পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২২০৬-[২০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন। আমরা তখন কুরআন তিলাওয়াত করছিলাম। এ পাঠের মধ্যে ’আরব অনারব সবই ছিল (যারা কুরআন পাঠে ঠিক মতো উচ্চারণ করতে পারছিল না) তারপরও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ পড়ে যাও। প্রত্যেকেই ভাল পড়ছো। (মনে রাখবে) অচিরেই এমন কতক দল আসবে যারা ঠিক মতো কুরআন পাঠ করবে, যেভাবে তীর সোজা রাখা হয়। তারা (দুনিয়াতেই) তাড়াতাড়ি এর ফল চাইবে। আখিরাতের জন্য অপেক্ষা করবে না। (আবূ দাঊদ, বায়হাক্বী- শু’আবূল ঈমান)[1]
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَفينَا الْأَعرَابِي والأعجمي قَالَ: «اقرؤوا فَكُلٌّ حَسَنٌ وَسَيَجِيءُ أَقْوَامٌ يُقِيمُونَهُ كَمَا يُقَامُ الْقِدْحُ يَتَعَجَّلُونَهُ وَلَا يَتَأَجَّلُونَهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
ব্যাখ্যা: الأعرابى (হামজাহ) বর্ণে যবর যোগে একবচন। বহুবচন أعراب ও أعاريب এর অর্থ মরুবাসী, যাযাবর, বেদুঈন, গ্রামীণ পল্লী। আর عربى অর্থ আরবের অধিবাসী। এর বহুবচন العرب যেমন يهودى এর বহুবচন يهود أعربى (বেদুঈন) ‘আরবের হতে পারে অথবা তাদের মিত্রও হতে পারে। তাই যখন কোন أعرابى কে عربى বলে সম্বোধন করা হয় তখন সে প্রফুল্ল হয়। কিন্তু কোন عربى কে أعرابى বলে সম্বোধন করলে সে রাগান্বিত হয়। মোটকথা العرب (‘আরববাসী) হলো الأعرابى এর তুলনায় বেশি ব্যাপক। العرب হলো ‘আম্ আর أعرابى হলো খাস্। أعرابى যারা আরবের পল্লীতে বসবাস করে। তারা শুধু প্রয়োজনে শহরে আসে যেমন আল্লাহর বাণী الْأَعْرَابُ أَشَدُّ كُفْرًا وَنِفَاقًا ‘‘বেদুঈন ‘আরবরা কুফরী আর মুনাফিক্বীতে সবচেয়ে কঠোর’’- (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৯৭)।
العجمى বলা হয়, যারা ‘আরব অঞ্চলের বাহিরে রোম, পারস্যে, হাবশায় বসবাস করে। যেমন সালমান, শু‘আয়ব, বিলাল (রাঃ) প্রমুখ أعرابى হোক বা عجمى হোক সবার তিলাওয়াত সুন্দর ও প্রত্যাশিত এবং এটা সাওয়াব এর ফল। যদিও উভয়ের মাঝে শব্দ উচ্চারণের স্থান ও এর স্বাতন্ত্রতা এবং এর ‘আরাবী কায়দা কানুন একই রকম নয়। তবুও এর দ্বারা সাওয়াব পাওয়া যায় এবং এটা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি প্রজন্মের কথা ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন, যেটা তার মু‘জিযা এর অন্তর্ভুক্ত, যে শীঘ্রই একটি দলের উদ্ভব ঘটবে যারা কুরআনের কিরাআত নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করবে। তারা শব্দকে সুন্দর করার জন্য, তার মাখরাজ ও সিফাতের প্রতি কঠিনভাবে নজর দিয়ে শব্দকে আদায় করার জন্য তীব্র কষ্ট উঠাবে। এটা এবং তারা পার্থিব সুনাম, খ্যাতি অর্জনের এবং লোককে দেখাবার উদ্দেশে করবে। তারা পৃথিবীতে এর প্রতিদান সাওয়াবের আশা করবে। কেউ বলেছেন তারা আল্লাহর আয়াতকে সামান্য মূল্যে বিক্রি করবে কিন্তু তারা পরকালে এর প্রতিদানের আশা করবে না তারা শুধু খেয়ে যাবে, আল্লাহর ওপর ভরসা করবে না।
ইমাম জাযরী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাবি‘ঈদেরকে কিরাআত সহজ ছিল। তিনি বলেন, তোমরা যেভাবে সহজ উচ্চারণ করতে পার সেভাবে কুরআন তেলাওয়াত কর। এক্ষেত্রে হরফ উচ্চারণে কষ্ট কাঠিন্য স্বীকার ও মাদ্দ, হামজা উচ্চারণে ও ইশ্বা করণে বাড়াবাড়ি ও অতিরিক্ত করার দরকার নেই।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২২০৭-[২১] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন পড়ো ’আরবদের স্বর ও সুরে। আর দূরে থাকো আহলে ইশক ও আহলে কিতাবদের পদ্ধতি হতে। আমার পর খুব তাড়াতাড়ি এমন কিছু লোকের আগমন ঘটবে, যারা কুরআন পাঠে গান ও বিলাপের সুর ধরবে। কুরআন মাজীদ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে অন্তরের দিকে যাবে না। তাদের অন্তর হবে দুনিয়ার মোহগ্রস্ত। এভাবে তাদের অন্তরও মোহগ্রস্ত হবে যারা তাদের পদ্ধতি ও সুরে কুরআন তিলাওয়াত করবে। (বায়হাক্বী- শু’আবূল ঈমান)[1]
وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «اقرؤوا الْقُرْآنَ بِلُحُونِ الْعَرَبِ وَأَصْوَاتِهَا وَإِيَّاكُمْ وَلُحُونَ أَهْلِ الْعِشْق وَلُحُون أهل الْكِتَابَيْنِ وسيجي بعدِي قوم يرجعُونَ بِالْقُرْآنِ ترجع الْغِنَاءِ وَالنَّوْحِ لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ مَفْتُونَهٌ قُلُوبُهُمْ وَقُلُوبُ الَّذِينَ يُعْجِبُهُمْ شَأْنُهُمْ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: ইমাম জাযরী (রহঃ) বলেছেনঃ لحن এর বহুবচন لحون বা الحان এর অর্থ কুরআনের তিলাওয়াত, গান বা কবিতাকে সুন্দর উল্লাসিত সুরে বার বার আবৃতি করা।
ইমাম জাযরী (রহঃ) বলেন, কুরআন তিলাওয়াত এমন সুরেলা আওয়াজে করতে হবে যেন হরফসমূহ তার মাখারিজ থেকে বিচ্যুত ও ত্রুটিযুক্ত না হয়, কারণ এর দ্বারা প্রফুল্লতা বা আনন্দ বৃদ্ধি পায়।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেমিক তথা মুসলিম পাপী-ফাসিকদের সুরে কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন। তারা সুরকে টেনে এমনভাবে দীর্ঘ করে ফলে অক্ষর কম-বেশি হয়ে যায়। আর এটা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। أهل العشق এর সুর থেকে উদ্দেশ্য হলো যা কোন লোক নারীর প্রেম বিষয়ক কবিতা সুরকারের নিয়ম-নীতির প্রতি লক্ষ্য রেখে কষ্ট করে পড়ে থাকে।
অনুরূপভাবে ইয়াহূদী ও নাসারা তাদের কিতাব তথা তাওরাত ও ইঞ্জীলকে গায়কদের মতো তিলাওয়াত করত। তাই তাদের মতো কুরআন তিলাওয়াত করা নিষিদ্ধ। সেজন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ من تشبه بقوم فهو منهم। এ ধরনের সুরে যারা কুরআনের আওয়াজকে গায়কদের মতো বরাবর ফিরিয়ে বিলাপের সুরে তিলাওয়াত করে কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। অর্থাৎ- তাদের অন্তরে কুরআন তিলাওয়াতের প্রভাব পড়বে না। ফলে তারা কুরআন তিলাওয়াতের ভাবনা করবে না এর প্রতি ‘আমল করবে না। ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, তিলাওয়াত আসমানে পৌঁছবে না বা গ্রহণযোগ্য হবে না।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একটি দলের উদ্ভব ঘটবে যারা কুরআনকে গান ও বিলাপের মতো বারবার ফিরিয়ে পাঠ করবে। কিন্তু তাদের অন্তরে এর ক্রিয়া হবে না। অর্থাৎ- কুরআন ترجيع-এর পদ্ধতিতে পড়া যাবে না। যে গান ও বিলাপকে ترجيع করা হয়। তবে অন্য হাদীসে উম্মু হানী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন ترجيع করেছেন। যেমন তিনি বলেন, (كنت أسمع صوت النبي - ﷺ- وهو يقرأ وأنا نائمة على فراشي يرجع القرآن) এছাড়া ইসমা‘ঈলীর বর্ণনায় রয়েছে, যদি আমাদের নিকটে মানুষ একত্রিত না হত তবে আমি গুণগুণ সুরে কুরআন তিলাওয়াত করতাম। এসব বর্ণনা থেকে বুঝা গেল ترجيع করা জায়িয।
ইবনু আবী জামরাহ্ এর উত্তরে বলেন, এখানে ترجيع বলতে সুন্দর সুমধুর কন্ঠে তিলাওয়াত উদ্দেশ্য। গানের সুর উদ্দেশ্য নয়। কারণ কুরআন পড়ার দ্বারা যে বিনম্রতার আশা করা যায় গানের ترجيع দ্বারা এর বিপরীত হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২২০৮-[২২] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআনকে তোমাদের কণ্ঠস্বরের মধুর আওয়াজ দিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে পড়বে। কারণ সুমিষ্ট স্বর কুরআনের সৌন্দর্য বাড়ায়। (দারিমী)[1]
وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «حَسِّنُوا الْقُرْآنَ بِأَصْوَاتِكُمْ فَإِنَّ الصَّوْتَ الْحَسَنَ يُزِيدُ الْقُرْآنَ حُسْنًا» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, কুরআনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা বলতে তারতীলসহ বিনম্র করুণ সুরে শোকাকুল হয়ে সুন্দরভাবে তিলাওয়াত করা। এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে কুরআন স্বরবে সুন্দর আওয়াজে পড়া যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এর দ্বারা কোন মুসল্লি বা ঘুমন্ত ব্যক্তির কষ্ট না হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২২০৯-[২৩] ত্বাঊস ইয়ামানী (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, (হে আল্লাহর নবী!) কুরআনে স্বর প্রয়োগ ও উত্তম তিলাওয়াতের দিক দিয়ে কোন্ ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যার তিলাওয়াত শুনে তোমার মনে হবে, তিলাওয়াতকারী আল্লাহকে ভয় করছে। বর্ণনাকারী ত্বাঊস বলছেন, ত্বালক্ব (রহঃ) এরূপ তিলাওয়াতকারী ছিলেন। (দারিমী)[1]
وَعَنْ طَاوُوسٍ مُرْسَلًا قَالَ: سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ النَّاسِ أَحْسَنُ صَوْتًا لِلْقُرْآنِ؟ وَأَحْسَنُ قِرَاءَةً؟ قَالَ: «مَنْ إِذَا سَمِعْتَهُ يقْرَأ أَرَأَيْت أَنَّهُ يَخْشَى اللَّهَ» . قَالَ طَاوُوسٌ: وَكَانَ طَلْقٌ كَذَلِك. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: কুরআন পঠনের উত্তম আওয়াজ হলো সেটা, যেই স্বরের ভিতরে আল্লাহভীতির ইঙ্গিত পাওয়া যায় এবং কারী পঠিত আয়াতের মধ্যে বর্ণিত শাস্তি ও উপদেশাবলী কথা চিন্তা করে ভীতসন্ত্রস্ত ও চিন্তিত হয়।
‘আল্লামা ‘আবদুল হক দেহলভী (রহঃ) তাঁর ‘‘আল লাম্‘আত’’ গ্রন্থে বলেন, কারী তার সুন্দর সুরের মাধ্যমে ভয়, চিন্তার নিদর্শন প্রকাশ করবে। আসলে পাঠকের ভীতি তার আওয়াজে বুঝা যাবে। এরূপ কন্ঠস্বর হলে সেটা উত্তম সুর।
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, কুরআনের পাঠক সুমধুর সুরের মাধ্যমে আল্লাহ ভীতির জবাব প্রদানে ব্যস্ত থাকবে। যা কারী ও মনোযোগী শ্রোতার নিকটে প্রকাশ পায়। যেমন তাবি‘ঈ ত্বালক্ব বিন হাবীব ‘আনাযী আল বাসরী।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২২১০-[২৪] ’উবায়দাহ্ আল মুলায়কী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি ছিলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচর। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে কুরআনের বাহকগণ! কুরআনকে তোমরা বালিশ বানাবে না। বরং তা তোমরা রাতদিন তিলাওয়াত করার মতো তিলাওয়াত করবে। কুরআনকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে সুর করে পড়বে। কুরআনের বিষয়বস্ত্ত সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে পড়বে। তাহলেই তোমরা সফলতা অর্জন করবে। দুনিয়ায় এর প্রতিফল পাবার জন্য তাড়াহুড়া করো না। কারণ আখিরাতে এর উত্তম প্রতিফল রয়েছে। (বায়হাক্বী- শু’আবূল ঈমান)[1]
وَعَنْ عُبَيْدَةَ الْمُلَيْكِيِّ وَكَانَتْ لَهُ صُحْبَةٌ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ لَا تَتَوَسَّدُوا الْقُرْآنَ وَاتْلُوهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ مِنْ آنَاءِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَفْشُوهُ وَتَغَنُّوهُ وَتَدَبَّرُوا مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ وَلَا تَعْجَلُوا ثَوَابَهُ فَإِنَّ لَهُ ثَوَابًا» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: কুরআনকে বালিশ হিসেবে ব্যবহার করা কুরআনের মর্যাদার পরিপন্থী। কুরআনকে বালিশ হিসেবে গ্রহণ করা তার প্রতি অমনোযোগিতা, অলসতা অসম্মানের পরিচয়। কারণ যে ব্যক্তি কুরআনকে বালিশ করে অথবা বালিশের নিচে রেখে ঘুমায় সে যেন কুরআন তিলাওয়াত, হিদায়াত ও এর দ্বারা উপকার সাধন করা থেকে বিমুখ হল। তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের ধারক বাহককে মাথার নিচে কুরআন দিয়ে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন।
কারী বলেছেন, তোমরা কুরআনকে বালিশ করো না। কেননা এরূপ করলে কুরআনের হক আদায়ে তোমরা অলস এবং অমনোযোগী হয়ে পড়বে। বরং কুরআন জেনে, বুঝে, ‘আমল করে, তিলাওয়াত করে এর হক আদায়ে ব্রতি হও। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনকে দিনে রাতে যথাযথভাবে তিলাওয়াত করতে ও এর অনুসরণ করতে বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো নির্দেশ দিয়েছেন যে, কুরআন জানা ব্যক্তিরা যেন কুরআনকে শোনান, শিক্ষা দেয়া, লিখা, ব্যাখ্যা করা, চর্চা করা ও তার প্রতি ‘আমল করার মাধ্যমে প্রচার করে। আর তারা যেন সুন্দর কণ্ঠে তিলাওয়াত করে এবং এর মর্মার্থ অনুধাবন করে পরকালে এর জন্য সাওয়াবের আশা করে। কারণ এর দ্বারা দুনিয়াতে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা যাবে না। পরকালে এর সাওয়াব বিশাল বড়।
أهل القرآن -কে বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো এই যে, কুরআন জানা ব্যক্তির ওপর এর দায়িত্ব বেশি। কারণ অন্যদের তুলনায় তারা কুরআন হক সম্পর্কে বেশি অবগত। তাই তাদের ওপর এটা ওয়াজিব।
অথবা এর দ্বারা মু’মিনগণ উদ্দেশ্য। কেননা তাদের কমপক্ষে অল্প হলেও কুরআন জানা থাকে। অথবা এর দ্বারা কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী উদ্দেশ্য।