পরিচ্ছেদঃ ৪১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের সালাত
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাফির ব্যক্তির জন্য কতকগুলো বিষয়ে অব্যাহতির নির্দেশ দিয়েছেন, তন্মধ্য হতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বসর করা যুহর, ’আসর এবং মাগরিব, ’ইশার সালাতের মাঝে সমন্বয় করা, সুন্নাত সালাত ছেড়ে দেয়া, সওয়ারীর উপর ইশারায় সালাত আদায় করা, সেটা যেদিকে মুখ করে থাকুক না কেন এবং এ বিষয়গুলো নফল, ফাজ্রের (ফজরের) সুন্নাত ও বিতর সালাতের ব্যাপারে, ফরয সালাতের ক্ষেত্রে নয়। ইবনুর রাশীদ বলেন, সফরে মুসাফিরের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে ক্বসরের গুরুত্ব রয়েছে এবং ’উলামাগণ মুসাফিরের সালাত ক্বসর করার বৈধতার উপর একমত। তবে একটি শায বা বিরল মত রয়েছে যে, সফরে ভয়ের আশঙ্কা না থাকলে ক্বসর বৈধ নয়। যেমন আল্লাহ তা’আলার কথা ’’যদি তোমরা ভয় পাও....’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪: ১০১), যা হোক ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল বলেছেন, সফরে সালাত ক্বসর করাই অগ্রগণ্য ও উত্তম।
ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) বলেন যে, আহমাদ থেকে প্রসিদ্ধ বর্ণনা রয়েছে যে, মুসাফির ঐচ্ছিকের উপর থাকবে যদি চায় দু’ রাক্’আত আদায় করবে এবং যদি ইচ্ছা করে সালাত পূর্ণ করতেও পারবে, তবে ক্বসর করাই উত্তম ও অগ্রগণ্য।
সফরে দূরত্বের পরিমাণ
মুসাফির ব্যক্তি কতদূর পরিমাণ পথ পারি দিলে সালাত ক্বসর করতে হবে, এ দূরত্বের পরিমাণ সম্পর্কে ’উলামাগণের মাঝে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। ইবনুল মুনযির ও অন্যান্যদের বর্ণনায় এতে প্রায় ২০টি মত রয়েছে।
একেবারে স্বল্প দূরত্ব সম্পর্কে যা বলা হয় তা হলো এক মাইল পরিমাণ, যেমন ইবনু আবী শায়বাহ্, ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে সহীহ সানাদে বর্ণনা করেছেন এবং ইবনু হাযম আয্ যাহিরী (রহঃ) এ মত ব্যক্ত করেছেন এবং তিনি কিতাবুল্লাহ ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ থেকে মুত্বলাক (তালাক)্বব সফরের দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। কারণ আল্লাহ এবং তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সফরকে নির্দিষ্ট করেননি।
তবে আহলু জাহিরিয়্যাহগণ মতামত দিয়েছেন, যেমন- ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ ক্বসরের সর্বনিম্ন সীমা হলো ৩ মাইল, তারা দলীল পেশ করেছেন সহীহ মুসলিম ও আবূ দাঊদে বর্ণিত আনাস (রাঃ)-এর হাদীস, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৩ মাইল অথবা ৩ ফারসাখ পরিমাণ দূরত্বে বের হতেন তখন সালাত ক্বসর করতেন। হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ এ বিষয়ে সেটাই অধিক বিশুদ্ধ হাদীস।
আর যারা এ মতের বিরোধী তারা বলেন যে, আলোচ্য হাদীস দ্বারা ক্বসর শুরু উদ্দেশ্য, সফরের শেষ গন্তব্য নয়। অর্থাৎ যখন সে দীর্ঘ সফরের ইচ্ছা করবে এবং তিন মাইল দূরত্বে পৌঁছার পর থেকে সে ক্বসর করবে, যেমন- অন্য শব্দে তিনি বলেনঃ (إن النبي ﷺ صلى بالمدينة أربعاً وبذي الحليفة ركعتين)
অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় চার রাক্’আত সালাত আদায় করলেন এবং যুল হুলায়ফায় দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন।
ইমাম শাফি’ঈ, মালিক, আহমাদ ও ফিকহবিদ (রহঃ)-গণ বলেনঃ পূর্ণ একদিন সফরের দূরত্বের কমে সালাত ক্বসর করা যাবে না। আর তা হলো চার বারদ, আর চার বারদ হলো ১৬ ফারসাখ অর্থাৎ ৪৮ মাইল। কারণ এক বারদ হলো চার ফারসাখ, আর এক ফারসাখ সমান তিন মাইল।
তবে অধিকাংশ ’উলামাগণ এবং বর্তমানের হাদীসবিশারদ (আহলুল হাদীসগণ) তিন ফারসাখ দূরত্বে ক্বসরের মতামত দিয়েছেন এবং তারা পূর্বে উল্লেখিত আনাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন
গন্তব্যে অবস্থানের সময়ের পরিমাণ
মুসাফির যখন সফরের গন্তব্যে পৌঁছে যাবে, তখন কতদিন অবস্থান করলে সে সালাত ক্বসর করবে এ ব্যাপারে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে, তবে প্রসিদ্ধ মত চারটি। যেমন-
প্রথম মতঃ শাফি’ঈ ও মালিকী মাযহাবীদের মত হলো, যখন চার দিনের অতিরিক্ত অবস্থান করবে তখন সালাত পূর্ণ করবে।
দ্বিতীয় মতঃ আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মাযহাব অনুযায়ী যখন ১৫ দিনের বেশী অবস্থান করবে, তখন পূর্ণ সালাত আদায় করবে।
তৃতীয় মতঃ ইমাম আহমাদ ও দাঊদ (রহঃ)-এর মত অনুযায়ী যখন চার দিনের অধিক অবস্থান করবে তখন পূর্ণ সালাত আদায় করবে।
চতুর্থ মতঃ ইসহাক্ব ইবনু রাহওয়াইয়াহ্ (রহঃ)-এর মত অনুযায়ী যখন ১৯ দিনের অধিক অবস্থান করবে তখন পূর্ণ সালাত আদায় করবে।
ইমাম শাফি’ঈ ও মালিক (রহঃ)-দ্বয়ের মতে সালাত ক্বসরের সীমা হলো গন্তব্যে প্রবেশ এবং গন্তব্য থেকে বের হওয়ার দিন ব্যতীত তিন দিন। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর নিকট ১৪ দিন, ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর নিকট ৪ দিন, ইসহাক (রহঃ)-এর নিকট ১৯ দিন।
মির্’আত প্রণেতা বলেনঃ আমার নিকট অগ্রগণ্য বা প্রাধান্য মত হলো ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর মত। (আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন)
১৩৩৩-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) চার রাক্’আত আদায় করেছেন। তবে যুল হুলায়ফায় ’আসরের সালাত দু’ রাক্’আত আদায় করেছেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ السَّفَرِ
عَنْ أَنَسٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى الظُّهْرَ بِالْمَدِينَةِ أَرْبَعًا وَصَلَّى الْعَصْر بِذِي الحليفة رَكْعَتَيْنِ
ব্যাখ্যা: যেদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় হাজ্জ (হজ/হজ্জ) অথবা ‘উমরাহ্ পালনের জন্য বের হওয়ার ইচছা করতেন, সেদিন মদীনায় যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) চার রাক্‘আত আদায় করতেন।
এখানে যুল হুলায়ফাহ্ হলো বিশুদ্ধ মতে মদীনাহ্ হতে তিন মাইল দূরে অবস্থিত একটি স্থান এবং এটাই মদীনাবাসীদের মিক্বাত, সেখানে তিনি ‘আসর সালাত দু’ রাক্‘আত ক্বসর হিসেবে আদায় করলেন।
আলোচ্য হাদীসে দলীল হলো যে, নিজ শহর ত্যাগ না করা পর্যন্ত সালাত ক্বসর করা যাবে না। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাহ্ থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত ক্বসর করতেন না এবং এ হাদীস থেকে এ দলীলও গৃহীত হয় যে, সংক্ষিপ্ত সফরেও ক্বসর করা মুস্তাহাব। কারণ মদীনাহ্ ও যুল হুলায়ফার মাঝে মাত্র তিন মাইলের দূরত্ব।
পরিচ্ছেদঃ ৪১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের সালাত
১৩৩৪-[২] হারিসাহ্ ইবনু ওয়াহ্ব আল খুযা’ঈ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাথে নিয়ে ’মিনায়’ দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। এ সময় আমরা সংখ্যায় এত বেশী ছিলাম যা এর আগে কখনো ছিলাম না এবং নিরাপদ ছিলাম। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ السَّفَرِ
وَعَنْ حَارِثَةَ بْنِ وَهْبٍ الْخُزَاعِيِّ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ أَكْثَرُ مَا كُنَّا قَطُّ وآمنه بمنا رَكْعَتَيْنِ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে সফরে ভয়ের আশংকা ছাড়া ও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বসর করার দলীল রয়েছে, এ বর্ণনাটি তাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে যারা মনে করেন যে, ক্বসর করা ভয়ের সাথে নির্দিষ্ট এবং এ হাদীসটি ইবনু ‘আব্বাস-এর বর্ণিত হাদীসের সাক্ষী, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাহ্ হতে মক্কার দিকে রওনা হলেন, এক আল্লাহ ব্যতীত কোন ভয় ছিল না, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে দু’ রাক্‘আত ক্বসর হিসেবে আদায় করলেন। আর যারা বলেন যে, নিশ্চয় ক্বসর ভয়ের সাথে নির্দিষ্ট তারা দলীল গ্রহণ করেছেন আল্লাহ তা‘আলার এ কথা দ্বারা
وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا
‘‘যখন তোমরা দেশে-বিদেশে সফর কর, তখন সালাত ক্বসর করাতে তোমাদের কিছুমাত্র দোষ নেই, যদি তোমরা ভয় কর যে, কাফিরগণ তোমাদেরকে বিপদগ্রস্ত করবে’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১০)। তবে তাদের এ উপলব্ধি জমহূর ‘উলামাগণ গ্রহণ করেনি।
পরিচ্ছেদঃ ৪১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের সালাত
১৩৩৫-[৩] ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’উমারের কাছে নিবেদন করলাম, আল্লাহ তা’আলার বাণী হলো, ’’তোমরা সালাত কম আদায় করো, অর্থাৎ ক্বসর করো, যদি অমুসলিমরা তোমাদেরকে বিপদে ফেলবে বলে আশংকা করো’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪: ১০১)। এখন তো লোকেরা নিরাপদ। তাহলে ক্বসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের প্রয়োজনটা কি? ’উমার (রাঃ) বললেন, তুমি এ ব্যাপারে যেমন বিস্মিত হচ্ছো, আমিও এরূপ আশ্চর্য হয়েছিলাম। তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ব্যাপারটি সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতে ক্বসর করাটা আল্লাহর একটা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) বা দান, যা তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন। অতএব তোমরা তাঁর এ দান গ্রহণ করো। (মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ السَّفَرِ
وَعَن يعلى بن أُميَّة قَالَ: قلت لعمر بن الْخطاب: إِنَّمَا قَالَ اللَّهُ تَعَالَى (أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا)
فَقَدْ أَمِنَ النَّاسُ. قَالَ عُمَرُ: عَجِبْتُ مِمَّا عَجِبْتَ مِنْهُ فَسَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالَ: «صَدَقَةٌ تَصَدَّقَ اللَّهُ بِهَا عَلَيْكُمْ فَاقْبَلُوا صدقته» رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (فَاقْبَلُوْا صَدَقَتَه) অর্থাৎ ভয় থাকুক বা না থাকুক তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া গ্রহণ করো, আর নিশ্চয় তিনি আয়াতে কারীমায় বলেছেনঃ إِنْ خِفْتُمْ কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরামগণের অধিকাংশ সফর যুদ্ধের আধিক্যের কারণে শত্রুর ভয় থেকে মুক্ত ছিল না। সুতরাং আলোচ্য আয়াতটি ভয় না থাকলে ক্বসর করা যাবে না এ প্রমাণ বহন করছে না। কারণ তা তখনকার সংঘটিত ঘটনার বর্ণনা, কাজেই তার দ্বারা এ উদ্দেশ্য মুখ্য নয়। ইবনুল ক্বইয়্যূম (রহঃ) বলেনঃ এ আয়াতটি ‘উমার (রাঃ) ও অন্যান্যদের উপর জটিল মনে হচ্ছিল বিধায় তারা সে ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাবে বললেন- নিশ্চয় সেটা আল্লাহর দান এবং উম্মাতের জন্য শার‘ঈ বিধান। আর উল্লেখিত আয়াতে ‘‘ক্বসর’’ দ্বারা ক্বসর (সালাত) উদ্দেশ্য নয়। সংখ্যার কমের দিক দিয়ে একে (صلاة مقصورة) ‘সংক্ষিপ্ত সালাত’ বলে নামকরণ করা হয় এবং আরকানের পূর্ণতায় তাকে (صلاة تامة) ‘পূর্ণ সালাত’ বলে নামকরণ করা হয় এবং নিশ্চয় ক্বসর সালাতটি আয়াতে কারীমায় উল্লেখিত ক্বসর-এর অন্তর্ভুক্ত হবে না।
প্রথমটি অধিকাংশ ফিক্বহবিদদের পরিভাষা এবং দ্বিতীয়টির উপর সাহাবীদের বক্তব্য প্রমাণ করে। যেমন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও অন্যান্যদের কথা- ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ প্রথমতঃ সালাত ফরয করা হয়েছে দু’ রাক্‘আত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় হিজরত করলেন তখন মুক্বীমের জন্য দু’ রাক্‘আত বৃদ্ধি করা হলো আর মুসাফিরের জন্য পূর্বেরটাই (দু’ রাক্‘আত) নির্ধারিত থাকল। এটাই প্রমাণ করে যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট সফরের সালাত চার থেকে কমানো হয়নি বরং তা অনুরূপই ফরয এবং মুসাফিরের জন্য ফরয দু’ রাক্‘আত।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জবানে মুক্বীম অবস্থায় চার রাক্‘আত সালাত ফরয করেছেন, সফরে দু’ রাক্‘আত ও ভয়ের সালাত এক রাক্‘আত ফরয করেছেন। ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেনঃ সফরের সালাত দু’ রাক্‘আত, জুমু‘আহ্ দু’ রাক্‘আত এবং ঈদের সালাত দু’ রাক্‘আত পরিপূর্ণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জবানে তা ক্বসর নয়। ‘উমার (রাঃ) থেকে প্রমাণ হয় যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন- আমাদের সালাত ক্বসরের কি হলো? আমরা তো নিরাপদে আছি। জবাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সালাতে ক্বসর করাটা আল্লাহর একটা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) বা দান, যা তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন। অতএব তোমরা তাঁর এ দান গ্রহণ করো। সুতরাং অতীব সহজ, অতএব আয়াত দ্বারা সালাতের রাক্‘আত সংখ্যার কমতি উদ্দেশ্য নয় এবং এটাই অধিকাংশ ‘উলামাবৃন্দ বুঝেছেন। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন)
পরিচ্ছেদঃ ৪১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের সালাত
১৩৩৬-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (বিদায় হাজ্জের (হজ্জের/হজের) সময়) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মদীনাহ্ হতে মক্কায় গমন করেছিলাম। সেখানে তিনি মদীনায় ফেরত না আসা পর্যন্ত চার রাক্’আত ফরয সালাতের স্থলে দু’ রাক্’আত আদায় করেছেন। আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আপনারা কি মক্কায় কয়েক দিন অবস্থান করেছিলেন? জবাবে আনাস (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, আমরা মক্কায় দশ দিন অবস্থান করেছিলাম। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ السَّفَرِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ من الْمَدِينَةِ إِلَى مَكَّةَ فَكَانَ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ حَتَّى رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ قِيلَ لَهُ: أَقَمْتُمْ بِمَكَّة شَيْئا قَالَ: «أَقَمْنَا بهَا عشرا»
ব্যাখ্যা: ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেনঃ আনাস (রাঃ)-এর হাদীসে তিনি মক্কা এবং মিনায় অবস্থানের কথা উল্লেখ করেছেন এছাড়া অন্য কোন বিষয় নেই এবং তিনি জাবির (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহাজ্জ মাসের ৪ তারিখ ভোরে মক্কায় আগমন করলেন (রবিবার) এবং সেখানে ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম তারিখ পর্যন্ত অবস্থান করলেন এবং অষ্টম তারিখ বৃহস্পতিবারে ফাজ্রের (ফজরের) সালাত আদায় করে মিনায় গমন করলেন এবং মক্কা থেকে মদীনার উদ্দেশে রওনা দিলেন আইয়্যামে তাশরীক্বের পর। আর বুখারীতেও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় অনুরূপ হাদীস রয়েছে।
আলোচ্য হাদীসটি শাফি‘ঈর মাযহাবীদের উপর অত্যন্ত জটিলতার বিষয়, কারণ তাদের নিকট স্বীকৃত বিষয় হলো যদি মুসাফির ব্যক্তি নির্ধারিত স্থানে চার দিন অবস্থানের নিয়্যাত করে তবে চার দিন পূর্ণ হওয়ার পর তার সফর ভেঙ্গে যাবে। (অর্থাৎ তখন পূর্ণ সালাত আদায় করতে হবে)।
তবে উক্ত স্থানে যদি চার দিনের কম সময় অবস্থানের নিয়্যাত করে যদিও তার বেশী অবস্থান করে তবে সফরের হুকুম ঠিক থাকবে। তবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মক্কায় ১০ দিন অবস্থানটি ছিল বিদায় হাজ্জ (হজ/হজ্জ)।
জবাবে বায়হাক্বী (রহঃ) বলেনঃ আনাস (রাঃ) তার কথা فأقمنا بها عشرًا ‘আমরা সেখানে ১০ দিন অবস্থান করলাম’ দ্বারা মক্কা, মিনা ও ‘আরাফাহ্ উদ্দেশ্য করেছেন। কারণ একাধিক হাদীস দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জে যিলহাজ্জ মাসের চার তারিখে মক্কায় আগমন করেছিলেন এবং সেখানে তিনদিন অবস্থান করেছিলেন ও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বসর করেছিলেন এবং তিনি আগমনের দিন ভ্রমণ অবস্থায় থাকার কারণ হিসেবে গণ্য করেননি এবং তারবিয়ার দিনও গণ্য করেননি। কারণ সেদিন তিনি মিনার উদ্দেশে গমন করেছিলেন এবং সেখানে যুহর, ‘আসর, মাগরিব, ‘ইশা ও ফাজ্র (ফজর) সালাত আদায় করেছিলেন। অতঃপর সূর্য উদিত হলে তিনি ‘আরাফায় গমন করলেন। এরপর সূর্য অস্ত গেলে ‘আরাফাহ্ থেকে মুজদালিফায় গেলেন, সেখানে রাত যাপনের পর ফাজ্রের (ফজরের) সালাত আদায় শেষে মিনায় গমন করলেন এবং কুরবানীর কাজ সমাধা করলেন। এরপর মক্কায় গিয়ে তাওয়াফ শেষ করে মিনায় ফিরে গেলেন, সেখানে অবস্থানের পর মদীনার উদ্দেশে রওনা করলেন। সুতরাং তিনি একই স্থানে চারদিন অবস্থান করত সালাত ক্বসর করেননি। (আস সুনান আল্ কুবরা- ২য় খন্ড, ১৪৯ পৃঃ)
আমি বলব (মির‘আত প্রণেতা) যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জ মক্কায় চারদিন অবস্থান করেছিলেন। কারণ তিনি যিলহাজ্জের চার তারিখে ভোরে সেখানে গমন করেছেন এবং সেখান থেকে মিনায় গমন করেছিলেন আট তারিখ ফাজ্রের (ফজরের) পর। আর অবস্থানরত সময়ে তিনি সালাত ক্বস্র করেছেন। সুতরাং এটা ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর মাযহাবের উপর প্রমাণ করছে এবং মারফূ' ক্বাওলী কিংবা ফে‘লী হাদীস থেকে প্রমাণ হয় না যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারদিনের বেশী কোথাও অবস্থান করেছেন এবং সালাত ক্বসর করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের সালাত
১৩৩৭-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ভ্রমণে গিয়ে ঊনিশ দিন অবস্থান করেন। এ সময় তিনি দু’ রাক্’আত করে ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেন। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমরাও মক্কা মদীনার মধ্যে কোথাও গেলে সেখানে ঊনিশ দিন অবস্থান করলে, আমরা দু’ রাক্’আত করে সালাত আদায় করতাম। এর চেয়ে বেশী দিন অবস্থান করলে চার রাক্’আত করে সালাত ক্বায়িম করতাম। (বুখারী)[1]
بَابُ صَلَاةِ السَّفَرِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: سَافَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَفَرًا فَأَقَامَ تِسْعَةَ عَشَرَ يَوْمًا يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: فَنَحْنُ نُصَلِّي فِيمَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَكَّةَ تِسْعَةَ عَشَرَ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ فَإِذَا أَقَمْنَا أَكْثَرَ مِنْ ذَلِك صلينَا أَرْبعا. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: মক্কা বিজয়ের সময় বুখারীর বর্ণনায় কিতাবুল মাগাযীতে রয়েছে যে, ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় ১৯ দিন অবস্থান করলেন এবং সালাত ক্বসর করে দু’ রাক্‘আত আদায় করলেন’’ এবং ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) তা উল্লেখ করছেন আল মুনতাক্বা‘ গ্রন্থে যে, মক্কা বিজয় হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে ১৯ দিন অবস্থান করেছেন এবং দু’ রাক্‘আত করে সালাত আদায় করেছেন।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এ হাদীস থেকে মাস্আলাহ্ ইস্তিম্বাত স্বরূপ বললেনঃ
(فَنَحْنُ نُصَلِّيْ فِيْمَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَكَّةَ تِسْعَةَ عَشَرَ)
অর্থাৎ ১৯ দিন, তিরমিযীর বর্ণনায় রয়েছে যে, আমরা আমাদের ও ১৯ দিনের মাঝে দু’ রাক্‘আত করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতাম।
বুখারীতে রয়েছে, আমরা ১৯ দিনের মধ্য সালাত ক্বসর করতাম। বায়হাক্বীতে রয়েছে, যখন আমরা সফর করতাম অতঃপর ১৯ দিন স্থায়ী হতাম তখন দু’ রাক্‘আত করে সালাত আদায় করতাম।
আর যখন আমরা ১৯-এর অধিক অবস্থান করতাম তখন আমরা চার রাক্‘আত সালাত আদায় করতাম এবং এটাই ইসহসক (রহঃ) গ্রহণ করেছেন। যেমন- হাফিয আসক্বালানী (রহঃ)-এর বক্তব্য অতিবাহিত হয়েছে যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ইসহাক-এর নিকট সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বসরের সীমা হলো ১৯ দিন।
বরং সারকথা হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় এ নির্ধারিত সময়ই (১৯ দিন) অবস্থান করেছেন এবং তিনি জানতেন না যে, তার অবস্থান কখন পর্যন্ত, কারণ প্রয়োজন শেষ হলেই তাকে ফিরে আসতে হবে। আর এরূপ অবস্থার স্বীকার যে হবে তাকে সর্বদাই ক্বসর করতে হবে।
কেননা সে তো স্থায়ী অবস্থানের নিয়্যাতই করেনি, কাজে সে মূলত সফরেই থাকবে। এ জন্য ইমাম আত্ তিরমিযী (রহঃ) বলেছেন, বিদ্বানগণ একমত হয়েছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত মুসাফির তার অবস্থানের দিন বা স্থান নির্ধারণ না করবে ততক্ষণ তাকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বসর করতেই হবে, যদি সে এক বছরও অতিবাহিত করে।
ইবনুল মুনযির (রহঃ) অনুরূপ বলেছেন। কিন্তু ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা যে ব্যক্তি নির্ধারিত এ সময়ের (১৯ দিন) বেশী অবস্থান করবে সে পূর্ণ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে।
যেমন- ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ইসহসক বলেন যে, এটাই অস্পষ্টতা বা অনিশ্চয়তার (অর্থাৎ সফর থেকে আজ ফিরব, কি কাল, না কি পরশু কিংবা তারপর দিন.....) শেষ চূড়ান্ত।
ইমাম তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) এ জটিলতার সমাধান দিয়েছেন আহকাম আস সফরের ৮১ পৃষ্ঠায়। সেখানে উল্লেখ রয়েছে যে, নিশ্চয় তিনি [ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] অবহিত ছিলেন যে, মক্কায় এবং তাবূকে কি করতে ছিলেন, তিন কিংবা চার দিনে মক্কা কিংবা তাবূক যুদ্ধের কাজ সমাধা করতে পারেননি, এমনকি বলা হত যে, নিশ্চয় তিনি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন যে, আজ সফর থেকে ফিরব, কাল সফর থেকে ফিরব..... কিন্তু তিনি মক্কা বিজয় করলেন এবং তার (মক্কার) চারপাশে কাফির যুদ্ধারা। আর এ শহর ছিল বিজিত শহরগুলোর মধ্যে বৃহৎ ও মর্যাদা সম্পন্ন এবং এ বিজয়টি ছিল শত্রুদের জন্য বড়ই লাঞ্ছনা এবং আরববাসীর ইসলাম কবূল করল এই সফরেই। উদাহরণস্বরূপ এ বৃহৎ কাজগুলো তিনি ৪ দিনে শেষ করতে পারেননি বিধায় এ কাজগুলোর সমাধা পর্যন্ত তিনি মক্কায় অবস্থান করছিলেন। (আর এভাবে তার সফর দীর্ঘায়িত হয়ে ১৯ দিন পর্যন্ত গড়ায়) অনুরূপ ঘটনা তাবূকেও ঘটেছিল।
পরিচ্ছেদঃ ৪১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের সালাত
১৩৩৮-[৬] হাফস ইবনু ’আসিম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার মক্কা-মদীনার পথে ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমারের সাথে থাকার আমার সৌভাগ্য ঘটেছে। (যুহরের সালাতের সময় হলে) তিনি আমাদেরকে দু’ রাক্’আত সালাত (জামা’আতে) আদায় করালেন। এখান থেকে তাঁবুতে ফিরে গিয়ে তিনি দেখলেন, লোকেরা দাঁড়িয়ে আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, লোকেরা এটা কি করছে? আমি বললাম, তারা নফল সালাত আদায় করছে। তিনি বললেন, আমাকে যদি নফল সালাতই আদায় করতে হয়, তাহলে ফরয সালাতই তো পরিপূর্ণভাবে আদায় করা বেশী ভাল ছিল। কিন্তু যখন সহজ করার জন্য ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বসর আদায়ের হুকুম হয়েছে, তখন তো নফল সালাত ছেড়ে দেয়াই উত্তম। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে থাকার সৌভাগ্যও পেয়েছি। তিনি সফরের অবস্থায় দু’ রাক্’আতের বেশী (ফরয) সালাত আদায় করতেন না। আবূ বকর, ’উমার, ’উসমান (রাঃ)-এর সাথে চলারও সুযোগ আমার হয়েছে। তারাও এভাবে দু’ রাক্’আতের বেশী আদায় করতেন না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ السَّفَرِ
وَعَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ قَالَ: صَحِبْتُ ابْنَ عُمَرَ فِي طَرِيقِ مَكَّةَ فَصَلَّى لَنَا الظُّهْرَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَاءَ رَحْلَهُ وَجَلَسَ فَرَأَى نَاسًا قِيَامًا فَقَالَ: مَا يَصْنَعُ هَؤُلَاءِ؟ قُلْتُ: يُسَبِّحُونَ. قَالَ: لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا أَتْمَمْتُ صَلَاتِي. صَحِبْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَانَ لَا يَزِيدُ فِي السَّفَرِ عَلَى رَكْعَتَيْنِ وَأَبَا بكر وَعمر وَعُثْمَان كَذَلِك
ব্যাখ্যা: এখানে তাসবীহ পড়া দ্বারা নফল সালাত বুঝানো হয়েছে।
(لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا أَتْمَمْتُ صَلَاتِي) অর্থাৎ যদি নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সফরে পড়তেই হতো তবে ফরয সালাত পূর্ণ করে আদায় করতাম। ইবনুল ক্বইয়্যূম (রহঃ) বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশিত পথ হলো সফরে ফরয সালাত সংক্ষেপ করা। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ কোন প্রমাণ নেই যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সফরে ফরয সালাতের পূর্বে কিংবা পরে সুন্নাত সালাত আদায় করেছেন। কিন্তু বিতর ও ফাজ্রের (ফজরের) দু’ রাক্‘আত সুন্নাত আদায় করেছেন। কারণ তিনি এ দু’টো সফর কিংবা মুক্বীম কোন অবস্থাতেই ছেড়ে দেননি এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ) সফরে ফারযের (ফরযের/ফরজের) আগে কিংবা পরে কোন নফল সালাত আদায় করতেন না। তবে রাতের সালাত বিতরসহ আদায় করতেন এবং এ বিধানকে আরো মজবুত করে যে, নিশ্চয়ই চার রাক্‘আত বিশিষ্ট ফরয সালাত দু’ রাক্‘আত করা হয়েছে মুসাফিরের ওপর সহজের জন্য সেখানে নিয়মিত সুন্নাত কিভাবে তার ওপর আবশ্যক হতে পারে? যেখানে ফরয সালাত হালকা করে দু’ রাক্‘আত করা হয়েছে মুসাফিরের ওপর সহজের জন্য সেখানে নিয়মিত সুন্নাত কিভাবে তার উপর আবশ্যক হতে পারে? যদি মুসাফিরের ওপর সহজ করাই উদ্দেশ্য না হতো তবে ফরয সালাত পূর্ণ আদায় করাই উত্তম হত। (আল হাদী- ১ম খন্ড, ১৩৪ পৃঃ)
ইমাম আত্ তিরমিযী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে ইখতিলাফ করেছেন, কতিপয় সাহাবী (রাঃ) সফরে পুরুষের নফল সালাত আদায়ের ব্যাপারে মত দিয়েছেন, আহমাদ, ইসহাক (রহঃ) এ কথাই বলেছেন। আবার একদল সাহাবী মনে করেন যে, সফরে ফারযের (ফরযের/ফরজের) আগে বা পরে নফল আদায় না করাই ভাল। তবে মূলকথা হলো যে ব্যক্তি সফরে নফল সালাত আদায় না করবে সে অব্যাহতি গ্রহণ করল। আর যে আদায় করবে তার জন্য এ ব্যাপারে অধিক ফাযীলাত রয়েছে এবং এটাই অধিকাংশ বিদ্বানদের কথা এবং তারা নফল সালাত সফরে ঐচ্ছিক রেখেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের সালাত
১৩৩৯-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে গেলে যুহর ও ’আসরের সালাত এক সাথে আদায় করতেন। (ঠিক এমনিভাবে) মাগরিব ও ’ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) একসাথে আদায় করতেন। (বুখারী)[1]
بَابُ صَلَاةِ السَّفَرِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَجْمَعُ بَين الظُّهْرِ وَالْعَصْر إِذَا كَانَ عَلَى ظَهْرِ سَيْرٍ وَيجمع بَين الْمغرب وَالْعشَاء. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: বিলম্বে একত্রিকরণ, আর সেটা হলো ‘আসরের ওয়াক্ত প্রবেশ করা পর্যন্ত যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিলম্ব করা এবং যুহর ও ‘আসর এক সঙ্গে ‘আসরের সময়ে আদায় করা। সফরে দু’ ওয়াক্ত সালাত একত্রিত করে আদায়ের ক্ষেত্রে সাতটি মত রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বপ্রসিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো- যুহর-‘আসর ও মাগরিব-‘ইশার সালাতের মাঝে সফরে দু’ ওয়াক্তের যে কোন ওয়াক্তে পূর্বের সালাত পরের সালাতের ওয়াক্তের সাথে ও পরের সালাত পূর্বের সালাতের ওয়াক্তের সাথে একত্রিত করা বৈধ। তা সওয়ারী অবস্থায় হোক বা সাধারণ অবস্থায় হোক এবং এ কথাই বলেছেন অধিকাংশ সাহাবীগণ, তাবি‘ঈনগণ এবং ফিকহবিদগণের মধ্য সাওরী, ইমাম শাফি‘ঈ, আবূ সাওর, ইবনুল মুনযির এবং আশহাব সকলেই এবং ইবনু কুদামাহ্ মালিক (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
আল্লামা যুরকানী (রহঃ) বলেনঃ মালিক (রহঃ) প্রসিদ্ধ বর্ণনায় এটাই রয়েছে। মির‘আত প্রণেতা বলেন, এটাই মালিকী মাযহাবের নিকট পছন্দনীয় মত এবং শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ)-এর নিকট এ মত পছন্দনীয়। যেমন- তিনি হুজ্জতিল্লাহ আল বালিগাহ ২য় খন্ডে ১৭ পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, সফরে যুহর-‘আসর ও মাগরিব-‘ইশার মাঝে একত্রিতকরণ রুখসাহ্ বা অব্যাহতির অন্তর্ভুক্ত।
পরিচ্ছেদঃ ৪১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের সালাত
১৩৪০-[৮] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভ্রমণে গেলে রাতের বেলায় ফরয সালাত ছাড়া (অন্য সালাত) সওয়ারীর উপর বসেই ইশারা করে আদায় করতেন। সওয়ারীর মুখ যেদিকে থাকত তাঁর মুখও সে দিকে থাকত। এমনিভাবে বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সওয়ারীর উপরই আদায় করেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ السَّفَرِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فِي السَّفَرِ عَلَى رَاحِلَتِهِ حَيْثُ تَوَجَّهَتْ بِهِ يُومِئُ إِيمَاءً صَلَاةَ اللَّيْلِ إِلَّا الْفَرَائِضَ وَيُوتِرُ على رَاحِلَته
ব্যাখ্যা: সওয়ারী ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) ছাড়া অন্যদিকে হলেও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে রত থাকতেন। এ প্রসঙ্গে সহীহুল বুখারীতে ‘আমির বিন রবী‘আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি যে, তিনি সওয়ারী অবস্থায় মাথা দ্বারা ইশারা করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন, সওয়ারী যে দিকে হয়ে রয়েছে সে দিকে।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত-
كان إذا أراد أن يتطوع في السفر استقبل بناقته القبلة، ثم صلى حيث وجهت ركابه
অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর অবস্থায় নফল সালাত আদায়ের ইচ্ছা করতেন, তখন উটনীকে ক্বিবলামুখী করতেন, অতঃপর তিনি সালাত আদায় করতেন, এরপর সওয়ারী যেদিকেই ফিরুক না কেন। (আবূ দাঊদ, আহমাদ, দারাকুত্বনী)
রাতের সালাত শেষে তিনি সওয়ারীর উপরই বিতর আদায় করতেন। ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেন যে, এটা বিতর সালাত ওয়াজিব না হওয়ার উপর প্রমাণ করে। অর্থাৎ যদি তা (বিতর সালাত) ওয়াজিব হত তবে তা অবশ্যই সওয়ারীর উপর আদায় করা জায়িয হত না।
আমি বলব যে, সফরে বিতর সওয়ারীর উপর আদায়ের বৈধতার ক্ষেত্রে আলোচ্য হাদীসটি একটি পূর্ণাঙ্গ নাস বা বক্তব্য এবং এটাই বিতর ওয়াজিব না হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট আলামত।
এ ব্যাপারে আহলুল ‘ইলমদের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ (রহঃ) বৈধতার কথা বলেছেন, (অর্থাৎ সওয়ারীতে বিতর বৈধ) এবং সেটা ‘আলী, ইবনু ‘উমার, ‘আত্বা ইবনু আবী রাবাহ, হাসান বসরী থেকে বর্ণিত এবং তাদের কথাই সঠিক। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও তাঁর সহচরদ্বয় বলেন, ফারযের (ফরযের/ফরজের) মতই মাটির উপর ব্যতীত বিতর সালাত আদায় করা বৈধ নয়। যা প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ পরিপন্থী।