লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত্যু কামনা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা
১৬০১-[৪] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্য পছন্দ করে, আল্লাহও তার সান্নিধ্য পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্য অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সান্নিধ্য অপছন্দ করেন। (এ কথা শুনে) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) অথবা তাঁর স্ত্রীদের কেউ জিজ্ঞেস করলেন, আমরাতো মৃত্যুকে অপছন্দ করি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ব্যাপারটি তা নয়। বরং এর অর্থ হলো, যখন মু’মিনের মৃত্যু আসে তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সুসংবাদ দেয়া হয়। তখন সামনে তার এসব মর্যাদা হতে বেশী পছন্দনীয় জিনিস আর কিছু থাকে না। তাই সে আল্লাহর সান্নিধ্য পছন্দ করে। আল্লাহও তার সান্নিধ্য পছন্দ করেন। আর কাফির ব্যক্তির মৃত্যু হাযির হলে, তাকে আল্লাহর ’আযাব ও তার পরিণতির ’খোশ খবর’ দেয়া হয়। তখন এ কাফির ব্যক্তির সামনে এসব খোশ খবরের চেয়ে বেশী অপছন্দনীয় জিনিস আর কিছু থাকে না। তাই সে যেমন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকে অপছন্দ করে আল্লাহ তা’আলাও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ تَمَنِّي الْمَوْتِ وَذِكْرِه
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللَّهِ أَحَبَّ اللَّهُ لِقَاءَهُ وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللَّهِ كَرِهَ اللَّهُ لِقَاءَهُ» فَقَالَتْ عَائِشَةُ أَوْ بَعْضُ أَزْوَاجِهِ: إِنَّا لَنَكْرَهُ الْمَوْتَ قَالَ: «لَيْسَ ذَلِكَ وَلَكِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا حَضَرَهُ الْمَوْتُ بُشِّرَ بِرِضْوَانِ اللَّهِ وَكَرَامَتِهِ فَلَيْسَ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا أَمَامَهُ فَأَحَبَّ لِقَاءَ اللَّهِ وَأَحَبَّ اللَّهُ لِقَاءَهُ وَإِنَّ الْكَافِرَ إِذَا حضر بشر بِعَذَاب الله وعقوبته فَلَيْسَ شَيْء أكره إِلَيْهِ مِمَّا أَمَامَهُ فَكَرِهَ لِقَاءَ اللَّهِ وَكَرِهَ الله لقاءه»
ব্যাখ্যা: (مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللّهِ) তথা যে ভালোবাসে আল্লাহর সাক্ষাত লাভকে তথা আখিরাতের দিকে প্রত্যাবর্তনের অর্থাৎ মু’মিন ব্যক্তিকে মৃত্যুর গারগরের সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির সুসংবাদ প্রদান করা হয়, ফলে তার মৃত্যুটা জীবনের চেয়ে প্রিয় হয়ে উঠে।
খাত্ত্বাবী বলেন, বান্দার আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের ভালোবাসার অর্থ হল দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতকে প্রাধান্য দেয়া আর দুনিয়াতে অবিরামভাবে প্রতষ্ঠিত থাকাকে অপছন্দ করা বরং তা হতে সফরের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা। আর অপছন্দ হল এর বিপরীত।
(لِقَاءَ اللّهِ) দ্বারা উদ্দেশ্য (১) পুনরুত্থান। যেমন, আল্লাহর বাণীঃ قَدْ خَسِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِلِقَاءِ اللّهِ ‘‘নিশ্চয়ই তারা ধ্বংস হয়ে যারা পুনরুত্থানকে মিথ্যা বলেছে।’’ (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬ : ৩১)
(২) মৃত্যু। مَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ اللَّهِ فَإِنَّ أَجَلَ اللَّهِ لَآتٍ ‘‘যারা আল্লাহর সাক্ষাত লাভের কামনা করে সে আল্লাহর নির্ধারিত মৃত্যু অবধারিত।’’ (সূরাহ্ আল ‘আনকাবূত ২৯ : ৫)
(৩) জাযারী নিহায়াতে এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন অবিনশ্বর আখিরাতের দিকে ধাবিত হওয়া আর কামনা করা আল্লাহর নিকট যা আছে এবং দুনিয়াতে দীর্ঘ অবস্থান না থাকা ও দুনিয়ার জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি না থাকা।
(إِنَّا لَنَكْرَهُ الْمَوْتَ) আমরা তো মৃত্যুকে না পছন্দই করি। সা‘দ বিন হিশাম-এর বর্ণনায়
فَقُلْتُ يَا نَبِيَ اللهِ أَكَرَاهِيَّةُ الْمَوْتِ فَكُلُّنَا يَكْرَهُ الْمَوْتَ أَيْ بِحَسْبِ الْطَبَعِ وَخَوْفًا مِمَّا بَعْدَه.
আমি বললাম, হে আল্লাহর নাবী! মৃত্যুর অপছন্দ তো আমরা সবাই করি অর্থাৎ মৃত্যুর পরের অবস্থার ভয়ে।
(لَيْسَ ذلِكَ) তথা বিষয়টি এমন না যেমনটি ধারণা করছ, হে ‘আয়িশাহ্! বরং মু’মিনের মৃত্যুর অপছন্দ মৃত্যুর কঠিনতর ভয়ের জন্য আল্লাহর সাক্ষাতের অপছন্দ নয় বরং অপছন্দটি হল মৃত্যুর অপছন্দ দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের জীবনের উপর প্রাধান্য দেয়া যখন মৃত্যুর উপস্থিতির সময় আল্লাহর শাস্তির সুসংবাদ দেয়া হয়।
হাদীসের শিক্ষাসমূহঃ
* মরণাপন্ন ব্যক্তি যখন তার ওপর আনন্দের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ পায় এটা দলীল যে তাকে কল্যাণের সুসংবাদ দেয়া হয়। অনুরূপ এর বিপরীত।
* আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের ভালোবাসা মৃত্যু কামনা করার নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় না। কেননা মৃত্যু কামনা করার নিষেধাজ্ঞা বিশেষ পরিস্থিতির সাথে সংশ্লিষ্ট। বরং মরণোম্মুখ সময় মৃত্যু কামনা করা মুস্তাহাব।
* সুস্থ থাকাবস্থায় মৃত্যুকে অপছন্দ করা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ, যে ব্যক্তি মৃত্যুকে অপছন্দ করে দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য আখিরাতের অফুরন্ত নি‘আমাতের উপর সে তিরস্কৃত বা নিন্দনীয়। আর যে এই ভয়ে মৃত্যুকে অপছন্দ করে যে ‘আমল কমতি হওয়ার কারণে শাস্তি পাওয়ার আশংকা রয়েছে আর সকল দায় দায়িত্ব থেকে মুক্তি হতে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে পারেনি এবং যে আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করবে যা ওয়াজিব এ ব্যক্তির জন্য মৃত্যুকে অপছন্দ করা বৈধ। তবে যে ব্যক্তি ভাল ‘আমলের প্রস্ত্ততির দিকে দ্রুত ধাবিত হবে এমনকি যখন মৃত্যু এসে উপস্থিত হবে তখন মৃত্যুকে অপছন্দ করবে না বরং আল্লাহর সাক্ষাত লাভের কামনা করবে।