১১৪৬

পরিচ্ছেদঃ ২৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম

১১৪৬-[১১] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, একদিন এক লোক মসজিদে এমন সময় আসলেন, যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করে ফেলেছেন। তিনি (তাকে দেখে) বললেন, এমন কোন মানুষ কি নেই যে তাকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিবে তাঁর সঙ্গে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। এ মুহূর্তে এক লোক দাঁড়ালেন এবং তার সঙ্গে সালাত আদায় করলেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ وَقَدْ صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَلَا رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلَى هَذَا فَيُصَلِّيَ مَعَهُ؟» فَقَامَ رَجُلٌ فيصلى مَعَه . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد

وعن ابي سعيد الخدري قال: جاء رجل وقد صلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: «الا رجل يتصدق على هذا فيصلي معه؟» فقام رجل فيصلى معه . رواه الترمذي وابو داود

ব্যাখ্যা: (جَاءَ رَجُلٌ) (এক লোক আসল) মসজিদে। আহমাদের এক বর্ণনাতে ৩য় খন্ডে ৪৫ পৃষ্ঠাতে এবং বায়হাক্বীর ৩য় খন্ডে ৬৯ পৃষ্ঠাতে এসেছে- নিশ্চয় একজন লোক মসজিদে প্রবেশ করল।

(وَقَدْ صَلّى رَسُولُ اللّهِ ﷺ) তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নিয়েছেন। যেমন মুসনাদে আহমাদে (৩য় খন্ডে ৮৫ পৃষ্ঠাতে) এবং তাতে তিনি একটু বেশি উল্লেখ করেছেন। রাবী বলেনঃ অতঃপর তাঁর তথা রসূলের সাহাবীদের থেকে এক ব্যক্তি মসজিদে আসলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে অমুক! কোন্ জিনিস তোমাকে সালাত থেকে বাধা দিল? তারপর লোকটি এমন কিছু উল্লেখ করল যা আপত্তি স্বরূপ। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর লোকটি সালাত আদায় করতে দাঁড়ালে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শেষ পর্যন্ত। হায়সামী মাজমাউয্ যাওয়ায়িদে বলেন, এর বর্ণনাকারীগণ সহীহ এর বর্ণনাকারী সহীহ।

(أَلَا رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلى هذَا) তার প্রতি দয়া করবে ও অনুগ্রহ করবে।

(فَيُصَلِّيَ مَعَه) যাতে এর মাধ্যমে তার জামা‘আতের সাওয়াব অর্জন হয়। অতঃপর সে এমন অবস্থানে অবস্থান করবে যেন সে তার উপর সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করল। মাজহার বলেনঃ একে তিনি সদাক্বাহ্ (সাদাকা) বলে নামকরণ করেছেন তার কারণ হল সে তার উপর ২৬ গুণ সাওয়াবের মাধ্যমে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে থাকে। কেননা যদি সে একাকী সালাত আদায় করে তাহলে তার কেবল একটি সালাতের সাওয়াব অর্জন হবে। অর্থাৎ যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে পূর্বে জামা‘আতে সালাত আদায় করেছেন তাদের মধ্যে হতে আবূ বাকর (রাঃ)। বায়হাক্বী এর ৩য় খন্ড ৭০ পৃষ্ঠাতে অন্য বর্ণনাতে আছে ‘‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করল তিনি হলেন আবূ বাকর (রাঃ)।’’

(فيصلى مَعَه) অতঃপর তিনি তার প্রতি মুক্তাদী হয়ে সালাত আদায় করলেন। এ হাদীসটি ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করে যে, যে ব্যক্তি একাকীভাবে সালাত শুরু করবে তার সালাতে অপর ব্যক্তির শরীক হওয়া শারী‘আত সম্মত। যদিও শরীক ব্যক্তি ইতিপূর্বে জামা‘আতে সালাত আদায় করে থাকুক। এ হাদীস দ্বারা ইমাম তিরমিযী ঐ ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করছেন যে, কোন সম্প্রদায় জামা‘আত সহকারে এমন মসজিদে সালাত আদায় বৈধ যে মসজিদে সালাত আদায় হয়ে গেছে। আর তা তাবি‘ঈ ও সাহাবীদের থেকে একাধিক বিদ্বানের উক্তি। আহমাদ ও ইসহাক এ ব্যাপারে উক্তি করেছেন। বিদ্বানদের অন্যান্যগণ বলেনঃ তারা একাকী সালাত আদায় করবে। এটি সুফ্ইয়ান, মালিক, ইবনুল মুবারক এবং শাফি‘ঈর উক্তি।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ আমি বলব, ইমামদের থেকে যারা সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য জামা‘আতে সালাত আদায়কে শর্তারোপ করেছেন অথবা জামা‘আতে সালাত আদায়কে শর্তারোপ না করে জামা‘আতে সালাত আদায়কে ফারযে আইন বলে সাব্যস্ত করেছেন তারা সাধারণভাবে জামা‘আতে বারংবার তাকে বৈধ বলেছেন। আর যারা জামা‘আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কে ফারযে আইন না হওয়ার মত পেশ করেছেন বা সুন্নাত বলেছেন তারা জামা‘আত না হওয়ার বারংবারতাকে অপছন্দ করেছেন। যেমন অচিরেই তা জানা যাবে।

ইবনু মাস্‘ঊদ বৈধ বলেছেন। ইবনু আবী শায়বাহ্ তাঁর মুনান্নাফ গ্রন্থে সালামাহ্ বিন কুহায়ল থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই ইবনু মাস‘ঊদ মসজিদে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় মুসল্লীরা সালাত আদায় করে নিয়েছে। অতঃপর ইবনু মাস্‘ঊদ ‘আলক্বামাহ্, মাসরূক ও আসওয়াদ-এর মাধ্যমে জামা‘আত করল। এ সানাদ বিশুদ্ধ। আর তা আনাস বিন মালিক-এর উক্তি। বুখারী তাঁর সহীহাতে বলেন, আনাস বিন মালিক এক মসজিদে আসলেন যেখানে সালাত আদায় হয়ে গেছে। অতঃপর তিনি আযান দিয়ে ইক্বামাতের পর জামা‘আতে সালাত আদায় করলেন। হাফিয বলেনঃ আবূ ইয়া‘লা একে তার মুসনাদ গ্রন্থে মাওসূলভাবে বর্ণনা করেছেন। ইবনু আবী শায়বাহ্ ও বায়হাক্বীও বর্ণনা করেছেন।

ইবনু হাযম তার মুহাল্লা গ্রন্থের ৪র্থ খন্ডে ২৩৮ পৃষ্ঠাতে বলেনঃ এটা এমন এক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যাতে সাহাবীদের থেকে আনাস (রাঃ)-এর কোন বিরোধিতাকারী পাওয়া যায় না। ‘আয়নী বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, আর তা এক বর্ণনাতে ‘আত্বা ও হাসানের উক্তি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘‘জামা‘আতের সালাত একাকী সালাত আদায় অপেক্ষা উত্তম’’ এর বাহ্যিকতার প্রতি ‘আমলকরণে এটি আহমাদ, ইসহাক ও আশহুরের উক্তি।

এ ব্যাপারে হানাফীদের মাজহাব হল যা শামী খাযায়িন গ্রন্থ থেকে নকল করে দুররুল মুখতারের হাশিয়াতে উল্লেখ করেছেন। আর তা মাকরূহে তাহরীমী মনে করা হয়, এলাকার মসজিদে জামা‘আতের বারংবারতাকে। ‘‘এমন মাসজিদ যার ইমাম আছে। আযান ও ইক্বামাতের মাধ্যমে জামা‘আতে সালাত আদায় করা হয় বলে সবার জানা। তবে মসজিদের বাসিন্দাগণ ছাড়া যখন আযান ও ইক্বামাতের মাধ্যমে সেখানে প্রথমবার সালাত আদায় করা হবে অথবা মসজিদের বাসিন্দাগণ নিম্নস্বরে আযান দিয়ে সালাত আদায় করবে সে সময় ছাড়া। আর যদি মসজিদের বাসিন্দাগণ আযান ও ইক্বামাত ছাড়া বারংবার জামা‘আতে সালাত আদায় করে অথাবা মাসজিদটি রাস্তাতে হয় তাহলে বৈধ হবে। যেমন বৈধ হয় এমন মসজিদে যার কোন ইমাম, মুয়াযযিন নেই। আর এ কারণে তারা ইমাম ত্ববারানী আবূ বাকরাহ্ থেকে ক্বারী ও আওসাত্ব গ্রন্থে যা বর্ণনা করেছেন তার মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করেছেন।

বর্ণনাটি হল, নিশ্চয়ই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার দিক হতে আগমন করলেন এমতাবস্থায় তিনি সালাতের ইচ্ছা করছেন। তখন তিনি মানুষকে এ অবস্থায় পেলেন যে, তারা সালাত আদায় করে নিয়েছে। অতঃপর তিনি তার বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে একত্র করে তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। হায়সামী মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ-এর ২য় খন্ডে ৪৫ পৃষ্ঠাতে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরশীল। হানাফীরা বলেন, যদি ২য় জামা‘আত বৈধই হত তাহলে মসজিদে জামা‘আত ছেড়ে তার বাড়িতে সালাত আদায়কে পছন্দ করতেন না। তারা বলেন, সাধারণ অনুমতিতে জামা‘আতের হ্রাসকরণ হয় এর অর্থ হল, যখন মুসল্লীরা জানতে পারবে এ জামা‘আত তাদের থেকে কোন মতেই ছুটবে না তখন তারা জামা‘আতের জন্য প্রস্ত্তত থাকবে না।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ আবূ বাকরার হাদীস দ্বারা বারংবার জামা‘আতে সালাত আদায় মাকরূহে তানযিহী বা তাহরীমী হওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনার বিষয় আছে। কেননা তা ঐ ব্যাপারে উদ্ধৃতি না যে, নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারকে একত্রিত করলেন। অতঃপর তাদেরকে নিয়ে নিজ গৃহে সালাত আদায় করলেন। বরং এ সম্ভাবনা রাখছে যে, তিনি তাদেরকে মসজিদে সালাত আদায় করলেন। আর তাঁর বাড়ির দিকে যাওয়া মূলত তার পরিবারকে একত্র করার জন্য; সেখানে সালাত আদায়ের জন্য না। তখন এ হাদীস এলাকার মসজিদে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় মুস্তাহাব হওয়ার দলীল হবে। যার ইমাম ও মুয়াযযিন আছে এবং বাসিন্দারা জানে তাতে একবার সালাত আদায় করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)