’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো)। তুমি এ দু’আ পড়ার পর ঐ রাতে মারা গেলে, তোমার জন্য জাহান্নাম হতে ছাড়পত্র লেখা হবে। একইভাবে তুমি ফজরের সালাত আদায়ের পর এ দু’আ পড়বে, তারপর তুমি ঐ দিন মারা গেলে, তোমাকে জাহান্নাম হতে ছাড়পত্র লেখা হবে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ الْحَارِثِ بْنِ مُسْلِمٍ التَّمِيمِيِّ عَنْ أَبِيهِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ أَسَرَّ إِلَيْهِ فَقَالَ: «إِذَا انْصَرَفْتَ مِنْ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ فَقُلْ قَبْلَ أَنْ تُكَلِّمَ أَحَدًا اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ سَبْعَ مَرَّاتٍ فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ ثُمَّ مِتَّ فِي لَيْلَتِكَ كُتِبَ لَكَ جَوَازٌ مِنْهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা মানাবী (রহঃ) ‘‘ফায়যুল কদীর’’ গ্রন্থে (১ম খণ্ড, ৩৯৩ পৃষ্ঠা) বলেনঃ ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন যে, এখানে সমষ্টিগত দলীল গ্রহণ করা যায় যে, নিশ্চয় সালাত, তারপর নফল সালাত থাকুক অথবা না থাকুক। প্রথমত যে সালাতের শেষে নফল সালাত (নিয়মিত সুন্নাত) থাকে, যেমন- যুহর, মাগরিব ও ‘ইশা- সেসব সালাতে নফল সালাতের পূর্বে হাদীসে উল্লেখিত জিকিরসহ অন্যান্য জিকির-আযকারে ব্যস্ত থাকবে। অতঃপর নফল সালাত আদায় করবে? না-কি এর বিপরীত করবে। (অর্থাৎ- নফল সালাত আদায় করার পর জিকির-আযকার করবে) এ ব্যাপারে ইখতিলাফ রয়েছে। জমহূর ‘উলামাগণ প্রথম মত গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ- ফরয সালাতের পর জিকির-আযকার করতে হবে। অতঃপর নফল সালাত আদায় করতে হবে। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) দ্বিতীয় মত গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ- ফরয সালাতের পর পরই নফল সালাত আদায় করতে হবে। অতঃপর জিকির-আযকার করতে হবে। তবে নফল সালাতের পূর্বে জিকির-আযকার করাই প্রাধান্য পাবে। কারণ একাধিক সহীহ হাদীসে ফরয সালাতের পর সেটা (জিকির-আযকার) নির্ধারিত রয়েছে। হাম্বালী মাযহাবে কেউ কেউ মনে করেন যে, এখানে সালাতের পর বলতে সালামের পূর্বে বুঝানো হয়েছে। এ মর্মেও একাধিক হাদীস বর্ণিত রয়েছে। দ্বিতীয়ত যে সকল সালাতে নফল সালাত (নিয়মিত সুন্নাত) নেই, সে সকল সালাতে ইমাম এবং মুক্তাদী সকলেই ফরয সালাতের পর জিকির-আযকারে ব্যস্ত থাকবে। আর এর জন্য কোন স্থান নির্ধারিত নেই, বরং যদি তারা চায় সেখান থেকে চলে যেতে পারে, অথবা তাতে (সালাতের স্থানে) অবস্থান করে জিকির করতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৩৯৭-[১৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কক্ষনো সকাল-সন্ধ্যায় এ দু’আটি না পড়ে ছাড়েননি। (দু’আটি হলো)
’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল ’আ-ফিয়াতা ফিদ্ দুন্ইয়া- ওয়াল আ-খিরাতি, আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল ’আফ্ওয়া, ওয়াল ’আ-ফিয়াতা ফী দীনী ওয়া দুন্ইয়া-ইয়া ওয়া আহলী, ওয়ামা-লী। আল্ল-হুমাসতুর ’আওর-তী, ওয়া আ-মিন রও’আ-তী। আল্ল-হুম্মাহ্ ফাযনী, মিন বায়নি ইয়াদী ওয়ামিন খলফী, ওয়া ’আন ইয়ামীনী, ওয়া ’আন শিমা-লী, ওয়ামিন ফাওক্বী। ওয়া আ’ঊযু বি’আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহতী’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আমার দীন, দুনিয়া, পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ সম্পর্কে নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! তুমি আমার দোষ-ত্রুটিগুলো গোপন রাখো এবং ভীতিকর বিষয় হতে আমাকে নিরাপদ রাখো। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার সামনের দিক হতে, পেছনের দিক হতে, আমার ডান দিক হতে, আমার বাম দিক হতে, আমার উপর হতে আমাকে হিফাযাত করো। হে আল্লাহ! আমি মাটিতে ধসে যাওয়া হতে তোমার মর্যাদার কাছে আশ্রয় চাই।)। ওয়াকী’ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ- ’ভূমিধ্বস হতে’। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: لَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَعُ هَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ حِينَ يُمْسِي وَحِينَ يُصْبِحُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي وَآمِنْ رَوْعَاتِي اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدِي وَمِنْ خَلْفِي وَعَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي وَمِنْ فَوْقِي وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَن أُغتالَ من تحتي» . قَالَ وَكِيع يَعْنِي الْخَسْف رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ওয়াকী' (রহঃ)-এর কথা (يَعْنِى الْخَسْفَ) সকল অনুলিপিতে অনুরূপ রয়েছে, হাকিম এবং আল মুসনাদে অনুরূপ বর্ণিত রয়েছে। আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্ এবং ইবনু হিব্বানে রয়েছে, ওয়াকী' (হাদীসের রাবী) বলেনঃ (يَعْنِى الْخَسْفَ)। আর ইবনুস্ সিনায় রয়েছে যে, (জুবায়র, অর্থাৎ- ইবনু সুলায়মান ইবনু জুবায়র ইবনু মুত্‘ইম ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের রাবী) (وهو الخسف)। ‘উবাদাহ্ বলেনঃ ওয়াকী' (রহঃ)-এর উস্তায ও জুবায়র (রাঃ) এর ছাত্র) আমি জানি না এটি, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা নাকি জুবায়র (রাঃ)-এর কথা। অর্থাৎ- তিনি তা বর্ণনা করেছেন? না-কি নিজের পক্ষ হতে বলেছেন।
হাফেয আসকালানী (রহঃ) বলেনঃ ওয়াকী' (রহঃ) এটি (يَعْنِى الْخَسْفَ) মুখস্থ করেননি, বরং তিনি নিজের পক্ষ হতে বলেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৩৯৮-[১৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ভোরে (ঘুম থেকে) উঠে বলবে,
’’আল্ল-হুম্মা আসবাহনা- নুশহিদুকা, ওয়া নুশহিদু হামালাতা ’আরশিকা, ওয়া মালা-য়িকাতাকা, ওয়া জামী’আ খলক্বিকা, আন্নাকা আনতাল্ল-হু, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু আন্তা ওয়াহদাকা, লা- শারীকা লাকা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুকা ওয়া রসূলুকা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি ভোরে তোমাকে এবং তোমার ’আরশের বহনকারীদেরকে, তোমার মালায়িকাহকে [ফেরেশতাগণকে], তোমার সমস্ত সৃষ্টিকে। নিশ্চয়ই তুমিই আল্লাহ! তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা’বূদ নেই। তুমি একক, তোমার কোন শারীক নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার বান্দা ও রসূল।)।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ঐ দিনে তার যে গুনাহ হবে তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর সে যদি এ দু’আ সন্ধ্যায় পড়ে তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ঐ রাতে যে গুনাহ সংঘটিত হবে তা ক্ষমা করে দেবেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ; ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে গরীব বলেন)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ حِينَ يُصْبِحُ: اللَّهُمَّ أَصْبَحْنَا نُشْهِدُكَ وَنُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ وَمَلَائِكَتَكَ وَجَمِيعَ خَلْقِكَ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ إِلَّا غَفَرَ اللَّهُ لَهُ مَا أَصَابَهُ فِي يَوْمِهِ ذَلِكَ مِنْ ذَنْبٍ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন তবে কাবীরাহ্ গুনাহ তা থেকে আলাদা হবে। অর্থাৎ- কাবীরাহ গুনাহ ব্যতীত আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করবেন। আর বান্দার অধিকারের সাথে সম্পর্কে গুনাহটাও কাবীরাহ্ গুনাহের অনুরূপ। তবে এখানে দিন বা রাতের সমস্ত গুনাহের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ মর্মে উৎসাহিত করার জন্য যে, আল্লাহ তা‘আলা শির্ক ব্যতীত সকল গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করতে পারেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৩৯৯-[১৯] সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম বান্দা সন্ধ্যার সময় ও ভোরে উঠে তিনবার বলবে, ’’রযীতু বিল্লা-হি রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যান’’ (অর্থাৎ- আমি আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে দীন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবী হিসেবে পেয়ে খুশি হয়েছি)- নিশ্চয়ই এ দু’আ কিয়ামতের দিন তাকে খুশী করানো আল্লাহর জন্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়বে। (আহমদ, তিরমিযী)[1]
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يَقُولُ إِذَا أَمْسَى وَإِذَا أَصْبَحَ ثَلَاثًا رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يُرْضِيَهُ يَوْمَ الْقِيَامَة» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: আত্ তিরমিযী’র শব্দে আবূ সালামাহ্ এর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় বলবে- (رَضِيتُ بِاللّٰهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا) অর্থাৎ- রব বা প্রতিপালক হিসেবে আল্লাহ পেয়ে, দীন হিসেবে ইসলামকে পেয়ে এবং নাবী হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পেয়ে সন্তুষ্ট রয়েছি। তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও আল্লাহ তা‘আলার উপর কর্তব্য, আর আবী সালামাহ্ (রহঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাদিম থেকে বর্ণিত রয়েছে, সেখানে (وبمحمد رسولًا) বা রসূল হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি) নাবী’র পরিবর্তে রসূল বলা হয়েছে। ‘আল্লামা নাবাবী (রহঃ) ‘আল আযকার’-এ দু’টি হাদীস উল্লেখ করার পর বলেনঃ উভয় বর্ণনার মাঝে সমন্বয় করা মানুষের জন্য মুস্তাহাব।
অতএব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষেত্রে (نبيًا رسولًا) (নাবিয়্যান রসূলান) বলতে হবে। তবে যদি এ দু’টোর একটি বলেন অর্থাৎ- نبيًا অথবা رسولًا তাহলে আলোচ্য হাদীসের উপর ‘আমল হবে। কারো মতে (نبيًا ورسولًا) বলা বিশুদ্ধ হবে। কারণ উভয় হাদীসের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ‘আমলে দু’টি গুণ সাব্যস্ত করাই হলো মূল উদ্দেশ্য।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪০০-[২০] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন হাত মাথার নীচে রাখতেন, অতঃপর বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মা কিনী ’আযা-বাকা ইয়াওমা তাজমা’উ ’ইবা-দাকা, আও তাব্’আসু ’ইবা-দাকা’’ [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাকে তোমার শাস্তি হতে বাঁচিয়ে রেখ, যেদিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে পুনঃএকত্র করবে; অথবা (বলেছেন) যেদিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে কবর হতে উঠাবে।]। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ حُذَيْفَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَنَامَ وَضَعَ يَدَهُ تَحْتَ رَأْسِهِ ثُمَّ قَالَ: «اللَّهُمَّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَجْمَعُ عِبَادَكَ أَوْ تَبْعَثُ عِبَادَكَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (يَوْمَ تَجْمَعُ عِبَادَكَ أَوْ تَبْعَثُ عِبَادَكَ) অর্থাৎ- কিয়ামতের দিন, এখানে أَوْ বা অথবা এর ব্যবহার রাবীর সংশয়ের জন্য। রাবী সংশয় প্রকাশ করছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম تَجْمَعُ বলেছেন? নাকি تَبْعَثُ বলেছেন?
অবশ্য আহমাদে ইবনু মাস্‘ঊদণ্ডএর বর্ণনায় কোন সংশয় ছাড়াই تَجْمَعُ উল্লেখ রয়েছে, আর হাফসা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রাবীর সংশয় ছাড়াই تَبْعَثُ উল্লেখ রয়েছে।
সুতরাং যে শব্দেই উল্লেখিত দু‘আ বলবে সেটাই তার জন্য বৈধ হবে। আর ঘুম যখন মৃত্যুর মতো আর জাগ্রত হওয়া পুনরায় জীবিত হওয়ার মতো, তখন এ দু‘আ উল্লেখিত অবস্থায় পড়তে হবে। তবে এ দু‘আ তিনবার বলা মুস্তাহাব। যেমন- হাফসা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস অচিরেই আসবে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪০১-[২১] ইমাম আহমদ (রহঃ) বারা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।[1]
وَرَوَاهُ أَحْمد عَن الْبَراء
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসটি ইমাম আত্ তিরমিযী (রহঃ) তাঁর সুনান এবং আশ্ শামা-য়িল গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, ‘আল্লামা বাগাবী (রহঃ) তার শারহে সুন্নাহ্’য় (৫ম খণ্ড, ৯৭ পৃঃ) ইমাম নাসায়ী (রহঃ) তাঁর ‘আল ইয়ামু ওয়াল লায়লা’ গ্রন্থে এবং ইবনু হিব্বান (রহঃ) তাঁর ‘সহীহাহ্’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং তার সানাদ সহীহ।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪০২-[২২] হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর ইচ্ছা করলে ডান হাত গালের নীচে রাখতেন, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মা কিনী ’আযা-বাকা ইয়াওমা তাব্’আসু ’ইবা-দাকা’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি যেদিন তোমার বান্দাদেরকে কবর হতে উঠাবে, তোমার ’আযাব হতে আমাকে রক্ষা করবে)। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن حَفصةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْقُدَ وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى تَحْتَ خَدِّهِ ثُمَّ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ» . ثَلَاثَ مَرَّاتٍ رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (قِنِىْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ) অর্থাৎ- এক্ষেত্রে প্রত্যেক জ্ঞানবান ব্যক্তির জন্য জানা উচিত হলো, ঘুমকে আল্লাহ মাধ্যম বানিয়েছেন মৃত্যু ও পুনরুত্থানের কথা স্মরণ করার জন্য, যা মৃত্যুর পরে সংঘটিত হবে।
কোন কোন বর্ণনায় (مَرَّاتٍ) ‘‘একবার’’ এর পরিবর্তে مِرَارً ‘‘একাধিকবার’’ বলার কথা উল্লেখ রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪০৩-[২৩] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর সময় বলতেন,
’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযু বিওয়াজহিকাল কারীম, ওয়া কালিমা-তিকা তা-ম্মা-তি মিন্ শাররি মা- আন্তা আ-খিযুন বিনা-সিয়াতিহী, আল্ল-হুম্মা আন্তা তাকশিফুল মাগরামা, ওয়াল মা’সামা। আল্ল-হুম্মা লা- ইউহযামু জুনদুকা, ওয়ালা- ইউখলাফু ওয়া’দুকা ওয়ালা- ইয়ানফা’উ যালজাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। সুবহা-নাকা, ওয়াবিহাম্দিকা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার অধীনে যা আছে আমি তার অনিষ্ট হতে তোমার মহান সত্তার ও তোমার পূর্ণ কালামের স্মরণ করে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! তুমিই ঋণগ্রস্ততা ও গুনাহের ভার দূর করে দাও। হে আল্লাহ! তোমার দল পরাভূত হয় না, কক্ষনো তোমার ওয়া’দা ভঙ্গ হয় না এবং কোন সম্পদশালীর সম্পদ তাকে তোমা হতে রক্ষা করতে পারে না। তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি।)। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ عِنْدَ مَضْجَعِهِ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِوَجْهِكَ الْكَرِيمِ وَكَلِمَاتِكَ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا أَنْتَ آخِذٌ بناصيتهِ اللهُمَّ أَنْت تكشِفُ المغرمَ والمأْثمَ اللهُمَّ لَا يُهْزَمُ جُنْدُكَ وَلَا يُخْلَفُ وَعْدُكَ وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (إِنِّىْ أَعُوذُ بِوَجْهِكَ) অর্থাৎ- আপনার সত্তার সাথে, এখানে وجه বা চেহারা বলতে সত্তাকে বুঝানো হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলার কথা- ‘‘তার চেহারা ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংসশীল’’- (সূরা আল কাসাস ২৮ : ৮৮)।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪০৪-[২৪] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিছানায় ঘুমানোর সময় তিনবার পড়বে, ’’আস্তাগফিরুল্ল-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি’’ (অর্থাৎ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা’বূদ নেই, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী, তার কাছে আমি তওবা্ করি।)-
এ দু’আয় আল্লাহ তার গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা অথবা বালুর স্তূপ অথবা গাছের পাতার সংখ্যা অথবা দুনিয়ার দিনগুলোর সংখ্যার চেয়েও বেশি হয়। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ حِينَ يَأْوِي إِلَى فِرَاشِهِ: أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لَا إِله إِلا هوَ الحيَّ القيومَ وأتوبُ إِليهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ ذُنُوبُهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ أَوْ عَدَدَ رَمْلِ عَالَجٍ أَوْ عَدَدَ وَرَقِ الشَّجَرِ أَوْ عَدَدَ أَيَّامِ الدُّنْيَا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে উল্লেখিত জিকির তিনবার পাঠ করার মাধ্যমে পাঠক বা জিকিরকারীর গুনাহ মাফের ব্যাপারে বড় ফাযীলাত ও মাহাত্ম্য রয়েছে। যদি অগণিতবার এটি পাঠ করা হয়, তবে আল্লাহর অনুগ্রহ অত্যন্ত প্রশস্ত, আর তাকে সে অনুযায়ী অনেক সাওয়াব দিবেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪০৫-[২৫] শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম কুরআন মাজীদের যে কোন একটি সূরা পড়ে বিছানায় যাবে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য অবশ্যই একজন মালাক (ফেরেশতা) নিয়োজিত করে দেবেন। অতঃপর কোন ক্ষতিকারক জিনিস তার কাছে পৌঁছতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না ঘুম থেকে সে জেগে ওঠে। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «مَا من مُسْلِمٍ يَأْخُذُ مَضْجَعَهُ بِقِرَاءَةِ سُورَةٍ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ إِلَّا وَكَّلَ اللَّهُ بِهِ مَلَكًا فَلَا يَقْرَبُهُ شَيْءٌ يُؤْذِيهِ حَتَّى يَهُبَّ مَتَى هَبَّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (...بِقِرَاءَةِ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা। (بِقِرَاءَةِ) মিশকাতের অধিকাংশ অনুলিপিতে অনুরূপ রয়েছে, মাসাবীহতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে, আর মিশকাতের কতিপয় অনুলিপিতে (يقرأ) অর্থাৎ- মুজারি দ্বারা রয়েছে এবং আত্ তিরমিযীতে অনুরূপ রয়েছে। আর জামি‘উল উসূলে (فيقرأ) অর্থাৎ- ‘ফা’ বৃদ্ধিতে মুজারি’র সিগাহ্’র মাধ্যমে রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪০৬-[২৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম দু’টি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখবে, সে নিঃসন্দেহে জান্নাতে যাবে। জেনে রাখো, এ বিষয় দু’টো সহজ, কিন্তু এর ’আমলকারী কম। (তা হলো) প্রত্যেক সালাত আদায়ের পর পড়বে ’সুবহা-নাল্ল-হ’ দশবার, ’আল হাম্দুলিল্লা-হ’ দশবার, ’আল্ল-হু আকবার’ দশবার। ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ দু’আ পড়ার সময় হাতে গুণতে দেখেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এ দু’আ মুখে (পাঁচ বেলায়) একশ’ পঞ্চাশবার কিয়ামতে মীযানের (পাল্লায়) এক হাজার পাঁচশ’বার।
আর যখন বিছানায় যাবে, ’সুবহা-নাল্ল-হ’ ও ’আলহাম্দুলিল্লা-হ’ ’আল্লা-হু আকবার’ (তিনটি দু’আ মিলিয়ে) একশ’বার পড়বে। এ দু’আ মুখে একশ’বার বটে; কিন্তু মীযানে একহাজার বার। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ একদিন এক রাতে দু’ হাজার পাঁচশ’ গুনাহ করে? সাহাবীগণ বললেন, আমরা কেন এ দু’টি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে পারব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এজন্য পারবে না যে, তোমাদের কারো কারো কাছে সালাত আদায় অবস্থায় শয়তান এসে বলে, ঐ বিষয় চিন্তা করো, ঐ বিষয় স্মরণ করো। এভাবে (শয়তানের) ওয়াস্ওয়াসা চলতে থাকে সালাত শেষ করা পর্যন্ত। অতঃপর সে হয়ত তা (পরিপূর্ণ) না করেই উঠে যায়। এভাবে শয়তান তার ঘুমানোর সময় এসে তাকে ঘুম পাড়াতে থাকবে, যতক্ষণ না সে তা (আদায় না) করে ঘুমিয়ে পড়ে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)
আবূ দাঊদ-এর আর এক বর্ণনায় আছে, ’’যে কোন মুসলিম দু’টি বিষয়ে লক্ষ্য করবে।’’ এভাবে তার বর্ণনায় আছে, ’’মীযানের পাল্লায় একহাজার পাঁচশ’’-এ শব্দের পর আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন সে ঘুমাতে যায় তখন পড়বে, ’আল্ল-হু আকবার’ চৌত্রিশবার ’আলহাম্দুলিল্লা-হ’ তেত্রিশবার ও ’সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার।[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَلَّتَانِ لَا يُحْصِيهِمَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ أَلَا وَهُمَا يَسِيرٌ وَمَنْ يَعْمَلُ بِهِمَا قَلِيلٌ يُسَبِّحُ اللَّهَ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ عَشْرًا وَيَحْمَدُهُ عَشْرًا ويكبِّرهُ عَشراً» قَالَ: فَأَنَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْقِدُهَا بِيَدِهِ قَالَ: «فَتِلْكَ خَمْسُونَ وَمِائَةٌ فِي اللِّسَان وَأَلْفٌ وَخَمْسُمِائَةٍ فِي الْمِيزَانِ وَإِذَا أَخَذَ مَضْجَعَهُ يُسَبِّحُهُ وَيُكَبِّرُهُ وَيَحْمَدُهُ مِائَةً فَتِلْكَ مِائَةٌ بِاللِّسَانِ وَأَلْفٌ فِي الْمِيزَانِ فَأَيُّكُمْ يَعْمَلُ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ أَلْفَيْنِ وَخَمْسَمِائَةِ سَيِّئَةٍ؟» قَالُوا: وَكَيْفَ لَا نُحْصِيهَا؟ قَالَ: يَأْتِي أَحَدَكُمُ الشَّيْطَانُ وَهُوَ فِي صِلَاتِهِ فَيَقُولُ: اذْكُرْ كَذَا اذْكُرْ كَذَا حَتَّى يَنْفَتِلَ فَلَعَلَّهُ أَنْ لَا يَفْعَلَ وَيَأْتِيهِ فِي مَضْجَعِهِ فَلَا يَزَالُ يُنَوِّمُهُ حَتَّى يَنَامَ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ
وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ قَالَ: «خَصْلَتَانِ أَوْ خَلَّتَانِ لَا يُحَافِظُ عَلَيْهِمَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ» . وَكَذَا فِي رِوَايَتِهِ بَعْدَ قَوْلِهِ: «وَأَلْفٌ وَخَمْسُمِائَةٍ فِي الْمِيزَانِ» قَالَ: «وَيُكَبِّرُ أَرْبَعًا وَثَلَاثِينَ إِذَا أَخَذَ مَضْجَعَهُ» وَيَحْمَدُ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ وَيُسَبِّحُ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ . وَفِي أَكْثَرِ نُسَخِ المصابيح عَن: عبد الله بن عمر
ব্যাখ্যা: পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের প্রতি ওয়াক্তে (১০ বার ‘‘সুবহা-নাল্ল-হ’’, ১০ বার ‘‘আলহামদুলিল্লা-হ’’, ১০ বার ‘‘আল্ল-হু আকবার’’) ৩০ বার, যা পাঁচ ওয়াক্ত মিলে ৩০ × ৫ = ১৫০ বার। অর্থাৎ- রাত ও দিনে প্রতি ওয়াক্তের ৩০ বার মিলে নেকী অর্জিত হয় ১৫০, আর এ সংখ্যানুপাতে প্রতিটি হবে তার দশগুণ, কিতাবুল্লাহ ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহয় তা ওয়া‘দা রয়েছে।
(وَإِذَا أَخَذَ مَضْجَعَه) আত্ তিরমিযীতে রয়েছে যে, যখন তুমি বিছানা গ্রহণ করবে তখন ‘‘সুবহা-নাল্ল-হ’’, ‘‘আল্ল-হু আকবার’’ ও ‘‘আলহামদু লিল্লা-হ’’ বলবে। এটি দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের বিবরণ।
(يُسَبِّحُه وَيُكَبِّرُه وَيَحْمَدُه مِائَةً) অর্থাৎ- ১০০ বার, ‘‘সুবহা-নাল্ল-হ’’ ৩৩ বার, ‘‘আল্ল-হু আকবার’’ ৩৪ বার এবং ‘‘আলহামদু লিল্লা-হ’’ ৩৩ বার। এর সম্মিলিত সংখ্যা হলো ১০০ বার, আর এর উপর প্রমাণ করে নাসায়ী’র বর্ণনা।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪০৭-[২৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু গন্নাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ভোরে (ঘুম থেকে) উঠে এ দু’আ পড়বে, ’’আল্ল-হুম্মা মা- আস্বাহা বী মিন্ নি’মাতিন, আও বিআহাদিম মিন খলকিকা, ফামিনকা ওয়াহদাকা লা- শারীকা লাকা, ফালাকাল হাম্দু ওয়ালাকাশ্ শুকরু’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! ভোরে আমার ওপর ও তোমার অন্য যে কোন সৃষ্টির ওপর যে নিয়ামত পৌঁছেছে তা একা তোমার পক্ষ থেকেই, এতে তোমার কোন শারীক নেই। সুতরাং তোমারই প্রশংসা ও তোমারই কৃতজ্ঞতা।)- সে ব্যক্তি তার ঐ দিনের কৃতজ্ঞতা আদায় করল। আর যে সন্ধ্যায় এ দু’আ পড়ল, সে তার ঐ রাতের কৃতজ্ঞতা আদায় করল। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ غَنَّامٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: من قَالَ حِينَ يُصْبِحُ: اللَّهُمَّ مَا أَصْبَحَ بِي مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ فَقَدْ أَدَّى شُكْرَ يَوْمِهِ وَمَنْ قَالَ مِثْلَ ذَلِكَ حِينَ يُمْسِي فَقَدْ أَدَّى شُكْرَ ليلته . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ আলোচ্য হাদীসে এ সকল সহজ শব্দগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি আবশ্যকীয় কৃতজ্ঞতা আদায় করার বড় ফাযীলাত ও মাহাত্ম্য রয়েছে। নিশ্চয় কেউ যদি সকালে উল্লেখিত দু‘আ পাঠ করে, তবে সে উক্ত দিনের শুকরিয়া আদায় করল। আর সন্ধ্যায় সেটা পাঠকারী রাতের শুকরিয়া আদায় করল। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামত গণনা করো, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না’’- (সূরা ইব্রা-হীম ১৪ : ৩৪)। যখন তাঁর নিয়ামত গণনা করা সম্ভব হবে না, তখন বান্দা উক্ত নিয়ামতের উপর শুকরিয়াই বা কিভাবে পরিমাপ করবে? অতএব ‘ইলমের খুনি বা সাগর হতে সংগৃহীত এ মহা ফায়িদার জন্য প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪০৮-[২৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিছানায় ঘুমানোর সময় বলতেন,
’’আল্ল-হুম্মা রব্বাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়া রববাল আরযি ওয়া রব্বা কুল্লি শাইয়িন, ফালিকল হাব্বি ওয়ান্ নাওয়া- মুনযিলাত্ তাওরা-তি, ওয়াল ইঞ্জীলি ওয়াল কুরআ-নি। আ’ঊযুবিকা মিন শাররি কুল্লি যী শাররি। আন্তা আ-খিযুন বিনা-সিয়াতিহী, আন্তাল আও্ওয়ালু, ফালায়সা কবলাকা শায়উন, ওয়া আন্তাল আ-খিরু, ফালায়সা বা’দাকা শায়উন, ওয়া আন্তায্ যা-হিরু, ফালায়সা ফাওককা শাইউন। ওয়া আন্তাল বা-ত্বিনু, ফালায়সা দূনাকা শায়উন, ইকযি ’আন্নিদ্দায়না, ওয়া আগ্নিনী মিনাল ফাকরি’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! যিনি আসমানের রব, জমিনের রব, তথা প্রতিটি জিনিসের রব, শস্যবীজ ও খেজুর দানা ফেড়ে গাছ-পালা উৎপাদনকারী; তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআন অবতীর্ণকারী, আমি তোমার কাছে এমন প্রতিটি অনিষ্টকারীর অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাই যা তোমার অধিকারে রয়েছে। তুমিই প্রথম- তোমার আগে কেউ ছিল না। তুমিই শেষ- তোমার পরে আর কেউ থাকবে না। তুমি প্রকাশ্য- তোমার চেয়ে প্রকাশ্য আর কিছু নেই। তুমি অন্তর্যামী- তোমার চেয়ে গোপনীয়তা আর কিছু নেই। তুমি আমাকে ঋণমুক্ত করে দাও এবং দারিদ্র্যতা হতে বাঁচিয়ে রেখ [স্বচ্ছলতা দাও])। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; কিছু ভিন্নতাসহ মুসলিমেও)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ: «اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ وَرَبَّ الْأَرْضِ وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى مُنْزِلَ التوراةِ والإِنجيل والقرآنِ أعوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ ذِي شَرٍّ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ أَنْتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ اقْضِ عَنِّي الدَّيْنَ وَاغْنِنِي مِنَ الْفَقْرِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَرَوَاهُ مُسلم مَعَ اخْتِلَاف يسير
ব্যাখ্যা: সহীহ মুসলিম ও ইবনুস্ সুন্নী সুহায়ল হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ সলিহ আমাদের নির্দেশ দিতেন, যখন আমাদের কেউ ঘুমাতে ইচ্ছা করবে, সে তার ডান কাতের উপর শয়ন করবে, অতঃপর বলবেঃ (...اَللّٰهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ) আর তিনি (সুহায়ল) এটা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে, আর হুরায়রাহ্ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী এবং মুসলিমে সুহায়ল (রহঃ) থেকে, তিনি তার বাবা থেকে, তার বাবা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করেছেন যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিনের প্রতিপালক। অর্থাৎ- উভয়ের মালিক এবং উভয়ের অধিবাসীদের পরিচালনাকারী এবং তারপরই তাঁর (আল্লাহর) কথা (لفالق الحب والنوى) উল্লেখ করলেন, স্রষ্টা ও রাজত্বের অর্থ প্রকাশ করার জন্য। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ তিনি মৃত থেকে জীবন বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃত বের করেন। (لفالق الحب والنوى) -এর অর্থ হলোঃ তিনি প্রাণীগুলোকে শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেন, বীজ থেকে দানা বের করেন এবং জীবন থেকে মৃত বের করেন। অর্থাৎ- এ সকল প্রাণী সৃষ্টি করেন।
‘আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেন, উল্লেখ্য হাদীসে দীন দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ আল্লাহ তা‘আলার হকসমূহ ও বান্দার যাবতীয় অধিকার।