পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - নতুন চাঁদ দেখার বর্ণনা

আযহারী বলেনঃ চন্দ্র মাসের প্রথম দু’ দিনের চাঁদকে হিলাল বলে। অনুরূপভাবে ২৬ ও ২৭ তারিখের চাঁদকেও হিলাল বলা হয়।

জাওহারী বলেনঃ মাসের প্রথম তিন রাতের চাঁদকে হিলাল বলা হয়, এর পরের বাকী দিনগুলোর চাঁদকে কমার বলা হয়।


১৯৬৯-[১] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা চাঁদ না দেখা পর্যন্ত সওম (রোযা) পালন করবে না এবং তা না দেখা পর্যন্ত সওম শেষ (ভঙ্গ) করবে না। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় তোমরা যদি চাঁদ না দেখতে পাও তাহলে (শা’বান) মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ করো (অর্থাৎ- এ মাসকে ত্রিশ দিন হিসেবে গণ্য করো)।

অপর বর্ণনায় আছেঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মাস ঊনত্রিশ রাতেও হয়। তাই চাঁদ না দেখা পর্যন্ত সওম পালন করবে না। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ করো। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ رُؤْيَةِ الْهِلَالِ

عَنْ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوُا الْهِلَالَ وَلَا تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدِرُوا لَهُ» . وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: «الشَّهْرُ تِسْعٌ وَعِشْرُونَ لَيْلَةً فَلَا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا الْعِدَّةَ ثَلَاثِينَ»

عن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تصوموا حتى تروا الهلال ولا تفطروا حتى تروه فان غم عليكم فاقدروا له» . وفي رواية قال: «الشهر تسع وعشرون ليلة فلا تصوموا حتى تروه فان غم عليكم فاكملوا العدة ثلاثين»

ব্যাখ্যা: (لَا تَصُوْمُوْا) ‘‘তোমরা সওম পালন করবে না’’ অর্থাৎ- শা‘বান মাসের ঊনত্রিশ তারিখ শেষে ত্রিশ তারিখের রাতে রমাযানের চাঁদ দেখা না গেলে রমাযানের সওম পালন শুরু করবে না।

(حَتّٰى تَرَوُا الْهِلَالَ) ‘‘রমাযানের চাঁদ দেখার আগেই’’ অর্থাৎ- শা‘বান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই রমাযানের চাঁদ না দেখে রমাযানের সিয়াম পালন করবে না। তবে শা‘বান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর রমাযানের চাঁদ দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। হাদীসের প্রকাশমান অর্থ এই যে, সিয়াম পালন করার জন্য প্রত্যেকেরই চাঁদ দেখা শর্ত। কিন্তু এক্ষেত্রে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এই যে, এটা ওয়াজিব নয়। বরং কতক লোকের চাঁদ দেখাই যথেষ্ট। অতএব হাদীসের অর্থ এই যে, তোমাদের নিকট চাঁদ দেখা সাব্যস্ত হলে তোমরা সিয়াম পালন শুরু করবে।

হাদীস থেকে এটাও বুঝা যায় যে, চাঁদ দেখা সাব্যস্ত হওয়ার সময় থেকেই সিয়াম শুরু করতে হবে। কিন্তু ‘আমলে তা উদ্দেশ্য নয়। বরং চাঁদ দেখা সাব্যস্ত হওয়ার পর সিয়াম শুরুর সময় অর্থাৎ- ফজরের সময় থেকে সিয়াম পালন শুরু হবে।

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণ উপস্থাপন করা হয় যে, পৃথিবীর কোন এক অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেলে সকল অঞ্চলের লোকের ওপর সিয়াম পালন করা আবশ্যক। কেননা সিয়াম পালনের জন্য সকলের চাঁদ দেখা শর্ত নয়। অতএব কোন এক অঞ্চলে চাঁদ দেখা সাব্যস্ত হলেই সকল মুসলিমের ওপর সিয়াম পালন আবশ্যক সে যে অঞ্চলেরই হোক না কেন।

এ বিষয়ে ‘উলামাগণের মতভেদ রয়েছে।

১. প্রত্যেক অঞ্চলের লোকদের জন্য পৃথকভাবে চাঁদ দেখা জরুরী। সহীহ মুসলিমে কুরায়ব সূত্রে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস, এ অভিমতের সাক্ষ্য বহন করে। ‘ইকরিমাহ্, কাসিম, সালিম, ইসহাক এবং শাফি‘ঈদের একটি অভিমত এ রকম।

২. কোন এক অঞ্চলে চাঁদ দেখা সাব্যস্ত হলেই সব অঞ্চলের লোকের ওপর সিয়াম পালন করা আবশ্যক। মালিকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত এটিই। ইমাম কুরতুবী বলেনঃ আমাদের শায়খগণ বলেন যে, কোন জায়গায় যদি অকাট্যভাবে চাঁদ দেখা সাব্যস্ত হয়, অতঃপর এ সংবাদ দু’জন সাক্ষীর মাধ্যমে অন্যত্র পৌঁছে যায় যেখানে চাঁদ দেখা যায়নি তাদের বেলায়ও সিয়াম পালন আবশ্যক।

ইবনু মাজিশূন বলেন, যে অঞ্চলের লোকেরা চাঁদ দেখেছে তাদের জন্য তো সিয়াম আবশ্যক, কিন্তু যারা চাঁদ দেখতে পারেনি তাদের অঞ্চলে সাক্ষীর মাধ্যমে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছলেও তাদের জন্য সিয়াম পালন আবশ্যক নয়। তবে যদি ইমামে আ‘যম তথা খলীফার নিকট চাঁদ দেখা সাব্যস্ত হয় তাহলে সকলের জন্যই সিয়াম পালন আবশ্যক। কেননা খলীফার ক্ষেত্রে সকল দেশই একটি বলে গণ্য যেহেতু তাঁর নির্দেশ সকলের জন্যই প্রযোজ্য।

৩. কিছু শাফি‘ঈদের মতে যদি দেশসমূহ পরস্পর নিকটবর্তী হয়, তাহলে এক দেশের চাঁদ দেখা পার্শ্ববর্তী দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে আর দূরবর্তী দেশের জন্য তা প্রযোজ্য নয়।

৪. মুহাক্কিক হানাফী, মালিকী ও অধিকাংশ শাফি‘ঈদের অভিমতে যদি দুই দেশের দূরত্ব এত নিকটবর্তী হয় যে, যাতে উদয়স্থলের কোন ভিন্নতা না থাকে যেমন বাগদাদ ও বাসরা- তাহলে এমন দুই দেশের মধ্যে একদেশে চাঁদ দেখা গেলে তা অন্য দেশের জন্যও প্রযোজ্য হবে। আর যদি দুই দেশের মধ্যে এত দূরত্ব হয় যাতে উদয়স্থলের ভিন্নতা থাকে তাহলে একদেশে চাঁদ দেখা গেলে অন্য দেশের জন্য তা প্রযোজ্য নয়; যেমন- ইরাক ও হিজায। এক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ দেশের জন্য চাঁদ দেখা যাওয়া আবশ্যক। আর উদয়স্থলের ভিন্নতার জন্য কমপক্ষে এক মাসের দূরত্ব হওয়া প্রয়োজন। ইমাম যায়লা‘ঈ কানয-এর ভাষ্য গ্রন্থে বলেন, অধিকাংশ শায়খদের নিকট উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য নয়। তবে তা ধর্তব্যে আনা অধিক যুক্তিযুক্ত। কেননা চাঁদ থেকে সূর্যের আলো পৃথক হওয়া দেশের ভিন্নতার কারণেই ভিন্ন হয়ে থাকে। মুসলিমে বর্ণিত কুরায়ব বর্ণিত হাদীস এর পক্ষে দলীল।

আমি (মুবারকপূরী) বলছিঃ সওম শুরু ও শেষ করার ক্ষেত্রে উদয়স্থলের ভিন্নতাকে গ্রহণ না করে কোন উপায় নেই। কেননা প্রতিদিনের সিয়াম ও সালাতের ক্ষেত্রে তা সকলের ঐকমত্যে তা প্রযোজ্য। প্রতিদিনের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য, মাস শুরু ও শেষ হওয়ার ক্ষেত্রেও তা আবশ্যিকভাবেই প্রযোজ্য। এ থেকে পালাবার কোন জায়গা বা উপায় নেই।

পশ্চিমের কোন দেশের চাঁদ দেখা গেলে পূর্বদেশের কত দূরত্বের জন্য তা প্রযোজ্য এ নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।

১. অধিকাংশ ফুকাহাদের মতে একমাসের দূরত্বের পূর্ব দেশের জন্য তা প্রযোজ্য। যেমনটি পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে।

২. পাঁচশত ষাট মাইল পূর্ব পর্যন্ত তা প্রযোজ্য, কেননা আকাশে চাঁদ দেখা যাওয়ার পর তা যদি বত্রিশ মিনিট স্থায়ী হয়, অর্থাৎ- চাঁদ উদয় হওয়ার বত্রিশ মিনিট পরে যদি তা অস্ত যায় তাহলে চাঁদ দিগন্তে এতটুকু উপরে থাকে যে, তা পাঁচশত ষাট মাইল পূর্বে অবস্থিত এলাকা দেখে তা দেখা যাবে যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন না থাকে। অতএব এটা সাব্যস্ত হল যে, পশ্চিমের কোন দেশে চাঁদ দেখা গেলে তা পাঁচশত ষাট মাইল পূর্বে অবস্থিত দেশের জন্য তা প্রযোজ্য হবে। আর পূর্বে অবস্থিত কোন দেশে চাঁদ দেখা গেলে পশ্চিমে অবস্থিত সকলের জন্য তা প্রযোজ্য হবে।

(وَلَا تُفْطِرُوْا حَتّٰى تَرَوْهُ) আর তা না দেখে সিয়াম ভঙ্গ করো না, অর্থাৎ- শাওয়ালের চাঁদ না দেখে রমাযানের সিয়াম পালন করা পরিত্যাগ করবে না।

(فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ) চাঁদ যদি ঢাকা পরে যায় অর্থাৎ আকাশে মেঘ থাকার কারণে যদি ত্রিশ তারিখের রাতে শাওয়ালের চাঁদ দেখা না যায়। (فَاقْدِرُوْا لَه) তাহলে তা নির্ধারণ করে নাও। অর্থাৎ তাহলে রমাযান (রমজান) মাস ত্রিশ দিন নির্ধারণ কর। অতঃপর চাঁদ দেখা যাক অথবা দেখা না যাক সিয়াম পালন পরিত্যাগ কর।

কেননা চন্দ্রমাস ত্রিশ দিনের বেশী হয় না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - নতুন চাঁদ দেখার বর্ণনা

১৯৭০-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সওম পালন করো চাঁদ দেখে এবং ছাড়ো (ভঙ্গ করো) চাঁদ দেখে। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে শা’বান মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ করো। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ رُؤْيَةِ الْهِلَالِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ فَإِنْ غم عَلَيْكُم فَأَكْمِلُوا عِدَّةَ شَعْبَانَ ثَلَاثِينَ»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «صوموا لرويته وافطروا لرويته فان غم عليكم فاكملوا عدة شعبان ثلاثين»

ব্যাখ্যা: (وَأَفْطِرُوْا لِرُؤْيَتِه) চাঁদ দেখে সিয়াম পরিত্যাগ করবে, অর্থাৎ শাওয়ালের চাঁদ দেখে রমাযানের সিয়াম পরিত্যাগ করবে তথা ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে।

(فَأَكْمِلُوْا عِدَّةَ شَعْبَانَ ثَلَاثِيْنَ) শা‘বান মাসের গণনা ত্রিশ দিন পূর্ণ কর, অর্থাৎ- ত্রিশ তারিখের রাতে যদি রমাযানের চাঁদ দেখা না যায় তাহলে শা‘বান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ করে রমাযানের সিয়াম শুরু করবে তার আগে নয়। এ হুকুম রমাযানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যা পূর্বের হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - নতুন চাঁদ দেখার বর্ণনা

১৯৭১-[৩] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরা উম্মি জাতি। হিসাব-কিতাব জানি না, কোন মাস এত, এত, এত (অর্থাৎ- কোন মাস এভাবে বা এভাবে এভাবে হয়।) তিনি তৃতীয়বারে বৃদ্ধাঙ্গুলি বন্ধ করলেন। তারপর বললেন, মাস এত দিনে, এত দিনে এবং এত দিনে অর্থাৎ- পুরা ত্রিশ দিনে হয়। অর্থাৎ- কখনো মাস ঊনত্রিশ আবার কখনো ত্রিশ দিনে হয়। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ رُؤْيَةِ الْهِلَالِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَا أمة أُميَّة لَا تكْتب وَلَا تحسب الشَّهْرُ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا» . وَعَقَدَ الْإِبْهَامَ فِي الثَّالِثَةِ. ثُمَّ قَالَ: «الشَّهْرُ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا» . يَعْنِي تَمَامَ الثَّلَاثِينَ يَعْنِي مَرَّةً تِسْعًا وَعِشْرِينَ وَمرَّة ثَلَاثِينَ

وعن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «انا امة امية لا تكتب ولا تحسب الشهر هكذا وهكذا وهكذا» . وعقد الابهام في الثالثة. ثم قال: «الشهر هكذا وهكذا وهكذا» . يعني تمام الثلاثين يعني مرة تسعا وعشرين ومرة ثلاثين

ব্যাখ্যা: (نَكْتُبُ وَلَا نَحْسُبُ) ‘‘আমরা লিখতে জানি না এবং হিসাব করতে জানি না’’ অর্থাৎ- আমরা চন্দ্রের গতিপথ সম্পর্কে অবহিত নই, এর হিসাব আমরা জানি না। অতএব সিয়াম পালনে এবং আমাদের অন্যান্য ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে আমরা হিসাব ও লেখার উপর নির্ভর করতে বাধ্য নই। বরং আমাদের ‘ইবাদাত এমন স্পষ্ট আলামতের উপর নির্ভারশীল যাতে হিসাব অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ উভয়েই সমান। অত্র হাদীসে হিসাব দ্বারা উদ্দেশ্য নক্ষত্রের গতিপথ। ‘আরবরা এ হিসাবে অনভিজ্ঞ ছিল। তাই তাদের সওম ও অন্যান্য ‘ইবাদাত পালনের ক্ষেত্রে চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল করা হয়েছে হিসাবের উপর নয়। যাতে তারা এ হিসাবে কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পায়।

(وَعَقَدَ الْإِبْهَامَ فِى الثَّالِثَةِ) ‘‘তৃতীয়বারে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি বৃদ্ধাঙ্গুলি বন্ধ করে রাখলেন।’’ এতে সংখ্যা ঊনত্রিশ হল। অর্থাৎ- তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাতের ইশারায় বুঝালেন যে, চন্দ্র মাস ত্রিশ দিনেও হয় আবার কখনো উনত্রিশ দিনেও হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - নতুন চাঁদ দেখার বর্ণনা

১৯৭২-[৪] আবূ বকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈদের দু’ মাস, রমাযান (রমজান) ও যিলহজ কম হয় না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ رُؤْيَةِ الْهِلَالِ

وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: شَهْرَا عِيدٍ لَا يَنْقُصَانِ: رَمَضَانُ وَذُو الْحِجَّةِ

وعن ابي بكرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: شهرا عيد لا ينقصان: رمضان وذو الحجة

ব্যাখ্যা: (شَهْرَا عِيْدٍ) ‘‘দুই ঈদের মাস’’ অর্থাৎ- রমাযান (রমজান) মাস ও যিলহজ মাস। হাফেয ইবনু হাজার বলেনঃ রমাযান (রমজান) মাসকে ঈদের মাস এজন্য বলা হয়েছে যে, রমাযান (রমজান) উপলক্ষেই ঈদ অনুষ্ঠিত হয়। যদিও তা শাওয়াল মাসে তবুও তা রমাযানের অব্যবহিত পরেই এবং রমাযানের পাশাপাশি।

(لَا يَنْقُصَانِ) ‘‘কম হয় না’’ অর্থাৎ- ঈদের দুই মাস কম না হওয়াতে কি উদ্দেশ্য? তা নিয়ে ‘উলামাগণের মাঝে ভিন্নমত পরিলক্ষিত হয়।

১. এর ফাযীলাত বা মর্যাদার কোন কমতি হয় না যদিও মাস ত্রিশ বা উনত্রিশ দিনে হয়। ইসহাক ইবনু রাহওয়াইহি বলেনঃ যদিও এ দুই মাসে দিনের সংখ্যা কমে উনত্রিশ দিনে হয় তবুও সাওয়াবের ক্ষেত্রে তা ত্রিশ দিনেরই সমান। রমাযান (রমজান) মাস ঊনত্রিশ দিনে হলে এর সাওয়াব ত্রিশ দিনের সাওয়াবের সমান। এর অভিমতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য।

২. এ দুই মাসে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য মাসে নেই। এর অর্থ এ নয় যে, দুই মাসের সাওয়াব কম হয় না বরং অন্য মাসে সাওয়াব কম হয় মাসের দিনের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে।

৩. যদিও দিনের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে বাহ্যিক দৃষ্টিতে তাতে কমতি আছে বলে মনে হয় কিন্তু তা দু’টি মহান ঈদের মাস হওয়ার কারণে তাকে কমতি বলা যায় না যেমন অন্যান্য মাসের বেলায় বলা যায়।

৪. সাধারণত একই বৎসরে এ দুইমাস কম হয় না অর্থাৎ- ঊনত্রিশ দিনে হয় না বরং একমাস ঊনত্রিশ দিনে হলে আরেক মাস ত্রিশ দিনে হবে। যদিও হঠাৎ কোন বৎসরে এ দু’ মাসই ঊনত্রিশ দিনে হয়ে থাকে।

৫. প্রকৃতপক্ষে তো এ দুইমাস একই বৎসরে ঊনত্রিশ দিনে হয় না তবে যদি মাসের শুরুতে আকাশে মেঘ থাকার কারণে চাঁদ দেখা না যেয়ে থাকে তাহলে ভিন্ন কথা।

৬. রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বক্তব্য বিশেষ করে ঐ বৎসরের জন্য প্রযোজ্য, যে বৎসর তিনি এ বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।

৭. প্রতিদানের ক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট এ দুই মাস সমান। মাস ঊনত্রিশ দিনেই হোক আর ত্রিশ দিনেই হোক। আর তা শীতকালে হওয়ার কারণে দিন ছোট হোক কিংবা গরমকালে হওয়ার কারণে দিন বড় হোক, যাই হোক না কেন আল্লাহর নিকট এ মাসে ‘আমলের সাওয়াব একই মর্যাদা সম্পন্ন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - নতুন চাঁদ দেখার বর্ণনা

১৯৭৩-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন রমাযান (রমজান) মাস আসার এক কি দু’দিন আগে থেকে সওম (রোযা) না রাখে। তবে যে ব্যক্তি কোন দিনে সওম রাখতে অভ্যস্ত সে ওসব দিনে সওম রাখতে পারে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ رُؤْيَةِ الْهِلَالِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَتَقَدَّمَنَّ أَحَدُكُمْ رَمَضَانَ بِصَوْمِ يَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ إِلَّا أَنْ يَكُونَ رَجُلٌ كَانَ يَصُوم صوما فليصم ذَلِك الْيَوْم»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يتقدمن احدكم رمضان بصوم يوم او يومين الا ان يكون رجل كان يصوم صوما فليصم ذلك اليوم»

ব্যাখ্যা: (...لَا يَتَقَدَّمَنَّ أَحَدُكُمْ رَمَضَانَ بِصَوْمِ) ‘‘তোমাদের কেউ যেন রমাযানের মাস শুরু হওয়ার এক দিন বা দু’দিন আগেই সিয়াম পালন করে না।’’ অর্থাৎ- রমাযান (রমজান) শুরু হলো কিনা এ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে রমাযান (রমজান) মাসের চাঁদ দেখা না গেলে অথবা শা‘বান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ না হলে রমাযানের সিয়ামের নিয়্যাতে সিয়াম পালন করবে না। হাদীসে (أَوْ يَوْمَيْنِ) অথবা দু’দিন আগের জন্য বলা হয়েছে যে, সন্দেহ দুই দিনের মধ্যেও হতে পারে। পরস্পর দুই-তিন মাস যদি আকাশে মেঘ থাকার কারণে মাসের শুরুতে চাঁদ দেখা না যায় এবং প্রতিটি মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ করে পরবর্তী মাস গণনা করা হয়, তাহলে রমাযান (রমজান) মাস দু’দিন আগে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই সন্দেহ দুই দিনেরও হতে পারে। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সন্দেহের বশবর্তী হয়ে রমাযান (রমজান) শুরু হওয়ার এক বা দুই দিন আগেই রমাযানের সিয়াম শুরু করবে না।

তবে কোন ব্যক্তি যদি রমাযান (রমজান) শুরু হওয়ার আগের দিনে নিয়মিত কোন সিয়াম পালন করার অভ্যাস থাকে এবং সেই নিয়্যাতে সিয়াম পালন করে তবে তার জন্য তা বৈধ। যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বৃহস্পতিবার এবং সোমবার সিয়াম পালন করতেন। কোন ব্যক্তি নিয়মিত এ দুই দিন সিয়াম পালন করে থাকেন এবার এমন হল যে, আকাশে মেঘ থাকার কারণে চাঁদ দেখা না যাওয়ায় সোমবার ত্রিশে শা‘বান হওয়ার সম্ভাবনা যে রকম এ রকম ১লা রমাযান (রমজান) হওয়ার সম্ভাবনাও বিদ্যমান। এখন ঐ ব্যক্তি এই সোমবার যদি রমাযানের সিয়াম পালনের নিয়্যাত না করে তার অভ্যাসগত নিয়মিত সিয়াম পালনের নিয়্যাতে সিয়াম পালন করে তবে তা বৈধ।

হাদীসের শিক্ষাঃ রমাযান (রমজান) শুরু হওয়ার একদিন বা দু’দিন পূর্বে সিয়াম পালন করা হারাম। এ নিষেধাজ্ঞার কারণ কি তা নিয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে।

১. রমাযানের মধ্যে ঐ সিয়াম বৃদ্ধি করার আশংকা যা মূলত রমাযানের সিয়াম নয়।

২. রমাযানের সিয়াম পালনের জন্য শক্তি অর্জন। কেননা পূর্ব থেকেই ধারাবাহিকভাবে সিয়াম পালন করার ফলে ফরয সিয়াম পালনে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

৩. ফরয ও নফল সিয়ামের মধ্যে সংমিশ্রণের আশংকা।

৪. আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশের উপর বাড়াবাড়ি করা। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান (রমজান) শুরু করার জন্য চাঁদ দেখা শর্ত করেছেন। যিনি চাঁদ না দেখেই রমাযানের সিয়াম শুরু করলেন তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ নির্দেশ অমান্য করলেন এবং তা যথেষ্ট মনে করলেন না। তাই তিনি যেন এ নির্দেশের উপর দোষারোপ করলেন। হাফেয ইবনু হাজার বলেন, সর্বশেষ এ অভিমতটিই গ্রহণযোগ্য।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم) 7. Fasting
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে