পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২২৫১-[২৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই যেন স্বীয় প্রতিপালকের কাছে তার সকল প্রয়োজনের ব্যাপারে প্রার্থনা করে। এমনকি যখন তার জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায়, সে সময়ও যেন তাঁর কাছে চায়।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِيَسْأَلْ أَحَدُكُمْ رَبَّهُ حَاجَتَهُ كُلَّهَا حَتَّى يَسْأَلَهُ شِسْعَ نَعله إِذا انْقَطع»
ব্যাখ্যা: জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও তা আল্লাহর নিকট চাইতে বলার মাধ্যমে মূলত রসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝাতে চেয়েছেন যে, সমুদয় প্রয়োজনাদি যেন আমরা মহান আল্লাহর নিকট চাই। এমনটাই মতামত ব্যক্ত করেছেন ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ)।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২২৫২-[৩০] সাবিত আল বুনানী-এর এক মুরসাল বর্ণনায় এ অংশটুকু বেশি রয়েছে যে, তাঁর কাছে যেন লবণও প্রার্থনা করে, এমনকি নিজের জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও যেন তাঁর নিকট প্রার্থনা করে। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
زَادَ فِي رِوَايَةٍ عَنْ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ مُرْسَلًا «حَتَّى يَسْأَلَهُ الْمِلْحَ وَحَتَّى يَسْأَلَهُ شِسْعَهُ إِذَا انْقَطع» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ ‘বা’ পেশ দিয়ে আর প্রথম ‘নূন’ তাশদীদ ছাড়া, আর দ্বিতীয় ‘নূন’ যের দিয়ে। বুনানীর সম্পর্ক এসেছে সা‘দ বিন লুওয়াই এর মা বানানাহ্-এর কাছ থেকে। তিনি গ্রহণযোগ্য তাবি‘ঈগণদের মধ্যে অন্যতম।
(حَتّٰى يَسْأَلَهُ الْمِلْحَ) লবণের মতো নগণ্য জিনিস হলেও তা আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে। (حَتّٰى يَسْأَلَه شِسْعَه) চাওয়ার নগণ্যতা বুঝানো উদ্দেশ্য নয়। বরং এ সন্দেহ দূর করা যে, তুচ্ছ জিনিস হলেও তা আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২২৫৩-[৩১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আর সময় নিজের হাত উঠাতেন এমনকি তখন তাঁর বগলের উজ্জ্বলতা প্রকাশ পেত।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي الدُّعَاءِ حَتَّى يُرى بياضُ إبطَيْهِ
ব্যাখ্যা: (بياضُ إبطَيْهِ) বগলের শুভ্রতা; আবূ দাঊদ-এর অন্য রিওয়ায়াতে যে, কাঁধ পর্যন্ত উঠানোর কথা আছে- এ দু’ বর্ণনার মধ্যে কোন বিরোধ নেই। অর্থাৎ- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বনিম্ন কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন অথবা অধিকাংশ সময় তিনি কাঁধ বরাবর উঠাতেন আর মাঝে মাঝে এর চেয়ে বেশি উঠাতেন যাতে তার বগলের শুভ্রতা পরিলক্ষিত হতো।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২২৫৪-[৩২] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাতের আঙ্গুল কাঁধ সমান উঠিয়ে দু’আ করতেন।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن سهل بن سَعْدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كَانَ يَجْعَل أصبعيه حذاء مَنْكِبَيْه وَيَدْعُو
ব্যাখ্যা: (حِذَاءَ مَنْكِبَيْهِ) ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসটি প্রমাণ করেছে যে, দু‘আর সময় হাত উত্তোলনের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এটাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বেশির ভাগ ‘আমল ছিল আর পূর্বেকার হাদীসগুলোতে যে, আরো বেশি পরিমাণে হাত উঠানোর কথা বলা হয়েছে তা হলো খুবই জরুরী মুহূর্তের দু‘আর সময়।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২২৫৫-[৩৩] সায়িব ইবনু ইয়াযীদ হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত উঠিয়ে দু’আ করার সময় হাত দিয়ে মুখমণ্ডল ে মাসাহ করতেন।
উপরোল্লিখিত তিনটি হাদীস ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) তাঁর ’’দা’ওয়াতুল কাবীর’’-এ বর্ণনা করেছেন।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا دَعَا فَرفع يَدَيْهِ مَسَحَ وَجْهَهُ بِيَدَيْهِ
رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَحَادِيثَ الثَّلَاثَة فِي «الدَّعْوَات الْكَبِير»
ব্যাখ্যা: (مَسَحَ وَجْهَه بِيَدَيْهِ) ইবনু হাজার (রহ্ঃ) বলেনঃ এ অংশটি إِذَا শর্তের জওয়াব। তবে সঠিক হলো এ অংশটি كَانَ -এর খবর। আর إِذَا হলো كَانَ -এর খবর।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসটি প্রমাণ করছে যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আর ক্ষেত্রে হাত তুলতেন না তখন হাত মুছতেনও না। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে, বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফে, ফরয সালাতের শেষে, ঘুমের সময়, খাওয়ার পরে ইত্যাদি সময়ে বেশী বেশী দু‘আ করেছেন। কিন্তু হাত তুলেননি হাত মুখে মাসেহও করেননি।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২২৫৬-[৩৪] ’ইকরিমাহ্ (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার নিয়ম হলো, নিজের হাত দু’টি কাঁধ পর্যন্ত অথবা কাঁধের কাছাকাছি পর্যন্ত উঠাবে। আর আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার বা ক্ষমা চাওয়ার নিয়ম হলো, তোমার একটি আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করবে এবং আল্লাহর কাছে অনুনয় বিনয় করে প্রার্থনা করার নিয়ম হলো, তোমার দু’হাত একত্রে প্রসারিত করবে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, অনুনয় বিনয় করে প্রার্থনা করবে এভাবে- এরপর তিনি নিজের দু’হাত উপরের দিকে উঠিয়ে ধরলেন এবং তার উভয় হাতের পিঠ মুখমণ্ডলের নিকটবর্তী করলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
(বঙ্গানুবাদ সংশোধন করা হয়েছে কেননা প্রকাশনীর কর্তৃক অনুবাদ সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়নি "হাদিসবিডির" নিকট)
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عِكْرِمَةَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: الْمَسْأَلَةُ أَنْ تَرْفَعَ يَدَيْكَ حَذْوَ مَنْكِبَيْكَ أَوْ نَحْوِهِمَا وَالِاسْتِغْفَارُ أَنْ تُشِيرَ بِأُصْبُعٍ وَاحِدَةٍ وَالِابْتِهَالُ أَنْ تَمُدَّ يَدَيْكَ جَمِيعًا
وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: والابتهالُ هَكَذَا وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَجَعَلَ ظُهُورَهُمَا مِمَّا يَلِي وَجْهَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُ
ব্যাখ্যা: (الْمَسْأَلَةُ) শব্দটি মাসদার-এর সম্বন্ধীয় (مضاف) কে হযফ করা হয়েছে। অর্থাৎ- (الْمَسْأَلَةُ) অর্থ আল্লাহর নিকট দু‘আ করার আদব।
(أَنْ تُشِيرَ بِأُصْبُعٍ وَاحِدَةٍ) যে আঙ্গুলটির মাধ্যমে ইশারা করতে বলা হয়েছে তা হলো ‘‘আস্ সাবা-বাহ্’’ (শাহাদাত বা তর্জনী অঙ্গুলি দ্বারা) ইশারা করার উদ্দেশ্য হলো অন্তরের কুমন্ত্রণা ও শয়তানের ধোঁকা বন্ধ করা যা নাড়াতে শয়তান প্রচন্ড কষ্ট পায় এবং এ দু’টি থেকে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
ইমাম ত্বীবী বলেছেনঃ এখানে একটি আঙ্গুলের কথা বলার কারণ হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি আঙ্গুলের মাধ্যমে ইশারা অপছন্দ করতেন।
(الِابْتِهَالُ) বলা হয় অন্তর থেকে অপছন্দনীয় সব জিনিস দূরীভূত করে দু‘আর ক্ষেত্রে খুবই নমনীয় ও বিনয়ী হওয়া।
(يَدَيْهِ وَجَعَلَ ظُهُورَهُمَا مِمَّا يَلِىْ وَجْهَه) ইবনু ‘আব্বাস হাত দু’টি দু‘আর সময় একদমই উঁচু করে ধরতেন, এমনকি তা মাথার উপর উঠে যেত।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এখানে ‘‘ইবতিহা-ল’’ মানে হয় তো তিনি ‘আযাব থেকে বাঁচার জন্য হাত দু’টিকে ঢালস্বরূপ রাখতে চেয়েছেন। উপরোক্ত দু’ বর্ণনার পার্থক্য হলো, প্রথম বর্ণনায় ‘‘ইবতিহা-ল’’ বক্তব্যমূলক (قوله) আর দ্বিতীয় বর্ণনায় ‘‘ইবতিহা-ল’’ কর্মমূলক (فعلى)।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২২৫৭-[৩৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (দু’আর সময়) তোমাদের হাত বেশি উপরে উঠিয়ে ধরা বিদআত (বিদাত)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কক্ষনো সিনা থেকে বেশি উপরে হাত উঠাতেন না। (আহমদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ يَقُولُ: إِنَّ رَفْعَكُمْ أَيْدِيَكُمْ بِدْعَةٌ مَا زَادَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى هَذَا يَعْنِي إِلَى الصَّدْر رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: (إِلَى الصَّدْرِ) এর ব্যাখ্যায় ‘আল্লামা ত্বীবী (রহ্ঃ) বলেনঃ এ অংশটি ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর দু‘আর ক্ষেত্রে রফ্‘উল ইয়াদাইনের ব্যাখ্যা স্বরূপ, অর্থাৎ- তিনি দু‘আর সময় হাত বুক পর্যন্ত উঠাতেন এবং তিনি উপস্থিত জনতার দু‘আর ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ে যে, হাত বেশী উপরে উত্তোলন করে থাকেন এবং হাত উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অবস্থার কোন তারতম্য করেন না- এ দু’টি বিষয়ের কঠোর সমালোচনা করেছেন। অর্থাৎ- হাত উত্তোলনের পরিমাণ হবে অবস্থার প্রেক্ষিতে কখনো বুক পর্যন্ত, কখনো তার উপর কাঁধ পর্যন্ত, আবার কখনো এরও উপরে।
লাম্‘আত গ্রন্থ প্রণেতা বলেনঃ ইবনু ‘উমার -এর কথা, (إِنَّ رَفْعَكُمْ أَيْدِيَكُمْ) ‘‘তোমাদের দু‘আর সময় বুকের উপর হাত উত্তোলন বিদআত (বিদাত)’’। অর্থাৎ- সর্বদাই অথবা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তোমাদের এরূপ করা এক্ষেত্রে প্রেক্ষাপটের প্রতি দৃষ্টিপাত না করা- এটি বিদআত (বিদাত) কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ (হাত উত্তোলনের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করার বিষয়ে) কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং তার অবস্থা ছিল ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে। তাই তো ইবনু ‘উমার বিষয়টি তার কথা ও কাজ উভয়টির মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছেন।
‘আল্লামা ইবনু হাজার (রহঃ) বলেনঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর উপোরক্ত কথার ভিত্তি হলো তার নিজস্ব ‘ইলম। তিনি যা জেনেছেন তাই বলেছেন এবং তিনি দু‘আর ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ে হস্তদ্বয় কাঁধ বরাবর উঠানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থেকে বর্ণিত কাঁধ পর্যন্ত বা ক্ষেত্র বিশেষে তার চেয়ে বেশী তোলার কথা বেশী শক্তিশালী সূত্রে প্রমাণিত। আর কোন বিষয়ে না এবং হ্যাঁ এর বিরোধ হলে, হ্যাঁ, অগ্রাধিকার পায়।
হাফেয ইবনু হাজার আল আসকালানী (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উমার শুধুমাত্র দু’ কাঁধ বরাবর হাত তোলার বিষয়টি অস্বীকার তথা অবস্থা করেছেন এবং বুক পর্যন্ত উঠানোর পক্ষ নিয়েছেন। যদি ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর ‘আদাবুল মুফরাদ’ কিতাবে কাসিম বিন মুহাম্মাদণ্ডএর সূত্রে এর বিপরীত বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে কাসিম বিন মুহাম্মাদ বলছেন, ‘‘আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে (القاص) আল্ কাস নামক স্থানে দু‘আ করতে দেখেছি যে, তিনি দু‘আর সময় দু’হাত কাঁধ বরাবর তুলেছেন।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২২৫৮-[৩৬] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো জন্য দু’আ করার সময় প্রথমে নিজের জন্য দু’আ করতেন। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব ও সহীহ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا ذَكَرَ أَحَدًا فَدَعَا لَهُ بَدَأَ بِنَفْسِهِ رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ صَحِيح
ব্যাখ্যা: (بَدَأَ بِنَفْسِه) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো জন্য দু‘আ করলে আগে নিজের জন্য দু‘আ করে তারপর তার জন্য দু‘আ করতেন। এটা উম্মাতের জন্য এক প্রকার শিক্ষা যে, তারাও যেন কারো জন্য দু‘আ করলে সর্বপ্রথম নিজের জন্য দু‘আ করে নেয়।
ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর সহীহাতে এ মর্মে ৮টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ কাজটি করা ওয়াজিব নয় বরং করা ভাল। কারণ অনেক হাদীস এমনও আছে, যেখানে আমরা দেখতে পাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেকের জন্য দু‘আ করেছেন কিন্তু সেখানে নিজের কথা উল্লেখই করেননি। যেমনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দু‘আ করেছেন কিন্তু সেখানে নিজের কথা উল্লেখ করেননি, যেমন- আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একটি হাদীস আছে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লূত (আঃ)-এর জন্য দু‘আ করলেন, এমনভাবে সাহাবী ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস, হাসান বিন সাবিত, ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর মাতা হাজিরা (আঃ) সহ আরো অনেকের জন্য দু‘আ করেছেন নিজের উল্লেখ ব্যতীত।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২২৫৯-[৩৭] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম দু’আ করার সময় কোন গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দু’আ না করলে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তাকে এ তিনটির একটি দান করেন। (১) হয়তো তাকে তার কাঙ্ক্ষিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন, (২) অথবা তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন এবং (৩) অথবা তার মতো কোন অকল্যাণ বা বিপদাপদকে তার থেকে দূরে করে দেন। সাহাবীগণ বললেন, তবে তো আমরা অনেক বেশি লাভ করব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশি দেন। (আহমদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ لَيْسَ فِيهَا إِثْمٌ وَلَا قَطِيعَةُ رَحِمٍ إِلَّا أَعْطَاهُ اللَّهُ بِهَا إِحْدَى ثَلَاثٍ: إِمَّا أَنْ يُعَجِّلَ لَهُ دَعْوَتَهُ وَإِمَّا أَنْ يَدَّخِرَهَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ وَإِمَّا أَنْ يَصْرِفَ عنهُ من السُّوءِ مثلَها قَالُوا: إِذنْ نُكثرُ قَالَ: «الله أَكثر» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: (الله أَكثر) এর অনেকগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে [সবগুলোই ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ)-এর থেকে]
১. আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা তোমাদের দু‘আর চেয়ে সর্বাধিক বেশি কবূলকারী।
২. আল্লাহর অনুগ্রহ তোমাদের দু‘আর চেয়ে অনেক বেশি প্রশস্ত।
৩. আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা দান করার দৃষ্টিকোণ থেকে খুব বেশি পরিমাণ দান করে থাকেন।
সুতরাং বান্দারা দু‘আ করে তাকে অক্ষম করে দিতে পারবে না, কেননা তার ধনভাণ্ডার এত বড় যে, তা শেষ হওয়ার নয়।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২২৬০-[৩৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ লোকের দু’আ কবূল করা হয়। (১) মাযলূম বা অত্যাচারিতের দু’আ- যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতিশোধ গ্রহণ করা না হয়, (২) হজ সমাপনকারীর দু’আ- বাড়ী ফিরে না আসা পর্যন্ত, (৩) মুজাহিদের দু’আ- যতক্ষণ না বসে পড়ে, (৪) রোগীর দু’আ- যতক্ষণ না সে সুস্থতা লাভ করে এবং (৫) এক মুসলিম ভাইয়ের দু’আ অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এ সব দু’আর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত কবূল হয় এক (মুসলিম) ভাইয়ের দু’আ তার আর এক ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে। (বায়হাক্বী- দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ خَمْسُ دَعَوَاتٍ يُسْتَجَابُ لَهُنَّ: دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ حَتَّى يَنْتَصِرَ وَدَعْوَةُ الْحَاجِّ حَتَّى يَصْدُرَ وَدَعْوَةُ الْمُجَاهِدِ حَتَّى يَقْعُدَ وَدَعْوَةُ الْمَرِيضِ حَتَّى يَبْرَأَ وَدَعْوَةُ الْأَخِ لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ . ثُمَّ قَالَ: «وَأَسْرَعُ هَذِهِ الدَّعْوَات إِجَابَة دَعْوَة الْأَخ لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِيرِ
ব্যাখ্যা: (دَعْوَةُ الْحَاجِّ) অর্থাৎ- যদি তার হজ হাজ্জে মাবরূর তথা কবূল হজ হয়ে থাকে তাহলে বাড়ি বা দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি যে সকল দু‘আ করবেন তা কবূল। অথবা হজ থেকে ফিরে বাড়িতে প্রবেশ করার পর্যন্ত তার দু‘আ কবূল।
(دَعْوَةُ الْمُجَاهِدِ) জামি‘ আস্ সগীরে ‘মুজাহিদ’-এর স্থানে ‘গাজী’ শব্দ উল্লেখ আছে (১/১৭৪) অর্থাৎ- আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য যদি তিনি যুদ্ধ করে থাকেন তাহলে দু‘আও কবূলের কথা বলা হয়েছে।