পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
ফুকাহাদের নিকট كُسُوْفٌ শব্দটি ব্যবহার হয় সূর্যগ্রহণের ক্ষেত্রে আর خُسُوْفٌ ব্যবহার হয় চন্দ্রগ্রহণের ক্ষেত্রে কতিপয়ের মতে خُسُوْفٌ ও كُسُوْفٌ শব্দ দু’টি চন্দ্র ও সূর্য উভয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। কুসতুলানী এটা সহীহ মত। كُسُوْفٌ সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের হাদীস প্রায় সতেরজন সাহাবী হতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত।
আর জেনে রাখা দরকার كُسُوْفٌ ও خُسُوْفٌ সালাত শারী’আত সম্মত হওয়ার ব্যাপারে কোন মতানৈক্য নেই আর এটা সুন্নাহ ইজমায়ে উম্মাহ দ্বারা প্রমাণিত। আর তার হুকুম ও বৈশিষ্ট্যের পদ্ধতির ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে ইমাম শাফি’ঈ ও আহমাদ বলেনঃ সূর্যগ্রহণের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সুন্নাতে মুয়াক্কাদা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এ সালাত আদায় করেছেন এবং জনগণকে একত্রিত করেছেন। আর আবূ হানীফার মতে সুন্নাহ তবে মুয়াক্কাদাহ্ না অনুরূপ চন্দ্রগ্রহণের সালাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্। শাফি’ঈ ও আহমাদের নিকট আর আবূ হানীফাহ্ ও মালিক-এর নিকট ভাল। প্রাধান্য মত হল শাফি’ঈ ও আহমাদের মত।
১৪৮০-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন তিনি একজন আহবানকারীকে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) প্রস্তুত মর্মে ঘোষণা দেয়ার জন্য পাঠালেন। (লোকজন একত্র হলে) তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে দু’ দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। এতে চারটি রুকূ’ ও চারটি সিজদা্ করলেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, এ দিন যত দীর্ঘ রুকূ’ সিজদা্ আমি করেছি এত দীর্ঘ রুকূ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) আর কোন দিন করিনি। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: إِنَّ الشَّمْسَ خَسَفَتْ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَعَثَ مُنَادِيًا: الصَّلَاةُ جَامِعَةٌ فَتقدم فصلى أَربع رَكْعَات وَفِي رَكْعَتَيْنِ وَأَرْبع سَجدَات. قَالَت عَائِشَة: مَا رَكَعْتُ رُكُوعًا قَطُّ وَلَا سَجَدْتُ سُجُودًا قطّ كَانَ أطول مِنْهُ
ব্যাখ্যা: হাদীস প্রমাণ করে সালাতুল কুসূফ এর রুকূ' ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দীর্ঘ হবে আর হাদীস আরও প্রমাণ করে সালাতুল কুসূফ জামা‘আতবদ্ধভাবে হবে। আর এটা মালিক, শাফি‘ঈ ও জমহূর ‘উলামার মত। ইমাম তিরমিযী বলেন, আহলে হাদীস তথা মুহাদ্দিসরা সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) জামা‘আতের সাথে আদায় করতেন। আর ইমাম বুখারী অধ্যায় বেঁধেছেন ‘‘সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাত জামা‘আতবদ্ধভাবে আদায়’’।
এ সালাতের পদ্ধতিঃ
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের সালাতের পদ্ধতির ব্যাপারে বিভিন্নতা এসেছে তন্মধ্যে-
১। দু’ রাক্‘আত সালাত আর প্রত্যেক রাক্‘আতে দু’টি করে রুকূ'।
২। প্রত্যেক রাক্‘আতে তিনটি করে রুকূ'।
৩। প্রত্যেক রাক্‘আতে চারটি করে রুকূ'।
৪। প্রত্যেক রাক্‘আতে পাঁচটি করে রুকূ'।
৫। দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করে সালাম দিবে আবার দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করে সালাম দিবে, এভাবে পড়তে থাকবে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ দূরীভূত হওয়া পর্যন্ত।
৬। নিকটবর্তী সালাতের মতো করে আদায় করবে তথা যদি সূর্যগ্রহণ সূর্য উদিত হওয়া হতে যুহরের সালাত পর্যন্ত হয় তাহলে ফাজ্রের (ফজরের) সালাতের মতো করে আদায় করবে আর যদি যুহরের পর হতে মাগরিব পর্যন্ত হয় তাহলে যুহর ও ‘আসরের সালাতের মতো আদায় করবে। আর যদি চন্দ্রগ্রহণ মাগরিব পর হতে ‘ইশা পর্যন্ত হয় তাহলে মাগরিবের সালাতের মতো আদায় করবে আর যদি ‘ইশার পর হতে সকাল পর্যন্ত হয় তাহলে ‘ইশার সালাতের মতো আদায় করবে।
৭। দু’ রাক্‘আত আদায় করবে আর প্রতি রাক্‘আতে একটি রুকূ' হবে। আমরা যা উল্লেখ করেছি এগুলো পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও বেশি গ্রহণযোগ্য প্রতি রাক্‘আতে দু’টি করে রুকূ', কেননা বুখারী ও মুসলিম হতে সাব্যস্ত। জমহূর ‘উলামাহ্ ও ইমাম ইবনু তায়মিয়্যার মতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় শুধু একবার সূর্যগ্রহণের সালাত আদায় করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
১৪৮১-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে খুসূফে তাঁর ক্বিরাআত (কিরআত) স্বরবে পড়লেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: جَهَرَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صَلَاةِ الخسوف بقرَاءَته
ব্যাখ্যা: এ হাদীস সুস্পষ্ট দলীল যে, সূর্যগ্রহণের সালাতের ক্বিরাআত (কিরআত) সশব্দে হতে হবে। নীরবে হবে না। এটা আরও প্রমাণ করে যে, সুন্নাত হল সশব্দে নীরবে না। অনুরূপ হাদীস আসমা হতে বর্ণিত আছে বুখারীতে। এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সররে ও নীরবে পড়ার ব্যাপারে মতভেদ আছে তবে শক্তিশালী মত হল সশব্দে বা স্বরবে পড়া, কারণ এ ব্যাপারে সহীহ ও অধিকাংশ হাদীস বর্ণিত হয়েছে আর এটা হ্যাঁ সূচক যা না বাচকের উপরে প্রাধান্য পাবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
১৪৮২-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কালে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনগণকে সাথে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাতে তিনি সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ পড়ার মতো দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দাঁড়ালেন। তারপর দীর্ঘ রুকূ’ করলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তবে এ দাঁড়ানো ছিল প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা স্বল্প সময়ের। এরপর আবার লম্বা রুকূ’ করলেন। তবে তা প্রথম রুকূ’ অপেক্ষা ছোট ছিল। তারপর রুকূ’ হতে মাথা উঠালেন ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। তারপর আবার দাঁড়ালেন ও দীর্ঘসময় পর্যন্ত দাঁড়ালেন। তবে তা প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা খাটো ছিল। তারপর আবার দীর্ঘ রুকূ’ করলেন। তাও আগের রুকূ’ অপেক্ষা ছোট। তারপর মাথা উঠালেন ও দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। তবে তা আগের দাঁড়ানোর চেয়ে কম। তারপর আবার দীর্ঘ রুকূ’ করলেন। তবে এ রুকূ’ও আগের রুকূ’ অপেক্ষা ছোট। তারপর মাথা উঠালেন ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। এরপর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করলেন। আর এ সময় সূর্য পূর্ণ জ্যোতির্ময় হয়ে উঠে গেল।
এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সূর্য ও চাঁদ আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টো নিদর্শন। তারা কারো জন্ম-মৃত্যুতে গ্রহণযুক্ত হয় না। তোমরা এরূপ ’গ্রহণ’ দেখলে আল্লাহ তা’আলার যিকর করবে। সাহাবীগণ নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনাকে আমরা দেখলাম। আপনি যেন এ স্থানে কিছু গ্রহণ করছেন। তারপর দেখলাম পেছনের দিকে সরে গেলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন আমি জান্নাত দেখতে পেলাম। জান্নাত হতে এক গুচ্ছ আঙ্গুর নিতে আগ্রহী হলাম। যদি আমি তা গ্রহণ করতাম তাহলে তোমরা দুনিয়ায় বাকী থাকা পর্যন্ত সে আঙ্গুর খেতে পারতে।
আর আমি তখন জাহান্নাম দেখতে পেলাম। জাহান্নামের মতো বীভৎস কুৎসিত দৃশ্য আর কখনো আমি দেখিনি। আমি আরো দেখলাম যে, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসীই নারী। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কি কারণে তা হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে থাকে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না; বরং স্বামীর সাথে কুফরী করে থাকে। তারা (স্বামীর) সদ্ব্যবহার ভুলে যায়। সারা জীবন যদি তুমি তাদের কারো সাথে ইহসান করো। এরপর (কোন সময়) যদি সে তোমার পক্ষ হতে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখে বলে উঠে। আমি জীবনেও তোমার কাছে ভাল ব্যবহার পেলাম না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ
عَن عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: انْخَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلًا نَحْوًا مِنْ قِرَاءَةِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا ثُمَّ رَفَعَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ قَامَ قِيَامًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ فَقَامَ قِيَامًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الْقِيَامِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَكَعَ رُكُوعًا طَوِيلًا وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الْأَوَّلِ ثُمَّ رَفَعَ ثُمَّ سَجَدَ ثمَّ انْصَرف وَقد تجلت الشَّمْس فَقَالَ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَا يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ» . قَالُوا: يَا رَسُولَ الله رَأَيْنَاك تناولت شَيْئا فِي مقامك ثمَّ رَأَيْنَاك تكعكعت؟ قَالَ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «إِنِّي أريت الْجنَّة فتناولت عُنْقُودًا وَلَوْ أَخَذْتُهُ لَأَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا وأريت النَّار فَلم أر منْظرًا كَالْيَوْمِ قَطُّ أَفْظَعَ وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ» . قَالُوا: بِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «بِكُفْرِهِنَّ» . قِيلَ: يَكْفُرْنَ بِاللَّهِ؟ . قَالَ: يَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ وَيَكْفُرْنَ الْإِحْسَانَ لَو أَحْسَنت إِلَى أحداهن الدَّهْر كُله ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ: مَا رَأَيْتُ مِنْك خيرا قطّ
ব্যাখ্যা: দারাকুতনীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাক্‘আতে সূরাহ্ ‘আনকাবূত অথবা সূরাহ্ রূম পড়েছেন আর দ্বিতীয় রাক্‘আতে সূরাহ্ ইয়াসীন পড়েছে। আর বায়হাক্বীর হাদীসে প্রথম রাক্‘আতে সূরাহ্ ‘আনকাবূত এবং দ্বিতীয় রাক্‘আতে লুক্বমান অথবা ইয়াসীন পড়েছেন।
(إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ايَتَانِ مِنْ ايَاتِ اللّهِ) নিশ্চয় সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম দু’টি নিদর্শন। এ কথাটি ইঙ্গিত করে যে, সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাতের হুকুম একই। আর নিদর্শন দ্বারা প্রমাণ করে আল্লাহর একত্ববাদ তার ক্ষমতা ও বড়ত্বের উপর অথবা তার বান্দাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করান কঠিনতা ও দাপটের মাধ্যমে যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ وَمَا نُرْسِلُ بِالْايَاتِ إِلَّا تَخْوِيْفًا
‘‘ভয় প্রদর্শনের উদ্দেশেই কেবল আমি নিদর্শন পাঠিয়ে থাকি।’’ (সূরাহ্ বানী ইসরাঈল ১৭ : ৫৯)
কারও মৃত্যুর কারণে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ হয় না। জাহিলী যুগে এ ধারণা বা বিশ্বাস ছিল স্বনামধন্য ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ প্রকাশ পায়। যেমন বুখারীর হাদীসে আবূ বাকরাহ্-এর কারণ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুত্র ইব্রাহীম মারা গেল মানুষেরা বলতে লাগল যে ইব্রাহীম এর মৃত্যুর কারণে সূর্যগ্রহণ প্রকাশ পেয়েছে। সামনে নু‘মান বিন বাশীর-এর হাদীস আসছে জাহিলিয়্যাতের লোকেরা বলত সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ প্রকাশ পায় কেবল স্বনামধন্য বক্তির মৃত্যুর জন্য আর এ হাদীস জাহিলিয়্যাতে এ চিন্তা চেতনা ও কুসংস্কৃতিকে বাতিল করে।
(فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذلِكَ فَاذْكُرُوا اللّهَ) আর যখন তোমরা এমনটি (সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ) দেখবে আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), তাসবীহ, তাকবীর, দু‘আ, তাহলীল, ইসতিগফার ও সকল দু‘আর মাধ্যমে। আর এটা প্রমাণ করে চন্দ্রগ্রহণের সালাত শারী‘আত সম্মত।
(إِنِّي أريت الْجنَّة) ‘আমি জান্নাত দেখেছি’ তাঁর এই দেখাটা বাস্তবে তথা স্বচক্ষক্ষ দেখেছেন। আর অন্য বর্ণনায় জানাযায় যুহরের সালাতে এমনটি ঘটেছিল এটি ধর্তব্য বিষয় না। কেননা তিনি দু’বার বা অনেকবার জান্নাত জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করেছেন বিভিন্ন আকৃতিতে। আর আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বিশ্বাস হল জান্নাত ও জাহান্নামকে সৃষ্টি করা হয়েছে যা বর্তমান পর্যন্ত বাস্তবে বিদ্যমান।
(وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ) ‘আর জাহান্নামে অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা দেখেছি’ এ বক্তব্যটি আবূ হুরায়রার হাদীসের সাথে দ্বন্দ্ব। তাতে বলা হয়েছে সর্বনিম্ন জান্নাতবাসীর অবস্থান দুনিয়াতে যার দু’জন স্ত্রী ছিল। আর এ মোতাবেক মহিলারা দুই তৃতীয়াংশ জান্নাতের অধিবাসী হবে। দ্বন্দ্ব সমাধানে বলা হয় আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস তাদের মহিলাদের জাহান্নাম হতে বের হবার পর এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। আর জাবির (রাঃ)-এর হাদীস যেখানে বলা হয়েছে অধিকাংশ মহিলাদের আমি সেখানে দেখেছি যারা যদি তাদেরকে আমানাত দেয়া হয় তাহলে তা খিয়ানাত করে আর তাদের নিকট কিছু চাইলে কৃপণতা করে আর যখন তারা চায় খুব কাকুতি মিনতি করে আর যদি তাদেরকে দেয়া হয় তাহলে নাশুকর করে। সুতরাং এটা প্রমাণ করে এমন খারাপ গুণে গুণান্বিত মহিলারা জাহান্নামে অবস্থান করবে।
হাদীসের শিক্ষাঃ
আল্লাহর পক্ষ হতে ভীতিকর কোন পরিবেশ দেখলে দ্রুত তার আনুগত্যে ফিরে যাওয়া এবং বালা মুসীবাতকে প্রতিহত করা আল্লাহর স্মরণ এবং বিভিন্নভাবে তার আনুগত্য ও পরস্পরের অধিকারকে সন্ধান আর আবশ্যিকভাবে নি‘আমাত দানকারীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ইত্যাদির মাধ্যমে।
পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
১৪৮৩-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) ও ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বরাতে বর্ণিত হওয়া এ ধরনের একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বস্তুতঃ ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় গেলেন। তিনি দীর্ঘ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। তারপর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করলেন। তখন সূর্য বেশ আলোকিত হয়ে গেছে। তারপর তিনি জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য প্রদান করলেন। তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহর গুণকীর্তন করলেন। তারপর বললেন, সূর্য ও চাঁদ আল্লাহর নিদর্শনাবলীর দু’টো নিদর্শন। কারো মৃত্যুতে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। আর কারো জন্মের কারণেও হয় না। তোমরা এ অবস্থা দেখতে পেলে আল্লাহর নিকট দু’আ করো এবং তার বড়ত্ব ঘোষণা কর। সালাত আদায় কর। দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) ও খয়রাত করো। এরপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাতেরা! আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তা’আলার চেয়ে বেশী ঘৃণাকারী আর কেউ নেই। তাঁর যে বান্দা ’যিনা’ তথা ব্যভিচার করবে অথবা তার যে বান্দী ’যিনা’ তথা ব্যভিচার করবে তিনি তাদের ঘৃণা করেন। হে মুহাম্মাদের উম্মাতগণ! আল্লাহর কসম! আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে, নিশ্চয়ই তোমরা কম হাসতে ও বেশী কাঁদতে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ
وَعَنْ عَائِشَةَ نَحْوُ حَدِيثِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَقَالَتْ: ثُمَّ سَجَدَ فَأَطَالَ السُّجُودَ ثُمَّ انْصَرَفَ وَقَدِ انْجَلَتِ الشَّمْسُ فَخَطَبَ النَّاسَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَا يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَادْعُوا اللَّهَ وَكَبِّرُوا وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا» ثُمَّ قَالَ: «يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ وَاللَّهِ مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرُ مِنَ اللَّهِ أَنْ يَزْنِيَ عَبْدُهُ أَوْ تَزْنِيَ أَمَتُهُ يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ وَاللَّهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلًا وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا»
ব্যাখ্যা: (فَخَطَبَ النَّاسَ) ‘অতঃপর তিনি জনগণের উদ্দেশে খুতবাহ্ প্রদান করছেন।’ এটা সুস্পষ্ট প্রমাণ করে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাতে খুতবাহ্ রয়েছে। এ মতে শাফি‘ঈ, ইসহাক ইবনু জারীর ও আহলে হাদীসের ফকীহগণ রায় দিয়েছেন। আর আবূ হানীফাহ্, মালিক ও আহমাদ এর মতে এ সালাতে কোন খুতবাহ্ নেই। আর তারা দলীল হিসেবে বলেন কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), তাকবীর এবং সদাক্বার আদেশ দিয়েছেন এবং খুতবার আদেশ দেননি আর যদি সুন্নাহ হত তাহলে আদেশ দিতেন। এর জবাবে বলা হবে শারী‘আত সম্মত ও সুন্নাহ হওয়ার জন্য বলার মাধ্যমে বর্ণনার প্রতি ভ্রূক্ষক্ষপ করে না বরং প্রমাণিত হয় তাঁর কর্মের দ্বারা আর এখানে এবং অনেক হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে তিনি সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাতের পর খুতবাহ্ প্রদান করেছেন।
(فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذلِكَ فَادْعُوا اللّهَ وَكَبِّرُوْا وَصَلُّوْا) ‘যখন এমনটি দেখবে আল্লাহকে ডাকবে এবং তার বড়ত্ব ঘোষণা করবে আর সালাত আদায় করবে। আর বুখারীতে আবূ মাস্‘ঊদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় মানুষের মধ্যে কারও মৃত্যুর কারণে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ প্রকাশ পায় না বরং তা আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম দু’টি নিদর্শন যখন তোমরা এমনটি দেখবে তোমরা দাঁড়াবে এবং সালাত আদায় করবে।
হাফিয ইবনু হাজার এ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করেন যে, সূর্যগ্রহণের সালাতের নির্ধারিত কোন সময় নেই কেননা সালাতকে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে সূর্যগ্রহণের সাথে আর তা দিনের যে কোন সময় হতে পারে।
(تَصَدَّقُوْا) তোমরা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) কর কেননা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) রবের রাগকে মিটিয়ে দেয়। আর হাদীস প্রমাণ করে যে, সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের সময় দ্রুত সালাত ও সকল প্রকার উল্লেখিত দু‘আ, তাকবীর ও সদাক্বার প্রতি ধাবিত হওয়া। আল্লামা শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী বলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিদর্শন যখন প্রকাশ পায় তখন আত্মা যে নিদর্শনের প্রতি অনুগত হয় এবং আল্লাহর প্রতি শরণাপন্ন হয় আর দুনিয়া হতে বিচ্ছিন্ন হয়। সুতরাং ঐ অবস্থাটি মু’মিনদের জন্য গনীমাত তখন যে অনুনয়কারী হবে দু‘আ, সালাত ও সকল ভাল কাজে। আর (মনে হবে) দুর্ঘটনাটি বা বিপদের সময়টি অনুরূপ বিশ্বে নিশ্চয় আল্লাহর বিচার কার্যের সময়। সুতরাং এ সময়ে চিন্তাবিদরা আতঙ্ক অনুভব করবে। আর এ জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সময়ে আতঙ্ক অনুভব করেছিলেন। আর এটা পৃথিবীতে আধ্যাত্মিক সংক্রমণ সময় মুহসিনদের জন্য উপযোগী সময় তারা এ সময়ে আল্লাহর নিকটবর্তী হবে বা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। যেমন নু‘মান-এর হাদীস যখন আল্লাহ তার সৃষ্টি জীবের জন্য কোন নিদর্শন প্রকাশ করেন তখন তারা তার জন্য ভীত হয়।
(لَوْ تَعْلَمُوْنَ مَا أَعْلَمُ) ‘যদি তোমরা জানতে আমি যা জানি’। বাজি বলেনঃ কিছু জ্ঞান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবীর জন্য করেছেন যা অন্য কাউকে জানান না।
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের হিকমাহ্ঃ
১। সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের বিষয়টি এমন একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে যে, অতি শীঘ্রই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘটিত হবে।
২। আর শাস্তির একটি চিত্র, যে পাপ কাজ করে না আর যে পাপ কাজ করে তার জন্য কিরূপ হবে।
৩। আর সতর্ক করা হয়েছে ভয়ের সাথে যেন আশার নীতি অবলম্বন করে। কেননা সূর্যগ্রহণের পরে তা দীপ্তমান হয়। যেন মু’মিন আশা নিয়ে রবকে ভয় করে।
৪। ভৎর্সনা করা হয়েছে তাদেরকে যারা সূর্য ও চন্দ্রের পূজা করে।
পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
১৪৮৪-[৫] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সূর্যগ্রহণ হলো। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেলেন। তাঁর উপর ’ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ’ সংঘটিত হয়ে যাবার মতো ভয়-ভীতি আরোপিত হলো। অতঃপর তিনি মসজিদে গমন করলেন। দীর্ঘ ’ক্বিয়াম (কিয়াম)’ ’রুকূ’ ও ’সিজদা্ (সিজদা/সেজদা)’ দিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সাধারণতঃ (এত দীর্ঘ সালাত আদায় করতে) আমি কখনো তাঁকে দেখেনি। অতঃপর তিনি বললেন, এসব নিদর্শনাবলী যা আল্লাহ তা’আলা পাঠিয়ে থাকেন তা না কারো মৃত্যুতে সংঘটিত হয়ে থাকে, আর না কারো জন্মে হয়ে থাকে। বরং এসব দিয়ে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে থাকেন। অতএব তোমরা যখন এ নিদর্শনাবলীর কোন একটি অবলোকন করবে, আল্লাহকে ভয় করবে। তাঁর যিকর করবে। তাঁর নিকট দু’আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ
وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: خَسَفَتِ الشَّمْسُ فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَزِعًا يَخْشَى أَنْ تَكُونَ السَّاعَةَ فَأَتَى الْمَسْجِدَ فَصَلَّى بِأَطْوَلِ قِيَامٍ وَرُكُوعٍ وَسُجُودٍ مَا رَأَيْتُهُ قَطُّ يَفْعَلُهُ وَقَالَ: «هَذِهِ الْآيَاتُ الَّتِي يُرْسِلُ اللَّهُ لَا تَكُونُ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ وَلَكِنْ يُخَوِّفُ اللَّهُ بِهَا عِبَادَهُ فَإِذَا رَأَيْتُمْ شَيْئًا مِنْ ذَلِكَ فَافْزَعُوا إِلَى ذِكْرِهِ وَدُعَائِهِ واستغفاره»
ব্যাখ্যা: (أَنْ تَكُوْنَ السَّاعَةَ) ‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘাবড়ানো অবস্থায় উঠে দাঁড়ালেন।’ এতে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘঠিত হয়ে যায় নাকি এ ভয়ে ভীত হয়ে পড়লেন। এ হাদীস বুঝতে সমস্যা সৃষ্টি করে যে, ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘটিত হয়েছে অথবা ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) পূর্বে অনেক বড় বড় নিদর্শন রয়েছে যেমন, বিভিন্ন দেশ বিজয়। খুলাফায়ে রাশিদীনদের রাষ্ট্র নেতৃত্ব দান। খাওয়ারিজদের আবির্ভাব। সূর্য পশ্চিম দিকে উদয় দাজ্জালের আগমন ইত্যাদি এগুলোর একটিও হয়নি।
অনেক জবাব দেয়া হয়েছে তন্মধ্যে-
১। ভয়, আতঙ্ক হঠাৎ করে বড় বিষয়ের আগমনের প্রাধান্যতা মানুষকে নির্বাচক করে দেয় যা সে জানে।
২। আসলে বর্ণনাকারী ধারণা করছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভয় পেয়েছেন যে, ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সন্নিকটে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যিকারে এমনটি ভাবেননি বরং তিনি সালাতের উদ্দেশে দ্রুত বের হয়েছেন।
৩। তিনি ভয় পেয়েছেন এজন্য যে, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) আলামতসমূহের এটা ভূমিকা স্বরূপ যেন সূর্য পশ্চিমে উদিত হওয়া।
(فَأَتَى الْمَسْجِدَ) তিনি মসজিদে আসলেন হাদীসে এটা প্রমাণিত হয় যে, সূর্যগ্রহণের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মসজিদে পড়া সুন্নাহ আর এটা ‘উলামাদের প্রসিদ্ধ মত।
হাদীসে ইঙ্গিত বহন করে যে, দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে ধাবিত হওয়া যা আল্লাহ আদেশ করেছেন আর সতর্ক করা হয়েছে যে বিপদসমূহের সময় আল্লাহর নিকট আশ্রয় নেয়ার দু‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে।
আরও ইঙ্গিত বহন করে যে, গুনাহ হচ্ছে বিপদাপদ ও দ্রুত শাস্তির কারণ এবং ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবাহ্ এ সকল মুসীবাত দূরীভূত করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
১৪৮৫-[৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় যেদিন তাঁর ছেলে ইব্রাহীমের ইন্তিকাল হলো এদিন সূর্যগ্রহণ হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনগণকে নিয়ে ’ছয় রুকূ’ ও চার সাজদায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ مَاتَ إِبْرَاهِيمُ ابْنُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى بِالنَّاسِ سِتَّ رَكَعَاتٍ بِأَرْبَعِ سَجَدَاتٍ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (مَاتَ إِبْرَاهِيْمُ ابْنُ رَسُولُ اللّهِ ﷺ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছেলে ইব্রাহীম মারা গেছেন। তার মা মারিয়্যাহ্ কিবতিয়্যাহ্ সারিয়্যাহ্ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপপত্মী বা রক্ষিতা ছিলেন যাকে মুক্বাওক্বিস ইসকান্দার ও মিসরের অধিপতি উপঢৌকন দিয়েছিলেন। আর তিনি (ইব্রাহীম) জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৮ম হিজরীর যিলহাজ্জ মাসে মৃত্যুবরণ করেন ১৬ মাস বয়সে অথবা ১৭/১৮ মাস বয়সে। তবে এ বিষয়ে গবেষণা করে মরহুম মাহমূদ বাশা আল কুলকী বলেন, সূর্যগ্রহণের দিন মারা গেছে ইব্রাহীম যা সংঘটিত হয়েছিল দশম হিজরীর ২৯শে শাও্ওয়াল সোমবার সকাল ৮টা ৩০মিনিটে। ৬৩২ খৃঃ ২৭ জানুয়ারী মোতাবেক মদীনাতে। তার জন্ম নবম হিজরীর জামাদিউল উলা মাসে সে হিসেবে মৃত্যু ১৮ মাস অথবা ১৭ মাস বয়সে।
(بِأَرْبَعِ سَجَدَاتٍ) চার সিজদা (সিজদা/সেজদা) তথা দু’ রাক্‘আতে। সুতরাং প্রতি রাক্‘আতে তিন রুকূ' ও দু’ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা)। ত্বীবী বলেন, তিনি দু’ রাক্‘আত আদায় করেছেন প্রতি রাক্‘আতে তিনটি করে রুকূ' ছিল।
পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
১৪৮৬-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় (দু’ রাক্’আত) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আট রুকূ’ ও চার সাজদায় আদায় করেছেন।[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ
وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: صلى الله عَلَيْهِ وَسلم حِين كسفت الشَّمْس ثَمَان رَكْعَات فِي أَربع سَجدَات
পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
১৪৮৭-[৮] ’আলী (রাঃ) হতেও ঠিক এরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ
وَعَن عَليّ مثل ذَلِك. رَوَاهُ مُسلم
পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
১৪৮৮-[৯] ’আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় মদীনায় আমি আমার তীরগুলো (লক্ষস্থলে) নিক্ষেপের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছিলাম। এ সময় সূর্যগ্রহণ শুরু হলো। তীরগুলো আমি ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। মনে মনে বললাম, আল্লাহর কসম! আমি আজ দেখব সূর্যগ্রহণের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আজ কি করেন। এরপর আমি তাঁর নিকট এলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাতে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি তাঁর হাত দু’টি উঠিয়ে সূর্যগ্রহণ ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত আল্লাহর তাসবীহ্, তাহলীল, তাকবীর ও হামদ করেছেন। আল্লাহর দরবারে দু’আয় মশগুল রয়েছেন। সূর্যগ্রহণ ছেড়ে গেলে তিনি দু’টি সূরাহ্ পড়লেন ও দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন- (মুসলিম; শারহে সুন্নাতেও হাদীসটি এভাবে ’আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ্ হতে বর্ণিত হয়েছে। আর মাসাবীহ হতেও এ বর্ণনাটি জাবির ইবনু সামুরাহ্ হতে নকল করা হয়েছে।)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: كُنْتُ أرتمي بأسهم لي بالمدين فِي حَيَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ كُسِفَتِ الشَّمْسُ فَنَبَذْتُهَا. فَقُلْتُ: وَاللَّهِ لَأَنْظُرَنَّ إِلَى مَا حَدَثَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي كُسُوفِ الشَّمْسِ. قَالَ: فَأَتَيْتُهُ وَهُوَ قَائِمٌ فِي الصَّلَاةِ رَافِعٌ يَدَيْهِ فَجعل يسبح ويهلل وَيكبر ويحمد وَيَدْعُو حَتَّى حَسَرَ عَنْهَا فَلَمَّا حَسَرَ عَنْهَا قَرَأَ سُورَتَيْنِ وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ فِي صَحِيحِهِ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ وَكَذَا فِي شَرْحِ السُّنَّةِ عَنْهُ وَفِي نُسَخِ الْمَصَابِيحِ عَنْ جَابِرِ بن سَمُرَة
ব্যাখ্যা: (وَهُوَ قَائِمٌ فِي الصَّلَاةِ رَافِعٌ يَدَيْهِ) সালাতে দন্ডায়মান অবস্থায় দু’হাত উঠাতেন। নাবাবী বলেন, এতে আমাদের সাথীদের জন্য সুস্পষ্ট দলীল যে, কুনূতেও দু’হাত উত্তোলন হবে আর দু‘আর সালাতে হাত উত্তোলন করা যাবে না তাদের বিরুদ্ধেও এটা দলীল।
(فَلَمَّا حَسَرَ عَنْهَا قَرَأَ سُورَتَيْنِ وَصَلّى رَكْعَتَيْنِ) ‘অতঃপর সূর্যগ্রহণ ছেড়ে গেল’ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি সূরাহ্ পাঠ করলেন এবং দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করলেন। এটা সুস্পষ্ট যে, সূর্য দ্বীপ্তমান হবার পরে সালাতরত অবস্থায় ছিলেন এটা সকল রিওয়ায়াতের বিপরীত। অনেকের মন্তব্য যে, এটা স্বতন্ত্র নফল সালাত ছিল সূর্যগ্রণের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছিল না। এটা এ কথার বিপরীত যেন (فَأَتَيْتُه وَهُوَ قَائِمٌ فِي الصَّلَاةِ) রাবী বলেন, আমি আসলাম এবং তাঁকে (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) সালাত অবস্থায় পেলাম।
লাম্‘আত গ্রন্থে বলেনঃ দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পূর্ণ করেছেন যা তিনি আরম্ভ করেছিলেন, সালাতরত অবস্থায় সূর্যগ্রহণ ছেড়ে গেছে। ত্বীবী বলেনঃ সালাতে প্রবেশ করেছেন প্রথম কিয়ামে অবস্থান করেছেন আর তাসবীহ, তাহলীল তাকবীর, তাহমীদ করেছেন, ইতোমধ্যে সূর্যগ্রহণ ছেড়ে গেছে। অতঃপর কুরআন পড়লেন, রুকূ' করলেন, সিজদা(সিজদা/সেজদা) করলেন। অনুরূপ দ্বিতীয় রাক্‘আতের জন্য দাঁড়ালেন, তিলাওয়াত করলেন, রুকূ' করলেন সিজদা (সিজদা/সেজদা) করলেন তাশাহুদ পাঠ করলেন এবং সালাম ফিরালেন। আর এ হাদীস প্রমাণ করে তিনি দু’ রাক্‘আত আদায় করেছেন এবং প্রত্যেক রাক্‘আতে একটি করে রুকূ' করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
১৪৮৯-[১০] আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণ শুরু হলে দাস মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ
وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَتْ: لَقَدْ أَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْعَتَاقَةِ فِي كُسُوفِ الشَّمْسِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: সূর্যগ্রহণের সময় দাসমুক্ত করা শারী‘আত সম্মত। এ আদেশটি প্রমাণ বহন করে মুস্তাহাব তথা ভালোর উপর ওয়াজিব হিসেবে না, আর দাস মুক্ত ও সকল প্রকার কল্যাণসূচক কাজ সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সময় অনুমোদনযোগ্য, কেননা ভালো কাজসমূহ ‘আযাবকে প্রতিহত করে।