১৩৩৫

পরিচ্ছেদঃ ৪১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সফরের সালাত

১৩৩৫-[৩] ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’উমারের কাছে নিবেদন করলাম, আল্লাহ তা’আলার বাণী হলো, ’’তোমরা সালাত কম আদায় করো, অর্থাৎ ক্বসর করো, যদি অমুসলিমরা তোমাদেরকে বিপদে ফেলবে বলে আশংকা করো’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪: ১০১)। এখন তো লোকেরা নিরাপদ। তাহলে ক্বসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের প্রয়োজনটা কি? ’উমার (রাঃ) বললেন, তুমি এ ব্যাপারে যেমন বিস্মিত হচ্ছো, আমিও এরূপ আশ্চর্য হয়েছিলাম। তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ব্যাপারটি সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতে ক্বসর করাটা আল্লাহর একটা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) বা দান, যা তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন। অতএব তোমরা তাঁর এ দান গ্রহণ করো। (মুসলিম)[1]

بَابُ صَلَاةِ السَّفَرِ

وَعَن يعلى بن أُميَّة قَالَ: قلت لعمر بن الْخطاب: إِنَّمَا قَالَ اللَّهُ تَعَالَى (أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا)
فَقَدْ أَمِنَ النَّاسُ. قَالَ عُمَرُ: عَجِبْتُ مِمَّا عَجِبْتَ مِنْهُ فَسَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالَ: «صَدَقَةٌ تَصَدَّقَ اللَّهُ بِهَا عَلَيْكُمْ فَاقْبَلُوا صدقته» رَوَاهُ مُسلم

وعن يعلى بن امية قال: قلت لعمر بن الخطاب: انما قال الله تعالى (ان تقصروا من الصلاة ان خفتم ان يفتنكم الذين كفروا) فقد امن الناس. قال عمر: عجبت مما عجبت منه فسالت رسول الله صلى الله عليه وسلم. فقال: «صدقة تصدق الله بها عليكم فاقبلوا صدقته» رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (فَاقْبَلُوْا صَدَقَتَه) অর্থাৎ ভয় থাকুক বা না থাকুক তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া গ্রহণ করো, আর নিশ্চয় তিনি আয়াতে কারীমায় বলেছেনঃ إِنْ خِفْتُمْ কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরামগণের অধিকাংশ সফর যুদ্ধের আধিক্যের কারণে শত্রুর ভয় থেকে মুক্ত ছিল না। সুতরাং আলোচ্য আয়াতটি ভয় না থাকলে ক্বসর করা যাবে না এ প্রমাণ বহন করছে না। কারণ তা তখনকার সংঘটিত ঘটনার বর্ণনা, কাজেই তার দ্বারা এ উদ্দেশ্য মুখ্য নয়। ইবনুল ক্বইয়্যূম (রহঃ) বলেনঃ এ আয়াতটি ‘উমার (রাঃ) ও অন্যান্যদের উপর জটিল মনে হচ্ছিল বিধায় তারা সে ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাবে বললেন- নিশ্চয় সেটা আল্লাহর দান এবং উম্মাতের জন্য শার‘ঈ বিধান। আর উল্লেখিত আয়াতে ‘‘ক্বসর’’ দ্বারা ক্বসর (সালাত) উদ্দেশ্য নয়। সংখ্যার কমের দিক দিয়ে একে (صلاة مقصورة) ‘সংক্ষিপ্ত সালাত’ বলে নামকরণ করা হয় এবং আরকানের পূর্ণতায় তাকে (صلاة تامة) ‘পূর্ণ সালাত’ বলে নামকরণ করা হয় এবং নিশ্চয় ক্বসর সালাতটি আয়াতে কারীমায় উল্লেখিত ক্বসর-এর অন্তর্ভুক্ত হবে না।

প্রথমটি অধিকাংশ ফিক্বহবিদদের পরিভাষা এবং দ্বিতীয়টির উপর সাহাবীদের বক্তব্য প্রমাণ করে। যেমন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও অন্যান্যদের কথা- ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ প্রথমতঃ সালাত ফরয করা হয়েছে দু’ রাক্‘আত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় হিজরত করলেন তখন মুক্বীমের জন্য দু’ রাক্‘আত বৃদ্ধি করা হলো আর মুসাফিরের জন্য পূর্বেরটাই (দু’ রাক্‘আত) নির্ধারিত থাকল। এটাই প্রমাণ করে যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট সফরের সালাত চার থেকে কমানো হয়নি বরং তা অনুরূপই ফরয এবং মুসাফিরের জন্য ফরয দু’ রাক্‘আত।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জবানে মুক্বীম অবস্থায় চার রাক্‘আত সালাত ফরয করেছেন, সফরে দু’ রাক্‘আত ও ভয়ের সালাত এক রাক্‘আত ফরয করেছেন। ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেনঃ সফরের সালাত দু’ রাক্‘আত, জুমু‘আহ্ দু’ রাক্‘আত এবং ঈদের সালাত দু’ রাক্‘আত পরিপূর্ণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জবানে তা ক্বসর নয়। ‘উমার (রাঃ) থেকে প্রমাণ হয় যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন- আমাদের সালাত ক্বসরের কি হলো? আমরা তো নিরাপদে আছি। জবাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সালাতে ক্বসর করাটা আল্লাহর একটা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) বা দান, যা তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন। অতএব তোমরা তাঁর এ দান গ্রহণ করো। সুতরাং অতীব সহজ, অতএব আয়াত দ্বারা সালাতের রাক্‘আত সংখ্যার কমতি উদ্দেশ্য নয় এবং এটাই অধিকাংশ ‘উলামাবৃন্দ বুঝেছেন। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)