১১৫৯

পরিচ্ছেদঃ ৩০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত

এখানে সুন্নাত বলতে সে সমস্ত সালাত উদ্দেশ্য যেগুলো দিবা ও রাত্রিতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সাথে আদায় করা হয় এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিয়মিত আদায় করতেন। যাকে সুনান রাওয়াতিব বলা হয় এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ও বলা হয়। ইমাম আবূ হানীফাহ্, ইমাম শাফি’ঈ ও ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর মতানুসারে রাওয়াতিব সালাতসমূহ বিধিসম্মত এবং তার জন্য নির্দিষ্ট সময় ও সংখ্যাও নির্ধারিত। চাই তা ফরয সালাতের পূর্বে অথবা পরে হোক। ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে এর জন্য নির্দিষ্ট কোন সময়ও নেই এবং নির্দিষ্ট সংখ্যাও নেই। তবে ফরয সালাতের পূর্বে বা পরে ইচ্ছানুযায়ী নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে কোন বাধা নেই।

ইবনু দাক্বীক্ব আল ’ঈদ বলেন, ফরয সালাতের পূর্বে সুন্নাত সালাত বিধিবদ্ধ হওয়ার হিকমাত এই যে, মানুষ যখন দুনিয়াবী ব্যস্ততার মধ্যে থাকে তখন ’ইবাদাত হতে দূরে থাকার ফলে তার অন্তর আল্লাহর সান্নিধ্য হতে দূরে থাকে। তাই আল্লাহর সান্নিধ্যে ’আসর প্রস্তুতি স্বরূপ এ সালাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে বান্দা ফরয সালাতে পূর্ণমাত্রায় আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করতে পারে। আর ফরয সালাতের পরের সুন্নাত সালাত ফরয সালাতের ত্রুটির পরিপূরক হিসেবে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে যেমনটি তামীম আদ্ দারী সূত্রে মারফূ’ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নিবেন।

যদি সালাত পরিপূর্ণ পাওয়া যায় তাহলে তার জন্য পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। আর যদি বান্দা সালাত পূর্ণ না করে থাকে তাহলে আল্লাহ তা’আলা মালাককে (ফেরেশতাকে) বলবেন, তোমরা দেখ আমার বান্দার কোন নফল সালাত পাও কিনা, পাওয়া গেলে তা দ্বারা তার ফরয পূর্ণ করে দাও, অতঃপর যাকাতের ব্যাপারে ও অন্যান্য আ’মালের ব্যাপারেও অনুরূপ করা হবে। এ হাদীসের ভিত্তিতেই ইমাম নাবাবী বলেন, ফরয সালাতে ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও নফল সালাতে আদায় করা বৈধ ও গ্রহণীয়। আর ফরয সালাত আদায় না করা পর্যন্ত মুসল্লীর নফল সালাত কবূল হবে না মর্মে বর্ণিত হাদীসটি য’ঈফ।

আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী বলেন, সুন্নাত, নফল, তাত্বা’উ, মানদূব ও মুস্তাহাব এ সবই সমার্থক। সবগুলো শব্দই এক অর্থ বহন করে।


১১৫৯-[১] উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক দিন রাতে বারো রাক্’আত সালাত আদায় করবে তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (সে বারো রাক্’আত সালাত হলো) চার রাক্’আত যুহরের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পূর্বে আর দু’ রাক্’আত যুহরের (ফারযের) পরে, দু’ রাক্’আত মাগরিবের (ফরয সালাতের) পরে। দু’ রাক্’আত ’ইশার ফরয সালাতের পরে। আর দু’ রাক্’আত ফাজ্‌রের (ফজরের) (ফরয সালাতের) পূর্বে। (তিরমিযী)

মুসলিমের এক বর্ণনায় শব্দ হলো উম্মু হাবীবাহ্ বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলিম প্রতিদিন আল্লাহ তা’আলার ফরয সালাত ব্যতীত বারো রাক্’আত সুন্নাত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। অথবা বলেছেন, জান্নাতে তার জন্যে একটি ঘর বানানো হবে।[1]

بَابُ السُّنَنِ وَقَضَائِلِهَا

عَن أُمِّ حَبِيبَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ: أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمغرب وَرَكْعَتَيْنِ بعد الْعشَاء وَرَكْعَتَيْنِ قبل صَلَاة الْفَجْرِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ أَنَّهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ إِلَّا بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي لاجنة أَوْ إِلَّا بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ»

ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত ফাযীলাত ঐ ব্যক্তির জন্যই প্রযোজ্য যিনি নিয়মিত ১২ রাক্‘আত সালাত আদায় করেন। মাঝে মাঝে আদায়কারীর জন্য এ ফাযীলাত প্রযোজ্য নয়।

(أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ) ‘যুহরের পূর্বে চার রাক্‘আত হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, যুহরের পূর্বে সুন্নাত মুয়াক্কাদাহ্ চার রাক্‘আত। হানাফীদের অভিমতও তাই। ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ বলেন, যুহরের পূর্বে নিয়মিত সুন্নাত দুই রাক্‘আত। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত ১১৬৭ নং হাদীস তাদের দলীল।

(رَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا) হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, যুহরের পরে নিয়মিত সুন্নাত দুই রাক্‘আত। দুররুল মুখতার এর গ্রন্থকার বলেন, সকলের ঐকমত্যে ফজরের (ফজরের) পূর্বের দুই রাক্‘আত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এরপর যুহরের পূর্বে চার রাক্‘আত বিশুদ্ধ মতানুযায়ী। অতঃপর অন্যান্য সুন্নাত গুরুত্বের দিক থেকে সবই সমান। আমার (মুবারকপূরীর) দৃষ্টিতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত হল বিতর, অতঃপর ফাজরের (ফজরের) পূর্বে দুই রাক্‘আত, যুহরের পূর্বের সুন্নাত। অতঃপর অন্যান্য ওয়াক্তের সুন্নাত সবই সমান।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ