পরিচ্ছেদঃ ৪৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানী
কুরবানী করা শারী’আত অনুমোদিত যা কুরআন সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন দ্বারা প্রমাণিত আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ فَصَلِّ لرَبِّكَ وَانْحَرْ ’’(ঈদের) সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর’’- (সূরাহ্ আল কাওসার ১০৮: ২)। যেমনটি অধিকাংশ তাফসীরবিদরা বলেছেন আর মুতাওয়াতিরভাবে সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত আর ইজমা হয়েছে এ ব্যাপারে কোন মতানৈক্য নেই। আর মুসলিমদের ’আমল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়কাল হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত মুতাওয়াতিরভাবে চলে আসছে। আর এটা ইব্রাহীম (আঃ)-এর সুন্নাহ যেমন আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ وَفَدَيْنهُ بِذَبْحٍ عَظِيْمٍ ’’আমি এক মহান কুরবানীর বিনিময়ে পুত্রটিকে ছাড়িয়ে নিলাম’’- (সূরাহ্ আস্ স-ফফা-ত ৩৭: ১০৭)। আর অধিকাংশ ’আলিমদের অভিমত এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্।
১৪৫৩-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক কুরবানীর ঈদে ধূসর রং ও শিংওয়ালা দু’টি দুম্বা কুরবানী করলেন। নিজ হাতে তিনি এ দুম্বা দু’টিকে বিসমিল্লা-হ ও আল্ল-হু আকবার বলে যাবাহ করলেন। আমি তাঁকে (যাবাহ করার সময়) দুম্বা দু’টির পাঁজরের উপর নিজের পা রেখে ’বিসমিল্লা-হি ওয়াল্ল-হু আকবার’ বলতে শুনেছি। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابٌ فِي الْأُضْحِيَّةِ
عَن أنس قَالَ: ضَحَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ أَقْرَنَيْنِ ذَبَحَهُمَا بِيَدِهِ وَسَمَّى وَكبر قَالَ: رَأَيْته وضاعا قَدَمَهُ عَلَى صِفَاحِهِمَا وَيَقُولُ: «بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أكبر»
ব্যাখ্যা: (أَمْلَحَيْنِ) দ্বারা উদ্দেশ্য সাদা মিশ্রিত হয়েছে কালো। কারো মতেঃ সাদা কালো মিশ্রিত তবে সাদা বেশী এবং এটাই সঠিক। কারো মতেঃ সম্পূর্ণভাবে সাদা। (أَقْرَنَيْنِ) যার দু’টি সুন্দর শিং রয়েছে, কারও মতে লম্বা শিং, কারো মতে ত্রুটিমুক্ত শিং। আর এটা প্রমাণ করে শিংযুক্ত পশু কুরবানী করা ভাল আর শিংবিহীন হতে। আরো প্রমাণ করে যে, কুরবানীর পশু সুন্দর ও রং ভাল হওয়া শারী‘আত সম্মত।
(وَضَاعَا قَدَمَه عَلى صِفَاحِهِمَا) তিনি যাবাহ করার সময় দু’পা দুম্বাদ্বয়ের পাঁজরের উপর রেখেছেন। ইবনু হাজার বলেন, এটা ভাল যে পা কুরবানী জন্তুর গলার ডান পাঁজরে রাখা আর সবাই ঐকমত্য হয়েছেন যে, জন্তুটিকে বাম পাশে শুয়ে দেয়া যাতে ডান পাশে পা রাখতে পারে এতে যাবাহ করা সহজ হয়। ডান হাতে ছুরি ধরে এবং বাম হাত দিয়ে জন্তুর মাথা মজবুত করে ধরে রাখতে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানী
১৪৫৪-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি শিংওয়ালা দুম্বা আনতে বললেন যা কালোতে হাঁটে। কালোতে শোয়। কালোতে দেখে অর্থাৎ যে দুম্বার পা কালো, পেট কালো ও চোখ কালো। কুরবানী করার জন্য ঠিক এমনি একটি দুম্বা আনা হলো। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ’আয়িশাকে বললেন, হে ’আয়িশাহ্! একটি ছুরি লও। এটিকে পাথরে ধাঁর করাও। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি তাই করলাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছুরিটি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে ধরলেন। অতঃপর এটাকে পাঁজরের উপর শোয়ালেন এবং যাবাহ করতে করতে বললেন, ’’আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! তুমি এ কুরবানীকে মুহাম্মাদ, মুহাম্মাদের পরিবার এবং মুহাম্মাদের উম্মাতের পক্ষ হতে গ্রহণ করো।’’ এরপর তিনি এ কুরবানী দ্বারা লোকদের সকালের খাবার খাইয়ে দিলেন। (মুসলিম)[1]
بَابٌ فِي الْأُضْحِيَّةِ
وَعَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ بِكَبْشٍ أَقْرَنَ يَطَأُ فِي سَوَادٍ وَيَبْرَكُ فِي سَوَادٍ وَيَنْظُرُ فِي سَوَادٍ فَأُتِيَ بِهِ لِيُضَحِّيَ بِهِ قَالَ: «يَا عَائِشَةُ هَلُمِّي الْمُدْيَةَ» ثُمَّ قَالَ: «اشْحَذِيهَا بِحَجَرٍ» فَفَعَلَتْ ثُمَّ أَخَذَهَا وَأَخَذَ الْكَبْشَ فَأَضْجَعَهُ ثُمَّ ذَبَحَهُ ثُمَّ قَالَ: «بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ» . ثُمَّ ضحى بِهِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (اشْحَذِيْهَا بِحَجَرٍ) ‘একে পাথর দ্বারা ধারালো করা’ এটা মুসলিম হাদীসের অনুকূলের শাদ্দাদ বিন আওস-এর হাদীস সেখানে বলা হয়েছে যাবাহ যেন অনুগ্রহের সাথে হয় এবং ছুরি ধারালো করা হয়। সুতরাং এটা প্রমাণ করে যে, যাবাহ যেন ভালভাবে হয় কষ্ট না দিয়ে যাতে ছুরিটা ধারালো থাকে। আর হাদীসটি প্রমাণ করেঃ একটি ছাগল একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে।
আর খাত্ত্বাবী বলেন, (تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবার-পরিজন ও উম্মাতগণের পক্ষ হতে গ্রহণ করুন। এটি দলীল হিসেবে প্রমাণ করে একটি ছাগল একজন ব্যক্তি ও তার পরিবার সকলের পক্ষ হতে বৈধ হবে। যদিও তাদের সংখ্যা অধিক হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানী
১৪৫৫-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা (কুরবানীতে) মুসিন্নাহ্ ছাড়া কোন পশু যাবাহ করবে না। হ্যাঁ, যদি মুসিন্নাহ্ পাওয়া না যায় তবে দুম্বার জাযা’আহ্ যাবাহ করতে পার। (মুসলিম)[1]
بَابٌ فِي الْأُضْحِيَّةِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَذْبَحُوا إِلَّا مُسِنَّةً إِلَّا أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنَ الضَّأْن» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (مُسِنَّةً) যখন পশুর দাঁত গজায় মানুষের দাঁতের মতো না যখন বড় হয়। আর ইবনু কাসীর বলেনঃ এ নামে নামকরণের উদ্দেশ্য হল তার বয়স জানা যায় যে কোন এক দাঁতের মাধ্যমে তবে মানুষের ক্ষেত্রে এমনটি না। আর লিসানুল আরব অভিধান গ্রন্থে রয়েছে গরু ও ছাগলের ক্ষেত্রে যে দুধের দাঁত পড়ে সে নতুন দাঁত উদগত হয়েছে তাকে মুসিন্নাহ বলে। অনুরূপ ইবনু হাজারও বলেছেন। আর শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী মুয়াত্তার শারাহ-তে নাফি'-এর বক্তব্য যে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি কুরবানীতে যা মুসিন্নাহ্ নয় তা হতে বেঁচে থাকতেন। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, যার সামনের দু’দাঁত গজায়নি।
ইমাম নাবাবী বলেন, ‘উলামারা বলেছেন যেকোন পশুর তথা উট, গরু, ছাগল ইত্যাদির দাঁত বিশিষ্টকে মুসিন্নাহ বলে। আর হাদীসটি উদ্বুদ্ধ করে কুরবানীর পশুর পরিপূর্ণ ও উত্তম যেন হয়। আমি (ভাষ্যকার) বলিঃ হাদীসটি প্রমাণ করে দাঁতহীন পশু কুরবানী করা বৈধ না। বিশেষ করে এ দলীলটি যে ‘‘কিন্তু যদি মুসিন্নাহ্ সংগ্রহ করতে অসুবিধা হয় তাহলে মেষের মধ্যে জাযা‘আগুলো যাবাহ করবে।’’ উল্লেখ্য জাযা‘আহ্ বল হয় যার দাঁত গজায়নি। এ হাদীস আরও প্রমাণ করে শুধুমাত্র ভেঁড়ার ক্ষেত্রে জাযা‘আহ্ বৈধ তবে জমহূর ‘উলামারা বলেছেন অন্য পশুর ক্ষেত্রেও বৈধ। আর জেনে রাখা দরকার যে চতুস্পদ জন্তু ব্যতিরেকে কুরবানী বৈধ না যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللّهِ عَلى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيْمَةِ الْأَنْعَامِ
‘‘যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যাবাহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’’ (সূরাহ্ আল হাজ্জ ২২ : ৩৪)
আর চতুস্পদ জন্তু বলতে উট, গরু, ছাগল আর ছাগলের মধ্যে ভেঁড়াও অন্তর্ভুক্ত। কেননা এগুলো ব্যতিরেকে অন্য কোন জন্তু যাবাহের বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত হয়নি। মহিষের ব্যাপারে হানাফী মাযহাব ও অন্যান্যদের মতে বৈধ, কেননা তারা বলেন মহিষ গরুরই এক প্রকার, এর সমর্থন করে যে মহিষের যাকাত গরুর মতো। আর একটি হাদীসেও উল্লেখ যা কানযুল হাক্বায়িক্ব-এ এসেছে যে, মহিষও সাত ভাগে কুরবানীতে বৈধ।
আর উল্লেখিত হাদীস যে উদ্দেশে বর্ণিত হয়েছে তার অবস্থা সেরূপ জানা যায় না। আমার (ভাষ্যকারের) নিকট গ্রহণযোগ্য হল ব্যক্তি সীমাবদ্ধ করবে কুরবানীতে যা সহীহ সুন্নাহ হতে বর্ণিত আর অন্যদিকে ভ্রূক্ষক্ষপ করবে না। যা সহীহভাবে প্রমাণিত না রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আর না সাহাবী ও তাবি‘ঈনদের হতে। তবে মাযহাব অনুযায়ী মহিষ কুরবানী দেয় তাহলে তার ওপর কোন ভৎর্সনা নেই। এটা আমার নিকট আল্লাহ তা‘আলাই বেশি ভাল জানেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানী
১৪৫৬-[৪] ’উক্ববাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর সাহাবীদের মধ্যে কুরবানী করার জন্য বণ্টন করার সময় ’উক্ববাকে কতগুলো ছাগল-ভেড়া দিলেন। বণ্টনের পর একটি এক বছরের বাচ্চা ছাগল রয়ে গেল। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা জানালেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটি তুমি কুরবানী করে দাও। অপর এক বর্ণনায় আছে, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার ভাগে তো একটি মাত্র বাচ্চা ছাগল রইল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি এটাই কুরবানী করে দাও। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابٌ فِي الْأُضْحِيَّةِ
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْطَاهُ غَنَمًا يقسمها على صحابته ضحايا فَبَقيَ عتود فَذكره لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «ضَحِّ بِهِ أَنْتَ» وَفِي رِوَايَةٍ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أصابني جذع قَالَ: «ضح بِهِ»
ব্যাখ্যা: ছাগলের মালিকানা নিজেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন। তিনি সাহাবীদের মাঝে বণ্টনের আদেশ দিয়েছিলেন দানের জন্য। আবার হতে পারে ছাগলগুলো মালে ফায় (বিনা যুদ্ধে যে গনীমাত অর্জিত হয় তাকে মালে ফায় বলে) এর ছিল। হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, দায়িত্বশীল তথা রাষ্ট্র প্রধানের জন্য বৈধ হবে যারা বায়তুল মালের হকদার না তাদেরকে কুরবানীর জন্তু দিতে পারবে। (عَتُوْدٌ) খাস করে ছাগলের বাচ্চা যার বয়স এক বৎসর হয়েছে। আর হাদীসে প্রমাণ করে ছাগল দিয়ে কুরবানী বৈধ হবে যার এক বৎসর হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানী
১৪৫৭-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহের ময়দানেই যাবাহ করতেন বা নহর করতেন। (বুখারী)[1]
بَابٌ فِي الْأُضْحِيَّةِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْبَحُ وَيَنْحَرُ بِالْمُصَلَّى. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে যাবাহের স্থান চিহ্নিত হয়েছে বিশেষ করে ঈদগাহে যাবাহ করা ভাল যাতে (ইসলামী) সংস্কৃতি প্রকাশ করা হয় ও আল্লাহর যিকর হয়। আর যাতে প্রমাণিত হয় যাবাহের সময়, কেননা যখন ঈদগাহে যাবাহ করা হয় তখন জানা যায় যে, সালাতের পরে হচ্ছে পূর্বে না।
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানী
১৪৫৮-[৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একটি উট সাতজনের পক্ষ হতে (ঠিক একইভাবে) একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে (কুরবানী) করা বৈধ হবে। (মুসলিম, আবূ দাঊদ; ভাষা আবূ দাঊদের)[1]
بَابٌ فِي الْأُضْحِيَّةِ
وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْجَزُورُ عَنْ سَبْعَةٍ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَأَبُو دَاوُدَ وَاللَّفْظُ لَهُ
ব্যাখ্যা: অধিকাংশ ‘উলামাদের ঐকমত্য উটে সাতের বেশী অংশ বৈধ না। তবে কারও মতে দশও বৈধ। দলীল পেশ করেন ইবনু খুযায়মার হাদীস যাতে বলা হয়েছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক উট সমান দশটি ছাগল নির্ধারণ করেছেন। এ কিয়াসটি অগ্রহণযোগ্য, কেননা উটে সাত ভাগের কথা এসেছে। যেমন আহমাদ ও ইবনু মাজায় বর্ণিত হয়েছে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল আমার উপর উট কুরবানী ছিল কিন্তু তা ক্রয়ে অপারগ হয়েছি তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিলেন সাতটি ছাগল ক্রয় করতে এবং সেগুলোকে কুরবানী করতে। যদি একটি উট সমান দশটি ছাগল হত তাহলে দশটি ছাগলের কথা বলতেন আর এ কথা ধ্রুব সত্য প্রয়োজনের সময় বর্ণনা দেরী করা অবৈধ।
জমহূর ‘উলামাদের মত হল, কুরবানীতে চাই হাদীতে শারীকানা তথা ভাগাভাগি বৈধ চাই একই পরিবারের হোক বা ভিন্ন ভিন্ন নিকটস্থ পরিবার বা দূরবর্তী পরিবার হোক বৈধ, তবে ইমাম আবূ হানীফার মতে নিকটস্থ পরিবার বা আত্মীয় হতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানী
১৪৫৯-[৭] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা রাখলে, যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশক শুরু হয়ে গেলে সে যেন নিজের চুল ও চামড়ার কোন কিছু না ধরে অর্থাৎ না কাটে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, সে যেন কেশ স্পর্শ না করে ও নখ না কাটে। অপর এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি যিলহাজ্জ মাসের নব চাঁদ দেখবে ও কুরবানী করার নিয়্যাত করবে সে যেন নিজের চুল ও নিজের নখগুলো কর্তন না করে। (মুসলিম)[1]
بَابٌ فِي الْأُضْحِيَّةِ
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ وَأَرَادَ بَعْضُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ فَلَا يَمَسَّ مِنْ شَعْرِهِ وَبَشَرِهِ شَيْئًا» وَفِي رِوَايَةٍ «فَلَا يَأْخُذَنَّ شَعْرًا وَلَا يَقْلِمَنَّ ظُفْرًا» وَفِي رِوَايَةٍ «مَنْ رَأَى هِلَالَ ذِي الْحِجَّةِ وَأَرَادَ أَنْ يُضَحِّيَ فَلَا يَأْخُذْ مِنْ شَعْرِهِ وَلَا مِنْ أَظْفَارِهِ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (وَأَرَادَ بَعْضُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ) ‘তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী করতে চায়’ এ হাদীসটি প্রমাণ করে কুরবানী ওয়াজিব না কেননা কুরবানীকে ন্যাস্ত করা হয়েছে ইচ্ছার উপর। বলা হয়েছে (وَأَرَادَ) যে ইচ্ছা করে। আর যদি ওয়াজিব হত তাহলে ইচ্ছার উপর ন্যাস্ত করত না। আর হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, যিলহাজ্জ (হজ/হজ্জ) মাস প্রবেশের পর যে কুরবানী করার ইচ্ছা পোষণ করে তার জন্য চুল নখ না কাটা শারী‘আত সম্মত। আহমাদ, ইসহাক ও দাঊদ-এর মতে কুরবানী পর্যন্ত চুল নখ ইত্যাদি কাটা হারাম। দলীল উম্মু সালামার হাদীস। আর শাফি‘ঈর মতে কাটা মাকরূহ তথা ঘৃণিত, হারাম না। আর ইমাম আবূ হানীফার মতে কাটা বৈধ ঘৃণিত না উত্তম না। আর এমনটি করার হিকমাত হলঃ শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নামের আগুন হতে মুক্ত হতে পারে। আর তুরবিশতী বলেনঃ কুরবানীদাতা কুরবানীর মাধ্যমে নিজেকে উৎসর্গ করে ক্বিয়ামের দিনে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার এবং আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি কামনা করে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানী
১৪৬০-[৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিকট তাঁর দিনসমূহের মধ্যে এমন কোন দিন নেই, যে দিনের ’আমল এ দশদিনের ’আমল অপেক্ষা অধিক প্রিয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি নিজের জীবন ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে। আর তা হতে কোন কিছু নিয়ে ফিরেনি। (বুখারী)[1]
بَابٌ فِي الْأُضْحِيَّةِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيهِنَّ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ الْعَشَرَةِ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ: «وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: ‘উলামারা মতভেদ করেছেনঃ এই দশদিন উত্তম না রমাযানের দশ দিন উত্তম। কারও মতে হাদীসের ভাষ্য মতে এ দশদিন উত্তম। আবার কারো মতে ‘লায়লাতুল ক্বদর (কদর)’ এর কারণে উত্তম। গ্রহণযোগ্য কথা হলঃ ‘আরাফাহ্ দিবস পাওয়ার কারণে এ দশদিন উত্তম। আর রমাযানের দশ রাত্রি উত্তম ক্বদরের রাত্রি পাওয়ার কারণে। কেননা বছরের দিনগুলোর মধ্যে ‘আরাফার দিন উত্তম আর বছরের রাত্রগুলোর মধ্যে ক্বদরের রাত্রি উত্তম। এজন্য বলেছেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (مَا مِنْ أَيَّامٍ) দিনগুলোর মধ্যে আর রাত্রির কথা বলেননি।