পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত্যু কামনা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা
(باب تمنى الموت) মৃত্যু কামনা তথা তার কামনা বা আকাঙ্ক্ষার হুকুম (وذكره) ও তার স্মরণ তথা মৃত্যুর স্মরণের ফাযীলাত।
১৫৯৮-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারণ সে নেক্কার হলে আরো বেশী নেক কাজ করার সুযোগ পাবে। আর বদকার হলে, (সে তওবা্ করে) আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি হাসিল করার সুযোগ পাবে। (বুখারী)[1]
بَابُ تَمَنِّي الْمَوْتِ وَذِكْرِه
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَتَمَنَّى أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ إِمَّا مُحْسِنًا فَلَعَلَّهُ أَنْ يَزْدَادَ خَيْرًا وَإِمَّا مُسِيئًا فَلَعَلَّهُ أَنْ يستعتب» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: সিন্দী বলেন, মৃত্যু কামনাকারী দু’শ্রেণী হতে মুক্ত হতে পারে না। কামনাকারী নেককার বা বদকার কামনাকারী নেককার হলে তার জন্য বৈধ হবে না মৃত্যু কামনা করা। কেননা জীবিত অবস্থায় অধিক নেকী অর্জন করতে পারবে অপরদিকে বদকার বা পাপী হলে তার জন্যও মৃত্যু কামনা করা বৈধ না। কেননা সম্ভবত সে তাওবাহ্ করে পাপকাজ থেকে বিরত হয়ে আল্লাহর সন্তোষ লাভ অর্জনে সক্ষম হবে।
হাফিয ইবনে হাজার বলেন, হাদীসে মৃত্যু কামনা হতে বিরত থাকার ইঙ্গিত বহন করে যে মৃত্যুর মাধ্যমে ‘আমলের দরজা বিচ্ছিন্ন বা বন্ধ হয়ে যায় আর জীবিত অবস্থা হল ‘আমল করার মাধ্যম। সুতরাং ‘আমলের মাধ্যমে অধিক সাওয়াব অর্জন করবে। যদি সে আল্লাহর একত্ববাদের উপর অবিচল থাকে আর এটা সর্বোত্তম ‘আমল।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত্যু কামনা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা
১৫৯৯-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে আর তা আসার পূর্বে তাকে যেন আহবান না জানায়, কারণ সে যখন মৃত্যুবরণ করবে তার ’আমল বন্ধ হয়ে যাবে। আর মু’মিনের হায়াত বাড়লে তার ভাল কাজই বৃদ্ধি পায়। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَمَنِّي الْمَوْتِ وَذِكْرِه
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَتَمَنَّى أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ وَلَا يَدْعُ بِهِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَهُ إِنَّهُ إِذَا مَاتَ انْقَطَعَ أَمَلُهُ وَإِنَّهُ لَا يَزِيدُ الْمُؤْمِنَ عُمْرُهُ إِلَّا خيرا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (وَلَا يَدْعُ بِه) মৃত্যুর আহবান যেন না করে। হাফিয ইবনে হাজার বলেন, মৃত্যুর আহবান বা দু‘আ মৃত্যুর কামনার চেয়ে খাস।
(مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَه) মৃত্যু আসার পূর্বে হাফিয ইবনে হাজার বলেন, মূলত তাৎপর্যটি এরূপ যে, মৃত্যু অবধারিত হলে আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাতের সন্তুষ্টির কামনা করা নিষেধ করে না আর না মৃত্যু চাওয়া আল্লাহর নিকট আর এ বিষয়ে ইমাম বুখারী হাদীস সাজিয়েছেন- আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসের পরে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস।
(اَللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِيْ وَأَلْحِقْنِيْ بِالرَّفِيْقِ الْأَعْلى) হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর এবং দয়া কর আর সর্বোচচ বন্ধুর সাথে মিলিত কর, সুতরাং এটা ইঙ্গিত করে যে, মৃত্যু কামনা নিষেধাজ্ঞা হল মৃত্যু আসার পূর্বে।
(لَا يَزِيدُ الْمُؤْمِنَ عُمْرُه إِلَّا خيرا) মু’মিনের বয়স বা জীবন শুধুমাত্র কল্যাণ ও নেকীই বৃদ্ধি করে বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ, আল্লাহর নি‘আমাতসমূহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তার ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহর আদেশসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে। হাফিয ইবনে হাজার বলেন, প্রশ্ন উঠে কখনো কখনো খারাপ ‘আমল করে ফলে জীবনে বদ ‘আমলই বৃদ্ধি পায়। জবাবে বলা হয় মু’মিন দ্বারা কামিল মু’মিন উদ্দেশ্য অথব মু’মিন ব্যক্তি ‘আমল করার মাধ্যমে জীবনের সকল গুনাহ মিটিয়ে নেয় বা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ হতে বিরত থাকে আর অপরদিকে ভাল ‘আমলের দ্বারা খারাপ ‘আমল মিটিয়ে সাওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করে আর যতক্ষণ ঈমান অবশিষ্ট থাকে এর দ্বারা আনুপাতিক হারে সাওয়াব বাড়তে থাকে এবং পাপ কমতে থাকে বা মিটতে থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত্যু কামনা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা
১৬০০-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কোন দুঃখ-কষ্টের কারণে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা না করে। যদি এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা করতেই হয় তাহলে যেন সে বলে,
’’আল্ল-হুম্মা আহয়িনী মা- কা-নাতিল হায়া-তু খায়রাল লী ওয়াতা ওয়াফ্ফানী ইযা- কা-নাতিল ওয়াফা-তু খায়রাল লী’’
(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার জীবন আমার জন্য যতক্ষণ কল্যাণকর হয়, আমাকে বাঁচিয়ে রেখ। আর আমাকে মৃত্যুদান করো যদি মৃত্যুই আমার জন্য কল্যাণকর হয়।) (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ تَمَنِّي الْمَوْتِ وَذِكْرِه
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ مِنْ ضُرٍّ أَصَابَهُ فَإِنْ كَانَ لابد فَاعِلًا فَلْيَقُلِ: اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لي
ব্যাখ্যা: হাফিয ইবনে হাজার বলেন, সালফে সালিহীনদের মতে মৃত্যু কামনার নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র দুনিয়ার মুসীবাতের উপর প্রযোজ্য তবে যদি দীনের মধ্যে ফিৎনার আশংকা থাকে তাহলে মৃত্যু কামনা বৈধ। যেমনটি ইবনু হিব্বান-এর বর্ণনা (لَا يَتَمَنَّيْنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ لِضُرِّ نَزَلَ بِه فِى الدُّنْيَا) তোমাদের মধ্যে কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে দুনিয়ার মুসীবাতের কারণে।
এটা প্রামাণ করে দুনিয়ার মুসীবাতের কারণ। অনুরূপ ‘উমার (রাঃ) বিন খাত্ত্বাব (রাঃ)ও করেছেন যেমনটি মুয়াত্ত্বা মালিকে এসেছে, (اَللّهُمَّ كَبُرَتَ سِنِّيْ وَضَعُفَتْ قُوِّتِىْ وَانَتَشَرَتْ رَعِيْتِيْ فَاقْبِضْنِيْ إِلَيْكَ غَيْرَ مُضِيْعٍ وَلَا مُفْرِطٍ) ‘উমার (রাঃ) দু‘আ করতেন, হে আল্লাহ! আমার বয়স বেড়েছে শক্তি কমেছে এবং আমার অধিনস্থ প্রজাগণও বেড়েছে আমাকে তোমার নিকট উঠিয়ে নাও কোন প্রকার ক্ষতি সাধন ও সীমালঙ্ঘন ছাড়াই।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত্যু কামনা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা
১৬০১-[৪] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্য পছন্দ করে, আল্লাহও তার সান্নিধ্য পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্য অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সান্নিধ্য অপছন্দ করেন। (এ কথা শুনে) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) অথবা তাঁর স্ত্রীদের কেউ জিজ্ঞেস করলেন, আমরাতো মৃত্যুকে অপছন্দ করি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ব্যাপারটি তা নয়। বরং এর অর্থ হলো, যখন মু’মিনের মৃত্যু আসে তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সুসংবাদ দেয়া হয়। তখন সামনে তার এসব মর্যাদা হতে বেশী পছন্দনীয় জিনিস আর কিছু থাকে না। তাই সে আল্লাহর সান্নিধ্য পছন্দ করে। আল্লাহও তার সান্নিধ্য পছন্দ করেন। আর কাফির ব্যক্তির মৃত্যু হাযির হলে, তাকে আল্লাহর ’আযাব ও তার পরিণতির ’খোশ খবর’ দেয়া হয়। তখন এ কাফির ব্যক্তির সামনে এসব খোশ খবরের চেয়ে বেশী অপছন্দনীয় জিনিস আর কিছু থাকে না। তাই সে যেমন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকে অপছন্দ করে আল্লাহ তা’আলাও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ تَمَنِّي الْمَوْتِ وَذِكْرِه
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللَّهِ أَحَبَّ اللَّهُ لِقَاءَهُ وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللَّهِ كَرِهَ اللَّهُ لِقَاءَهُ» فَقَالَتْ عَائِشَةُ أَوْ بَعْضُ أَزْوَاجِهِ: إِنَّا لَنَكْرَهُ الْمَوْتَ قَالَ: «لَيْسَ ذَلِكَ وَلَكِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا حَضَرَهُ الْمَوْتُ بُشِّرَ بِرِضْوَانِ اللَّهِ وَكَرَامَتِهِ فَلَيْسَ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا أَمَامَهُ فَأَحَبَّ لِقَاءَ اللَّهِ وَأَحَبَّ اللَّهُ لِقَاءَهُ وَإِنَّ الْكَافِرَ إِذَا حضر بشر بِعَذَاب الله وعقوبته فَلَيْسَ شَيْء أكره إِلَيْهِ مِمَّا أَمَامَهُ فَكَرِهَ لِقَاءَ اللَّهِ وَكَرِهَ الله لقاءه»
ব্যাখ্যা: (مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللّهِ) তথা যে ভালোবাসে আল্লাহর সাক্ষাত লাভকে তথা আখিরাতের দিকে প্রত্যাবর্তনের অর্থাৎ মু’মিন ব্যক্তিকে মৃত্যুর গারগরের সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির সুসংবাদ প্রদান করা হয়, ফলে তার মৃত্যুটা জীবনের চেয়ে প্রিয় হয়ে উঠে।
খাত্ত্বাবী বলেন, বান্দার আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের ভালোবাসার অর্থ হল দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতকে প্রাধান্য দেয়া আর দুনিয়াতে অবিরামভাবে প্রতষ্ঠিত থাকাকে অপছন্দ করা বরং তা হতে সফরের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা। আর অপছন্দ হল এর বিপরীত।
(لِقَاءَ اللّهِ) দ্বারা উদ্দেশ্য (১) পুনরুত্থান। যেমন, আল্লাহর বাণীঃ قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِلِقَاءِ اللّهِ ‘‘নিশ্চয়ই তারা ধ্বংস হয়ে যারা পুনরুত্থানকে মিথ্যা বলেছে।’’ (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬ : ৩১)
(২) মৃত্যু। مَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ اللَّهِ فَإِنَّ أَجَلَ اللَّهِ لَآتٍ ‘‘যারা আল্লাহর সাক্ষাত লাভের কামনা করে সে আল্লাহর নির্ধারিত মৃত্যু অবধারিত।’’ (সূরাহ্ আল ‘আনকাবূত ২৯ : ৫)
(৩) জাযারী নিহায়াতে এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন অবিনশ্বর আখিরাতের দিকে ধাবিত হওয়া আর কামনা করা আল্লাহর নিকট যা আছে এবং দুনিয়াতে দীর্ঘ অবস্থান না থাকা ও দুনিয়ার জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি না থাকা।
(إِنَّا لَنَكْرَهُ الْمَوْتَ) আমরা তো মৃত্যুকে না পছন্দই করি। সা‘দ বিন হিশাম-এর বর্ণনায়
فَقُلْتُ يَا نَبِيَ اللهِ أَكَرَاهِيَّةُ الْمَوْتِ فَكُلُّنَا يَكْرَهُ الْمَوْتَ أَيْ بِحَسْبِ الْطَبَعِ وَخَوْفًا مِمَّا بَعْدَه.
আমি বললাম, হে আল্লাহর নাবী! মৃত্যুর অপছন্দ তো আমরা সবাই করি অর্থাৎ মৃত্যুর পরের অবস্থার ভয়ে।
(لَيْسَ ذلِكَ) তথা বিষয়টি এমন না যেমনটি ধারণা করছ, হে ‘আয়িশাহ্! বরং মু’মিনের মৃত্যুর অপছন্দ মৃত্যুর কঠিনতর ভয়ের জন্য আল্লাহর সাক্ষাতের অপছন্দ নয় বরং অপছন্দটি হল মৃত্যুর অপছন্দ দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের জীবনের উপর প্রাধান্য দেয়া যখন মৃত্যুর উপস্থিতির সময় আল্লাহর শাস্তির সুসংবাদ দেয়া হয়।
হাদীসের শিক্ষাসমূহঃ
* মরণাপন্ন ব্যক্তি যখন তার ওপর আনন্দের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ পায় এটা দলীল যে তাকে কল্যাণের সুসংবাদ দেয়া হয়। অনুরূপ এর বিপরীত।
* আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের ভালোবাসা মৃত্যু কামনা করার নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় না। কেননা মৃত্যু কামনা করার নিষেধাজ্ঞা বিশেষ পরিস্থিতির সাথে সংশ্লিষ্ট। বরং মরণোম্মুখ সময় মৃত্যু কামনা করা মুস্তাহাব।
* সুস্থ থাকাবস্থায় মৃত্যুকে অপছন্দ করা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ, যে ব্যক্তি মৃত্যুকে অপছন্দ করে দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য আখিরাতের অফুরন্ত নি‘আমাতের উপর সে তিরস্কৃত বা নিন্দনীয়। আর যে এই ভয়ে মৃত্যুকে অপছন্দ করে যে ‘আমল কমতি হওয়ার কারণে শাস্তি পাওয়ার আশংকা রয়েছে আর সকল দায় দায়িত্ব থেকে মুক্তি হতে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে পারেনি এবং যে আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করবে যা ওয়াজিব এ ব্যক্তির জন্য মৃত্যুকে অপছন্দ করা বৈধ। তবে যে ব্যক্তি ভাল ‘আমলের প্রস্ত্ততির দিকে দ্রুত ধাবিত হবে এমনকি যখন মৃত্যু এসে উপস্থিত হবে তখন মৃত্যুকে অপছন্দ করবে না বরং আল্লাহর সাক্ষাত লাভের কামনা করবে।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত্যু কামনা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা
১৬০২-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে, ’’মৃত্যু হলো আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাতের অগ্রবর্তী।’’[1]
بَابُ تَمَنِّي الْمَوْتِ وَذِكْرِه
وَفِي رِوَايَةِ عَائِشَةَ: «وَالْمَوْتَ قَبْلَ لِقَاء الله»
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত্যু কামনা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা
১৬০৩-[৬] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে দিয়ে একটি জানাযাহ্ বহন করা হচ্ছিল তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (জানাযাহ্ দেখে) বললেন, এ ব্যক্তি শান্তি পাবে, অথবা এর থেকে অন্যরা শান্তি পাবে। সাহাবীগণ নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! শান্তি পাবে কে, অথবা ওই ব্যক্তি কে যার থেকে অন্যরা শান্তি পাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর মু’মিন বান্দা মৃত্যুর দ্বারা দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট হতে আল্লাহর রহমতের দিকে অগ্রসর হয়। ফলে সে শান্তি পায়। আর গুনাহগার বান্দা মারা গেলে তার অনিষ্ট ও ফাসাদ হতে মানুষ, শহর-বন্দর গাছ-পালা ও জন্তু-জানোয়ার সবকিছুই শান্তি লাভ করে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ تَمَنِّي الْمَوْتِ وَذِكْرِه
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ أَنَّهُ كَانَ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُرَّ عَلَيْهِ بِجِنَازَةٍ فَقَالَ: «مُسْتَرِيحٌ أَوْ مُسْتَرَاحٌ مِنْهُ» فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا المستريح والمستراح مِنْهُ؟ فَقَالَ: «الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ يَسْتَرِيحُ مِنْ نَصَبِ الدُّنْيَا وَأَذَاهَا إِلَى رَحْمَةِ اللَّهِ وَالْعَبْدُ الْفَاجِرُ يستريح مِنْهُ الْعباد والبلاد وَالشَّجر وَالدَّوَاب»
ব্যাখ্যা: আল্লামা নাবাবী বলেন, পাপাচার বান্দা হতে বান্দাগণের শাস্তি লাভের উদ্দেশ্য অর্থ হল তার কষ্ট হতে মুক্তি পাওয়া আর কষ্টসমূহ বিভিন্ন ধরনেরঃ তাদের ওপর তার যুলম নির্যাতন। আর তার খারাপ কর্মসমূহ বাস্তবায়ন না হতে যদি কেউ বাধা দেয় তাহলে পাপিষ্ঠ ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আবার তাদের ক্ষতি সাধনও করে থাকে। আর যদি তারা চুপ থাকে এই পাপিষ্ঠ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাহলে তারা গুনাহগার হয়।
নাবাবী আরও বলেন, পশু-পাখীর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি হতে শাস্তি লাভের অর্থ সে তাদেরকে কষ্ট দেয়, প্রহার করে তাদের ওপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপিয়ে দেয় আবার কোন কোন সময় তাদেরকে উপাসে রাখে ও আরও অন্যান্য।
আর দেশ ও বৃক্ষরাজির শান্তি লাভের উদ্দেশ্য হল পাপের কারণে বৃষ্টি বন্ধ হয় ফলে তাদের পানি পান করার অধিকার তাদের কাছে হতে ছিনিয়ে নেয়া হয়। ত্বীবী বলেন, দেশ ও বৃক্ষরাজির শান্তি লাভের অর্থ হল আল্লাহ তা‘আলা পাপিষ্ঠ লোকের বিদায়ের ফলে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি বর্ষণ করান এবং তার পৃথিবী বৃক্ষরাজি ও প্রাণীদেরকে সজীব করে তোলেন পাপের কারণে বৃষ্টি বন্ধের পর।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত্যু কামনা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা
১৬০৪-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা হাত দিয়ে আমার দু’কাঁধ ধরলেন। তারপর বললেন, দুনিয়ায় তুমি এমনভাবে থাকো, যেমন- তুমি একজন গরীব অথবা পথের পথিক। (এরপর থেকে) ইবনু ’উমার (রাঃ) (মানুষদেরকে) বলতেন, ’’সন্ধ্যা হলে আর সকালের অপেক্ষা করবে না। আর যখন সকাল হবে, সন্ধ্যার অপেক্ষা করবে না। নিজের সুস্থতার সুযোগ গ্রহণ করবে অসুস্থতার আগে ও জীবনের সুযোগ গ্রহণ করবে মৃত্যুর আগে। (বুখারী)[1]
بَابُ تَمَنِّي الْمَوْتِ وَذِكْرِه
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَنْكِبِي فَقَالَ: «كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ» . وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ: إِذَا أَمْسَيْتَ فَلَا تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلَا تَنْتَظِرِ الْمَسَاءَ وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ وَمِنْ حياتك لموتك. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: নাবাবী বলেন, হাদীসের অর্থ তুমি দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকবে না এবং তাকেই দেশ হিসেবে গ্রহণ করবে না আর নিজেকে সেখানে চিরস্থায়ীর জন্য ভাববে না এবং তার সাথে সম্পর্ক রাখবে না যেমন, দরিদ্র বা মুসাফির ব্যক্তি অন্যের দেশের সাথে সম্পর্ক রাখে না।
কারও মতে উদ্দেশ্য হলঃ মু’মিন ব্যক্তি দুনিয়াতে অবস্থান করবে বিদেশীর অবস্থানের মতো। সুতরাং তার অন্তরকে সম্পর্ক রাখবে না দূরবর্তী দেশের কোন কিছুর সাথে বরং সম্পর্ক রাখবে এমন এক দেশের সাথে সেখানে সে ফিরে যাবে। আর দুনিয়াকে প্রয়োজন মিটানোর অবস্থান হিসেবে গ্রহণ করবে আর প্রস্ত্ততি গ্রহণ করবে তার আসল দেশের প্রত্যাবর্তনের জন্য। এটাই হল গরীব বা বিদেশীর অবস্থা অথবা মুসাফিরের যে সে নির্ধারিত একটি স্থানে অবস্থান করে না বরং সর্বদাই স্থায়ী শহরের দিকে সফর করে যার অবস্থা দুনিয়াতে এরূপ তার চিন্তাই সফরে পাথেয় সংগ্রহকরণ আর দুনিয়া ভোগ বিলাস সামগ্রী গ্রহণ তার নিকট গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিরমিযীতে অতিরিক্ত বর্ণনা হিসেবে এসেছে,
فَإِنَّكَ لَا تَدْرِيْ يَا عَبْدَ اللهِ مَا اسْمُكَ غَدًا يَعْنِيْ لَعَلَّكَ غَدًا مِنَ الْأَمْوَاتِ دُوْنَ الْأَحْيَاءِ أَيْ لَا يَدْرِيْ هَلْ يُقَالُ لَكَ حَيٌّ أَوْ مَيِّتٌ؟
তুমি জান না হে ‘আবদুল্লাহ! আগামীকাল তোমার নাম কী হবে অর্থাৎ সম্ভবত জীবিত হতে বিদায় নিয়ে মৃতদের অন্তর্ভুক্ত হতে পার তথা জানা থাকবে না তোমাকে কি মৃত্যু বা জীবিত বলা হবে।
আর হাকিমে ইবনে ‘আব্বাস-এর হাদীস মারফূ' সূত্রে
أَنَّ النَّبِيَّ - ﷺ - قَالَ لِرَجُلٍ وَهُوَ يَعِظُه اِغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابُكَ قَبْلَ هَرَمِكَ، وَصِحَّتُكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ، وَفَرَاغُكَ قَبْلَ شُغْلِكَ، وَحَيَاتُكَ قَبْلَ مَوْتِكَ.
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেনঃ পাঁচটি বিষয়কে গনীমাত মনে করবে পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে-
তোমার যৌবনকে বার্ধক্য আসার পূর্বে
তোমার সুস্থতাকে অসুস্থ আসার পূর্বে
তোমার স্বচ্ছলতাকে দরিদ্র আসার পূর্বে
তোমার অবসরতাকে ব্যস্ততা আসার পূর্বে
তোমার জীবনকে মৃত্যু আসার পূর্বে।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত্যু কামনা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা
১৬০৫-[৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মৃত্যুর তিনদিন আগে এ কথা বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, আল্লাহর ওপর ভাল ধারণা পোষণ করা ছাড়া তোমাদের কেউ যেন মৃত্যুবরণ না করে। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَمَنِّي الْمَوْتِ وَذِكْرِه
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ مَوْتِهِ بِثَلَاثَةِ أَيَّامٍ يَقُولُ: «لَا يَمُوتَنَّ أَحَدُكُمْ إِلَّا وَهُوَ يُحْسِنُ الظَّنَّ بِاللَّه» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেন, অবশ্যই আবশ্যই তোমাদের কেউ যেন এ চেতনা ও বিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুবরণ করে যে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করবেন। আর হাদীসটিতে অনুপ্রেরণা রয়েছে যে সৎ ‘আমলের চাহিদা হল সুধারণা।
খাত্ত্বাবী বলেন, কারও আল্লাহ সম্পর্কে ভালো ধারণা হল তা তার ভাল ‘আমল। তিনি আরও বলেন, তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে ভাল ধারণার মাধ্যমে তোমাদের ‘আমলকে সুন্দর কর। কারও আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা হলে তার ‘আমলও খারাপ হয়ে যায়।
আর কখনও কখনও আল্লাহ সম্পর্কে সুধারণা হল তার ক্ষমা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।
ত্বীবী বলেন, এখন তোমরা তোমাদের ‘আমলসমূহকে সুন্দর কর শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর সময় আল্লাহ সম্পর্কে সুধারণা হবে। আর যদি মৃত্যুর পূর্বে ‘আমল খারাপ হয় তাহলে মৃত্যুর সময় আল্লাহ সম্পর্কে কুধারণা হবে।