পরিচ্ছেদঃ ৩০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৬৭-[৯] উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে লোক যুহরের (ফরয সালাতের) পূর্বে চার রাক্’আত, এরপর চার রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। আল্লাহ তার ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ حَافَظَ عَلَى أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ وَأَرْبَعٍ بَعْدَهَا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: (وَأَرْبَعٍ بَعْدَهَا) তার পরে অর্থাৎ যুহরের পরে চার রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। কারী বলেন, তন্মধ্যে দুই রাক্‘আত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ আর দুই রাক্‘আত মুস্তাহাব। অতএব তা দুই সালামে আদায় করাই উত্তম।
(حَرَّمَهُ اللّهُ عَلَى النَّارِ) আল্লাহ তাকে আগুনের জন্য হারাম করে দিবেন। সিন্দী বলেন, এর প্রকাশমান অর্থ হলো সে জাহান্নামে প্রবেশই করবে না। এও বলা হয়ে থাকে যে, সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। তবে এ পরবর্তী অর্থটি অবান্তর। বরং বলা যায় যে, যে ব্যক্তি নিয়মিত উক্ত সালাত আদায় করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কল্যাণমূলক কাজ করার তাওফীক দান করবেন এবং তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়ে তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন। উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) বর্ণিত এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৬৮-[১০] আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যুহরের (ফরয) সালাতের পূর্বের চার রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), যার মাঝে সালাম ফিরানো হয় না, সালাতের জন্যে (তা আদায়কারীর জন্যে) আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَرْبَعٌ قَبْلَ الظُّهْرِ لَيْسَ فِيهِنَّ تَسْلِيمٌ تُفَتَّحُ لَهُنَّ أَبْوَابُ السَّمَاء» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (لَيْسَ فِيهِنَّ تَسْلِيمٌ) তার মাঝে সালাম নেই। অর্থাৎ চার রাক্‘আতের মাঝে কোন সালাম নেই বরং তা এক সালামে আদায় করা হবে। আলী ক্বারী বলেন, এটাই উত্তম। যারা বলেন, দিনের বেলায় চার রাক্‘আত সুন্নাত এক সালামে আদায় করার বিধান এ হাদীসটি তাদের দলীল। তবে এখানে এ কথা বলার ও সুযোগ রয়েছে যে, চার রাক্‘আত বিশিষ্ট সুন্নাত সালাতের মাঝে দু’ রাক্‘আত আদায় করার পর সালাম ফেরানো ওয়াজিব নয়। কেননা আবূ দাঊদ ও অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, দিনের ও রাতের সালাত দুই দুই রাক্‘আত করে। ইমাম আবূ হানীফাহ্ ব্যতীত অন্যান্য ইমামদের অভিমত এটাই।
ইবনু মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের পূর্বে সূর্য ঢলে যাবার পরে চার রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন, সালাম দ্বারা তা পৃথক করতেন না। অর্থাৎ দুই রাক্‘আতের পর সালাম ফিরাতেন না। এটাকে সুন্নাতে যাওয়াল (সূর্য ঢলার সালাত) বলা হয়। তা যুহরের সুন্নাত নয়।
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম বলেন, এটি একটি পৃথক সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলার পর আদায় করতেন। এর হিকমাত এই যে, (আল্লাহ অধিক জানেন) দিনের অর্ধভাগে আকাশের দরজা খোলা হয় যেমন অত্র হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আর রাতের অর্ধভাগে মহান আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। অতএব এ দু’টি সময় আল্লাহর নৈকট্য লাভের ও তাঁর দয়া অর্জনের সময়।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৬৯-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু সায়িব (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য হেলে যাওয়ার পর যুহরের সালাতের পূর্বে চার রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তিনি বলতেন, এটা এমন এক সময় যখন (নেক ’আমল উপরের দিকে যাওয়ার জন্যে) আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। তাই এ মুহূর্তে আমার নেক ’আমলগুলো উপরের দিকে চলে যাক এটা আমি চাই। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ السَّائِبِ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يُصَلِّي أَرْبَعًا بَعْدَ أَنْ تَزُولَ الشَّمْسُ قَبْلَ الظُّهْرِ وَقَالَ: «إِنَّهَا سَاعَةٌ تُفْتَحُ فِيهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ فَأُحِبُّ أَنْ يَصْعَدَ لِي فِيهَا عَمَلٌ صَالِحٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ইরাক্বী বলেন, এ চার রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) যুহরের পূর্বের চার রাক্‘আত ভিন্ন অন্য সালাত। এ সালাতকে সুন্নাতে যাওয়াল বলা হয়।
(سَاعَةٌ تُفْتَحُ فِيهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ) এ সময়ে আকাশের দরজা খোলা হয়। অর্থাৎ সৎ ‘আমল আল্লাহর দরবারে পৌঁছানোর জন্য এবং রহমাত নাযিলের জন্য এ সময়ে আকাশের দরজা খোলা হয়। তবে এখানে একটি প্রশ্ন দাঁড়ায় যে, যে সকল মালাক (ফেরেশতা) আল্লাহর দরবারে ‘আমল পৌঁছানোর দায়িত্বে নিয়োজিত তারা তো শুধুমাত্র ‘আসরের পরে এবং ফাজরের (ফজরের) পরে আল্লাহর দারবারে ‘আমল নিয়ে আরোহণ করেন। তাহলে এ সময়ে আল্লাহর দরবারে ‘আমল পৌঁছে কিভাবে। এর জবাব এই যে, (صعود) তথা আরোহণ দ্বারা কোন কোন সময় কবূল তথা গ্রহণ উদ্দেশ্য হয়। এখানে ‘আমল পৌঁছানোর অর্থ হলো ‘আমল কবূল করা হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৭০-[১২] ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ লোকের ওপর রহমত বর্ষণ করেন, যে লোক ’আসরের (ফরয সালাতের) পূর্বে চার রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। (আহমাদ, তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رَحِمَ اللَّهُ امْرَءًا صَلَّى قَبْلَ الْعَصْرِ أَرْبَعًا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যা: (صَلّى قَبْلَ الْعَصْرِ أَرْبَعًا) অর্থাৎ ‘আসরের পূর্বে চার রাক্‘আত নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে যা আদায় করা মুস্তাহাব সুন্নাত মুয়াক্কাদাহ্ নয়। ইমাম নাবাবী মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, আমাদের সাথীদের মাঝে এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই যে, এ চার রাক্‘আত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। যারা এ চার রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন তাদের মাঝে ‘আলী (রাঃ) অন্যতম। ইবরাহীম নাখ্‘ঈ বলেন, সাহাবীগণ এ চার রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন। তবে তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ মনে করতেন না। যারা ‘আসরের পূর্বে সালাত আদায় করতেন না তাদের মধ্যে সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, হাসান বসরী, সা‘ঈদ ইবনু মানসূর ক্বায়স ইবনু আবী হাযিম ও আবুল আহ্ওয়াস অন্যতম।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৭১-[১৩] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আসরের সালাতের (ফরযের) পূর্বে চার রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এ চার রাক্’আতের মধ্যখানে সালাম ফিরানোর দ্বারা নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশতা) এবং তাদের অনুসারী মুসলিম ও মু’মিনীনদের মাঝে পার্থক্য করতেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي قَبْلَ الْعَصْرِ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ بِالتَّسْلِيمِ عَلَى الْمَلَائِكَةِ الْمُقَرَّبِينَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُؤمنِينَ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: পূর্বের হাদীসের ন্যায় এ হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, ‘আসরের পূর্বে চার রাক্‘আত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। পরবর্তী হাদীস যাতে বলা হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসরের পূর্বে দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন এবং অত্র হাদীসদ্বয়ের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কেননা উভয় হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো চার রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন, আবার কখনো দুই রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
(يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ بِالتَّسْلِيمِ) অর্থাৎ প্রথম দুই রাক্‘আত এবং শেষের দুই রাক্‘আতের মাঝে সালাম দ্বারা পার্থক্য বা ব্যবধান সৃষ্টি করতেন। এখানে সালাম দ্বারা তাশাহুদ পাঠ উদ্দেশ্য। সালাম ফেরানো উদ্দেশ্য নয়। ইমাম তিরমিযী বলেন, ইসহাক ইবনু রাহ্ওয়াইহি এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম বাগাভী বলেন, অত্র হাদীসে তাসলীম দ্বারা তাশাহুদ উদ্দেশ্য। তবে কারো কারো মতে তাসলীম দ্বারা সালাম ফেরানো। এটা তাদের অভিমত যারা বলেন যে, রাতের ও দিনের সালাত দুই দুই রাক্‘আত।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৭২-[১৪] ’আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আসরের পূর্বে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي قبل الْعَصْر رَكْعَتَيْنِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
পরিচ্ছেদঃ ৩০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৭৩-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক মাগরিবের সালাতের পর ছয় রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং এর মধ্যখানে কোন অশালীন কথাবার্তা বলবে না। তাহলে এ (ছয়) রাক্’আতের সাওয়াব তার জন্যে বারো বছরের ’ইবাদাতের সাওয়াবের পরিমাণ হয়ে যাবে। (তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটিকে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব। কারণ এ হাদীস ’উমার ইবনু খাস্’আম-এর সূত্র ছাড়া আর কোন সূত্রে জানা যায়নি। আর আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমা’ঈল বুখারীকে বলতে শুনেছি যে, ’উমার ইবনুল খাস’আম মুনকারুল হাদীস। তাছাড়াও তিনি হাদীসটিকে যথেষ্ট য’ঈফ বলেছেন।)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ سِتَّ رَكَعَاتٍ لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيمَا بَيْنَهُنَّ بِسُوءٍ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لَا نَعْرِفُهُ إِلَّا مِنْ حَدِيثِ عمر بن أَبِي خَثْعَمٍ وَسَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيلَ يَقُولُ: هُوَ مُنكر الحَدِيث وَضَعفه جدا
ব্যাখ্যা: (سِتَّ رَكَعَاتٍ) ছয় রাক্‘আত তন্মধ্যে দুই রাক্‘আত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ অথবা পৃথক ছয় রাক্‘আত।
(لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيمَا بَيْنَهُنَّ) অর্থাৎ ঐ সালাত আদায়কালে কোন খারাপ কথা না বলে অথবা এমন কথা না বলে যা খারাপের দিকে ধাবিত করে। ইমাম বুখারী বলেন, অত্র হাদীস বর্ণনাকারী ‘উমার মুনকারুল হাদীস। ইবনু ‘আদী বলেন, তিনি মুনকারুল হাদীস।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৭৪-[১৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক মাগরিবের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষের পর বিশ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে। আল্লাহ তা’আলা তার জন্যে জান্নাতে একটি বাড়ী বানাবেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ عِشْرِينَ رَكْعَةً بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: মুনযিরী বলেন, অত্র হাদীসের বর্ণনাকারী ইয়া‘কূব ইবনু ওয়ালীদ আল মাদায়িনীকে ইমাম আহমাদ মিথ্যুক বলে মন্তব্য করেছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আহমাদ তার পিতা আহমাদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বড় মিথ্যুক। জাল হাদীস রচনা করতেন। পূর্বে বর্ণিত ১১৮০ নং হাদীস এবং অত্র হাদীস উভয়টিই অত্যন্ত দুর্বল। ইমাম আহমাদ ও তিরমিযী হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মাগরিবের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলাম। যখন তিনি সালাত শেষ করলেন তখন তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে থাকলেন এমনকি ‘ইশার সালাত আদায় করে মাসজিদ থেকে বের হলেন, ইমাম শাওকানী এ হাদীসগুলো উল্লেখ করার পর বলেন, এ হাদীসগুলো প্রমাণ করে মাগরিবের সালাত আদায় করার পর অধিক পরিমাণে নফল সালাত আদায় করা বিধি সম্মত। যদিও এ সম্পর্কে বর্ণিত অধিকাংশ হাদীসই দুর্বল তবুও সবগুলো মিলে দলীল হওয়ার যোগ্য বিশেষভাবে ফাযীলাতের ক্ষেত্রে।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৭৫-[১৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সময়ই ’ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে আমার নিকট আসতেন, চার অথবা ছয় রাক্’আত সুন্নাত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) অবশ্যই আদায় করতেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْهَا قَالَتْ: مَا صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِشَاءَ قَطُّ فَدَخَلَ عَلَيَّ إِلَّا صلى أَربع رَكْعَات أَو سِتّ رَكْعَات. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (صَلّى أَربَعَ رَكْعَاتٍ) চার রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন অর্থাৎ দুই রাক্‘আত সুন্নাত মুয়াক্কাদাহ্, আর দুই রাক্‘আত নফল। ইমাম যুরক্বানী মাওয়াহিব এর ভাষ্য গ্রন্থে বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘ইশার সালাত আদায় করে আমার ঘরে আসতেন তখন কখনো চার রাক্‘আত আবার কখনো ছয় রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন। মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের নিয়ে ‘ইশার সালাত আদায় অন্তে আমার ঘরে প্রবেশ করে দুই রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
এ হাদীসগুলো থেকে জানা যায় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাতের পর কখনো দুই কখনো চার আবার কখনো ছয় রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন সুযোগ অনুযায়ী।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৭৬-[১৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ’ইদবা-রুন নুজূম’, দ্বারা ফজরের (ফজরের) পূর্বে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও ’ইদ্বারুস সুজূদ’ দ্বারা মাগরিবের ফরয সালাতের পরের দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বুঝানো হয়েছে। (তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إدبار النُّجُوم الركعتان قبل الْفجْر وأدبار السُّجُود الركعتان بعد الْمغرب» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (الرَّكْعَتَانِ قَبْلَ الْفَجْرِ) ফাজরের (ফজরের) পূর্বে দুই রাক্‘আত অর্থাৎ ফজরের (ফজরের) ফরয সালাতের পূর্বে দুই রাক্‘আত সুন্নাত। অনুরূপ (الرَّكْعَتَانِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ) মাগরিবের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পর দুই রাক্‘আত সুন্নাত।