পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৯৬২-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের জন্য রমাযানের বারাকাতময় মাস এসেছে। এ মাসে সওম রাখা আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করে দিয়েছেন। এ মাসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের সব দরজা। এ মাসে বিদ্রোহী শয়তানগুলোকে কয়েদ করা হয়। এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো; সে অবশ্য অবশ্যই প্রত্যেক কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত রইল। (আহমদ ও নাসায়ী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فَرَضَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ لِلَّهِ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالنَّسَائِيُّ
ব্যাখ্যা: (لَيْلَةٌ خَيْرٌ) ‘‘একটি রাত এমন যা হাজার মাস থেকেও উত্তম’’। (مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ) অর্থাৎ- এ রাতের ‘ইবাদাত হাজার মাসের ‘ইবাদাতের চাইতেও অধিক মর্যাদাবান।
(فَقَدْ حُرِمَ) প্রকৃতই সে বঞ্চিত হল অর্থাৎ- সে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। এ থেকে উদ্দেশ্য পূর্ণ সাওয়াব অর্জন থেকে বঞ্চিত হল অথবা এমন ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হল যে ক্ষমা শুধু তাদের জন্য যারা এ রাত জেগে ‘ইবাদাতে মশগুল থাকে।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৯৬৩-[৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য শাফা’আত করবে। সিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মিটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফা’আত কবূল করো। কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে। (বায়হাক্বী; শু’আবূল ’ঈমান)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَقُولُ الصِّيَامُ: أَيْ رَبِّ إِنِّي مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ: مَنَعْتُهُ النُّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ فيشفعان . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: (الصِّيَامُ وَالْقُرْاٰنُ يَشْفَعَانِ) ‘‘সিয়াম ও কুরআন উভয়ই সুপারিশ করবে।’’‘ আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এখানে কুরআন দ্বারা রাতের সালাতের কিরাআত উদ্দেশ্য। পরবর্তী বক্তব্যে এ ইঙ্গিতই রয়েছে। বলা হয়েছে (يَقُولُ الْقُرْاٰنُ : مَنَعْتُهُ النُّوْمَ بِاللَّيْلِ) কুরআন বলবেঃ রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। অর্থাৎ- ‘‘কুরআন বলবে’’ সে রাত জেগে তাহাজ্জুদের সালাতে কুরআন তিলাওয়াত করেছে। এখানে এ সম্ভাবনা রয়েছে যে, কিয়ামাত দিবসে সিয়াম ও কুরআন উভয়কে শারীরিক রূপ দেয়া হবে। এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, মালাক (ফেরেশতা) প্রেরণ করা হবে যারা উভয়ের পক্ষ হয়ে কথা বলবে।
(فَيُشَفَّعَانِ) অতঃপর তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। ফলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। মুল্লা ‘আলী কারী বলেন, হয়ত বা রমাযানের সুপারিশ হবে গুনাহ ক্ষমা করার জন্য এবং কুরআনের সুপারিশ হবে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৯৬৪-[৯] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রমাযান (রমজান) মাস এলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রমাযান (রমজান) মাস তোমাদের মাঝে উপস্থিত। এ মাসে রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের (কল্যাণ হতে) বঞ্চিত রয়েছে; সে এর সকল কল্যাণ হতেই বঞ্চিত। শুধু হতভাগ্যরাই এ রাতের কল্যাণ লাভ হতে বঞ্চিত থাকে। (ইবনু মাজাহ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: دَخَلَ رَمَضَانُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ هَذَا الشَّهْرَ قَدْ حَضَرَكُمْ وَفِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مَنْ أَلْفِ شَهْرٍ مَنْ حُرِمَهَا فَقَدْ حُرِمَ الْخَيْرَ كُلَّهُ وَلَا يُحْرَمُ خَيْرَهَا إِلَّا كل محروم» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (إِنَّ هٰذَا الشَّهْرَ قَدْ حَضَرَكُمْ) ‘‘এ (রমাযান (রমজান)) মাস তোমাদের নিকট উপস্থিত হয়েছে।’’ অতএব দিনে সিয়াম পালন করে এবং রাতে কিয়ামুল লায়ল তথা রাত জেগে সালাত আদায় করে এ মাস উপস্থিতিকে স্বার্থক করে নাও।
(لَا يُحْرَمُ خَيْرَهَا إِلَّا كُلُّ مَحْرُوْمٍ) ‘‘একমাত্র বঞ্চিতরাই এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়’’। অর্থাৎ- সৌভাগ্যের মধ্যে যার কোন অংশ নেই এবং ‘ইবাদাতের মধ্যে যার কোন উৎসাহ নেই একমাত্র সে ব্যক্তিই এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৯৬৫-[১০] সালমান আল ফারিসী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, শা’বান মাসের শেষ দিনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, হে লোক সকল! একটি মহিমান্বিত মাস তোমাদেরকে ছায়া হয়ে ঘিরে ধরেছে। এ মাস একটি বারাকাতময় মাস। এটি এমন এক মাস, যার মধ্যে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ এ মাসের সিয়াম ফরয করেছেন আর নফল করে দিয়েছেন এ মাসে রাতের কিয়ামকে। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল কাজ করবে, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরয আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরয আদায় করেন, সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরয সম্পাদন করল। এ মাস সবরের (ধৈর্যের) মাস; সবরের সাওয়াব জান্নাত। এ মাস সহমর্মিতার। এ এমন এক মাস যাতে মু’মিনের রিযক বৃদ্ধি করা হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোন সায়িমকে ইফতার করাবে, এ ইফতার তার গুনাহ মাফের কারণ হবে, হবে জাহান্নামের অগ্নিমুক্তির উপায়। তার সাওয়াব হবে সায়িমের অনুরূপ। অথচ সায়িমের সাওয়াব একটুও কমানো হবে না।
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের সকলে তো সায়িমের ইফতারীর আয়োজন করতে সমর্থ নয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সাওয়াব আল্লাহ তা’আলা ঐ ইফতার পরিবেশনকারীকেও প্রদান করেন, যে একজন সায়িমকে এক চুমুক দুধ, একটি খেজুর অথবা এক চুমুক পানি দিয়ে ইফতার করায়। আর যে ব্যক্তি একজন সায়িমকে পেট ভরে খাইয়ে পরিতৃপ্ত করল, আল্লাহ তা’আলা তাকে আমার হাওযে কাওসার থেকে এভাবে পানি খাইয়ে পরিতৃপ্ত করবেন, যার পর সে জান্নাতে (প্রবেশ করার পূর্বে) আর পিপাসার্ত হবে না। এমনকি সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এটা এমন এক মাস যার প্রথম অংশে রহমত। মধ্য অংশে মাগফিরাত, শেষাংশে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত। যে ব্যক্তি এ মাসে তার অধিনস্তদের ভার-বোঝা সহজ করে দেবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن سلمَان قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي آخِرِ يَوْمٍ مِنْ شَعْبَانَ فَقَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ أَظَلَّكُمْ شَهْرٌ عَظِيمٌ مُبَارَكٌ شَهْرٌ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مَنْ أَلْفِ شهر جعل الله تَعَالَى صِيَامَهُ فَرِيضَةً وَقِيَامَ لَيْلِهِ تَطَوُّعًا مَنْ تَقَرَّبَ فِيهِ بخصلة من الْخَيْرِ كَانَ كَمَنْ أَدَّى فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ وَمَنْ أَدَّى فَرِيضَةً فِيهِ كَانَ كَمَنْ أَدَّى سَبْعِينَ فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ وَالصَّبْر ثَوَابه الْجنَّة وَشهر الْمُوَاسَاة وَشهر يزْدَاد فِيهِ رِزْقُ الْمُؤْمِنِ مَنْ فَطَّرَ فِيهِ صَائِمًا كَانَ لَهُ مَغْفِرَةً لِذُنُوبِهِ وَعِتْقَ رَقَبَتِهِ مِنَ النَّارِ وَكَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَجْرِهِ شَيْءٌ» قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ لَيْسَ كلنا يجد مَا نُفَطِّرُ بِهِ الصَّائِمَ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُعْطِي اللَّهُ هَذَا الثَّوَابَ مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا عَلَى مَذْقَةِ لَبَنٍ أَوْ تَمْرَةٍ أَوْ شَرْبَةٍ مِنْ مَاءٍ وَمَنْ أَشْبَعَ صَائِمًا سَقَاهُ اللَّهُ مِنْ حَوْضِي شَرْبَةً لَا يَظْمَأُ حَتَّى يَدْخُلَ الْجَنَّةَ وَهُوَ شَهْرٌ أَوَّلُهُ رَحْمَةٌ وَأَوْسَطُهُ مَغْفِرَةٌ وَآخِرُهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ وَمَنْ خَفَّفَ عَنْ مَمْلُوكِهِ فِيهِ غَفَرَ الله لَهُ وَأعْتقهُ من النَّار» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ
ব্যাখ্যা: (خَطَبَنَا رَسُوْلُ اللّٰهِ) ‘‘আমাদের উদ্দেশে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিলেন’’ এ খুতবা জুমার খুতবা হতে পারে অথবা সাধারণ নাসীহাতের খুতবাহ্ হতে পারে। (قَدْ أَظَلَّكُمْ) ‘‘তোমাদেরকে ছায়া দিয়েছে’’। অর্থাৎ- তোমাদের নিকট আগমন করেছে এবং তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছে যেন তা তোমাদের ওপর ছায়া ফেলে। (شَهْرٌ عَظِيمٌ) একটি মহান মাস, অর্থাৎ- তার মর্যাদা মহান। কেননা তা সকল মাসের সরদার তথা সেরা মাস। (وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ) ‘‘তা সবরের মাস’’। কেননা এর সিয়াম পালন হয় দিনের বেলায় পানাহার থেকে সবর করার (বিরত থাকার) মাধ্যমে আর এর রাতের কিয়াম করা হয় রাত জাগার সব্রের মাধ্যমে। এজন্যই সওমকে সবর বলা হয়েছে।
(الصَّبْر ثَوَابُهُ الْجنَّةُ) ‘‘সবরের প্রতিদান হল জান্নাত’’ আল্লাহর আদিষ্ট কাজ পালনের এবং নিষিদ্ধ কাজ বর্জনের ধৈর্যের প্রতিদান হল জান্নাত। (شَهْرُ الْمُؤَاسَاةِ) ‘‘সহমর্মিতার মাস’’ অর্থাৎ- জীবিকাতে পরস্পরে অংশ গ্রহণ ও ভাগীদার হওয়ার মাস। এতে সকল মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শনদানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে বিশেষভাবে দরিদ্র্ ও প্রতিবেশীর প্রতি দয়া প্রদর্শনের জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
(مَنْ فَطَّرَ فِيهِ صَائِمًا) ‘‘যে ব্যক্তি এ মাসে সিয়াম পালন কারীকে ইফতার করালো’’ অর্থাৎ- ইফতারের সময় কিছু খাওয়ালো বা পান করালো হালাল উপার্জনের দ্বারা।
(مَذْقَةِ لَبَنٍ) পানি মিশ্রিত দুধ, অর্থাৎ- সাধ্যানুযায়ী কোন কিছু দ্বারা সায়িমকে ইফতার করতে সহযোগিতা করলে সে ব্যক্তি এ সাওয়াব অর্জন করবে। আর তৃপ্ত সহকারে খাওয়ালে ও পান করালে তার জন্য আরো বড় পুরস্কার তথা হাওযে কাওসার থেকে পানিয় পান করার সৌভাগ্য অর্জন করবে।
(مَنْ خَفَّفَ عَنْ مَمْلُوكِه فِيْهِ) যে ব্যক্তি এ মাসে তার দাসের কাজ হালকা করে দিবে, অর্থাৎ- রমাযান (রমজান) মাসে দাসের প্রতি দয়া পরশ হয়ে এবং রমাযানের সিয়াম পালন সহজকরণার্থে দাসের কাজ কমিয়ে দিবে। (غَفَرَ اللهُ لَه) আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। অর্থাৎ- ইতোপূর্বে সে যে গুনাহ করেছে তা তিনি ক্ষমা করে দিবেন।
(وَأعْتَقَه مِنَ النَّارِ) ‘‘এবং জাহান্নাম থেকে তাকে মুক্তি দিবেন’’ অর্থাৎ- কাজের কঠোরতা থেকে দাসকে মুক্তি দেয়ার প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ তাকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি দিবেন।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৯৬৬-[১১] ইবনু ’আব্বাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রমাযান (রমজান) মাস শুরু হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক বন্দীকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক সাহায্যপ্রার্থীকে দান করতেন।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ أَطْلَقَ كُلَّ أَسِيرٍ وَأَعْطَى كُلَّ سَائِلٍ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ
ব্যাখ্যা: (أَطْلَقَ كُلَّ أَسِيرٍ) ‘‘সকল বন্দী মুক্ত করে দিতেন।’’ যদি প্রশ্ন করা হয় যে, কিভাবে সকল বন্দী মুক্ত করে দিতেন? অথচ কোন বন্দীর নিকট কারো অধিকার তথা প্রাপ্য থাকতে পারে।
জওয়াবঃ এখানে বন্দী থেকে উদ্দেশ্য সেই সমস্ত বন্দী যাদেরকে যুদ্ধের ময়দান থেকে বন্দী করে আনা হয়েছে। আর এদেরকে বন্দী করে রাখা বা মুক্তি করে দেয়া, অথবা মুক্তিপণ নেয়া বা গোলাম করে রাখা- এ সকল বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইচ্ছাধীন। আর তাদের মধ্যে এমন কেউ ছিল না যাদের ওপর কারো কোন অধিকার বা পাওনা ছিল। আর পাওনা থেকে থাকলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাওনাদারকে রাযী করিয়ে বন্দী মুক্ত করে দিতেন।
(وَأَعْطٰى كُلَّ سَائِلٍ) ‘‘প্রত্যেক সওয়ালকারীকে দান করতেন।’’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনিতে কোন সওয়ালকারীকে বঞ্চিত করতেন না। বিশেষ করে রমাযান (রমজান) মাসে তার সাধারণ অভ্যাসের চেয়েও অধিক দান করতেন।
হাদীসের শিক্ষাঃ
১. রমাযান (রমজান) মাসে দাসমুক্ত করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
২. এ মাসে দরিদ্রদের প্রতি বিশেষ দানের মাধ্যমে তাদের জীবনে স্বচ্ছলতা আনয়নের প্রচেষ্টা করা।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৯৬৭-[১২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমাযানকে স্বাগত জানাবার জন্য বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জান্নাতকে সাজানো হতে থাকে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, বস্তুত যখন রমাযানের প্রথম দিন শুরু হয়, ’আরশের নীচে জান্নাতের গাছপালার পাতাগুলো হতে ’’হূরিল ’ঈন’’-এর মাথার উপর বাতাস বইতে শুরু করে। তারপর হূরিল ’ঈন বলতে থাকে, হে আমাদের রব! তোমার বান্দাদেরকে আমাদের স্বামী বানিয়ে দাও। তাদের সাহচর্যে আমাদের আঁখি যুগল ঠাণ্ডা হোক আর তাদের চোখ আমাদের সাহচর্যে শীতল হোক। (উপরোক্ত তিনটি হাদীস ইমাম বায়হাক্বী তাঁর ’’শু’আবূল ঈমান’’-এ বর্ণনা করেছেন)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْجَنَّةَ تُزَخْرَفُ لِرَمَضَانَ مِنْ رَأْسِ الْحَوْلِ إِلَى حَوْلِ قَابِلٍ» . قَالَ: فَإِذَا كَانَ أَوَّلُ يَوْمٍ مِنْ رَمَضَانَ هَبَّتْ رِيحٌ تَحْتَ الْعَرْشِ مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ عَلَى الْحُورِ الْعِينِ فَيَقُلْنَ: يَا رَبِّ اجْعَلْ لَنَا مِنْ عِبَادِكَ أَزْوَاجًا تَقَرَّ بِهِمْ أَعْيُنُنَا وَتَقَرَّ أَعْيُنُهُمْ بِنَا . رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَحَادِيثَ الثَّلَاثَةَ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
ব্যাখ্যা: (إِنَّ الْجَنَّةَ تُزَخْرَفُ لِرَمَضَانَ) ‘‘রমাযান (রমজান) উপলক্ষে জান্নাতকে সজ্জিত করা হয়’’ অর্থাৎ- রমাযান (রমজান) মাস আগমন উপলক্ষে জান্নাত সজ্জিত করা হয়।
ইবনু হাজার বলেনঃ সম্ভবতঃ এখানে বৎসরের শুরু হতে শাওয়াল মাস উদ্দেশ্য। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) (ফেরেশতাগণ) শাওয়াল মাসের শুরু থেকে প্রথম রমাযান (রমজান) আগমন পর্যন্ত জান্নাত সজ্জিত করতে থাকে।
অতঃপর জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় যাতে অন্যান্য মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) তা অবলোকন করতে পারে যা ইতোপূর্বে অবলোকন করেনি। (تَحْتَ الْعَرْشِ) ‘আরশের নীচে। অর্থাৎ- জান্নাতের মধ্যে বায়ু প্রবাহিত হয়। কেননা জান্নাতের ছাদ হলো মহান আল্লাহর ‘আরশ।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৯৬৮-[১৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ তাঁর উম্মাতকে রমাযান (রমজান) মাসের শেষ রাতে মাফ করে দেয়া হয়। নিবেদন করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! সেটা কি লায়লাতুল কদরের রাত? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। বরং ’আমলকারী যখন নিজের ’আমল শেষ করে তখনই তার বিনিময় তাকে মিটিয়ে দেয়া হয়। (আহমদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «يُغْفَرُ لِأُمَّتِهِ فِي آخِرِ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ» . قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَهِيَ لَيْلَةُ الْقَدْرِ؟ قَالَ: «لَا وَلَكِنَّ الْعَامِلَ إِنَّمَا يُوَفَّى أجره إِذا قضى عمله» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: (يُغْفَرُ لِأُمَّتِه) তাঁর উম্মাতদেরকে ক্ষমা করা হয়। অর্থাৎ- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাতদের মধ্যে থেকে সমস্ত সিয়াম পালনকারীকে রমাযানের শেষ রাতে ক্ষমা করা হয়। এ ক্ষমা থেকে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমা উদ্দেশ্য।
(قَالَ: لَا) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না। অর্থাৎ- এ ক্ষমা লায়লাতুল কদরের কারণে নয়। বরং এর কারণ এই যে, তা রমাযানের শেষ রাত। আর ‘আমলকারীকে ‘আমল সম্পাদন করার পরেই তার প্রাপ্য দেয়া হয়। ফলে সিয়াম সম্পাদনকারীকে তার কাজ শেষে তার প্রাপ্য পুরস্কার ক্ষমা প্রদান করা হয়।