পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
’আল্লামা মুল্লা ’আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, দু’আ হলো নীচু পর্যায়ের কোন ব্যক্তির উঁচু পর্যায়ের ব্যক্তির নিকট বিনয়ের সাথে কোন কিছু চাওয়া শায়খ আবূল কাসিম কুশায়রী বলেন, পবিত্র কুরআনে দু’আ শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
১. ’ইবাদাত অর্থে, মহান আল্লাহর বাণীঃ وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللّٰهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ
’’আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে আহবান করো না এমন কিছুকে যা না পারে তোমার কোন উপকার করতে, আর না পারে কোন ক্ষতি করতে।’’ (সূরা ইউনুস ১০ : ১০৬)
২. সাহায্য অর্থে, মহান আল্লাহর বাণীঃ وَادْعُوا شُهَدَآءَكُمْ
’’আর তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে তোমাদের সহযোগীদের ডাক।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২৩)
৩. চাওয়া অর্থে, মহান আল্লাহর বাণীঃ ادْعُونِىْ أَسْتَجِبْ لَكُمْ
’’তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’’ (সূরা আল মু’মিন/গাফির ৪০ : ৬০)
৪. কথা অর্থে, মহান আল্লাহর বাণীঃ دَعْوَاهُمْ فِيْهَا سُبْحٰنَكَ اللّٰهُمَّ
’’তার ভিতরে তাদের ধ্বনি হবে, ’পবিত্র তুমি হে আল্লাহ’।’’ (সূরা ইউনুস ১০ : ১০)
৫. আহবান অর্থে, মহান আল্লাহর বাণীঃ يَوْمَ يَدْعُوكُمْ
’’যে দিন তিনি তোমাদেরকে ডাকবেন।’’ (সূরা ইসরা/বনী ইসরাঈল ১৭ : ৫২)
৬. প্রশংসা অর্থে, মহান আল্লাহর বাণীঃ قُلِ ادْعُوا اللّٰهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَ
’’বল, ’তোমরা আল্লাহ নামে ডাকো বা রহমান নামে ডাকো।’’ (সূরা ইসরা/বনী ইসরাঈল ১৭ : ১১০)
মুসলিম হিসেবে সকলের জেনে রাখা উচিত দু’আ একটি ’ইবাদাত এবং তা মহান আল্লাহর হক এবং তা কবূল করার ওয়া’দাও আল্লাহ তা’আলা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (الدعاء مخ العبادة) অর্থাৎ- দু’আই হলো ’ইবাদাত।
একটি প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ
প্রশ্নঃ তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস করে দু’আ করা উত্তম নাকি দু’আ না করা উত্তম?
উত্তরঃ দু’আ করা উত্তম, এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে।
ক) আল্লাহ দু’আ করতে বলেছেন, ’’তোমরা আমাকে ডাকো, আমি (তোমাদের ডাকে) সাড়া দেব।’’ (সূরা আল মু’মিন/গাফির ৪০ : ৬০)। সুতরাং দু’আ করলে আল্লাহর আদেশ পালন হয়।
খ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকদীরের মন্দ (বিষয়) থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। যেমনঃ দু’আ কুনূতে আমরা পড়ে থাকি।
(وَقِنِىْ شَرَّ مَا قَضَيْت) অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার তাকদীরের মন্দ বিষয় থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই।
[দু’আ না করার ব্যাপারে একটি হাদীস রয়েছে, হাদীসটি হলঃ ’’আল্লাহ তা’আলা আমার অবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। সুতরাং আমি যদি মন্দ অবস্থায় থাকি তাহলে তিনি তো দু’আ ছাড়াই আমার ভাল দিকটা আমার জন্য নিয়ে আসতে সক্ষম। সুতরাং আমার দু’আ করার কোন প্রয়োজন নেই।’’]
এ হাদীসটি সম্পর্কে ’আল্লামা আলবানী (রহঃ) বলেছেন, এর কোন ভিত্তি নেই। এটি একটি বানোয়াট হাদীস। সিলসিলাতুল আহাদীস আয্ য’ঈফাহ্ ১/২৯। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ও একই কথা বলেছেন, মাজমা’উল ফাতাওয়া ৮/৫৩৯। ] (সম্পাদকীয়)
সুতরাং উপরোক্ত কথাগুলোর আলোকে আমরা বলবো, আমাদের সুখে-দুঃখে, অভাব-অনটনে সর্বদাই আল্লাহকে ডাকা উচিত।
২২২৩-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক নবীকেই একটি (বিশেষ) কবূলযোগ্য দু’আ করার অধিকার দেয়া রয়েছে। প্রত্যেক নবীই সেই দু’আর ব্যাপারে (দুনিয়াতেই) তাড়াহুড়া করেছেন। কিন্তু আমি আমার উম্মাতের শাফা’আত হিসেবে আমার দু’আ কিয়ামত পর্যন্ত স্থগিত করে রেখেছি। ইনশা-আল্ল-হ! আমার উম্মাতের প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে আমার এ দু’আ এমন উপকৃত হবে, যে আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শারীক না করে মৃত্যুবরণ করেছে। (মুসলিম; তবে বুখারীতে এর চেয়ে কিছু কম বর্ণনা করা হয়েছে)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِيٍّ دَعْوَتَهُ وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي إِلَى يومِ القِيامةِ فَهِيَ نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا» . رَوَاهُ مُسلم وللبخاري أقصر مِنْهُ
ব্যাখ্যা: ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি দু‘আ রয়েছে যা নিশ্চিত কবূল হয়। আর বাকী যে দু‘আগুলো তা কবূলের আশা করা যায় কিছু কবূল হয় আর কিছু কবূল হয় না। কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বিষয়টি একটু সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, প্রত্যেক নাবীর জন্য তার উম্মাতকে কেন্দ্র করে করা এমন একটি দু‘আ রয়েছে যা নিশ্চিত কবূল হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আবার কেউ বলেছেন, এটা ব্যাপক অর্থে নিতে হবে আর অন্য একদল বলেছেন, এটা প্রত্যেক নাবীর ব্যক্তিগত দু‘আ। যেমন: নূহ (আঃ) দু‘আ করলেন, رَبِّ لَا تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْكَافِرِينَ دَيَّارًا
অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহ এ দুনিয়ার সমস্ত কাফিরকে আপনি ধ্বংস করে দিন।’’ (সূরা নূহ ৭১ : ২৬)
যাকারিয়্যা (আঃ) দু‘আ করলেন, فَهَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا
অর্থাৎ- ‘‘আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী (ছেলে) দান করুন যে আমার উত্তরাধিকারী হবে।’’ (সূরা মারইয়াম ১৯ : ৫)
অনুরূপ সুলায়মান (আঃ) দু‘আ করলেন, رَبِّ اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكًا لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي
অর্থাৎ- ‘‘হে আমার রব! আমাকে আপনি এমন এক রাজত্ব দান করুন যা আমার পরে এ পৃথিবীতে আর কাউকে দিবেন না।’’ (সূরা সাদ/সোয়াদ ৩৮ : ৩৫)
(شَفَاعَةً لِأُمَّتِىْ) এখানে উম্মাত দ্বারা উদ্দেশ্য উম্মাতুল ইজাবাহ্ তথা উম্মাতের যেসব লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দা‘ওয়াত কবূল করেছেন। ইবনু বাত্ত্বাল (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীস দ্বারা অন্যান্য নাবীগণের (আঃ)-এর ওপর আমাদের নাবীর মর্যাদা প্রতীয়মান হয়। যেহেতু আমাদের নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এটা দেয়া হয়েছে আর অন্যান্য নাবীকে তা দেয়া হয়নি।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২২২৪-[২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে একটি ওয়া’দা কামনা করছি, (আমার বিশ্বাস) সে ওয়া’দাপানে কক্ষনো তুমি আমাকে বিমুখ করবে না। আমি তো মানুষ মাত্র। তাই আমি কোন মু’মিনকে কষ্ট দিয়েছি, গালি দিয়েছি, অভিশাপ দিয়েছি বা মেরেছি- আমার এ কাজকে তুমি তার জন্য কিয়ামতের দিন রহমত, পবিত্রতা ও তোমার নৈকট্য লাভের উপায় বানিয়ে দাও। (বুখারী, মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّهُمَّ إِنِّي اتَّخَذْتُ عِنْدَكَ عَهْدًا لَنْ تُخْلِفَنِيهِ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ فَأَيُّ الْمُؤْمِنِينَ آذَيْتُهُ شَتَمْتُهُ لَعَنْتُهُ جَلَدْتُهُ فَاجْعَلْهَا لَهُ صَلَاةً وَزَكَاةً وَقُرْبَةً تُقَرِّبُهُ بِهَا إِلَيْكَ يَوْم الْقِيَامَة»
ব্যাখ্যা: ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, বিশ্বনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তার উম্মাতের কল্যাণ, সমৃদ্ধি কামনা এবং তাদের প্রতি যে, তার চরম ও পরম দয়া ভালবাসা ছিল হাদীসটি তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
গুটি কয়েক প্রশ্ন ও তার উত্তর:
প্রথম প্রশ্নঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মুসলিমকে অভিশাপ দিয়ে থাকলেই যদি সেটা ঐ মুসলিমের জন্য রহমাত ও বারাকাতের কারণ হয় তাহলে তিনি তো একাধারে ছবি অঙ্কনকারী, যারা নিজ পিতা ব্যতীত অন্য কোন লোককে পিতা দাবী করে, চোর, মদপানকারী, সুদখোর ইত্যাদি ব্যক্তিদেরও অভিশাপ দিয়েছেন। সুতরাং এদের ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভিশাপ অভিশাপ না হয়ে রহমাত স্বরূপ হবে কি?
উত্তরঃ অত্র হাদীসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যারা আসলে অভিশাপের উপযুক্ত নয়, বাহ্যিকদৃষ্টে তাদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন তারাই উক্ত হাদীসের উদ্দেশ্য। অপরদিকে কাফির, মুশরিক, কবরপূজারী, চোর, সুদখোর ও ছবি অঙ্কনকারী এরা তো অভিশাপের উপযুক্ত, তাই তাদের জন্য অভিশাপটি রহমাত স্বরূপ হবে না যেমনটি হয়েছিল অভিশাপের অনুপযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য।
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ তাহলে যারা অভিশাপের উপযুক্ত নয় তাদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে অভিশাপ করতে পারেন?
উত্তরঃ আভ্যন্তরীণ ও বস্ত্তত সে অভিশাপের উপযুক্ত নয় তবে বাহ্যিক দিক থেকে মনে হওয়ার কারণে হয়তো এমনটা ঘটে যেতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২২২৫-[৩] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর কাছে দু’আ করার সময় এ কথা না বলে যে, হে আল্লাহ! তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমার প্রতি দয়া করো। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমাকে রিযক দান করো। বরং সে দৃঢ়তার সাথে দু’আ করবে (চাইবে)। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই প্রদান করেন। তাঁকে দিয়ে জোরপূর্বক কোন কিছু করাতে সক্ষম নয় বা তাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই। (বুখারী)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ فَلَا يقُلْ: اللهُمَّ اغفِرْ لي إِنْ شِئتَ ارْحمْني إِنْ شِئْتَ ارْزُقْنِي إِنْ شِئْتَ وَلِيَعْزِمْ مَسْأَلَتَهُ إِنَّه يفعلُ مَا يَشَاء وَلَا مكره لَهُ . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: মাফাতীহ কিতাবের সম্মানিত লেখক বলেন, দু‘আ করে আবার সে দু‘আকে কবূল করার বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছাধীন করে রাখতে নিষেধ করার কারণ হলো এতে করে দু‘আ কবূলের ক্ষেত্রে বান্দার মনে সংশয় সৃষ্টি হয়। কেননা (إِنْ شِئتَ) ‘‘যদি তোমার ইচ্ছা থাকে’’ এরূপ কথা এমন ব্যক্তিকে বলা হয় যে ব্যক্তির সে কথা বলার পূর্বে কোন ইখতিয়ার ছিল না। এখন এরূপ কথা বলাতে তার ওপর কাজটি অপরিহার্য হয়ে গেল। এতে তার ইচ্ছা থাকুক আর না থাকুক তাকে কাজটি করাই লাগবে। সুতরাং দু‘আকারীর এরূপ কথা বলাতে দু‘আ কবূল করতে আল্লাহকে বাধ্য করা হয়। আর এরূপ করা আল্লাহর শানে সম্পূর্ণ বেমানান। কারণ আল্লাহর ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে এমন কেউ নেই। তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা বঞ্চিত করেন। সুতরাং আল্লাহর নিকট দু‘আ করলে আমাদের দৃঢ়তার সাথে দু‘আ করা উচিত।
ইমাম বাজী (রহঃ) বলেন, হাদীসটির অর্থ হলো আল্লাহর শানে তাকে ইচ্ছাধীন করে শব্দ ব্যবহার উচিত নয়, কেননা এ কথা সকলের কাছে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে, তিনি কাউকে ক্ষমা করলে নিজ ইচ্ছাই করেন এক্ষেত্রে কারো চাপের মুখে পড়ে কাউকে ক্ষমা করতে আল্লাহ বাধ্য হন না। এগুলো থেকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পূর্ণ পূতঃপবিত্র। কেননা, অত্র হাদীসের শেষেই বলা হয়েছে। (فإنه لا مكره له) অর্থাৎ- তাকে কেউ বাধ্যকারী নেই। এখানে نهى (নিষেধাজ্ঞা) টি হারামের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে কিনা অর্থাৎ- যদি কেউ এরূপ দু‘আ করে তাহলে কি তা হারাম হবে? এ ব্যাপারে মতবিরোধ আছে তবে অধিকাংশ ‘আলিমের মতামত হারাম হওয়ার দিকেই।
হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) ইমাম ইবুন ‘আবদিল বার (রহঃ)-এর বরাত দিয়ে বলেছেন, কোন ব্যক্তির জন্য এটা জায়িয নেই যে, সে এরূপ বলে, (اللهم أعطني إن شئت) অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে চাইলে কিছু দাও।
এটা ধর্মীয় বা পার্থিব যে কোন বিষয়ই হোক না কেন এরূপ দু‘আ বৈধ নয়। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা তো নিজের ইচ্ছাই সব করেন। অন্য কারো ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হওয়া থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত।
ইমাম ইবনু ‘আবদিল বার (রহঃ) হাদীসটির বাহ্যিক অর্থের প্রতি খেয়াল করে তিনি বলেছেন, অত্র হাদীসে ব্যবহৃত নিষেধাজ্ঞাটি হারাম সাব্যস্তের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) অত্র হাদীসে ব্যবহৃত নিষেধাজ্ঞাটিকে হারামের অর্থে গ্রহণ না করে للتنزيه তথা হারাম নয় তবে এর থেকে বেঁচে থাকা ভাল এ অর্থে গ্রহণ করেছেন। আর ইমাম নাবাবী (রহঃ)-এর কথাই বেশি সঠিক মনে হয়। কেননা ইসতিখারার সালাতে আমরা আল্লাহ তা‘আলাকে স্বাধীনতা দিয়েই দু‘আ করে থাকি যদি সেটা একেবারে হারামই হতো তাহলে দু’ হাদীসে দু’ রকম আসতো না। আল্লাহই ভালো জানেন।
‘আল্লামা দাঊদী (রহঃ) বলেন, দু‘আ করতে গিয়ে কেউ ‘ইনশা-আল্ল-হ’ বলার মতো যা বারাকাতের জন্য বলা হয় সেরূপ না করে বরং আল্লাহ তা‘আলার নিকট ঠিক সেরূপভাবেই চাইতে হবে যেমন একজন ফকীর দুঃস্থ ও অনাথ ব্যক্তি চেয়ে থাকে।
(اِرْحَمْنِىْ إِنْ شِئْتَ) অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে রহম করুন, ইচ্ছা করলে আমাকে রিযক দিন ইত্যাদি এগুলো সবই হলো পূর্বে উল্লেখিত নিষেধকৃত দু‘আর উদাহরণ।
(لِيَعْزِمْ) অর্থাৎ- কোন প্রকার সংশয় সংশ্রব ব্যতীত দৃঢ়তার সাথে দু‘আ কবুলের আশা নিয়ে দু‘আ করার প্রতি আদেশ করা হয়েছে। হাদীসে উল্লেখিত (مَسْأَلَتَه) মাস্আলাহ্ শব্দের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দু‘আ। অবশ্য সহীহ মুসলিম ও মুসনাদে আহমাদএর এক বর্ণনায় (مَسْأَلَتَه) মাস্আলাহ্ শব্দের পরিবর্তে সরাসির দু‘আ শব্দ এসেছে।
ইমাম জাযরী (রহঃ) বলেন, এখানে যে عزم শব্দটি বলা হয়েছে তার বিশ্লেষণে আমরা বলি যে, যখন কোন মানুষ কোন কর্মে তার মনস্থির করে তখনই বলা হয় عزمت অর্থাৎ- তুমি কাজে দৃঢ়চেতা হয়েছ।
অপরদিকে عزم শব্দটির শাব্দিক অর্থও দৃঢ়, অকাট্য পাকাপোক্ত ও সন্দেহ দূরীভূতকরণ। সুতরাং মোটকথা হলো, দু‘আ করতে গিয়ে দৃঢ়চেতা হও সন্দেহের ভিতর থেকো না। কেননা দু‘আ কবূল হবে এরূপ দৃঢ় মনোবল নিয়ে সেই দু‘আ করতে পারে যার আল্লাহ সম্পর্কে ভাল ধারণা রয়েছে।
ইমাম দা‘ওয়াদীও একই মতামত ব্যক্ত করেছেন।
‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলবো হাদীসটি ইমাম ত্ববারানী (রহঃ) দু‘আ অধ্যায়ে নিয়ে এসেছেন।
হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেছেন, এমন সানাদে যার সকল রাবীই নির্ভরযোগ্য তবে বাকিয়্যাহ্ বিন ওয়ালীদ এর ‘আয়িশাহ্ থেকে আন্ আন্ সূত্রে বর্ণনাটি একটু বিতর্কিত হয়েছে। হাদীসটি হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা তার ঐসব বান্দাদের পছন্দ করেন যারা তাদের দু‘আতে পিড়াপীড়ি অর্থাৎ- নাছোড় বান্দা হয়ে দু‘আ করে। ইবনু ‘উয়াইনাহ্ (রহঃ) বলেন, কারো জন্য এটা উচিত হবে না যে, তিনি নিজের অসম্পূর্ণতার দরুন দু‘আ করা বন্ধ করে দিবেন। কেননা আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা সৃষ্টিকূলের নিকৃষ্ট ইবলীসের দু‘আও কবূল করেছেন। যখন সে বলেছিল,
رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ অর্থাৎ- ‘‘হে আমার রব! তুমি আমাকে কিয়ামাত পর্যন্ত হায়াত দান করো।’’ (সূরা আল হিজর ১৫ : ৩৬)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২২২৬-[৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন দু’আ করে, সে যেন এটা না বলে, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও যদি তুমি ইচ্ছা রাখো। বরং সে যেন দৃঢ়চিত্তে ও পূর্ণ আগ্রহের সাথে দু’আ করে। কেননা কোন কিছু দান করতে আল্লাহর অসাধ্য কোন কিছু নেই। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ فَلَا يَقُلِ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي إِنْ شِئْتَ وَلَكِنْ لِيَعْزِمْ وَلْيُعَظِّمِ الرَّغْبَةَ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَتَعَاظَمُهُ شيءٌ أعطاهُ . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, (لْيُعَظِّمِ الرَّغْبَةَ) অর্থ হলো বারবার দু‘আ করা বা বেশি পরিমাণ চাওয়া। رغبة অর্থ হল বেশি বেশি চাওয়া।
(فَإِنَّ اللّٰهَ لَا يَتَعَاظَمُه شيءٌ أعطاهُ) অর্থাৎ- আল্লাহ তার কোন বান্দাকে অঢেল সম্পদ দান করলে এতে তার ধনভাণ্ডারে কোনরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২২২৭-[৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দার (প্রতিটি) দু’আ কবূল করা হয়, যে পর্যন্ত না সে গুনাহের কাজের জন্য অথবা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার জন্য এবং তাড়াহুড়া করে দু’আ করে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! তাড়াহুড়া কি? তিনি বললেন, (দু’আ করে) এমনভাবে বলা যে, আমি (এই) দু’আ করেছি। আমি (তার জন্য) দু’আ করেছি। আমার দু’আ তো কবূল হতে দেখছি না। অতঃপর সে নিরাশ হয়ে পড়ে এবং দু’আ করা ছেড়ে দেয়। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ» . قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الِاسْتِعْجَالُ؟ قَالَ: يَقُولُ: قَدْ دَعَوْتُ وَقَدْ دَعَوْتُ فَلَمْ أَرَ يُسْتَجَابُ لِي فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ وَيَدَعُ الدُّعاءَ . رَوَاهُ مُسلم
ব্যখ্যা: (لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ) অর্থাৎ- কোন পাপ কাজ করার সুযোগ চেয়ে দু‘আ করা যাবে না। যেমন কেউ বললো, হে আল্লাহ! আমাকে অমুককে হত্যা করার ক্ষমতা প্রদান করুন। অথচ সে মুসলিম তাকে হত্যা করার কোন কারণ বিদ্যমান নেই। হে আল্লাহ! আমাকে মদ দান করুন ইত্যাদি পাপের কাজে দু‘আ করা নিষেধ।
(قَطِيعَةِ رَحِمٍ) অর্থাৎ- ইমাম জাযরী বলেন, কোন ব্যক্তি যদি এ দু‘আ করে, হে আল্লাহ! আমার ও আমার পিতা-মাতার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দাও যাতে করে আমার তাদের পিছনে কোন খরচ না করা লাগে- এমন দু‘আ করা জায়িয নেই।
(فَلَمْ أَرَ يُسْتَجَابُ لِي) ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, দু‘আকারী এভাবে বলবে যে, অর্থাৎ- আমি বহুবার দু‘আ করেছি কিন্তু দু‘আ কবূল হওয়ার কোনই আলামত দেখছি না। এ জাতীয় কথা হয়তো দু‘আ কারী আল্লাহকে দু‘আ কবূলের ক্ষেত্রে ধীরুজ মনে করে বা নিরাশ হয়ে বলতে পারে আর এ দু’শ্রেণীর বিষয়ই তার জন্য জায়িয হবে না। প্রথমটি এজন্য জায়িয হবে না যে, দু‘আ কবূল হওয়া একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে, যেমন : বর্ণিত হয়েছে মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ) ফির‘আওন-এর ওপর যে বদ্দু‘আ করেছিলেন তা কবূল হয়েছিল তাদের দু‘আ করার ৪০ বছর পর। আর দ্বিতীয়টি অর্থাৎ- নিরাশ হয়ে যাওয়া এজন্য জায়িয হবে না যে, আল্লাহর রহমাত থেকে কেবল তারাই নিরাশ হয় যারা বেঈমান।
পাশাপাশি আরো একটি বিষয় মনে করতে হবে। আর তা হলো, দু‘আ কবূলের অনেকগুলো প্রকার আছে যেমনঃ
১. কাঙ্ক্ষিত বস্ত্ত কাঙ্ক্ষিত সময়ে অর্জন হয়।
২. কাঙ্খিত বস্ত্ত অর্জিত হয় তবে কাঙ্ক্ষিত সময়ে নয় বরং কোন রহস্যের কারণে বিলম্বে অর্জিত হয়।
৩. কাঙ্ক্ষিত বস্ত্ত অর্জিত হয় না বরং কাঙ্ক্ষিত বস্তুর পরিবের্ত কোন অনিষ্ট দূরীভূত হয় অথবা তার চেয়ে আরো ভালো কিছু প্রদান করা হয়।
৪. বিচারের কঠিন দিনের জন্য জমা করে রাখা হয়। অর্থাৎ- দুনিয়াতে নয় এর প্রতিদান পাওয়া যাবে আখিরাতে।
আমি [‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী] বলবো, ‘‘হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে দু‘আ কবূল করা হবে’’ এর দ্বারা এবং পবিত্র কুরআনে যেখানে বলা হয়েছে, ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ অর্থাৎ- ‘‘আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।’’ (সূরা মু’মিন/গাফির ৪০ : ৬০)
মহান আল্লাহর আরো বাণীঃ أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ অর্থাৎ- ‘‘আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৮৬)
এসবগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, দু‘আ করলে তা কবূল হয়। হয়তো বা কখনো যা চাওয়া হয় তাই পাওয়া যায় আবার কখনো তার পরিবর্তে অন্য কিছু পাওয়া যায় বা তার চেয়ে বেশী পাওয়া যায়।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২২২৮-[৬] আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম তার কোন মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দু’আ করলে ওই দু’আ কবূল করা হয়। দু’আকারীর মাথার পাশে একজন মালাক (ফেরেশতা) নিয়োজিত থাকেন। যখন সে তার ভাইয়ের জন্য (কল্যাণের) দু’আ করে; সে নিযুক্ত মালাক সাথে সাথে বলেন ’আমীন’ এবং তোমার জন্যও অনুরূপ হোক। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: دعوةُ الْمُسْلِمِ لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ عِنْدَ رَأْسِهِ مَلَكٌ مُوَكَّلٌ كُلَّمَا دَعَا لِأَخِيهِ بِخَيْرٍ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ: آمِينَ وَلَكَ بِمِثْلٍ . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (بِظَهْرِ الْغَيْبِ) অর্থাৎ- তার অনুপস্থিত। মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য শুধুমাত্র অনুপস্থিত ব্যক্তি নয় বরং কেউ যদি কারো সাথে উপস্থিত থাকে আর সে তার জন্য যদি মনে মনে জবানে উচ্চারণ না করে দু‘আ করে তাহলেও তার দু‘আ কবূল হয়। পূর্ববর্তী ‘উলামাগণের নিয়ম ছিল নিজের জন্য কোন দু‘আ করলে অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্যও সে রকম দু‘আ করতেন যাতে করে সেও দু‘আর অংশীদার হতে পারে।
(مُسْتَجَابَةٌ) অর্থাৎ- যদি কোন মুসলিম অপর মুসলিমের জন্য তার অজান্তে তার কল্যাণ কামনা করে দু‘আ করে এটা এভাবেও হতে পারে যে, তারা একই বৈঠকে বসে আছে কিন্তু সে অপর মুসলিম ভাই বুঝতে পারল না যে, তার সাথে বসা মুসলিম ভাই তার জন্য দু‘আ করছে। এমন যদি হয় তাহলে এ দু‘আ কবূল হয়ে যায়, কেননা এখানে পূর্ণ একনিষ্ঠতার আগমন ঘটেছে, নেই কোন কপটতা আর না আছে কোন বিনিময় পাওয়ার আশা।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২২২৯-[৭] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের নিজেদের জন্য বদ্দু’আ করো না। বদ্দু’আ করো না তোমরা তোমাদের সন্তান-সন্ততির জন্য, বদ্দু’আ করো না তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদের জন্য; আর বদ্দু’আটি এমন এক সময়ের সাথে মিলিত হয়ে যায় যে সময় আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাওয়া হয়, আর আল্লাহ তখন তা কবূল করেন। (মুসলিম; আর ইবনু ’আব্বাস-এর হাদীসে যাকাত পর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ’’মাযলূমের বদ্দু’আ হতে বেঁচে থাকো’’)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ وَلَا تدْعُوا على أَوْلَادكُم لَا تُوَافِقُوا مِنَ اللَّهِ سَاعَةً يُسْأَلُ فِيهَا عَطَاءً فَيَسْتَجِيبَ لَكُمْ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
وَذَكَرَ حَدِيثَ ابْنِ عَبَّاسٍ: «اتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ» . فِي كِتَابِ الزَّكَاة
ব্যাখ্যা: এ বিষয়টি মহিলাদের ভিতরে বেশি লক্ষণীয়। তারা একটু কিছু হলেই তাদের সন্তানদের বদ্দু‘আ করে থাকে। এটা মোটেও ঠিক নয়। অত্র হাদীসে এ বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে।
(لَا تَدْعُوْا عَلٰى اَنْفُسِكُمْ وَلَا تَدْعُوْا عَلٰى أَوْلَادِكُمْ) অর্থাৎ- কেননা তোমাদের বদ্দু‘আগুলো দু‘আ কবূলের সময়ের সাথে হয়ে যেতে পারে। তখন এরূপ দু‘আ কবূল হয়ে গেলে তোমরা লজ্জিত হবে। সুতরাং তোমরা কল্যাণময় দু‘আ ছাড়া বদ্দু‘আ করবে না।
(وَلَا تدْعُوا على أَمْوَالِكُم )‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, এখানে (أَمْوَالِكُم) তথা সম্পত্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কর্মচারী বা চাকর-চাকরাণী। অর্থাৎ- এদের উপর রাগ করে তাদের মৃত্যু চেয়ে বদ্দু‘আ করো না। ‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আবূ দাঊদ-এর এক রিওয়ায়াতে (وَلَا تدْعُوا على أَمْوَالِكُم) এর পূর্বে (لَا تَدْعُوْا عَلٰى خَدْمِكُمْ) উল্লেখ আছে।
(دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ) অর্থাৎ- কারো ওপর যুলম করো না। কারো জিনিস ছিনিয়ে নিও না বা কাউকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করো না।