পরিচ্ছেদঃ ৪২. প্রথম অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত

এখানেبَابُ الْجُمُعَةِ (জুমু’আহ্ অধ্যায়) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জুমু’আর দিনের ফাযীলাত ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, الْجُمُعَةِ শব্দের ج এবং م বর্ণদ্বয়ে পেশ যোগে পড়া যাবে এবং م এ সাকিন এবং যবর যোগেও পড়া যাবে। এ দিনে মানুষ সালাত আদায়ের জন্য একত্রিত হয় বিধায় এর নামকরণ করা হয়েছে(يَوْمُ الْجُمُعَةِ) বা একত্রিত হওয়ার দিন। আর জাহিলী যামানায় জুমু’আর দিনকে বলা হত ’’আরুবাহ্’’।

ইবনু হাযম (রহঃ) বলেনঃ (يَوْمُ الْجُمُعَةِ) জুমু’আর দিনটা ইসলামী নাম, এটি জাহিলীতে ছিল না। নিশ্চয় জাহিলী যুগে এর নাম ছিল ’’আরবাহ্’’। ইসলামী যুগে লোকজন এ দিনে সালাতে একত্রিত হওয়ার কারণে الْجُمُعَةِ (আল জুমু’আহ্) বলে নামকরণ করা হয়। এরই সমর্থনে ’আবদ ইবনু হুমায়দ তাঁর তাফসীরে ইবনু সীরীন থেকে বিশুদ্ধ সানাদে বর্ণনা করেছেন সে ঘটনা, যাতে আস্ওয়াদ ইবনু যুরারার সাথে আনসারগণ একত্রিত হয়েছিল। আর তারা জুমু’আর দিনকে ’’আরুবাহ্’’ বলত, অতঃপর তিনি তাদের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং তাদের সাথে আলোচনা করলেন। অতঃপর তারা যখন এ দিনে জমায়েত হয়েছিল তখন এ দিনের নামকরণ করল ’’জুমু’আর দিন’’।

কেউ বলেছেন, এ দিনে সকল সৃষ্টিকুলকে একত্রিত করা হবে বিধায় এ দিনের নাম الْجُمُعَةِ (আল জুমু’আহ্) রাখা হয়েছে। কেউ বলেছেন এ দিনে আদম (আঃ) সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এ দিনে একত্রিত করা হয়েছে বিধায় এর নাম الْجُمُعَةِ (আল জুমু’আহ্) রাখা হয়েছে। যেমন- এ মতের সমর্থনে সালমান (রাঃ)বর্ণিত হাদীস আহমাদ, ইবনু খুযায়মাহ্ সংকলন করেছেন এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত এর সমর্থনে বিশুদ্ধ সানাদে বর্ণনা রয়েছে এবং হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) এ মতকে অধিক বিশুদ্ধ বলেছেন।

কেউ বলেছেনঃ যেহেতু এ দিনে কা’ব ইবনু লুয়াই তার ক্বওমের লোকদেরকে একত্রিত করত ও হারাম মাসগুলোর সম্মান রক্ষার নির্দেশ দিত বিধায় এর নাম الْجُمُعَةِ (আল জুমু’আহ্) রাখা হয়েছে।

যা হোক ইবনুল ক্বইয়্যূম (রহঃ) তার ’’আল হুদা’’ গ্রন্থের ১ম খন্ডের ১০২-১১৮ পৃষ্ঠায় জুমু’আর দিনের ৩৩টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন, যার কতক হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন।


১৩৫৪-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরা দুনিয়ার শেষের দিকে এসেছি। তবে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন মর্যাদার দিক থেকে আমরা সবার আগে থাকব। তাছাড়া ইয়াহূদী নাসারাদেরকে আমাদের পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছে। আর আমাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে পরে। অতঃপর এ ’জুমু’আর দিন’ তাদের উপর ফরয করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এ নিয়ে মতভেদ করলে আল্লাহ তা’আলা ওই দিনটির ব্যাপারে আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করলেন। এ লোকেরা আমাদের অনুসরণকারী। ইয়াহূদীরা আগামীকালকে অর্থাৎ ’শনিবারকে’ গ্রহণ করেছে। আর নাসারারা গ্রহণ করেছে পরশুকে অর্থাৎ ’রবিবারকে’। (বুখারী, মুসলিম)

কিন্তু মুসলিমের এক রিওয়ায়াতে সেই আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আমরাই (পরবর্তীরাই) প্রথম হব। অর্থাৎ যারা জান্নাতে গমন করবে তাদের মধ্যে আমরা প্রথম হব। অতঃপর (আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর) পার্থক্য এই যে, বাক্য হতে শেষ পর্যন্ত পূর্ববৎ বর্ণনা করেন।[1]

بَابُ الْجُمُعَةِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَحْنُ الْآخِرُونَ السَّابِقُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بَيْدَ أَنَّهُمْ أُوتُوا الْكُتَّابَ مِنْ قَبْلِنَا وَأُوتِينَاهُ من بعدهمْ ثمَّ هَذَا يومهم الَّذِي فرض عَلَيْهِم يَعْنِي يَوْم الْجُمُعَةَ فَاخْتَلَفُوا فِيهِ فَهَدَانَا اللَّهُ لَهُ وَالنَّاسُ لَنَا فِيهِ تَبَعٌ الْيَهُودُ غَدًا وَالنَّصَارَى بَعْدَ غَد»
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ: «نَحْنُ الْآخِرُونَ الْأَوَّلُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَنَحْنُ أَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ بيد أَنهم» . وَذكر نَحوه إِلَى آخِره

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «نحن الاخرون السابقون يوم القيامة بيد انهم اوتوا الكتاب من قبلنا واوتيناه من بعدهم ثم هذا يومهم الذي فرض عليهم يعني يوم الجمعة فاختلفوا فيه فهدانا الله له والناس لنا فيه تبع اليهود غدا والنصارى بعد غد» وفي رواية لمسلم قال: «نحن الاخرون الاولون يوم القيامة ونحن اول من يدخل الجنة بيد انهم» . وذكر نحوه الى اخره

ব্যাখ্যা: হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন যে, আমরা যামানাগত দিক সর্বশেষ এবং ক্বিয়ামাতে মর্যাদার দিক দিয়ে আমরাই প্রথম। এখানে মূল উদ্দেশ্য হলোঃ এ উম্মাতগণ দুনিয়াতে তাদের উপস্থিতির ক্ষেত্রে অতীতের সকল উম্মাতের শেষে, কিন্তু আখিরাতে সবার অগ্রবর্তী হবে। কারণ সর্বপ্রথম যারা হাশর, হিসাব, বিচার এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে তারাই হলো এ উম্মাত বা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাত। আর সে দিনটি হলো জুমু‘আর দিন। (يومهم الَّذِي فرض) ইবনু হাজার বলেন এখানে يوم দ্বারা (يوم الجمعة) বা জুমু‘আর দিন উদ্দেশ্য আর فرض দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এ দিনের সম্মান, যেমন সহীহ মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা আমাদের পরবর্তীদের জুমু‘আর দিন থেকে পথভ্রষ্ট করেছেন।’’

আল্লামা ক্বাসত্বালানী (রহঃ) বলেনঃ আবূ হাতিম (রহঃ) সানাদী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ ইয়াহূদীদের ওপর জুমু‘আহ্ (শুক্রবারে) ফরয করলেন অতঃপর তারা তা অস্বীকার করল এবং তারা বলল, হে মূসা! আল্লাহ তা‘আলা তো শনিবারে কিছুই সৃষ্টি করেননি কাজেই সে দিনটি আমাদের নির্ধারণ করে দাও। অতঃপর তিনি তাদের ওপর তা নির্ধারণ করলেন।

কুসত্বালানী (রহঃ) বলেনঃ তাদের ওপর জুমু‘আর দিন নির্ধারণ হওয়ার পর এবং উক্ত দিবসের সম্মান করার নির্দেশপ্রাপ্ত হওয়ার পর তারা তা পরিত্যাগ করল এবং তারা তাদের ক্বিয়াসকেই প্রাধান্য দিলো। অতঃপর তারা শনিবারকে সম্মান করা শুরু করল, এ দিনে (শনিবার) সৃষ্টি থেকে অবসর গ্রহণের কারণে এবং তারা (ইয়াহূদীরা) ধারণা করল যে, এ দিন বড় ফাযীলাতের দিন, এ দিনকে সম্মান করা তাদের ওপর ওয়াজিব এবং তারা বলে যে, এ দিনে আমরা ‘আমলের মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করি ও ‘ইবাদাতে ব্যস্ত থাকি। আর নাসারাগণ রবিবারের দিনকে সম্মান করত, কারণ এ দিনেই আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির সূচনা করেছেন, কাজেই (তাদের যুক্তি) এ দিন সম্মানের সর্বাধিক হকদার।

এ দিনের (জুমু‘আর দিন শুক্রবার) সম্মানের ক্ষেত্রে ওয়াহীর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের পথ দেখিয়েছে যেমন- ‘আবদুর রাযযাক্ব (রহঃ) বিশুদ্ধ সানাদে ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, মদীনাহবাসীগণ একত্রিত হলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদীনায় আগমন ও জুমু‘আর দিন অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে। অতঃপর আনসারগণ বললেন যে, ইয়াহূদীদের একটি দিন রয়েছে প্রতি সপ্তাহে তারা সেদিনে একত্রিত হয় এবং নাসারাদেরও অনুরূপ দিন রয়েছে, তবে আমরা কি একটি দিন নির্ধারণ করতে পারি না? যেদিনে আমরা একত্রিত হব, আল্লাহর যিকর করব, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করব ও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব। অতঃপর তারা ‘আরুবাহ্ দিবস গ্রহণ করল এবং এ দিনে তারা আস্ওয়াদ ইবনু যুরারাহ্ (রাঃ)-এর নিকট একত্রিত হলে তিনি তাদের সাথে উক্ত দিনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। অতঃপর আল্লাহ নাযিল করলেন, ‘‘জুমু‘আর দিনে যখন ডাকা হবে তখন তোমরা আল্লাহর ডাকে দ্রুত সাড়া দাও.....।’’ (সূরাহ্ আল জুমু‘আহ্ ৬২ : ৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৪২. প্রথম অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত

১৩৫৫-[২] মুসলিমের অন্য এক রিওয়ায়াতে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ও হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা দু’জনই বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসের শেষ দিকে বলেছেনঃ দুনিয়ায় আগমনের দিক দিয়ে আমরা সকলের পেছনে। কিন্তু কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আমরা সকলের আগে থাকব। সকলের আগে আমাদের হিসাব নেয়ার ও জান্নাতে প্রবেশ করার হুকুম দেয়া হবে।[1]

بَابُ الْجُمُعَةِ

وَفِي رِوَايَة لمُسلم عَن أبي هُرَيْرَة وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي آخِرِ الْحَدِيثِ: «نَحْنُ الْآخِرُونَ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا وَالْأَوَّلُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمقْضِي لَهُم قبل الْخَلَائق»

وفي رواية لمسلم عن ابي هريرة وعن حذيفة قالا: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم في اخر الحديث: «نحن الاخرون من اهل الدنيا والاولون يوم القيامة المقضي لهم قبل الخلاىق»

ব্যাখ্যা: (الْمَقْضِي لَهُم قَبْلَ الْخَلَائِقِ) এ বাক্যটি الْاخِرُوْنَ-এর সিফাত অর্থাৎ প্রথমেই জান্নাতে প্রবেশের জন্য তাদের ফায়সালা সবার আগেই করা হবে।

এ বর্ণনাটি নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্ বর্ণনা করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৪২. প্রথম অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত

১৩৫৬-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যেসব দিনে সূর্য উদিত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমু’আর দিন। এ দিনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে (দুনিয়ায় পাঠিয়ে) দেয়া হয়েছে। আর ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ও এ জুমু’আর দিনেই ক্বায়িম হবে। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْجُمُعَةِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ أُدْخِلَ الْجَنَّةَ وَفِيه أخرج مِنْهَا وَلَا تقوم السَّاعَة لَا فِي يَوْم الْجُمُعَة» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «خير يوم طلعت عليه الشمس يوم الجمعة فيه خلق ادم وفيه ادخل الجنة وفيه اخرج منها ولا تقوم الساعة لا في يوم الجمعة» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে (خَيْرُ) শব্দটি আধিক্য অর্থের জন্য ব্যবহার হয়েছে, অর্থ হলো নিশ্চয় জুমু‘আর দিনটি, প্রতিটি দিন (যাতে সূর্য উদিত হয়) অপেক্ষা উত্তম।

(يَوْمُ الْجُمُعَةِ) দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য হলো নিশ্চয় দিনগুলোর শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমু‘আর দিন (শুক্রবার)। অতএব তা ‘আরাফার দিনের চেয়েও উত্তম। তবে ইবনুল ‘আরাবী (রহঃ) এর বিরোধিতা করেছেন এবং সহীহ ইবনু হিব্বানে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত মারফূ' হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলার নিকট ‘আরাফার দিন অপেক্ষা উত্তম দিন আর নেই।

এ বৈপরীত্যের সমাধানে আল্লামা ‘ইরাক্বী (রহঃ) বলেনঃ জুমু‘আর দিনের শ্রেষ্ঠত্বটা সপ্তাহের দিনগুলোর সাথে সম্পৃক্ত, আর ‘আরাফার দিনের শ্রেষ্ঠত্বটা বছরের দিনগুলোর সাথে সম্পৃক্ত। তবে জুমু‘আর দিনের শ্রেষ্ঠত্বের হাদীস অধিক বিশুদ্ধ।

(فِيْهِ أُدْخِلَ الْجَنَّةَ) এখানে দলীল হলো যে, আদম (আঃ)-কে জান্নাতে সৃষ্টি করা হয়নি, বরং বাহিরে সৃষ্টি করার পর তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। কেউ বলেছেন, তাঁর সৃষ্টি ও জান্নাতে প্রবেশ এক দিনে হয়েছে। সুতরাং হয়ত বা তাকে এক জুমু‘আয় সৃষ্টি করা হয়েছে ও অন্য জুমু‘আয় জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। তাকে বের করার বিষয়টাও অনুরূপ হতে পারে।

ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন যে, যদি তার সৃষ্টি ও জান্নাত থেকে বের করাটা একই দিনে হয় তবে বলব যে, দিন হলো ৬টি; যেমন আজকে পৃথিবীর দিন। সুতরাং দুনিয়ার কয়েকটি দিন তিনি [আদম (আঃ)] জান্নাতে অবস্থান করেছেন। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো যদি তাকে বের করাটা সৃষ্টির দিন ছাড়া অন্যদিন হয় তবে বলব যে, নিশ্চয় প্রতিটি দিন হাজার বছরের সমান যেমন ইবনু ‘আব্বাস, যাহহাক (রাঃ) বলেছেন এবং ইবনু জারীর তা পছন্দ করেছেন এবং এখানে তিনি লম্বা সময় বা দীর্ঘকাল উদ্দেশ্য নিয়েছেন। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৪২. প্রথম অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত

১৩৫৭-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমু’আর দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, সে মুহূর্তটি যদি কোন মু’মিন বান্দা পায় আর আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ কামনা করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে তা দান করেন। মুসলিম; অন্য এক বর্ণনায় ইমাম মুসলিম এ শব্দগুলোও নকল করেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে সময়টা খুবই ক্ষণিক হয়। বুখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় এ শব্দগুলো বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে জুমু’আর দিনে এমন একটি ক্ষণ আসে যে ক্ষণে যদি কোন মু’মিন বান্দা সালাতের জন্য দাঁড়াতে পারে এবং আল্লাহর নিকট কল্যাণের জন্য দু’আ করে, তাহলে আল্লাহ তাকে অবশ্যই সে কল্যাণ দান করেন।[1]

بَابُ الْجُمُعَةِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ فِي الْجُمُعَةِ لَسَاعَةً لَا يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللَّهَ فِيهَا خَيْرًا إِلَّا أعطَاهُ إِيَّاه. وَزَاد مُسلم: «وَهِيَ سَاعَةٌ خَفِيفَةٌ» . وَفِي رِوَايَةِ لَهُمَا قَالَ: «إِنَّ فِي الْجُمُعَةِ لَسَاعَةً لَا يُوَافِقُهَا مُسْلِمٌ قَائِم يُصَلِّي يسْأَل لاله يخرا إِلَّا أعطَاهُ إِيَّاه»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان في الجمعة لساعة لا يوافقها عبد مسلم يسال الله فيها خيرا الا اعطاه اياه. وزاد مسلم: «وهي ساعة خفيفة» . وفي رواية لهما قال: «ان في الجمعة لساعة لا يوافقها مسلم قاىم يصلي يسال لاله يخرا الا اعطاه اياه»

ব্যাখ্যা: জুমু‘আর দিনের সংক্ষিপ্ত সময়ে যার চাওয়াটা উক্ত সময়ানুযায়ী হবে, খাস করে ওই মুসলিমকে কল্যাণ দান করা হবে। তার প্রার্থনা অনুযায়ী এবং তা শীঘ্রই কিংবা বিলম্বে দেয়া হতে পারে। যেমন- আবূ লুবাবাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, যতক্ষণ হারাম বস্ত্ত না চাইবে। সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, যতক্ষণ পাপের বিষয় অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের ছিন্নতা না চাইবে, ততক্ষণ তার চাওয়া অনুযায়ী দেয়া হবে।

(وَهِيَ سَاعَةٌ خَفِيفَةٌ) অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত ও মহত্ত্বপূর্ণ সময়। তাদের অপর বর্ণনায় রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত দ্বারা ইশারা করলেন যেন সেটা অতি সামান্য সময়। প্রিয় পাঠক! জেনে রাখুন যে, এ আবশ্যকীয় সময় নির্ধারণে পরস্পর বিরোধী হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং তার পরবর্তী সাহাবী, তাবি‘ঈ ও তাদের পরবর্তীদের মাঝেও মতপার্থক্য রয়েছে এবং তা ৪০-এরও অধিক, হাফিয আসক্বালানী তার মধ্য হতে দু’টি মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেনঃ কোন সন্দেহ নেই যে, আমি উল্লেখিত মতামতগুলো থেকে আবূ মূসা (রাঃ)-এর হাদীসকেই প্রাধান্য দেই, অর্থাৎ ইমামের মিম্বারে বসা থেকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করা পর্যন্ত সময়টুকু এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-এর হাদীস তিনি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস উদ্দেশ্য করেছেন। আর তা হলো ‘‘নিশ্চয় সেটার শেষ সময় হলো জুমু‘আর দিনের ‘আসর পর পর্যন্ত।’’ আল্লামা ত্ববারানী (রহঃ) বলেনঃ অধিক বিশুদ্ধ হাদীস হলো আবূ মূসা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস। আর অধিক প্রসিদ্ধ মত হলো ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-এর মত। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৪২. প্রথম অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত

১৩৫৮-[৫] আবূ বুরদাহ্ ইবনু আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জুমু’আর দিনের দু’আ কবূলের সময় সম্পর্কে বলতে শুনেছেনঃ সে সময়টা হলো ইমামের মিম্বারের উপর বসার পর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পড়াবার আগের মধ্যবর্তী সময়টুকু। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْجُمُعَةِ

وَعَنْ أَبِي بُرْدَةَ بْنِ أَبِي مُوسَى قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي شَأْنِ سَاعَةِ الْجُمُعَةِ: «هِيَ مَا بَيْنَ أَنْ يَجْلِسَ الْإِمَامُ إِلَى أَن تقضى الصَّلَاة» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي بردة بن ابي موسى قال: سمعت ابي يقول: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول في شان ساعة الجمعة: «هي ما بين ان يجلس الامام الى ان تقضى الصلاة» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেনঃ আলোচ্য হাদীসে ইমামের বসা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, খুতবার জন্য মিম্বারে আরোহণ করা। আর আলোচ্য সংক্ষিপ্ত মহামূল্যবান সময়টা খুতবার জন্য ইমামের মিম্বারে আরোহণ করা থেকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ হওয়ার মাঝামাঝি সময়, তবে এর দ্বারা পূর্ণ এ সময় উদ্দেশ্য নয়। বরং তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার আলোকেই যে স্বল্প সময়ের কথা অতিবাহিত হয়েছে তাই, আর তা হলো অতি সামান্য সময়। এখানে সময়টা উল্লেখ করার দ্বারা উপকারিতা হলো নিশ্চয় সেটা আলোচ্য সময়ের মধ্য সীমাবদ্ধ থাকবে। সেটার শুরু হবে খুতবার শুরু থেকে এবং সেটার শেষ হবে সালাতের শেষ পর্যন্ত।

(অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যেই উক্ত সংক্ষিপ্ত সময়টুকু অতিবাহিত হবে।)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে