পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৭৪-[৫২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ইয়াহূদী যুবক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাত করতেন। তাঁর মৃত্যুশয্যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন। তিনি তার মাথার পাশে বসে বললেন, হে অমুক! তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। যুবকটি তার পাশে থাকা পিতার দিকে তাকাল। পিতা তাকে বলল, আবুল ক্বাসিমের কথা মেনে নাও। যুবকটি ইসলাম গ্রহণ করল। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছ থেকে বের হয়ে এসে বললেন, আল্লাহর শুকরিয়া। তিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন। (বুখারী)[1]
عَن أنس قَالَ: كَانَ غُلَامٌ يَهُودِيٌّ يَخْدُمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَرِضَ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُهُ فَقَعَدَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَقَالَ لَهُ: «أَسْلِمْ» . فَنَظَرَ إِلَى أَبِيهِ وَهُوَ عِنْدَهُ فَقَالَ: أَطِعْ أَبَا الْقَاسِمِ. فَأَسْلَمَ. فَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَقُولُ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنْقَذَهُ مِنَ النَّارِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ হাদীসে বৈধতা প্রমাণ করে মুশরিকের নিকট হতে খিদমাত গ্রহণ করা এবং যখন অসুস্থ হবে তাকে দেখতে যাওয়া। হাদীসে আরও প্রমাণিত হয় সুন্দর অঙ্গীকার, ছোটদের দিয়ে খিদমাত গ্রহণ এবং বালকদের নিকট ইসলামের দা‘ওয়াত উপস্থাপন করা। আর যদি তা সহীহ না হত তাহলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইসলামের দা‘ওয়াত দিতেন না।
(أَنْقَذَه مِنَ النَّارِ) এটা প্রমাণ করে খাদেমের ইসলাম গ্রহণ করা শুদ্ধ হয়েছে। আর বালক যখন কুফরকে বুঝতে পারে আর এর উপর মারা যায় তাহলে তাকে শাস্তি দেয়া হবে।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৭৫-[৫৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি রোগীকে দেখার জন্য যায়, আসমান থেকে একজন মালাক (ফেরেশতা) তাকে লক্ষ্য করে বলেন, ধন্য হও তুমি, ধন্য হোক তোমার এ পথ চলা। জান্নাতে তুমি একটি মনযিল তৈরি করে নিলে। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ عَادَ مَرِيضًا نَادَى مُنَادٍ فِي السَّمَاءِ: طِبْتَ وَطَابَ مَمْشَاكَ وَتَبَوَّأْتَ مِنَ الْجَنَّةِ مَنْزِلًا . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (طِبْتَ) মুবারক হও তুমি এটি তার জন্য দু‘আ যাতে তার দুনিয়ার জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়। (وَطَابَ مَمْشَاكَ) মুবারক হোক তোমার পথচলা এটা মূলত রূপক অর্থে ব্যবহৃত তার জীবন, চরিত্র, আখিরাতে চলার পথ খারাপ চরিত্র হতে মুক্ত হয়ে উত্তম চরিত্রে ভূষিত হোক। (مَنْزِلًا) তুমি তৈরি করলে মূলত এটি একটি দু‘আ তার জন্য যাতে আখিরাতের জীবন সুখময় হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৭৬-[৫৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন, সে অসুখের সময় একদিন ’আলী (রাঃ) তাঁর কাছ থেকে বের হয়ে এলেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আবূ হাসান! আজ সকালে আল্লাহর রসূলের অবস্থা কেমন রয়েছে? ’আলী (রাঃ) বললেন, আলহাম্দুলিল্লা-হ সকাল ভালই যাচ্ছে। (বুখারী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إِنَّ عَلِيًّا خَرَجَ مِنْ عِنْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي وَجَعِهِ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ فَقَالَ النَّاسُ: يَا أَبَا الْحَسَنِ كَيْفَ أَصْبَحَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: أَصْبَحَ بِحَمْدِ الله بارئا. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসের ভাষ্য মতে (كَيْفَ أَصْبَحَ) আজ সকাল কেমন যাচ্ছে, এ শব্দে রোগীর অবস্থা সকলকে জিজ্ঞেস করা মুস্তাহাব তথা ভাল। আর উত্তর এ শব্দে (أَصْبَحَ بِحَمْدِ الله بَارِئًا) আলহাম্দুলিল্লা-হ, সকাল ভালই যাচ্ছে।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৭৭-[৫৫] ’আত্বা ইবনু আবূ রবাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আব্বাস (রাঃ)আমাকে একবার বললেন, হে ’আত্বা! আমি কি তোমাকে একটি জান্নাতী মহিলা দেখাব না? আমি বললাম, জ্বি হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে এ কালো মহিলাটিকে দেখো। এ মহিলাটি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত। রোগের ভয়াবহতার ফলে আমি উলঙ্গ হয়ে যাই। আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। তার কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি চাও, সবর করতে পার। তাহলে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর তুমি চাইলে, আমি তোমার আরোগ্যের জন্য দু’আ করব। আল্লাহ যেন তোমাকে ভাল করে দেন। জবাবে মহিলাটি বলল, আমি সবর করব। পুনরায় মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি উলঙ্গ হয়ে যাই। দু’আ করুন আমি যেন উলঙ্গ হয়ে না পড়ি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার জন্য দু’আ করলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
وَعَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ قَالَ: قَالَ لي ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنهُ: أَلا أريك امْرَأَة من أهل الْجنَّة؟ فَقلت: بَلَى. قَالَ: هَذِهِ الْمَرْأَةُ السَّوْدَاءُ أَتَتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: إِنِّي أصرع وَإِنِّي أتكشف فَادع الله تَعَالَى لي. قَالَ: «إِنْ شِئْتِ صَبَرْتِ وَلَكِ الْجَنَّةُ وَإِنْ شِئْتِ دَعَوْت الله تَعَالَى أَنْ يُعَافِيَكَ» فَقَالَتْ: أَصْبِرُ فَقَالَتْ: إِنِّي أَتَكَشَّفُ فَادْعُ اللَّهَ أَنْ لَا أَتَكَشَّفَ فَدَعَا لَهَا
ব্যাখ্যা: মৃগী রোগ হল মূল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে নিস্ক্রিয় করে দেয় তবে সামান্য সচল থাকে, কারণ হল দূষিত কোন বায়ুর প্রাদুর্ভাবে যা মগজের শিরা উপশিরাকে বন্ধ করে দেয়।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৭৮-[৫৬] ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কালে এক ব্যক্তির মৃত্যু হলো। এ সময় আর এক ব্যক্তি মন্তব্য করল, লোকটির ভাগ্য ভাল। মারা গেল কিন্তু কোন রোগে ভুগতে হল না। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আহ্! তোমাকে কে বলল, লোকটির ভাগ্য ভাল? যদি আল্লাহ তা’আলা লোকটিকে কোন রোগে ফেলতেন, আর তার গুনাহ মাফ করে দিতেন তাহলেই না সবচেয়ে ভাল হতো! (মালিক মুরসালরূপে)[1]
وَعَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ قَالَ: إِنَّ رَجُلًا جَاءَهُ الْمَوْتُ فِي زَمَنِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ رجل: هيئا لَهُ مَاتَ وَلَمْ يُبْتَلَ بِمَرَضٍ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَيْحَكَ وَمَا يُدْرِيكَ لَوْ أَنَّ اللَّهَ ابْتَلَاهُ بِمَرَضٍ فَكَفَّرَ عَنهُ من سيئاته» . رَوَاهُ مَالك مُرْسلا
ব্যাখ্যা: হাদীসের ভাষ্য মতে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা আল্লাহ প্রদত্ত চিকিৎসা যা দ্বারা মানুষকে চিকিৎসা করা হয় পাপের রোগ হতে। নিষ্পাপহীন ব্যক্তি অধিকাংশ সময় গুনাহ হতে মুক্ত না, সুতরাং রোগ সে পাপের জরিমানা অথবা মর্যাদা বৃদ্ধি করে বা ব্যক্তির অহংকারকে চুরমার করে।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৭৯-[৫৭] শাদ্দাদ ইবন আওস ও সুনাবিহী (রাঃ)থেকে বর্ণিত। একবার তাঁরা দু’জন এক রোগীকে দেখতে গেলেন। তাঁরা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আজ সকালটা তোমার কেমন যাচ্ছে? রোগীটি বলল, আল্লাহর রহমতে ভালই। তার কথা শুনে শাদ্দাদ বললেন, তোমার গুনাহ ও অপরাধ মাফ হবার শুভ সংবাদ! কারণ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দাদের মধ্যে কোন মু’মিন বান্দাকে রোগাক্রান্ত করি। রোগগ্রস্ত করা সত্ত্বেও যে আমার শুকরিয়া আদায় করবে, সে রোগশয্যা হতে সদ্যপ্রসূত শিশুর মতো সব গুনাহ হতে পবিত্র হয়ে উঠবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা মালাকগণকে (ফেরেশতাদেরকে) বলেন, আমি আমার বান্দাকে রোগ দিয়ে বন্দী করে রেখেছি। তাই তোমরা তার সুস্থ অবস্থায় তার জন্য যা লিখতে তা-ই লিখো। (আহমাদ)[1]
وَعَن شَدَّاد بن أَوْس والصنابحي أَنَّهُمَا دَخَلَا عَلَى رَجُلٍ مَرِيضٍ يَعُودَانِهِ فَقَالَا لَهُ: كَيفَ أَصبَحت قَالَ أَصبَحت بِنِعْمَة. فَقَالَ لَهُ شَدَّادٌ: أَبْشِرْ بِكَفَّارَاتِ السَّيِّئَاتِ وَحَطِّ الْخَطَايَا فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ إِذَا أَنَا ابْتَلَيْتُ عَبْدًا مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنًا فَحَمِدَنِي عَلَى مَا ابْتَلَيْتُهُ فَإِنَّهُ يَقُومُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ مِنَ الْخَطَايَا. وَيَقُولُ الرَّبُّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: أَنَا قَيَّدْتُ عَبْدِي وَابْتَلَيْتُهُ فَأَجْرُوا لَهُ مَا كُنْتُمْ تُجْرُونَ لَهُ وَهُوَ صَحِيح . رَوَاهُ احْمَد
ব্যাখ্যা: (فَقَالَا لَه: كَيْفَ أَصْبَحْتَ) আজ সকাল কেমন হয়েছে এটি প্রমাণ দিনের প্রথম প্রহরে রোগীকে দেখতে যাওয়া উত্তম (أَصْبَحْتُ بِنِعْمَةٍ) ভাগ্যের উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করা।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৮০-[৫৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দার গুনাহ যখন বেশী হয়ে যায় এবং এসব গুনাহের কাফফারার মতো যথেষ্ট নেক ’আমল তার না থাকে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে বিপদে ফেলে চিন্তাগ্রস্ত করেন। যাতে এ চিন্তাগ্রস্ততা তার গুনাহের কাফফারাহ্ হয়ে যায়। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا كَثُرَتْ ذُنُوبُ الْعَبْدِ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ مَا يُكَفِّرُهَا مِنَ الْعَمَلِ ابْتَلَاهُ اللَّهُ بِالْحَزَنِ لِيُكَفِّرَهَا عَنهُ» . رَوَاهُ أَحْمد
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৮১-[৫৯] জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যখন কোন রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখার জন্য রওয়ানা হয় তখন সে আল্লাহর রহমতের সাগরে সাঁতার কাটতে থাকে। যে পর্যন্ত রোগীর বাড়ী গিয়ে না পৌঁছে। আর বাড়ী পৌঁছার পর রহমতের সাগরে ডুব দেয়। (মালিক, আহমাদ)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ عَادَ مَرِيضًا لَمْ يَزَلْ يَخُوضُ الرَّحْمَةَ حَتَّى يَجْلِسَ فَإِذَا جَلَسَ اغتمس فِيهَا» . رَوَاهُ مَالك وَأحمد
ব্যাখ্যা: (لَمْ يَزَلْ يَخُوضُ الرَّحْمَةَ) সে রহমাতের মধ্যে প্রবেশ করল যখন সে বাড়ী হতে বের হল রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখার নিয়্যাত নিয়ে। আর যখন সে বসল সে রহমাতে ডুব দিল।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৮২-[৬০] সাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো জ্বর হলে জ্বর আগুনের অংশ, আগুনকে পানি দিয়ে নিভানো হয়। সে যেন ফাজ্রের (ফজরের) সালাতের পর সূর্য উঠার আগে প্রবাহিত নদীতে ঝাঁপ দেয় আর ভাটার দিকে এগুতে থাকে। এরপর বলে, হে আল্লাহ! শেফা দান করো তোমার বান্দাকে। সত্যবাদী প্রমাণ করো তোমার রসূল কে। ওই ব্যক্তি যেন নদীতে তিনদিন তিনটি করে ডুব দেয়। এতে যদি তার জ্বর না সারে তবে পাঁচদিন। তাতেও না সারলে, সাতদিন। সাতদিনেও যদি আরোগ্য না হয় তাহলে নয়দিন। আল্লাহর রহমতে জ্বর-এর অধিক আগে বাড়বে না। (তিরমিযী; তিনি হাদীসটি গরীব বলেছেন।)[1]
وَعَنْ ثَوْبَانَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا أَصَابَ أَحَدَكُمُ الْحُمَّى فَإِنَّ الْحمى قِطْعَة من النَّار فليطفها عَنْهُ بِالْمَاءِ فَلْيَسْتَنْقِعْ فِي نَهْرٍ جَارٍ وَلْيَسْتَقْبِلْ جِرْيَتَهُ فَيَقُولُ: بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اشْفِ عَبْدَكَ وَصدق رَسُولك بعد صَلَاة الصُّبْح وَقبل طُلُوعِ الشَّمْسِ وَلْيَنْغَمِسْ فِيهِ ثَلَاثَ غَمْسَاتٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَإِنْ لَمْ يَبْرَأْ فِي ثَلَاثٍ فَخَمْسٍ فَإِنْ لَمْ يَبْرَأْ فِي خَمْسٍ فَسَبْعٍ فَإِنْ لَمْ يَبْرَأْ فِي سَبْعٍ فَتِسْعٍ فَإِنَّهَا لَا تَكَادَ تُجَاوِزُ تِسْعًا بِإِذْنِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৮৩-[৬১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একবার জ্বর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। এ সময় এক লোক জ্বরকে গালি দিলো। এ কথা শুনে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জ্বরকে গালি দিও না। কারণ জ্বর গুনাহ দূর করে যেভাবে (কামারের) হাপর লোহার মরিচা দূর করে দেয়। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: ذُكِرَتِ الْحُمَّى عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَبَّهَا رَجُلٌ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَسُبَّهَا فَإِنَّهَا تَنْفِي الذُّنُوبَ كَمَا تَنْفِي النَّارُ خَبَثَ الْحَدِيدِ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: ‘যেভাবে (কামারের) হাপর লোহার মরিচা দূর করে দেয়।’ বাক্যটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত যা মূলত গুনাহ হতে নির্মূল হওয়ার ক্ষেত্রে আধিক্যতা বুঝানো হয়েছে। আর হাদীসের অর্থ জ্বরের অবস্থায় গালি না দিয়ে ধৈর্য ধারণ করা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ওয়াজিব।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৮৪-[৬২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক অসুস্থ লোককে দেখতে গিয়ে বললেন, সুসংবাদ! আল্লাহ তা’আলা বলেন, তা আমার আগুন। আমি দুনিয়াতে এ আগুনকে আমার মু’মিন বান্দার কাছে পাঠাই। তা এজন্যই যাতে এ আগুন কিয়ামতে তার জাহান্নামের আগুনের পরিপূরক হয়ে যায়। (আহমাদ, ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী’র শু’আবুল ঈমান)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَادَ مَرِيضًا فَقَالَ: أَبْشِرْ فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ: هِيَ نَارِي أُسَلِّطُهَا عَلَى عَبْدِي الْمُؤْمِنِ فِي الدُّنْيَا لِتَكَوُنَ حَظَّهُ مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَابْنُ مَاجَهْ والْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَان
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৮৫-[৬৩] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার মহান রব বলেন, আমার ইযযত ও প্রতাপের শপথ, আমি ততক্ষণ কাউকে দুনিয়া হতে বের করে আনি না যতক্ষণ না তাকে ক্ষমা করে দেবার ইচ্ছা করি। যতক্ষণ না তার ঘাড়ে থাকা প্রত্যেকটি গুনাহকে তার দেহের কোন রোগ অথবা রিযক্বের সংকীর্ণতা দিয়ে বিনিময় করে দিই। (রযীন)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ الرَّبَّ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى يَقُولُ: وَعِزَّتِي وَجَلَالِي لَا أُخْرِجُ أَحَدًا مِنَ الدُّنْيَا أُرِيد أَغْفِرَ لَهُ حَتَّى أَسْتَوْفِيَ كُلَّ خَطِيئَةٍ فِي عُنُقِهِ بِسَقَمٍ فِي بَدَنِهِ وَإِقْتَارٍ فِي رِزْقِهِ . رَوَاهُ رزين
ব্যাখ্যা: মীরাক বলেনঃ (إِقْتَارٍ) ‘ইক্বতা-র’ হল মানুষের ওপর রিযক্ব (রিজিক/রিযিক)কে সংকুচিত করা। যেমন বলা হয় إقتار الله رزقه আল্লাহ তার রিযক্বকে সংকুচিত করে দিয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৮৬-[৬৪] শাক্বীক্ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) অসুস্থ হলে আমরা দেখতে গেলাম। আমাদেরকে দেখে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। তা দেখে তাঁকে কেউ কেউ খারাপ বলতে লাগলেন। সে সময় ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) বললেন, আমি অসুখের জন্য কাঁদছি না। আমি শুনেছি, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অসুখ হচ্ছে গুনাহের কাফফারাহ্। আমি বরং কাঁদছি এজন্য যে, এ অসুখ হল আমার বৃদ্ধ বয়সে। আমার শক্তি-সামর্থ্য থাকার সময়ে হল না। কারণ মানুষ যখন অসুস্থ হয় তার জন্য সে সাওয়াব লেখা হয়, যা অসুস্থ হবার আগে তার জন্য লেখা হত। এজন্যই যে অসুস্থতা তাকে ওই ’ইবাদাত করতে বাধা দেয়। (রযীন)[1]
وَعَن شَقِيق قَالَ: مرض عبد الله بن مَسْعُود فَعُدْنَاهُ فَجَعَلَ يَبْكِي فَعُوتِبَ فَقَالَ: إِنِّي لَا أَبْكِي لِأَجْلِ الْمَرَضِ لِأَنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْمَرَضُ كَفَّارَةٌ» وَإِنَّمَا أبْكِي أَنه أَصَابَنِي عَلَى حَالِ فَتْرَةٍ وَلَمْ يُصِبْنِي فِي حَال اجْتِهَاد لِأَنَّهُ يكْتب للْعَبد من الْجَرّ إِذَا مَرِضَ مَا كَانَ يُكْتَبُ لَهُ قَبْلَ أَنْ يَمْرَضَ فَمَنَعَهُ مِنْهُ الْمَرَضُ. رَوَاهُ رَزِينٌ
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৮৭-[৬৫] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন রোগীকে (রোগগ্রস্ত হবার পর) তিনদিন না হওয়া পর্যন্ত দেখতে যেতেন না। (ইবনু মাজাহ, আর বায়হাক্বী’র শু’আবুল ঈমান)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَعُودُ مَرِيضًا إِلَّا بَعْدَ ثَلَاثٍ. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
ব্যাখ্যা: শাওকানী এ হাদীস প্রমাণ করে রোগী দেখতে যাওয়া শারী‘আত সম্মত রোগ হওয়ার তিনদিন পর। সুতরাং রোগীকে দেখতে যাওয়ার ব্যাপারে ‘আম হাদীসগুলোকে সীমাবদ্ধ করেছে এ হাদীস কিন্তু উপরোল্লিখিত হাদীস সহীহ বা হাসান না। সুতরাং দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হবে না। আমি ভাষ্যকার বলি, জমহূরদের মতে রোগীকে দেখতে যাওয়া কোন সময়ের সাথে সীমাবদ্ধ না রোগ শুরু হওয়ার পর হতে বরং সুন্নাহ হল রোগ শুরুর প্রথম দিকে দেখতে যাওয়া, কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্য ‘আমভাবে যে (عودوا المريض) তোমরা রোগীকে দেখতে যাও।
আর গাযযালী ইয়াহ্ইয়াউল উলূমে দৃঢ়তার সাথে বলেছেন আনাস (রাঃ)-এর হাদীসটি খুবই দুর্বল তথা অগ্রহণ্যযোগ্য।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৮৮-[৬৬] ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি কোন অসুস্থ লোককে দেখতে গেলে, তাকে তোমার জন্য দু’আ করতে বলবে। কারণ রুগ্ন লোকের দু’আ মালায়িকার (ফেরেশতাদের) দু’আর মতো। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ ك قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا دَخَلْتَ عَلَى مَرِيضٍ فَمُرْهُ يَدْعُو لَكَ فَإِنَّ دُعَاءَهُ كَدُعَاءِ الْمَلَائِكَةِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: ত্বীবী বলেনঃ রোগীর নিকট দু‘আ চাওয়ার হুকুমটি মূলত রোগী তখন মুক্ত গুনাহ হতে সেদিনের মতো যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল এবং সে মালায়িকার মতো নিস্পাপ হয় আর নিস্পাপদের দু‘আ কবূল হয়।
‘আলক্বামাহ্ বলেনঃ হাদীসের মর্মার্থ রোগীর নিকট দু‘আর আবেদন করা মুসতাহাব, কারণ সে নিরুপায় আর অন্যদের চেয়ে তার দু‘আ দ্রুত কবূল হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৮৯-[৬৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রোগীকে দেখতে যাবার পর নিয়ম হলো, রোগীর কাছে বসা। তার কাছে উচ্চস্বরে কথা না বলা। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) তাঁর এ কথার সমর্থনে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুশয্যায় তাঁর পাশে লোকেরা বেশি কথাবার্তা ও মতভেদ শুরু করলে তিনি বলেন, তোমরা আমার কাছ থেকে সরে যাও। (রযীন)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: مِنَ السُّنَّةِ تَخْفِيفُ الْجُلُوسِ وَقِلَّةُ الصَّخَبِ فِي الْعِيَادَةِ عِنْدَ الْمَرِيضِ قَالَ: وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا كَثُرَ لَغَطُهُمْ وَاخْتِلَافُهُمْ: «قُومُوا عَنِّي» رَوَاهُ رزين
ব্যাখ্যা : হাদীসে প্রমাণিত হয়, রোগীকে দেখতে যাওয়ার আদাব বা বৈশিষ্ট্য যে রোগীর নিকট যেন দীর্ঘক্ষণ বসে না থাকে যাতে সে বিরক্ত হয়।
وَاخْتِلَافُهُمْ: قُومُوا عَنِّي তাদের মতানৈক্যের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমরা আমার নিকট হতে উঠে যাও। ত্বীবী বলেন, আর এটা ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর সময়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)হতে বর্ণিত যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর যন্ত্রণা উপস্থিত হল এমতাবস্থায় ঘরে অনেক লোক উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে ‘উমার (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিয়ে আসো আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখব, এর পরে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। ‘উমার (রাঃ) বললেন, অন্য বর্ণনায় অনেকে বললেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে বসেছে আর তোমাদের কুরআনে রয়েছে তোমাদের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ঠ হবে। ঘরের অধিবাসীরা মতানৈক্য করল এবং ঝগড়ায় লিপ্ত হল। তাদের মধ্যে কেউ বলল, তোমরা তার নিকট কিছু উপস্থিত কর যাতে তোমাদের জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখবেন তাদের মধ্যে, আবার কেউ বললেন অন্য কিছু তথা লিখার প্রয়োজন নেই যখন কথাবার্তা ও মতভেদ বেশী হয়ে গেল তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমার নিকট হতে উঠে যাও। (বুখারী, মুসলিম)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৯০-[৬৮] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোগী দেখতে অল্প সময় নেবে।[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم: «العيادة فوَاق نَاقَة»
ব্যাখ্যা: (فوَاق نَاقَة) দ্বারা উদ্দেশ্য দুধ দোহনের মাঝখানে বিরতির সময়, কেননা দুধ দোহন করা হয়। অতঃপর স্বল্প সময়ের জন্য বিরত রাখা হয় বাছুর দুধপান করে যাতে স্তনের বোটা পিচ্ছিল হয়, অতঃপর আবার দুধ দহন করা হয় (এ সময় টুকুকে فوَاق نَاقَة বলে) ।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৯১-[৬৯] সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব-এর বর্ণনা অনুযায়ী, রোগীকে দেখার উত্তম নিয়ম হলো তাড়াতাড়ি উঠে যাওয়া। (বায়হাক্বী’র শু’আবুল ঈমান)[1]
وَفِي رِوَايَةِ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ مُرْسَلًا: «أَفْضَلُ الْعِيَادَةِ سُرْعَةُ الْقِيَامِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: ত্বীবী বলেনঃ সর্বোত্তম হল রোগীকে সাক্ষাৎকারী ব্যক্তি দ্রুত চলে আসা। আর মীরাক বলেন, সারমর্ম হল উত্তম সাক্ষাৎকারী ব্যক্তি দ্রুত উঠে আসবে তবে যদি তার দীর্ঘ অবস্থান রোগী পছন্দ করে (তাহলে তথায় অবস্থানই ভাল)।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৯২-[৭০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একজন রোগীকে দেখতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি খেতে তোমার মন চায়? জবাবে সে বলল, গমের রুটি। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের যার কাছে গমের রুটি আছে সে যেন তা তার ভাইয়ের জন্য পাঠায়। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের কোন রোগী কিছু খেতে চাইলে, তাকে তা খাওয়াবে। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَادَ رَجُلًا فَقَالَ لَهُ: «مَا تستهي؟» قَالَ: أشتهي خبز بر. قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ عِنْدَهُ خُبْزُ بُرٍّ فَلْيَبْعَثْ إِلَى أَخِيهِ» . ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا اشْتَهَى مَرِيضُ أحدكُم شَيْئا فليطعمه» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: রোগের পক্ষে ক্ষতিকর নয় এরূপ খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সম্ভাবনা এও রয়েছে যদিও ক্ষতিকর হয় অনেক সময় রোগীর চাহিদা মোতাবেক খাওয়াই আরোগ্যের কারণ হয়।
ত্বীবী বলেনঃ রোগীর পূর্ণ তাওয়াক্কুল রয়েছে আল্লাহর ওপর যে, তিনি আরোগ্য দিবেন অথবা মৃত্যু আসন্ন। কারও মতে সূক্ষ্ম হিকমাহ্ রয়েছে, তা হল রোগী যখন কোন কিছু কামনা করে যদিও তা স্বল্প ক্ষতি করে তথাপিও তা উপকারে আসে।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৯৩-[৭১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মদীনায় মারা গেলেন, মদীনায়ই তার জন্ম হয়েছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। তারপর তিনি বললেন, হায়! এ ব্যক্তি যদি তার জন্মস্থান ছাড়া অন্য কোন জায়গায় মৃত্যুবরণ করত। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, কেন? হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি বললেন, কোন লোক জন্মস্থান ছাড়া অন্য কোথাও মৃত্যুবরণ করলে তার মৃত্যুস্থান ও জন্মস্থানের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের জায়গা হিসেবে গণ্য করা হয়। (নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَن عبد الله بن عَمْرو قَالَ ك تُوُفِّيَ رَجُلٌ بِالْمَدِينَةِ مِمَّنْ وُلِدَ بِهَا فَصَلَّى عَلَيْهِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَا لَيْتَهُ مَاتَ بِغَيْرِ مَوْلِدِهِ» . قَالُوا وَلِمَ ذَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا مَاتَ بِغَيْرِ مَوْلِدِهِ قِيسَ لَهُ مِنْ مَوْلِدِهِ إِلَى مُنْقَطَعِ أَثَرِهِ فِي الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: হাদীসের মর্মার্থ হল যে, তাকে জান্নাতে এ পরিমাণ স্থান দেয়া হবে যে জন্মস্থান হতে মৃত্যুর স্থানের দূরত্ব পর্যন্ত। আবার কারও মতে, এটা উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্য ঐ পরিমাণ দূরত্বের সাওয়াব দেয়া হবে।