পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২১৭-[৭] বুরায়দাহ্ আল আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে মানুষের কাছে খাবার চাইবে কিয়ামতের দিন সে এমন এক অবস্থায় উপনীত হবে যে তার চেহারায় হাড় থাকবে, কিন্তু মাংস (গোসত/মাংস) থাকবে না। (বায়হাক্বী- শু’আবূল ঈমান)[1]
عَن بُرَيْدَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ يَتَأَكَّلُ بِهِ النَّاسَ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَوَجْهُهُ عظم لَيْسَ عَلَيْهِ لحم» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি কুরআনের মাধ্যমে মানুষের নিকট খাদ্য চায়। অর্থাৎ- যে দুনিয়ার তুচ্ছ জিনিসের জন্য কুরআনকে মাধ্যম বানায় ও নিকৃষ্ট বস্ত্তর জন্য শ্রেষ্ঠ সম্মানিত বস্ত্তকে অবলম্বন বানায় এবং মন্দতর জিনিসের উপায় বানায় সে কিয়ামতের দিন বিভৎস-নিকৃষ্ট চেহারায় আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। কুরআনের দ্বারা যে খাবার সন্ধান করে তার জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২১৮-[৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ নাযিল না হওয়া পর্যন্ত সূরাগুলোর মধ্যে পার্থক্য বুঝে উঠতে পারতেন না। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَعْرِفُ فَصْلَ السُّورَةِ حَتَّى يَنْزِلَ عَلَيْهِ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ অবতীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সূরার শুরু ও শেষ বুঝতে পারতেন না। যখন এটা নাযিল হল তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে, কোন সূরা শেষ হলো আর কোন সূরা সামনে আসছে এবং শুরু হবে। এ হাদীস দ্বারা হানাফীগণ বলেন, بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ এটা কুরআনের স্বয়ংসম্পন্ন স্বতন্ত্র একটি আয়াত। আর এটা সূরা ফাতিহাহ্ বা অন্য কোন সূরার আয়াত নয়। বস্ত্তত কিরাআত শুরু করার জন্য এটাকে নাযিল করা হয়েছে।
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস এবং এ অধ্যায়ের শেষ হাদীস প্রকাশ্য দলীল যে, بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ প্রত্যেক সূরার আয়াত। এটা সূরাকে পৃথক করার জন্য বারবার নাযিল করা হয়েছে।
লুম'আত গ্রন্থ প্রণেতা বলেন, উপরোক্ত হাদীস দু’টি প্রমাণ করে যে, এটা প্রত্যেক সূরার অংশ যেমন শাফি‘ঈর মাযহাব বা মত। আমাদের এটা কুরআনের আয়াত যা সূরাকে আলাদা করার জন্য নাযিল হয়েছে।
মির্‘আত প্রণেতা বলেন, মুসলিমদের ইজমা হয়েছে যে, কুরআনের দুই মোড়কের মাঝে যা কিছু আছে সব আল্লাহর কালাম এবং তাদের সম্মতি হয়েছে যে, মাসহাফের সমস্ত লিপিই হচ্ছে আল্লাহর বাণী। তবে তারা জোর দিয়ে বলেছেন যে সূরার নামসমূহ, আয়াতের সংখ্যা ও ‘আমীন’ শব্দ কুরআনের বাহিরের। এসব প্রমাণ করে যে, بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ কুরআনের আয়াত। সেজন্য সূরা তাওবাহ্ ব্যতীত অন্য সব সূরার প্রথমে بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ পড়া সমস্ত কারীগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২১৯-[৯] ’আলকামাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হিম্স শহরে ছিলাম। ওই সময় একবার ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) সূরা ইউসুফ পড়লেন। তখন এক লোক বলে উঠল, এ সূরা এভাবে নাযিল হয়নি। (এ কথা শুনে) ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ(রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে এ সূরা পড়েছি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে বলেছেন, বেশ ভাল পড়েছ। ’আলকামাহ্ বলেন, সে তাঁর সাথে কথা বলছিল এ সময় তার মুখ থেকে মদের গন্ধ পাওয়া গেল। ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ(রাঃ) তখন বললেন, মদ খাও আর আল্লাহর কিতাবকে মিথ্যা বানাও। এরপর ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ(রাঃ) মদপানের অপরাধে তাকে শাস্তি প্রদান করলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
وَعَنْ عَلْقَمَةَ قَالَ: كُنَّا بِحِمْصَ فَقَرَأَ ابْنُ مَسْعُودٍ سُورَةَ يُوسُفَ فَقَالَ رَجُلٌ: مَا هَكَذَا أُنْزِلَتْ. فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ: وَاللَّهِ لَقَرَأْتُهَا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَحْسَنْتَ» فَبَيْنَا هُوَ يُكَلِّمُهُ إِذْ وَجَدَ مِنْهُ رِيحَ الْخَمْرِ فَقَالَ: أَتَشْرَبُ الْخَمْرَ وَتُكَذِّبُ بِالْكِتَابِ؟ فَضَرَبَهُ الْحَد
ব্যাখ্যা: জমহূর ‘উলামা বলেছেন, এখানে কিতাবকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা কুফরীর শামিল। এটা তার প্রতি কঠোরতা আরোপের জন্য বা সতর্ক করার জন্য। এজন্য তিনি (ইবনু মাস্‘ঊদ) তার প্রতি মুরতাদের হুকুম আরোপ করেননি।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, ইবনু মাস্‘ঊদ তাকে দণ্ড দিয়েছেন এটা এজন্য যে, আমীর কর্তৃক তিনি এ দায়িত্ব বিশেষভাবে পেয়েছিলেন।
হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, হয়ত ইবনু মাস্‘ঊদ তাকে আমীরের নিকট সোপর্দ করেছিলেন। আর আমীর তাকে দণ্ড দিয়েছেন। তাই তিনি দণ্ডকে রূপকভাবে নিজের প্রতি সম্বোধন করেছেন।
কুরতুবী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি যারা গন্ধ পেলে শাস্তি হবে না বলেছেন যেমন হানাফী মতাবলম্বী তাদের বিপক্ষে দলীল।
কারী (রহঃ) বলেন, একটি দলের মতামত হলো এ হাদীসটি থেকে বাহ্যিকভাবে বুঝা যায়, গন্ধ পেলে মদ পান করেছে বলে ধরে নিয়ে তাকে শাস্তি দেয়া যাবে। তবে আমাদের এবং শাফি‘ঈদের মতামত এর বিপরীত। কারণ টক আপেলেও মদের গন্ধ পাওয়া যায়। আর জোর জবরদস্তিতে মদ পান করতে পারে। সম্ভবত ইবনু মাস্‘ঊদ তার নিকট থেকে কোন স্বীকৃতি পেয়েছিলেন অথবা তাকে শাস্তি দিয়েছেন।
ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এই মাসআলাটি মতানৈক্যপূর্ণ। তবে শ্রেষ্ঠ অভিমত হলো যে, শুধু গন্ধের কারণে শাস্তি দেয়া যাবে না। বরং তার সাথে আর কোন ইঙ্গিত বা প্রমাণ পেতে হবে। যেমন মাতলামী, বমি করা অথবা মদ্যপায়ী লোকের সাথে অবস্থান করা, অথবা মদপানকারী হিসেবে মানুষের নিকটে পরিচিত হওয়া।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২২০-[১০] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামামার যুদ্ধের পর পর খলীফাতুর রসূল আবূ বকর (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি গেলাম। দেখলাম ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তাঁর কাছে উপবিষ্ট। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ’উমার আমার কাছে এসে খবর দিলেন, ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক কুরআনের হাফেয শহীদ হয়ে গেছেন। আমার আশংকা হয়, বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে এভাবে হাফেয শহীদ হতে থাকলে কুরআনের অনেক অংশ লোপ পেয়ে যাবে। তাই আমি সঙ্গত মনে করি যে, আপনি কুরআনকে মাসহাফ বা কিতাব আকারে একত্রিত করতে হুকুম দেবেন। আবূ বকর (রাঃ) বলেন, আমি ’উমারকে বললাম, এমন কাজ কিভাবে আপনি করবেন, যে কাজ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি? ’উমার(রাঃ) উত্তরে বললেন, আল্লাহর শপথ। এটা হবে একটা উত্তম কাজ। ’উমার(রাঃ) এভাবে আমাকে বার বার বলতে লাগলেন। অতঃপর আল্লাহ এ কাজের গুরুত্ব বুঝার জন্য আমার হৃদয় খুলে দিলেন এবং আমিও এ কাজ করা সঙ্গত মনে করলাম।
যায়দ (রাঃ) বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক যার ব্যাপারে আমাদের কোন সন্দেহ সংশয় নেই। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওহীও তুমি লিখতে। তাই তুমিই কুরআনের আয়াতগুলো খোঁজ করো এবং এগুলো গ্রন্থাকারে (মাসহাফ) একত্র করো। যায়দ (রাঃ) বলেন, তারা যদি আমাকে পাহাড়সমূহের কোন একটিকে স্থানান্তরের দায়িত্ব অর্পণ করতেন তা-ও আমার জন্য কুরআন একত্র করার দায়িত্ব অপেক্ষা অধিক দুঃসাধ্য হত না। যায়দ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, যে কাজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি, এমন কাজ আপনারা কী করে করবেন? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! এটা বড়ই উত্তম কাজ। মোটকথা, এভাবে আবূ বকর (রাঃ) আমাকে বার বার বলতে লাগলেন।
সর্বশেষ আল্লাহ তা’আলা আমার হৃদয়কেও এ গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্য খুলে দিলেন, যে কাজের জন্য আবূ বকর ও ’উমারের হৃদয়কে খুলে দিয়েছিলেন। অতএব খেজুরের ডালা, সাদা পাথর, পশুর হাড়, মানুষের (হাফেযদের) অন্তর ও স্মৃতি হতে আমি কুরআনের আয়াত সংগ্রহ করতে লাগলাম। সর্বশেষ আমি সূরা আত্ তাওবার শেষাংশ, ’লাকদ জা-আকুম রসূলুম মিন আনফুসিকুম’ হতে সূরার শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ করলাম আবূ খুযায়মাহ্ আনসারীর কাছ থেকে। এ অংশ আমি তার ছাড়া আর কারো কাছে পাইনি। যায়দ (রাঃ) বলেন, এ লিখিত সহীফাহগুলো আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে ছিল যে পর্যন্ত আল্লাহ তাকে মৃত্যু দেননি। তারপর ছিল ’উমার (রাঃ)-এর কাছে তাঁর জীবনকাল পর্যন্ত। তারপর তাঁর কন্যা হাফসা (রাঃ)-এর কাছে ছিল। (বুখারী)[1]
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ: أَرْسَلَ إِلَيَّ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مَقْتَلَ أَهْلِ الْيَمَامَةِ. فَإِذَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عِنْدَهُ. قَالَ أَبُو بَكْرٍ إِنَّ عُمَرَ أَتَانِي فَقَالَ إِنَّ الْقَتْلَ قَدِ اسْتَحَرَّ يَوْمَ الْيَمَامَةِ بِقُرَّاءِ الْقُرْآنِ وَإِنِّي أَخْشَى أَنِ اسْتَحَرَّ الْقَتْلُ بِالْقُرَّاءِ بِالْمَوَاطِنِ فَيَذْهَبُ كَثِيرٌ مِنَ الْقُرْآنِ وَإِنِّي أَرَى أَنْ تَأْمُرَ بِجَمْعِ الْقُرْآنِ قُلْتُ لِعُمَرَ كَيْفَ تَفْعَلُ شَيْئًا لَمْ يَفْعَلْهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ عُمَرُ هَذَا وَاللَّهِ خَيْرٌ فَلم يزل عمر يراجعني فِيهِ حَتَّى شرح الله صَدْرِي لذَلِك وَرَأَيْت الَّذِي رَأَى عُمَرُ قَالَ زَيْدٌ قَالَ أَبُو بَكْرٍ إِنَّكَ رَجُلٌ شَابٌّ عَاقِلٌ لَا نَتَّهِمُكَ وَقَدْ كُنْتَ تَكْتُبُ الْوَحْيَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَتَبَّعِ الْقُرْآنَ فَاجْمَعْهُ فَوَاللَّهِ لَوْ كَلَّفُونِي نَقْلَ جَبَلٍ مِنَ الْجِبَالِ مَا كَانَ أَثْقَلَ عَلَيَّ مِمَّا أَمَرَنِي بِهِ مِنْ جمع الْقُرْآن قَالَ: قلت كَيفَ تَفْعَلُونَ شَيْئا لم يَفْعَله النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالَ هُوَ وَاللَّهِ خير فَلم أزل أراجعه حَتَّى شرح الله صَدْرِي للَّذي شرح الله لَهُ صدر أبي بكر وَعمر. فَقُمْت فَتَتَبَّعْتُ الْقُرْآنَ أَجْمَعُهُ مِنَ الْعُسُبِ وَاللِّخَافِ وَصُدُورِ الرِّجَال حَتَّى وجدت من سُورَة التَّوْبَة آيَتَيْنِ مَعَ أَبِي خُزَيْمَةَ الْأَنْصَارِيِّ لَمْ أَجِدْهَا مَعَ أَحَدٍ غَيْرِهِ (لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ)
حَتَّى خَاتِمَةِ بَرَاءَةَ. فَكَانَتِ الصُّحُفُ عِنْدَ أَبِي بَكْرٍ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ ثُمَّ عِنْدَ عُمَرَ حَيَاته ثمَّ عِنْد حَفْصَة. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: ইয়ামামাহ্ ইয়ামানের একটি প্রসিদ্ধ শহরের নাম। ‘‘বিদায়াহ্ ওয়ান্ নিহায়াহ্’’-তে বলা হয়েছে, এটা পূর্ব হিজাযের প্রসিদ্ধ অঞ্চল।
(أهل اليمامة) বলতে মুসায়লামাতুল কাযযাব বাহিনীর সাথে যুদ্ধে নিহত সাহাবীগণ উদ্দেশ্য। যখন মুসায়লামাতুল কাযযাব নবূওয়াত দাবী করল এবং ‘আরবের অনেকের মুরতাদ হওয়ার কারণে নিজেকে শক্তিশালী করে তুলল তখন আবূ বাকর (রাঃ) খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) এর নেতৃত্বে একদল সাহাবীকে মুসায়লামাতুল কাযযাব-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য পাঠালেন। তারা ইয়ামামাহ্ অঞ্চলে গিয়ে তার সাথে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হলে আল্লাহ তা‘আলা মুসায়লামাহ্-কে পরাজিত করেন এবং হত্যা করেন। এ যুদ্ধে অনেক সাহাবী শহীদ হন। কেউ বলেন, এর সংখ্যা ছিল সাতশত। আবার কেউ বলেন, এর চাইতেও বেশি।
কুরআন সংকলনের ইতিহাস: ইমাম হাকিম (রহঃ) তার মুস্তাদরাক গ্রন্থে বলেন, কুরআন তিনটি পর্যাযে সংকলন করা হয়। একটি হল, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায়। তবে যে সংকলন বর্তমান সময়ে আমাদের নিকট আছে এটা নয়। তখন বিভিন্ন সূরা বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে লিখিত ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে, অর্থাৎ- এক জায়গায় লিখা হয়নি এবং সূরার ধারাবাহিকতাও ঠিক ছিল না।
হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে কুরআন একটি মাসহাফে সংকলন না করার কারণ হলো তখন কোন আয়াতের হুকুম অথবা কোন আয়াতের তিলাওয়াত মানসূখের সম্ভাবনা ছিল। তাই যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করলেন তখন এরূপ নাসিখ নাযিল হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেল এবং আল্লাহ খুলাফায়ে রাশিদীনদের ইলহাম করে কুরআন সংরক্ষণ করার জন্য নির্দেশ দেন। তাই সংকলনের সূচনা হয়েছিল ‘উমার (রাঃ)-এর পরামর্শক্রমে আবূ বাকর সিদ্দীক্বের হাত ধরে। আবূ বাকর (রাঃ) প্রথমত কুরআন সংকলন করতে চাননি। কিন্তু ‘উমার (রাঃ)-এর বারবার বলার কারণে তিনি এই মহান দায়িত্বের প্রতি মনোযোগ দেন। আর তিনি উপলব্ধি করেন যে, এটাই হচ্ছে আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাধারণ মানুষের খায়েরখাহী করা।
আবার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশও রয়েছে। যেমন তিনি বলেন, (لا تكتبوا عني شيئاً غير القرآن)। আর আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কুরআন একটি صفة-এ সংকলিত রয়েছে। যেমন আল্লাহর বাণীঃ يَتْلُو صُحُفًا مُطَهَّرَةً ‘‘যে পাঠ করে পবিত্র গ্রন্থ’’- (সূরা আল বাইয়্যিনাহ্ ৯৮ : ২)। কিন্তু এখন বিক্ষিপ্তভাবে পাথরে, খেজুরের ডালে, অনুরূপ বস্ত্ততে লিখা রয়েছে। অতঃপর তিনি একটি মুসহাফে সংকলন করলেন। এটাকে রাফিযী সম্প্রদায় সম্পূর্ণ বিদআত (বিদাত) বলে আখ্যায়িত করেছেন।
হারিস মুহাসিব তার ‘‘ফাহামুস্ সুনান’’ গ্রন্থে বলেছেন, কুরআন লিখন বিদআত (বিদাত) নয়। কারণ, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন লিখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বিভিন্ন কাগজের টুকরায়, খেজুরের ডালে, হাড্ডিতে। আবূ বাকর (রাঃ) এগুলোকে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় একত্রিত করলেন। যেন তিনি বিক্ষিপ্ত কুরআনকে বিভিন্ন পাতায় স্থান দিলেন। যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। অতঃপর সেগুলোকে একটি সুতায় বেঁধে দিলেন যাতে কোন অংশ নষ্ট না হয়ে যায়। (ইত্ক্বান- ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫৮)
আবূ বাকর (রাঃ) ওহীর লেখক যায়দ বিন সাবিত-কে কুরআন লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব দেন। হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী যায়দ-এর চারটি বিশেষ গুণের কথা উল্লেখ করেছেন যা এই কাজের জন্য প্রয়োজন।
১. যুবক হওয়া- যে প্রত্যাশিত কিছু খুঁজতে আগ্রহী হবে।
২. জ্ঞানী হওয়া- যে সেগুলোকে সংরক্ষণ করবে।
৩. মিথ্যায় অভিযুক্ত না হওয়া- যাতে তার প্রতি আস্থা রাখা যায়।
৪. ওহীর লেখক ছিলেন- যিনি সর্বাধিক কুরআনের চর্চা করতেন।
যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কুরআন সংকলনের কাজ সম্পাদন করতে থাকেন। ইয়াহ্ইয়া বিন ‘আবদুর রহমান বলেন, ‘উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, যে ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে কুরআন শিখেছে সে যেন তা নিয়ে উপস্থিত হয়। তখন মানুষেরা কাগজের টুকরা, হাড্ডিতে মসৃন পাথরে কুরআন লিপিবদ্ধ করত। যায়দ (রাঃ) কারো নিকট থেকে দু’টি সাক্ষী না পাওয়া পর্যন্ত কিছু গ্রহণ করতেন না। এটা প্রমাণ করে যে, তিনি শুধুমাত্র কারো নিকট কিছু লিখিত পেলেই গ্রহণ করতেন না যতক্ষণ না তিনি জানতেন যে, কার নিকট থেকে শিখেছে এবং তিনি জানেন কি না? এক্ষেত্রে আবূ বাকরও সতর্কতা অবলম্বন করতেন। একদা তিনি যায়দ ও ‘উমারকে বললেন, তোমরা দু’জন মসজিদের দরজায় বস এবং যে তোমাদের নিকটে দু’জন সাক্ষীসহ বলবে যে, এটা কুরআনের আয়াত তখন তা লিখে নাও। আর দুই সাক্ষী থেকে উদ্দেশ্য حفظ তথা মুখস্থ এবং كتابة তথা লিখিত।
অথবা এ দু’টি সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, এটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে লিখিত।
অথবা এ দু’টি প্রমাণ করবে যে, এটা যেসব পদ্ধতিতে কুরআন নাযিল হয়েছে তারই অন্তর্ভুক্ত। শুধু মুখস্থের ভিত্তিতে নয়। এর সাথে লিখার উপর গুরুত্ব প্রদান করতেন। এজন্যই যায়দ সূরা আত্ তাওবার শেষের আয়াত সম্পর্কে বলেন, আমি আর কারো নিকটে লিখিত পায়নি।
সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেন, এই দুই সাক্ষী থেকে উদ্দেশ্য হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মারা যাওয়ার বছর কুরআনকে যে দু’বার জিবরীল নাবীর ওপর পড়ে শুনান সেটাই।
কুসতুলানী (রহঃ) বলেন, (صدور الرجال) এর অর্থ হলো যারা কুরআন সংকলন করেছেন এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে সম্পূর্ণ কুরআনকে মুখস্থ রেখেছেন। যেমন উবাই বিন কা‘ব, মু‘আয বিন জাবাল প্রভৃতি। আর হাড্ডিতে পাথরে লিখিত পাওয়া যেন স্থির করল আবার অনুমোদন দেয়া হলো। اللمعات-এ বলা হয়েছে (صدور الرجال) হলো নির্ভরযোগ্য উৎস।
আর كتابة হলো تقرير على تقرير। অন্য বর্ণনায় রয়েছে কুরআন সংকলন কারীগণ কারো নিকটে কুরআনের আয়াত পেলে তাকে কসম দিতেন অথবা কোন প্রমাণ তলব করতেন। মোট কথা এসব কঠোরতা অবলম্বন করেছেন সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বনের জন্য।
যায়দ বিন সাবিত, ‘উমার, আবূ খুযায়মাহ্, উবাই বিন কা‘ব তাওবার শেষ আয়াত সংগ্রহ করে গোটা কুরআনকে একটি মাসহাফে সংকলন করেন, আবূ বাকর (রাঃ)-এর নিকট রেখে দেন। তার মৃত্যুর পর ‘উমার বিন খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর নিকট, অতঃপর তদীয় কন্যা হাফসাহ্’র নিকট কুরআনের মাসহাফটি থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২২১-[১১] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযায়ফাহ্ ইবনু ইয়ামান, খলীফা ’উসমান (রাঃ)-এর কাছে মদীনায় এলেন। তখন হুযায়ফাহ্ ইরাকিদের সাথে থেকে আরমীনিয়্যাহ্ (আরমেনিয়া) ও আযরাবীজান (আযারবাইজান) জয় করার জন্য শামবাসীদের (সিরিয়াবাসীদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। এখানে তাদের অমিল কুরআন তিলাওয়াত তাকে উদ্বিগ্ন করে তুলল। তিনি ’উসমান (রাঃ)-কে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! ইয়াহূদী-খৃষ্টানদের মতো আল্লাহর কিতাবে ভিন্নতা আসার আগে আপনি এ জাতিকে রক্ষা করুন। তাই ’উসমান(রাঃ) উম্মুল মু’মিনীন হাফসাহ্’র নিকট রক্ষিত মাসহাফ (কুরআন মাজীদ) তার নিকট পাঠিয়ে দেবার জন্য খবর পাঠালেন। তিনি বললেন, আমরা সেটাকে বিভিন্ন মাসহাফে অনুলিপি করে আবার আপনার নিকট তা পাঠিয়ে দিব। হাফসাহ্(রাঃ) সে সহীফাহ্ ’উসমানের নিকট পাঠিয়ে দিলেন। ’উসমান(রাঃ) সাহাবী যায়দ ইবনু সাবিত, ’আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র, সা’ঈদ ইবনু ’আস ও ’আবদুল্লাহ ইবনু হারিস ইবনু হিশামকে এ সহীফা কপি করার নির্দেশ দিলেন।
হুকুম মতো তারা এ সহীফার অনেক কপি করে নিলেন। সে সময় ’উসমান কুরায়শী তিন ব্যক্তিকে বলে দিয়েছিলেন, কুরআনের কোন স্থানে যায়দ-এর সাথে আপনাদের মতভেদ হলে তা কুরায়শদের রীতিতে লিখে নিবেন। কারণ কুরআন মূলত তাদের রীতিতেই নাযিল হয়েছে। তারা নির্দেশ মতো কাজ করলেন। সর্বশেষ সমস্ত সহীফাহ্ বিভিন্ন মাসহাফে কপি করে নেবার পর ’উসমান মূল সহীফাহ্ হাফসাহ্’র নিকট ফেরত পাঠালেন। তাদের কপি করা সহীফাহসমূহের এক এক কপি রাজ্যের এক এক এলাকায় পাঠিয়ে দিলেন। এ কপি ছাড়া অন্য সব আগের সহীফায় লিখিত কুরআনকে জ্বালিয়ে ফেলতে নির্দেশ জারী করেছিলেন।
ইবনু শিহাব যুহরী বলেন, যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) এর ছেলে খারিজাহ্ আমাকে জানিয়েছেন, তিনি তাঁর পিতা যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আমরা যখন কুরআন নকল করি, সূরা আল আহযাব-এর একটি আয়াত খুঁজে পেলাম না। এ আয়াতটি আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পড়তে শুনেছি। তাই আমরা তা খোঁজ করতে লাগলাম। খুযায়মাহ্ ইবনু সাবিত আল আনসারী-এর নিকট অবশেষে আমরা তা পেলাম। এরপর আমরা তা মাসহাফে সংযোজন করে দিলাম। আর সে আয়াতটি হলো, ’’মিনাল মু’মিনীনা রিজা-লুন সদাকূ মা- ’আ-হাদুল্ল-হা ’আলায়হি’’ (অর্থাৎ- মু’মিনদের মধ্যে কতক লোক আল্লাহর সঙ্গে কৃত তাদের অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছে)- (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ২৩)। (বুখারী)[1]
وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ: أَنَّ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ قَدِمَ عَلَى عُثْمَانَ وَكَانَ يُغَازِي أَهْلَ الشَّامِ فِي فَتْحِ أَرْمِينِيَّةَ وَأَذْرَبِيجَانَ مَعَ أَهْلِ الْعِرَاقِ فَأَفْزَعَ حُذَيْفَةَ اخْتِلَافُهُمْ فِي الْقِرَاءَةِ فَقَالَ حُذَيْفَةُ لِعُثْمَانَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أَدْرِكْ هَذِهِ الْأُمَّةَ قَبْلَ أَنْ يَخْتَلِفُوا فِي الْكِتَابِ اخْتِلَافَ الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى فَأَرْسَلَ عُثْمَانُ إِلَى حَفْصَةَ أَنْ أَرْسِلِي إِلَيْنَا بِالصُّحُفِ نَنْسَخُهَا فِي الْمَصَاحِفِ ثُمَّ نَرُدُّهَا إِلَيْكِ فَأَرْسَلَتْ بِهَا حَفْصَةُ إِلَى عُثْمَانَ فَأَمَرَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ الزبير وَسَعِيد بن الْعَاصِ وَعبد الرَّحْمَن بْنَ الْحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ فَنَسَخُوهَا فِي الْمَصَاحِفِ وَقَالَ عُثْمَانُ لِلرَّهْطِ الْقُرَشِيِّينَ الثَّلَاثِ إِذَا اخْتَلَفْتُمْ فِي شَيْءٍ مِنَ الْقُرْآنِ فَاكْتُبُوهُ بِلِسَانِ قُرَيْشٍ فَإِنَّمَا نَزَلَ بِلِسَانِهِمْ فَفَعَلُوا حَتَّى إِذَا نَسَخُوا الصُّحُفَ فِي الْمَصَاحِفِ رَدَّ عُثْمَانُ الصُّحُفَ إِلَى حَفْصَةَ وَأَرْسَلَ إِلَى كُلِّ أُفُقٍ بِمُصْحَفٍ مِمَّا نَسَخُوا وَأَمَرَ بِمَا سِوَاهُ مِنَ الْقُرْآنِ فِي كُلِّ صَحِيفَةٍ أَوْ مُصْحَفٍ أَنْ يُحْرَقَ قَالَ ابْن شهَاب وَأَخْبرنِي خَارِجَة بن زيد بن ثَابت سَمِعَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ قَالَ فَقَدْتُ آيَةً مِنَ الْأَحْزَابِ حِينَ نَسَخْنَا الْمُصْحَفَ قَدْ كُنْتُ أَسْمَعُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ بِهَا فَالْتَمَسْنَاهَا فَوَجَدْنَاهَا مَعَ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ الْأَنْصَارِيِّ (مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا الله عَلَيْهِ)
فَأَلْحَقْنَاهَا فِي سُورَتِهَا فِي الْمُصْحَفِ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যা: হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, ‘উসমান (রাঃ) এর শাসনামলে আরমেনিয়া ও আযারবায়জান যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এ যুদ্ধে সিরিয়া ও ইরাক্বের অধিবাসী অংশগ্রহণ করেছিল। ‘উসমান (রাঃ) ইরাকবাসীর আমীর হিসেবে সালমান বিন রবী‘আহ্ আল বাহিলীকে এবং সিরিয়াবাসীর আমীর হিসেবে হাবীব বিন মাসলামাহ্ আল ফিহরী-কে নিযুক্ত করেন।
রশাত্বীয়ু (রহঃ) বলেন, আরমেনিয়ার যুদ্ধ ‘উসমান (রাঃ)-এর খিলাফাতে ২৪ হিজরীতে সালমান বিন রবী‘আহ্-এর নেতৃত্বে সংঘটিত হয়।
ইবনুল ‘আরাবী (রহঃ) বলেন, আযারবায়জান আরমেনিয়ার পাশের এলাকা। এ দু’টি যুদ্ধ একই বছরে সংঘটিত হয়েছিল। এ যুদ্ধে ইরাকবাসী ও সিরিয়াবাসী ভিন্ন ভিন্নভাবে কুরআন তিলাওয়াত করত। কোন বর্ণনায় এসেছে, ইরাকবাসী ‘আবদুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর কিরাআতে তিলাওয়াত করতেন। আর সিরিয়াবাসী উবাই বিন কা‘ব (রাঃ)-এর নিয়মানুসারে তিলাওয়াত করতো। এতে তাদের মাঝে যেন এক ধরনের ফিতনা শুরু হয়েছিল। ফলে তারা পরস্পরের তিলাওয়াতকে অস্বীকার করে বসত। একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, তারা উভয়ে وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلهِ [البقرة: 196] আয়াতকে নিয়ে মতানৈক্য করে। তাদের কেউ বলে وأتموا الحج والعمرة للبيت পড়লে হুযায়ফাহ্ রাগান্বিত হলেন। এমনকি তার চোখ লাল হয়ে গেল। তিনি বলেন, যদি আমি আমিরুল মু’মিনীনের নিকট যাই তবে আমি তাকে কুরআনকে একই কিরাআতের উপর একত্রিত করার জন্য অনুরোধ করব। কেননা এর দ্বারা কুরআন নিয়ে ইয়াহূদী নাসারাদের মতো এই উম্মাতগণ মতভেদে জড়িয়ে পড়বে। তাই ‘উসমান (রাঃ) হুযায়ফাহ্ (রাঃ)-এর অনুরোধ হাফসাহ্ বিনতু ‘উমার-এর নিকট আবূ বাকর-এর সংকলিত মাসহাফটি চেয়ে পাঠান। এরপর আনসারী সাহাবী যায়দ বিন সাবিত এবং কুরায়শ সাহাবী ‘আবদুল্লাহ বিন যুবায়র, সা‘ঈদ বিন ‘আস-কে দিয়ে লিখিয়ে নেন। কারণ যায়দ ছিলেন শ্রেষ্ঠ লেখক ও সা‘ঈদ ছিলেন স্পষ্টভাষী।
হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, ১২ জন সংকলকের মধ্যে ৯ জনকে আমরা চিনতাম। যাদের মধ্যে সূচনা হয়েছিল যায়দ ও সা‘ঈদ এর মাধ্যমে দিয়ে।
‘উসমান (রাঃ) তাদেরকে কুরায়শদের ভাষায় কুরআনকে লিখতে বলেন কুরায়শের সম্মান প্রকাশের জন্য। কারণ আল্লাহ বলেছেন, إِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا ‘‘আমি ওটাকে (কুরআনকে) করেছি ‘আরাবী ভাষায়’’- (সূরা আয্ যুখরুফ ৪৩ : ৩)। ‘আরাবী ভাষা অনেক গোত্রের রয়েছে, যেমন কুরায়শ, মুযার, রবী‘আহ্ ইত্যাদি। তাই কোন গোত্রের সাথে নির্দিষ্ট করতে স্পষ্ট দলীলের দরকার হয়। অন্যথায় নির্দিষ্ট ভাবে বলা যাবে না। এ ব্যাখ্যাটি করেছেন কাযী আবূ বাকর ইবনু আল বাকিলানী।
আবূ শামাহ (রহঃ) বলেন, ‘উসমান কুরায়শ বংশের সাথে নির্দিষ্ট করার কারণ হলো সর্বপ্রথম কুরআন কুরায়শদের ভাষায় নাযিল হয়। এরপর সহজতর জন্য বা পড়ার সুবিধার জন্য সাত পদ্ধতিতে নাযিল হয়। যখন কুরআনকে একটি ভাষায় একত্রিত করলেন তখন এটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, সাত রীতির মধ্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরায়শ বংশের ভাষা উত্তম। ফলে মানুষ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষা হওয়ায় আগ্রহের সাথে গ্রহণ করে। আসলে আবূ বাকর (রাঃ)-এর উদ্দেশ্য ছিল কুরআনকে সমস্ত শারী‘আত সম্মত রীতিতে সংকলন করা। আর ‘উসমানের কুরায়শের ভাষায় কুরআনকে সংকলন করার উদ্দেশ্য ছিল কুরআনের ব্যাপারে মানুষের মতভেদের রাস্তাকে বন্ধ করে দেয়া।
‘উসমান (রাঃ) হাফসাহ্’র নিকট থেকে প্রাপ্ত কপিগুলো থেকে লিখার পর আবার তার নিকটে ফেরত পাঠান এবং লিখিত পাণ্ডুলিপি ছাড়া অন্য সব পাণ্ডুলিপিকে পোড়ানোর নির্দেশ দেন। ইবনুল বাত্বাল (রহঃ) এ হাদীসকে লক্ষ্য করে বলেন, আল্লাহর নাম উল্লেখ আছে এমন বই-পত্র আগুনে পুড়িয়ে দেয়া জায়িয। এটাই হচ্ছে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং মানুষের পায়ে পদদলিত হওয়া থেকে রক্ষার উপায়।
ইবনু ‘আতিয়্যাহ্ বলেন, পাণ্ডুলিপি পুড়ানো সেই সময়ে প্রযোজ্য ছিল। তবে এখন প্রয়োজন হলে সেগুলোকে ধৌত করা উত্তম। হানাফীগণ বলেন, কোন কুরআনের মাসহাফ পুরাতন হওয়ার কারণে উপকৃত না হওয়া গেলে মানব চলাচলের রাস্তা থেকে দূরের কোন পবিত্র স্থানে পুঁতে দেয়া জায়িয। কারী বলেন, পুরাতন পাণ্ডুলিপি ধৌত করে পানিগুলোকে পান করতে হবে।
তিরমিযীর ব্যাখ্যাকার আমাদের বিজ্ঞ-পণ্ডিত ‘আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ)-এর কথা নকল করে বলেন, যদি চিন্তা করা যায় তবে পুড়ানোই সর্বোত্তম পথ বলে মনে হবে। তাই ‘উসমান (রাঃ) পুড়িয়েছেন। তিনি আরো বলেন, পাণ্ডুলিপিকে ধৌত করা অসম্ভব। তাই এটা স্পষ্ট বিবেকবিরোধী মত।
আবূ বাকর (রাঃ)-এর যুগে সংকলনের সময়ে সূরা তাওবার দু’টি আয়াত পাওয়া যাচ্ছিল না। যা খুযায়মাহ্ বিন সাবিত-এর নিকটে পাওয়া গেল। আর ‘উসমানের এর যুগে সূরা আহযাব-এর একটি আয়াত পাওয়া যাচ্ছিল না। এরূপ মত ব্যক্ত করেছেন হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ)। তিনি আরো বলেন, উপরোক্ত বর্ণনা থেকে বুঝতে পারা যায় যে, যায়দ বিন সাবিত কুরআন সংকলনের জন্য শুধু জানা বা মুখস্থ থাকার উপর নির্ভর করেননি বরং তিনি তাদের নিকট লিখা আছে কিনা লক্ষ্য করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২২২-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার খলীফা ’উসমানকে বললাম, কোন্ জিনিস আপনাদেরকে উদ্বুদ্ধ করল যে সূরা আনফাল, যা সূরা ’মাসানী’র অন্তর্ভুক্ত, সূরা বারাআত (আত্ তওবা্) যা ’মাঈন’-এর অন্তর্ভুক্ত? এ উভয় সূরাকে এক স্থানে একত্র করে দিলেন? এ দু’ সূরার মাঝে আবার ’বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ লাইনও লিখলেন না? আর এগুলোকে জায়গা দিলেন ’’সাব্’ইত্ব তুওয়াল’’-এর মধ্যে (অর্থাৎ- ৭টি দীর্ঘ সূরা)। কোন্ বিষয়ে আপনাদেরকে এ কাজ করতে উজ্জীবিত করল? ’উসমান জবাবে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর ওহী নাযিল হবার অবস্থা ছিল এমন যে, কোন কোন সময় দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হত (তাঁর ওপর কোন সূরা নাযিল হত না) আবার কোন কোন সময় তাঁর ওপর বিভিন্ন সূরা (একত্রে) নাযিল হত। তাঁর ওপর কুরআনের কিছু নাযিল হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর কোন না কোন সাহাবী ওহী লেখককে (কাতিবে ওহী) ডেকে বলতেন, এ আয়াতগুলোকে অমুক সূরার অন্তর্ভুক্ত করো। যেসব আয়াতে অমুক অমুক বর্ণনা রয়েছে এর, আর অন্য কোন আয়াত নাযিল হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, এ আয়াতকে অমুক সূরায় স্থান দাও।
মদীনায় প্রথম নাযিল হওয়া সূরাহসমূহের মধ্যে সূরা আল আনফাল অন্তর্ভুক্ত। আর সূরা ’বারাআত’ মদীনায় অবতীর্ণ হবার দিক দিয়ে শেষ সূরাগুলোর অন্তর্গত। অথচ ও দু’টি সূরার বিষয়বস্ত্ত প্রায় এক। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের কারণে আমাদেরকে বলে যেতে পারেননি সূরা বারাআত, সূরা আনফাল-এর অন্তর্ভুক্ত কিনা। তাই (অর্থাৎ- উভয় সূরা মাদানী ও বিষয়বস্ত্তর মিল থাকার কারণে) আমি এ দু’ সূরাকে একত্রে মিলিয়ে দিয়েছি। ’বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ লাইনও (এ দু’ সূরার মধ্যে) লিখিনি এবং এ কারণেই এটাকে ’’সাব্’ইত্ব তুওয়াল’’-এর অন্তর্গত করে নিয়েছি। (আহমদ, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: قلت لعُثْمَان بن عَفَّان مَا حملكم أَنْ عَمَدْتُمْ إِلَى الْأَنْفَالِ وَهِيَ مِنَ الْمَثَانِي وَإِلَى بَرَاءَةٍ وَهِيَ مِنَ الْمَئِينِ فَقَرَنْتُمْ بَيْنَهُمَا وَلم تكْتبُوا بَينهمَا سَطْرَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ وَوَضَعْتُمُوهَا فِي السَّبع الطول مَا حملكم على ذَلِك فَقَالَ عُثْمَانُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّا يَأْتِي عَلَيْهِ الزَّمَان وَهُوَ تنزل عَلَيْهِ السُّور ذَوَات الْعدَد فَكَانَ إِذا نزل عَلَيْهِ الشَّيْء دَعَا بعض من كَانَ يَكْتُبُ فَيَقُولُ: «ضَعُوا هَؤُلَاءِ الْآيَاتِ فِي السُّورَةِ الَّتِي يُذْكَرُ فِيهَا كَذَا وَكَذَا» فَإِذَا نَزَلَتْ عَلَيْهِ الْآيَةُ فَيَقُولُ: «ضَعُوا هَذِهِ الْآيَةَ فِي السُّورَةِ الَّتِي يُذْكَرُ فِيهَا كَذَا وَكَذَا» . وَكَانَتِ الْأَنْفَالُ مِنْ أَوَائِلِ مَا نَزَلَتْ بِالْمَدِينَةِ وَكَانَتْ بَرَاءَة من آخر الْقُرْآن وَكَانَت قصَّتهَا شَبيهَة بِقِصَّتِهَا فَظَنَنْت أَنَّهَا مِنْهَا فَقُبِضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَمْ يبين لنا أَنَّهَا مِنْهَا فَمِنْ أَجْلِ ذَلِكَ قَرَنْتُ بَيْنَهُمَا وَلِمَ أكتب بَينهمَا سَطْرَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ وَوَضَعْتُهَا فِي السَّبْعِ الطُّوَلِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: মুহাদ্দিসগণ কুরআনকে চারভাগে ভাগ করেছেন। আর প্রত্যেক ভাগের এক একটি নাম দিয়েছেন। তারা বলেন, কুরআনের প্রথম দিকের সূরার নাম السبع الطول ‘‘সাব্‘ইত্ব তুওয়াল’’। এ প্রকারের মধ্যে রয়েছে সূরা আল বাকারাহ্ থেকে সূরা আল আ‘রাফ পর্যন্ত ছয়টি সূরা। সপ্তম সূরা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, সূরা ফাতিহাহ্ যদিও এর আয়াত সংখ্যা কম কিন্তু এর অর্থের আধিক্যতা রয়েছে।
কেউ কেউ বলেন, সূরা আনফাল ও তাওবার সমষ্টি হচ্ছে সপ্তম সূরা। এ সূরা দু’টি যেন একটি সূরা। এ কারণে এই দু’টি সূরার মাঝে بسم الله দ্বারা পার্থক্য করা হয়নি।
* দ্বিতীয় প্রকার হলো ذوات مائية অর্থাৎ- যেসব সূরায় ১০০ বা ১০০ এর কম বেশি আয়াত রয়েছে, এ ধরনের সূরার সংখ্যা ১১ টি। এর আরেক নাম المئون।
* তৃতীয় প্রকার হলো مثانى অর্থাৎ- যেসব সূরায় ১০০ এর কম আয়াত আছে। এ প্রকার সূরার সংখ্যা ২০ টি।
* চতুর্থ প্রকার হলো مفصل। আর এ নামে নামকরণের কারণ হলো بسم الله এর মাধ্যমে সূরাগুলোকে বেশি বেশি ভাগ করা হয়েছে।
ইবনু ‘আব্বাস ‘উসমান (রাঃ)-কে দু’টি প্রশ্ন করেছেন। (এক) আনফাল ছোট সূরা হওয়া সত্ত্বেও কেন الطول-এ এবং সূরা তাওবাকে طول -এর সমপর্যায়ের হওয়া সত্ত্বেও مئين এ আর দু’টির মাঝে بسم الله কেন লেখা হল না।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর দু’টি প্রশ্নের জবাব ‘উসমান (রাঃ) প্রদান করেছেন, কারণ দু’টি বিষয়ের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। কেননা তিনি মনে করেছেন যে, সূরা দু’টি একটিই সূরা। তাই এটাকে السبع الطول এর মাঝে রাখা হয়েছে। আর এ দু’টির মাঝে بسم الله লেখা হয়নি।
অথবা দু’টি সূরা মনে করেছেন, তাই এ দু’টির মাঝে ফাঁকা সাদা জায়গা রাখা হয়েছে। এ ধরনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এটা সাদৃশ্য হওয়া বা অস্পষ্ট হওয়ায় এবং এ দু’টির একটি সূরা হওয়াতে অকাট্য প্রমাণ না থাকায়।
বর্তমানে কুরআনে যে অবস্থায় সূরার ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে এটা আল্লাহ কর্তৃক জিবরীল মারফত প্রাপ্ত না সাহাবীদের ইজতিহাদের মাধ্যমে হয়েছে, এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে।
কেউ কেউ বলেন, এটা সাহাবীদের ইজতিহাদের মাধ্যমে। এ মতের প্রবক্তাদের মধ্যে কাযী আবূ বাকর (রহঃ) অন্যতম। তারা এ মতের প্রতি ঝুঁকেছেন এজন্যে যে, সাহাবীদের কুরআন নাযিলের কারণ এবং শব্দাবলীর অবস্থান স্থল সম্পর্কে জ্ঞান ছিল। মূলত তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে যা শুনতেন তা লিখে রাখতেন।
আবার কেউ বলেন, আয়াতের ধারাবাহিকতা ও সূরার ধারাবাহিকতা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিধান।
ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) তাঁর مدخل গ্রন্থে বলেছেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে সূরা আনফাল ও তাওবাহ্ ব্যতীত অন্য সব আয়াত ও সূরা এ ধারাতেই সাজানো ছিল। যা ‘উসমান (রাঃ) এর হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী ও ‘উলামাগণের বিস্তারিত মতভেদের বর্ণনা উল্লেখ পূর্বক ইমাম বায়হাক্বীর মত সমর্থন করে ‘আলিমদের মতামতকে উল্লেখ করে বলেন, সূরা আনফাল ও তাওবাহ্ ছাড়া সমস্ত সূরার তারতীব আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।
নির্ভরযোগ্য ও অগ্রাধিকারযোগ্য মত: ইমাম বাগাবী, ইবনুল আবারী, কিরমানী ও অন্যান্যদের মত হচ্ছে আমাদের সিদ্ধান্ত। তাদের মত হলো বর্তমানে কুরআনে সূরার এবং আয়াতের যে ধারাবাহিকতা রয়েছে এভাবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পাদন করেছেন। যেমন জিবরীল (আঃ) আল্লাহর নিকট থেকে সংবাদ পেয়েছেন। সুতরাং সমস্ত সূরার ধারাবাহিকতা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর এর বিপক্ষে যেসব মত রয়েছে তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।
তিরমিযী ও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে যে, মদীনায় প্রথমদিকে সূরা আল আনফাল নাযিল হয়েছে এবং সূরা আত্ তাওবাহ্ কুরআন নাযিলের শেষের দিকে নাযিল হয়েছে।
কারী বলেন, সূরা আত্ তাওবাহ্ মাদানী সূরা। এ দু’টি সূরার মাঝে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিক বিষয়বস্ত্তর সাদৃশ্য রয়েছে। আর এটাই হচ্ছে দু’টি সূরাকে একত্রিত করার একটি কারণ।
মোটকথা দু’টি সূরা হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট দলীল না আসায় بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ উল্লেখ করা হয়নি, একটি সূরা হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট না পাওয়ায় ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। আর দু’টি সূরা হলেও طول-এ রাখা বেঠিক হয়নি। কারণ مئين-এর ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন সূরা র‘দ এবং সূরা ইব্রাহীম। আর যদি একটি সূরা হয় তাহলে তাকে সেখানে রাখা ঠিক হয়েছে। যাকে مثانى-এর স্থানে দিলে তা ঠিক হতো না ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো না । তাই সাদৃশ্য থাকার কারণে طول-এর শেষে এবং مئين-এর প্রথমে স্থান দেয়া হয়েছে।