পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৩০-[৮] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আই (মূল) ’ইবাদাত। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’এবং তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু’আ করো, আমি তোমাদের দু’আ কবূল করব।’’ (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ» ثُمَّ قَرَأَ: (وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكم)
رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: (الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ) হাদীসটির অর্থ হলো ‘ইবাদাতই দু‘আ, কেননা ‘ইবাদাতের যত শ্রেণী আছে তন্মধ্যে দু‘আ শ্রেষ্ঠ। যেহেতু পরবর্তীতে একটি হাদীস আসছে যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়েছে (الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ) ‘ইবাদাতই হলো দু‘আ।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, হাদীসটির অর্থ হলো এখানে ‘ইবাদাতকে তার আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝানো হয়েছে, দু‘আর অর্থ হলোঃ
إظهار غاية التذلل والافتقار إلى الله والاستكانة له.
অর্থাৎ- আল্লাহর জন্য চূড়ান্তভাবে বিনয়ী ভাব প্রকাশ করা। আর শারী‘আতসিদ্ধ সকল ‘ইবাদাতেরই মূল বিষয় আল্লাহর জন্য বিনয়ী হওয়া। দলীল হিসেবে তিনি পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত পেশ করেছেন যেখানে মহান আল্লাহ বলেছেন,
إِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ
অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই যারা আমার ‘ইবাদাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে তারা নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (সূরা আল মু’মিন/গাফির ৪০ : ৬)
অত্র আয়াতে বিনয়ীভাব ও নম্রতা না প্রদর্শন করাকে অহংকার বলা হয়েছে আর ‘ইবাদাত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে দু‘আর স্থানে আর এই অহমিকার প্রতিদান হিসেবে বলা হয়েছে লাঞ্ছনা-গঞ্জনার কথা।
আর এ কথাও কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, অত্র আয়াতে ‘ইবাদাতকে তার আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কোন সুযোগ নেই আর দেখলে তাতে কোন উপকারও নেই বরং দু‘আ হোক বা অন্য কোন কিছু হোক।
যাই হোক না কেন ‘ইবাদাত আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা বা তার ক্রোধ দমন করা, অথবা দুনিয়াবী কোন নিয়ামত চাওয়া যেমনঃ রিযক্বের প্রশস্ততা কামনা করা, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অসুস্থতা থেকে আরোগ্য কামনা করা- এ থেকে মুক্ত নয়, আর এগুলোর প্রত্যেকটিকেই দু‘আ নামে অভিহিত করা যায়। কেননা, এগুলো হচ্ছে আন্তরিক দু‘আ। আমরা যদি শারী‘আতের অন্যান্য ‘ইবাদাতগুলো (দু‘আ ব্যতীত) পর্যালোচনা করে দেখি তাহলে দেখতে পাব সেখানে বান্দার আন্তরিক দিকটি প্রাধান্য দেয়া হয় আর অন্তরে যা আছে তাও ‘ইবাদাত এই ‘ইবাদাত যখন দু‘আ আকারে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে বের হয় তখন এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় দু‘আর মধ্যে ‘ইবাদাতের দু’টি দিকই সমভাবে বিরাজমান। সুতরাং দু‘আ সর্বোত্তম ‘ইবাদাত হতে আর কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।
আর এক্ষেত্রে আরো জেনে থাকা দরকার (الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ) তথা অত্র হাদীসটি সানাদগত দুর্বল হলেও এ ব্যাপারে সহীহভাবে বর্ণিত আছে, (الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ) তথা দু‘আ হলো ‘ইবাদাতের মূল এ হাদীসটি (الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ) তথা দু‘আই ‘ইবাদাত এ হাদীসের সমর্থক।
এ ব্যাপারে একটি উদাহরণ পেশ করা যাক যেমনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (الحج عرفة) তথা ‘আরাফার ময়দানে অবস্থানই হজ। এ কথার অর্থ এটা নয় যে, কোন ব্যক্তি হাজ্জের জন্য শুধুমাত্র ‘আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে আর বাদবাকী রুকন আদায় না করলেও তার হজ হয়ে যাবে বরং এর অর্থ হলো হাজ্জের জন্য ‘আরাফার ময়দানে অবস্থান সর্বাধিক বড় রুকন বা এ জাতীয় কথা বলতে হবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি সব ‘ইবাদাতই কোন না কোনভাবে দু‘আ।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৩১-[৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আ হলো ’ইবাদাতের মগজ বা মূলবস্তু। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ) অর্থাৎ- المخ শব্দটির মীমে ضَمَّة তথা পেশ দিয়ে পড়তে হবে, এর অর্থ হলো হাড়ের মজ্জা, ঘিলু, অক্ষিগোলক এবং প্রতি জিনিসের নির্জাস।
হাদীসটির অর্থ হলো, নিশ্চয়ই দু‘আ ‘ইবাদাতের মূল। এটা এজন্য যে, দু‘আকারী দুনিয়ার সকল কিছু থেকে যখন আশা ছেড়ে দেয় তখনই সে আল্লাহর নিকট দু‘আ করে থাকে এটাই তাওহীদ ও ইখলাসের বাস্তবতা আর তাওহীদ ও ইখলাসের চেয়ে উত্তম কোন ‘ইবাদাত নেই। ইবনুল আরাবী (রহঃ) বলেন, المخ তথা মস্তিষ্ক থেকেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শক্তি সঞ্চয় হয় ঠিক তেমনিভাবে দু‘আ হলো ‘ইবাদাতের মস্তিষ্ক এ দু‘আর মাধ্যমেই বান্দাদের ‘ইবাদাত শক্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়, কেননা দু‘আ হলো ‘ইবাদাতের প্রাণশক্তি।
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীসটিকে তার দা‘ওয়াত অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি গরীব, কারণ এটা ইবনু লাহি‘আহ্ ব্যতীত কেউ বর্ণনা করেননি, আর ইবনু লাহি‘আহ্ সম্পর্কে উসূলে হাদীসের ময়দানে চরম সমালোচনা রয়েছে। তবে ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর আদাবুল মুফরাদে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, (أشرف العبادة الدعاء) তথা সর্বোত্তম ‘ইবাদাত হলো দু‘আ। (আল্লাহই ভালো জানেন)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৩২-[১০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু’আর চেয়ে কোন জিনিসের অধিক মর্যাদা (উত্তম) নেই। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান ও গরীব)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللَّهِ مِنَ الدُّعَاءِ»
ব্যাখ্যা: (لَيْسَ شَىْءٌ أَكْرَمَ) দু‘আ সর্বোত্তম ‘ইবাদাত হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে, যেমন দু‘আর মাধ্যমে আল্লাহর দিকে অভিমুখী হওয়া আল্লাহর শক্তি স্বীকার করা, স্বীয় অক্ষমতাকে প্রকাশ করা ইত্যাদি বিষয়গুলো জোরালোভাবে প্রমাণ হয়।
(لَيْسَ شَىْءٌ أَكْرَمَ) অর্থাৎ- সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন
এখানে হাদীসটির অর্থ হলো কথার মাধ্যমে যত সব ‘ইবাদাত করা হয় তন্মধ্যে দু‘আই শ্রেষ্ঠ মহান আল্লাহর নিকট। এ হাদীসটি এ হাদীসের বিপরীত হবে না যেখানে বলা হয়েছে (الصلاة أفضل العبادات البدنية) সর্বোত্তম ‘ইবাদাত হলো সালাত, কেননা সালাত হলো শারীরিক ‘ইবাদাতের মধ্যে সর্বোত্তম। এ সন্দেহেরও অবকাশ নেই যে, এটা আল্লাহ তা‘আর এ বাণীর খেলাফ
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় ‘ইবাদাত হলো তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি।’’ (সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১৩)
কোন কোন বিদ্বান বলেন, বস্ত্তত দু‘আই হলো সমস্ত ‘ইবাদাত ও আনুগত্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
আবার কোন কোন বিদ্বান বলেন, হাদীসে উল্লেখিত أَكْرَمَ শব্দের অর্থ হলো أسرع قبولًا তথা সর্বাধিক দ্রুততার সাথে মঞ্জুর হয়।
কোন কোন ‘আলিম এ কথা বলেছেন যে, এখানে দু‘আ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর দিকে আহবান করা। আর তখন অর্থ দাঁড়াবে যে, সর্বোত্তম ‘আমল হচ্ছে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান করা যা ছিল আম্বিয়ায়ে কিরাম এবং তাঁদের নায়েব ‘আলিমগণের কাজ- এ অর্থটিও সঠিক যাতে কোন প্রশ্ন উঠে না।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৩৩-[১১] সালমান আল ফারিসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আ ছাড়া অন্য কিছুই তাকদীদের লিখনকে পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক ’আমল ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে না। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلَّا الدُّعَاءُ وَلَا يَزِيدُ فِي الْعُمْرِ إِلَّا الْبر» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, হাদীসের ‘কাযা’ শব্দের অর্থ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে ফায়সালাকৃত বিষয়। আর হাদীসটির ব্যাখ্যা হলো যেই আল্লাহ তাকদীর নির্ধারণ করেছেন সেই আল্লাহই তার তাকদীরে লিখে রেখেছেন এখন সে দু‘আ করবে আর দু‘আর মাধ্যমে তার মুসীবাত দূর হয়ে যাবে।
(وَلَا يَزِيدُ فِى الْعُمْرِ إِلَّا الْبر) এর ব্যাখ্যায় অনেক বিদ্বান অনেক ধরনের মূল্যবান মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন যে, তাকে অল্প সময়ে এত পরিমাণ ভাল কাজ করার সুযোগ দেয়া হবে যা অনেক বেশি পরিমাণ সময় নিয়েও অনেকে করতে পারে না। অন্যথায় মানুষের আয়ু যে নির্ধারিত, এটা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلَا يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِه إِلَّا فِىْ كِتَابٍ
‘‘কোন দীর্ঘায়ুর আয়ু দীর্ঘ করা হয় না, আর তার আয়ু কমানো হয় না কিতাবের লিখন ছাড়া।’’ (সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ১১)
মহান আল্লাহ আরো বলেন,
يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَآءُ وَيُثْبِتُ وَعِنْدَهٗ أُمُّ الْكِتَابِ
‘‘আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন নিশ্চিহ্ন করে দেন আর যা ইচ্ছে প্রতিষ্ঠিত রাখেন, উম্মুল কিতাব তাঁর নিকটই রক্ষিত।’’ (সূরা আর্ র‘দ ১৩ : ৩৯)
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُوْنَ سَاعَةً وَّلَا يَسْتَقْدِمُوْنَ
‘‘তাদের নির্ধারিত সময় যখন এসে যাবে তখন এক মুহূর্তকাল পশ্চাৎ-অগ্র হবে না।’’ (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৩৪)
মোট কথা হলো, তাকদীর দু’প্রকারঃ
১. المعلق বা যা পরিবর্তনশীল।
২. المبرم যা অপরিবর্তনশীল।
المعلق টি দু‘আ বা সৎ ‘আমলের মাধ্যমে পরিবর্তন হতে পারে। তবে المبرم টি কোন সময়ে পরিবর্তন হয় না। এমনটা মতামত ‘উলামায়ে কিরামের।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৩৪-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে দু’আ ঐ সব কিছুর জন্যই কল্যাণকামী যা সংঘটিত হয়েছে এবং যা এখনো সংঘটিত হয়নি। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা দু’আ করাকে নিজের প্রতি খুবই জরুরী মনে করবে বা যত্নবান হবে। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الدُّعَاءَ يَنْفَعُ مِمَّا نَزَلَ وَمِمَّا لَمْ يَنْزِلْ فَعَلَيْكُمْ عِبَادَ اللَّهِ بِالدُّعَاءِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যা: (إِنَّ الدُّعَاءَ يَنْفَعُ مِمَّا نَزَلَ) অর্থাৎ- যে কোন ধরনের বালা মুসীবাতে দু‘আ করলে তা দূরীভূত হয়ে যায় সেটা যদি তাকদীরে মু‘আল্লাক্বের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় হয়ে থাকে আর যদি তা তাকদীরে মুবরাম হয় তাহলে এ বিপদে ধৈর্যধারণ করার শক্তি আল্লাহ দিয়ে দেন, ফলে বিপদটি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য সহ্য করা সহজ হয়ে যায়।
(وَمِمَّا لَمْ يَنْزِلْ) অর্থাৎ- ভবিষ্যতের বিপদও দু‘আর প্রেক্ষিতে দূর হতে পারে এভাবে যে, হয়তো মহান আল্লাহ তার থেকে বিপদটি সরিয়ে নিবেন বা তাকে ঐ বিপদ আসার আগে এমন বিশেষ ক্ষমতা নিজের পক্ষ থেকে দান করবেন যাতে বিপদে সে সবর করতে সক্ষম হবে।
(فَعَلَيْكُمْ)অর্থাৎ- হে আল্লাহর বান্দাগণ! দু‘আর অবস্থা যখন এরূপ যে, তা বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিপদ-আপদ দূর করতে সক্ষম তখন তোমরা সকলেই দু‘আ কর। কেননা দু‘আ তো ‘ইবাদাতেরই একটি অংশ।
হাদীসটি ইমাম তিরমিযী তার দা‘ওয়াত অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সনদে ‘আবদুর রহমান বিন আবূ বাকর আল কুরাশী রয়েছেন যিনি সমালোচিত রাবীর অন্তর্গত।
হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসটির সনদে لِيْنٌ তথা দুর্বলতা বিরাজমান।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৩৫-[১৩] আর এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রহঃ) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَرَوَاهُ أَحْمَدُ عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ. وَقَالَ التِّرْمِذِيّ هَذَا حَدِيث غَرِيب
ব্যাখ্যা: হাদীসটি মূলত মুসনাদে আহমাদ-এর, তবে ত্ববারানীতেও হাদীসটির বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায় তবে উভয় বর্ণনাই ইসমা‘ঈল বিন ‘আইয়্যাশ থেকে, তিনি ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আবদুর রহমান বিন আবী হুসায়ন আল মাক্কী থেকে, তিনি শাহর বিন হাওশাব থেকে, তিনি আবার মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে নিম্নের শব্দে বর্ণনা করেছেন শব্দগুলো হলো,
لن ينفع حذر من قدر ولكن الدعاء ينفع مما نزل ومما لم ينزل فعليكم بالدعاء عباد الله
অর্থাৎ- তাকদীর থেকে সতর্ক থাকা যায় না বা তা করে কোন উপকারও নেই তবে উপকার আছে আপতিত ও আগামীতে আপতিত আশংকাজনিত মুসীবাত থেকে বাঁচার দু‘আ করার মধ্যে। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা বেশি বেশি দু‘আ করো।
হাদীসটির সানাদ সম্পর্কে ইমাম হায়সামী তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব মাজামাউয্ যাওয়ায়িদ-এ বলেছেন শাহর বিন হাওশাব মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে শুনেননি। পক্ষান্তরে ইসমা‘ঈল বিন ‘আইয়্যাশ যদি আহলে হিজায থেকে বর্ণনা করেন তাহলে তার বর্ণনাটি য‘ঈফ হয়।
‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসটি ইমাম বাযযার (রহঃ) ও মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-এর থেকে বর্ণনা করেছেন, তবে এ সানাদেও ইব্রাহীম বিন খায়সাম নামে এক রাবী আছেন যিনি মাতরূক তথা পরিত্যাজ্য।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৩৬-[১৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কোন দু’আ করলে আল্লাহ তা’আলা তার হয়ত সে দু’আ কবূল করেন অথবা এরূপ কোন বিপদকে তার ওপর থেকে দূরে সরিয়ে দেন, যদি সে কোন গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদের জন্য দু’আ না করে। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ أَحَدٍ يَدْعُو بِدُعَاءٍ إِلَّا آتَاهُ اللَّهُ مَا سَأَلَ أَوْ كَفَّ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهُ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رحم» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (إِلَّا اٰتَاهُ اللّٰهُ مَا سَأَلَ) অর্থাৎ- যদি তাকদীরে তার লেখা থাকে তাহলে তার দু‘আর প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাকে দান করে থাকেন।
(أَوْ كَفَّ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَه) অর্থাৎ- তার তাকদীরে যদি সে যে বিষয় চেয়েছে তা না থাকে তবে কমপক্ষে তার কোন না কোন অনিষ্ট দূর করে দেয়া হবে।
একটি প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ হাদীসে বলা হলো, যদি সে যে কল্যাণের জিনিস চেয়েছে তা না দেয়া হয় তাহলে তার যে কোন একটি বিপদ বা অনিষ্ট দূর করে দেয়া হবে। প্রশ্ন হলো বিপদ দূর করে দেয়াকে কল্যাণ দেয়ার সমতুল্য করা হলো কিভাবে? কারণ কল্যাণ দান আর বিপদ দূর করাতো এক বিষয় নয়।
এর উত্তরে হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, তার চাহিদামাফিক কল্যাণ দিলে তার আরাম স্বস্তি হতো আর অকল্যাণ দূর করলেও তো আরামে স্বস্তি হয়। সুতরাং আরামের দৃষ্টিকোণ থেকে দু’টি এক সাথে তুলনা করে দেখানোর বেশ যৌক্তিকতা রয়েছে।
‘আল্লামা ত্বীবী বলেছেন, কল্যাণ যেমন প্রয়োজন অনুরূপ অকল্যাণ দূরবর্তী হওয়াও প্রয়োজন। সুতরাং প্রয়োজনের দৃষ্টিকোণ থেকে দু’টিকে একই বিবেচনা করা হয়েছে।
(أَوْ قَطِيعَةِ رحم) অর্থাৎ- আত্মীয়ের সম্পর্ক ছেদনের দু‘আ না করার কথা হাদীসে বলা হয়েছে। এর আগে বলা হয়েছে পাপের দু‘আ না করার কথা। এখানে মূলত প্রথমে পাপ বলে সব পাপকেই বুঝানো হয়েছে পরে গুরুত্ব বুঝানোর জন্য আত্মীয়ের সম্পর্ক ছেদন করার দু‘আ না করার কথা বলা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৩৭-[১৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ কামনা করো। কেননা আল্লাহ তাঁর কাছে প্রার্থনা করাকে পছন্দ করেন। আর ’ইবাদাতের (দু’আর) সর্বোত্তম দিক হলো স্বচ্ছলতার অপেক্ষা করা। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ أَنْ يُسْأَلَ وَأَفْضَلُ الْعِبَادَةِ انْتِظَارُ الْفَرَجِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ هَذَا حَدِيث غَرِيب
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসটিতে উম্মাতে মুহাম্মাদীকে আল্লাহর নিকট দু‘আ করে তার ফাযীলাত অনুগ্রহ অন্বেষণ করার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কেননা আল্লাহ হচ্ছেন এমন সত্তা যে তার ভাণ্ডার থেকে কাউকে কিছু দিলে তার ভাণ্ডারে কোন ঘাটতি হয় না।
বর্তমানে অধিকাংশ পাণ্ডুলিপিতে ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনার কথা আছে, যেমনঃ মুনযিরীর তারগীব, জামি‘ সগীর ও কানযুল উম্মাল-এ এমনটাই পাওয়া যায়।
‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, মিশকাতের নুসখা তথা পাণ্ডুলিপিতে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর স্থানে আবী মাস্‘ঊদ পাওয়া যায়। তবে সঠিক হলো ইবনু মাস্‘ঊদ। যেমনটি দেখতে পাওয়া যায় জামি‘ আত্ তিরমিযীতে।
(سَلُوا اللّٰهَ مِنْ فَضْلِه) ‘আল্লামা ত্বীবী বলেন, অর্থাৎ- তোমরা আল্লাহর নিকট থেকে ফাযীলাত অন্বেষণ কর। কেননা তার ফাযীলাত বা অনুগ্রহ সুবিশাল আর তিনি যদি কাউকে অনুগ্রহ করেন তাহলে কেউ তাকে বাধা প্রদান করতে পারবে না।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৩৮-[১৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কামনা (দু’আ) করে না, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হন। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللَّهَ يغضبْ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللّٰهَ يغضبْ عَلَيْهِ) অর্থাৎ- আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা তার নিকট যারা চায় না তাদের প্রতি ক্রোধান্বিত হন, কেননা না চাওয়া অহংকার ও নিজের স্বয়ংসম্পূর্ণতার উপর প্রমাণ করে যা কোন আদম সন্তানের জন্য জায়িয নেই। কবি কতই না সুন্দর করে বলেছেন,
الله يغضب إن تركت سؤاله وترى ابن آدم حين يسأل يغضب
অর্থাৎ- আল্লাহর নিকট তুমি দু‘আ করা বা চাওয়া বন্ধ করে দিও না তাহলে তিনি রাগান্বিত হন আর মানুষের নিকট কোন কিছু চাইলে তারা এক পর্যায়ে চাওয়ার কারণে রাগান্বিত হয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৩৯-[১৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যার জন্য দু’আর দরজা খোলা, তার জন্য রহমতের দরজাও খোলা। আর আল্লাহর নিকট কুশল ও নিরাপত্তা কামনা করা ব্যতীত আর কোন কিছু কামনা করা এত প্রিয় নয়। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ فُتِحَ لَهُ مِنْكُمْ بَابُ الدُّعَاءِ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ وَمَا سُئِلَ اللَّهُ شَيْئًا يَعْنِي أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يُسْأَلَ الْعَافِيَةَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (فُتِحَتْ لَهٗ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ) অর্থাৎ- যে বেশি বেশি দু‘আ করার তাওফীক লাভ করবে সে বেশি বেশি আল্লাহর নিয়ামত ও রহমাত লাভে ধন্য হবে। অন্য বর্ণনায় আছে, তার জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে।
(مِنْ أَنْ يُسْأَلَ الْعَافِيَةَ) এর ব্যাখ্যায় ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসটিতে সুস্থতা চেয়ে দু‘আর প্রতি উৎসাহিত করার কারণ হলো সুস্থতা একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ যার মধ্যে জাগতিক ও পরকালীন সব সুস্থতাই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় এবং নিশ্চয়ই সুস্থতা এক বড় নিয়ামত।
উল্লেখ্য যে, হাদীসটিতে মুলায়কী নামক একজন রাবী আছেন যিনি য‘ঈফ। ‘আল্লামা মুনযীর তাকে যাহিবুল হাদীস ও ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) তাকে দুর্বল বলেছেন। যদিও ইমাম হাকিম হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৪০-[১৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চায় বিপদাপদে আল্লাহ তার দু’আ কবূল করুন। সে যেন তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়েও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দু’আ করে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَسْتَجِيبَ اللَّهُ لَهُ عِنْدَ الشَّدَائِدِ فَلْيُكْثِرِ الدُّعَاءَ فِي الرَّخَاءِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث غَرِيب
ব্যাখ্যা: (أَنْ يَسْتَجِيبَ اللّٰهُ لَهٗ عِنْدَ الشَّدَائِدِ) এর الشَّدَائِدِ শব্দটি الشديدة শব্দের বহুবচন এর অর্থ হলো কঠিন মুহূর্তে অটুট থাকা। জাযরী (রহঃ) বলেন, (شديدة) ‘শাদীদাহ্’ বলা হয় মানুষের দুনিয়াবী বিপদাপদ।
(الدُّعَاءَ فِى الرَّخَاءِ) এর এ অংশটুকু ব্যাখ্যায় ইমাম জাযরী (রহঃ) বলেন, الرَّخَاءِ হলো স্বচ্ছলতার সাথে জীবন যাপন করা যা হলো شدة তথা জীবনের কঠিন বাস্তবতার বিপরীত। অর্থাৎ- সুস্থ, সমৃদ্ধি ও ক্লেশযুক্ত অবস্থায় বেশী বেশী সে দু‘আ করে, কেননা চালক মু’মিনের লক্ষণ হচ্ছে তীর নিক্ষেপ করার পূর্বেই তার প্রস্ত্তত করার কাজ সেরে নেয় এবং বাধ্য হওয়ার আগেই আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করে। অপরদিকে কাফির ও ফাজির তারা দু‘আ করে শুধুমাত্র বিপদের সময়ে। যেমন : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّهٗ مُنِيبًا إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا خَوَّلَهٗ نِعْمَةً مِنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُو إِلَيْهِ مِنْ قَبْلُ
অর্থাৎ- ‘‘মানুষকে যখন কোন অনিষ্ট স্পর্শ করে তখন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে, অতঃপর যখন আল্লাহ তাকে কোন নিয়ামত দান করেন তখন যে বিপদে সে আল্লাহকে ডেকেছিল তা ভুলে যায়।’’ (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৮)
মহান আল্লাহ আরো বলেন,
وَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنْبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَائِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهٗ مَرَّ كَأَنْ لَمْ يَدْعُنَا إِلٰى ضُرٍّ مَسَّهٗ
অর্থাৎ- ‘‘আর মানুষকে যখন কোন অনিষ্ট স্পর্শ করে তখন সে নিরুপায় হয়ে আমাকে শুয়ে অথবা বসে অথবা দাঁড়িয়ে ডাকে আর যখন আমি তার বিপদ দূর করে দেই সে এমন ভাব দেখায় যে, সে যেন আমাকে ডাকেইনি।’’ (সূরা ইউনুস ১০ : ১২)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৪১-[১৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দু’আ কবূল হওয়ার দৃঢ়তা ও নিশ্চয়তা মনে রেখেই আল্লাহ তা’আলার নিকট দু’আ কর। জেনে রেখ, আল্লাহ তা’আলা অবহেলাকারী আস্থাহীন মনের দু’আ কবূল করেন না। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالْإِجَابَةِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حديثٌ غَرِيب
ব্যাখ্যা: (وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالْإِجَابَةِ) অর্থাৎ- দু‘আ করার মুহূর্তে দু‘আকারীর অবস্থা এমন হতে হবে যে, সে দু‘আ কবূল হওয়ার যতগুলো শর্ত রয়েছে সৎকাজের আদেশ অসৎকাজের নিষেধ সহ ইত্যাদি সৎকর্মের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে কায়মনোবাক্যে এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে ধারণ করে যে, আমার দু‘আ আল্লাহ তা‘আলা কবূল করবেন।
এমনটাই মতামত পেশ করেছেন জগদ্বিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত ‘আল্লামা তুরবিশতী (রহঃ)।
(مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ) অর্থাৎ- আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দু‘আর আদবসমূহ বজায় রেখে দু‘আ করেনি বরং দু‘আর মধ্যে অনেক আদব সে ভঙ্গ করেছে।
‘আল্লামা আল মাযহার (রহঃ) বলেন, হাদীসটির অর্থ হলো, দু‘আকারী তার দু‘আর ব্যাপারে এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে স্থাপন করবে যে তার রব তার দু‘আ কবূল করবেন, কেননা দু‘আ কবূল না করে ফিরিয়ে দেয়া হয় মূলত তিনটি কারণে একটি হয়তো অপরাগতা নতুবা আহবানকৃত বিষয়টি অমর্যাদাকর হওয়া অথবা আহবানকৃত বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা- এগুলোর সবটাই আল্লাহর জন্য অবান্তর, কেননা তিনি সবই জানেন এবং সব কিছুই করতে সক্ষম বান্দার দু‘আ কবূল করতে তাকে কেউ বাধাদানকারী নেই। সুতরাং দু‘আকারী যখন এ কথা দৃঢ়তার সাথে জানতে পারবে যে, তার রব তার দু‘আ কবূল করতে সক্ষম তখন দু‘আ কবূল হওয়ার ব্যাপারে সে দৃঢ় থাকবে।
একটি প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ দু‘আকারী কিভাবে দু‘আ কবূলের ব্যাপারে দৃঢ় হবে কেননা দৃঢ়তার দাবী হলো তা কবূল হবেই অথচ দু‘আর ভিতর কিছু আছে কবূল হয় আর কিছু আছে কবূল হয় না?
উত্তরঃ দু‘আকারী দু‘আ করে কখনো বঞ্চিত হয় না হয়তো তার দু‘আ অনুপাতে কল্যাণ দেয়া হয় নতুবা তার অনিষ্ট দূরীভূত করা হয়। একটি না একটি পাবেই।
অথবা, তার প্রতিদান আখিরাতের জন্য জমা করে রাখা হয়। কেননা, দু‘আ হলো একটি স্বতন্ত্র ‘ইবাদাত।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৪২-[২০] মালিক ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন আল্লাহর কাছে দু’আ করবে, তখন হাতের ভিতরের (তালুর) দিক দিয়ে দু’আ করবে, হাতের উপরের দিক (পিছন দিক) দিয়ে দু’আ করবে না।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ مَالِكِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ وَلَا تَسْأَلُوهُ بِظُهُورِهَا»
ব্যাখ্যা: ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, দু‘আর ক্ষেত্রে হস্তদ্বয়ের ভিতরের পিঠের মাধ্যমে দু‘আ করতে বলা হয়েছে আর উপরের পিঠের মাধ্যমে দু‘আ করতে নিষেধ করা হয়েছে, এর কারণ হলো কেউ যখন কিছু চায় তখন সে উপরের পিঠ নয় বরং ভিতরের পিঠেই চায় এবং সে চায় তা পূর্ণ করে দেয়া হয়। সুতরাং নিয়ম হচ্ছে দু’হাতকে আকাশের দিকে উঠিয়ে দু‘আ করা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণই এ ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল দিতে পারে।
পূর্বের হাদীসও অত্র হাদীসের মধ্যকার একটি সংঘর্ষ ও তার সমাধান।
পূর্বে সায়িব বিন খল্লাদ তার পিতা থেকে যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন সেখানে রয়েছে যে, নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কিছু চাইতেন তখন হাতের মধ্যপিঠ তার দিকে করতেন আর কোন বিপদ থেকে আশ্রয় চাইলে বাহির পিঠ তার দিকে করতেন আর অত্র হাদীসে শুধুমাত্র মধ্যপিঠের আদেশ করলেন।
এর সমাধানঃ
১. সায়িব বিন খল্লাদ তার পিতা থেকে যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তার সানাদে ইবনু লাহ্ই‘আহ্ রয়েছেন, যিনি য‘ঈফ।
২. বাহির পিঠের মাধ্যমে দু‘আর যে কথা বলা হয়েছে তা শুধুমাত্র ইসতিসকা তথা বৃষ্টির জন্য দু‘আ করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট। যেমনঃ সহীহ মুসলিমে আনাস থেকে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য দু‘আ করলেন হাতের বাহির পিঠ আকাশের দিকে করলেন।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৪৩-[২১] অন্য এক বর্ণনায় ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার কাছে হাতের তালুর দিক দিয়ে দু’আ করো, হাতের পিছনের দিক দিয়ে করো না। আর দু’আ শেষ হবার পর হাতকে মুখম-লের সাথে মুছে নিবে। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: «سَلُوا اللَّهَ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ وَلَا تَسْأَلُوهُ بِظُهُورِهَا فَإِذَا فَرَغْتُمْ فامسحوا بهَا وُجُوهكُم» . رَوَاهُ دَاوُد
ব্যাখ্যা: (فَإِذَا فَرَغْتُمْ فامسحوا بهَا وُجُوهكُم) এর ব্যাখ্যায়, যেহেতু এর মাধ্যমে রহমাত অবতীর্ণ হয় এবং তার বারাকাত মুখ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়, কেননা মুখ হচ্ছে সর্বোত্তম অঙ্গ।
দু‘আ শেষে হাত চেহারায় মুছার ব্যাপারে মতবিরোধ থাকলেও যদি তা সালাতের বাহিরের দু‘আ হয়ে থাকে। তাহলে হাত চেহারায় মুছা বৈধ এ ক্ষেত্রে সকলে একমত তবে সালাতের ভিতরে যেমনঃ দু‘আ কুনূতের দু‘আ শেষে হাত চেহারায় মুছার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে তবে অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরামের মত হচ্ছে সালাতের মধ্যকার দু‘আতে হাত চেহারায় মুছার বিপক্ষে। আর এটাই সালফে সলিহীনদের অভিমত ও আমল।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৪৪-[২২] সালমান ফারসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত লজ্জাশীল ও দয়ালু। বান্দা যখন তাঁর কাছে কিছু চেয়ে হাত উঠায় তখন তার হাত (দু’আ কবূল না করে) খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, বায়হাক্বী- দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَن سَلْمَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ رَبَّكُمْ حَيِيٌّ كَرِيمٌ يَسْتَحْيِي مِنْ عَبْدِهِ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَيْهِ أَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعوات الْكَبِير
ব্যাখ্যা: (كَرِيمٌ) তিনি না চাইতেই মানুষকে অনেক নিয়ামত দিয়ে থাকেন, সুতরাং চাইলে তো আর কোন কথাই নেই, অবশ্যই তার বান্দার আহবানে তিনি সাড়া দিবেন।
(أَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا) আল্লাহর বান্দা তার নিকট হাত উঠিয়ে কিছু চাইলে সে হাতকে তিনি খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন- এর অর্থ হলো তার দু‘আ তিনি মঞ্জুর করেন।
আনাস (রাঃ) থেকে সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে যে হাদীসটি বর্ণনা হয়েছে সেখানে আনাস (রাঃ) বলেছেন, শুধুমাত্র বৃষ্টির দু‘আ ব্যতীত অন্য কোন দু‘আতেই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত উঠাননি। আর এ বর্ণনাগুলোতে বরাবরই হাত উঠানোর কথা পাওয়া যাচ্ছে।
এ বর্ণনা দু’টির বৈপরীত্যের উত্তর হলো বৃষ্টি চেয়ে যে দু‘আ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) করেছেন তাতে হাত এতটুকু উঠাতেন যা আকাশের দিকে হওয়াতে তার বগলের শুভ্রতা পর্যন্ত পরিলক্ষিত হতো।
এতদ্ব্যতীত যে দু‘আ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) করেছেন তাতেও হাত তুলেছেন তবে তা ছিল জমিনের পানে ততটা উঁচু করে নয়, যতটা বৃষ্টির জন্য দু‘আ করা হতো। এমন মতামতই পেশ করেছেন হাফেয ইবনু হাজার আল আসকালানী (রহঃ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৪৫-[২৩] ’উমার (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দু’আর জন্য হাত উঠাতেন, (দু’আ শেষে) হাত দিয়ে তিনি নিজের মুখমণ্ডল মুছে নেয়া ছাড়া হাত নামাতেন না। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ فِي الدُّعَاءِ لَمْ يَحُطَّهُمَا حَتَّى يمسح بهما وَجهه. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (حَتّٰى يَمْسَحَ بِهِمَا وَجْهَه) দু‘আ করার পর দু’হাত মুখম-লে মুছা হতে হবে ডান দিক থেকে যেন এ কথার দিকে ইঙ্গিত বহন করে যে, দু‘আর বারাকাত তাৎক্ষণিকভাবেই বুঝা যাচ্ছে আর মুখে ছোয়াতে বলা হয়েছে এর কারণ হলো মুখ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এমন মতামত ব্যক্ত করেছেন ‘আল্লামা তুরবিশতী (রহঃ)।
‘সুবলুস্ সালাম’ গ্রন্থ প্রণেতা বলেন, অত্র হাদীস দ্বারা দু‘আ শেষান্তে হাত মুখে মুছার দলীল দেয়া যেতে পারে।
কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, এখানে এ কথা বললে ভুল হবে না যে, হাত মুখম-লে মুছার কথা বলার কারণ হলো আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা হাতকে শূন্য ফেরত দেননি হাতে আল্লাহর রহমাত ও বারাকাত চলে এসেছে। সুতরাং তা মুখে মুছা সামঞ্জস্যপূর্ণ যেহেতু মুখ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
হাত আকাশের দিকে উঠানোর হেতু হচ্ছে যেহেতু রিযকদাতা মহান আল্লাহ রয়েছেন আকাশে। তাই সঙ্গত কারণেই হাতটা উঠানো বা আকাশের দিকে ফিরানো উচিত।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৪৬-[২৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিপূর্ণ (ব্যাপক অর্থবোধক দুনিয়া এবং আখিরাতকে শামিল করে) দু’আ করাকে পছন্দ করতেন এবং এছাড়া অন্য দু’আ অধিকাংশ সময় পরিহার করতেন। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَحِبُّ الْجَوَامِعَ مِنَ الدُّعَاءِ وَيَدَعُ مَا سِوَى ذَلِكَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ করার ক্ষেত্রে অল্প কথায় বেশি অর্থবোধক দু‘আ করা সর্বদা পছন্দ করতেন তাইতো তিনি কুরআনের নিমেণাক্ত আয়াত দ্বারা দু‘আ করতেন।
رَبَّنَا اٰتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِى الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
অর্থাৎ- ‘‘হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের ‘আযাব থেকে বাঁচাও।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২০১)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৪৭-[২৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অনুপস্থিত লোকের জন্য অনুপস্থিত লোকের দু’আ খুব তাড়াতাড়ি কবূল হয়। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِن أَسْرَعَ الدُّعَاءِ إِجَابَةً دَعْوَةُ غَائِبٍ لِغَائِبٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (دَعْوَةُ غَائِبٍ لِغَائِبٍ) অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য দু‘আ দ্রুত কবূলের যে কথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তার অর্থ হলো,
১. দু‘আকারী যার জন্য দু‘আ করছেন তিনি তার সামনে বিদ্যমান নেই।
২. সামনে আছেন কিন্তু দু‘আকারী তাকে শুনিয়ে নয়, বরং নিঃশব্দে মনে মনে তার জন্য দু‘আ করছেন। এটা বেশি কবূলের দাবীদার কারণ হলো এতে করে বেশি একনিষ্ঠতার প্রমাণ হয়।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৪৮-[২৬] ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ’উমরাহ্ করার অনুমতি চাইলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ’উমরার জন্য অনুমতি দিলেন এবং বললেন, হে আমার ছোট ভাই! তোমার দু’আয় আমাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করো এবং আমাদেরকে ভুলে যেও না। ’উমার (রাঃ) বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে এমন একটি কথা বললেন, যার বিনিময়ে আমাকে সারা দুনিয়া দিয়ে দেয়া হয়, তবুও আমি এত খুশি হতাম না। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী; কিন্তু তিরমিযীতে ’আমাকে ভুলে যেও না’ পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ اسْتَأْذَنْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْعُمْرَةِ فَأَذِنَ لِي وَقَالَ: «أَشْرِكْنَا يَا أُخَيُّ فِي دُعَائِكَ وَلَا تَنْسَنَا» . فَقَالَ كَلِمَةً مَا يَسُرُّنِي أَنَّ لِيَ بِهَا الدُّنْيَا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَانْتَهَتْ رِوَايَتُهُ عِنْدَ قَوْلِهِ «لَا تنسنا»
ব্যাখ্যা: (اسْتَأْذَنْتُ النَّبِىَّ ﷺ فِى الْعُمْرَةِ) হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, উল্লেখিত ‘উমরাটি ছিল সেই ‘উমরাহ্ যা ‘উমার (রাঃ) জাহিলী যুগে করার জন্য মানৎ করেছিলেন। এমনটাই মতামত ব্যক্ত করেছেন মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ)-ও।
(فِىْ دُعَائِكَ) এ কথার মাধ্যমে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিনয় প্রকাশ পেয়েছে এবং তিনি উম্মাতের প্রতি একটি বাণী পেশ করেছেন এই মর্মে যে, তারা যেন দু‘আ করার সময় শুধু নিজেদের জন্য না করে তাদের দু‘আয় সমগ্র উম্মাতের মুসলিমাহকে অন্তর্ভুক্ত করে দু‘আ করেন।
বিশেষ করে যে সমস্ত স্থানগুলোতে দু‘আ কবূলের প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে সে সমস্ত স্থানে দু‘আ করলে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৪৯-[২৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন লোকের দু’আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (১) সায়িমের (রোযাদারের) দু’আ- যখন সে ইফতার করে, (২) ন্যায়পরায়ণ শাসকের দু’আ এবং (৩) মাযলূমের বা অত্যাচারিতের দু’আ। অত্যাচারিতের দু’আকে আল্লাহ তা’আলা মেঘমালার উপর উঠিয়ে নেন এবং তার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়। আর আল্লাহ তা’আলা বলেন, ’’আমার ইজ্জতের কসম! নিশ্চয়ই আমি তোমায় সাহায্য করব কিছু সময় দেরি হলেও। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلَاثَةٌ لَا تُرَدُّ دَعْوَتُهُمْ: الصَّائِمُ حِينَ يُفْطِرُ وَالْإِمَامُ الْعَادِلُ وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ يَرْفَعُهَا اللَّهُ فَوْقَ الْغَمَامِ وَتُفْتَحُ لَهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَيَقُولُ الرَّبُّ: وَعِزَّتِي لَأَنْصُرَنَّكِ وَلَوْ بعد حِين . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, মাযলূমের দু‘আ আল্লাহ কবূল করে থাকেন যদিও সে পাপাচারী এমনকি কাফিরও হয়।
(وَلَوْ بَعْدَ حِيْنٍ) حِيْنٌ ‘আরাবী শব্দটি যে কোন সময় বা ছয়মাস অথবা চল্লিশ বছরের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক কথায় আল্লাহ তা‘আলা মাযলূমকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি যে কোন সময় তার আবেদন মঞ্জুর করবেন।