পরিচ্ছেদঃ ৫০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত
ফুকাহাদের নিকট كُسُوْفٌ শব্দটি ব্যবহার হয় সূর্যগ্রহণের ক্ষেত্রে আর خُسُوْفٌ ব্যবহার হয় চন্দ্রগ্রহণের ক্ষেত্রে কতিপয়ের মতে خُسُوْفٌ ও كُسُوْفٌ শব্দ দু’টি চন্দ্র ও সূর্য উভয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। কুসতুলানী এটা সহীহ মত। كُسُوْفٌ সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের হাদীস প্রায় সতেরজন সাহাবী হতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত।
আর জেনে রাখা দরকার كُسُوْفٌ ও خُسُوْفٌ সালাত শারী’আত সম্মত হওয়ার ব্যাপারে কোন মতানৈক্য নেই আর এটা সুন্নাহ ইজমায়ে উম্মাহ দ্বারা প্রমাণিত। আর তার হুকুম ও বৈশিষ্ট্যের পদ্ধতির ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে ইমাম শাফি’ঈ ও আহমাদ বলেনঃ সূর্যগ্রহণের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সুন্নাতে মুয়াক্কাদা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এ সালাত আদায় করেছেন এবং জনগণকে একত্রিত করেছেন। আর আবূ হানীফার মতে সুন্নাহ তবে মুয়াক্কাদাহ্ না অনুরূপ চন্দ্রগ্রহণের সালাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্। শাফি’ঈ ও আহমাদের নিকট আর আবূ হানীফাহ্ ও মালিক-এর নিকট ভাল। প্রাধান্য মত হল শাফি’ঈ ও আহমাদের মত।
১৪৮০-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন তিনি একজন আহবানকারীকে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) প্রস্তুত মর্মে ঘোষণা দেয়ার জন্য পাঠালেন। (লোকজন একত্র হলে) তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে দু’ দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। এতে চারটি রুকূ’ ও চারটি সিজদা্ করলেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, এ দিন যত দীর্ঘ রুকূ’ সিজদা্ আমি করেছি এত দীর্ঘ রুকূ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) আর কোন দিন করিনি। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الْخُسُوْفِ
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: إِنَّ الشَّمْسَ خَسَفَتْ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَعَثَ مُنَادِيًا: الصَّلَاةُ جَامِعَةٌ فَتقدم فصلى أَربع رَكْعَات وَفِي رَكْعَتَيْنِ وَأَرْبع سَجدَات. قَالَت عَائِشَة: مَا رَكَعْتُ رُكُوعًا قَطُّ وَلَا سَجَدْتُ سُجُودًا قطّ كَانَ أطول مِنْهُ
ব্যাখ্যা: হাদীস প্রমাণ করে সালাতুল কুসূফ এর রুকূ' ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দীর্ঘ হবে আর হাদীস আরও প্রমাণ করে সালাতুল কুসূফ জামা‘আতবদ্ধভাবে হবে। আর এটা মালিক, শাফি‘ঈ ও জমহূর ‘উলামার মত। ইমাম তিরমিযী বলেন, আহলে হাদীস তথা মুহাদ্দিসরা সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) জামা‘আতের সাথে আদায় করতেন। আর ইমাম বুখারী অধ্যায় বেঁধেছেন ‘‘সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সালাত জামা‘আতবদ্ধভাবে আদায়’’।
এ সালাতের পদ্ধতিঃ
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের সালাতের পদ্ধতির ব্যাপারে বিভিন্নতা এসেছে তন্মধ্যে-
১। দু’ রাক্‘আত সালাত আর প্রত্যেক রাক্‘আতে দু’টি করে রুকূ'।
২। প্রত্যেক রাক্‘আতে তিনটি করে রুকূ'।
৩। প্রত্যেক রাক্‘আতে চারটি করে রুকূ'।
৪। প্রত্যেক রাক্‘আতে পাঁচটি করে রুকূ'।
৫। দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করে সালাম দিবে আবার দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করে সালাম দিবে, এভাবে পড়তে থাকবে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ দূরীভূত হওয়া পর্যন্ত।
৬। নিকটবর্তী সালাতের মতো করে আদায় করবে তথা যদি সূর্যগ্রহণ সূর্য উদিত হওয়া হতে যুহরের সালাত পর্যন্ত হয় তাহলে ফাজ্রের (ফজরের) সালাতের মতো করে আদায় করবে আর যদি যুহরের পর হতে মাগরিব পর্যন্ত হয় তাহলে যুহর ও ‘আসরের সালাতের মতো আদায় করবে। আর যদি চন্দ্রগ্রহণ মাগরিব পর হতে ‘ইশা পর্যন্ত হয় তাহলে মাগরিবের সালাতের মতো আদায় করবে আর যদি ‘ইশার পর হতে সকাল পর্যন্ত হয় তাহলে ‘ইশার সালাতের মতো আদায় করবে।
৭। দু’ রাক্‘আত আদায় করবে আর প্রতি রাক্‘আতে একটি রুকূ' হবে। আমরা যা উল্লেখ করেছি এগুলো পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও বেশি গ্রহণযোগ্য প্রতি রাক্‘আতে দু’টি করে রুকূ', কেননা বুখারী ও মুসলিম হতে সাব্যস্ত। জমহূর ‘উলামাহ্ ও ইমাম ইবনু তায়মিয়্যার মতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় শুধু একবার সূর্যগ্রহণের সালাত আদায় করেছেন।