পরিচ্ছেদঃ ৪১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের সালাত
১৩৩৮-[৬] হাফস ইবনু ’আসিম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার মক্কা-মদীনার পথে ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমারের সাথে থাকার আমার সৌভাগ্য ঘটেছে। (যুহরের সালাতের সময় হলে) তিনি আমাদেরকে দু’ রাক্’আত সালাত (জামা’আতে) আদায় করালেন। এখান থেকে তাঁবুতে ফিরে গিয়ে তিনি দেখলেন, লোকেরা দাঁড়িয়ে আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, লোকেরা এটা কি করছে? আমি বললাম, তারা নফল সালাত আদায় করছে। তিনি বললেন, আমাকে যদি নফল সালাতই আদায় করতে হয়, তাহলে ফরয সালাতই তো পরিপূর্ণভাবে আদায় করা বেশী ভাল ছিল। কিন্তু যখন সহজ করার জন্য ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বসর আদায়ের হুকুম হয়েছে, তখন তো নফল সালাত ছেড়ে দেয়াই উত্তম। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে থাকার সৌভাগ্যও পেয়েছি। তিনি সফরের অবস্থায় দু’ রাক্’আতের বেশী (ফরয) সালাত আদায় করতেন না। আবূ বকর, ’উমার, ’উসমান (রাঃ)-এর সাথে চলারও সুযোগ আমার হয়েছে। তারাও এভাবে দু’ রাক্’আতের বেশী আদায় করতেন না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ السَّفَرِ
وَعَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ قَالَ: صَحِبْتُ ابْنَ عُمَرَ فِي طَرِيقِ مَكَّةَ فَصَلَّى لَنَا الظُّهْرَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَاءَ رَحْلَهُ وَجَلَسَ فَرَأَى نَاسًا قِيَامًا فَقَالَ: مَا يَصْنَعُ هَؤُلَاءِ؟ قُلْتُ: يُسَبِّحُونَ. قَالَ: لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا أَتْمَمْتُ صَلَاتِي. صَحِبْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَانَ لَا يَزِيدُ فِي السَّفَرِ عَلَى رَكْعَتَيْنِ وَأَبَا بكر وَعمر وَعُثْمَان كَذَلِك
ব্যাখ্যা: এখানে তাসবীহ পড়া দ্বারা নফল সালাত বুঝানো হয়েছে।
(لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا أَتْمَمْتُ صَلَاتِي) অর্থাৎ যদি নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সফরে পড়তেই হতো তবে ফরয সালাত পূর্ণ করে আদায় করতাম। ইবনুল ক্বইয়্যূম (রহঃ) বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশিত পথ হলো সফরে ফরয সালাত সংক্ষেপ করা। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ কোন প্রমাণ নেই যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সফরে ফরয সালাতের পূর্বে কিংবা পরে সুন্নাত সালাত আদায় করেছেন। কিন্তু বিতর ও ফাজ্রের (ফজরের) দু’ রাক্‘আত সুন্নাত আদায় করেছেন। কারণ তিনি এ দু’টো সফর কিংবা মুক্বীম কোন অবস্থাতেই ছেড়ে দেননি এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ) সফরে ফারযের (ফরযের/ফরজের) আগে কিংবা পরে কোন নফল সালাত আদায় করতেন না। তবে রাতের সালাত বিতরসহ আদায় করতেন এবং এ বিধানকে আরো মজবুত করে যে, নিশ্চয়ই চার রাক্‘আত বিশিষ্ট ফরয সালাত দু’ রাক্‘আত করা হয়েছে মুসাফিরের ওপর সহজের জন্য সেখানে নিয়মিত সুন্নাত কিভাবে তার ওপর আবশ্যক হতে পারে? যেখানে ফরয সালাত হালকা করে দু’ রাক্‘আত করা হয়েছে মুসাফিরের ওপর সহজের জন্য সেখানে নিয়মিত সুন্নাত কিভাবে তার উপর আবশ্যক হতে পারে? যদি মুসাফিরের ওপর সহজ করাই উদ্দেশ্য না হতো তবে ফরয সালাত পূর্ণ আদায় করাই উত্তম হত। (আল হাদী- ১ম খন্ড, ১৩৪ পৃঃ)
ইমাম আত্ তিরমিযী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে ইখতিলাফ করেছেন, কতিপয় সাহাবী (রাঃ) সফরে পুরুষের নফল সালাত আদায়ের ব্যাপারে মত দিয়েছেন, আহমাদ, ইসহাক (রহঃ) এ কথাই বলেছেন। আবার একদল সাহাবী মনে করেন যে, সফরে ফারযের (ফরযের/ফরজের) আগে বা পরে নফল আদায় না করাই ভাল। তবে মূলকথা হলো যে ব্যক্তি সফরে নফল সালাত আদায় না করবে সে অব্যাহতি গ্রহণ করল। আর যে আদায় করবে তার জন্য এ ব্যাপারে অধিক ফাযীলাত রয়েছে এবং এটাই অধিকাংশ বিদ্বানদের কথা এবং তারা নফল সালাত সফরে ঐচ্ছিক রেখেছেন।