পরিচ্ছেদঃ ৩০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
এখানে সুন্নাত বলতে সে সমস্ত সালাত উদ্দেশ্য যেগুলো দিবা ও রাত্রিতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সাথে আদায় করা হয় এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিয়মিত আদায় করতেন। যাকে সুনান রাওয়াতিব বলা হয় এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ও বলা হয়। ইমাম আবূ হানীফাহ্, ইমাম শাফি’ঈ ও ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর মতানুসারে রাওয়াতিব সালাতসমূহ বিধিসম্মত এবং তার জন্য নির্দিষ্ট সময় ও সংখ্যাও নির্ধারিত। চাই তা ফরয সালাতের পূর্বে অথবা পরে হোক। ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে এর জন্য নির্দিষ্ট কোন সময়ও নেই এবং নির্দিষ্ট সংখ্যাও নেই। তবে ফরয সালাতের পূর্বে বা পরে ইচ্ছানুযায়ী নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে কোন বাধা নেই।
ইবনু দাক্বীক্ব আল ’ঈদ বলেন, ফরয সালাতের পূর্বে সুন্নাত সালাত বিধিবদ্ধ হওয়ার হিকমাত এই যে, মানুষ যখন দুনিয়াবী ব্যস্ততার মধ্যে থাকে তখন ’ইবাদাত হতে দূরে থাকার ফলে তার অন্তর আল্লাহর সান্নিধ্য হতে দূরে থাকে। তাই আল্লাহর সান্নিধ্যে ’আসর প্রস্তুতি স্বরূপ এ সালাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে বান্দা ফরয সালাতে পূর্ণমাত্রায় আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করতে পারে। আর ফরয সালাতের পরের সুন্নাত সালাত ফরয সালাতের ত্রুটির পরিপূরক হিসেবে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে যেমনটি তামীম আদ্ দারী সূত্রে মারফূ’ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নিবেন।
যদি সালাত পরিপূর্ণ পাওয়া যায় তাহলে তার জন্য পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। আর যদি বান্দা সালাত পূর্ণ না করে থাকে তাহলে আল্লাহ তা’আলা মালাককে (ফেরেশতাকে) বলবেন, তোমরা দেখ আমার বান্দার কোন নফল সালাত পাও কিনা, পাওয়া গেলে তা দ্বারা তার ফরয পূর্ণ করে দাও, অতঃপর যাকাতের ব্যাপারে ও অন্যান্য আ’মালের ব্যাপারেও অনুরূপ করা হবে। এ হাদীসের ভিত্তিতেই ইমাম নাবাবী বলেন, ফরয সালাতে ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও নফল সালাতে আদায় করা বৈধ ও গ্রহণীয়। আর ফরয সালাত আদায় না করা পর্যন্ত মুসল্লীর নফল সালাত কবূল হবে না মর্মে বর্ণিত হাদীসটি য’ঈফ।
আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী বলেন, সুন্নাত, নফল, তাত্বা’উ, মানদূব ও মুস্তাহাব এ সবই সমার্থক। সবগুলো শব্দই এক অর্থ বহন করে।
১১৫৯-[১] উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক দিন রাতে বারো রাক্’আত সালাত আদায় করবে তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (সে বারো রাক্’আত সালাত হলো) চার রাক্’আত যুহরের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পূর্বে আর দু’ রাক্’আত যুহরের (ফারযের) পরে, দু’ রাক্’আত মাগরিবের (ফরয সালাতের) পরে। দু’ রাক্’আত ’ইশার ফরয সালাতের পরে। আর দু’ রাক্’আত ফাজ্রের (ফজরের) (ফরয সালাতের) পূর্বে। (তিরমিযী)
মুসলিমের এক বর্ণনায় শব্দ হলো উম্মু হাবীবাহ্ বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলিম প্রতিদিন আল্লাহ তা’আলার ফরয সালাত ব্যতীত বারো রাক্’আত সুন্নাত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। অথবা বলেছেন, জান্নাতে তার জন্যে একটি ঘর বানানো হবে।[1]
بَابُ السُّنَنِ وَقَضَائِلِهَا
عَن أُمِّ حَبِيبَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ: أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمغرب وَرَكْعَتَيْنِ بعد الْعشَاء وَرَكْعَتَيْنِ قبل صَلَاة الْفَجْرِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ أَنَّهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ إِلَّا بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي لاجنة أَوْ إِلَّا بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ»
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত ফাযীলাত ঐ ব্যক্তির জন্যই প্রযোজ্য যিনি নিয়মিত ১২ রাক্‘আত সালাত আদায় করেন। মাঝে মাঝে আদায়কারীর জন্য এ ফাযীলাত প্রযোজ্য নয়।
(أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ) ‘যুহরের পূর্বে চার রাক্‘আত হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, যুহরের পূর্বে সুন্নাত মুয়াক্কাদাহ্ চার রাক্‘আত। হানাফীদের অভিমতও তাই। ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ বলেন, যুহরের পূর্বে নিয়মিত সুন্নাত দুই রাক্‘আত। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত ১১৬৭ নং হাদীস তাদের দলীল।
(رَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا) হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, যুহরের পরে নিয়মিত সুন্নাত দুই রাক্‘আত। দুররুল মুখতার এর গ্রন্থকার বলেন, সকলের ঐকমত্যে ফজরের (ফজরের) পূর্বের দুই রাক্‘আত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এরপর যুহরের পূর্বে চার রাক্‘আত বিশুদ্ধ মতানুযায়ী। অতঃপর অন্যান্য সুন্নাত গুরুত্বের দিক থেকে সবই সমান। আমার (মুবারকপূরীর) দৃষ্টিতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত হল বিতর, অতঃপর ফাজরের (ফজরের) পূর্বে দুই রাক্‘আত, যুহরের পূর্বের সুন্নাত। অতঃপর অন্যান্য ওয়াক্তের সুন্নাত সবই সমান।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৬০-[২] ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যুহরের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পূর্বে দু’ রাক্’আত ও মাগরিবের ফারযের পরে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তাঁর বাড়িতে এবং ’ইশার সালাতের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পর দু’ রাক্’আত সালাত তার বাড়িতে আদায় করেছি। ইবনু ’উমার (রাঃ) আরো বলেছেন, হাফসাহ্ (রাঃ)(ইবনু ’উমারের বোন) আমার নিকট বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালকা দু’ রাক্’আত সালাত ফাজ্রের (ফজরের) সালাতের সময় আরম্ভ হবার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ السُّنَنِ وَقَضَائِلِهَا
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ فِي بَيْتِهِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ فِي بَيْتِهِ قَالَ: وَحَدَّثَتْنِي حَفْصَةُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ حِينَ يَطْلُعُ الْفَجْرُ
ব্যাখ্যা: (رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ) ‘যুহরের পূর্বে দুই রাক্‘আত’ হাদীসের এ অংশটি ইমাম শাফি‘ঈর এ মতের সপক্ষে দলীল যে, যুহরের পূর্বের সুন্নাত দুই রাক্‘আত। তার অনুসারীদের অনেকের অভিমত এটার। আবার শাফি‘ঈদের একটি জামা‘আতের অভিমত এই যে, যুহরের পূর্বের সুন্নাত চার রাক্‘আত।
ইমাম বুখারী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের পূর্বের চার রাক্‘আত এবং ফাজরের (ফজরের) পূর্বের দুই রাক্‘আত সালাত কখনো পরিত্যাগ করতেন না। ইবনু ‘উমার (রাঃ) ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর এ দু’ হাদীসের মধ্যে সমন্বয় বিভিন্নভাবে হতে পারে।
১। যখন তিনি স্বীয় ঘরে সালাত আদায় করতেন তখন দুই রাক্‘আত আদায় করতেন।
২। কখনো তিনি দুই রাক্‘আত, আবার কখনো চার রাক্‘আতের আদায় করতেন।
৩। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে চার রাক্‘আত আদায় করার পর মসজিদে এসে দুই রাক্‘আত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) এটাকেই যুহরের সুন্নাত মনে করেছেন। আর ঘরের চার রাক্‘আতকে তিনি সূর্য ঢলে যাওয়ার পর পৃথক চার রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মনে করেছেন।
(وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ فِي بَيْتِه) ‘ইশার পর স্বীয় ঘরে দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন। হাদীসের এ অংশ দ্বারা হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) দলীল পেশ করেছেন যে, রাতের নফল সালাত মসজিদে আদায় করার চাইতে ঘরে আদায় করা উত্তম। ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) বলেন, মসজিদে নফল সালাত আদায়ের ব্যাপারে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে তা মাকরূহ। তবে অধিকাংশ ‘আলিমদের মতে কারো ইচ্ছা হলে মসজিদে নফল সালাত আদায় করতে পারে। এতে কোন ক্ষতি বা সমস্যা নেই। তবে তারা এ বিষয়ে একমত যে, নফল সালাত ঘরে আদায় করাই উত্তম। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফরয সালাত ব্যতীত অন্যান্য সালাত আমার এ মসজিদে আদায় করার চাইতে ঘরে আদায় করাই উত্তম। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করাই উত্তম।
তবে কোন কোন ক্ষেত্রে উত্তম বিষয়ও পরিত্যাগ করতে হয় এর চাইতে কোন বড় সমস্যার আশঙ্কায়। অতএব আমার (মুবারকপূরী) দৃষ্টিতে বর্তমান সময়ে নিয়মিত সুন্নাতগুলো মসজিদে আদায় করাই উত্তম বিশেষ করে ‘আলিমদের জন্য। কেননা লোকজন কোন কিছু গ্রহণ করা ও বর্জন করার ক্ষেত্রে ‘আলিমদের অনুসরণ করে থাকে। তাই তারা প্রথমঃ ‘আলিমদের অনুসরণে মসজিদে সুন্নাত আদায় করা পরিত্যাগ করে। অতঃপর ধর্মীয় বিষয়ে গাফিলতি এবং দুনিয়াবী ব্যস্ততার কারণে ধীরে ধীরে সুন্নাত সালাত ত্যাগ করে। সাধারণত তা দেখা যায় তারাবীহ সালাতের ক্ষেত্রে। সাধারণ লোক যখন জানতে পারলো যে, তা শেষ রাতে ঘরে আদায় করাই উত্তম এবং কিছু ‘আলিমদেরও দেখতে পেল যে, তারা প্রথম রাতে তা আদায় করে না। ফলে সাধারণ লোকেরা তাদের অনুসরণে প্রথম রাতে আদায় করা পরিত্যাগ করলো এ কথা বলে যে, আমরা তা শেষ রাতে আদায় করবো। কিন্তু তারা তা একেবারেই ছেড়ে দেয়। প্রথম রাতেও আদায় করে না শেষ রাতেও না, অথচ তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদাত।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৬১-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর সালাতের পর কামরায় পৌঁছার পূর্বে কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন না। কামরায় পৌঁছার পর তিনি দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ السُّنَنِ وَقَضَائِلِهَا
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُصَلِّي بَعْدَ الْجُمُعَةِ حَتَّى يَنْصَرِفَ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ فِي بَيته
ব্যাখ্যা: (رَكْعَتَيْنِ فِي بَيته) ‘‘দুই রাক্‘আত স্বীয় বাড়ীতে’’ এ থেকে উদ্দেশ্য জুমু‘আর পরের সুন্নাত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। এতে প্রমাণ পাওয়া যায়, জুমু‘আর পরের সুন্নাত দুই রাক্‘আত। জুমু‘আর পরে সুন্নাত দুই রাক্‘আতের প্রবক্তাগণ এ হাদীসটিই দলীলরূপে গ্রহণ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৬২-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নফল সালাতের ব্যাপারে ’আয়িশাকে প্রশ্ন করেছি। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে আমার ঘরে যুহরের পূর্বে চার রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। তারপর মসজিদে যেতেন। সেখানে লোকেদের নিয়ে (জামা’আতে যুহরের ফরয) সালাত আদায় করতেন। তারপর তিনি কামরায় ফিরে আসতেন এবং দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। (ঠিক এভাবে) তিনি লোকদেরকে নিয়ে মাগরিবের সালাত মসজিদে আদায় করতেন। তারপরে হুজরায় ফিরে এসে দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। রাতে তিনি (তাহাজ্জুদের) সালাত কখনো নয় রাক্’আত পড়তেন। এর মাঝে বিতরের সালাতও শামিল ছিল। আর রাতে তিনি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ও দীর্ঘ সময় বসে বসে সালাত আদায় করতেন, যে সময় তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন? দাঁড়ানো থেকেই রুকূ’ সাজদায় চলে যেতেন। আর যখন বসে বসে সালাত আদায় করতেন, বসা থেকেই রুকূ’ ও সাজদায় চলে যেতেন। সুবহে সাদিকের সময় ফাজ্রের (ফজরের) দু’ রাক্’আত সুন্নাত আদায় করে নিতেন। (মুসলিম; আবূ দাঊদ আরো কিছু বেশী শব্দ নকল করেছেন [অর্থাৎ ফজরের (ফজরের) দু’ রাক্’আত সুন্নাত আদায় করে তিনি মসজিদে চলে যেতেন। সেখানে লোকজনসহ ফাজ্রের (ফজরের) ফরয সালাত আদায় করতেন])[1]
بَابُ السُّنَنِ وَقَضَائِلِهَا
وَعَن عبد الله بن شَقِيق قَالَ: سَأَلْتُ عَائِشَةَ عَنْ صَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ تَطَوُّعِهِ فَقَالَتْ: كَانَ يُصَلِّي فِي بَيْتِي قَبْلَ الظُّهْرِ أَرْبَعًا ثُمَّ يَخْرُجُ فَيُصَلِّي بِالنَّاسِ ثُمَّ يَدْخُلُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ وَكَانَ يُصَلِّي بِالنَّاسِ الْمَغْرِبَ ثُمَّ يَدْخُلُ فَيصَلي رَكْعَتَيْنِ وَيُصلي بِالنَّاسِ الْعِشَاءَ وَيَدْخُلُ بَيْتِي فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ وَكَانَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ تِسْعَ رَكَعَاتٍ فِيهِنَّ الْوَتْرُ وَكَانَ يُصَلِّي لَيْلًا طَوِيلًا قَائِمًا وَلَيْلًا طَوِيلًا قَاعِدا وَكَانَ إِذَا قَرَأَ وَهُوَ قَائِمٌ رَكَعَ وَسَجَدَ وَهُوَ قَائِم وَإِذا قَرَأَ قَاعِدًا رَكَعَ وَسَجَدَ وَهُوَ قَاعِدٌ وَكَانَ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَزَادَ أَبُو دَاوُدَ: ثُمَّ يَخْرُجُ فَيُصَلِّي بِالنَّاسِ صَلَاة الْفجْر
ব্যাখ্যা: (ثُمَّ يَدْخُلُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ) অতঃপর ঘরে প্রবেশ করে দুই রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) করতেন হাদীসের এ অংশটুকু ঘরে সুন্নাত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার দলীল।
(وَكَانَ إِذَا قَرَأَ وَهُوَ قَائِمٌ رَكَعَ وَسَجَدَ وَهُوَ قَائِم) যখন তিনি সালাতে দাঁড়িয়ে কুরআন পাঠ করতেন তখন তিনি দাঁড়িয়েই রুকূ' সিজদা্ করতেন। অর্থাৎ তিনি দাঁড়ানো অবস্থা থেকেই রুকূ‘তে যেতেন অতঃপর সিজদা্ করতেন, রুকূ‘তে যাওয়ার পূর্বে বসতেন না।
(وَإِذا قَرَأَ قَاعِدًا رَكَعَ وَسَجَدَ وَهُوَ قَاعِدٌ) তিনি যখন সালাতে বসে কুরআন পাঠ করতেন তখন তিনি বসেই রুকূ' ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতেন অর্থাৎ রুকূ‘তে যাওয়ার পূর্বে তিনি দাঁড়াতেন না। এ হাদীস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায যে, যিনি দাঁড়িয়ে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করবেন তিনি দাঁড়ানো অবস্থা থেকেই রুকূ‘তে যাবেন আর যিনি বসে কেরআত পাঠ করবেন তিনি বসা অবস্থাতেই রুকূ‘ ও সিজদা্ করবেন।
বুখারী ও মুসলিমে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বৃদ্ধ হওয়ার আগে কখনো বসে সালাত আদায় করতে দেখেননি। বৃদ্ধ হওয়ার পর তিনি সালাতে বসে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করতেন, যখন রুকূ‘তে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন অতঃপর ত্রিশ অথবা চল্লিশ আয়াতের মতো দাঁড়ানো অবস্থায় পাঠ করার পর রুকূ‘ ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতেন। দ্বিতীয় রাক্‘আতেও তিনি অনুরূপ করতেন। এ হাদীসে এ প্রমাণ মিলে যে, যিনি সালাতে বসে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠকরণ তার জন্য রুকূ‘র পূর্বে দাঁড়িয়ে ক্বিরাআতের কিছু অংশ পাঠ করা বৈধ। উক্ত দুই হাদীসের মধ্যে সমন্বয় এই যে, কখনো তিনি প্রথম হাদীসে বর্ণিত অবস্থায় সালাত আদায় করতেন। আবার কখনো দ্বিতীয় হাদীসে বর্ণিত পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতেন। অতএব উভয় পদ্ধতিই বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৬৩-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নফল সালাতের মাঝে ফাজ্রের (ফজরের) দু’ রাক্’আত সুন্নাত সালাতের প্রতি যেমন কঠোর যত্ন নিতেন আর কোন সালাতের উপর এত কঠোর ছিলেন না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ السُّنَنِ وَقَضَائِلِهَا
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى شَيْءٍ مِنَ النَّوَافِلِ أَشَدَّ تَعَاهُدًا مِنْهُ على رَكْعَتي الْفجْر
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস প্রমাণ করে যে, ফাজরের (ফজরের) দুই রাক্‘আত সুন্নাতের মর্যাদা অনেক বেশি। অন্যান্য সুন্নাতের তুলনায় এ দুই রাক্‘আত সুন্নাত নিয়মিত আদায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদাত। এটাও সাব্যস্ত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্বীম অথবা মুসাফির কোন অবস্থায়ই এ দুই রাক্‘আত সালাত পরিত্যাগ করতেন না। এ হাদীস এও প্রমাণ করে এ দুই রাক্‘আত সালাত সুন্নাত, তা ওয়াজিব নয়। জমহূর ‘উলামাদের অভিমতও তাই। হাসান বসরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এ দুই রাক্‘আত সালাতকে ওয়াজিব মনে করতেন। তবে বক্ষমান হাদীসে বর্ণিত শব্দ (مِنَ النَّوَافِلِ) ‘‘নফলের মধ্যে’’ অংশটুকু হাসান বসরী (রহঃ)-এর উক্ত অভিমত প্রত্যাখ্যান করে।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৬৪-[৬] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] থেকে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ফাজ্রের (ফজরের) দু’ রাক্’আত সুন্নাত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল জিনিসের চেয়ে বেশী উত্তম। (মুসলিম)[1]
بَابُ السُّنَنِ وَقَضَائِلِهَا
وَعَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رَكْعَتَا الْفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا) অর্থাৎ এ দুই রাক্‘আত সালাতের সাওয়াব সারা দুনিয়া আল্লাহর পথে দান করার সাওয়াবের চাইতে বেশি। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করা হয় যে, ফাজরের (ফজরের) দুই রাক্‘আত সুন্নাত বিতর সালাতের চেয়ে উত্তম। কেননা বিতর সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তার সাওয়াব আল্লাহর রাস্তায় লাল উট দান করার সাওয়াবের চেয়ে উত্তম। পক্ষান্তরে ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তার সাওয়াব সারা দুনিয়ার সব কিছু দান করার সাওয়াবের চেয়ে উত্তম। অতএব বুঝা গেল যে, ফাজরের (ফজরের) দুই রাক্‘আত সুন্নাত বিতরের সালাতের চেয়ে উত্তম। সঠিক বর্ণনা মতে ইমাম শাফি‘ঈর নিকট বিতর সালাত ফজরের সুন্নাতের চেয়ে উত্তম। কেননা মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) সূত্রে মারফূ‘ হাদীস বর্ণিত আছে যে, ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। আর বিতর সালাত রাতের সালাতের অন্তর্ভুক্ত। অতএব এর মর্যাদা অন্যান্য নফলের তুলনায় বেশি।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৬৫-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বে তোমরা দু’ রাক্’আত নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় কর। মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বে তোমরা দু’ রাক্’আত নফল সালাত আদায় কর। তৃতীয়বার তিনি বলেছেন, ’’যিনি ইচ্ছা করেন’’ (তিনি তা পড়বেন)। বর্ণনাকারী বলেনঃ তৃতীয়বার তিনি এ কথাটি এ আশংকায় বললেন যাতে মানুষ একে সুন্নাত না করে ফেলে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ السُّنَنِ وَقَضَائِلِهَا
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «صلوا قبل صَلَاة الْمغرب رَكْعَتَيْنِ صَلُّوا قَبْلَ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ رَكْعَتَيْنِ» . قَالَ فِي الثَّالِثَةِ: «لِمَنْ شَاءَ» . كَرَاهِيَةَ أَنْ يَتَّخِذَهَا النَّاسُ سنة
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি সূর্যাস্তের পর মাগরিবের সালাতের পূর্বে দুই রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার দলীল। সহাবা (সাহাবা) ও তাবি‘ঈদের একদল ‘আলিম এবং পরবর্তী যুগে ইমাম আহমাদ ও ইসহাক এবং আহলুল হাদীসগণ এই অভিমত গ্রহণ করেছেন। আর এটিই সঠিক। যারা বলেন, হাদীসটি মানসূখ তথা এর হুকুম রহিত হয়ে গেছে তাদের কথার কোন দলীল নেই।
(كَرَاهِيَةَ أَنْ يَتَّخِذَهَا النَّاسُ سُنَّةً) যাতে মানুষ এটিকে সুন্নাত না মনে করে তথা নিয়মিত সুন্নাত বানিয়ে না নেয় এজন্য তিনি তৃতীয়বারের পর বললেন لِمَنْ شَاءَ যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে সে যেন তা আদায় করে। এর দ্বারা মুস্তাহাব হওয়াকে রহিত করা হয়নি। কেননা এটা অসম্ভব যে, যা মুস্তাহাব নয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আদেশ করবেন। বরং হাদীসটি মুস্তাহাব হওয়ার শক্তিশালী দলীল।
হানাফীগণ এ দু’ রাক্‘আত সালাত মুস্তাহাব না হওয়ার অভিমত পোষণ করেন। বরং তাদের মধ্যে কেউ কেউ এটাকে মাকরূহ মনে করেন। এজন্য তারা আবূ দাঊদে বর্ণিত হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করেন।
তাউস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে এ দুই রাক্‘আত সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমি কাউকে এ দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করতে দেখিনি। এর সানাদ হাসান। তবে যা প্রকাশমান তা হল এটি একটি সন্দেহযুক্ত হাদীস। কেননা বুখারী, মুসলিম এবং অন্যান্য গ্রন্থে আনাস (রাঃ) এবং ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে তার উপস্থিতিতে সাহাবীগণ মাগরিবের আযানের পর ইক্বামাতের পূর্বে দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) স্বয়ং এ সালাত আদায় করতেন এবং তা আদায় করার আদেশ করতেন। আনাস, ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ, উবাই ইবনু কা‘ব, আবূ আইয়ূব আল আনসারী, আবুদ্ দারদা, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ, আবূ মূসা আল আশ্‘আরী ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) প্রমুখগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পরও এ সালাত আদায় করতেন। অতএব তা মুস্তাহাব হওয়ার ক্ষেত্রে কোন সন্দেহ পোষণ করা যায় না।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত
১১৬৬-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের যে লোক জুমু’আর (ফরয সালাতের) পর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে চায় সে যেন চার রাক্’আত সালাত আদায় করে নেয়। (মুসলিম)
আর মুসলিমেরই অন্য এক সূত্রে আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন জুমু’আর [ফরয] সালাত আদায় করবে সে যেন এরপর চার রাক্’আত সুন্নাত সালাত আদায় করে নেয়।[1]
بَابُ السُّنَنِ وَقَضَائِلِهَا
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ مِنْكُمْ مُصَلِّيًا بَعْدَ الْجُمُعَةِ فَلْيُصَلِّ أَرْبَعًا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
وَفِي أُخْرَى لَهُ قَالَ: «إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمُ الْجُمُعَةَ فَلْيُصَلِّ بَعْدَهَا أَرْبعا»
ব্যাখ্যা: (فَلْيُصَلِّ أَرْبَعًا) সে যেন চার রাক্‘আত সালাত আদায় করে। এ হাদীস প্রমাণ করে যে, জুমু‘আর সালাতের পর সুন্নাত সালাত চার রাক্‘আত। পূর্বে ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর সালাতের পর স্বীয় ঘরে প্রত্যাবর্তন করে দুই রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এ হাদীস প্রমাণ করে যে, জুমু‘আর সালাতের পর সুন্নাত সালাত দুই রাক্‘আত। ইসহাক ইবনু রাহ্ওয়াইহি বলেন, যদি জুমু‘আর সালাতের পর মসজিদে সালাত আদায় করে তাহলে চার রাক্‘আত আদায় করবে। আর যদি ঘরে যেয়ে সালাত আদায় করে তাহেল দুই রাক্‘আত আদায় করবে। ইবনু তায়মিয়্যাহ্ এবং ইবনুল ক্বইয়্যিম (রহঃ) প্রমুখগণের অভিমতও তাই।