পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩১৭-[২৪] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক বেদুঈন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন কিছু দু’আ-কালাম শিখিয়ে দিন যা আমি পড়তে পারি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি পড়বে

’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, আল্ল-হু আকবার কাবীরা- ওয়াল হামদুলিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি রব্বিল ’আ-লামীন, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল ’আযীযিল হাকীম’’

(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই, আল্লাহ অনেক বড়, আল্লাহর জন্য অনেক প্রশংসা, আমি পবিত্রতা ঘোষণা করি সে আল্লাহর যিনি সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক, কারো কোন উপায় বা শক্তি নেই আল্লাহ ছাড়া, যিনি প্রতাপান্বিত ও প্রজ্ঞাবান)।

(রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেখানো দু’আ শুনে) সে বেদুঈন বলল, হে আল্লাহর রসূল! এটা তো আমার রবের জন্য (তাঁর প্রশংসা), আমার জন্য কী? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি পড়বে

’’আল্ল-হুম্মাগফিরলী, ওয়ার হামনী, ওয়াহদিনী, ওয়ারযুকনী, ওয়া ’আ-ফিনী’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ কর, দয়া কর, হিদায়াত দান কর, আমাকে রিযক দাও ও আমাকে সুখে-শান্তিতে রাখ)।

শেষ শব্দ عَافِنِىْ (’আ-ফিনী) [অর্থাৎ- আমাকে সুখে-শান্তিতে রাখ] সম্বন্ধে বর্ণনাকারী সন্দেহ রয়েছে যে, এ শব্দটি রসূলের কথার মধ্যে আছে কিনা? (মুসলিম)[1]

عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: عَلِّمْنِي كَلَامًا أَقُولُهُ قَالَ: «قُلْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا وَسُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ» . فَقَالَ فَهَؤُلَاءِ لِرَبِّي فَمَا لِي؟ فَقَالَ: «قُلِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي وَعَافِنِي» . شَكَّ الرَّاوِي فِي «عَافِنِي» . رَوَاهُ مُسلم

عن سعد بن ابي وقاص قال: جاء اعرابي الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: علمني كلاما اقوله قال: «قل لا اله الا الله وحده لا شريك له الله اكبر كبيرا والحمد لله كثيرا وسبحان الله رب العالمين لا حول ولا قوة الا بالله العزيز الحكيم» . فقال فهولاء لربي فما لي؟ فقال: «قل اللهم اغفر لي وارحمني واهدني وارزقني وعافني» . شك الراوي في «عافني» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: বাযযার-এর অপর বর্ণনাতে আছে (العلى العظيم) যা মানুষের মুখে মুখে প্রসিদ্ধ। ইমাম মুসলিম আবূ মালিক আল আশ্‘আরী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই তার পিতা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, যখন একজন লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! যখন আমি আমার পালনকর্তার কাছে চাইব তখন কিভাবে বলব? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বলবে হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, তুমি আমার প্রতি দয়া কর, তুমি আমাকে নিরাপত্তা দাও এবং আমাকে দান কর, কেননা এগুলো তোমার ইহকাল ও পরকালকে একত্রিত করবে।

হাদীস থেকে বুঝা যায়, একজন ব্যক্তির সর্বদায় ও প্রাথমিক অবলম্বনীয় বিষয় তাওহীদ। আরো বুঝা যাচ্ছে দু‘আর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা, তারপর ব্যক্তির যা চাওয়া পাওয়া তা আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩১৮-[২৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি শুকনা পাতাবিশিষ্ট গাছের কাছে গেলেন এবং নিজের হাতের লাঠি দিয়ে এতে আঘাত করলেন। এতে গাছের পাতা ঝরতে লাগল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’’আলহামদুলিল্লা-হ, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হ, ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার’’-এ বাক্যগুলো বান্দার গুনাহ এভাবে ঝরিয়ে দেয় যে, যেভাবে ঐ গাছের পাতা ঝরছে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى شَجَرَةٍ يَابِسَةِ الْوَرَقِ فَضَرَبَهَا بِعَصَاهُ فَتَنَاثَرَ الْوَرَقُ فَقَالَ: «إِنَّ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ تُساقطُ ذُنوبَ العَبدِ كَمَا يتَساقطُ وَرَقُ هَذِهِ الشَّجَرَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَقَالَ: هَذَا حديثٌ غَرِيب

وعن انس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم مر على شجرة يابسة الورق فضربها بعصاه فتناثر الورق فقال: «ان الحمد لله وسبحان الله ولا اله الا الله والله اكبر تساقط ذنوب العبد كما يتساقط ورق هذه الشجرة» . رواه الترمذي. وقال: هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে বুঝা যায়, (الْحَمْدُ لِلّٰهِ وَسُبْحَانَ اللّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ) পাঠ করা গুনাহ মাফের অতি সহজ একটি মাধ্যম। ইমাম আহমাদ আ‘মাশ-এর সানাদ ছাড়া আরেক সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যা নিম্নরূপ ‘‘নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ডাল ধরলেন, অতঃপর তাকে ঝাড়া দিলেন কিন্তু পাতা ঝড়ল না, আবার তাকে ঝাড়া দিলেন তাতেও পাতা ঝড়ল না, আবার তাকে ঝাড়া দিলেন, তখন পাতা ঝড়ল। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই (وَسُبْحَانَ اللّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ) গুনাহসমূহকে ঝেড়ে দেয় যেভাবে বৃক্ষ তার পাতাকে ঝেড়ে দেয়।’’ ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, ইমাম বুখারীও একে আদাবুল মুফরাদে আ‘মাশ-এর সানাদ ভিন্ন অন্য সানাদে আহমাদ-এর মতো বর্ণনা করেছেন।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩১৯-[২৬] মাকহূল (রহঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ’’লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’ বেশি বেশি করে পড়তে। কেননা এ বাক্যটি জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের বিশেষ বাক্য।

মাকহূল (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি পড়বে ’’লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি ওয়ালা- মানজাআ মিনাল্ল-হি ইল্লা- ইলায়হি’’- আল্লাহ তার সত্তরটি কষ্ট দূর করে দিবেন, যার সর্বনিম্ন হলো দারিদ্র্যতা। (তিরমিযী। তিনি বলেন, হাদীসের সানাদ মুত্তাসিল নয়। মাকহূল (রহঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে হাদীসটি শুনেননি।)[1]

وَعَن مَكحولِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَكْثِرْ مِنْ قَوْلِ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ كَنْزِ الْجَنَّةِ . قَالَ مَكْحُولٌ: فَمَنْ قَالَ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ وَلَا مَنْجًى مِنَ اللَّهِ إِلَّا إِلَيْهِ كَشَفَ اللَّهُ عَنْهُ سَبْعِينَ بَابًا مِنَ الضُّرِّ أَدْنَاهَا الْفَقْرُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِمُتَّصِلٍ وَمَكْحُولٌ لَمْ يَسْمَعْ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ

وعن مكحول عن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اكثر من قول: لا حول ولا قوة الا بالله فانها من كنز الجنة . قال مكحول: فمن قال: لا حول ولا قوة الا بالله ولا منجى من الله الا اليه كشف الله عنه سبعين بابا من الضر ادناها الفقر. رواه الترمذي. وقال: هذا حديث ليس اسناده بمتصل ومكحول لم يسمع عن ابي هريرة

ব্যাখ্যা: (فَإِنَّهَا مِنْ كَنْزِ الْجَنَّةِ) অর্থাৎ- হাদীসে বর্ণিত দু‘আটি জান্নাতের উৎকৃষ্ট অর্জনের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম নাবাবী বলেন, হাদীসে বর্ণিত দু‘আটি পাঠ করাতে উৎকৃষ্ট সাওয়াব অর্জন হয়। যা উক্ত দু‘আ পাঠকারীর জন্য জান্নাতে সঞ্চয় করে রাখা হয়।

(أَدْنَاهَا الْفَقْرُ) কারী বলেন, হাদীসে الفقر বলতে অন্তরের নিঃস্বতা। যে ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, তাসবীহ পাঠকারী যখন এ বাক্যের অর্থ পরিকল্পনা করবে তখন তার নিকট স্থির হবে, তার অন্তরে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হবে নিশ্চয়ই নির্দেশ সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। আর নিশ্চয়ই উপকার এবং ক্ষতি তার নিকট থেকেই হয়ে থাকে। কোন কিছু দান করা বা বারণ করা তার মাধ্যমেই হয়ে থাকে আর তখন হাদীসে বর্ণিত তাসবীহ পাঠকারী বিপদে ধৈর্যধারণ করে এবং অনুগ্রহের ক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তার বিষয়কে আল্লাহর নিকট সমর্পণ করে। আর কদরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, নিঃস্বতা কুফরীতে পৌঁছে যাওয়ার উপক্রম- এ হাদীসটিকে আবূ নু‘আয়ম হিল্ইয়াহ্ গ্রন্থে, বায়হাক্বী শু‘আবূল ঈমান-এ, ইবনুদ্ দায়বা' আশ্ শায়বানী তাম‘ঈযুত্ব ত্বীব-এ বলেন, হাদীসটি খাবীসের অন্তর্ভুক্ত (১৪৪ পৃষ্ঠা)-এর সানাদে ইয়াযীদ আর্ রক্কাশী আছে, সে দুর্বল এবং এ হাদীসের দুর্বল অনেক শাহিদ/সমর্থনকারী হাদীস আছে। মাজমাউল বিহার গ্রন্থের লেখক তাযকিরাতুল মাওযূ‘আতে (১৭৪ পৃষ্ঠা) একে দুর্বল বলেছেন। তবে আবূ সা‘ঈদ-এর উক্তি কর্তৃক এটি সহীহ সাব্যস্ত হয়েছে।

হাকিম-এর এক বর্ণনাতে আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ হুরায়রাহ্! আমি কি তোমাকে জান্নাতের ধনভাণ্ডারসমূহ থেকে কোন ধন ভাণ্ডার সম্পর্কে অবহিত করব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, তুমি বলবে (لا حول ولا قوة إلا بالله ولا ملجأ وفجأ من الله إلا أليه) অর্থাৎ- আল্লাহর আনুগত্য থেকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিবে এমন পরিবর্তনকারী নেই, আল্লাহর ‘ইবাদাত করার তাওফীক দিবে এমন কোন শক্তি নেই এক মাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল নেই এবং আল্লাহ থেকে মুক্তি লাভের কোন উপায় নেই তবে একমাত্র তাঁর নিকটেই।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, ইমাম হাকিম-এর এ বর্ণনা ইমাম আহমাদ তাঁর কিতাবের ২য় খণ্ডে ৩০৯ পৃষ্ঠাতে সংকলন করেছেন এবং এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরশীল।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩২০-[২৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’’লা- হাওলা ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’ হলো নিরানব্বইটি রোগের ঔষধ, তন্মধ্যে সহজটা হলো চিন্তা।[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ دَوَاءٌ مِنْ تِسْعَةٍ وَتِسْعِينَ دَاء أيسرها الْهم»

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا حول ولا قوة الا بالله دواء من تسعة وتسعين داء ايسرها الهم»

ব্যাখ্যা: (مِنْ تِسْعَةٍ وَتِسْعِينَ) অর্থাৎ- এ সংখ্যা নির্দিষ্ট করার কৌশল আল্লাহ ও তাঁর রসূল ছাড়া কেউ জানে না। ইমাম শাওকানী বলেন, এর বাহ্যিক দিক হল, নিশ্চয়ই এ জিকিরে উল্লেখিত সংখ্যার আরোগ্যদানকারী এ সংখ্যার প্রয়োগ আধিক্যতার উপরও হতে পারে। যেমন, আল্লাহ সূরা আল হা-ক্কাহ এর ৩২ নং আয়াতে বলেন, (ذرعها سبعون ذراعا)। সুতরাং তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী থেকে উদ্দেশ্য হবে নিশ্চয়ই ঐ বাণী পাঠ সকল রোগ ও ত্রুটি থেকে পরিত্রাণ লাভের উপায়। আর সে ত্রুটিগুলোর মাঝে একান্ত স্বাভাবিক চিন্তা দূর হওয়া।

(دَاءً) অর্থাৎ- গোপনীয় রোগের ঔষধ যেমন, দম্ভ, অহংকার, গোপনীয় শিরক, প্রবৃত্তির আনুগত্য অথবা বিষয়টি এর চাইতেও ব্যাপক এবং তা স্পষ্ট। কারী বলেন, অর্থাৎ- ইহকালীন ও পরকালীন রোগসমূহকে আরোগ্যদানকারী।

(الْهُمُّ) দীন ও দুনিয়ার সাথে সর্ম্পক রাখে এমন চিন্তা বা যা দুনিয়ার জীবন-যাপন ও পরকালের দিকে প্রত্যাবর্তনের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন। মানাবী বলেন, এটা এ কারণে যে, বান্দা যখন কোন কিছুর উপকরণসমূহ থেকে মুক্ত থাকবে তখন তার বক্ষ প্রশস্ত হবে এবং ঐ ব্যাপারে তার চিন্তা দূর হবে তার মাঝে শক্তি সাহায্য আসবে এবং গোপনীয় রোগ-ব্যাধির ব্যাপারে তার মন হালকা হবে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩২১-[২৮] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ আমি কী তোমাকে ’আরশের নীচের ও জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের একটি ’কালিমাহ্ বলে দেবো না? (সেটি হলো) ’’লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’। (যখন এ কালিমাটি কেউ পড়ে) আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা সর্বাত্মকভাবে আমার কাছে আত্মসমর্পণ করল। (উক্ত হাদীস দু’টি বায়হাক্বী দা’ওয়াতুল কাবীর-এ বর্ণনা করেছেন)।[1]

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى كَلِمَةٍ مِنْ تَحْتِ الْعَرْشِ مِنْ كَنْزِ الْجَنَّةِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: أَسلَمَ عَبدِي واستسلم . رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيّ فِي الدَّعْوَات الْكَبِير

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: الا ادلك على كلمة من تحت العرش من كنز الجنة لا حول ولا قوة الا بالله يقول الله تعالى: اسلم عبدي واستسلم . رواهما البيهقي في الدعوات الكبير

ব্যাখ্যা: (مِنْ تَحْتِ الْعَرْشِ مِنْ كَنْزِ الْجَنَّةِ) অর্থাৎ- নিশ্চয়ই তা ‘আরশী আভ্যন্তরীণ গচ্ছিত সম্পদের অন্তর্ভুক্ত এবং সুউচ্চ জান্নাতের উন্নত ধনভাণ্ডারের অন্তর্ভুক্ত। ধ্বংসশীল, ইন্দ্রিয়প্রবণ, নিম্ন গচ্ছিত সম্পদের অন্তর্ভুক্ত না।

একমতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ- এমন কালিমাহ্ বা বাক্য যা ‘আরশের তলদেশের গচ্ছিত সম্পদ স্বরূপ।

(يَقُولُ اللّٰهُ تَعَالٰى) ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, আল্লাহ তাঁর মালায়িকাহকে (ফেরেশতাদেরকে) শিক্ষা দেয়ার্থে এ বাণী এর পাঠকারী বা যা এর অর্থকে শামিল করে তা পাঠকারী এর পূর্ণাঙ্গতা সম্পর্কে বলেন।

কারী বলেন, নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (يَقُولُ اللّٰهُ) উক্তি এর বাহ্যিক দিক হল, এটি কালিমাহ্ ও তার পাঠকারীর মর্যাদা বর্ণনার জন্য নতুন।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, হাকিমে (তুমি বলবে, (لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ) তখন আল্লাহ বলেন, (أَسلَمَ عَبْدِىْ) শেষ পর্যন্ত) এ শব্দে আছে আর ত্বীবীর উক্তি একে সমর্থন করেছে।

(أَسلَمَ عَبْدِىْ) অর্থাৎ- সে উপাসনীয় হুকুম আহকামের অনুস্মরণ করল এবং নিষ্ঠার পথাবলম্বন করল।

(وَاسْتَسْلَمَ) অর্থাৎ- সে যথার্থ আনুগত্য করল। ত্বীবী বলেন, (أَسلَمَ عَبْدِىْ وَاسْتَسْلَمَ) এর অর্থ হল, সংঘটিত হবে এমন সকল বিষয়কে আল্লাহর নিকট সম্পূর্ণভাবে সোপর্দ করল এবং দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য খাঁটি সাব্যস্ত করে আল্লাহর আনুগত্য করল। এ অধ্যায়ে আরো অনেক হাদীস আছে যার কতক কতককে শক্তিশালী করবে তার একটি ত্ববারানী এর আওসাতে জাবির-এর হাদীস, ইবনু আসাকিরে ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস, ত্ববারানী এর আওসাতে বাহয বিন হাকিম-এর হাদীস যা তিনি তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটিকে ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে কয়েক স্থানে নিয়ে এসেছেন, তার মাঝে একটি তার মুসনাদের ২য় খণ্ডে ২৯৮ পৃষ্ঠাতে এবং বাযযার বর্ণনা করেছেন, হাকিম তার কিতাবের ১ম খণ্ডে ২১ পৃষ্ঠাতে এবং তিনি বলেন, এটি বিশুদ্ধ হাদীস, এর কোন ত্রুটি পাওয়া যায় না এবং যাহাবী তার সমর্থন করেছেন। মুনযিরী তারগীবে হাকিমের কথা নকল করে তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

হায়সামী তাঁর কিতাবের ১০ম খণ্ডে ৯৯ পৃষ্ঠাতে উক্ত বাণীকে ইমাম আহমাদ ও বাযযারের দিকে সম্পৃক্ত করার পর বলেন, আবূ বালাজ আল কাবীর ছাড়া সকলেই সহীহ এর লেখক। আবূ বালাজ আল কাবীর বলতে ইয়াহ্ইয়া বিন সুলায়ম আর তিনি নির্ভরশীল।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩২২-[২৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’’সুবহা-নাল্ল-হ’’ হলো আল্লাহর সৃষ্টিজগতের সালাত। ’’আলহামদুলিল্লা-হ’’ হলো কালিমাতুশ্ শুক্‌র, অর্থাৎ- কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বাক্য। ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’’ হলো তাওহীদের কালিমাহ্, আর ’’আল্ল-হু আকবার’’ আকাশ ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে তাকে পূর্ণ করে দেয়। যখন বান্দা বলে, ’’লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’, তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, এ বান্দা সম্পূর্ণরূপে আমার কাছে আত্মসমর্পণ করল। (রযীন)

وَعَن ابْن عمر أَنَّهُ قَالَ: سُبْحَانَ اللَّهِ هِيَ صَلَاةُ الْخَلَائِقِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَلِمَةُ الشُّكْرِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ كَلِمَةُ الْإِخْلَاصِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ تَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: أسلم عَبدِي واستَسلَم. رَوَاهُ رزين

وعن ابن عمر انه قال: سبحان الله هي صلاة الخلاىق والحمد لله كلمة الشكر ولا اله الا الله كلمة الاخلاص والله اكبر تملا ما بين السماء والارض واذا قال العبد: لا حول ولا قوة الا بالله قال الله تعالى: اسلم عبدي واستسلم. رواه رزين

ব্যাখ্যা: (سُبْحَانَ اللّٰهِ هِىَ صَلَاةُ الْخَلَائِقِ) অর্থাৎ- সৃষ্টিজীবের ‘ইবাদাত। যেমন, আল্লাহ বলেন, وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهٖ ‘‘যে কোন বস্ত্ত তার প্রশংসা সহ পবিত্রতা ঘোষণা করে’’- (সূরা ইসরা ১৭ : ৪৪)। সূরা আন্ নূর-এর ৪১ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘‘প্রতিটি বস্ত্ত তাঁর ‘ইবাদাত ও তাঁর পবিত্রতা ঘোষণাকে জেনে নিয়েছে’’।

এক মতে বলা হয়েছে, পবিত্রতা বর্ণনা মৌখিকভাবেও হতে পারে অথবা অবস্থার মাধ্যমেও হতে পারে, যা প্রমাণ করে তাঁর স্রষ্টা হওয়ার উপর, তাঁর ক্ষমতার উপর, তাঁর কৌশলের উপর এবং ঐ জিনিস থেকে তাঁর পবিত্র হওয়ার উপর যার সাথে তাঁর অংশীদার সাব্যস্ত করা বৈধ না।

(وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ كَلِمَةُ الشُّكْرِ) অর্থাৎ- কৃতজ্ঞতার খুঁটি, মূল।

(وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ كَلِمَةُ الْإِخْلَاصِ) অর্থাৎ- لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ তাওহীদের বাণী তার পাঠককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি আবশ্যক করে দেয় অথবা তা এমন এক বাণী যা সত্য ও নিষ্ঠাসহ পাঠ ছাড়া কোন উপকারে আসবে না।

(وَاللّٰهُ أَكْبَرُ تَمْلَأُ) অর্থাৎ- তার সাওয়াব পূর্ণ হয়ে যায়।

(مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ) এক মতে বলা হয়েছে, আকাশ ও জমিনের মাঝে যা কিছু আছে তা দ্বারা সকল জগতের প্রতি ইঙ্গিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে