লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৮৪-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমু’আর দিন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) মসজিদের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে যান। যে ব্যক্তি মসজিদে প্রথমে আসে তার নাম লিখেন। এরপর তার পরের ব্যক্তির নাম লিখেন। (অতঃপর তিনি বলেন,) যে ব্যক্তি মসজিদে প্রথমে যান তার দৃষ্টান্ত হলো, যে মক্কায় কুরবানী দেবার জন্য একটি উট পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু’আর সালাতে আসে তার দৃষ্টান্ত হলো, যে একটি গরু পাঠায়। তারপর যে লোক জুমু’আর জন্য মসজিদে আসে তার উপমা হলো, যে ব্যক্তি কুরবানীর জন্য মক্কায় একটি দুম্বা পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য মসজিদে আসে তার উদাহরণ হলো, যে কুরবানী করার জন্য মক্কায় একটি মুরগী পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু’আর জন্য মসজিদে আসে তার উপমা হলো, যে একটি ডিম পাঠায়। আর ইমাম খুতবাহ্ দেবার জন্য বের হলে তারা তাদের দপ্তর গুটিয়ে খুতবাহ্ শোনেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ التَّنْظِيْفِ وَالتَّبْكِيْرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا كَانَ يَوْمُ الْجُمُعَةِ وَقَفَتِ الْمَلَائِكَةُ عَلَى بَابِ الْمَسْجِدِ يَكْتُبُونَ الْأَوَّلَ فَالْأَوَّلَ وَمَثَلُ الْمُهَجِّرِ كَمَثَلِ الَّذِي يُهْدِي بَدَنَةً ثُمَّ كَالَّذِي يُهْدِي بَقَرَةً ثُمَّ كَبْشًا ثُمَّ دَجَاجَةً ثُمَّ بَيْضَةً فَإِذَا خَرَجَ الْإِمَامُ طَوَوْا صُحُفَهُمْ ويستمعون الذّكر»
ব্যাখ্যা: (إِذَا كَانَ يَوْمُ الْجُمُعَةِ وَقَفَتِ الْمَلَائِكَةُ) তারা ক্রোধান্বিত বা বিদ্বেষী নয়, যেমন এটার উপর فضل التبكير বা জুমু‘আর দিনে মসজিদে সকাল সকাল আগমনের ফাযীলাতের ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসগুলো প্রমাণ করে এবং এর অর্থ হলো নিশ্চয় তারা (ফেরেশতাগণ) ফাজ্র (ফজর) উদিত হওয়া থেকে অবস্থান করে এবং তা শার‘ঈভাবে দিনের প্রথম, অথবা সূর্য উদিত হওয়া থেকে অবস্থান করে এবং সেটা বাস্তবিকভাবে দিনের প্রথম, অথবা দিনের আলো উজ্জ্বল হওয়া (সালাতুয্ যুহার সময়) থেকে অবস্থান করে। মুল্লা ক্বারী (রহঃ) বলেন যে, এটাই অধিক নিকটবর্তী এবং এ মতকেই শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) প্রাধান্য দিয়েছেন এবং প্রথমটি (ফেরেশতাগণ ফাজ্র (ফজর) উদিত হওয়া থেকে জুমু‘আর দিনে অবস্থান করে) ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর বক্তব্য।
ইমাম নাবাবী ও রাফি‘ঈ (রহঃ) এবং অন্যান্য জন এ মতকে সঠিক বলেছেন এবং দ্বিতীয়টিতেও (সূর্য উদিত হওয়া থেকে অবস্থান করে) শাফি‘ঈ মাযহাবীদের মত রয়েছে। মির‘আত প্রণেতার মতে তৃতীয়টিই উত্তম। সহীহ ইবনু খুযায়মায় রয়েছে যে, মসজিদের প্রতিটি দরজায় দু’জন করে মালাক (ফেরেশতা) থাকে তারা প্রথম ব্যক্তি সম্পর্কে লিখে, অতঃপর প্রথম। বুখারী মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, ‘‘জুমু‘আর দিনে মসজিদের প্রতিটি দরজায় মালায়িকাহ্ অবস্থান করে।’’
মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে যে, মসজিদের প্রতিটি দরজা মালাক (ফেরেশতা) অবস্থান করে এবং লিখে।
যখন ইমাম খুতবাহ্ দানের উদ্দেশে মিম্বারে উঠেন তখন মালায়িকাহ সেই সহীফাহসমূহ বন্ধ করে দেন যাতে তারা অগ্রগামীদের মর্যাদা লিপিবদ্ধ করেছে। হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে সহীফাহ্ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। আবূ নু‘আয়ম তার ‘হিল্ইয়াহ্’ নামক গ্রন্থে মারফূ' সানাদে বর্ণনা করেছেন, জুমু‘আর দিনে আল্লাহ তা‘আলা মালায়িকাহ্-কে নূরের সহীফাহ্ ও নূরের কলম দিয়ে পাঠান। এখানে সহীফাহ্ বন্ধ করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জুমু‘আর দিনে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে তাদের সহীফাহগুলো বন্ধ করা হওয়া খুতবাহ্ শ্রবণের নিমিত্তে, অন্যদের নয়।
সুতরাং জুমু‘আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পাওয়া, যিকর, দু‘আ ও সালাতে বিনয়-নম্রতা আরও অনুরূপ ‘আমলগুলো দু’জন সংরক্ষক তা লিপিবদ্ধ করবে।
(يَسْتَمِعُوْنَ الذِّكْرَ) এ বাক্যে যিকর বলতে খুতবাহ্ উদ্দেশ্য। আল্লামা ‘আয়নী ও হাফিয (রহঃ) বলেন যে, যিকর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো খুতবায় যে নাসীহাত করা হয় তাই।
আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ নিশ্চয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবহিত করেছেন যে, নিশ্চয় মালায়িকাহ্ যে, প্রথম সময়ে আসে তাকে লিপিবদ্ধ করে এবং সে উট কুরবানীর সাওয়াব পাবে। তারপরে দ্বিতীয়জনকে লিপিবদ্ধ করে। তারপর তৃতীয়, তারপর চতুর্থ, তারপর পঞ্চমে যে আসে তাকে লিপিবদ্ধ করেন এবং যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হন তখন সহীফাহ্ বন্ধ করে। এরপর আর কাউকেই লিপিবদ্ধ করেন না।
উল্লেখ্য যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আয় বের হতেন সূর্য ঢলে যাওয়ার পর। সুতরাং প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি সূর্য ঢলার পর জুমু‘আয় আসতে পারবে তার জন্য কোন কুরবানী ও শ্রেষ্ঠত্বের ফাযীলাত নেই।